বুকের ভিতর রাখবো তোকে?,Part:06

0
1892

বুকের ভিতর রাখবো তোকে?,Part:06
Writer: Doraemon(Ayesha)

অরণ্য গাড়ি ড্রাইভ করছে আর অরণ্যের পাশের সিটে পাখি বসে আছে৷ পাখি আজকে ভীষণ খুশি। পাখির খুশি দেখে অরণ্য মুচকি মুচকি হাসছে। অরণ্য মনে মনে বলছে
–পাখি তুমি নিজেও জানো না, তোমাকে আমি কতোটা ভালোবাসি। তোমার পাগলামি, তোমার হাসি মুখ, তোমার রাগী দৃষ্টি, তোমার প্রতিটা অঙ্গভঙ্গি আমাকে পাগল করে দেয়৷
পাখি লক্ষ্য করল অরণ্য তার দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসছে। এটা দেখে পাখি বেশ অবাকই হলো।পাখি মনে মনে বলতে লাগল
–এই অসভ্য ছেলেটা এভাবে হাসছে কেন? পাগল হয়ে গেল নাকি! শয়তান ছেলে এই সাতদিন আমাকে জ্বালিয়ে তোর শান্তি হয় নি। ইসস কি থাপ্পড়গুলোই না মেরেছিল আমায়। আবার…মুহূর্তেই পাখির মনে পড়ে গেল অরণ্যের দেওয়া সেই লিপ কিসের কথা যা পাখির পুরো শরীরে বিদ্যুৎের আগুন ধরিয়ে দেওয়ার মতো অনুভূতি ছড়িয়েছিল। এটা ভেবেই পাখির বুক ধুকপুকানি শুরু হয়ে যায়। পাখি চোখ বন্ধ করে আছে। এটা দেখে অরণ্য পাখিকে জিজ্ঞেস করল
–কি হলো পাখি? এভাবে চোখ বন্ধ করে আছো কেন?
পাখি চোখ খুলে অরণ্যকে বলল
–কিছু না স্যার। আচ্ছা স্যার বাড়িতে পৌঁছাতে আর কতক্ষণ সময় লাগবে? অনেকদিন হয়ে গেল মা, বাবা, বোনটাকে দেখি না।
–অনেকদিন কি করে হলো? মাত্র সাতদিনই তো আমরা একসাথে ছিলাম।
–আপনার কাছে এটা কয়েকদিনের ব্যাপার হতে পারে কিন্তুু আমার কাছে অনেকদিনের ব্যাপার।
–পাখি আমাকে একটা কথা বলবে?
–কি বলব স্যার বলুন?
–এই সাতদিন তুমি আমার সাথে ছিলে। হ্যা এটা ঠিক আমরা একই ঘরে থেকেছি কিন্তুু আমি সোফায় শুয়েছি আর তুমি খাটে শুয়েছো। পাখি আমিতো ইচ্ছে করলেই তোমার সাথে খারাপ কিছু করতে পারতাম কিন্তুু আমিতো তা করি নি। পাখি তোমার কি মনে হয় আমি বাজে ছেলে? পাখি তোমার মনে আমার জন্য কি একটুও জায়গা নেই?
অরণ্যের এসব প্রস্নের উত্তর পাখির নিজের কাছেও নেই৷ পাখি চুপ করে আছে।
–কি হলো পাখি বলো?
