তোমায়_পাবো_বলে,পর্ব_৩৮

0
1140

তোমায়_পাবো_বলে,পর্ব_৩৮
নিশাত_জাহান_নিশি

“দীর্ঘ এক মাস যাবত ফলো করছি তোমাকে! কি ভেবেছ? এত সহজে আমার হাত থেকে তোমার মুক্তি মিলবে? হাজার গাঁ ঢাকা দিয়ে ও আমার থেকে পরিত্রাণ মিলবে না তোমার! অবশেষে তোমাকে আমি জয় করেই ছাড়ব!”

চোখ জোড়া বোধ হয় পিয়ালী আপুর কপালে উঠে গেল! আমি নিজে ও তাজ্জব বনে ঘুড়ছি। কে এই ছেলে? কি তার পরিচয়? কি তার নাম ধাম? কেনই বা তিনি পিয়ালী আপুর পিছু করছেন? ছেলেটি সম্পূর্ণ অপরিচিত আমার কাছে। ইতোপূর্বে কখন ও কোথাও দেখি নি। তবে পিয়ালী আপুর অভিব্যক্তি শুনে মনে হচ্ছে পিয়ালী আপু ছেলেটিকে অতি পূর্ব থেকে চিনেন! হয়তো রাস্তাঘাটে ইভটিজিং করার খাতিরে নয়তো অন্য কোনো বিশেষ কারনে। পিয়ালী আপুর কটমট দৃষ্টি এখন ও ছেলেটির রহস্যময় দৃষ্টিতে সীমাবদ্ধ। উচ্চ আওয়াজ তুলে এবার পিয়ালী আপু ছেলেটিকে শাসিয়ে বললেন,,

“খুব শখ আপনার না? খুব শখ? আমার ভাইয়ার হাতের মার ধর খাওয়ার জন্য? আপনি চিনেন আমার ভাইয়াকে? যদি এক্ষনি একটা কল করি না? আমার ভাইয়া এসে আপনার ঘাড় থেকে মুন্ডু আলাদা করে নিবেন! যদি বাঁচতে চান, তো পালান। আর কখন ও যেন আপনাকে এই বাড়ির ত্রি-সীমানায় না দেখি!”

ছেলেটির মুখের উপর ঠাস করে আপু দরজাটি বন্ধ করে দিলেন! ফোঁস করে শ্বাস ছেড়ে আপু পিছু ঘুড়ে আমার দিকে চেয়ে বললেন,,

“অসভ্য ছেলে। জানো? বিগত এক মাস ধরে আমাকে পিছু করছে! বাড়ি ফিরতে না ফিরতেই বাড়ির ঠিকানা জোগাড় করে বাড়ি অবধি চলে এসেছে! কত বড় দুঃসাহস!”

ইতোমধ্যেই দরজায় সশব্দে টোকা পড়ল। দন্ডায়মান ছেলেটি কদাচিৎ হেসে দরজার ওপার থেকে চেঁচিয়ে বলল,,

“অপেক্ষায় রইলাম আমি। ঠিক দশ মিনিটের মাথায় তুমি ঠিক নিজে এসেই দরজাটি খুলে দিবে পিয়ালী!”

বাড়ির ল্যান্ডলাইনে ক্রিং ক্রিং শব্দে টেলিফোন বেজে উঠল। দ্রুত পায়ে হেঁটে আমি টেলিফোনটি কানে তুলতেই ঐ পাশ থেকে পরশ ব্যতিব্যস্ত গলায় শুধালেন,,

“টয়া?”

“হুম। বলুন?”

গলায় রাগান্বিত ভাব ফুটিয়ে পুনরায় শুধালেন,,

“তোমার ফোন কোথায়?”

“বালিশের তলায়!”

“ফোনটা সাথে রাখলে কি হয়? ফোনটা নিশ্চয়ই তোমাকে বালিশের তলায় ঘুম পাড়িয়ে রাখার জন্য দেওয়া হয় নি?”

“রান্না করছিলাম। তাই সাথে আনি নি। কি হয়েছে বলুন?”

“রায়হান আসবে বলেছে! তাই তোমাকে আগে থেকেই জানিয়ে রাখলাম। ভালো ভালো আইটেম যোগ করো দুপুরের রান্নায়। খাওয়া দাওয়ার পর রায়হানকে ছাড়বে। বুঝতে পেরছ?”

