হয়তো_তোমারি_জন্য?,পর্ব_06

0
1894

হয়তো_তোমারি_জন্য?,পর্ব_০৬
আয়ানা_আরা (ছদ্মনাম)

[আয়ানা নাম দিলে আপনারা বলেন আয়াশের আপন বোন লাগে আর ইনশিরা দিলে বলেন ইনশিরা নাম সুন্দর না আমি আর নাম চেঞ্জ করবো না ইনশিরাই থাকবে।]

নিচে এসে ইনশিরা হাঁপাতে লাগলো। জান যায় যায় অবস্থা ছিলো তার। ইনশিরার বড় ফুপি তাকে ঘামতে দেখে ব্যস্ত হয়ে বলল,”ইনশু!কি হয়েছে তোর?হাঁপাচ্ছিস কেনো?”

ইনশিরা নিজেকে সামলে বলে উঠলো,”নাহ ফুপি কিছু হয় নি।”

ইনশিরার ফুপি মৃদু হেসে বলেন,”আচ্ছা ঠিকাছে,তোর মাকে ফোন দিয়ে আসতে বল।”

ইনশিরা হেসে “আচ্ছা” বলে নিজের মাকে ফোন দিলো।কিছুক্ষন কথা বলে রেখে দিয়ে নিজের ফুপির সাহায্য করতে রান্না ঘরে গেলো। সব কিছু টেবিলে এনে রাখতে রাখতে ওর মাও এসে কলিংবেল চাপলো।

সবাই বসলো লাঞ্চ করতে। ইনশিরার মা আয়াশকে না দেখে বলেন,”আপা আয়াশ কোথায়?ও কি খাবে না?দেখছি না তো ওকে!”

ইনশিরার বড় ফুপিও বলেন,”রুমেই আছে মনে হয়। ঘুমাচ্ছে,কাল রাতে এসেছিলো তো তাই মনে হয় অনেক হয়রান।”

“আচ্ছা তাহলে ওকে ডেকে দিন একসাথেই খাই।”

“আচ্ছা।”বলে আমার উদ্দেশ্যে বললেন,” ইনশু যা তো তোর আয়াশ ভাইয়াকে ডেকে নিয়ে আয়।”

ইনশিরা জোরপূর্বক হেসে সম্মতি জানায়। বাধ্য মেয়ের মতো না চাইতেও আয়াশকে ডাকতে যেতে হয় ওর।

আয়াশের রুমের সামনে দাঁড়িয়ে ভাবছে যাবে কি যাবে না?গেলে তো এই লোক আবার অপমান করবে ভেবেই মুখটা ছোট হয়ে গেলো ওর। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ঘরে ঢুকে পরে। চোখ বন্ধ রেখেই বলে,”আয়াশ ভাইয়া!ফুপি তোমাকে খেতে ডেকেছে। জলদি আসো।”

ভ্রুজোড়া কুচকে যায় আয়াশের। বুকে হাত গুজে ইনশিরার উদ্দেশ্যে বলল,”কিরে এইটা বলতে তোর চোখ বন্ধ রাখা লাগে?”

ইনশিরা চোখ জোড়া খুলে,ঠোঁট কামড়ে বলে,”মানে আসলে….

আয়াশ ভ্রুনাঁচিয়ে বলে,”কি আসলে নকলে করছিস?”

“ফুপি তোমাকে যেতে বলেছে চলো প্লিজ!”

আয়াশ নিজের চোখজোড়া ইনশিরার মধ্যেই সীমাবদ্ধ রেখে বলল,”তুই যা আমি আসছি।”

ইনশিরা আর এক মুহুর্তও না থেকে দ্রুত পায়ে ঘর থেকে চলে যায় আয়াশ তা দেখে মুচকি হেসে উঠে দাড়ালো। ফ্রেশ হয়ে নিচে এসে ইনশিরার পাশের চেয়ারে বসলো। ইনশিরা বড় বড় চোখ করে আয়াশের দিকে তাকালো যে কিনা ওর পাশেও বসতে ওকে কথা শোনাতো আজ সে তার পাশে বসেছে?মনে হয় না নিজ ইচ্ছায় বসেছে আগের বারের মতো।

আয়াশ গম্ভির মুখ করে খাওয়া শেষ করলো। ইনশিরাও খেয়ে নিলো। ইনশিরার ফুপি ইনশিরার উদ্দেশ্যে বলে উঠেন,”কেমন হয়েছে রান্না?ভালো লেগেছে তোর?”

