বুকের_ভিতর_রাখবো_তোকে?,Part:13 শেষ পর্ব

0
4171

বুকের_ভিতর_রাখবো_তোকে?,Part:13 শেষ পর্ব
Writer: Doraemon(Ayesha)

পাখির পুরো শরীরে অরণ্যের রক্ত মাখামাখি করছে। আজকে পাখি অরণ্যকে বুকে জড়িয়ে ধরে খুব কাঁদছে। রাস্তার বহু লোকেরা পাখি আর অরণ্যকে দেখছে। একসময় রাস্তার কিছু লোকেরা এম্বুলেন্স ডেকে এনে অরণ্যকে এম্বুলেন্সে করে নিয়ে যায়। পাখিও এম্বুলেন্সে করে অরণ্যকে বাঁচানোর জন্য হাসপাতালে যায়। অরণ্যের অপারেশন চলছে। অরণ্যের মা- বাবা এবং পাখির মা, বাবা, বোন হাসপাতালে এসেছে। পাখি হাসপাতালে অরণ্যের জন্য দাঁড়িয়ে থেকে পাগলের মতো কাঁদছে। পাখির মা-বাবা ও শাশুড়ী পাখিকে শান্তনা দিচ্ছে। কিন্তুু অরণ্যের বাবা পাখির উপর খেপে আছেন। পাখি কাঁদছে আর অরণ্যের বলা কথাগুলো মনে করছে।
কিছুদিন আগেই বিয়ের পর পাখি যেন চুপচাপ থাকত। অরণ্য পাখির মুখে হাসি ফুটানোর জন্য কত গিফট আনত কিন্তুু তাতেও পাখি খুশি হতো না। একদিন পাখি বলেছিল তার খিদে নেই সে খাবে না কিন্তুু অরণ্য পাখিকে জোর করে খাইয়ে দিতে দিতে পাখিকে উদ্দেশ্য করে বলেছিল
–যতদিন আমি বেঁচে থাকব ততদিন আমি আমার বউকে নিজের হাতে খাইয়ে দিব। আমার বউটা না চাওয়া সত্তেও খাইয়ে দিব। যেদিন আমি এই পৃথিবীতে থাকব না সেদিন নাহয় নিজের হাতে খেও।
আরেকটা দিনের কথাও পাখির চোখে ভাসছে। এইতো নয় দিন আগের কথা পাখির ১০৩ ডিগ্রি জ্বর হয়েছিল। পাখি বিছানা থেকেও উঠতে পারছিল না তা দেখে অরণ্য সারারাত পাখির মাথায় জলপট্টি দিয়েছিল আর প্রয়োজনীয় ঔষধ জোর করে পাখিকে খাইয়ে দিয়েছিল। সেই সময় অরণ্য পাখিকে বলেছিল
–আমার পাখিটা এভাবে অসুস্থ থাকলে আমার একটুও ভালো লাগে না। তাড়াতাড়ি সুস্থ হও তো বউ। তুমি আমার সাথে অভিমান করবে আর আমি তোমার রাগ ভাঙাব। তোমাকে এভাবে কস্ট পেতে দেখলে আমার যে কেমন লাগে তা আমি তোমাকে বলে বুঝাতে পারব না। তুমিতো আবার আমায় ঠকবাজ ভাবো।
পাখি এসব কথাগুলো মনে করে নিজের চোখ থেকে অনবরত জল ফেলছে।
পাখি মনে মনে বলল
–সব আমার দোষ। আমি আমার অরণ্যকে চিনতে ভুল করেছিলাম। আমি বুঝতে পারি নি যে সব মানুষ এক নয়। আমাকে অরণ্য এত ভালোবেসেছিল আর আমি তাকে বিনিময়ে শুধু কস্ট, অবহেলা আর অপমান করেছি। না, না, না আমার অরণ্যের কিছু হতে পারে না। ওর যদি কিছু হয়ে যায় তাহলে আমি আমার জীবন রাখবো না। আমার বেঁচে থাকার কোনো অধিকার নেই।
কিছুক্ষণ পর ডাক্তার অপরেশন থেকে বের হলো সবাই ডাক্তারকে জিজ্ঞেস করতে লাগল অরণ্য কেমন আছে! কিন্তুু ডাক্তার সবাইকে বলল
–রোগীর বাঁচার চান্স অনেক কম। আমরা যথেষ্ট চেষ্টা করছি রোগীকে বাঁচানোর।
