তোমায়_পাবো_বলে,পর্ব_৩১

0
915

তোমায়_পাবো_বলে,পর্ব_৩১
নিশাত_জাহান_নিশি

বাবা কথা বাড়াতে চাইছিলেন না বোধ হয়। তাই মুহূর্তের মধ্যে মুখমন্ডলে রুক্ষ ভাব ফুটিয়ে পরশের মুখের উপর ঠাস করে দরজাটা বন্ধ করে দিলেন! সঙ্গে সঙ্গেই আমার আঁখিদ্বয় বুজে এলো! লুটিয়ে পড়লাম আমি বাবার বুকে। পরশ জেনে শুনে আমাকে এভাবে ঠকাবে বুঝতে পারি নি আমি! পরশ নিশ্চয়ই জানতেন, বাবা কখন ও নিজের দাম্ভিকতা ভুলে পরশকে সাদরে আমন্ত্রন করবেন না! সব জেনে শুনে ও পরশ আমায় ঠকালেন?

মোটামুটি এক সপ্তাহ পাড় করে দিলাম! পরশ এবং আমার শ্বশুড় বাড়ির লোকজনদের সাথে কোনো রূপ যোগাযোগ ব্যতীত। পরিবারের প্রতিটা সদস্য আমায় এতটাই আদর, যত্নে, ভালোবাসায় মাতিয়ে রেখেছেন যে, সংসার জীবনের কথা অতোটা ও সাংঘাতিক ভাবে মনে পড়ছে না আমার! তবে পরশের নেওয়া অযৌক্তিক সিদ্ধান্ত প্রতিনিয়ত আমায় ভীষণ ভাবে পোঁড়াচ্ছে! বাবার হাব-ভাব, কলা-কৌশল, গতিবিধি বা চিন্তা-ভাবনা দেখে মনে তো হচ্ছে না মাত্র এক মাসের মাথায় বাবা স্বয়ং পরশকে আমন্ত্রণ করবেন এই বাড়িতে বা সাথে করে আমায় শ্বশুড় বাড়িতে নিয়ে যেতে বলবেন! মনে মনে বোধ হয় ছক কষে রেখেছেন সারাজীবনের জন্য আমাকে এই বাড়িতেই বন্ধিনী হিসেবে রেখে দিবেন!

বাবা ভীষন খুশি আমায় পেয়ে। মনে হচ্ছে যেন সেই ছোটবেলার টয়া টিকে বাবা পুনরায় কাছে পেয়েছেন! সেই ছোট বেলার মতোন মুখে লোকমা তুলে খাইয়ে দিচ্ছেন, সর্বক্ষণ আমায় আশে পাশে রাখছেন, আমার কথা মতো দেয়ালে রং করাচ্ছেন, প্রতিদিন ভোরে বাবা নিজ হাতে শিউলি ফুল কুঁড়িয়ে আমায় মালা গেঁথে দিচ্ছেন! বিকেল হতেই আমায় নিয়ে হাঁটতে বের হচ্ছেন। দোকান থেকে গাধা গাধা চকলেট, চিপস, আইসক্রীম, আঁচার কিনে দিচ্ছেন, দোলনায় আমায় নিয়ে দোল খাচ্ছেন, রাতে ঘুমানোর সময় আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন। আশ্চর্যের বিষয় হলো! বাবা অতি ক্ষুদ্র কারনে ও আজকাল দাঁত কেলিয়ে হাসছেন। বরাবর মুগ্ধ হচ্ছি বাবার হুটহাট হাসিতে। চোখে আনন্দ অশ্রু বয়ে আনার জন্য বাবার এই অতি ক্ষুদ্র হাসিটাই যথেষ্ট। বাবার প্রতি দিন দিন খুব দুর্বল হয়ে পড়ছি। পিতার প্রতি গাঢ় টান অনুভব করছি। বাবার এই নিঃস্বার্থ ভালোবাসায় কোনো ভনিতা বা ছলনার অবকাশ দেখছি না আমি। সম্পূর্ণ মন থেকেই বাবা আমায় ভালোবাসছেন। যতটা ছোট বেলায় বাসতেন।