জিভ কাটলাম আমি! ঘটনার আকস্মিকতায় আমি মানব মূর্তি প্রায়! তাহলে দরজার ওপারের ছেলেটি রায়হান? হিমেশ ভাইয়ার বর্ণনানুযায়ী ছেলেটির শারীরিক গঠন, আকার, আকৃতি, চেহারার ধরন দেখে যদি ও প্রথমে আমি কিছুটা সন্দেহ করেছিলাম ছেলেটি রায়হান হবে! তবে পরবর্তীতে পিয়ালী আপুর করা অভিযোগের কারনে ছেলেটিকে অপরিচিত ভাবতে শুরু করেছিলাম। কিন্তু এখন তো বিষয়টি পুরোপুরি স্বচ্ছ হয়ে গেল। ছেলেটি আসলেই রায়হান! বেগহীন গলায় আমি পরশকে বললাম,,

“আচ্ছা। এখন রাখছি আমি। রায়হান বোধ হয় দরজার ওপারে দাঁড়িয়ে আছেন!”

“ওহ্ শিট! যাও, তাড়াতাড়ি দরজাটা খোল৷ আর শুনো? রায়হানকে রায়হান ভাই বলবে। রায়হান বয়সে তোমার অনেক বড়।”

“ঠিক আছে। এখন রাখছি!”

টেলিফোনটা কেটে আমি পিয়ালী আপুর সম্মুখস্থ হয়ে উত্তেজিত গলায় বললাম,,

“ছেলেটি রায়হান ভাইয়া আপু! প্লিজ দরজাটা খুলে দাও!”

পিয়ালী আপু থমকালেন। বিস্মিত দৃষ্টিতে আমার দিকে প্রশ্ন ছুড়ে বললেন,,

“কে বলল?”

“তোমার ভাইয়া বলেছেন!”

“যদি তিনি রায়হান ই হয়ে থাকেন? তবে বিগত ১ মাস যাবত আমাকে ফলো করছিলেন কেন?”

“হয়তো তোমাকে বাজিয়ে দেখছিলেন! তোমার চারিত্রিক প্রকৃতি বিশ্লেষণ করছিলেন। এখন যাও। দরজাটা খুলে দাও। মা এসে দেখলে খুব রাগ করবেন!”

পিয়ালী আপু অস্থির দৃষ্টিতে খুব শুকনো গলায় বললেন,,

“কিন্তু আমি যে এতক্ষন উনার সাথে খারাপ ব্যবহার করছিলাম ভাবী! কোন মুখে এখন আমি এখন দরজাটা খুলে দিব? ভীষণ গিলটি ফিল হচ্ছে আমার! না বাবা! আমি কিছুতেই উনার মুখোমুখি হতে পারব না!”

“উফফ আপু! তুমি তো আর জেনে শুনে উনার সাথে খারাপ ব্যবহার করো নি তাই না? তাছাড়া তোমার জায়গায় যেকোনো মেয়ে থাকলে ঠিক এই কাজটাই করত।”

“তাহলে দরজাটা খুলে দিব?”

আপুকে আমি অভয় দিয়ে বললাম,,

“হুম খুলে দাও। জলদি!”

শুকনো মুখে আপু দরজার খিলটায় হাত বাড়ালেন। মুখমন্ডলে দারুন অনুশোচনার ছাপ। কম্পিত হাতে দরজার খিলটা খুলে দিতেই রায়হান ভাই ক্রুর হেসে আপুর মুখোমুখি দাঁড়ালেন। অতঃপর গোলাপের বগিটা আপুর দিকে এগিয়ে বললেন,,

“কি? বলেছি না? দরজাটা তুমি নিজ থেকেই খুলে দিবে! যাই হোক, দিস ইজ ফর ইউর’স। ফুলের দোকানে আজ ইয়া লম্বা এক লাইন পড়েছিল। সেই লাইনে দাঁড়িয়ে ঘেমে নেয়ে তোমার জন্য এই ফুটন্ত গোলাপের বগিটা আনা। গ্রহণ না করলে কিন্তু খুব কষ্ট পাব!”

আপু মাথা নুইয়ে নিলেন। কিছুটা অনুরাগ এবং অনুতাপ মিশ্রিত গলায় বললেন,,

“স্যরি! আসলে আমি বুঝতে পারি নি। আপনিই রায়হান ছিলেন!”

“বুঝলে কি করতে?”

“অন্তত খারাপ ব্যবহার করতাম না!”

