তোমায়_পাবো_বলে,পর্ব_১৯
নিশাত_জাহান_নিশি
“কি হয়েছে ভাই? আমার ছেলের সাথে আপনি উচ্চ আওয়াজে কথা বলছেন কেনো? কি করেছে কি আমার ছেলে?
রাগটা কিঞ্চিৎ কমিয়ে নিতে আব্বু চেষ্টায় লিপ্ত আছেন প্রায়। হয়তো বা আন্টির সম্মুখে রাগটাকে অত্যধিক প্রশ্রয় দিতে চাইছেন না। পরশের প্রতি আব্বুর রাগটা প্রচন্ড রকম হলে ও পরশের মা কে বোধ হয় অপমান করতে চাইছেন না। হাজার হলে ও অতিথি তো। বিবেকে সামান্য হলে ও আঘাত প্রাপ্ত হওয়াটা স্বাভাবিক। আম্মুকে উদ্দেশ্য করে আব্বু সাবলীল গলায় বললেন,,
“সাইদা। দরজাটা আগে লক করো। বাইরে অতিথি-মেহমানরা আছেন। বিশেষ করে পাড়ার লোকরা। তোমার মেয়ের কুকীর্তি শুনলে পাড়ায় পাড়ায় যতো গুজব আছে সব রটাবে। মান-সম্মান নিলামে উঠবে আমাদের।”
তড়িঘড়ি করে আম্মু রুমের দরজাটা আটকে দিলেন। আতঙ্কিত গলায় আব্বুকে শুধিয়ে বললেন,,
“কি হয়েছে টয়ার বাবা? আমাদের মেয়ে কি করেছে?”
“কি না করে নি তা বলো। প্রয়োজনের তুলনায় মেয়েকে বেশি প্রশ্রয় দিয়ে ফেলেছিলাম আমরা। যার কারনে আজ এই দিনটা দেখতে হচ্ছে আমাদের!”
আম্মুসহ, চাচীমনি, বড় আপু এবং মিলি আপু আমার পাশে দাঁড়িয়ে বৃত্তান্ত জানতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। আম্মু কেবল দাঁতে দাঁত চেঁপে আমায় শাসাচ্ছেন। নানা ধরনের প্রশ্নে আমায় রীতিমতো জর্জরিত করে তুলছেন। মাথা নুঁইয়ে আমি অশ্রুবিসর্জন করতে ব্যস্ত প্রায়। কি বলব আমি? কি উত্তর দিবো তাদের? সবাই তো আব্বুর মতো আমাদেরই ভুল বুঝবেন। এই বিরূপ পরিস্থিতিতে আদৌ কিছু বলার আছে কি আমার? স্বপ্নে ও ভাবি নি কখনো এরকম ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে আমার।
ইতোমধ্যেই পরশের মা দৌঁড়ে এলেন পরশের কাছে। মাথা নুঁইয়ে রাখা পরশকে অনবরত ঝাঁকিয়ে উদ্বিগ্ন গলায় বললেন,,
“কি হয়েছে বাবা? তুই কি করেছিস? কি কারনে টয়ার বাবা তোর সাথে এতো উঁচু গলায় কথা বলছিলেন?”
আব্বু পুনরায় উঁচু গলায় আন্টিকে শুধিয়ে বললেন,,
“আপনার ছেলে কি বলবে বলুন? কি বলার আছে আপনার ছেলের? শুনুন আমি বলছি। আপনার ছেলে আমার মেয়ের দুর্বলতার সুযোগ নিচ্ছিলো। আমার মেয়ের সর্বনাশ করছিলো। ঘনিষ্ঠ অবস্থায় আমি এদের দুজনকে দেখেছি!”
আব্বুর বলা কঠোরক্তি শেষ হতে না হতেই মিলি আপু বাজখাই গলায় প্রত্যত্তুরে আব্বুকে বললেন,,
“তোমার কোথাও ভুল হচ্ছে জেঠু। পরশ কখন ও স্ব-ইচ্ছায় টয়ার সাথে ঘনিষ্ঠ হতে পারে না।টয়া নিশ্চয়ই পরশকে ফাসিয়েছিলো! পরশকে ইন্ধন যুগিয়েছিলো!”
