বুকের ভিতর রাখবো তোকে?,Part: 11,12

0
2719

বুকের ভিতর রাখবো তোকে?,Part: 11,12
Writer: Doraemon(Ayesha)
Part: 11

পাখির কথায় অরণ্য রেগে আগুন। –তাই বুঝি পাখি আমাকে বিয়ে করবে না তুমি! চলো নিচে চলো বউ। বিয়ে তো তোমায় আমাকেই করতে হবে।
পাখি চিতকার করে অরণ্যকে বলল
–না, আমি আপনাকে বিয়ে করব না। আমাকে আপনি যেতে দিন প্লিজ স্যার।
–তোমাকে যদি যেতে দেই তাহলে আমি কি করে বাঁচব বউ। তোমাকে ছাড়া তো আমি একমুহূর্তের কথা চিন্তাও করতে পারি না৷
অরণ্য পাখিকে টানতে টানতে নিচে নিয়ে এলো। সেখানে কাজী সাহেব সোফায় ইতিমধ্যে বসে আছেন।
পাখি কেঁদে কেঁদে অরণ্যের মাকে উদ্দেশ্য করে বলল
–আন্টি স্যারকে বলুন না আমাকে ছেড়ে দিতে। আমি উনাকে বিয়ে করব না।
অরণ্যের মা পাখিকে উদ্দেশ্য করে বলল
–মারে আমার ছেলে যে আমার কথা শুনবে না। আমি ওকে ইদানীং খুব হাসি খুশিতে দেখতাম, যে ছেলে আমার সহজে হাসে না। আগে কারণটা বুঝতাম না, কিন্তুু এখন বুঝলাম। তোকে না পেলে আমার ছেলেটা যে বাঁচবে না মা। আমি কি করে আমার ছেলের ক্ষতি করি বল তুই! মা তুই খোকাকে বিয়ে কর। আমার ছেলে তোকে খুব সুখে রাখবে।
পাখি বেশ বুঝতে পারছে আর কোনো কিছু করার নেই। পাখি যে পালাবে তারও কোনো উপায় নেই কারণ অরণ্য পাখির হাত খুব শক্ত করে চেপে ধরে রেখেছে।
অরণ্য পাখিকে জোর করে সোফায় বসিয়ে নিজেও পাখির সাথে সোফায় বসল। অরণ্য কাজী সাহেবকে উদ্দেশ্য করে বলতে লাগল
–কাজী সাহেব বিয়ে পড়ানো শুরু করুন।
কাজী সব নিয়ম পালন করে অরণ্যকে বলতে বলল কবুল বলতে। অরণ্য সাথে সাথে কবুল বলে দিল। এবার পাখির পালা। কাজী সাহেব পাখিকে উদ্দেশ্য করে বলল
–এবার আপনি বলুন মা কবুল।
পাখি কাজী সাহেবকে কাঁদতে কাঁদতে রাগী গলায় বলল
–না আমি কবুল বলব না।
পাখির কথা শুনে এবার অরণ্য রেগে গেল। অরণ্য পাখিকে উদ্দেশ্য করে বলল
–পাখি কবুলটা তাড়াতাড়ি বলে ফেলো নাহলে তোমাকে এর জন্য কঠিন শাস্তি ভোগ করতে হবে।
–আপনার যা ইচ্ছে তাই করেন। আমি কবুল বলব না।
অরণ্য দেয়াল থেকে চাবুক এনে পাখিকে বলল
–পাখি তাড়াতাড়ি কবুল বল।
–আমি বলব না। আপনি আমাকে চাবুক দিয়ে পিটিয়ে মেরে ফেলুন তাও আমি কবুল বলব না। আমি আপনাকে বিয়ে করব না।
অরণ্য ভেবেছিল মারের ভয় দেখালে পাখি অরণ্যকে বিয়ে করতে রাজি হবে। কিন্তুু অরণ্যকে পাখি ভুল প্রমাণিত করল। এবার অরণ্য পাখিকে বলল
–পাখি তোমার মা, বাবা, বোন আজকে আমার দেওয়া ফ্ল্যাটে চলে গেছে। বলতে গেলে আজকে আমি ওদের বস্তি থেকে তাড়িয়েছি। আর আমার লোকেরা জোর করে তাদের আমার দেওয়া ফ্ল্যাটে নিয়ে গেছে। এখন তুমি যদি আমাকে বিয়ে করতে রাজি না হও তাহলে আমি আমার ফ্ল্যাট বোম মেরে উড়িয়ে দিব। তখন তোমার মা, বাবা, বোনের মৃত্যু তুমি সহ্য করতে পারবে তো পাখি?
পাখি আকাশ থেকে পড়ল৷ পাখির মনের মাঝে ঝড় বইতে লাগল। পাখি অরণ্যকে বলল
–স্যার আপনি এত নিচ! আমার মা, বাবা, বোনকে আপনি বস্তি থেকে তাড়িয়ে এখন আপনার ফ্ল্যাটে নিয়ে গিয়ে মেরে ফেলতে চাইছেন শুধু মাত্র আমাকে পাওয়ার জন্য?
–তোমাকে পাওয়ার জন্য আমি সব কিছু করতে পারি পাখি। Now choice is your. তুমি এখন সিদ্ধান্ত নেও আমাকে বিয়ে করবে নাকি পরিবারের মৃত্যু দেখবে?