“তোমার থেকে আমি ঠিক খারাপ ব্যবহারটাই আশা করেছিলাম! লাস্ট দু মাস আগে যখন প্রথম বার হিমেশের ফোনে তোমার ছবিটা দেখি না? বিশ্বাস করবে কিনা জানি না! অতি রঞ্জিত একটা সম্পর্কের মোহে আটকে পড়েছিলাম তখন থেকেই! তোমার প্রতি এত বিপুল পরিমানে মুগ্ধিত হয়েছিলাম যে, আস্তে ধীরে তোমাকে ফলো করতে শুরু করি! বিগত এক মাস যাবত তোমার পিছনে ঘুড়ে ও তোমার মন জয় করতে পারি নি! তাই ভাবলাম এবার সম্পর্কটাকে একটু জয় করি! পরে না হয় মন্থর গতিতে মনটা ও জয় করে নিব! মোদ্দা কথা-“আমি তোমার প্রতি এবং তোমার সততার প্রতি খুব বেশি মুগ্ধিত!”

পিয়ালী আপু মাথা উঁচিয়ে অতি আবেগ প্রবণ নয়নে রায়হান ভাইয়ার পুলকিত দৃষ্টিতে দৃষ্টি নিবদ্ধ করলেন! অতঃপর অতি নম্রতার সহিত রায়হান ভাইয়ার হাত থেকে ফুলের বগিটা হাতে নিয়ে বললেন,,

“থ্যাংকস!”

“শুধু থ্যাংকস?”

“না। ভেতরে আসুন!”

পিয়ালী আপুর পিছু পিছু রায়হান ভাই বসার ঘরে প্রবেশ করলেন। বসার ঘরটায় কিছুক্ষন দৃষ্টি বুলিয়ে রায়হান ভাই ডান পাশের সোফাটায় বসতেই আমি মৃদ্যু হেসে রায়হান ভাইয়ার দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য গলা ঝাঁকিয়ে বললাম,,

“উহুম উহুম! এই যে রায়হান ভাই? শুনছেন?”

মিষ্টি হেসে রায়হান ভাই প্রত্যত্তুরে বললেন,,

“শুনছি ভাবী! বলুন?”

“আপনি আমাকে চিনেন?”

“কেন নয়? আপনার পুরো পরিবারকে ও আমি চিনি। ছবিতে দেখেছি। হিমেশ এবং পরশ সব এক এক করে দেখিয়েছিল। সাথে এ ও বলেছিল, আপনাকে কত যুদ্ধ করে পরশ জয় করেছে!”

মৃদ্যু হাসলাম আমি। পুনরায় প্রশ্ন ছুড়ে বললাম,,

“চা না কফি হুম?”

“দুটো হলে ও মন্দ হয় না!”

“তাহলে ডাবল করে দেই?”

ফিক করে হাসলেন রায়হান ভাই। পূর্ণ জড়তা সমেত বাঁ পাশের সোফায় বসে থাকে পিয়ালী আপুর দিকে প্রেমময় দৃষ্টি নিক্ষেপ করে আমায় উদ্দেশ্য করে বললেন,,

“প্রেয়সীর যেহেতু চা পছন্দ! তবে আমাকে ও চা দেওয়া হউক!”

আমি রসিকতা নিয়ে হেসে বললাম,,

“যথা আজ্ঞা জাহাপনা! আপনারা বসে কথা বলুন। আমি চা করে আনছি!”

রায়হান ভাইয়ার উদগ্রীব দৃষ্টি কারো সন্ধানে ব্যস্ত। জানার আগ্রহ নিয়ে রায়হান ভাই আমার দিকে প্রশ্ন ছুড়ে বললেন,,

“শ্বাশুড়ী মা কোথায়? বাড়িতে আর কেউ নেই? ছোট শালীকে ও তো দেখছি না!”

পিয়ালী আপু ফট করে মাথা তুলে উজবুক দৃষ্টি নিক্ষেপ করলেন রায়হান ভাইয়ার দিকে। বিনিময়ে আমি ও ক্রুর হেসে রায়হান ভাইকে বললাম,,

“আরেহ্ বাহ! আমাদের জামাই বাবু দেখছি সুপার ফার্স্ট!”

রায়হান ভাই অট্ট হাসতেই আমি পুনরায় বললাম,,

“মা একটু বাজারে গেছেন। আর পায়েল গেছে ভার্সিটিতে। দুজনই কিছুক্ষনের মধ্যে ফিরে আসবে।”

রান্নাঘরের দিকে মোড় নিলাম আমি। লজ্জায় কলুষিত হয়ে পিয়ালী আপু ও আমায় অনুসরণ করতেই রায়হান ভাই পেছন থেকে পিয়ালী আপুকে ডেকে বললেন,,

“আরেহ্ পিয়ালী! তুমি কোথায় যাচ্ছ? আমি তো তোমার সাথেই কথা বলতে এসেছি!”