ইনশিরা মৃদু হেসে বলে,”কি যে বলো না ফুপি তোমার হাতের রান্না তো জাস্ট ফাটাফাটি। এতো মজাদার খাবার কিভাবে বানাতো পারো?আমাকে শিখিও তো।”

ইনশিরার ফুপি ইনশিরার কথায় হেসে বলেন,”অবশ্যই আসিস একদিন সময় করে সব শিখিয়ে দিবো নে।”

বড্ড আদরের ভাতিজি ইনশিরা তার। হবেই বা না কেনো আদরের ছোট ভাইয়ের মেয়ে বলে কথা!ইনশিরাও উনার সাথে অনেক ফ্রি।

ইনশিরার আম্মু আর ফুপি মিলে গল্প করা শুরু করলো ইনশিরাও তাদের সাথে যোগ দিতে গেলেই আয়াশ খোঁচা মেরে বলে উঠে,”ছি ইনশু তোর কাছ থেকে এইটা আশা করি নি?এখন তুই সাস বাহু সিরিয়ালের মতো কুটনামি করবি?”

ইনশিরা জমে যায়। কয় বছর পর আয়াশের মুখে ইনশু ডাক শুনছে ভেবে পায় না!অজান্তেই ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে উঠে। আয়াশের দিকে তাকিয়ে হেসে বলে,”কেনো তুমিও যোগদান করতে চাও নাকি বুঝি?”

আয়াশ আড়চোখে ইনশিরার দিকে তাকিয়ে বলল,”ওয়াট!তুই কি আমাকে নিজের মতো ভাবছিস?আমার কি কাজ নাই কুটনামি করবো!”

ইনশিরা হেসে বলে,”কিভাবে বুঝলা ফুপি আর আম্মু কুটনামি করছে কারো?তুমিও কি কুটনামি করছো নাকি?”

আয়াশ বিরক্তি নিয়ে বলে,”দেখ তো কিভাবে ফুসুরগুসুর করতেছে যে কেউ দেখলে ভাববে কারো বদনাম করতেছে।”

ইনশিরাও তাকিয়ে দেখলো ঠিকই তো!দেখে মনে হচ্ছে কারো নামে আসলেই বদনাম করছে। একদম ফিসফিসিয়ে। ইনশিরা নিজের হাসি সংযত রেখে বলে,”আচ্ছা বুঝেছি তুমি জানি কোথায় যেতে নিচ্ছিলে?”

আয়াশ একবার নিজের হাতের ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বলল,”দেখেছিস ইনশু তোর জন্য আমার কতো লেট হয়ে গেলো। কাজেও যেতে হবে এখন।”

“আমি তোমাকে দেরী করাই নি তুমি তো গল্পে যোগদান দিতে……

ইনশিরার সম্পূর্ণ কথা শেষ না করতে দিয়ে আয়াশ থামিয়ে বলে,” হয়েছে তোর?আর কতো শোনাবি এইটা নিয়ে কথা থাম এইবার।”

ইনশিরা হেসে বলে,”হিহিহি টাটা যাও।”

আয়াশ চলে যেতেই ও যোগদান দিলো নিজের মা ফুপির আড্ডায়। আড্ডা শেষ হতেই ওর ফুপি বলে উঠে, “আচ্ছা শুনো ইনশিরার মা।”

“হুম বলেন আপা।”

“কাল আমি মুক্তার বাসায় যাবো। তুমি যাবা নাকি?”