চোখ জোড়া জল নিয়ে আমি হতভম্ব দৃষ্টিতে মিলি আপুর দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করলাম। উপস্থিত সবাই তাজ্জব দৃৃষ্টিতে মিলি আপুর দিকে চেয়ে আছে। আন্টি ও সমভাবে মিলি আপুর সাথে তাল মিলিয়ে আব্বুকে বললেন,,
“মিলি একদম ঠিক বলেছে ভাই। আপনার মেয়ে টয়াই ইচ্ছেপূর্বক ভাবে আমার ছেলেকে ফাসি….
প্রচন্ড রেগে উঠে পরশ আন্টিকে থামিয়ে ঝাঁঝালো গলায় বললেন,,
“ছিঃ মা ছিঃ। শেষ পর্যন্ত তুমি ও মিলির সাথে তাল মিলালে? মানে পুরো ঘটনাটা যাচাই বাছাই না করেই? টয়া তোমার কি ক্ষতি করেছিলো মা? শুধু তোমার ছেলেকে সামান্য বর্বর বলেছিলো বলেই তোমার এতো রাগ? কখন ও জানতে চেয়েছ? টয়া কেনো কি, কারনে আমায় বর্বর বলেছিলো? তার যথেষ্ট কারন ছিলো মা। টয়ার সাথে আমার ব্যবহারটাই কেমন যেনো বর্বর রকমের ছিলো। হিমেশের সাথে টয়ার বিয়েটা আমি মেনে নিতে পারছিলাম না। হিমেশকে খোঁজার বিষয়টা ও আমার পছন্দ ছিলো না। তাই আমি অসহনীয় রাগে, জেদে টয়ার সাথে খারাপ ব্যবহার করতে এক প্রকার বাধ্য হয়েছিলাম। চেয়ে ও আমি নিজের হিংসাত্নক ভাবটাকে আটকে রাখতে পারছিলাম না। যার ফলস্বরূপ টয়া আমাকে বর্বর ভাবতে আরম্ভ করেছিলো। টয়াকে আমি আজ, কাল ভালোবাসি না মা। দীর্ঘ দু বছর ধরে আমি টয়াকে ভালোবেসে আসছি! দু বছর পূর্বে যখন আমি টয়াকে প্রথম বারের মতো দেখেছিলাম, তখন থেকেই আমি টয়াকে উন্মাদের মতো ভালোবেসে এসেছি। আর আজ দু বছর পর, টয়া ও আমাকে ভালোবাসতে শুরু করেছে। মাঝখান থেকে তুমিই অহেতুক মিলিকে টেনে আনলে। শুনছি মিলির সাথে তুমি আমার বিয়ে ও ঠিক করেছ? যদি এই তোমার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়ে থাকে তবে শুনে রাখো মা, আমি এই বিয়েতে এক রত্তি ও রাজি নই। টয়াকে ভালোবাসি আমি। আর যদি বিয়ে করতে হয় আমি টয়াকেই বিয়ে করব!”
মুহূর্তের মধ্যেই পুরো রুম নিস্তব্ধতায় ছেঁয়ে গেল। সবাই হতবাক ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে পড়েছে। মিলি আপু উড়নার আঁচল চেঁপে কাঁদতে আরম্ভ করেছে। পরশ অত্যধিক রাগে এখন ও ফুসফুস করছেন। আন্টি হঠাৎ মাথা নুঁইয়ে হয়ত বা নিজের বিবেকের সাথে লড়তে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। ইতোমধ্যেই আব্বু তটস্থ গলায় পরশকে শাসিয়ে বললেন,,
“আমি আমার কোনো মেয়েকেই তোমার সাথে বিয়ে দিতে রাজি নই। এবার তুমি যা করার করো!”
কপালের অগ্রভাবে লেপ্টে থাকা চুল গুলো পেছনের দিকে ঠেলে পরশ শার্টের কলারটা ঠিক করে রাগ আয়ত্তের চেষ্টায় নিরুপায় হয়ে প্রত্যত্তুরে আব্বুকে শাসিয়ে বললেন,,
“আপনার দুই মেয়েকেই আপনি শোকেসে সাজিয়ে রাখুন। শো-পিস হিসেবে!”