আজ সকালেই বেঁধে গেছে এক হুলুস্থুল কান্ড! পিয়াস ভাই আমাদের পাড়ার এক ছেলেকে কেলিয়ে হসপিটালে ভর্তি করিয়ে এসেছেন! এই বিষয়টা নিয়ে সমাজের লোকজন এসেছেন বাবার কাছে নালিশ জানাতে। মূল বিষয়টা ঘটেছিল মূলত মিলি আপুকে কেন্দ্র করে! আহত ছেলেটা মিলি আপুকে প্রায় অনেকদিন যাবত টিস করছিলেন। মাঝে মাঝে মিলি আপুকে অনুসরন করে বাড়ি অবধি চলে আসতেন! ঘটনাটা কোনো ভাবে একদিন পিয়াস ভাইয়ার নজরে পড়েছিল। আর সেই জের ধরেই আজ সময়, সুযোগ পেয়ে পিয়াস ভাই ঐ ছেলেকে রাম পিটুনি দিয়ে হসপিটালে ভর্তি করিয়ে এসেছেন। বিষয়টা জানার পর থেকেই মিলি আপু লুচির মতো ফুলছেন। পিয়াস ভাইকে সামনে পেলেই হয়তো আস্ত গিলে খাবেন! এই মহিলার হাব-ভাব বুঝি না আমি। পিয়াস ভাই তো তোর জন্যই গাঁ ভরাল, ঐ ছেলের সাথে লড়তে গেল, তোর সাথে বেয়াদবির শাস্তি দিল! কোথায় এসে তুই ভাইয়াকে একটু সাপোর্ট করবি তা না! তুই উল্টে ভাইয়ার উপর ফুলছিস? হাউ স্ট্রেন্ঞ্জ!

বিকেলের দিকে পিয়াস ভাইকে ডেকে এনে বাবা দু, এক কথা শুনিয়ে দিলেন। সাবধান করে দিলেন পরবর্তীতে যেন এই ভুলটা পুনরায় না ঘটে। পিয়াস ভাই নিশ্চুপ থেকে মাথা নুঁইয়ে শুধু সম্মতি জানিয়েছিলেন। মিলি আপুর রাগ যেন এতে ও দমছিল না। লুচির মতো কেবল ফুলছিলেন আর ফুলছিলেন! বাবার অনুরোধে পিয়াস ভাই আজ রাতটা আমাদের বাড়িতে থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন। মিলি আপু সুযোগ খুঁজছিলেন কখন পিয়াস ভাইকে একান্ত ভাবে পাবেন আর সঙ্গে সঙ্গেই টুটি চেঁপে ধরবেন! এই মহিলার হিংস্রাত্নক হাব-ভাব দেখে ঠিক বুঝতে পারছি আমি!

রাত ঠিক ১১ টা বাজতেই আমি ঘুমুতে চলে এলাম নিজ কক্ষে। বাড়ির বাকিরা ও রাতের খাবার শেষ করে চলে গেলেন নিজেদের কক্ষে। বাবার সাথে কিছুক্ষন আড্ডা দিয়েই আমার এইমাত্র কক্ষে ফেরা। দরজায় খিল আটকে আমি ওয়াশরুমে গেলাম ফ্রেশ হতে। কিয়ৎক্ষনের মধ্যে ওয়াশরুম থেকে বের হতেই মনে হলো দরজায় কেউ মন্থর গতিতে করাঘাত করছে। ভেজাক্ত মুখমন্ডল নিয়ে আমি তড়িঘড়ি করে রুমের দরজাটা আস্তে করে খুলে দিতেই তাজ্জব বনে গেলাম। ক্ষনিকের মধ্যে কি থেকে কি হয়ে গেল সবটাই আমার মাথার উপর দিয়ে প্রবাহিত হলো। ব্ল্যাক হুডি পরিহিত অবস্থায় পরশ হালকা হাতে আমায় দরজার সম্মুখ থেকে সরিয়ে হুড়মুড়িয়ে রুমে প্রবেশ করলেন। ঝড়ের বেগে দরজার খিলটা আটকেই উনি পিছু ঘুড়ে আমায় ঝাপটে ধরলেন! নির্বাক, বিস্মিত, স্তব্ধিত আমি! শরীরের সমস্ত শক্তি আমার পরশের গাঁয়ের উপর সীমাবদ্ধ। উপরন্তু পনেরো মিনিট আমায় ঠিক এভাবেই ঝাপটে ধরে লোকটা হঠাৎ আদুরে গলায় বললেন,,

“খুব মিস করেছি খুব! বিয়ের পর বউ ছাড়া থাকা যায় নাকি?”

