তোমায়_পাবো_বলে,পর্ব_২৮
নিশাত_জাহান_নিশি
“এই ছেলেটাকে তুই ভালোবেসেছিলি না? শুধু মাত্র এই ছেলেটার জন্যই তুই ঘুমের ওভার ডোজ নিয়েছিলি? দেখলি তো? কত বড় ধপবাজ এই ছেলে! শুনে রাখ তুই? এই পরশ, তোর ভাই কথা দিচ্ছে। এই এক সপ্তাহের মধ্যে এর’চে শতগুন যোগ্য ছেলের সাথে আমি তোর বিয়ে দিব৷ আর হিমেশই হবে তোর
সেই যোগ্য পাত্র!”
আমার অতি সূক্ষ্ম দৃষ্টি পায়েলের দিকে সীমাবদ্ধ। পায়েলের প্রতিক্রিয়া আমি লক্ষ্য করতে চাইছি। কিয়ৎক্ষনের মধ্যেই আমার হিসেব মিলে গেল! পায়েল সত্যিই হিমেশ ভাইকে মন বিলি করে বসে আছে। বিষয়টা যে শুধু ভালো লাগাতেই একপাক্ষিক ভাবে সীমাবদ্ধ এমনটা কিন্তু নয়। বিষয়টা অতি পূর্ব থেকেই যে ভালোবাসাতে রূপান্তরিত হয়ে আছে বুঝতে বেশি বেগ পেতে হলো না আমার। পায়েলের আহত দৃষ্টিতে বৃষ্টির রেখা প্রতীয়মান হতেই পায়েল এক ছুট দিলো নিজ কক্ষের দিকে। পারিপার্শ্বিক ভয়াবহ পরিস্থিতি উপেক্ষা করে আমি ও অনুসরন করলাম পায়েলকে। ড্রইং রুমের ঠিক শেষ প্রান্তে এসে পেছন থেকে আমি পায়েলের ডান হাতটা টেনে ধরে হাঁফিয়ে উঠা গলায় পায়েলের দিকে প্রশ্ন ছুড়ে বললাম,,
“সত্যিই কি ভালোবাসো হিমেশ ভাইকে?”
পায়েল থমকালো। কান্নার বেগ কমিয়ে ঘাড় বাঁকিয়ে নির্বাক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকালো। পায়েলের অশ্রুসিক্ত নয়ন যুগলে দৃষ্টি মিলিয়ে আমি পুনরায় জিগ্যাসু গলায় বললাম,,
“কি হলো? ভালোবাসো হিমেশ ভাইকে?”
কিঞ্চিৎ মুহূর্তের মধ্যেই পায়েল আচম্বিতে আমায় আষ্টেপৃষ্টে ঝাপটে ধরল। হেচকি তুলে কেঁদে পায়েল অস্ফুটে স্বরে বলল,,
“হ্যাঁ বাসি। আমি হিমেশ ভাইকে ভালোবাসি। সেই চার বছর পূর্ব থেকেই পাগলের মতো ভালোবেসে আসছি। যখন থেকে পরশ ভাইয়ার সাথে হিমেশ ভাইয়ার বন্ধুত্ব হয়। তখন সবে মাত্র দশম শ্রেণিতে পড়ুয়া একজন নাবালিকা ছিলাম আমি। ভালোবাসার অতি তীব্র অনুভূতি গুলো উপলব্ধি শক্তির বাইরে ছিল আমার। তবে এতটুকু ঠিকই বুঝতে পারতাম, যে হ্যাঁ হিমেশ ভাইকে আমার ভালো লাগে! একটু একটু করে কখন যেন সেই ভালো লাগা গুলো ভালোবাসায় রূপান্তরিত হলো বুঝতেই পারি নি আমি। যখন বুঝতে পারলাম আমি উনাকে ভালোবাসি তখনই জানতে পারলাম, হিমেশ ভাই অন্য একজনকে ভালোবাসেন, অন্য একজনের প্রতি আসক্ত উনি! আর সে হলেন, তোমার বড় বোন ফারিহা আপু। ভীষন কষ্ট পেয়েছিলাম তখন। তবে বিষয়টা প্রকাশ্যে আনতে চাই নি। বয়ঃসন্ধি কালের ভুল বলে মেনে নিয়েছিলাম সব বিষয়টা। হঠাৎ করেই কিছু মাস পূর্বে আবার ও জানতে পারলাম, হিমেশ ভাই বিয়ে করছেন! আর সেই পাত্রী হলে তুমি। তখন ভেতর থেকে পুরোপুরি ভেঙ্গে পড়েছিলাম আমি। সেই কষ্টটা বর্ণণাযোগ্য ছিল না। ঐ দিন রাতেই আবার খবর পাই, হিমেশ ভাই তোমায় বিয়ে করেন নি! বিয়ে ভেঙ্গে পালিয়েছেন উনি। খুশিতে আমি প্রায় আত্নহারা হয়ে উঠেছিলাম! ভেবেছিলাম এবার অন্তত হিমেশ ভাইকে আমার পাওয়া হবে! কিন্তু, তা আর হলো কই ভাবী? ভাইয়া তো পিয়ালী আপুর জন্য হিমেশ ভাইকে বাছাই করে রেখেছেন। তৃতীয় বারের মত মনটা পুনরায় ভেঙ্গে গেল আমার!”