রাগে গজগজ করে পরশ এবার আন্টিকে তিরিক্ষিপূর্ণ গলায় বললেন,,
“ঢাকায় ফিরছি আমি। আই হোপ তুমি ও এখানে দাঁড়িয়ে থাকবে না?”
পরশ শেষ বারের মতো আমার দিকে একবার শান্ত দৃষ্টি নিক্ষেপ করলেন। কান্নার স্রোত যেনো আমার দ্বিগুন হারে বৃদ্ধি পাচ্ছিলো। লোকটা কি তবে সত্যি সত্যিই চলে যাবেন? সত্যিই লোকটাকে আর পাওয়া হবে না আমার? আব্বুর সাথে রাগ দেখিয়ে লোকটা বুঝি এবার আমায় চূড়ান্তইাবেই অস্বীকার করছেন? আমাদের ভালোবাসাটা কি তবে এভাবেই অপূর্ণ রয়ে যাবে? কখন ও এক হতে পারব না আমরা? লোকটাকে ছাড়া কিভাবে বাঁচব আমি? সুস্থভাবে নিশ্বাস নিতে পারব তো?
চোখের কোটরে এক পশলা বৃষ্টি সমেত পরশ রুম থেকে প্রস্থান নিলেন। তাৎক্ষণিক ফুঁফিয়ে কেঁদে উঠলাম আমি। আম্মু পাশ থেকে রাগে ফুসফুস করছেন। মিলি আপু হঠাৎ কান্না জড়িত গলায় পেছন থেকে পরশকে ডেকে বললেন,,
“পরশ প্লিজ কোথাও যাবেন না আপনি। সত্যি বলছি আমি আপনাকে টয়ার তুলনায় বেশি ভালোবাসি। প্লিজ আমার ভালোবাসাটাকে এভাবে অস্বীকার করবেন না।”
পরশ এক রত্তি ও দাঁড়ালেন না। মুহূর্তের মধ্যে সবার দৃষ্টি থেকে উধাও হয়ে গেলেন। অপারগ হয়ে মিলি আপু আব্বুর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বললেন,,
“জেঠু প্লিজ। তুমি এতটা নির্দয় হয়ো না। পরশকে থামাও। পরশের সাথে আমার বিয়ে ঠিক হচ্ছে! পরশকে আমি ভালোবাসি জেঠু।”
পেছন থেকে চাচীমনি এসে মিলি আপুর হাত চেঁপে ধরে রাগে গজগজ করে মিলি আপুকে শাসিয়ে বললেন,,
“শুনিস নি তুই? তোর জেঠু কি বলেছেন? পরশের সাথে তোদের কারো বিয়ে হবে না। অযথা কথা না বাড়িয়ে রুমে চল।”
চাচীমনি মিলি আপুকে জোর করে টেনে হেছড়ে রুম থেকে বের করতেই মিলি আপু দরজার বাইরে থেকে চিৎকার করে আমার উপর রাগ ঝাঁড়তে বললেন,,
“তোকে আমি ছাড়ব না টয়া। তোর জন্যই আজ পরশকে এতটা অপমানিত হয়ে এই বাড়ি ছাড়তে হলো। আমার বিয়েটা ও ভেঙ্গে গেলো!”
ইতোমধ্যেই আম্মু অধিক রাগান্বিত হয়ে আমার থুতনী চেঁপে ধরে দাঁতে দাঁত চেঁপে বললেন,,
“শুধুমাএ তোর জন্য আমাদের পরিবারের বদনাম হচ্ছে। প্রথম বিয়েটা তো ভেঙ্গেই গেলো। দ্বিতীয় বিয়েটা যা ও পিয়াসের সাথে ঠিক করেছিলাম, এখন এই বিয়েটা ও ভেঙ্গে যাওয়ার পথে। গোপনে একটা ছেলের সাথে নষ্টামি করছিলি তুই। এই খবরটা জানার পর কোন ভালো পরিবারের ছেলে তোকে বিয়ে করবে রে? কেনো তোকে জন্ম দেওয়ার পর পরই বিষ খাইয়ে মেরে ফেললাম না আমি? তোকে জন্ম দিয়ে বুঝি আমি এতোটাই পাপ করেছিলাম? যে পাপের ফলস্বরূপ সবার সামনে তোর বাবাকে, আমাকে অপমানিত হতে হচ্ছে?”