এখন ও নির্জীব আমি। বিশ্বাস ই হচ্ছে না মানুষটা এসেছে! আমায় আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে আছে। আদুরে স্বরে আমার গলায় মুখ ডুবিয়ে কথা বলছে। তার গায়ের মাতাল করা গন্ধে আমার রন্ধ্রন শক্তিকে মাতিয়ে তুলছে। আমার অনুভূতিদ্বয়কে সন্তপর্ণে নেশাক্ত করে তুলছে! পিনপতন মৌনতা উপলব্ধি করা মাত্রই মানুষটা আমার গলায় আলতো চুমু খেয়ে বললেন,,

“কি হলো? আমি এসেছি, বিশ্বাস হচ্ছে না তাই তো?”

মৌনতা ভেঙ্গে আমি নির্লিপ্ত গলায় বললাম,,

“হবে কি করে? আপনি তো বলেছিলেন এক মাসের পূর্বে আপনি আসবেন না। যদি না বাবা নিজ থেকে আপনাকে আমন্ত্রণ জানান!”

“আমার বউটা হয়েছে চরম লেবেলের গাধী! ওটা তো আমি তোমার বাবাকে থ্রেড দিয়ে বলেছিলাম। দজ্জাল শ্বাশুড়ী হয় শুনেছি। তবে দজ্জাল শ্বশুড় ও যে হয় নিজের ব্যক্তিগত জীবনে না পেলে হয়তো জানতেই পারতাম না!”

“আমার বাবা আপনার কাছে দজ্জাল হলে ও আমার কাছে ভালো বাবা!”

“এক সপ্তাহে বাবার প্রতি খুব ভালোবাসা জন্মে গেছে না? দিব্যি আমার ভালোবাসা ভুলে গেছ?”

“আপনিই তো বাধ্য করেছেন! রেখে গেলেন কেন আমায় এই বাড়িতে? সঙ্গে করে নিয়ে গেলেন না কেন আমায়? কথা তো ছিল দুজনেই মিলে বাবাকে মানাব। হাতে, পায়ে ধরে হলে ও বাবাকে মানাব। মাঝখান থেকে আপনি কি করলেন? সিদ্ধান্ত পাল্টে আমাকে একাই রেখে চলে গেলেন? আপনি জানেন? আপনি আমায় ঠকিয়েছেন!”

“ওটাকে ঠকানো বলে না রে গাধী। ওটাকে গেইম বলে। তুমি জাস্ট মিলিয়ে নাও, ঠিক এক মাস পর আমিই হব এই গেইমের উইনার! আর তোমার বাবা হবেন লুজার!”

“আচ্ছা! আপনার মাথায় কি ঘুড়ছে একটু বলবেন?”

লোকটা ক্রুর হেসে আমার ওষ্ঠদ্বয়ের দিকে এগিয়ে এসে বললেন,,

“বলব৷ আগে একটু আদর করে নেই!”

মুহূর্তের মধ্যে লোকটা আমায় পাজা কোলে তুলে নিলেন। রুমের লাইট অফ করে ড্রিম লাইট জ্বালিয়ে দিলেন। বিছানায় আমায় লম্ব করে শুইয়ে লোকটা হুডিটা গাঁ থেকে খুলে আমার গাঁয়ের উপর শায়িত হলেন। ঠোঁটের কোণে দুষ্টু হাসি ফুটিয়ে লোকটা আমার শাড়ির আঁচলটা হালকা সরিয়ে ঘাড়ে মুখ ডুবিয়ে দিলেন। পরম আবেশে আঁখিদ্বয় বুজে আমি লোকটাকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরলাম। ভালোবাসা গাঢ় হতে লাগল আমাদের। দুজনই যেন স্বর্গীয় সুখে পদার্পন করলাম!