পায়েল বিরামহীন ভাবে ফুঁফিয়ে কেঁদেই চলছে। কেন জানি না, আমার আঁখিপল্লবে ও মেঘ জমে এলো। পায়েলের মাথায় আলতো হাত বুলিয়ে আমি শান্ত গলায় পায়েলকে আশ্বাসিত করে বললাম,,
“কেঁদো না পায়েল। ভাবী কথা দিচ্ছি, এইবার অন্তত তোমার মন ভাঙ্গবে না! আমি আমার সর্বাত্নক চেষ্টা চালিয়ে যাব। মা কে বুঝাতে না পারলে ও তোমার ভাইয়াকে আমি বুঝানোর শতভাগ চেষ্টা করব। আমার দিক থেকে কোনো রূপ ক্রুটি থাকবে না। আমি মন থেকে চাই, তোমার সাথেই হিমেশ ভাইয়ার সন্ধি হউক! তোমার অসীম ভালোবাসা পূর্ণতা পাক।”
“কিন্তু ভাবী! হিমেশ ভাই তো জানেনই না, আমি উনাকে ভালোবাসি! কখন ও ঐ রকম ভাবে বলা হয় নি আসলে। সাহস জোগাতে পারি নি কখনো! আমার ভালোবাসাটা তো এক তরফা ও হতে পারে। তাই না ভাবী?”
“এই বিষয়ে আমি হিমেশ ভাইয়ার সাথে পার্সোনালী কথা বলব। তোমাকে এই বিষয়টা নিয়ে অহেতুক চিন্তা করতে হবে না। যাও রুমে যাও৷ কান্না থামিয়ে ফ্রেশ হও। আমি ঐদিকটায় যাচ্ছি। তোমার পাগল ভাইটা না আবার ঐদিকে কি থেকে কি করে বসেছে!”
“কিন্তু পিয়ালী আপু? পিয়ালী আপুর কি হবে ভাবী? আপুর তো বিয়েটা ভেঙ্গে গেল ভাবী!”
“পিয়ালী আপুর জন্য ও নিশ্চয়ই কেউ না কেউ অপেক্ষা করছেন পায়েল। তিনি সঠিক সময়ে নিশ্চয়ই আসবেন। এই বিষয়টা নিয়ে ও তোমাকে ভাবতে হবে না। তুমি রুমে যাও। ফ্রেশ হও।”
আমায় ছেড়ে পায়েল দ্রুত পায়ে হেঁটে রুমে প্রবেশ করল। তড়িঘড়ি করে আমি ড্রইং রুমের দিকে অগ্রসর হতেই লক্ষ্য করলাম সৌরভ ভাইয়াসহ উনার পুরো পরিবার গায়েব! ড্রইং রুমের পরিস্থিতি সম্পূর্ণ শিথিল। মা এবং পরশ মাথায় হাত ঠেঁকিয়ে উদ্বিগ্ন মনে সোফায় বসে আছেন। পিয়ালী আপুকে কোথাও দেখা গেল না। নিশ্চয়ই নিজের রুমের দরজা আটকে দুঃখ বিলাসে ব্যস্ত! ধীর পায়ে হেঁটে আমি পরশের গাঁ ঘেঁষে বসে পরশের কানে ফিসফিসিয়ে বললাম,,
“আপনার ফোনটা দিন!”