জোর পূর্বক পিয়ালী আপুকে ঠেলে আমি সোফায় বসিয়ে দিয়ে এলাম। লজ্জায়, জড়তায়, তৈরী হওয়া দ্বিধা-দ্বন্ধে পিয়ালী আপু জড় পদার্থ প্রায়! তাদের দুজনকে কথা বলার সুযোগ করে দিয়ে আমি রান্নাঘরে চলে এলাম চা বানাতে। এর মধ্যেই শ্বাশুড়ী মা বাজার থেকে ফিরে এলেন। রায়হান ভাইকে প্রথম অবস্থায় দেখে মা খুব বেশি অবাক হলেন। পরে অবশ্য রায়হান ভাইয়ার সাথে কথা বলতে বলতে অনেকটাই ফ্রি হয়ে গেলেন। রায়হান ভাইয়ার পরিবার সম্পর্কে আস্তে ধীরে জানতে শুরু করলেন। কাজের বুয়া আসতেই আমি ফ্রিজ থেকে বিফ, মাটান এবং চিকেন বের করে রাঁধতে আরম্ভ করলাম। কাজের বুয়ার সাহায্যে দুপুর প্রায় একটা বাজতেই আমার রান্না বান্না সম্পূর্ণ হলো। মা প্রতিটি পদ টেস্ট করে এই প্রথম বার আমার প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়ে উঠলেন! প্রায় এক মাস বাড়িতে থাকার কারনে মা এবং চাচীমনিদের থেকে সাংসারিক অনেক কাজ কর্মই আমি শিখে এসেছি। বিশেষ করে রান্না-বান্না! আম্মু এক এক করে আমায় সব রান্না শিখিয়ে দিয়েছিলরন। যার ফলস্বরূপ খুব অনায়াসেই এখন আমি সব ধরনের রান্না জব্দ করে নিয়েছি!

দুপুর দুটো বাজতেই খাবার টেবিলে সব খাবার আমি এক এক করে পরিবেশন করে দিলাম। রায়হান ভাইকে সুষ্ঠু সম্পন্ন ভাবে খাতির যত্ন করতে পেরে মা এবং আমি দুজনই খুব সন্তুষ্ট। রায়হান ভাইয়ার সহবোধ, ভদ্র আচরণ, নম্র বাচন ভঙ্গি, এবং সবার প্রতি শ্রদ্ধাবোধ দেখে মা খুব মুগ্ধ রায়হান ভাইয়ার প্রতি। পিয়ালী আপুর মনে ও যে রায়হান ভাইয়ার প্রতি ক্ষুদ্র অনুভূতি জন্ম নিচ্ছে তা আপুর আবেদনময়ী মুখের আদল দেখে বেশ আন্দাজ করা যাচ্ছে! দুপুরের খাওয়া শেষেই রায়হান ভাইয়া বিদায় নিলেন। যাওয়ার পূর্বে পায়েল এবং আমার হাতে দু দুটো কিটকেট চকলেটের প্যাকেট ধরিয়ে দিয়ে গেলেন!

,
,

রাত প্রায় ১০ টা বাজতেই পরশ অফিস থেকে বাড়ি ফিরলেন। অফিসের পোশাক না ছেড়েই তিনি ক্লান্ত এবং ক্লেশ ভরা শরীর নিয়ে বিছানায় গাঁ এলিয়ে দিলেন। রুমে প্রবেশ করতেই দেখলাম লোকটি চিৎ হয়ে শুয়ে আঁখি যুগল বুজে কপালে হাত গুজে রেখেছেন। বোধ হয় মাথায় খুব যন্ত্রণা করছে। তড়িঘড়ি করে আমি উদ্বিগ্ন চিত্তে পরশের পাশে বসলাম। পরশের দিকে খানিক ঝুঁকে আমি জিগ্যাসু গলায় বললাম,,

“কি হয়েছে? মাথায় যন্ত্রণা করছে?”

