শ্যাম_বরণ_কন্যা,পর্ব-৪,৫
নীল মাহমুদ
পর্ব-৪
সাদিয়া পিছন তাকিয়ে দেখে নীল ফুল হাতে হাঁটু গেড়ে বসে সাদিয়া কে বলল, আই লাভ ইউ।
হঠাৎ নীলের ডাকে সাদিয়ার ধ্যান ভেঙে যায়,
তার মানে এতক্ষণ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দিনের বেলা স্বপ্ন দেখছিলো,
নীল সাদিয়া কে ডেকেই চলেছে আর সাদিয়া হা করে নীলের দিকে তাকিয়ে আছে,
নীল- হ্যালো এই যে আপু শুনছেন,এই যে,
সাদিয়া- হ্যাঁ শুনছি তো, বলো।
নীল- কই শুনছেন,আ করে তাকিয়ে হাসছেন মাথা ঠিক আছে তো,
নাকি আবার ট্রেন ধরতে যাবেন,
সাদিয়া-না, চলে ক্যাম্পাসে যাই নাকি আমার সাথে যেতে সমস্যা আছে,
নীল- না কি সমস্যা থাকবে,চলেন যাই।
নীল আর সাদিয়া ক্যাম্পাসের মাঠে গিয়ে বসলো মুখোমুখি,
নীল- এবার বলেন কি অবস্থা আপনার,
– শ্যাম বরণ মেয়েদের আবার অবস্থা কাটছে এক ভাবে,
– এমন ভাবে বলছেন কেনো,
– যা সত্যি তাই তো বললাম,ভুল তো কিছু বলি নাই,
-নীল কিছু খাবেন,
– তুমি খাওয়াবে কেনো,আমি খাওয়াবো,
–কখন বললাম আমি খাওয়াবো আমি খাবো আপনি বিল দিবেন (হেসে হেসে(নীল)
–আচ্ছা তুমি খাও,
– আপনি কি খাবেন বলেন,
– আমি ফুচকা খাবো তুমি কি খাবে,
– তাহলে আমিও খাবো,
নীল ফুচকা খাচ্ছে সাদিয়া তা মন ভরে দেখছে,
ফুল হচ্ছে গাছের সুভা, ফুল দেখতেই ভালো লাগে কিন্ত ছিঁড়তে নেই,
তেমনি নীল কে দেখতেই ভালো লাগে,
সাদিয়া কখনো তার মনের অজানা কথা বলতে পারবে না,শ্যাম বরণ তো তাই,।
শ্যাম বা কালো মেয়েদের ভালবাসা
বলতে কোন কিছু নেই,
বাবা মায়ের সংসারে সে বোঝা স্বামীর
সংসারে সে শুধুই তুই কালো তুই কালো
বলে সম্মোধন, আর শাশুড়ীদের তো কথা আছেই,
তাই কালো মেয়েদের মনে ভালবাসা জেগে উঠলে সেখানেই দাফন করে ফেলতে হয়,
নীল আবার ডাকছে সাদিয়া কে এই যে আবার কই হারিয়ে গেলেন,
– না,কই।
একথা সে কথা বলতে বলতে সাদিয়ার ফোন টা বেজে উঠলো,
সাদিয়ার বাসা থেকে ফোন আসছে তারাতাড়ি বাসায় যেতে বলল,
সাদিয়া বাসায় যেতেই মা বলল,
পাত্র পক্ষ এখনি চলে আসবে তারাতারি রেডি হ,
সাদিয়া এটা প্রায় নিত্য দিনের কাজ, মা সাজার কি আছে আসবে আমাকে রিজেক্ট করবে এটাই স্বাভাবিক,
মা- আসলে তোর জন্যই বিয়ে টা হয়,
– তা আমি জানি আমার জন্য বিয়ে টা হয় না,
মা বলল, এবার নাকি বিয়েটা হবে,
সাদিয়া- এমন কি করে সিউর হচ্ছো আমার বিয়ে এইবার হবে,
মা- আমি বললাম তাই হবে,
সাদিয়া- দেখা যাক কি হয়,
দুপুরে পাত্র পক্ষ আসলো ২জন একজন মনে হয় পাত্রের বাবা আরেকজন মনে হয় পাত্রের খালা বা ফুফু হতে পারে,
আমি চা নাস্তা নিয়ে গেলাম আমাকে দেখলো,
তারপর বলল ভিতরে যাও,
ভিতরে আসতেই রিয়া বলল,কি আপু পাত্র পছন্দ হল,
সাদিয়া- পাত্র পছন্দ হয়েছে মানে ওখানে পাত্র কই,পাত্রের বাবা আর আর ফুফু আসছে ওখানে পাত্র কই,
রিয়া হাসতে হাসতে বলল,তুই পাত্র কে বলছিস পাত্রের বাবা,
