শ্যাম_বরণ_কন্যা,পর্ব-০৬,০৭

0
2254

শ্যাম_বরণ_কন্যা,পর্ব-০৬,০৭
নীল মাহমুদ
পর্ব-০৬

কিন্ত শেষ পর্যন্ত সাদিয়ার সাথে বিয়েটা হয়েই গেলো,
সাদিয়া নীল কে একটি বারের জন্য কাছ থেকে সরতে দেন,
যতক্ষন সাদিয়া তার পাসে নীল ছিলো,
সাদিয়া শুধু নীলের দিকে তাকিয়ে ছিলো, চাতক পাখির মতো হয়তো নীল কিছু বলবে তার আশায়,
কিন্ত না নীল একটি কথাও বলেনি,

বিয়ের শেষে যখন সাদিয়া কে তোলে দিলো তখন এক দৃষ্টিতে শুধু নীলের
দিকে তাকিয়ে কাঁদছিলো,
কিন্ত নীল চুপ করে ছিলো তখনো একটি কথা বলেনি,
সাদিয়া চলে গেলো শ্বশুর বাড়ি নীল বিয়ে বাড়ি থেকে,
হাঁটতে হাঁটতে নিজের মেসের দিকে যাচ্ছে,
মন নীলের বিষন খারাপ অজানা কারণে,
একা একা লাগছে কেমন জানি মনে হচ্ছে কিছু একটা গুরুত্বপূর্ণ জিনিস আমার লাইফ থেকে হারিয়ে গেলো,।
,
নীলের কিছু ভাল লাগে না,নীল তার গার্লফ্রেন্ড এর সাথে ব্রেকাপ করলো,
নীল কলেজে আসে কিন্ত তেমন ক্লাস করেনা আসে ক্যাম্পাসে একা বসে থেকে আবার চলে যায়,

১বছর পর,,,,

নীল ঘুমাচ্ছিলো, এমন সময় একটা কল আসে নীলের ফোনে,
ফোন টা রিসিভ করে কানে ধরতেই

নীল তুমি কোথায় একটু অমুক হসপিটালে আসতে পারবে,

নীল- হ্যাঁ আমি এখনি আসছি,

নীল ছুটে গেলো হসপিটালে ,
সাদিয়া প্রেগন্যান্ট শুয়ে আছে হসপিটালের বেডে,

নীল গিয়ে দাঁড়ালো সাদিয়ার মাথার কাছে,
সাদিয়া নীল কে দেখে একটু মুচকি হাসে,
অনেক দিন পর নীল কে দেখলো,

সাদিয়া নীল কে হাত দিয়ে ইশারা করে ডাকলো কাছে আসার জন্য,

নীল সাদিয়ার কাছে আসলো তখন সবাই কে বাহিরে যেতে বলল,
সবাই চলে গেলো,
সাদিয়া নীলের গালে হাত দিয়ে বলল,তুমি কেমন আছো,

নীল- আমি ভালো আছি,

সাদিয়া- তুমি আগের থেকে অনেক শুকিয়ে গেছো কেনো,ঠিক মতো খাওয়া দাওয়া করো না,তোমার গার্লফ্রেন্ড তোমাকে কেয়ার করে না,

নীল- আমার গার্লফ্রেন্ড নেই,

সাদিয়া- কেনো তোমার গার্লফ্রেন্ড নেই

নীল- আমার ভালো লাগে না তাই,

সাদিয়া- তোমার পড়াশোনা কেমন চলছে,

নীল- হুম ভালো,

সাদিয়া- মিথ্যা বলো কেনো,তুমি তো ২ সাবজেক্টে ফেল করেছো,কিন্ত কেনো,তুমি তো ফেল করার মতো ছাত্র না,

নীল- আপনি জানলেন কি করে,

সাদিয়া- আমি তোমার সব খবর রাখি,
আচ্ছা বাদ দেও, সাদিয়ার চোখ দিয়ে অঝোরে পানি বেঁয়ে পড়ছে,

নীল- আপনি কাঁদছেন কেনো,

সাদিয়া- কই না তো,আচ্ছা নীল আমার একটা কথা রাখবে,

নীল- হুম বলেন,

সাদিয়া- বিয়ে করলে একটা কালো বা শ্যামলা মেয়ে কে বিয়ে করবা,
তুমি জানো না নীল একটা কালো বা শ্যামলা মেয়ের মনে কত কষ্ট লুকানো থাকে, কিন্ত গ্যারান্টি দিয়ে বলছি কালো বা শ্যামলা মেয়ে বিয়ে করলে সেই মেয়েটা তোমাকে মাথায় করে রাখবে,
তুমি ভাবতেও পারবে না তোমাকে কত ভালবাসবে,
আরে তুমি মন খারাপ করছো কেনো আমি বলছিনা তোমাকে কালো বা শ্যাম বরণ কন্যা বিয়ে করতেই হবে,
তোমাকে যে ভালবাসবে তাকে কখনো ছাড়বে না,

