কথার প্যাচওয়ালী

0
4098

.
Story- কথার_প্যাচওয়ালী
writer- #Nur_Nafisa
(ক্ষুদে গল্প)
.
.
১.
নাফিসা- ভার্সিটিতে ক্লাস করছি। গত ২সপ্তাহ ধরে ক্লাস চললেও আমার আজ ২য় দিন। এখন হিসাববিজ্ঞান ক্লাস। স্যার একে একে সবাইকে কোনো না কোনো প্রশ্ন করছে। হয়তো এগুলো সব আগে পড়ানো হয়েছে। অবশেষে আমাকে দাড় করালেন।
স্যার- তোমার নাম কি?
নাফিসা- নুর নাফিসা।
স্যার- আচ্ছা, বলোতো এখন কি ক্লাস?
নাফিসা- হিসাববিজ্ঞান ক্লাস।
স্যার- হিসাববিজ্ঞান কাকে বলে?
নাফিসা- জানিনা।
স্যার- ছি! অনার্সে পড়ো এখনো জানোনা হিসাববিজ্ঞান কাকে বলে! এটা তো ক্লাস 9 থেকে জানার কথা।
নাফিসা- স্যার, আপনি অনুমতি দিলে ১টা প্রশ্ন করি?
স্যার- ওকে। করো..
নাফিসা- বলেন তো স্যার, আলোতে কি দেখা যায় না?
স্যার- আলোতে তো সবই দেখা যায়!
নাফিসা- আলোতে কি অন্ধকার দেখা যায়?
ছি! শিক্ষক হয়েছেন এখনো এটা জানেন না! এটা তো ছাত্রজীবন থেকেই জানার কথা ?
সবাই- হাহাহা… ?
স্যার- ?
.
.
২.
নাফিসা- ক্লাস শেষে ভার্সিটির ক্যাম্পাসের কৃষ্ণচূড়া গাছের নিচে বসে দিনার সাথে কথা বলছিলাম। হঠাৎ এক ছেলে এসে সামনে হাটু গেড়ে বসে পড়লো, আর গোলাপ এগিয়ে দিলো !
ছেলে- নাফিসা, I love you.
নাফিসা/ দিনা- ?
ছেলে- নাফিসা, নবীন বরন প্রোগ্রামে প্রথম তোমাকে দেখেই আমি ফিদা হয়ে গেছি। I really love you ❤
নাফিসা- What’s mean by love?
ছেলে- love means ভালোবাসা।
নাফিসা- ভালোবাসা কাকে বলে?
ছেলে- এতোসব আমি বুঝি না। আমি এটা জানি আমি তোমাকে ভালোবাসি।
নাফিসা- গাধা কোথাকার! ভালোবাসা কাকে বলে সেটা জানেনা, আসছে ভালোবাসতে। যা ভাগ এখান থেকে ?
দিনা- হাহাহা….. ?
ছেলে- ?
.
.
৩.
নাফিসা- ভার্সিটি থেকে বাসায় ফিরছিলাম। রাস্তায় এক ভিখারিকে দেখলাম বলছে,
ভিখারি- আমার আল্লাহ নবীজীর নামে, একটা ভিক্ষা দিয়া যান।
নাফিসা- চাচা, আপনার আল্লাহ নবীজী কি বলেছে ভিক্ষা করে খেতে!
ভিখারি- তাইলে কেমনে খামু?
নাফিসা- আল্লাহ, নবীজী বলেছে কাজ করে খেতে। ভিক্ষা ছেড়ে কাজে লেগে যান। আল্লাহ আপনাকে যথেষ্ট সুস্থ রাখছে।
ভিখারি- ?
.
.
৪.
নাফিসা- বাসায় ফিরে এলাম। আপু বললো,
আপু- নাফিসা, বিকেলে মার্কেটে যাবো। রেডি থাকিস।
নাফিসা- মার্কেটে কেনো যাবে?
আপু- মার্কেটে আবার কেনো যায়! মার্কেট করতে যাবো।
নাফিসা- কেন? সকালে বাবা মার্কেট করে আনেনি!
আপু- বাবা কিসের মার্কেট করেছে?
নাফিসা- কেন! সবজি, মাছ এগুলো এনেছে তো।
আপু- ? আমি জামাকাপড় কিনতে যাবো।
নাফিসা- মার্কেটের বাংলা শব্দ কি?
আপু- বাজার।
নাফিসা- ? বাজারে কাপড় পাবে কোথায়!
আপু- কথা এতো প্যাচাস কেন! ? শপিং মলে যাবো শপিং করতে। হয়েছে এবার!