ঐ টাকলু কাক্কুই তো পাত্র আর ওটা উনার বোন,
কাক্কু এর আগে ৩টা বিয়ে করেছিলো, বাচ্চা হওয়ার সময় শুধু মরে যায় বউ,
রিয়া আরও বলল,আপু তুই বিয়ে টা করে নে না হলে আর এই জীবনে জামাই পাবি না,
রিয়ার কথা শুনে সাদিয়ার মন টা খারাপ হয়ে গেলো,
এই জন্য মা বলেছিলো এই বিয়ে টা হবেই,
মা বাবা যখন চায় আমি মরে যাই,
তাহলে তাই হোক কত গুলো মানুষ কে মুক্তি দিতো পারবো,
আর নিজেও মুক্ত হতে পারবো এই জীবন থেকে,
আর আত্নহত্যা মহাপাপ খাতায় নাম টি উঠলো না,
আসমান জমিনের মালিকও খুশি থাকলো,
সাদিয়ার মা এসে বলল,ছেলের পছন্দ হয়েছে বিয়ের কথা বার্তা একদম পাকাপাকি করে ফেলছে,
সাদিয়া তার কে বলল,মা আমাকে একবার জিজ্ঞেস করলে আমার পছন্দ হয়েছে কিনা,
মা- তোকে জিজ্ঞেস করতে হবে কেনো,(রেগে)
হুম তাই তো আমাকে জিজ্ঞেস করবে কেনো,
কোরবানি দেওয়ার আগে কি পশু কে বলে তোকে কুরবানি দেওয়ার জন্য খাওয়াচ্ছি,
আগামী শুক্রবার সাদিয়ার বিয়ে,
পর্ব-০৫
,
আগামী শুক্রবার সাদিয়ার বিয়ে ঠিক হল,
বিয়ের একটি কার্ড নিয়ে সাদিয়া কলেজে গেলো,
নীল কে দিতে,
সাদিয়া নীলের ক্লাস রুমে গেলো,কিন্ত নীল নেই,
সেমিনারে গেলো নীল নেই,
একজন কে জিজ্ঞেস করলো,
আজ কি নীল কলেজে আসছে,
বলল হুম আসছে কিন্ত ক্লাস করবে না,
সাদিয়া বলল,কেনো।
নীল আজ ডেট করছে ওর গার্লফ্রেন্ড এর সাথে।
কথা টা শুনে সাদিয়ার বুকের ভিতর টা মোচড় দিয়ে উঠলো হাল্কা চিন চিন ব্যথা অনুভব করছে,
কারন সাদিয়া মনে মনে নীল কে নিজের জীবনের চাইতে বেশি ভালবাসে,
শুধু প্রকাশ করতে পারে নিজের গাঁয়ের রং এর জন্য,
সাদিয়া জানে যদি প্রকাশ করে তাহলে চোখের দেখাটাও তখন দেখতে পারবে না,
তাই সাদিয়া কিছু বলে না,
সাদিয়া ফোন টা বের করে নীল কে ফোন দেয়,
।
সাদিয়া- হ্যালো নীল তুমি কোথায়,
নীল- আপু আমি ডেট করতে আসছি,
সাদিয়া- ঐ তুই আপু কস কারে আমারে আপু কবি না,আর তোর ডেট বাইর করমু এখন ক্যাম্পাসে আসবি,
নীল- আপু আমি প্রথম ডেট করতে আসছি প্লিজ প্যারা দিবেন না,৷
পাশ থেকে নীলের গার্লফ্রেন্ড ধমক দিয়ে বলল,এই তুমি ফিসফিস করে কার সাথে কথা বলো,
নীল উল্টো ধমক দিয়ে বলল,দেখছো না আপুর সাথে কথা বলছি,
-আচ্ছা বাবু সরি সরি কথা বলো,
সাদিয়া- ঐ তোরে বাবু কইলো কে,তুই না বললি ডেট করছিস এর মধ্যে তোর মা আসলো কই থেকে,।।
নীল – এখানে মা কই,আমার গার্লফ্রেন্ড আদর করে বাবু বলছে,
সাদিয়া- তুই তোর গার্লফ্রেন্ড এর কোলে উঠে বসে থাক আমি ট্রেন ধরতে গেলাম,
নীল- আচ্ছা পৌছে একটা কল দিবেন,
সাদিয়া- হ দিমু আর সবাইরে বলে যাচ্ছি এর জন্য দায়ী নীল মাহমুদ,
নীল- কেম আফা, কই আসতে হবে বলেন,(সেদিন যে কেন বাঁচাই ছিলাম)
সাদিয়া- এই তো ক্যাম্পাসে আসো, আমি বসে আছি,
নীলের গার্লফ্রেন্ড বলল,এই তুমি কই যাচ্ছো,
নীল- ঐ আর কি কাজ?