–আমি এই নিয়ে আর একটা কথাও শুনতে চাই না স্যার৷ আমার এসব নিয়ে কথা বলতে ভালো লাগছে না।
–তুমি না বললেও আমি জানি পাখি তুমি আমাকে ভালোবাসো। কিন্তুু তা তুমি মুখে বলতে চাও না। আমি জানি পাখি বিয়ের পর তো ঠিকই তুমি একদিন আমাকে বলবে অরণ্য খুব ভালোবাসি তোমাকে।
অরণ্যের এমন কথায় পাখি কিছু বলল না। একদম চুপ করে থাকল। কিন্তুু মনে মনে পাখি ঠিকই বিড়বিড় করে বলতে লাগল
— বিয়ে তো আপনাকে আমি কোনোদিনও করব না। আমাকে কি পাগলে পেয়েছে? আপনার মিস্টি কথায় ভুলে যাবো। এসব আপনার বানোয়াট কথা তা আমি খুব ভালো করেই জানি৷ আমাকে যে করেই হোক কিছু একটা করতে হবে। এই লোকটার কাছ থেকে আমাকে মুক্তি পেতে আমার যতটা নিচে নামার আমি ততটা নিচেই নামব।
কয়েক ঘন্টা পর অরণ্যের গাড়ি পাখির বাড়ির সামনে পৌছাল।
পাখি গাড়ি থেকে নামল আর তার সাথে সাথে অরণ্যও গাড়ি থেকে নামল। পাখি অরণ্যকে উদ্দেশ্য করে বলল
–স্যার এখন আপনি চলে যেতে পারেন। টাটা বাই বাই।
কথাটা বলেই পাখি চলে যাচ্ছিল ওমনি পেছন থেকে অরণ্য খপ করে পাখির হাতটা ধরে ফেলে। পাখি পেছন ফিরে অরণ্যের দিকে তাকিয়ে অরণ্যকে জিজ্ঞেস করল
–কি হলো এভাবে আমার হাত ধরেছেন কেন?
–আমিও তোমার সাথে তোমার বাসার ভিতরে যাবো পাখি।
–মানে কি? কেন?
–এমনি। কেন আমি কি তোমার বাসায় যেতে পারি না?
–পারেন। কিন্তুু আপনাকে দেখলে আমার মা বাবা কি ভাববে? আর এই কয়দিন আমি বাড়িতে আসি নি। না জানি পাড়া প্রতিবেশী আমার মা বাবাকে কত কথাই না শুনিয়েছে। আবার আপনাকে আমার মা বাবা দেখলে আমি তাদের কি বলব?
–তোমাকে এসব নিয়ে ভাবতে হবে না। এবার চলো তোমার বাসায় যাই।
পাখি আর কোনো কথা না বাড়িয়ে তার বাসার দরজার সামনে দাড়িয়ে দরজা ধাক্কা দিতে থাকল। পাখি বলতে থাকে
–মা… ও…মা দরজা খুলো।
পাখির মা দরজা খুলে পাখিকে দেখে ভীষণ খুশি। তিনি পাখিকে জড়িয়ে ধরে বলতে লাগল
–এতদিন কোথায় ছিলি মা? তোকে আমি আর তোর বাবা কত জায়গায় খুঁজেছি কিন্তুু কোথাও পাই নি। জানিস পাড়া প্রতিবেশী তোকে নিয়ে আমাকে আর তোর বাবাকে যা নয় তাই কথা শুনিয়েছে। আমরা অনেক কস্টে তাদের বুঝাই যে তুই তোর মামা বাড়িতে গিয়েছিস।
–মা আমি আসলে এতদিন….
পাখির কথা থামিয়ে অরণ্য এবার পাখির মাকে উদেশ্য করে বলতে লাগল
–আসসালামু আলাইকুম আন্টি। কেমন আছেন?
অরণ্যকে দেখে পাখির মা বেশ চমকে গেল। এতক্ষণ পাখির সাথে কথা বলতে গিয়ে পাখির মা অরণ্যকে খেয়ালই করে নি।
–ওয়ালাইকুমুস সালাম। কিন্তুু বাবা তুমি কে? তোমাকে তো চিনতে পারলাম না?
–আন্টি আমি পাখির কলেজ নির্মাতা আশরাফ চৌধুরীর একমাত্র ছেলে অরণ্য চৌধুরী।
–ওহ বাবা বাহিরে দাড়িয়ে আছো কেন? ভিতরে আসো।
অরণ্য ঘরের ভিতরে ঢুকল। পাখির মা অরণ্যকে একটা চেয়ার এনে দিল এবং অরণ্যকে বসতে বলল। অরণ্যও চেয়ারে বসল। পাখি তো তার মায়ের কান্ড দেখছে। আর মনে মনে বলছে
–এই শয়তানটাকে এত আপ্পায়ন করার মানেটা কি! অসহ্য। পাখির দশ বছর বয়সী বোন ফুলি এসে পাখিকে জড়িয়ে ধরল। ফুলি পাখিকে বলল
–আপু তুমি এতদিন কোথায় ছিলে?
