রক্ষিতা,পর্ব-১৮ (শেষ পর্ব)

0
2279

রক্ষিতা,পর্ব-১৮ (শেষ পর্ব)
আশুথিনী_হাওলাদার (ছদ্মনাম)

“হাতে পায়ে ব্যাথা নিয়ে অর্নিফকে বাড়ি ফিরতে দেখে হতবাক হয় অর্ঘমা। ভাল ছেলে বের হলো। ফিরলো হাতে পায়ে দাগ নিয়ে। ছেলেকে এভাবে দেখে নিজের অসুস্থতা ভুলে যায় অর্ঘমা। অহনিফা পারলে তো বাড়ি মাথায় করে। ইচ্ছে মতো বকেও দেয় অর্নীফ কে। রাতে পাকনামি করে বাইরে যেতে কে বলছিল। না গেলে তো এতসব হতো না। কতটা কেঁটে গেছে হাতে পায়ে। ভ্যা ভ্যা করে কেঁদে দেয় অহনিফা। অর্নীফ হতবাক হয়ে বোনের দিকে তাঁকায়। কাটলো কার? ব্যাথা পেল কে? আর কাঁদে কে? অর্নীফ হোহো করে হেসে ওঠে অহনিফার কাঁদা দেখে।
অহনিফা কাঁদা বাদ দিয়ে অর্নীফকে মারতে নেয়। তবে অর্নীফের শরীরে ব্যাথা দেখে না পেরে ফ্যাসফ্যাস করে কাঁদতে থাকে। মেয়ে দিকে একবার তাঁকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে অর্ঘমা। দুই ভাইবোন দু’জন দু’জনকে খুব ভালবাসে। শ্যাবলন তুলে ভিজিয়ে হাতে-পায়ে লাগিয়ে দিয়ে রেষ্ট নিতে বলে। খাবার রেডি করতে কিচেনে চলে যায় অর্ঘমা। কিচেনে গিয়ে চোখের কোনের পানি টুকু মুছে। মলিন হাসে। বড্ড মাম্মা-পাপা ভাইয়ার কথা মনে পরছে তার। যদি নবীনতা তাদের জীবনে না আসত তাহলে হয়ত তাদের পরিবারটা এভাবে শেষ হয়ে যেতো না। কিচেন থেকে এক পলক সন্তানদের দেখে সে। অহনিফা আলতো হাতে ধরে অর্নীফ কে বেডরুমে নিয়ে যাচ্ছে। বুকের ভিতর কেমন মুচড়ে উঠে তার। ভাইয়ার কথা বড্ড মনে পরছে। সেও তো এভাবে সারাক্ষন ভাইয়ার সাথে লেগে থাকত আর যখন ভাইয়া একটু কোথাও ব্যাথা পেতো নিজে কেঁদে বাড়ি মাথায় তুলতো। আজ হঠাৎ কান্নারা দলা পাকিয়ে আসতে চাচ্ছে। কোনো মতে ঢোক গিলে কান্না আঁটকে চোখে মুখে পানির ঝাপটা দিয়ে খাবার গরম করে নেয়।
ছেলে মেয়েকে খাইয়ে নিজের ঘরে চলে যায় অর্ঘমা। জানালার পাশে বসে, অতীত ভেবে চলেছে। বাইরে বৃষ্টি পরছে। গাড়ির সীটের হেলান দিয়ে জানালার পাশে বসা অর্ঘমাকে দেখতে থাকে নিফান। দু’জনের মধ্যে কতটা দূরত্ব । কিন্তু এই দূরত্বটা তার নিজের তৈরি।