ইনশিরার মা কিছুক্ষন ভেবে বলেন,”হ্যা আপা যাবো।”

১৪.
ইনশিরা বাসায় এসে নিজের রুমে যেয়ে বিছানায় শুয়ে ফেসবুকে লগ ইন করলো। আয়াশের আইডি ঘাটতে লাগলো। আয়াশকে একটা মেয়ের সাথে ছবি তুলতে দেখে যেনো ইনশিরার রাগে গা জ্বলে পুড়ে যাচ্ছে বিরবির করে বলল,”ওরে দেখো তো মেয়েদের সাথে ছবি তুলার জন্য কি খুশি। হুহ!কতো হাসি খুশি দেখাচ্ছে তাকে আর আমার সাথে একটু ভালো করে হেসেও কথা বলতে পারে না।”

আয়াশ ইচ্ছেমতো গালি দিতে দিতে ফোনটা রেখে দেয়। ভেবেই নিলো এই লোকের সাথে আর কোনোদিনও কথা বলবে না। তখন এমনি এমনিই আসবে কথা বলতে। হুহ!

বিছানা ছেড়ে উঠে গেলো। ভাবলো আজ নিচে যাবে খেলতে। ইনশিরাদের বাড়ির নিচে অনেক বড় একটা জায়গা আছে খেলার জন্য। অনেক বাচ্চারা বিকালে খেলতে আসে তাদের সাথে ব্যাডমিনতন খেলতে মাঝে মাঝে ইনশিরাও যোগ দেয় কারণ ব্যাডমিনটন ও অনেক ভালো পারে এবং ওর আনন্দও লাগে বাচ্চাদের সাথে খেলতে।

ইনশিরা নিজের মাকে বলে নিচে আসতেই কিছু বাচ্চারা ওকে ঘিরে ধরে। রাইয়ান বলল,”আপু তুমি এসেছো কতোদিন পর!কেমন কেটেছে তোমার চট্টগ্রামে বললে না তো?”

ইনশিরা হেসে রাইয়ানকে বলে,”অনেক ভালো কেটেছিলো। আজ খেলবি না তোরা ব্যাডমিনটন?”

“হ্যা খেলবো তো। তুমিও খেলবা।”

“তোর খেলবি আর আমি খেলবো না এইটা কোনো কথা নাকি।”

শুরু হলো ইনশিরার আনন্দের সময়। ব্যাডমিনটন খেলতে খেলতে ইনশিরার ব্যাট টাচ হয়ে যায় সাথে সাথেই সব বাচ্চারা বলে উঠলো,”ব্যাট টাচ তুমি আউট আর খেলতে পারবে না।”

ইনশিরা বলল,”কেনো কেনো?কিসের ব্যাট টাচ হুম?কোনো ব্যাট টাচ না আমি আউটও না গেইম থেকে।”

ইনশিরা ওদের সাথে এই নিয়ে ঝগড়া করতে লাগলো। এক পর্যায়ে ওরা হেরে বলল,”ঠিক আছে তুমি ব্যাট টাচ না। যদিও তুমি চিটিং করেছো।”

ইনশিরা শয়তানি হেসে আবার খেলতে লাগলো।খেলতে খেলতে হঠাৎই ইনশিরার ককটা উড়ে কোথাও চলে যায়। ইনশিরা বলল,”নিয়ে আয় তো তোরা!”

এইবার ওরা সবাই রেগে বলল,”নাহ তুমি নিয়ে আসবে। এখন যদি এটা টাক্কু কাকা হয় তাহলে তো আমরা শেষ সাথে তুমিও।”

ইনশিরা ভয়ে ঢোক গিলে বলে,”কিসের টাক্কু কাকা?তোরা উনারে ভয় পাস।লজ্জা করে না আবার বলিস?”

সবাই ছোট ছোট চোখ করে বলে,”তুমি যদি এতোই সাহসী তাহলে তুমি যেয়ে নিয়ে আসো না শুধু শুধু আমরা যাবো কেনো?”

“এ্য্যহ!”

রাকিব বলে উঠে,”হ্যা তুমিই যাবে। প্রথমত তুমি বড় দিত্বীয়ত তুমি ককটা উড়িয়েছো।”

“আনতেছি ফ্রিতে জ্ঞান দেওয়া বন্ধ কর।”

বলে চলে যেতে লাগলো…

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here