আন্টি হনহনিয়ে রুম থেকে প্রস্থান নিলেন। এই অপ্রীতিকর পরিস্থিতিতে হয়তো নিজেকে বড্ড বেমানান মনে করছেন। আব্বু আমার দিকে তেড়ে এসে আম্মুকে শাসিয়ে বললেন,,
“রুম বন্ধী করে রাখো তোমার এই বিগড়ে যাওয়া মেয়েকে। পিয়াসের সাথে পুরোপুরি বিয়েটা ঠিক না হওয়া অবধি এই মেয়েকে রুম থেকে বের হতে দিবে না। আর শুনো? বড় আপা যেনো এই বিষয়ে কিছু না জানেন। জেনে শুনে নিশ্চয়ই তোমার এই অসভ্য মেয়েকে নিজের ঘরের বউ করে নিবেন না? আসলে আমাদেরই ভুল ছিলো। হিমেশের খুঁজে এই মেয়েকে পরশদের বাড়ি পাঠানো। ওখানে গিয়েই মেয়ে আমার বিগড়ে এসেছে। ছিঃ! লজ্জা করছে আমার এই মেয়ের চোখে চোখ মেলাতে!”
আব্বু প্রস্থান নিলেন। আম্মু এখন ও আমার থুতনী চেঁপে ধরে আছেন। চোখ থেকে টলটলিয়ে পানি পড়ছে আমার। ব্যথায়, যন্ত্রনায়, ভেতরের নিগূড় জ্বলনে আমি অতিষ্ঠ প্রায়। মুখ ফুটে আর্তনাদ প্রকাশ করার শক্তিটা ও কুলাতে পারছি না। আমার অসহনীয় অবস্থা দেখা মাএই আম্মু চট জলদি আমার থুতনীটা ছেড়ে ধাক্কা মেরে আমাকে বিছানায় ছিটকে ফেলে চোয়াল শক্ত করে বললেন,,
“শুনেছিস তো? তোর বাবা কি বলে গেছেন? আজ থেকে তুই রুম বন্ধী! আর তোর বিয়েটা ও পিয়াসের সাথেই হবে!”
আম্মুর থেকে ছাড়া পেয়ে আমি হেচকি তুলে কেঁদে বললাম,,
“কিন্তু পিয়াস ভাই তো মিলি আপুকে ভালোবাসেন আম্মু!”
“মিলি পিয়াসকে চায় না! তাছাড়া মিলির বাবা মা ও এই বিয়েতে রাজি নন। তাই পিয়াসের বিয়েটা তোর সাথেই হবে!”
“আমি ও তো পিয়াস ভাইকে চাই না আম্মু। তোমরা হাতে ধরে চার চারটে জীবন নষ্ট করছ। অন্যায় করছ তোমরা!”
“আমরা কারো জীবন নষ্ট করছি না। বড় আপাকে তোর আব্বু কথা দিয়েছিলেন তোর সাথেই পিয়াসের বিয়েটা হবে। আমরা আমাদের ওয়াদা ভঙ্গ করতে পারব না। তাছাড়া পিয়াস খুব ভালো ছেলে। একমাএ পিয়াস ই আছে যে তোকে জেনে শুনে বিয়ে করতে রাজি হবে। বাকিরা তোর হিস্ট্রি শুনলেই দৌঁড়ে পালাবে। বিয়েটা হতে দে শুধু। পিয়াস ও তোকে মেনে নিবে। আর তুই ও আস্তে ধীরে পিয়াসকে মেনে নিবি!”
“আমি পরশকে ছাড়া অন্য কাউকে বিয়ে করতে পারব না আম্মু। প্লিজ আমার কথাটা বুঝার চেষ্টা করো!”