-কি কাজ,
–আপু যাইতে বলতাছে,।।
-ওকে ঠিক আছে,
নীল নতুন বউয়ের মতো নতুন গার্লফ্রেন্ড রেখে চলে যাচ্ছে নীলের বুক টা ফাইট্রা চির চির হয়ে যাচ্ছে,
নীল খুব রাগ নিয়ে গেলো সাদিয়ার সাথে দেখা করতে,
আজ সেই রাগ দেখাবে সাদিয়া কে,
সে কি পাইছে যখন তখন ডাকে আমি কি তার বিয়া করা জামাই,
যা বলবে তাই শুনবো,
সাদিয়া বসে আছে ক্যাম্পাসের মাঠে সবুজ ঘাসের উপর।
নীল গিয়ে সাদিয়ার সামনে ধপাস করে বসে পড়লো,
আর বলল কি সমস্যা আপনার,
সাদিয়া শান্ত মনে নীলের হাতে বিয়ের কার্ড দিয়ে বলল,আমার বিয়ে ঠিক হয়েছে আগামী শুক্রবার আমার বিয়ে,
নীল- এই বিয়ের কার্ড দেওয়ার আমার নতুন বউয়ের নতুন গার্লফ্রেন্ড ফালাই আসলাম,
সাদিয়া- তার জন্য সরি,
নীল- আচ্ছা ঠিক আছে,যাক একটা বিয়ের দাওয়াত পেলাম,আচ্ছা তোমার হবু স্বামী কি করে দেখতে কেমন,
সাদিয়া; ব্যবসা করে আর দেখতে ঐ যে বাদাম বিক্রি করছে মামা ঠিক তার মতো,
নীল- কি বলেন?(অবাক হয়ে)
সাদিয়া- হুম আর খুব তারাতাড়ি আমার
চল্লিশা খাইতে পারবা,উনি আগে যে কয়টা বিয়ে করছে সব গুলা মারা গেছে বাচ্চা হওয়ার সময়,
আর আমি তো অভাগী খুব তারাতাড়ি হয়তো আল্লাহ কবুল করে নিবেন,,
নীল- তাই বলে আপনিও রাজি হয়ে গেলেন,
সাদিয়া- তা ছাড়া উপায় আছে কে বিয়ে করবে আমায়,যে রং নিয়ে জন্ম নিয়েছি
এর চাইতে ভালো কই পাবো,
নীল- এটা ঠিক হবে না,আপনি পড়াশোনা করেন,চাকরি করেন অনেক ভালো ভালো ছেলে আপনার পিছনে লাইন ধরে দাঁড়িয়ে থাকবে বিয়ে করার জন্য,
সাদিয়া- বাবা মা কে বলেছিলাম কিন্ত তারা দায় থেকে মুক্ত হতে চায়,বিয়ে দিয়ে,
নীল- আচ্ছা এই সব আমাকে কেন বলেন,
সাদিয়া- আমার মনের কস্ট গুলো কারো সাথে শেয়ার করি না তুমি ছাড়া।
তোমার সাথে শেয়ার করলে মন টা অনেক হল্কা লাগে তাই।
নীল চুপ করে আছে,কারন কিছু টা হলেও বুঝেছে সাদিয়া তার প্রতি দূর্বল, কিন্ত নীল না বুঝার ভান করলো,
আজ শুক্রবার, মানে আজ সাদিয়ার বিয়ে আত্নীয় স্বজনে বাড়ি ভরে গেছে,
নীলও আসছে,
নীল কে দেখে সাদিয়ার চোখে পানি চলে আসে,।
কারন আজকের পর হয়তো আর দেখতে পারবে না,
সাদিয়া রুম থেকে সবাই কে বের হয়ে যেতে বলল নীল বাদে,
সবাই চলে গেলো,
সাদিয়া দরজা বন্ধ করে নীল কে জরিয়ে ধরে বলল,
যদি কোন ভুল করে থাকি আমাকে মাফ করে দিও অনেক জ্বালিয়েছি,
কিন্ত নীল সাদিয়ার ভেতরের কস্ট টা বুঝতে পারছে,
সাদিয়া বলতে চাইছিলো, নীল আমি তোমাকে অনেক ভালবাসি,
কিন্ত তা না বলে বলল মাফ করে দিয়েও নীল,
নীল সাদিয়া কে বলল,কেউ চলেবাসবো নিজেকে কন্ট্রোল করেন,
।
সাদিয়া নীল কে বলল, আমি চলে যাওয়ার আগ পর্যন্ত তুমি আমার সাথে বসে থাকবে,
আস্তে আস্তে রাত গভীর হয়ে আসলো,
কিন্ত বর যাত্রী এখনো আসছে না,
কিন্ত কিছুক্ষণের মধ্যেই চলে আসলো বর যাত্রী,
সাদিয়ার ধম বন্ধ হয়ে আসছে কারন
আর কিছুক্ষন পর চলে যাবে সাদিয়া,
সাদিয়ার পাশে নীল বোবার মতো বসে আছে,
কোন কথা নাই,
কিন্ত,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,, ?
চলবে