সকাল থেকেই শুরু হয় অর্ঘমার ব্যাস্ততা। অহনিফা অর্নীফকে ঘুম থেকে তোলা এক প্রকার যুদ্ধতার কাছে। অহনিফার রুমে গিয়ে তাকে তুলে কিচেনে যায় সে। কিচেন থেকে আবার হাক ছেড়ে ডাকে। দু’জনের কোনো খবর নেই। খুন্তি নিয়ে ঘিরে যায় এবার দুটো কে খুন্তি পিটা করে তুলবে। কিছুটা চেচিয়ে বলে,,
__“অর্ন, নিফা উঠবি নাকি তোদের খারচুনের বাড়ি দেব।? প্রতিদিন এক জ্বালা। জমিদারের ছেলে -মেয়ে বাবা যেমন ছিল এ দুটোও সেই বাপের মতোই হইছে।
কথা শেষ করে থমকায় অর্ঘমা। খুনন্তিটা হাত থেকে পরে যায়। চোখ জ্বালা করছে। বুকের ভিতর কেমিন কষট হচ্ছে। তবে সেটাকে পাত্তা না দিয়ে হাক ছেড়ে অর্ন,নিফাকে ডেকে কিচেনে চলে যায়। তার কাজ আছে অনেক এসব ভাবার সময় কই। ছেলে মেয়েকে খাইয়ে তাদের স্কুলে দিয়ে নিজেকে ভার্সিটিতে যেতে হবে। কত কাজ সেখানে অন্য কারো কথা ভাবার সময় কই। দীর্ঘশ্বাস আসে তার সেটা না ফেলে ফিরিয়ে ন্যায়। শুধু দীর্ঘশ্বাস ফেলে কি হবে? কার জন্য ফেলবে? যে তাকে কখনো ভালোইবাসেনি। শুধু প্রতিশোধের গুটি ছিল মাত্র সে। বুকের ভিতর খা খা করে উটগে তার। কাঁদবে না কাঁদবেনা ভেবেও ডুকরে কেঁদে দেয়। নিফানের প্রতারনা তাকে ভাল থাকতে দিচ্ছে না। গত ১৫ বছরে একদিনও সে ভাল থাকতে পারেনি। যখন ভেবেছে, তখনই মনে পরেছে নিফান তাকে ভালোবাসেনি। একটুও কি ভালোবাসা যেত না তাকে? হাসে অর্ঘমা। ভালবাসলে কখনো নিজের বউ কে রক্ষিতা করে রাখতে পারতো না। সারাক্ষন কানের কাছে এসে এটা বলত না। ‘বউ হওয়ার চেষ্টা করোনা “রক্ষিতা”রা কখনো ঘরের বউ হয় না” দু’হাতে কান চেপে ধরে অর্ঘমা। এত গুলো বছর পরও বারবার কথা গুলো মনে হচ্ছে কানের পাশে বাজছে। কিচেনের ফ্লোরে বসে পরে সে। সব পারলেও এই কথা গুলো থেকে সে আজও বাঁচতে পারেনি। সারাক্ষন কানের পাশে টেপ রেকর্ডারের মতো বেজে চলে। খানিখ বাদে চোখ নুচে উঠে দাঁড়ায়। রান্না শেষে খাবার টেবিলে রেখে ফ্রেস হতে যায়। একেবারে তৈতৈরি হয়ে আসে। এসে দেখে অর্নীফ অহনিফা তৈরি হয়ে ডাইনিং এ খেতে বসেছে। মৃদু হেসে সেও তাদের সাথে যোগ দেয়। একবার বাচ্চাদের দিকে তাকায় অর্ঘমা। ভাবে, অর্নীফ অহনিফা আজকাল আর জানতে চায় না বাবা কে? কোথায় থাকে? হয়তো মেনে নয়েছে তাদের মা কখনো বাবা সম্পর্কে তাদের কখনো জানাবে না। তবে ছোট বেলায় খুব জ্বালাতো বাবা কোথায় আসে না কেন? কলিং বেলের শব্দে ভাবনা থেকে বেড়িয়ে আসে অর্ঘমা। কিছুটা অবাক হয়। এ সময় তো কেউ আসে না।
অহনিফা, অর্নীফকে খেতে বলে সে দরজা খুলতে যায়।