পরশ ভ্রু যুগল কুঁচকে প্রশ্নবিদ্ধ দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকালেন। শুকনো মুখে আমি পুনরায় লোকটার কানে ফিসফিসিয়ে বললাম,,
“দিন না। একটু দরকার ছিল!”
“কি দরকার?”
“সামান্য ফোন চেয়েছি। এত জেরা করার কি আছে?”
প্যান্টের পকেট থেকে পরশ ফোনটা বের করে আমার হাতে তুলে দিলেন। তাড়াহুড়ো করে আমি বসা থেকে উঠে সিঁড়ির দিকে অগ্রসর হতেই পেছন থেকে শুনতে পেলাম মা শান্ত গলায় পরশকে বলছেন,,
“তোর বাবা আসুক৷ তোর বাবা এলেই না হয় উনার সাথে কথা বলে হিমেশের পরিবারকে বিয়ের প্রস্তাবটা পাঠানো যাবে। ততক্ষন অবধি একটু অপেক্ষা করি আমরা।”
পরশ প্রত্যত্তুরে বললেন,,
“তোমার যা ভালো মনে হয় মা!”
আর কোনো দিকে কর্নপাত না করে আমি দ্রুত পায়ে হেঁটে সোজা রুমে প্রবেশ করলাম। যা করার আমার এই অল্প কিছুক্ষনের মধ্যেই করতে হবে। ঐ বাড়িতে বিয়ের প্রস্তাব পাঠানোর পূর্বেই পায়েলের বিষয়টা আমার সবার প্রকাশ্যে আনতে হবে। রুমের দরজাটা হালকা হাতে ভেজিয়ে আমি ব্যস্ত রূপে হিমেশ ভাইয়ার ফোন নাম্বারটায় ডায়াল করতেই কিঞ্চিৎ মুহূর্তের মধ্যে হিমেশ ভাই কলটা তুলে নিলেন। গলা খাঁকিয়ে হিমেশ ভাই রুক্ষ কন্ঠে বললেন,,
“হ্যাঁ, পরশ বল?”
মিহি গলায় আমি প্রত্যত্তুরে বললাম,,
“ভাইয়া আমি টয়া।”
হিমেশ ভাই বোধ হয় হকচকিয়ে উঠলেন। অগত্যা গলায় মাধূর্য্যমন্ডিত ভাব এনে বললেন,,
“তুমি হঠাৎ? কি কারনে?”
“ভাইয়া আপনার সাথে আমার কিছু জরুরী কথা ছিল!”
“কি কথা টয়া? ইমার্জেন্সি কিছু? মানে পরশ ঠিক আছে তো? বাড়ির বাকিরা? বাড়ির বাকিরা ঠিক আছে?”
“সবাই ঠিক আছে। তবে…..
“তবে কি টয়া?”
“পায়েল ভালো নেই!”
“কি হয়েছে পায়েলের? শরীর টরীর খারাপ করল নাকি? লাস্ট দুদিন পূর্বে দেখেছিলাম, ফ্রেন্ডসদের সাথে ভার্সিটি চত্ত্বরে দাঁড়িয়ে একের পর এক আইসক্রীম গিলছিল। ঠান্ডা লাগে নি তো আবার? পায়েলের কিন্তু আবার অল্পতেই ঠান্ডা লেগে যাওয়ার ধাঁচ আছে!”
“সিরিয়াসলি হিমেশ ভাই? আপনি কি কোনো ভাবে পায়েলকে ফলো করছিলেন?”
থতমত খেয়ে হিমেশ ভাই কিয়ৎক্ষন মৌন রইলেন। অতঃপর গলা খাঁকিয়ে শুকনো গলায় বললেন,,
“না তো! আমি পায়েলকে ফলো করতে যাব কেন? অফিসে যাচ্ছিলাম ঐ রাস্তা দিয়ে। তাই হঠাৎ নজরে পড়েছিল!”
