শ্যাম_বরণ_কন্যা,পর্ব : ৮,৯

0
2119

শ্যাম_বরণ_কন্যা,পর্ব : ৮,৯
নীল মাহমুদ
পর্ব : ৮

মেয়েটির নাম উম্মে মাইসা,
কিন্ত নীলের খুব ইচ্ছে ছিলো কারন
কাজল কালো চোখ দুটো ঠিক সাদিয়ার মতো,
আর যে পারফিউম টা উনি ইউজ করে সেইম পারফিউম সাদিয়া ইউজ করতো

নীল আরিফ কে ইশারা দিলো মাইশাকে
মুখ খোলার জন্য,
সেই কথা মতো আরিফ ভাই বলল,
মিস মাইসা,
আপনি ইন্টারভিউ বোর্ডে আছেন,
আপনাকে মুখ খোলতে হবে না হলে,
আমরা আপনার ইন্টারভিউ নিতে পারছি না,

মাইসা- সরি স্যার আমি পারবো না,

আরিফ ভাই রেগে বলতে যাবে কেনো,
ঠিক তখনই নীল আরিফ সাহেব এর হাত ধরে ভাই আস্তে,
আরিফ ভাই বুঝতে পারলো, নীলের পূর্ব পরিচিত,

তখন নীল বলল,দেখেন আমাদের অফিসে জব করতে হলে আপনাকে মুখ খোলে জব করতে মানে আপনি হিজাব
পড়তে পারবেন কিন্ত আপনাকে মুখ খোলা রাখতে হবে,

মাইশা নীলের দিকে তাকিয়ে বলল,সরি স্যার আমি পারবো না,
আচ্ছা স্যার আমি কাজ পারলেই
তো হল,
আমার যোগ্যতা দেখেন আমি কাজ না পারলে তখন বলবেন,
কাজ কি আমার চেহারায়,

নীল- দেখেন আমরা বলছি না আপনার যোগ্যতা নাই,কিন্ত এটা আমাদের অফিসের রুলস,
আমরা কাকে জব টা দিচ্ছি দেখব না,

মাইসা আরও বলল,যে পর্দা করে পারলে তাকে হেল্প করুন,
তাকে আরও উৎসাহ দিন,
কিন্ত কিছু মানুষ আছে আমাদের সমাজে যারা পর্দাতে এলার্জি আছে,।

মাইসার কথা শুনে মনে পড়লো সেদিন বাজারে মুরগী কিনতে গিয়ে,
সেলিম ভাইয়ের মেয়ের কথা,
মুরগীর জন্য দাঁড়িয়ে আছি এমন সময় সেলিম ভাইয়ের মেয়ে আসলো দোকানে টিফিনের টাকা নিতে,
মেয়েটি ক্লাস এইটে পড়ে,
সেলিম ভাই টিফিনের টাকা দিলো মেয়েটি টাকা হাতে নিয়ে বলল,আব্বা
চল না স্কুল যাই,

সেলিম ভাই- কেনো।
–স্যার বোরখা পড়ে ঢুকতে দেয় না ক্লাসে,সেদিন বের করে দিয়েছিলো,

-আমি তো স্যার কে বলে দিছি ২দিন আগে।

–না আব্বা তার পড়েও কথা বলে,আমি বোরখার নিচে স্কুল ড্রেস পড়ছি তার পড়েও কথা বলে,

তখন সেলিম ভাই বলল,দেখছেন নীল বাংলাদেশ নাকি ৯৫% মুসলিম রাষ্ট্র,

সেলিম ভাই তখন বলল,তুমি যাও আজ যদি আজ কথা বলে,
তাহলে বলবা,
আমার বাবা মুরগী কাটা ছুরি দিয়ে বাজারে ফেলে জবাই করবে,,

আরিফ ভাইয়ের হাতের ধাক্কায় আমি ভাবনার জগত থেকে ফিরলাম,।
সামনে তাকিয়ে দেখি ফাঁকা চেয়ার,।।

নীল তখন আরিফ ভাই কে বলল,আরিফ ভাই মেয়েটি কোথায়?