–ফুলি আমি একটা জায়গায় গিয়েছিলাম।
এবার ফুলি অরণ্যকে দেখতে পেল।
–আপু এই ভাইয়াটা কে? দেখতে তো খুব সুন্দর।
ফুলির কথায় অরণ্য হেসে দিল। ফুলির মাথায় অরণ্য হাত বুলিয়ে দিল। পাখি মনে মনে বলল
–ইহহহ দেখতে সুন্দর কলা গাছের বাঁদর। শয়তান ছেলে একটা।
অরণ্য লক্ষ্য করল পাখির বাবা বিছানায় শুয়ে আছে। পাখির বাবা পাখিকে দেখে বিছানা থেকে খুব কস্ট করে উঠে কান্না জড়িত গলায় পাখিকে উদ্দেশ্য করে বলল
–পাখি! মা তুই এসেছিস!
পাখি দৌড়ে বাবাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদেই যাচ্ছে।
–হ্যা বাবা তোমার মেয়ে তোমার কাছে ফিরে এসেছে বাবা। আমি আর কোথাও তোমাকে ছেড়ে যাবো না।
–মা তুই এতদিন কোথায় ছিলি? আমরা তোর জন্য কত চিন্তা করছিলাম। জানিস পাড়া প্রতিবেশী কত অপমান করেছে আমাদের। তোকে সব জায়গায় খুঁজেছি কিন্তুু তোকে কোথাও খুঁজে পায় নি।
–বাবা আমি এতদিন…
পাখিকে থামিয়ে অরণ্য এবার পাখির বাবাকে বলল
–আংকেল পাখি এতদিন আমার সাথে ছিল।
অরণ্যের কথা শোনে পাখির বাবা অবাক সাথে পাখির মাও অবাক। পাখির বাবা অরণ্যকে উদ্দেশ্য করে বলল
–তুমি কে বাবা? আর পাখি এতদিন তোমার সাথে ছিল মানে কি?
–আংকেল পাখিকে আমি ভালোবাসি৷ আর এতদিন পাখি আর আমি একই ঘরে থেকেছি।
অরণ্যের কথা শুনে পাখির বাবা পাখির দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকায়। পাখি তার বাবাকে উদ্দেশ্য করে বলল
–বাবা আমার কথাটা তো শোন উনি….
–ঠাসসসসসস
পাখির কথা না শুনেই পাখির বাবা পাখিকে কষিয়ে থাপ্পড় মারল। পাখির বাবা পাখিকে বলল
–তুই এতটা নিচে নামলি পাখি! তুই কিনা ছি ছি ছি।
পাখি কান্না করছে। পাখির কান্না দেখে অরণ্যের বুকটা কস্টে ফেটে যাচ্ছে। অরণ্য পাখির বাবাকে উদ্দেশ্য করে বলল
–আংকেল আমি পাখিকে বিয়ে করতে চাই। আর তা এই কিছুদিনের মধ্যেই।
–তোমার সাহস তো কম না? তুমি আমার মেয়ের মান সম্মান নিয়ে খেলে আবার আমার মেয়েকেই বিয়ে করতে চাও। দেখেতে মনে হচ্ছে অনেক বড়লোক ঘরের ছেলে। আমি বড়লোকদের মনে প্রাণে ঘৃণা করি। আমার ভাইয়ের মেয়ে তমাও বড়লোক ছেলেকে ভালোবেসে বিয়ে করেছিল। কিন্তুু তার পরিণতি হয় মৃত্যু। ঐ ছেলেটা আমার ভাতিজীকে কিছুদিন পরই তালাক দিয়ে দেয় যার ফলে আমার ভাইয়ের মেয়েটা কস্ট পেয়ে মৃত্যুবরণ করে। না না না আমি কিছুতেই তোমার সাথে আমার মেয়ের বিয়ে দিব না।

চলবে?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here