রক্ষিতা,পর্ব-১৭

0
1247

রক্ষিতা,পর্ব-১৭
আশুথিনী_হাওলাদার (ছদ্মনাম)

__“মাম্মাম আপু কিন্তু আমাকে বকছে”
দু’জনের ঝগড়া দেখে খিল খিল করে হেসে দেয় অর্ঘমা। অর্নীফ অহনিফা ঝগড়া বন্ধ করে তাদের মায়ের হাসি মুখের দিকে মুচকি হেসে তাঁকিয়ে খাওয়ায় মন দেয়। সব কিছুতে মাম্মামের এই হাসিটা মিস করছিল দু’জন। অর্ঘমা হেসে দু’জনকে দু’পাশ থেকে জড়িয়ে কাছে আনে। এক সাথে দু’জনকে খাইয়ে দেয়।
“দূর থেকে ফটাফট কয়েকটি ফটো তুলে নেয় নিফান। কত বছর পর সে অর্ঘমাকে দেখলো। তার হাসি হাসি মুখখানা দেখলো। মাক্সের আড়াল থেকে মৃদু হাসে নিফান। চোখের কোনের জল টুকু মুছে আড়চোখে তাদের দিকে তাঁকায়। তার সন্তান। দু’জনকে চোখ ভোরে দেখে সে। হাত বাড়ালেই ছুতে পারে। কিন্তু হাত বাড়ানোর অধিকার তার নেই। আজ নিজেকে তার পৃথিবীর সবচেয়ে নিকৃষ্ট স্বামী নিকৃষ্ট বাবা মনে হচ্ছে। কি করে পারলো সে এভাবে এত ভাবে অর্ঘমাকে অত্যাচার করতে। কি করে? অর্ঘমার তো কোনো দোষ ছিল না। সে তো জানতো, দোষ যা ছিল সেটা অভ্রর। তাহলে কেন সে এটা করলো? রাগের বশে যে ভুল, যে অন্যায় সে করেছে তার জন্য ১৫ টি বছর ধরে অনুতাপের দহনে পুড়ছে সে। এর চেয়ে বড় শাস্তি হয়তো আর নেই। তিনজন কে খুব হ্যাপি লাগছে। আচ্ছা সে থাকলে পরিবারটা পরিপূর্ণ হতো না? একটা হ্যাপি ফেমিলি হতো তাদের। বাচ্চা দু’টোর কে দেখছে কি চটপটে। মেয়েটা একদম মায়ের মতো। সাহসি চটপটে। ভাবে নিফান, আচ্ছা অর্ঘমা ওই ছোট্টো পেটে দু’জন কে ক্যারি করছিল কীভাবে? খুব কষ্ট হইছিল হয়ত। এই সময় তো মেয়েদের সবচেয়ে স্বামী কে দরকার হয়। বুকের চিনচিন করে ওঠে নিফানের। মাথায় খুব যন্ত্রণা দিচ্ছে সব, সব কিছু। চোখদুটো বন্ধ করে টেবিলের সাথে হাত ঠেসে মাথায় হাত দিয়ে ভর দেয় সে। নিজের করা অন্যায় গুলোর জন্য প্রতিনিয়ত অশান্তিতে থাকে সে।
“অর্ঘমার বুকে হঠাৎ চিনচিন করে উঠলো। সেই চেনা গন্ধ ১৫ বছর পর নাকে এসে লাগলো। এটা তো নিফানের পারফিউম আর শরীরের স্মলের মিক্স স্মেল। শুকনো ঢোক গিলে সে। চোখ ঘুড়িয়ে আশেপাশে তাঁকায় সে। বুকের ভিতর কেমন করে উঠে। শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে তার। আজ ১৫ বছর পর মনে হলো নিফান তার আশেপাশে কোথাও আছে। কাঁপাকাঁপা হাতে টেবিল থেকে পানির গ্লাস নেয়। পরে যেতে নিলে অর্নীফ ধরে ফেলে। মা’কে আগলে ধরে। অহনিফা হতবম্ব হয়ে তাঁকায়। অহনিফা ব্যাগ খুজে ইনহেলার বের করে মায়ের হাতে দেয়।

‘‘খাটের সাথে হেলান দিয়ে শুয়ে অর্ঘমা। পাশে সোফায় রোহান বসে আছে। তাকে পেয়ে অভিযোগের ঝুড়ি খুলে বসে অহনিফা। অর্ঘমা মেয়ের দিকে তা্ঁকিয়ে মিটমিট করে হাসে।
__‘মামু। মাম্মাম নিজের কোনো যত্ন নেয় না। দেখো কি অবস্থা হয়েছে। মাম্মাম তো জানে যে, কোনো কিছু নিয়ে দুশ্চিন্তা করলে তার বুকে ব্যাথা হয়। শ্বাস হয় তারপরও কেন মাম্মাম চিন্তা করে? তুমি এক্ষুনি জিজ্ঞেস করো তাকে?