সামনের মানুষটাকে দেখে কাঁপতে থাকে অর্ঘমা। চোখ বড় বড় করে দেখে মানুষটাকে ১৫ বছর পর নিফান কে নিজের সামনে দেখছে অর্ঘমা। মাথা ঘুরে উঠে তার পরে যেতে নেয়। নিফান তাকে ধরতে নিলে পিছিয়ে যায় সে। দূর্বল শরীর টেনে নিয়ে কোনোরকমে কাউচে গিয়ে বসে। অর্নীফ, অহনিফা দু’জনের দিকে হতবাক হয়ে তাঁকিয়ে আছে। অর্ঘমাকে এভাবে অসুস্থ হতে দেখে নিফা পানি এনে তাকে দেয়। অর্নীফ দরজার সামনে দাঁড়ানো মানুষটাকে একবার দেখে বোনের দিকে তাঁকায়। মনে হচ্ছে তাদের চেহারা কেটে লোকটার মুখে লাগিয়ে দিয়েছে। হুবহু এক। টেবিল থেকে পানির গ্লাস তুলে পানি খেয়ে নেয় অর্নীফ সে কিছুটা হলেও আন্দাজ করতে পেরেছে লোকটা কে হয় তাদের।
“নিফান অর্ঘমা সোজাসুজি কাউচে বসে। অর্ঘমা মাথায় হাত দিয়ে আড়চোখে তাঁকায় তার দিকে। ঠোঁটের কোনে সেই বাকা হাসি দেখে কেঁপে উঠে অর্ঘমা। চোখ বন্ধ করে কাউচে গা এলিয়ে দেয়। খানিকবাদে নিফান বলে উঠে
__‘অর্ন, নিফা তোমরা তোমাদের ঘরে যাও। তোমাদের মাম্মামের সাথে আমার কথা আছে।
অর্নীফ, অহনিফা মায়ের দিকে তাঁকায়। মা অনুমতি দিলে তারা যাবে। অর্ঘমা চোখ বন্ধ অবস্থা বলে,,
__‘ আমি না বলা পর্যন্ত তোমরা রুম থেকে বের হবে না। ‘
অর্নীফ, অহনিফা চলে যাওয়া মাত্র নিফান উঠে অর্ঘমার সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। তার পাশে বসে তার হাত ধরতে নেয়। অর্ঘমা নিজের হাত সরিয়ে নেয়। ব্যাথিত হয় নিফান। তবে এটা হওয়ার ছিল৷ মলিন হেসে অর্ঘমার দিকে তাঁকায়। দেখতে থাকে নিজ স্ত্রীকে ১৫ বছর পর। তবে অর্ঘমা এখন অব্দি তাকে দেখেনি। নিফান বলে,
__“কথা বলবে না? অভিমান করে আছো? আজও? ১৫ বছরেও তোমার অভিমান একটুও ভাংগেনি?
নিফানের দিকে ফিরে তাঁকায় অর্ঘমা। পুর্ন দৃষ্টিতে তাঁকিয়ে বলে,
__‘আপনার সাথে আমার অভিমানের সম্পর্ক না মি.আহমেদ।
নিচু তবে শক্ত কন্ঠে উত্তর দেয় নিফান,,
__‘তুমি আমার স্ত্রী অর্ঘ’
শব্দ করে হেসে দেয় অর্ঘমা। ব্যঙ্গ করে বলে,
__“স্ত্রী ”
হাসে অর্ঘমা। নিফান ব্যাথিত হয়। মলিন হয়ে যায় মুখ।
দমে যায় না নিফান। মলিন তবে শক্ত কন্ঠে বলে,,
__“তুমি আমার সন্তানদের আমার থেকে দূরে রেখেছো অর্ঘ। ওদের উপর আমার পুরু হক আছে।
“হাসে অর্ঘমা। হেসে উত্তর দেয়।
__“আপনার কেন মনে হলো ওরা আপনার সন্তান? এনি প্রুভ? “রক্ষিতা, বাজারি মেয়েদের এক পুরুষে হয়? এমনও তো হতে পারে ওরা অন্য কারো সন্তান।
“নিফান হতবাক হয়ে তাঁকিয়ে থাকে। অর্ঘমার ঠোঁটের কোনে ক্রুর হাসি। “রক্ষিতা” এই একটা শব্দে এতগুলো মানুষের জীবন পালটে গেল। নিফানের চোখে জল চলে আসে তবে অর্ঘমা ভাবশালিন। অর্ঘমার মন কি পাথর হয়ে গেল? জ্বীভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে নেয় নিফান শুকনো ঢোক গিলে বলে,,
__‘সব সত্য অর্ঘ তবে সব সত্যের মধ্যে এটাও সত্য আমি তোমাকে ভালবাসি। ১৫ বছর শুধু তোমাকে, তোমাদের খুজে চলেছি।
থমকায় অর্ঘমা। মৃদু হেসে নিফানের চোখের সাথে চোখ মিলিয়ে বলে,
__‘ভালোবাসলে কখনো ‘রক্ষিতা’ করে রাখতেন না। আমার শরীরে রক্ষিতা ট্যাগ লাগাতেন না। আমাকে নানা ভাবে অত্যাচার করতে পার‍তেন না। জানোয়ারের মতো শরীর টাকে খুবলে নিতে পারতেন না। তাছাড়া আমাদের এতদিনে ডিভোর্স হয়ে গেছে। আমি সেদিন ডিভোর্স পেপারে সাইন করে এসেছি।
__‘আমি ডিভোর্স পেপার ছিড়ে ফেলেছি। (নিফানের উত্তর)
নিফান আকুল কন্ঠে বলে,,
__ নতুন করে সব শুরু করা যায় না?
নিফানের থেকে চোখ ফিরিয়ে নেয় অর্ঘমা। উত্তেজিত কন্ঠে উত্তর দেয়,
__‘আমি ভুলতে পারছিনা নিফান। ১৫ বছর ধরে এখনো আমার কানের কাছে বাজে “ঘরের বউ হওয়ার চেষ্টা করবে না। রক্ষিতারা কখনো বউ হয়না” আমি পারছিনা। পারছিনা এই শব্দ গুলো ভুলতে। সন্তানরা যদি চায় তাহলে তারা তাদের বাবার সাথে যেতে পারে বা আমার সাথে থেকে যোগাযোগ রাখতে পারে। “কি বলতে বা বুঝাতে চেয়েছি বুঝছেন নিশ্চয়ই।”
স্তব্ধ হয় নিফান। কথা শেষে উঠে দাঁড়ায় অর্ঘমা। নিফান কে স্তব্ধ রেখে অর্নীফ, অহনিফার ঘরে চলে যায় অর্ঘমা। আজ যখন নিফান নিজ থেকে এসেছে তাই তার অধিকার থেকে বঞ্চিত তাকে সে করবে না। সন্তানদের জানিয়ে দেবে ড্রইংরুমে যে ভদ্র লোক বসে আছেন তিনি তাদের “বাবা”