নীল-হুম কিন্ত এই সব কেনো বলছেন,

সাদিয়া মাথার কাছ একটা ডায়েরি বের করে নীলের হাতে দিয়ে বলল সাদিয়া,
এইটা নাও,
নীল খোলতে চাইলে,।।
সাদিয়া বলে এখানে না,
বাসায় গিয়ে দেখবা,

এবার সাদিয়া বলল,এখন তুমি যেতে পারো,

নীল- কেনো আর কিছুক্ষন থাকি না,

সাদিয়া- না এখন চলে যাও,

নীল বাহিরে বের হল, আবার সবাই রুমে আসলো,
কিছুক্ষন পর শুরু হল কান্নার আওয়াজ।
মানে সাদিয়া আর নেই,
নীল দৌড়ে এসে দেখলো সাদিয়া
মারা গেছে,

সাদিয়া কে দেখে নীলের হাত থেকে ডাইরি টা পড়ে যায় কারন নীল ভাবতেও পারে নাই,
সাদিয়া এভাবে চলে যাবে,

নীল সেদিন বাসায় চলে যায় (টাংগাইলে থেকে মধুপুর)
নীলের মন খারাপ হলে সে বাসায় চলে যায়,
আজও তাই করেছে কিন্ত আজ বাড়ি আসার সময় বাসে বসে অনেক কান্না করেছে,।
কিন্ত বাসে যখন কান্না করছিলো তখন পাসের সীট থেকে একটি মেয়ে বার বার শান্তনা দিচ্ছিলো কিন্ত তাকে কোন কিছু জিজ্ঞেস করা হয়নি,
মেয়েটি ছিলো কালো বোরখা পড়া,আর মনে পড়ে ভাড়া দেওয়া হয়নি হয়তো মেয়েটি দিয়েছে,

বাড়ি এসে রুমের দরজা বন্ধ করে
ডাইরিটার প্রথম পাতা খোলে,
শুরুতেই লিখা নীল আমি তোমাকে ভালবাসি,
কত টা ভালবাসি তা আমি বলে বুঝাতে পারব না,
কিন্ত এটুকু বলতে পারব,
তুমি যদি বিষের শিশি হাতে নিয়ে বলো, এটাতে মধু আছে, কিন্তু আমিও দেখতে পারছি বিষ নিজের চোখ কে ভুল মনে করে খেয়ে ফেলবো, তুমি যা বলছো এটাই ঠিক,

পুরো টা ডাইরি জুড়ে শুধু নীলের কথা
লিখা,
ডাইরি পড়তে পড়তে সকাল হয়ে যায়,
কিন্ত এক সময় নীল জ্ঞান হারিয়ে ফেলে,
নীলের বাবা মা চোখে মুখে পানি দিয়ে জ্ঞান ফিরায়,

নীল পণ করে সে আর কোন দিন বিয়ে করবে না,সে যখন সাদিয়ার হতে পারে নাই,
তাহলে আর সে কারো হবে না,ওপারে গিয়ে একমাত্র সাদিয়ার হবে,

কিন্ত অনার্স-মাস্টার্স শেষ করার পর ভালো একটা জব পায়,
এখন বাবা মায়ের ইচ্ছে নীল কে বিয়ে দিয়ে সুন্দরী একটা বউ মা ঘরে নিয়ে আসা কিন্ত নীল পরিস্কার জানিয়ে দিলো সে বিয়ে করবে না,
কিন্ত এদিকে বাবা মা নাছোড় বান্দা,
বিয়ে তো নীল কে করতেই হবে,
নীলের বাবা মা উল্টো কাজ করে বসলো, দিন টি ছিলো শুক্রবার নীল ঘুমাচ্ছিলো নাক ডেকে,
নীলের বোন লিমা আর মা এক বালতি পানি নিয়ে নীলর উপর ঢেলে দিলো,
নীল লাফ দিয়ে উঠে বসে,

নীল- মা এটা কি হল,

মা- বাবা এইটা তোমার প্রথম বিয়ের গোসল,
নীল- মা আমি তো বিয়ে করব না,

লিমা বলল,ভাইয়া তোকে বিয়ে করতে হবে না বিয়ে তোকে করতে বাসায় এসেছে,

নীল- মানে?

