শ্যাম_বরণ_কন্যা,পর্ব-১২,১৩
নীল মাহমুদ
পর্ব-১২
সাদিয়ার কথা নীল রাজি হয় মেয়ে দেখতে গেলো,
সেই কালো বোরখা পড়া মেয়েটি নাম তো সবার জানা আছে উম্মে মাইসা,।
মাইসা কে দেখতে গেছে,।
নীলের মা নীলের বোন লিমা আর নীল,
সাথে গেছে (অদৃশ্য) সাদিয়া।
পাত্র দেখার জন্য বসে আছে,
কিন্ত এবার সাদিয়া কে বলে নিয়ে আসছে কোন কথা বলা যাবে না,
তাই নীল চুপচাপ বসে আছে,
সাদিয়া নীল কে বলল,আমি মেয়েটি কে আগে দেখে আসি,
সাদিয়া তো অদৃশ্য যেখানে ইচ্ছে যেতে
পারে তাই মাইসা কে দেখতে গেলো,
সাদিয়া গেলো ভিতরে দেখলো আবার
চলে আসলো কিন্ত মন টা খারাপ কিন্ত
নীল কে বুঝতে দিলো না,
মুখে হাসি ফুটিয়ে আসলো নীলের কাছে,
পাত্রী আসার সময় হয়ে গেছে মানে
পাত্রী আসার আগে একটা পিচ্ছি আসলো তাই বুঝলাম আর কি,।
কিন্ত নীলের মধ্যে একটুও আগ্রহ নাই
মাইসা কে দেখার,
আগে আগ্রহ ছিলো কিন্ত এখন নাই,
পাত্রী আসলো তো আসলো আবার বোরখা পড়ে আসলো,।
নীলের দেখেই মাথায় রাগ চেপে যায়
নীল উঠে পড়বে কিন্ত
লিমা খফ করে হাত ধরে নীল কে বসায়,
তখন পাত্রীর বাবা নীলের মা কে বলল,আসলে আমার মেয়েটা পর্দা করে কোন পরপুরুষ আমার মেয়ে কে দেখে নাই আজ পর্যন্ত,
নীল তখন রেগে বলে উঠলো, মা তাহলে আমাকে কি অপমান করার জন্য নিয়ে আসা হলো,
পাত্রীর বাবা বলল,আসলে বাবা তার জন্য আমি দুঃখীত কিন্ত শুধু তুমি দেখতে পারবে না কিন্ত তোমার মা বোন দেখতে পারবে,আর আল্লাহ যদি চায় তুমি বিয়ের পর দেখতে পারবে,
নীলের মা বলল,নীল তুই বাসায় চলে যা,
পাত্রীর বাবা,না না থাক থাক আপনারা ভিতরে চলেন,
নীলের মা মিথ্যা বলল,যে নীলের বাসায় কাজ আছে(মনে একটু রাগ রেখে)
নীল মায়ের কথা শুনে উঠে চলে গেলো,
এবার নীলের মা বলল,এবার তো দেঝতে পারবো,
মাইসা হিজাব খোলে ফেললো, মনে হচ্ছে মেঘের আড়াল থেকে পূর্নিমার চাঁদ বের হলো,
লিমা বলেই ফেললো যে ভাবি আপনার পুরো বোরখা খোলে ফেলেন,
মাইসা তাই করলো নীল শাড়ী পড়েছে মাইসা,
এবার মনে হচ্ছে আকাশ থেকে পরী নেমে এসেছে মাটিতে,।
নীলের মায়ের সব আর মিটে গেলো মাইসা কে দেখে,
নীলের মা মাইসার বাবা কে বলল,আপনাদের কি আমার ছেলে নীল কে পছন্দ হয়েছে,
মাইসার বাবা বলল,আসলে আমি একা ডিসিশন নীলে তো হবে না,
মেয়ের মা আছে তাকেও তো জিজ্ঞেস করতে হবে,তারপর মেয়ে আছে,
নীলের মা মাইস কে সরাসরি জিজ্ঞেস করলো,আচ্ছা মা আমার ছেলে কে তোমার পছন্দ হয়েছে,,
মাইসা উত্তর দিলো আমার বাবা মা যা বলবে তাই হবে,
।
নীলের মা- এবার আপনারা বলেন।
মাইসার বাবা,মাইসার মা কে ডাকলেন, কই গো এদিকে আসো,
মাইসা মা এসে বসলেন আর নীলের মায়ের দিকে তাকিয়ে আছে,
নীলের মাও তাকিয়ে আছে,
নীলের মা বলল,কে তুই সালমা না,
মাইসার মা বলল,তুই লায়লা না,
নীলের মা – হুম আমি লায়লা
-আমি সালমা
বলে দুজন দুজন কে জরিয়ে ধরে।