এই কথা শুনার পর পাখির মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ল। অরণ্যের মা অজ্ঞান হয়ে গেল। পাখির মা, বাবা, বোনও কাঁদছে। অরণ্যের বাবা রেগে পাখিকে উদ্দেশ্য করে বলে
–এই মেয়ে তোমার জন্য আজকে আমার ছেলের এই অবস্থা। তুমি আমার ছেলেটার মাথাটা চিবিয়ে খেয়েছো। আজ তোমার জন্য আমার একমাত্র ছেলেটা মৃত্যুর সাথে লড়াই করছে। আমি বিদেশ ছিলাম আর আমার অজান্তেই এত কিছু ঘটে গেছে আর আমি কিছু জানি না! এই মেয়ে তুমি হাসপাতাল থেকে বের হয়ে যাও। আমার চোখের সামনে থেকে দূর হয়ে যাও।
পাখির মুখে কোনো কথা নেই। পাখি শুধু কেঁদেই যাচ্ছে। পাখি এখনো দাড়িয়ে আছে দেখে অরণ্যের বাবা পাখিকে উদ্দেশ্য করে বলল
–এই মেয়ে কি হলো তুমি যাও না কেন? বের হয়ে যাও বলছি। ওহ যাবে না!
পাখির বাবা হাসপাতালের দারোয়ান ডেকে এনে পাখিকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে হাসপাতাল থেকে বের করে দেয়।
পাখি হাসপাতালের কাছে রাস্তার এক কোণে বসে চোখের জল ফেলছে। আর অরণ্য যাতে ভালো হয়ে যায় তার জন্য সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করছে। একসময় অনেক্ষণ সময় ধরে অপারেশন করার পর ডাক্তার সবাইকে বলে ২৪ ঘন্টার মধ্যে যদি রোগীর জ্ঞান না ফিরে তাহলে তার মৃত্যু নিশ্চিত।
ঐদিকে পাখি অনুশোচনায় শেষ হয়ে যাচ্ছে। কাঁদতে কাঁদতে পাখির চোখদুটো ফুলে লাল হয়ে গেছে। মাথার চুলগুলো এলোমেলো হয়ে আছে। পাখি মনে মনে বলতে থাকে
–অরণ্য একবার আপনি সুস্থ হয়ে আমার কাছে ফিরে আসেন আমি ওয়াদা দিচ্ছি আমি আপনাকে কোনোদিনও কস্ট দিব না। পৃথিবীর সবচেয়ে সেরা ভালোবাসা আপনাকে দেওয়ার আমি চেষ্টা করব। শুধু একবার আপনি আমার কাছে ফিরে আসুন অরণ্য। আমি আপনাকে ছাড়া বাঁচব না৷ পাখি হঠাৎ করেই জোরে অরণ্য বলে চিতকার দিয়ে উঠে। ঐদিকে অরণ্যের বুকের হৃদস্পন্দন কেঁপে উঠে। অরণ্য চোখ খুলে ঘন ঘন নিস্বাস ফেলতে থাকে। অরণ্যের মুখে অক্সিজেন মাস্ক দেওয়া। অরণ্য তার হাতের দিকে খেয়াল করল তার হাতের ভিতর সুচ ঢুকিয়ে রক্ত আর সেলাইন প্রবেশ করানো হচ্ছে। অরণ্যের পুরো শরীরে বেন্ডেজ দেওয়া। অরণ্য অনেক কস্ট করে শুয়া থেকে উঠে বসে। এদিকে নার্সরা ডাক্তারকে চিতকার দিয়ে বলতে থাকে
–স্যার স্যার রোগীর জ্ঞান ফিরেছে।
ডাক্তার নার্স আসল। আর ঐদিকে অরণ্য মুখের অক্সিজেন মাস্ক, হাতের সুচ খুলে কেবিন থেকে বেরিয়ে যেতে নিলে ডাক্তার, নার্সেরা বাঁধা দেয়। কিন্তুু অরণ্য ডাক্তারকে উদ্দেশ্য করে বলল
–আমি পাখির কাছে যাবো। ডাক্তার আমি আমার স্ত্রীর কাছে যেতে চাই। আমাকে যেতে দিন। ডাক্তার, নার্সেরা অরণ্যকে বাঁধা দিতে নিলে অরণ্য তাদের ধাক্কা দিয়ে কেবিন থেকে বেরিয়ে যায়। অরণ্য চিতকার করে বলে
–পাখি তুমি কোথায়? পাখি!!!!!!