ফট করে পরশ ক্লান্ত আঁখি যুগল খুলে যন্ত্রণায় ভরা দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকালেন। মুহূর্তের মধ্যেই হেচকা টানে লোকটির বুকের পাজরে আমায় মিশিয়ে বললেন,,

“কাজের খুব চাপ ছিল আজ। মাথা থেকে শুরু করে শরীর শুদ্ধ ব্যাথা করছে। একটু মাথাটা টিপে দিবে?”

লোকটির হাতের বাঁধন থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে আমি বিচলিত দৃষ্টিতে লোকটির নেতিয়ে যাওয়া বিবর্ণ মুখমন্ডলে দৃষ্টি বুলালাম। অতঃপর লোকটির মাথাটি সন্তপর্নে আমার হাঁটুতে তুলে উষ্ণ এবং কোমল হাতে কপালে হাত ছুঁইয়ে বললাম,,

“এভাবে বলতে হবে কেন হুম? অধিকার দেখিয়ে বলতে পারেন না? যে টয়া আমার মাথাটা টিপে দাও?”

মলিন হাসলেন পরশ। আমার হাত দুটোতে কয়েক জোড়া চুমো খেয়ে বললেন,,

“বাচ্চার মা কে কষ্ট দিতে চাই না। তাই এই মুহূর্তে অধিকারটা খাটাতে চাইছি না!”

“বাচ্চার মা এখন ও সুস্থ আছে! এখন ও বাচ্চা বড় হয় নি। যখন বড় হবে তখন দেখা যাবে৷ এখন চোখ বুজে শুয়ে পড়ুন। মাথা টিপে দিচ্ছি আমি!”

মুহূর্তের মধ্যেই পরশ ক্লান্ত আঁখি যুগল বুজে নিলেন। আলতো হাতে পরশের কপালে মাসাজ করতে করতেই খেয়াল করলাম পরশ গভীর ঘুমে তলিয়ে পড়েছেন! জানি না আদৌ লোকটি বাইরে থেকে কিছু খেয়ে এসেছেন কিনা? এভাবেই উপোস ঘুমুতে দেওয়াটা কি ঠিক হবে? যেহেতু লোকটি ঘুমিয়েই পড়েছেন আমার মনে হয় না এখন লোকটিকে জাগানো ঠিক হবে! ক্লান্ত শরীর! হয়তো তখন আর ও খারাপ লাগবে। সব দিক বিবেচনা করে আমি পরশের ভারী শরীরটিকে আস্তে ধীরে টেনে নিয়ে বালিশে শুইয়ে দিলাম। অফিসের শার্টটা খুলে হ্যাংগারে ঝুলিয়ে রাখলাম। পা থেকে জুতো জুড়ো খুলে ঠিকঠাক জায়গায় রাখলাম। লোকটির গাঁয়ে কাঁথা জড়িয়ে লোকটির কপালে দীর্ঘ চুম্বন বসিয়ে দিলাম। অতঃপর আমি নিজে ও উপোস অবস্থায় লোকটির পাশে শুয়ে পড়লাম!

_________________________________________

সময়ের স্রোতে ভেসে দীর্ঘ ১ মাস অতিবাহিত হয়ে গেল মাঝখানে! নিমন্ত্রন রক্ষার্থে এর মাঝে একবার মা-বাবা এবং আমার পুরো পরিবার এসে আমায় দেখে গেছেন! সকালে এসে বিকেলের মধ্যেই রওনা হয়ে গিয়েছিলেন। পরশের অনেক জোরজুরিতে ও বাবা থাকতে রাজি হন নি! এক প্রকার রাগ জমে আছে পরশের প্রতি বাবার! জানি না কোনো কারনে বাবা পরশের উপর মনোক্ষুণ্ণ!

অনেকটা দ্রুত গতিতেই মনে হলো পিয়ালী আপু এবং পায়েলের বিয়ের দিন ঘনিয়ে এলো! সবে মাত্র দুদিন হলো পায়েলের ফাইনাল এক্সাম শেষ হয়েছে। এর মধ্যেই পায়েল এবং পিয়ালী আপুর একই দিনে বিয়ের ডেইট ফিক্সড করা হয়েছে! এই প্রথমবার এই বাড়িতে জোড়া বিয়ে হচ্ছে! তার একমাত্র কারন হলো হিমেশ ভাইয়া! হিমেশ ভাইয়ার পরিবার খুব তাড়া দিচ্ছেন বিয়ের জন্য! বয়স এমনিতেই অনেক পেরিয়ে যাচ্ছেন উনার! তার উপর আরেকটু দেরি করা মানেই হলো বয়স থেকে আর ও কয়েকটা দিন কেটে যাওয়া। বিশেষ করে এই কারনেই একই দিনে দু দুটো বিয়ের ডেইট ফিক্সড করা হয়েছে।