“এই জরুরী মুহূর্তে এসে ও যদি আপনি পায়েলকে অস্বীকার করেন তাহলে বলব… সারা জীবনের জন্য আপনি পায়েলকে হারিয়ে বসবেন হিমেশ ভাই! অনুরোধ করছি আপনাকে। দয়া করে পায়েলের প্রতি তৈরী হওয়া তীব্র অনুভূতি গুলোকে আপনি এভাবে দৃষ্টির অগোচরে রাখবেন না। প্রকাশ্যে আনুন।ভালোবাসা নামক এই সেন্সিটিভ বিষয়টাতে ছেলেরা সবর্দা এগিয়ে থাকে হিমেশ ভাই। সেক্ষেত্রে পায়েল মেয়ে হয়ে সর্বপ্রথম আপনার দিকে এগিয়ে যেতে চাইছে। কিন্তু আপনি পুরুষ মানুষ হয়ে বার বার পিছিয়ে যাচ্ছেন। ধরা দিচ্ছেন না কিছুতেই! মেয়েটা সত্যি সত্যি আপনাকে ভীষন ভালোবাসে হিমেশ ভাই। এবার অন্তত তার ভালোবাসা স্বীকার করুন। তাকে স্বীকৃতি দিন ভালোবেসে!”
“কি হয়েছে টয়া? আমাকে একটু খোলসা করে বলবে? আসলে আমি বুঝতে পারছি না কিছু!”
“পিয়ালী আপুর বিয়েটা ভেঙ্গে গেছে! মা এবং পরশ চাইছেন আপনার সাথে আপুর সম্বন্ধ ঠিক করতে! আই মিন আপনাদের বিয়ের কথা ভাবছেন উনারা!”
“কখন হলো এসব? পরশ তো এই বিষয়ে কিছুই জানায় নি আমায়! আমি কাল সকালেই তোমাদের বাড়িতে আসছি। এই বিষয় নিয়ে কাল সকালেই আমরা কথা বলব!”
“ঠিক আছে। তবে আগে তো বলুন, পায়েলকে আপনি সত্যিই ভালোবাসেন?”
“বয়ে গেছে ভালোবাসতে! বয়সে আমার চেয়ে অনেক ছোট পায়েল। একে বিয়ে করলে নির্ঘাত সবাই আমায় ক্ষ্যাপাবে!”
“দুষ্টুমি না হিমেশ ভাই। প্লিজ বলুন, পায়েলকে আপনি ভালোবাসেন?”
“ভালো না বাসলে নিশ্চয়ই রোজ নিয়ম করে তাকে ফলো করতাম না! আমি কিছুদিন পূর্বেই বুঝতে পেরেছিলাম, পায়েল আমায় ভালোবাসে। তার ভালোবাসার উপলব্ধিতেই বিপরীতে আমি ও তাকে ভালোবাসতে বাধ্য হয়েছি!”
ফট করে কলটা কেটে দিলেন হিমেশ ভাই। বুঝতে বেশি বেগ হলো না! হিমেশ ভাই লজ্জা পেয়েছেন। ফোনটা কান থেকে সরিয়ে আমি পিছু ঘুড়তেই শুকনো ঢোক গলাধঃকরণ করতে ব্যস্ত হয়ে পড়লাম! পরশ রক্তচক্ষু নিয়ে আমার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছেন। কিঞ্চিৎ সময় দুজনের মধ্যেই মৌনতা বিরাজ করল। আকস্মিক পরশ দাঁতে দাঁত চেঁপে আমার দিকে প্রশ্ন ছুড়ে বললেন,,
“কার সাথে কথা বলছিলে তুমি?”
লোকটার তেজী দৃষ্টিতে বেশিক্ষন দৃষ্টি নিবদ্ধ করে রাখতে পারলাম না আমি। সাদরে মাথা নুঁইয়ে নিতে বাধ্য হলাম। ফোনটা লোকটার দিকে এগিয়ে দিয়ে আমি ভয়ার্ত গলায় বললাম,,
“হিমেশ ভাইয়ার সাথে!”
“হিমেশের সাথে কিসের কথা তোমার হুম? কি এমন জরুরী দরকার ছিল ওর সাথে তোমার?”
মাথা উঁচিয়ে আমি লোকটার দিকে কম্পিত দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বললাম,,
“আগে আপনি একটু শান্ত হউন! এরপর বলছি।”
“ওহ্ আচ্ছা! ভয় পাও আমাকে? হুট করেই আমায় ভয় পেতে শুরু করেছ?”
“এইভাবে কথা বলছেন কেন? কি করেছি আমি?”