কথা গুলো একটানে শেষ করে মুখ ফুলিয়ে থাকে অহনিফা। রোহান অহনিফাকে সমর্থন করে বলে,,
__“তাই তো অর্ঘ তুই আর মানুষ হলি না। সেই ছোটবেলার মতো এখনো তোকে সব ধরে বেঁধে সব করাতে হবে।
অহনিফা মন খারাপ করে বলে,,
__‘আজ যদি আমাদের বাবা থাকত। মাম্মামকে এত কষ্ট করতে হতো না তাই না মামু। আমাদের বাবা নেই বলেই তো মাম্মাম সব দিক সামাল দিতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পরেছে।
রোহানের কথার উত্তরে চোখ ছোটো ছোটো করে কিছু বলতে নেয় অর্ঘমা। তার আগে অহনিফার বলা কথায় সে থমকায়। থমকায় রোহানও। অহনিফা কথা শেষ করে রুমের বাইরে চলে যায়। চোখ ভিজে ওঠে অর্ঘমার। সে কি একসাথে “ওদের” বাবা মায়ের দায়িত্ব পালন করতে পারেনি। অহনিফার কি এটা মনে হচ্ছে যে, তাদের বাবা থাকলে তারা খুব ‘খুশি’ থাকতো।
রোহান অর্ঘমার হাত ধরে তাকে আশ্বাস দিয়ে বলে,
__‘নিফা শুধু তোর কষ্ট থেকে এটা বলেছে। তাছাড়া এটা তো জানা ছিল। নিফা, অর্ন একদিন বড় হবে। তাদের বাবার সম্পর্কে জানতে চাইবে। তাই এতো তাড়াতাড়ি ভেংগে পরলে চলবে?
দীর্ঘশ্বাস ফেলে জানালার বাইরে তাঁকায় অর্ঘমা।

গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে সিগেরেট টানছে নিফান। তার একটু দূরে। অর্নীফ একটা ছেলেকে মারছে। সে অবশ্য এখানে দাঁড়িয়ে পাহারা দিচ্ছে কেউ এ পাশ দিয়ে যাচ্ছে কিনা। ছেলে না জানুক নিফান নিজে তো জানে যে, সে অর্নীফের বাবা। তাই বাবা হিসেবে তো কিছু দায়িত্ব, কর্তব্য আছে। সেই কর্তব্যের খাতিলেই দূর থেকে পাহারা দিচ্ছে। অর্ঘমা জানলে অবশ্য তাকে ঝাঁটা দিয়ে পেটাবে। তবে সে মজা নিচ্ছে। তার ছেলে তার মতোই কিছুটা। সবার সামনে আলাভোলা টাইপ ভিতরে মিচকে শয়তান। মৃদু হেসে শেষ সিগারেটর ছোট্ট অংশটা রাস্তায় ফেলে পা দিয়ে পিশে নেয়।
“অর্নিফ ছেলেটাকে মেরে। তার গলায় পারা দিয়ে বলে,,,
__‘তুই আমার বোন কে টিচ করিস? হুম। আর একবার এই সাহস দেখাস জানে মেরে দেব।
ছেলেটা কুকিয়ে ওঠে। রাগে অর্নীফ আরও কয়েক ঘা লাগিয়ে দেয়। গলা টিপে ধরে বলে,,
__‘আজকে এখানে যা ঘটেছে কারো কানে যেন না যায়। যদি যায়। তোকে জানে মেরে দেব। কথাটা মাথায় ঢুকিয়ে নে।
“আশে পাশে তাঁকিয়ে বাসার দিকে চলে যায় অর্নীফ। তারাতাড়ি বাড়িতে যেতে হবে। না হলে মা, আপু চিন্তা করবে। ছেলেটাকে মারতে গিয়ে নিজের শরীরেও কিছু আঘাত লেগেছে অর্নিফের। তাই আঘাত গুলোতে আরও কিছু আঘাত করে। এমন ভাব নেয় যাতে বুঝায় সে কোথাও পরে গিয়ে ব্যাথা পেয়েছে।
অর্নিফের পিছু পিছু নিফানও বাড়ি অব্দি আসে। অর্নীফকে বাড়ির ভিতরে যেতে দেখে বাঁকা হেসে গাড়ি ঘুরিয়ে চলে যায়। অর্ঘমা তার সন্তানদেরর তার কাছ থেকে দূরে রাখলেও স্বভাবে ঠিক তার মতই হয়েছে। আজ মনে হলো অর্নীফের মধ্যে সে নিজেকে দেখতে পাচ্ছে। সেই রাগ, সেই জেদ। সেই বোনের প্রতি ভালোবাসা। দীর্ঘশ্বাস ফেলে নিফান। তবে সেটা তার মতো অতিরিক্ত যেন না হয়। সে যে ভুল করেছে তা যেন কখনো তার সন্তান না করে এটাই চাওয়া। অবশ্য অর্ঘমার উপর বিশ্বাস আছে তার সে কখনো এমন হতেও দেবে না

চলবে,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here