আরিফ – সে তো সেই কখন চলে গেছে।

নীল- আমাকে বললেন না কেনো,

– আচ্ছা এটা বলেন নীল ভাই আপনি কি মেয়েটা কে চিনেন,

-হুম চিনি বলতে আপনি যেমন দেখলেন।আমিও তেমন দেখেছি,

-আচ্ছা বাদ দেন নীল ভাই,তা কাকে সিলেক্ট করবেন,

-কেনো মাইসা কে প্লিজ ভাই,

-আচ্ছা বুঝলাম কিন্ত উনি তো মুখ খোলে কাজ করবে না তো বস তো আর তা মানবে না,

নীল তখন বলল,বস কে আমি বুঝাবো

আরিফ ভাই- কি নীল সাহেব কিছু চলেছে নাকি,

-আরে না ভাই,মাইসা কে ফোন দেন আর বলেন কাল থেকে জয়েন করতে,

নীলের কথা মতো আরিফ সাহেব ফোন দিলেন মাইসা কে,
কিন্ত মাইসা জব করবে না বলে আরিফ কে না করে দিলেন,।
আর আরিফ কে এটাও বললেন আপনার কলিগের ভাবসাব বেশি একটা সুবিধার না,
আরও অনেক কথা বলে না করে দিলেন,

আরিফ ভাই ফোন টা রেখে নীল ভাই এইডা মানুষ নাকি হাইব্রিড করোলা।
মুখের উপর না করে দিলো,।
তা নীল ভাই এখন কি করবেন,
ফোন নাম্বার টা নিয়ে যান ট্রাই করেন কাজ হলেও হতে পারে, আমার তো মনে হয় না হবে,

আরিফ ভাই-০১৭৭১৭০ ধ্যাৎ ভাই বলতে পারবো না ধরেন সিভি টাই নিয়ে যান,

নীল সিভি টা সুন্দর করে ভাজ করে সিভি টা যত্ন করে পকেটে রেখে দিলেন,

আরিফ ভাই হা করে তাকিয়ে আছে,
তারপর বললেন,আসলে সিভি নিয়ে নিলেন,
নীল- আপনি না বললেন।

আরিফ – বললাম বলে,থাক থাক দিতে হবে না,

নীল অফিসে কাজ শেষ করে বাসায় গেলো,
রুমে এসে জুতা খোলছে নীল,
এমন সময় নীলের মা আর লিমা দাঁড়িয়ে আছে চুপচাপ,

নীল- কি কিছু বলবে তোমরা।
মা- হুম বলবো,
নীল- কি বলবা বলে ফেলো।
লিমা- ভাইয়া অফিস থেকে ছুটি নি,বিয়ের ডেট ঠিক করব,

নীল- মা তোমার মেয়ের লাজ লজ্জা বলে কিছু নাই,নিজের বিয়ের কথা নিজেই বলছে আর এই তুই তো মাত্র ইন্টারে পড়িস কিসের বিয়ে,

মা- লিমা ওর বিয়ের কথা বলে নাই,তোর বিয়ের কথা বলছে,

নীল- মা মাত্র অফিস থেকে আসলাম আর শুরু করে দিলে,(রেগে)

লিমা- এতক্ষণ তো ভালই কথা বলছিলি বিয়ের কথা বলতেই এমন ক্ষেপে যাস কেনো,তুই কি বিয়ে করবি না,

নীল শার্ট টা খোলে ঝাঁকুনি দিতেই একটা কাগজ পড়লো, আর সেটা লিমা টপ করে কুঁড়িয়ে লিমা দেখলো একটা সিভি,

লিমা মাকে ডেকে বলল,মা দেখো তোমার ছেলে মেয়ের সিভি বুক পকেটে নিয়ে ঘুরে,

মা-মেয়েটা কে আর এর মুখ বোরখা দিয়ে ছবি উঠছে,

নীল- আমি মেয়েটা কে চিনি না,

লিমা- তাহলে এটা তোর পকেটে কেনো বল,

মা-হুম বল,

আমি লিমা কে ৫০০টাকার নোট দেখালাম,

লিমা টাকা দেখে মা কে বলল, মা রান্না ঘর থেকে কেমন একটা গন্ধ আসছে,যাও তো দেখো,
মা চলে গেলো,

লিমা- ভাই দেখ আমাকে হাজার টাকা দিলে আমি তোর পক্ষে কথা বলবো,

নীল – আমার পক্ষে বলবি তো পড়ে তো আবার পল্টি মারবি না,

লিমা- দূর টাকা হালাল করে নিতে হবে না,আমি তোর কাজ করেই নিবো,
আচ্ছা মেয়েটা কি তোর পছন্দ,

নীল- হুম,মা আসছে,

মা আসতেই লিমা বলল, মা আমরা যদি এই মেয়ের সাথে ভাইয়ার বিয়ে দেই,
তাহলে কিন্ত ভালো হয়,আর ঐ যে ঢিঙি মেয়ের সাথে বিয়ে ঠিক করছো ওটা মেয়ে হল,