মধ্যরাত প্রায় ২ টোর কাছাকাছি। দরজায় হঠাৎ কড়াঘাত পড়ল। দু, এক সেকেন্ড বিরতি নিয়ে কেউ পর পর দরজায় টোকা মারছেন। সঙ্গে সঙ্গেই পরশ আমার ওষ্ঠদ্বয় ছেড়ে দরজার দিকে অস্থির দৃষ্টি নিক্ষেপ করলেন। উনার সাথে সাথে আমি ও হকচকিয়ে উঠলাম। কিঞ্চিৎ মুহূর্তের মধ্যেই পরশ আমায় ছেড়ে হুডিটা গাঁয়ে জড়িয়ে নিলেন। তাড়াহুড়ো করে আমি শাড়িটা গাঁয়ে জড়াতেই মিলি আপুর গলার স্বর ভেসে এলো। মন্থর গলায় আপু আমায় ডেকে বলছেন,,

“এই টয়া, দরজাটা খোল!”

ইচ্ছাকৃত ভাবেই আমি ঘুম জড়ানো গলায় বললাম,,

“কেন আপু? কি হয়েছে?”

“আগে দরজাটা খোল। পরে বলছি কি হয়েছে!”

“আমি তো এখন ঘুমুচ্ছি আপু। কাল সকালে না হয় বলো!”

“ঘুমুলে কথা বলছিস কিভাবে? দরজাটা খুলতে বলছি, খোল!”

“তোমার ডাকাডাকিতেই তো আমার কাঁচা ঘুমটা ভেঙ্গে গেল। তুমি প্লিজ এখন যাও আপু। কাল সকালে আমরা কথা বলছি।”

“তুই দরজাটা খুলবি কিনা বল? নতুবা আমি জেঠুকে ডাকতে বাধ্য হব!”

ভয়ে গলা শুকিয়ে এলো আমার। শাড়িটা কোনো রকমে গাঁয়ে পেঁচিয়ে আমি পরশের মুখোমুখি দাঁড়াতেই পরশ হিংস্র রূপ ধারন করে দ্রুত পায়ে হেঁটে রুমের দরজাটা খুলে দিলেন। সঙ্গে সঙ্গেই মিলি আপু জেঠু বলে চিৎকার করে উঠতেই পরশ ঠাস করে আপুর গালে এক চড় বসিয়ে দিলেন! আপু গালে হাত দিয়ে টলমল দৃষ্টিতে পরশের দিকে তাকিয়ে আছেন। আমি নিজেই তাজ্জব দৃষ্টিতে পরশের দিকে চেয়ে আছি। দাঁতে দাঁত চেঁপে পরশ আপুর উদ্দেশ্যে বললেন,,