লিমা- মেয়ে পক্ষ তোকে দেখতে আসছে

নীল- ফাজলামি বাদ দিয়ে যাবি এখন নাকি মাইর খাবি,

নীলের ইচ্ছে না থাকা সত্ত্বেও নীল কে রেডি হয়ে যেতে হল,

মেয়ে পক্ষ দেখলো তাদের পছন্দ হয়েছে এখন নীল কে বলল,
মেয়ের সাথে কোন একদিন দেখা করতে,

২দিন পর,,,
সেই মেয়ের সাথে দেখা করতে যাবে শুধু দেখবে আর রিজেক্ট করবে,
রিকশার জন্য দাঁড়িয়ে আছে নীল,
কিন্ত একটা রিকশাও আসছে না,।
ঠিক এমন সময় একটি কালো বোরখা মেয়ে গেলো পাশ কাটিয়ে কিন্ত গাঁয়ের
ঘ্রাণ টা খুব পরিচিত মনে হচ্ছে,

নীল- এক্সকিউজ মি,

মেয়েটি নীলের দিকে তাকিয়ে জ্বি আমাকে বলছেন,

নীল- জ্বি আপনাকে.

নীল মেয়েটির চোখের দিকে তাকায় চোখ দুটো চেনা চেনা লাগছে,
খুব পরিচিত মনে হচ্ছে,
মেয়েটির মুখ ঢাকা শুধু চোখ দেখা যাচ্ছে,

কিন্ত নীল জিজ্ঞেস করলো আচ্ছা আমাকে চিনেন,

মেয়েটি উত্তর দিলো না,আপনি কে ও সরি মনে হয় আমার ভুল হয়েছে,

মেয়েটি চলে গেলো,কিন্ত চোখ দুটো ঠি সাদিয়ার মতো,
আর ঘ্রান টাও,

সাদিয়ার স্মৃতি আজও নীল কে তাড়া করে বেড়ায়,

কিন্ত নীল মেয়েটির পিছু নিলো,

(চলবে)

#শ্যাম_বরণ_কন্যা
পর্ব-০৭

নীল মেয়েটি পিছু নেয়,যেতে যেতে বাসা পর্যন্ত চলে যায় নীল,
তারপর যায় পাত্রী রিজেক্ট করতে,
মেয়েটি রেস্টুরেন্টে কানে হেডফোন দিয়ে বসে পা ধুলাচ্ছে,
আমি গেলাম আর জিজ্ঞেস করলাম,
আপনি অর্পি,
কানে থেকে একটি হেড ফোন খোলে জ্বী,।
আমি আবার বললাম আপনি কি অর্পি,
-জ্বি আমি অর্পি,আপনি নীল।

– হুম আমি নীল,বসতে পারি,

– না দাঁড়িয়ে থাকেন,

-কেনো,
– আরে ভাই চেয়ার তো আপনার জন্যই, আর আপনাকে দেখার জন্য আসছি আপনি ছাড়া কে বসবে,

– অনুমতি নেওয়া হচ্ছে একটি ভদ্রতা,

– ওহ আমি তো অভদ্র মেয়ে,একটা খাচ্ছুনি এই সব বুঝি না,
– শিখে নিবেন,

– আচ্ছা এক মিনিট,আম্মাকে একটা ফোন দেই,

অর্পি ফোন টা বের করে তার মা কে ফোন দিলো,হ্যালো মা জামাই আমার পছন্দ হয়েছে,তারাতাড়ি বিয়ে ডেট ঠিক করো,
অর্পির মা, নীলের তোকে পছন্দ হয়েছে,

অর্পি- আমাকে পছন্দ করবে না এমন ছেলে আছে,

মা- তারপরেও নীলের পছন্দ অপছন্দের একটা ব্যাপার আছে না,

ফোন টা কানে দিয়েই নীল কে জিজ্ঞেস করলো ঐ আমাকে আপনার পছন্দ হয়েছে,
নীল- প্লিজ দয়া করে ফোন টা একটু রাখুন কথা বার্তা বলি আমরা,।।

অর্পি- মা তোমার হবু মেয়ের জামাই দয়া করে ফোন রাখতে বলছে কি জানি কথা বার্তা বলবে এখন রাখি,

ফোন রেখে অর্পি বলল,কি বলবেন বলেন,

নীল সরাসরি বলে দিলো,আপনাকে আমার পছন্দ না,,

কথা টা শুনে অর্পি মনে হল আকাশ থেকে পড়লো,

অর্পি- আমাকে এই প্রথম কোন ছেলে রিজেক্ট করলো, তা মশাই আপনি কোন রাজকন্যার জন্য আমাকে রিজেক্ট করলেন,

নীল- আপনি অসম্ভব সুন্দরী একটা মেয়ে যে কোন ছেলেই আপনাকে পেয়ে ভাগ্যবান মনে করবে,

অর্পি- তাহলে আপনি ভাগ্যবান মনে করতে পারছেন না কেনো,

নীল- কারন আমার শ্যাম বরণ মেয়ে বা কালো মেয়ে পছন্দ,

অর্পি- মানুষ সুন্দরের পিছিনে ছুটে আর আপনি অসুন্দর এর পিছনে আপনার মাথায় সমস্যা আছে,