মা- আমি জানতাম এই নে ২হাজার টাকা,এখন বল,

লিমা- মা কি বলবো ঐ মেয়ের কথা তুমি যে মেয়ের সাথে বিয়ে ঠিক করছো ব্যবহার খুব ভালো তোমাদের অনেক যত্ন করবে ভাইয়া অনেক ভালো থাকবে,

নীল- এই এই মাত্র তোকে আমি হাজার টাকা দিলাম,তুই কিন্ত পল্টি মারছিস,

লিমা- মা তো ডাবল দিছে তাই আমি এখন মায়ের,

মা-আমি জানতাম এখানে ঘুষ দেওয়া নেওয়া চলছে তাই আমিও,এত কথা বলে লাভ নাই অর্পি চলে আসছে আমি ওকে রুমে বসিয়ে আসলাম তুই তারাতাড়ি রেডি হ,।।

নীল- আজ ঐ মেয়ের খবর আছে,
কোথায় আজ তো ওকে,,,,,,,,,,

(চলবে)

#শ্যাম_বরণ_কন্যা
পর্ব-০৯

আজ তো ঐ মেয়ের খবর করে ছাড়বো,
সেদিন ও নাকি আমাকে রিজেক্ট করছে,
মা- এই ছেলে সাবধান কি করবি তুই আমার বউ মা কে?

নীল- তুমি বউ মা বলছো কাকে, আমি তো বিয়েই করি নাই,

মা- আজ করিস নাই তাতে কি কাল তো
করবি,

নীল- কোনদিন না,
এত কথা শুনতে চাই না,
ঐ মেয়ে কে বের করো,

মা- না,তুই তারাতাড়ি রেডি হ,

বলে মা চলে গেলো,
আমি পোশাক চেন্স করে গোসল করে বের হলাম, ছায়ার মতো দেখলাম আমার রুমে কেউ বসে আছে,
-এই আপনি কে?

-হে আমি,(অর্পি)

নীলের পড়নে শুধু একটা ট্রাওয়াল
পড়া,

নীল- আপনি আমার রুমে কেনো যান যান,
নীল লজ্জায় বিছানার চাদর দিয়ে
শরির ঢাকে,

অর্পি – so Hot,

নীল- লজ্জা শরম বলতে কিছু নাই এভাবে তাকিয়ে আছেন কেনো,,
মেয়ে হয়ে ছেলেদের দিকে,,

অর্পি- আমার হবু স্বামীর দিকে তাকিয়ে আছি এতে লজ্জার কি আছে,
চাইলে কত কি করতে পারি রুমডেট
অর,,,

নীল- চুপ বেহায়া মেয়ে,বলে নীল
শরীর থেকে চাদর ফেলে দিলো,

অর্পি – এ মা আপনি এমন কেনো,বলে অর্পি চোখ চেপে ধরলো নিজের,

নীল- আপনার লজ্জা না করলে আমার করবে কেনো,

অর্পি – আমি বলছি বলে আপনিও,

অর্পি চোখ চেপে ধরে নীলের রুম থেকে বের হয়ে গেলো,
বুঝলাম মেয়েটি কি আমাকে জ্বালাতে চায় নাকি,
পড়ে আসছে কি জিন্স প্যান্ট আর টি-শার্ট
এই মেয়ে কে নাকি আবার আমি বিয়ে করবো,

নীল রুম থেকে লুঙি পড়ে বের হল,

অর্পি দেখে বলল,আপনি আমার সাথে
বের হবেন না,

নীল- না, আমি আপনার সাথে কেনো বের হবো,

অর্পি মা কে ডেকে বলল,শাশুড়ী মা আপনার ছেলে দেখেন আমার সাথে যেতে চাচ্ছে না,,

মা রান্না ঘর থেকে বলল,আমি গরম খুন্তি নিয়ে আসছি,

মায়ের গরম খুন্তির কথা শুনে প্যান্ট পড়ে বের হলাম ভয়ে,

অর্পি নিয়ে গেলো একটি রেস্টুরেন্টে তার বফের সাথে আমাকে পরিচয় করিয়ে দিলো,
তারপর অনেক কথা বললাম, উনারা বলল,

যাক বাবা সব শেষে আমি বিয়ে আর অর্পির হাত থেকে বাচলাম,

অনেক রাতে বাসায় ফিরলাম, মা কে ডেকে বললাম কেমন মেয়ের সাথে বিয়ে ঠিক করছো যার বফ আছে !