পাখি কাঁদতে কাঁদতে বলল
–স্যার আমার মা, বাবা, বোনকে প্রাণে মারবেন না প্লিজ।
–হ্যা মারব না আগে কবুল বলো।
পাখি এবার বাধ্য হয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলল
–কবুল… ক ক কবুল…. কবুল।
পাখি কাঁদছে। পাখির কান্না দেখে অরণ্যেরও খুব কস্ট লাগল। অরণ্য জানত পাখিকে ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করলে পাখি অরণ্যকে বিয়ে করতে বাধ্য হবে। যদিও অরণ্য পাখির পরিবারকে প্রাণে মারত না। শুধু মাত্র পাখিকে ভয় দেখিয়েছে বিয়েতে রাজি করানোর জন্য। অরণ্য পাখিকে বলল
–আমি জানতাম পাখি তোমাকে ভয় দেখালেই তুমি আমাকে বিয়ে করবে। তুমি আমাকে এখনো চিনো না পাখি। এই অরণ্য তোমার পরিবারের ক্ষতি করবে তা তুমি ভাবলে কি করে পাখি?
পাখি অবাক হয়ে অরণ্যের দিকে তাকিয়ে আছে। পাখি ভাবতেও পারে নি অরণ্য তাকে বোকা বানাবে।
পাখিকে ঘরে নিয়ে গিয়ে পার্লারের কিছু মেয়ে সাজাতে লাগল। কারণ আজ পাখির বাসর রাত। পাখি নিস্তব্ধ হয়ে আছে৷ একদম অনুভূতি শূন্য হয়ে আছে পাখি।
রাত নয়টা বাজে। পাখি বাসরঘরে বিছানায় বসে আছে। বিছানাটা ফুল দিয়ে সাজানো। অরণ্যের বেডরোমটা বিশাল বড়। ঘরের চারিপাশটাও ফুল দিয়ে সাজানো। অরণ্য দরজা খুলে ঘরে প্রবেশ করল। তারপর অরণ্য দরজাটা লাগিয়ে দিল। অরণ্য পাখির কাছে ধীরে ধীরে যেতে লাগল। একসময় পাখির ঘোমটা অরণ্য সরিয়ে দিল। অরণ্য দেখতে পেল পাখি কেঁদে চোখ মুখ ফুলিয়ে রেখেছে। পাখির মন খারাপ দেখে অরণ্যের বুকে চিনচিন ব্যথা হতে লাগল। অরণ্য পাখিকে উদ্দেশ্য করে বলল
–পাখি তুমি কি এখনো আমার উপর রেগে আছো?
পাখি কোনো কথা বলছে না। অরণ্য আবারও পাখিকে বলল
— কি হলো পাখি কথা বলো?
পাখির মুখ দিয়ে কোনো কথা বের হচ্ছে না। অরণ্য রেগে গিয়ে পাখির দুই বাহু ধরে পাখিকে ঝাকিয়ে চিতকার করে অরণ্য বলল
–কি হলো পাখি কথা বলছো না কেন?
পাখি অরণ্যের এমন ভয়ংকর চিতকার শুনে ভয়ে কেঁপে উঠল। পাখি কাঁদতে কাঁদতে অরণ্যকে বলল
–আমার শরীরটাকেই তো আপনি চেয়েছিলেন। এখন আপনি আমার শরীরটাকে নিয়ে যা ইচ্ছে তাই করতে পারেন৷ আমি আপনাকে আর বাঁধা দিব না।
অরণ্য পাখির এমন নোংরা কথা শুনে রেগে গিয়ে পাখিকে ঠাসসসস করে এক থাপ্পড় মেরে দিল। পাখি ছিটকে গিয়ে বিছানায় পড়ল। অরণ্য চিতকার করে দাঁতে দাঁত চেপে পাখিকে উদ্দেশ্য করে বলল
–তোর এত বড় সাহস আমার ভালোবাসাকে তুই শারিরীক চাহিদার কথা দিয়ে অপমান করিস! যদি আমার এতই তোর শরীরের প্রতি লোভ থাকত তাহলে বিয়ের আগেই তোর সাথে শারীরিক চাহিদা মেটাতে পারতাম। আমি তোর শরীরটাকে নয় তোর মনটাকে চেয়েছিলাম। আমি চেয়েছিলাম তোর একটু ভালোবাসা।
পাখি গালে হাত দিয়ে অরণ্যের দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। পাখি অরণ্যকে উদ্দেশ্য করে বলল
— আমি আপনার এসব নাটকীয় কথা শুনতে চাই না। আমাকে আপনি মুক্তি দিন?
–মুক্তি তুই তখনি পাবি যখন আমি এই পৃথিবীতে থাকব না।
পাখির মুখে আর কোনো কথা নেই। অরণ্য সোফায় গিয়ে শুয়ে পড়ল। পাখি বিছানায় বসে কাঁদতে লাগল আর মনে মনে বলতে লাগল
–আমি কি তাহলে আপনাকে চিনতে ভুল করলাম স্যার? আমি যে নিজেও বুঝতে পারছি না আপনার মনে আসলে আছে টা কি!