আম্মু সম্পূর্ণ নারাজ আমার অভিব্যক্তি শুনতে। রুম থেকে প্রস্থান নিয়ে আম্মু দরজাটা বাইরে থেকে লক করে দিলেন। ফুঁফিয়ে কেঁদে আমি দরজায় অনেকক্ষন যাবত করাঘাত করে ও কাউকে ফেরাতে পারলাম না। দৌঁড়ে আমি জানালার দিকটায় আগমন করতেই দেখলাম পরশ, আন্টি, পিয়ালী আপু এবং পায়েল, হিমেশ মাথা নুঁইয়ে বাড়ির মেইন গেইট থেকে প্রস্থান নিচ্ছেন। আজ আমার জন্য উনাদের চরম অপমানিত হয়ে বাড়ি থেকে বের হতে হলো। সব দোষ আমার! আমার নির্বুদ্ধিতা, সিদ্ধান্তহীনতা এবং হুটহাট মুড সুইং এর কারনে আজ এই দিনটা দেখতে হলো। কারো জীবনেই আমি পার্ফেক্ট নই। নিজের মা-বাবার জীবনে ও আমি কাল হয়ে এসেছি। আমায় জন্ম দিয়ে অবশ্যই তারা পাপ করেছেন! যে পাপের ফল আমার সাথে জড়িত সবক’টা কাছের মানুষকে ভোগ করতে হচ্ছে। এখন আমি নিজেই নিজের প্রতি বিরক্ত। বিরক্তি যখন তিক্ততায় পরিনত হবে তখন আমার আত্মাহুতি হবে!
,
,
কেটে গেলো ১৫ দিন মাঝখানে। আমি এখন ও পূর্বের ন্যায় রুম বন্ধী! শুধু খাবার সময় খাবারটা এসে বাধ্য হয়ে দিয়ে যান আমার আম্মু। পরশের সাথে ঐ দিনের পর থেকে আমার সমস্ত যোগাযোগ বন্ধ! পরশ ও কোনো রূপ চেষ্টা করছেন না আমার সাথে যোগাযোগ করার! অবশ্য চেষ্টা করবেন কিভাবে? আমার সাথে তো কোনো সেলফোন ও নেই। যে ফোন কল করে আমার খবরাখবর জিগ্যেস করবেন! পরিবারের কেউ আমাকে দেখতে আসছেন না পর্যন্ত। সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ আমার রুমে প্রবেশ। আগামী সপ্তাহে পিয়াস ভাইয়ার সাথে আমার বিয়ের ডেইট ফিক্সড করা হয়েছে! শুনলাম পিয়াস ভাই ও কোনো অমত করেন নি এই বিয়েতে! কিন্তু কেনো? পিয়াস ভাই তো মিলি আপুকে ভালোবাসেন। তাহলে মিলি আপুকে ছেড়ে ভাইয়া কেনো আমাকে বিয়ে করতে রাজি হলেন? তবে কি মিলি আপুর জেদের কাছে ভাইয়ার ভালোবাসা ও হার মেনে গেছে?
রাত প্রায় ১২ টার কাছাকাছি। উন্মুক্ত চুলে ফ্লোরে উবুড় হয়ে শুয়ে আছি আমি। পাখার বাতাসে শীত শীত অনুভূতিটা প্রকট ভাবে হানা দিচ্ছে লোমকূপে। তবু ও ইচ্ছে করছে না আলসেমি কেটে পাখার সুইচটা অফ করতে। ভেজায় বিরক্তিকর ঠেঁকছে সবকিছু। ইদানিং কাঁদতে ও ইচ্ছে করছে না। চোখ থেকে বৃষ্টির কোনো হদিসই মিলছে না। মেঘ বোধ হয় শুকিয়ে গেছে! খাবারের গোল থালাটা সামনে থাকলে ও খাওয়ার ইচ্ছেটা মৃতপ্রায়। শরীরটা শুকিয়ে একদম একটু খানি হয়ে গেছে। আমার শরীরের এই অবনতি কারো চোখেই যেনো পড়ছে না। পরিবারের প্রতিটা সদস্য আমায় শাস্তি দিতে বেশ উঠে পড়ে লেগেছে। ক্লান্ত আঁখি জোড়ায় হুট করে তন্দ্রা ধরা দিতেই আমি কাঁধ বাঁকিয়ে আঁখি জোড়া বুজে নিলাম। কিছু সময় পর আচম্বিতে আমার চেতনা শক্তিতে দরজা খোলার বিকট শব্দ সক্রিয় হলো। তাড়াহুড়ো করে আমি শোয়া থেকে উঠে দরজার দিকে পূর্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করতেই অবিশ্বাস্য ভাবে পিয়াস ভাইকে দেখতে পেলাম। চোরের মতো এক পা দু পা ফেলে পিয়াস ভাই আমার রুমে প্রবেশ করে আমার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে মন্থর গলায় আমায় বললেন,,
“চল আমার সাথে!”