ফাইনাল এক্সামের রুটিন আমার ও কিছুদিন হলো পাবলিশড হয়েছে! আগামী দশ দিন বাদেই আমার থার্ড ইয়ার ফাইনাল এক্সাম। আমার অনুপস্থিতে বাবা নিজেই আমার কলেজের সমস্ত ফরমালিটিস পূরণ করে ফর্মফিলাপ সম্পন্ন করে এসেছেন। এবার শুধু যথারীতি দশ দিন পর আমার এক্সাম হলে প্রেজেন্ট থাকলেই চলবে। পড়াশোনায় খুব মনযোগ দিতে হচ্ছে আজ কাল। সম্পূর্ণটাই হচ্ছে পরশ এবং মায়ের চাপে পড়ে। যদি ও পড়াশোনাটা এখন ঠিক মতো আমার দ্বারা হয়ে উঠছে না। সংসারে মন দিয়ে বসলে হয়তো পড়াশোনাটা আর কারো দ্বারাই তেমন মনযোগের সহিত হয়ে উঠে না!

আগামী কাল পায়েল এবং পিয়ালী আপুর গাঁয়ে হলুদ! আজ থেকেই বাড়িতে হুলুস্থুল কান্ড। দূর থেকে দূরবর্তী সব আত্নীয়-স্বজন এসে হাজির। সবার আপ্যায়নে আমি এবং মা ব্যস্ত। মাঝে মাঝে পিয়ালী আপু ও বাড়ির সমস্ত কাজে হাত লাগিয়ে আমাদের সাহায্য করছেন। অন্যদিকে পায়েল ব্যস্ত তার বিয়েতে নিমন্ত্রণ করা ফ্রেন্ডস সার্কেলের সাথে সময় কাটাতে৷ পরশ এবং বাবা ব্যস্ত বাড়ির প্যান্ডেল, ম্যানেজমেন্ট এবং ক্যাটারিং এর কাজে। আমার বাবার বাড়ির লোকজন কাল সকালেই ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হবেন। আমার শ্বশুড়, শ্বাশুড়ীর জোরদার অনুরোধে বাবা পরিশেষে রাজি হয়েছেন হলুদের দিনই এই বাড়িতে আসার। নতুবা বাবা ভেবে রেখেছিলেন বিয়ের দিন এসে বিয়েতে কোনো রকম এ্যাটেন্ড করেই চলে যাবেন!

রাত প্রায় একটা বাজছে ঘড়িতে। রাতের খাবার সেরে সবে মাত্র শোবার ঘরে ফিরলাম। আজ সারাদিনের ধকলে শরীরটা বেশ ক্লান্ত লাগছে। ইদানিং খাবারের প্রতি খুব অনীহা বেড়েছে আমার। বেছে বেছে খাবার খাওয়ার অভ্যেস বাড়ছে। কম/বেশি সব খাবারের গন্ধেই আমার বমির বেগ হয়। যার কারনে ভাত আর ডাল খেয়েই আমার ক্ষুধামন্দা কাটাতে হয়। দুর্বল শরীর নিয়ে বিছানায় গাঁ এলাতেই পরশ দরজা ঠেলে রুমে প্রবেশ করলেন। দরজার খিল আটকে তিনি চিৎ হয়ে আমার পাশ ফিরে শুলেন। অল্প সময় আমার দিকে শান্ত দৃষ্টি নিক্ষেপ করে আচম্বিতে লোকটি আমায় ঝাপটে ধরে আহ্লাদী স্বরে বললেন,,

“ইশশশ! কতদিন হলো আদর করি না আমার বউটাকে!”

“প্রতিদিনই এই মিথ্যে কথাটি আপনার বলতে হবে?”

“উফফ! অভ্যেস হয়ে গেছে তো! পাল্টাবো কি করে?”

“যত কিছুই বলুন, আজ হবে না। দুর্বল লাগছে আমার!”

“উঁহু! হবে না। আজ আমার চাই ই চাই!”

লোকটি আমার বারণ শুনলেন না। উত্তেজিত হয়ে আমায় আপন করে নিতে তৎপর হয়ে উঠলেন। প্রথম অবস্থায় যদি ও আমি সায় দেই নি লোকটিকে। তবে পরবর্তীতে সায় দিতে বাধ্য হলাম!

চলবে…?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here