“তোমার মতো নির্লজ্জ এবং বেহায়া প্রকৃতির মেয়ে মানুষ পৃথিবীতে আমি দুটো দেখি নি। এত বেহায়া ধাঁচের কেন তুমি? বিয়ের আগে ও যেমন আমার পিছনে লেগেছিলে, এখন ও ঠিক আগের মতোই লেগে আছ! কিন্তু কেন একটু বলবে? আমার তো এখন বিয়ে হয়ে গেছে তাই না? তোমার আপন চাচাতো বোন এখন আমার ওয়াইফ! আমরা দুজন দুজনকে ভালোবেসে বিয়ে করেছি, আগের চেয়ে ও আমাদের মধ্যকার ভালোবাসা দ্বিগুন বাড়ছে। ভবিষ্যতে এর মাত্রা আর ও অধিক হারে বাড়বে৷ তুমি কি ভেবেছ, তুমি এবং তোমার জেঠু মিলে আমাদের আলাদা করতে পারবে? কখনো না! পৃথিবীতে কারো সাধ্য নেই আমাদের আলাদা করার। তোমার কখন ও মন চায় না না? পিয়াসের নিঃস্বার্থ ভালোবাসাটাকে একটু বুঝতে? ছেলেটা তুমি তুমি করে জাস্ট মরে যাচ্ছে। যত বার তুমি তার ভালোবাসা প্রত্যাখান করছ তত বার সে দ্বিগুন ভাবে তোমায় ভালোবেসে যাচ্ছে! আচ্ছা? তোমার কখন ও ইচ্ছে জাগে না? এসব কুটিলতা বাদ দিয়ে সুন্দর একটা ভালোবাসায় মোড়ানো বিবাহিত জীবন কাটাতে? কারো ভালোবাসায় গাঁ ভাসিয়ে দিতে? নিজের একটা সাজানো সংসার তৈরী করতে? কেমন মেয়ে মানুষ তুমি? যে মেয়ে মানুষের জীবনে কোনো ভালোবাসা নেই, কোনো ইচ্ছে নেই, কোনো চাহিদা নেই, ভালোবেসে কাউকে আপন করে নেওয়ার মন মানসিকতা নেই! পিয়াস কি তোমায় ভালোবেসে এতটাই অন্যায় করেছে যে তুমি তাকে প্রতিদিন, প্রতিনিয়ত মরণ যন্ত্রনা দিবে? তোমাকে ভালোবাসা কি এতটাই পাপ?”

মিলি আপু ফুঁফিয়ে কেঁদে উঠতেই পাশের রুম থেকে পিয়াস ভাই বেরিয়ে এলেন। মিলি আপুর পাশাপাশি দাঁড়িয়ে মাথা নুঁইয়ে পরশকে বললেন,,

“মিলিকে আর কিছু বলো না পরশ! শুনতে খারাপ লাগে আমার। তোমাদের চোখে মিলি হাজার খারাপ হলে ও, আমার চোখে সে আমৃত্যু পৃথিবীর সব’চে ভালো মেয়ে মানুষ হয়েই থাকবে। আমি আজীবন ওর পিছনে ঘুড়তে রাজি। যতবার সে আমায় ফিরিয়ে দিবে, আমি ঠিক ততবারই তার কাছে ফিরে যাব! ভালোবাসায় বেহায়া হতে হয়। এতটুকুই আমি বুঝতে পেরেছি তাকে ভালোবেসে!”

মিলি আপু হেচকি তুলে কেঁদে হঠাৎ পিয়াস ভাইয়ার বুকের পাজরে মাথা ঠেঁকিয়ে দিলেন! পিয়াস ভাইয়ার শার্ট দ্বারা নাক মুছে ছলছল দৃষ্টিতে পিয়াস ভাইয়ার বিস্মিত দৃষ্টিতে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বললেন,,

“আজীবন বেহায়া থাকতে হবে আপনাকে। নয়তো আপনার গলা কেটে নিব।”

ছুটে পালালেন আপু! উপস্থিত সবাই তাজ্জব দৃষ্টিতে মিলি আপুর যাওয়ার পথে তাকিয়ে আছি। কিয়ৎক্ষনের মধ্যে পরশ বাঁকা হেসে পিয়াস ভাইয়ার কাঁধে হাত রেখে বললেন,,

“ডোজ কাজে দিয়েছে তবে!”

পিয়াস ভাইয়া লজ্জা মিশ্রিত হাসিতে মাথা নুঁইয়ে নিলেন। পিছনের চুল গুলো কিঞ্চিৎ টেনে বললেন,,

“সবই তোমার অবদান! তোমার কয়েকটা খড়তড় কথার কারনেই প্রেয়সীর মন গলল!”

আমরা সবাই উচ্চ শব্দে হেসে উঠলাম। মিলি আপুর আকস্মিক পরিবর্তনে আমরা সবাই আনন্দে আপ্লুত প্রায়!