#চলবে?

#বুকের ভিতর রাখবো তোকে?
#Part:12
#Writer: Doraemon(Ayesha)

অরণ্য সোফায় শুয়ে আছে। কিন্তুু অরণ্যের চোখে ঘুম নেই। নিজের অজান্তেই অরণ্যের চোখের কোণে জল গড়িয়ে পড়ছে। কারণ আজকে অরণ্য তার পাখিকে বাসর ঘরে থাপ্পড় মেরেছে। অরণ্য মনে মনে বলতে লাগল
–তুমি কবে আমাকে বুঝবে পাখি! আমি যে তোমাকে ভীষণ ভালোবাসি তা কি তুমি বুঝতে পারো না! আজকে আমি আমার বউটাকে থাপ্পড় মারলাম। ছিহ নিজের প্রতি নিজেরই ঘৃণা লাগছে। আচ্ছা পাখি কি কোনোদিনও আমায় ভালোবাসবে না! যেইদিন আমি এই পৃথিবীতে থাকব না সেইদিন পাখি বুঝবে যে আমি কত ভালোবেসেছিলাম আমার পাখিকে।
বেশ কিছুদিন হয়ে গেল পাখি আর অরণ্যের বিয়ের। অরণ্য পাখিকে নিজের হাতে খাইয়ে দেয় পাখি না চাওয়া সত্তেও। অরণ্য সোফায় ঘুমায় আর পাখি খাটে ঘুমায়। একদিন পাখির মাঝরাতে ঘুম ভাঙে কারণ পাখির পানির পিপাসা লেগেছিল। আর তাই পাখি পানি আনতে জগটা হাতে নিয়ে ঘর থেকে বের হওয়ার আগে দেখল অরণ্য সোফায় নিস্পাপ শিশুর মতো ঘুমাচ্ছে। ঘুমালে কাউকে এতটা সুন্দর লাগে তা পাখির কাছে অজানা ছিল। পাখি অরণ্যের দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। অরণের উপরের সার্টের তিনটা বোতাম খোলা থাকায় পাখি দেখতে পেল অরণ্যের বুকের বাম পাশে একটা ক্ষত চিহ্ন। পাখি অরণ্যের আরেকটু কাছে এগিয়ে এসে দেখতে পেল অরণ্যের বুকের বাম পাশে পাখির নাম লেখা আর তা লেখা হয়েছে কোনো দাড়ালো ছুরি দিয়ে। এটা দেখে পাখির অজান্তেই নিজের চোখের কোণে পানি জমে গেল আর মনে মনে পাখি বলল
–তার মানে কি স্যার আমায় সত্যিই……
পাখি পানি আনতে চলে গেল৷ তারপর পানি খেয়ে আবার বিছানায় শুয়ে পড়ল।
আজকাল পাখির মনটা ভীষণ খারাপ লাগে কারণ পাখি তার মা, বাবা, বোনকে অনেকদিন দেখে না৷ একদিন পাখি অরণ্যকে উদ্দেশ্য করে বলল
–স্যার আমি আমার পরিবারকে দেখতে যেতে চাই আমাকে নিয়ে যাবেন?
–আমি কি আমার বউয়ের আবদার না রেখে পারি! আজকেই আমরা যাবো।
পাখি ভীষণ খুশি। অরণ্য গাড়ি ড্রাইভ করছে আর পাখি অরণ্যের পাশে বসে খুশিতে হাসছে। অনেকদিন পর পাখির মুখে হাসি দেখে অরণ্যের মনটাও খুব ভালো লাগছে৷ হঠাৎ পাখি অরণ্যকে উদ্দেশ্য করে বলল
–স্যার গাড়ি থামান।
–কেন পাখি? গাড়ি থামাবো কেন?
–স্যার বাইরে হাওয়াই মিঠাই দেখতে পেলাম। আমার হাওয়াই মিঠাই খেতে ভীষণ ভালো লাগে। আমাকে এনে দিন না স্যার প্লিজ?
অরণ্য পাখির কথায় মুচকি হাসল। এই ভেবে যে পাখিটা এখনও বাচ্চাই রয়ে গেল। অরণ্য গাড়িটা থামাল। অরণ্য পাখিকে উদ্দেশ্য করে বলল