নাফিসা- ??।
.
.
৫.
নাফিসা- বিকেলে শপিং মল এ গেলাম। একটা দোকানে ঢুকে দেখলাম, সেখানে লিখা আছে ” এখানে সকল পণ্য খুচরা ও পাইকারি মুল্যে বিক্রয় করা হয়।” আমি দোকানে ঢুকেই বললাম এখানে কি খুচরা মূল্যে পণ্য বিক্রি করা হয়?
দোকানদার- হ্যাঁ। আসুন…
নাফিসা- আপু ২টা জামা পছন্দ করে দাম করছে। শেষ পর্যন্ত দাম এসে ঠেকলো ২৪০০টাকা। আপু টাকা দিতে যাবে তার হাত থেকে টাকা নিয়ে আমি বললাম,
আপনার দোকানে তো লিখা আছে পাইকারি মুল্যে বিক্রয় করা হয়, এখানে কি সত্যিই পাইকারি মুল্যে বিক্রয় করা হয়?
দোকানদার- হ্যাঁ।
নাফিসা- আমি এই ২টা জামা, খুচরা মূল্যে নিব না। পাইকারি মুল্যে নিবো। খুচরা মূল্য ২৪০০ হলে পাইকারি মুল্য কতো?
দোকানদার- ? এর কম তো হবে না। এটাই পাইকারি মুল্য!
নাফিসা- দর করার আগেতো বলে নিয়েছি খুচরা মূল্য। এখন এটার পাইকারি মূল্য বলুন। না হলে নিবো না। প্যাকেট রেখে চলে আসছিলাম, বিক্রেতা ডাকলেন, এবার ২১০০টাকা তে জামা নিয়ে এলাম ?
বাইরে এসে,
আপু- বাহ! ভালোই তো। ৩০০টাকা বাচিয়ে দিলি। দে টাকা দে।
নাফিসা- কিসের টাকা!
আপু- কেন! এই টাকা আমি দিয়েছি না!
নাফিসা- হুহ! কম দামে কিনে দিয়েছি, এটাই তো বেশি! আবার কিসের টাকা চাও, ভাগো?
আপু- ? ঘুষখোর কোথাকার।
নাফিসা- অই, জামা কেনার আগে কি আমি তোমার কাছে বকশিস নিয়েছি! ঘুষ হলো কিভাবে!,?
আপু- ?
.
.
৬.
নাফিসা- আমি আর আপু রিক্সায় করে বাসায় ফিরছিলাম, এমনিতেই রমজান মাস। তার উপর রিক্সা ওয়ালা গান ধরেছে…..
বন্ধু যখন বউ লইয়া, আমার বাড়ির সামনে দিয়া,
রঙগ কইরা হাইট্টা যায়,
ফাইট্টা যায়, বুকটা ফাইট্টা যায়!
নাফিসা- মামা আপনি তো দেখছি লুইচ্চা! বন্ধুর বউয়ের দিকে নজর দেন। ছি! আর বুক ফাটলে দোকান থেকে সুপার গ্লোব কিনে লাগিয়ে নিন। আজীবন লেগে থাকবে। দাম মাত্র ২০টাকা।
আপু- ???
রিক্সা ওয়ালা – ?
.
.
৭.
২দিন পর ছোট কাকার বড় মেয়ে শিফা ও ছোট মেয়ে রিফা এসে ডেকে নিয়ে গেলো তাদের বাসায়।
– কিরে এভাবে আনলি কেন?
শিফা- ঈদের কেনাকাটা করেছি দেখার জন্য। ?
নাফিসা- তাই নাকি। কই দেখি!
তারপর একে একে সবার জামাকাপড় দেখালো।
নাফিসা- এগুলো কিনেছিস?
শিফা- হুম।
নাফিসা- রিফা, ✂ কাচিটা নিয়ে আয় তো।
শিফা- কাচি দিয়ে কি করবা!
নাফিসা- তুই তো বললি কেনাকাটা করেছিস। কিনেছিস ঠিক আছে, কিন্তু কোনো জামা ই তো কাটা না। দে আমি সব গুলো কেটে দেই। তাহলে কেনা + কাটা = কেনাকাটা হয়ে যাবে।
শিফা- নায়ায়ায়ায়ায়া?!
নাফিসা- ?
.
.
৮.
পরের দিন ভার্সিটি যাচ্ছি,
এক লোক রিকশা নিয়ে মাইকিং করছে,
সম্মানিত রোজাদারগন, আপনাদের জন্য আজ সন্ধ্যায় বিশাল ইফতার মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে।
নাফিসা- আমি রিকশা থামিয়ে বললাম,
ভাইয়া ইফতারে কি কি খাওয়াবে?