“কোথায়?”
“প্লিজ এখন কোনো প্রশ্ন করিস না। এই মুহূর্তে এই বাড়ি থেকে বের হওয়াটা ভীষণ জরুরী! শুধু এতটুকু জেনে রাখ, তোর সাথে আমার বিয়েটা হচ্ছে না।”
কিছু বুঝে উঠার পূর্বেই পিয়াস ভাই আমার হাত ধরে রুম থেকে প্রস্থান নিলেন। দরজাটা বাইরে থেকে লক করে পিয়াস ভাই আমায় নিয়ে পা টিপে টিপে হেঁটে বাড়ির সদর দরজা অবধি চলে এলেন। হালকা হাতে আমাকে ধাক্কা দিয়ে বাড়ি থেকে বের করে পিয়াস ভাই নিম্ন আওয়াজে বললেন,,
“বাড়ির মেইন গেইটে পরশ তোর জন্য অপেক্ষা করছে। যতো দ্রুত সম্ভব তোরা পালিয়ে যা। আমি এই দিকটা ম্যানেজ করে নিবো!”
শুকনো মুখে আমি পিয়াস ভাইকে শুধিয়ে বললাম,,
“কিন্তু তুমি? তুমি কিভাবে একা সবাইকে ট্যাকাল দিবে?”
“পারব আমি। তুই প্লিজ যা!”
“আম্মু, আব্বু আর কখনো আমার মুখ দেখবেন না পিয়াস ভাই। এই পর্যায়ে এসে আমি আবার ও তাদের বদনাম করব?”
“ভালো কিছু পেতে হলে কিছু দিক ছাড়তে হয়। আঙ্কেল, আন্টি যা করছিলেন অন্যায় করছিলেন। আমাদের চার চারটে জীবন নষ্ট করে দিচ্ছিলেন। মিলিকে ছাড়া আমি অন্য কাউকে বিয়ে করতে পারব না। পরশের সাথে তোর বিয়েটা হলেই তবে আমার মিলিকে পাওয়া হবে। তোকে এতকিছু নিয়ে ভাবতে হবে না প্লিজ। তুই এখন যা!”
আর মুহূর্ত ও বিলম্ব করলাম না আমি। হাসি মুখে দৌঁড়ে বাড়ির মেইন গেইট পেরিয়ে রাস্তার পাশ ঘেঁষে দাঁড়াতেই ল্যামপোস্টের ঠিক নিচে বাইকের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা পরশকে দেখলাম। অস্থিরতা নিয়ে লোকটা আশপাশ তাকাচ্ছেন। আমাকে দেখা মাএই স্বস্তির শ্বাস নির্গত করে লোকটা চট জলদি বাইকে উঠে বাইকটা ঘুড়িয়ে রাস্তার এপাশে চলে এলেন। তড়িঘড়ি করে হেলম্যাট টা আমার দিকে এগিয়ে লোকটা অনর্গল গলায় বললেন,,
“তাড়াতাড়ি গাড়িতে উঠো। ওয়েট ওয়েট আগে হেলম্যাট টা পড়ো!”
হেলম্যাট টা পড়ে আমি তাড়াহুড়ো করে বাইকে উঠে লোকটার কাঁধে হাত রাখতেই লোকটা ফুল স্পীডে বাইকটা ছেড়ে দিলেন। হাজারো প্রশ্ন নিয়ে আমি জিগ্যাসু গলায় লোকটাকে বললাম,,
“কোথায় যাচ্ছি আমরা?”
“আপাতত হিমেশের বাড়ি!”
“আপাতত মানে?”
“বিয়ের পর মানে কাল সকালেই আমরা সিলেট রওনা হচ্ছি!”
“আপনার বাড়ি রেখে হঠাৎ সিলেট কেনো যাবো?”
“কারন আম্মু আমাদের এই বিয়েতে রাজি নন! তোমার কালপ্রিট বাবার জন্য অনেক অপমানিত হয়েছেন তো তাই!”
চলবে…?