–ঠিক আছে পাখি। তুমি বসো আমি তোমার জন্য হাওয়াই মিঠাই নিয়ে আসছি।
–না স্যার আমিও আপনার সাথে যাবো।
পাখির হাসি মুখ দেখে অরণ্য আর বারণ করতে পারল না। অরণ্য পাখিকে বলল
–ঠিক আছে বউ আমার চলো।
অরণ্য আর পাখি গাড়ি থেকে নেমে হাওয়াই মিঠাই নেওয়ার জন্য গেল।
অরণ্য হাওয়াই মিঠাই ওয়ালাকে উদ্দেশ্য করে বলল
–চাচা সব গুলো হাওয়াই মিঠাই আমি কিনতে চাই। এগুলোর দাম সব মিলিয়ে কত হবে?
পাখি অরণ্যের কথা শুনে অবাক। পাখি অরণ্যকে বলল
–আরে স্যার আমি কি রাক্ষসী নাকি যে সবগুলো হাওয়াই মিঠাই খাবো? আমার দুটো হলেই চলবে।
অরণ্য হেসে হেসে পাখিকে বলল
–তাই নাকি? কিন্তুু আমি তোমাকে সব গুলো হাওয়াই মিঠাই কিনে দিতে চাই।
একসময় পাখির অনেক জোরাজোরি করার পর বাধ্য হয়ে অরণ্য সবগুলো কিনতে না পেরে অরণ্য অন্তত পাখিকে দশটা হলেও হাওয়াই মিঠাই কিনে দেয়। পাখি খুব খুশি কারণ সবগুলো হাওয়াই মিঠাই পাখির হাতে। পাখি নাচতে নাচতে অরণ্যকে ফেলে রেখেই গাড়িতে যাওয়াই উদ্দেশ্যে রাস্তা পাড় হতে লাগল। আর এমন সময় একটা ট্রাক পাখির একদম পাশ থেকে আসতে লাগল। পাখির কোনো খেয়াল নেই। কিন্তুু অরণ্য তা খেয়াল করল। অরণ্য পাখিকে দৌড়ে এসে ধাক্কা দিয়ে রাস্তার ওপাশে ফেলে দিয়ে নিজে ট্রাকের ধাক্কা খেয়ে রাস্তার আরেকপাশে হুমড়ি খেয়ে পড়ল। অরণ্যের সাড়া শরীরে রক্ত পড়ছে। পাখি পিছন ফিরে তাকিয়ে দেখতে পায় অরণ্য ট্রাকের সাথে ধাক্কা খেয়ে মাটিতে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। পাখি এটা দেখার সাথে সাথে জুড়ে অরণ্য বলে চিতকার দিল। অরণ্য এই প্রথম পাখির মুখে শুধু অরণ্য ডাকটা শুনতে পেয়েছে। পাখি দৌড়ে এসে অরণ্যকে নিজের কাছে নিয়ে এসে বলতে লাগল
–অরণ্য আপনার কিছু হবে না!!! আমি আপনার কিছু হতে দিব না।
অরণ্য পাখির গালে হাত দিয়ে হেসে হেসে বলল
–পাখি আজকে তুমি মুক্ত। আমি বলেছিলাম না যেদিন আমার মৃত্যু হবে সেদিন তুমি মুক্তি পাবে। আজ তুমি মুক্ত পাখি।
এটা বলেই অরণ্য তার দুচোখ বন্ধ করে ফেলল। পাখি অরণ্যকে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে অরণ্য বলে এক চিতকার দিল। পাখি কান্নায় ভেঙে পড়তে লাগল। পাখি চিতকার করে বলতে লাগল
–আমি আপনাকে ভালোবাসি অরণ্য। আমি আপনাকে এতদিন মুখ ফুটে বলতে পারে নি। আপনি আমাকে ছেড়ে যেতে পারেন না। কিছুতেই না। আপনার যদি কিছু হয়ে যায় আমিও বাঁচব না। নিজেকে শেষ করে ফেলব আমি।



#চলবে?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here