নীল হেসে বলল,মাক্কাল ফল চিনেন,।

অর্পি-হুম চিনি তো,

নীল- মাক্কাল ফল উপরে দেখতে কিন্ত অনেক সুন্দর কিন্ত ভেতর টা দেখছেন,।

অর্পি- আমাকে কি বুঝাতে চাইছেন,

নীল- বুঝলে বুঝ পাতা না বুঝলে ঐ টাই যেটা ভাবছো,আমি যাই বাই,

অর্পি কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে, চিল্লাইয়া উঠলো,এই তার মানে আমি মাক্কাল ফল এর মতো উপরে সুন্দর আর ভেতরে কালো,

কথা টা শুনে নীল একটা হাসি দিয়ে চলে গেলো,

অর্পি নীল আমি তোমাকেই বিয়ে করবো
যতই কালো খোঁজে বেড়াও,
আমাকে রিজেক্ট করো তাই না,,,

নীল বাসায় গিয়ে ফ্যান টা ছেড়ে বিছানায় বসে আছে,

মা এসে বলল,আমি জানতাম তোর পছন্দ হবে,কি মিষ্টি মেয়ে,

নীল- কার কি পছন্দ হলো মা কি বলছো,

মা- কার কথা আবার অর্পি আমাকে সব বলছে,ফোন করে।

নীল- কি বলছে মা,

মা- তোকে নাকি ও রিজেক্ট করছিলো,তারপর তুই হাতে পায়ে ধরে রাজি করিয়েছিস,

নীল- এই সব বলছে তোমাকে,

মা- হুম তাই বলছে আর বলছে তোদের প্রেম হয়ে গেছে এখন একটু মান অভিমান চলছে ঠিক হয়ে যাবে,

নীল- মা আমি ঐ মেয়ে কে রিজেক্ট করেছি, ও না,আর কি চয়েস তোমাদের ঐ মেয়ে তোমাদের দিনে ৭বার করে নাকানি চুবানি খাওয়াবে,
আর ঝগড়া করবে,

মা- বাবা সব ঠিক হয়ে যাবে,জানি তুই এই সব বলবি,

নীল- কেমনে জানলা,

– অর্পি বলেছে তুই এই সব বলবি,আসলে তাই তো বললি,

মা- ঐ মেয়ে সারাদিন সাজুগুজু নিয়ে পড়ে থাকবে,তোমাকে রান্নাবান্না করে খাওয়াবে না উল্টো তোমাকে রান্না করে খাওয়াতে হবে,
আর ঐমেয়ে সারাদিন ধরে টিকটক করে বেড়াবে,

মা- এত সুন্দরী মেয়ে দিয়ে কি আমি রান্না করাবো তুই ভাবলি কি করে,
আর যা ইচ্ছে করবে,

নীল- মা আমার পছন্দ আছে,

মা- জানি তোর কি পছন্দ আছে কালো শ্যামলা মেয়ে তাই তো,

নীল- হুম কিন্ত তুমি জানলে কি করে,

মা- বউমা বলছে,

নীল বুঝতে পারলো ঐ মেয়ে মা কে হাত করে নিয়েছে,
যা বলার ঐ মেয়ে কে বলতে হবে,

যদি নেক্সট টাইম দেখা হয় তাহলে
ইচ্ছে মতো ঝেড়ে দিবো,

নীলের অফিসে নতুন স্টাফ নিবে
নীল অফিস যেতেই বস ডেকে বলল,
আজ ইন্টারভিউ আছে আমি চাই আপনি আর আরিফ সাহেব ইন্টারভিউ নেন,

নীল বলল, জ্বী স্যার আমি আরিফ সাহেব কে নিয়ে যাচ্ছি,
আরিফ ভাই কে নিয়ে ইন্টারভিউ বোর্ডে
গেলাম,
কিন্ত আরিফ ভাই আমাকে বলল,
নীল ভাই সুন্দরী মেয়ে দেখে সিলেক্ট করবো কিন্তু যদি আপনার কোন একটা ব্যবস্থা করা যায়,

নীল- আপনি না ভাই,

আরিফ- আমি কি,আমার তো বউ আছে,আপনার তো একজন কথা বলা মানুষের দরকার,

নীল- ভাই চুপ আসছে,

একজন একজন আসছে,
কিন্ত লাস্টে একজনের ডাক পড়লো,

নীল দেখেই তাকে চিনে ফেলে,
সেই কালো বোরখা পড়া মেয়েটি,

আরিফ ভাই জিজ্ঞেস করছে,আপনার নাম,
-উম্মে মাইসা।
নীল মেয়েটির চোখের দিকে তাকিয়ে আছে,

(চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here