পরশ আচমকা আমায় হেচকা টান দিয়ে আমার থুতনী চেঁপে ধরে মোহসিক্ত দৃষ্টিতে আমার ওষ্ঠদ্বয়ে তাকিয়ে বললেন,,
“এবার বলো কি হয়েছে? আর একটু ভনিতা করলেই বাইট পড়বে ঠোঁটে। ফটাফট বলো কি হয়েছে?”
অগত্যা আমি আঁখিদ্বয় বুজে বিরামহীন গলায় বললাম,,
“হিমেশ ভাই পায়েলকে ভালোবাসেন। শুধু হিমেশ ভাই নন, পায়েল ও হিমেশ ভাইকে ভালোবাসেন!”
ক্ষনিকের মধ্যেই পরশ আমার থুতনীটা ছেড়ে দিতে কালক্ষেপণ করলেন না! অবিশ্বাস্য দৃষ্টিতে আমার দিকে প্রশ্ন ছুড়ে বললেন,,
“মানে? কি বলছ এসব তুমি?”
“সত্যি বলছি! দুজন দুজনকে খুব ভালোবাসেন। হিমেশ ভাই বলেছেন, কাল সকালেই এই বিষয় নিয়ে আপনাদের সাথে কথা বলতে আসবেন। আপনারা প্লিজ এর পূর্বেই কোনো ভুলভাল সিদ্ধান্ত নিয়ে বসবেন না। আপনাদের একটা ভুল সিদ্ধান্তের জন্য অকাতরে তিন তিনটে জীবন নষ্ট হয়ে যাবে।”
পরশ ইতোমধ্যেই মাথায় হাত দিয়ে বিছানার উপর বসে পড়লেন। লোকটা চিন্তিত গলায় আমায় শুধিয়ে বললেন,,
“পিয়ালীর কি হবে তাহলে? তাছাড়া আমি তো ঐ সৌরভের বাচ্চাটাকে চ্যালেন্জ্ঞ করেছিলাম, এই এক সপ্তাহের মধ্যে আমি পিয়ালীর বিয়ে দিব। এর’চে দ্বিগুন যোগ্য ছেলের সাথে!”
উদ্বিগ্ন চিত্তে আমি পরশের পাশে বসে শান্ত গলায় লোকটাকে বললাম,,
“বিপদে ধৈর্য্য হারাতে নেই পরশ। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ আপুর জন্য ভালো কিছু রেখেছেন। আল্লাহ্ চাইলে হয়তো এই এক সপ্তাহের মধ্যেই আমরা ভালো কোনো সুযোগ্য পাত্রের সন্ধান পেয়ে যাব। ঘটক লাগিয়ে দিন সব জায়গায়। আপনি ও একান্তে খুঁজতে থাকুন আপনার কোনো পরিচিত ছেলে বন্ধু বা কাছের কেউ আছে কিনা যে পিয়ালী আপুর যোগ্য!”
“প্রথমে বিয়েটা সৌরভের সাথে ঠিক হলো। এরপর হিমেশ এখন আবার অন্য কেউ? পিয়ালীর মনের অবস্থাটা বুঝার চেষ্টা কর! বার বার ভেঙ্গে দিচ্ছি আমরা পিয়ালীকে!”
“আমি ও কিন্তু একটা সময় এই অবস্থাটার মধ্যে দিয়ে গিয়েছিলাম পরশ। ঐ ভয়াবহ অবস্থাটা কিন্তু আমি ও পাড় করে এসেছি। আপনি পাশে ছিলেন বলেই সবটা সম্ভব হয়েছিল। আমার মন বলছে, আপুর ভাগ্যে ও এমন কেউ আছে পরশ। যে আপুকে এই ভয়ঙ্কর অবস্থা থেকে বের করে আনবে। ভালোবেসে আপুকে আগলে নিবে। স্বেচ্ছায় সংসার করতে চাইবে আপুর সাথে!”