অসমাপ্ত

( সমাপ্ত কিনা জানিনা। অনেকে হয়তো রাগ করতে পারেন মিল দিলাম না কেন। কিন্তু পারলাম না মিল বা বিচ্ছেদ কোনোটাই করতে তাই এভাবে শেষ করলাম। এবার হয়ত নিফান অর্ঘমাকে মানোর চেষ্টা করবে কোনো এক সময় হয়তো অর্ঘমা মেনেও যাবে। একটা সুখি পরিবারও হবে। একটা নারীর কাছে তার আত্মমসম্মান আগে নিফান তাকে তার আত্মসম্মানেই বারবার আঘাত করছে। যা একজন নারী মেনে নিতে পারেনা কখনোই আমার মতে। রক্ষিতা রিলিটেড একটা গল্প পড়েছিলাম। এক আপু লিখতো। গত পরসু দিনে তার গল্প শেষ হয়। তবে সেখানে শেষটা অন্যরকম আর শেষ যে ভিন্ন হবে কিছুটা বুঝতে পেরেছিলাম তাই । ভাবলাম আমি নিজেই ‘রক্ষিতা’ প্লট নিয়ে গল্প লিখি। ফার্স্ট পার্ট লেখার আগেই। যখন ওই আপুর গল্পটা আমি পড়ত তখন’ই কল্পনায় মিলিয়ে নেই। ১৫ বছরের গ্যাপ দেব। আর শেষটা এমন হবে তাই যেমন ভাবছিলাম তেমন ভাবেই শেষ করলাম। হয়ত আপনাদের মন মতো হয়নি তবে ভেবে দেখুন তো একটা মেয়েকে কখনো রক্ষিতা এই ট্যাগ টা যে দেয়। তাকে কখনো ক্ষমা করতে পারে কিনা। অন্য সব বাদ দিলাম তাকে ঠকানো তার ফেমিলি মারা যাওয়া সব। কিন্তু এই একটা জিনিস কখনো কোনো মেয়ে মেনে নিতে পারে না আমার মতে।
যারা সাইলেন্ট পাঠক-পাঠিকা ছিলেন তারাও আজকে কিছু বলে যাবেন। শেষ পর্বে সবার মন্তব্য আশা করছি। যারা যারা এত দিন নেক্সট আর নাইস বলছেন সেই আপু ভাইয়ারাও কিছু বলে যাবেন ??? ।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here