অরণ্যের মা, বাবা এবং পাখির মা, বাবা, বোন অরণ্যকে দেখে অবাক তার সাথে অনেক খুশিও। অরণ্যের বাবা অরণ্যকে আটকিয়ে অরণ্যকে উদ্দেশ্য করে বলে
–খোকা তোর জ্ঞান ফিরেছে!! তুই কোথায় যাচ্ছিস? তুই এখন কোথাও যাবি না।
–বাবা আমাকে যেতে দেও। আর আমাকে বলো পাখি কোথায়?
–ঐ মেয়েটাকে আমি দারোয়ান ডেকে বাইরে বের করে দিয়েছি৷ ওর জন্য তোর এই অবস্থা।
–বাবা তুমি এটা কি করে পারলে? বাবা তোমার কোনো ধারণা নেই আমি পাখিকে কতটা ভালোবাসি!
এই বলে অরণ্য যেতে নিলে অরণ্যের বাবা অরণ্যের পথ আটকায়। কিন্তুু অরণ্য তার বাবার বারণ না শুনেই চলে যায়। অরণ্য রাস্তায় বের হয়ে পাখিকে পাগলের মতো খুঁজতে থাকে। অরণ্য চিতকার করে বলে
–পাখি…..পাখি তুমি কোথায়?
একসময় অনেক খোঁজাখুঁজির পর অরণ্য দেখে পাখি রাস্তার একপাশে বসে হাত পা গুটিয়ে মুখ লুকিয়ে কান্না করছে। অরণ্য পাখিকে খুঁজে পেয়ে মনে হলো নিজের প্রাণটাকে ফিরে পেয়েছে। অরণ্য পাখির কাছে এসে সামনে বরাবর নিচে বসে পাখির মাথায় হাত রাখল। পাখির এই ছোঁয়া খুব চেনা মনে হলো। পাখি কেঁপে উঠল। পাখি মুখ তুলে তাকিয়ে দেখে অরণ্য তার সামনে বসে আছে আর তার দিকে সেই মিস্টি চাহনিতে তাকিয়ে হাসছে। পাখি এটা দেখে নিজের খুশি আর ধরে রাখতে পারল না। অরণ্যকে ঝাপটে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল৷ এই প্রথম পাখি নিজে অরণ্যকে জড়িয়ে ধরেছে। অরণ্যের মনে হলো আজ তার ভালোবাসা সার্থক হয়েছে। আজ অরণ্য তার পাখিকে পেয়েছে। পাখি অরণ্যের কপালে, দুই গালে চুমুতে ভরিয়ে দিল। আজ পাখি অরণ্যকে ফিরে পেয়ে প্রায় পাগল হয়ে গেছে। অরণ্য পাখির কান্ড দেখে অবাকের সাথে সাথে খুশিও হলো। পাখি কাঁদতে কাঁদতে অরণ্যকে বলল
–আমি জানতাম আপনার কিছু হবে না। জানেন আজকে যদি আপনার কিছু হয়ে যেত তাহলে আমিও নিজেকে শেষ করে ফেলতাম। অরণ্য পাখির কথা শুনে রেগে গিয়ে ঠাসসসস করে পাখির গালে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দিল। পাখি গালে হাত দিয়ে অরণ্যের দিকে তাকিয়ে আছে। অরণ্য পাখিকে জড়িয়ে ধরে বলতে থাকে
–তোর কিছু হতেই দিব না আমি৷ মরে গেলেও মৃত্যুর পথ থেকে ফিরে এসে তোর খেয়াল রাখবো। #বুকের ভিতর রাখবো তোকে? তবুও তোর কিছু আমি হতে দিব না।
পাখি অরণ্যকে জড়িয়ে ধরে বলল
–আমি আপনাকে খুব খুব খুব ভালোবাসি।
অরণ্য হেসে হেসে পাখির কানের কাছে বলল
–আমিও খুব ভালোবাসি আমার বউটাকে। আমার পাখি বউটাকে ছাড়া আমি যে এক মুহূর্তেও থাকতে পারি না। সবসময় এই বুকের ভিতর রাখবো তোকে?।।।।


[সমাপ্তি]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here