লোকটি- কেন, ইফতারে আমরা সাধারণত যা খাই, মুড়ি, পিয়াজু, বেগুনি…..
নাফিসা- এগুলোর কোনোটির আয়তন/পরিসর তো বিশাল না। আপনি বিশাল বললেন কেন?
লোকটি- অনেক লোকের আয়োজন করা হয়েছে তাই।
নাফিসা- তাহলে বলুন, ইফতারের বিশাল মাহফিল।
লোকটি- ?
.
.
৯.
নাফিসা- ক্লাস শেষে বাসায় ফিরছিলাম। পাশেই একটা মেয়েদের উচ্চ বিদ্যালয় আছে। বিদ্যালয়ের ছাত্রীদের ছুটি হয়েছে। দেখলাম গেইটের বিপরীতে ১টা ছেলে দাড়িয়ে আছে। পড়নে টিশার্ট, কাটাছেঁড়া প্যান্ট (বর্তমানে ফ্যাশন যেটাকে বলে), চোখে কালো চশমা (সানগ্লাস)। প্রায়ই দেখি এখানে দাড়িয়ে থাকে। বুঝতে বাকি নেই মেয়ে পটানোর ধান্দা,
পাশে ছিলো চটপটির দোকান। আমি সেখানে গেলাম,
– মামা, ২মিনিটের জন্য আপনার ১টা প্লেট দেয়া যাবে?
মামাও দিয়ে দিলো। কারণ আমি সবসময় এই দোকান থেকে চটপটি কিনি।
আমি প্লেট টা নিয়ে ছেলেটার কাছে গেলাম।
– ভাইয়া, এতা একটু ধরেন তো। আমি ১টা সেল্ফি তুলবো। এটার জন্য পারছি না।
ছেলেটি- আচ্ছা ?।
নাফিসা- প্রথমে আমি একা একটা সেল্ফি তুললাম। তারপর,
– ভাইয়া আপনার একটা ছবি তুলি?
ছেলেটি একটু নেড়েচেড়ে বললো,
– আচ্ছা তুলুন ?
নাফিসা- আমি ছবি তুলে নিলাম। আশেপাশের ছাত্রীরা দেখে অনেকে হাসছে।
-আপনার ফেসবুক আইডির নাম কি?
ছেলেটি- *******
নাফিসা- আচ্ছা, ধন্যবাদ। আমারটা Nur Nafisa. রিকুয়েষ্ট দিবো। এক্সেপ্ট করবেন। ?
ছেলেটি – ওকে ?।
নাফিসা- প্লেট নিয়ে আমি আবার দোকানে দিয়ে বাসায় চলে এলাম।
বিকেলে ফেসবুকে লগ ইন করেই দেখি ওই ছেলে রিকুয়েষ্ট দিয়েছে! আমিও এক্সেপ্ট করে ফেললাম। ১৪ মিনিট আগে এক্টিভ ছিলো। তারপর তাকে ট্যাগ করে তার ছবিটি আপলোড করলাম।
ক্যাপশনে,
*আজকাল মেয়ে পটানোর জন্য স্মার্ট ভিখারি সাজতে হয়। অপূর্ব ??*
ছেলেটির ফ্রেন্ডের সংখ্যা বেশি থাকায় সাথে সাথে লাইক, রিয়েকশন, কমেন্টে ভড়ে গেছে।?
কিছুক্ষণ পর ছেলেটি মেসেজ করলো,
– এটা আপনি কি করেছেন!?
নাফিসা- আপনি এটার উপযোগী ছিলেন। ?
– প্লিজ ডিলিট করুন।
নাফিসা- কেন? ভালোই তো লাগছে আপনাকে কাটাছেঁড়া প্যান্টে। সাথে সুন্দর সুন্দর কমেন্ট। মেয়েরা দেখলেই ফিদা হয়ে যাবে ?
– বোন মাফ করেন। দয়া করে ডিলিট করুন।
নাফিসা- শর্ত আছে।
– কি?
নাফিসা- কাটাছেঁড়া স্টাইল বাদ দিন।
– আজকের পর থেকে আর কখনো দেখবেন না। প্লিজ ডিলিট করুন।
নাফিসা- ওকে। ?
তারপর ডিলিট করে দিলাম। সাথে আইডিটা কে ও ব্লক করলাম।
.
.
এবং ক্ষুদে গল্পটা ও সমাপ্ত করলাম, হিহিহি…..?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here