পরশ দুশ্চিন্তা ভুলে মলিন দৃষ্টি নিক্ষেপ করলেন আমার আঁখি জোড়ায়। আচম্বিতে পরশ শক্ত হাতে আমায় ঝাপটে ধরে বিষন্ন গলায় বললেন,,
“খুব ডিপ্রেশড লাগছে আমার। পরিত্রান চাই আমি এই ডিপ্রেশান থেকে। ভালো লাগছে না কিছু। হুট করেই একের পর এক ঝামেলা উদয় হবে ঘুনাক্ষরে ও টের পাই নি আমি।”
“সব ঠিক হয়ে যাবে পরশ। আপনি শুধু শুধু টেনশান করছেন। দেখি উঠুন। আমি আপনার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি। একটু ঘুমানোর চেষ্টা করুন। ঘুম না আসলে ও চোখ জোড়া একটু বুজে রাখুন। কিছুক্ষন পর সব ঠিক হয়ে যাবে।”
কিয়ৎক্ষনের মধ্যে পরশ আমায় নিয়ে সোজা বিছানায় শুয়ে পড়লেন। গাঁ থেকে শাড়ির আঁচলটা খুলে লোকটা আমার ঘাঁড়ে মুখ ডুবিয়ে বললেন,,
“উঁহু। আমি জানি আমার ডিপ্রেশান কিসে কমবে। আমার নির্বোধ, বোকা বউ এখন ও বুঝল না আমায়!”
আচম্বিতে আমি মৃদ্যু হেসে উঠতেই লোকটা ফিসফিসিয়ে আমার কানে বললেন,,
“কাল থেকে যথারীতি অফিসে যেতে হবে। রাত ১১ টার আগে তোমায় হয়তো এতটা কাছে পাব না। পারবে আমায় ছাড়া থাকতে?”
“অবশ্যই পারব। পারব না কেন?”
পরশ আমার ঘাড় থেকে মাথা উঠিয়ে আহত দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকালেন। অতঃপর রাগী রূপ নিয়ে নিমিষের মধ্যে আমার ঠোঁট জোড়া দখল করে বললেন,,
“তবে রে! আজ ছাড়ছি না কোনো মতে। এক রত্তি ও ঘুমুতে দিব না তোমাকে। থামাতে আসবে তো, টর্চারের পরিমান আর ও বেড়ে যাবে!”
মৃদ্যু হাসলাম আমি। প্রত্যত্তুর করার ইচ্ছে জাগল না। লোকটার পাগলামী পূর্ণ ভালোবাসায় এখন আমি অভ্যস্ত প্রায়!
,
,
সকাল ৮ টা বাজতেই ড্রইং রুমে গোল বৈঠক বসেছে আজ। সবার মধ্যমনি হয়ে ঈষৎ উজবুক ভঙ্গিতে বসে আছেন হিমেশ ভাই! ফরমাল ড্রেসে পাশে অফিসের ব্যাগ সমেত উনার অবস্থান পরশের ঠিক ডান পার্শ্বে। মা এবং বাবা দুজনই দু পাশের সোফায় চিন্তিত চিত্তে মাথা নুঁইয়ে বসে আছেন। পুরো ড্রইং রুম জুড়ে পিনপতন নীরবতা বিরাজ করছিল খুব প্রগাঢ়ভাবে। অপরদিকে, আমি এবং পায়েল যৌথভাবে নাশতা সাজিয়ে দিচ্ছি ছোট্ট টি-টেবিলটায়। পায়েলের ঠোঁটের কোণে এক অমায়িক প্রশান্তির হাসির চিহ্ন লেগে আছে। যে হাসির উৎস ধরে হিমেশ ভাই কিয়ৎক্ষনে আড়চোখে দৃষ্টি নিবদ্ধ করছেন পায়েলের দিকে। নীরবতা ভেঙ্গে পরশ অকস্মাৎ হিমেশ ভাইয়ার দিকে প্রশ্ন ছুড়ে বললেন,,
“পায়েলকে তুই ভালোবাসিস?”
মা-বাবা বিচলিত রূপে পরশের দিকে অবিশ্বাস্য দৃষ্টি নিক্ষেপ করলেন। পায়েল লজ্জায় কুঁকড়ে উঠে এক ছুটে ড্রইং রুম পাড় হয়ে নিজ কক্ষের দিকে পদার্পন করল। হিমেশ ভাই জড়তা কাটিয়ে খানিক নড়েচড়ে বসলেন। পরশ মা-বাবার দিকে চেয়ে বেগহীন গলায় বললেন,,
“হিমেশ পায়েলকে ভালোবাসে। বিস্তারিত বিষয়টা আমি গতকাল রাতেই জেনেছিলাম। তাই আমার মনে হয় না, সব জেনে শুনে হিমেশকে পিয়ালীর সাথে জড়ানোটা ঠিক হবে!”
চলবে…?