আমি বিয়ে করলে নাকি পরের দিন পালাবে,
আরো অনেক ভাব নিয়ে কথা বললাম,।
মা কোন কথা না চুপচাপ চলে গেলো,
নীল ফ্রেশ হয়ে ঘুমাতে যায়,
সাদিয়ার কথা ভাবতে ভাবতে একটা কথা মনে পড়ে যায়,
সাদিয়া কে একদিন একটি ছেলে বিউটিফুল বলেছিলো,
সেদিন সাদিয়ার মতো খুশি মনে হয় না আর পৃথিবীতে ২য় কোন ব্যাক্তি ছিলো,
কারন ঐ প্রথম কোন ছেলে সাদিয়ার প্রশংসা করে,
পরেরদিন আমাকে এসে বলে,নীল আমার দিকে ভালো করে তাকাও তো,

-কেনো কি হয়েছে।
– আমি কি ফর্সা হতে শুরু করছি,
-কই না তো, আগের মতোই দেখা যাচ্ছে,
– আরে দূর তুমি ভালো করে দেখো,
–দেখলাম তো,সেই আগের মতোই,
-তাহলে কাল যে একটি ছেলে বলল,আমি দেখতে নাকি বিউটিফুল,
-জয় মা কালি আপনি, কালি কোন দেবি হয় না,
সাদিয়া হোহোহো করে হেসে দেয়,
আমি কিছু বুঝলাম না,
তাই জিজ্ঞেস করলাম,আপনার তো মন খারাপ করার কথা,কিন্ত সাদিয়া চুপ ছিলো,
ডাইরিতে লেখা দেখলাম,
যখন মানুষ আমাকে কালো বলে টিটকারি করে তখন আমার খুব কস্ট হয়,কিন্ত নীল যাই বলুক আমার কোন কস্ট লাগে না,
আমি জানি না নীলের উপর কেনো রাগ বা মন খারাপ করতে পারি না,
কথা গুলো মনে পড়ে নীলের চোখ বেঁয়ে অশ্রু টলটল করে,
প্রতি দিন নীল কাঁদে,আর বলে সাদিয়া তুমি আর একবার ফিরে আসো,
আমি তোমাকে আর হারাবো না,
কোন দিন ছেড়ে যাবো না,
প্লিজ একবার ফিরে আসো সাদিয়া,
মোবাইলে থাকা সাদিয়ার পিক টা দেখে নীল, মন কে শান্ত করে,
পিক টা নীল তুলেছে নীল যখন সাদিয়া দুস্টুমি মোডে ছিলো,
পিক টা তে সাদিয়া হাল্কা জিব্বা বের করে ছোট ছোট দাঁত দিয়ে কাঁমড়ে ধরে আছে,আর মুখে হাল্কা দুস্টুমি হাসি আর এক চোখ বেশ বন্ধ আর এক চোখ কম বন্ধ,
নীলের কাছে পিক টা দারুন লাগে,
এই সব ভাবতে ভাবতে
নীল
ঘুমের রাজ্যে হারিয়ে যায়,

সকাল বেলা,

নীল অফিসে যাবে, ট্রাই টা খোঁজে পাচ্ছে না,
মা কে ডাকলাম কিন্ত মা কোন জবাব দিচ্ছে না, হয়তো নাস্তা রেডি করতে ব্যস্ত,
এদিকে লেট হচ্ছে অফিসে,
এমন সময় নুপুরের আওয়াজ শুনা যাচ্ছে,নুপুরের জুন জুন শব্দ আসছে মেঝে থেকে,তাই
নীল ফ্লোরের দিকে তাকায়,
নুপুর পড়া পা দেখা যাচ্ছে লিমা তো নুপুর পড়ে না।
তাহলে কে,

নীল শাড়ি পড়া আস্তে আস্তে নীলের
নজর পা থেকে উপরে উঠে, হাতে নীলের ট্রাই,
মুখের দিক তাকাতেই
নীল ১৬ ভোল্টের ঝাঁকুনি খায় এটা কি করে সম্ভব সাদিয়া ট্রাই হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে,
বিঃদ্রঃ কেমন হয়েছে জানাতে ভুলবেন না,আর যারা গল্প পড়েন কিন্ত কোন লাইক বা কমেন্ট কোন টাই করেন না।
তাদের বিয়ে হবে না।।?
(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here