,

,

পরশের চ্যালেন্জ্ঞ নেওয়ার ১ মাসের মধ্যে ঠিক বিশ দিনের মাথায় আমার হঠাৎ পিরিয়ড সাইকেল বন্ধ হয়ে গেল! কিছুদিন যাবত আমি শরীরে ঠিকঠাক তাল খুঁজে পাচ্ছি না। খাওয়া, দাওয়া, চলাফেরায় সবকিছুতেই সমস্যা দেখা দিচ্ছে। বিশেষ করে মাথা ঘুড়ানো আর বমি ভাবটা ভয়ঙ্কর পর্যায়ে আছে। এই তো আজ সকালেই শ্বাশুড়ী মায়ের সাথে ফোনে কথা বলতে বলতেই হঠাৎ মাথা ঘুড়ে এলো আমার। ভাগ্যিস বিছানাতেই মাথা ঘুড়িয়ে পড়েছিলাম, নয়তো ফ্লোরে ছিটকে পড়লে সাংঘাতিক দুর্ঘটনা ঘটে যেত। আমার মা বিষয়টা জানার পর থেকেই ভীষন টেনশানে আছেন। ভাবছেন আমার হয়তো কোনো অসুখ করেছে। কিন্তু যখন বললাম আমার পিরিয়ড সাইকেল ও বন্ধ হয়ে আছে তখনই মা ফার্মেসী থেকে প্রেগনেন্সি কিট এনে বললেন পরীক্ষা করে দেখতে। পরদিন সকালে পরীক্ষা করতেই ফলাফল পজেটিভ এলো! বাকরুদ্ধ হয়ে আমি দীর্ঘ ১৫ মিনিট বিছানার উপর বসে ছিলাম। নেত্রযুগল থেকে অজান্তেই খুশির অশ্রু বাহিত হচ্ছিল। বুঝে উঠতে পারছিলাম না কি করব! খবরটা কি প্রথমেই বাবা-মাকে জানাব? নাকি পরশকে একবার কল করব? দোটানায় ভুগে একই জায়গায় স্তব্ধ হয়ে বসে থাকতেই হঠাৎ মিলি আপু দরজা ঠেলে রুমে প্রবেশ করলেন। ব্লু কালার একটা ড্রেস হাতে নিয়ে আপু মৃদ্যু হেসে আমার দিকে প্রশ্ন ছুড়ে বললেন,,

“ড্রেসটা কেমন টয়া? সুন্দর না?”

নিবার্ক চিত্তে আমি সামনে পিছনে মাথা নাঁড়িয়ে হ্যাঁ সূচক সম্মতি জানালাম। আপু ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে ড্রেসটা ট্রায়াল দিচ্ছেন আর বলছেন,,

“পিয়াস গিফট করেছে! একটু পরেই ওর সাথে ঘুড়তে বের হব!”

আমার মৌনতা দেখে আপু পিছু ঘুড়ে তাকালেন। অতঃপর কপালে কয়েক জোড়া উদ্বিগ্নতার ভাঁজ ফুটিয়ে বললেন,,

“কি করে? কি হয়েছে তোর? এই ভাবে চুপচাপ বসে আছিস কেন?”

হাতে থাকা কিটটা আমি আপুর সম্মুখে ধরে বললাম,,

“পজেটিভ!”

সঙ্গে সঙ্গেই আপু উচ্চ আওয়াজে হেসে আমায় ঝাপটে ধরে বললেন,,

“কংগ্রাচুলেশন বনু! উফফফস দাঁড়া। খবরটা আমি বাড়ির সবাইকে দিয়ে আসছি!”

আপু প্রানপনে ছুটে গেলেন নিচ তলার দিকে। আমি বালিশের তলা থেকে ফোনটা বের করে পরশের নাম্বারে ডায়াল করলাম। সঙ্গে সঙ্গেই লোকটা কলটা রিসিভ করে ব্যতিব্যস্ত গলায় বললেন,,

“অফিসে আছি টয়া। খুব ব্যস্ত এখন। একটু পর কল ব্যাক করছি। আর হ্যাঁ প্লিজ রাগ কর না। জাস্ট ফাইভ মিনিটস ওকে? ফাইভ মিনিটসের মধ্যেই কল ব্যাক করছি!”

নির্বিকার নির্লিপ্ত গলায় আমি প্রত্যত্তুরে লোকটাকে বললাম,,

“উপপপস বাবা হতে চলেছেন আপনি! এত ব্যস্ততা দেখালে চলবে?”

চলবে…?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here