কতবছর পর তোর সাথে দেখা কেমন আছিস,আমি ভালো, তুই কেমন আছিস, আমিও ভালো,
-কিছুই বুঝলাম না আপনারা কি পূর্ব পরিচিত (মাইসার বাবা)
-আমরা ছোট বেলার বান্ধবী,
-তাহলে তো হয়েই গেলো,
-মাইসা তাহলে তোর মেয়ে (লায়লা বেগম)
-হুম আমার মেয়ে,
-আচ্ছা আমার ছেলেকে তোদের পছন্দ হয়েছে(লায়লা বেগম)
-হুম হয়েছে আর ছেলেটা তোর হবে না কেনো,,,,,কি গো মাইসার বাবা তুমি কি বলো,
আমার তো আগে থেকেই পছন্দ,
নীলের নিজের আঙুল থেকে আংটি খোলে মাইসা কে পড়িয়ে দিয়ে বলল,আজ থেকে আমার আরেক টা মেয়ে মাইসা,
তারপর দুই বান্ধবী খাওয়া দাওয়া সুখ দুঃখের গল্প করতে করতে রাত হয়ে গেলো,
ওহ আর বিয়েটাও ঠিক করে ফেললেন,
নীলের বাবার কাছে ফোন দিয়ে বললেন,নীলের মা মেয়ে আমার খুব পছন্দ হয়েছে আমি একেবারে পাকা কথা দিয়ে যেতে তাই নীলের বাবা আসে মাইসাদের বাড়ি,
নীলের বাবাও রাজি হয়ে যায়,
আর বিয়ে ঠিক আগামী শুক্রবার,
নীলের মা আর লিমা রাতে বাড়ি আসে।
এসে দেখে নীল টিভি দেখছে,
নীল- মা তোমাদের এত দেড়ি হল কেনো,
লিমা বলল,ভাইয়া তোর তো বিয়ে ঠিক হয়ে গেলো,,
নীল- মানে আমার বিয়ে ঠিক (উত্তেজিত হয়ে কিন্ত অদৃশ্য সাদিয়া নীলের কাধে হাত রাখে নীল চুপ হয়ে যায়)
লিমা- হুম ভাইয়া ভাবি যে কত সুন্দরী তুই দেখলে ফিট খেয়ে পড়ে যেতি,
মা ভাবি কে দেখেই আংটি পড়িয়ে বিয়ে ঠিক করে ফেলছে,
নীল- আমি এই বিয়ে করতে পারবো না,
মা- কেনো বিয়ে করতে পারবি না,
নীল- কারন আমি বিয়ে করতে চাই না,
মা- শুন আমি আমার বান্ধবী কে কথা দিয়ে ফেলেছি,বিয়ে তোকে করতেউ হবে,
নীল- তোমার বান্ধবী মানে,
মা- আমার ছোটবেলার বান্ধবী, অনেক বছর পর আজ দেখা হয়েছে,
আর তুই বিয়ের জন্য প্রস্তুত হ,তোর বাবা নিজে গিয়ে বিয়ে ঠিক করেছে,।।
লিমা- হুম ভাইয়া বাবাও কিন্ত গিয়ে ছিলো,বাবাও রাজি আছে।
নীল শুধু অদৃশ্য সাদিয়ার দিকে তাইয়ে
আছে,
সাদিয়া শুধু নীল কে উত্তেজিত হতে না
না করছে,
নীলের মা নীল কে বলল,আগামী শুক্রবার বিয়ে এটাই আমার শেষ কথা,
সাদিয়া নীল কে রুমে ডেকে নিয়ে গেলো তারপর নীল কে বুঝালো কিন্ত নীল কিছুতেই বুঝছে না,
সাদিয়া আবার নীল কে ইমোশনাল করে কথা বলে, তুমি বিয়ে না করলে আমি আর আসবো না,
নীল সাদিয়ার ফাঁদে পা দেয়,
নীল রাজি হয়,
শুক্রবার চলে আসে,
আজ শুক্রবার নীলের বিয়ে সকাল
থেকে অদৃশ্য সাদিয়া মন খারাপ করে আছে,
কিন্ত
(চলবে)
#শ্যাম_বরণ_কন্যা
#পর্ব-১৩
,
আজ নীলের বিয়ে সাদিয়ার মন টা
বিষন খারাপ কারন সাদিয়া জানে তাকে আজ বিলীন হয়ে যেতে হবে,
নীল সকাল থেকেই রুমে
নীল সাদিয়া কে জিজ্ঞেস করলো,কি হয়েছে তোমার কোন কথা বলছো না,
সকাল থেকেই চুপচাপ বসে আছো,
এখন সাদিয়া যদি বলে আজ আমাকে
বিলীন হয়ে যেতে হবে তাহলে নীল এই বিয়ে কোন দিন করবে না,
তাই সাদিয়া বলল,এমনি তোমাকে বিয়ে করতে পারি নাই তাই,
নীল- তোমার যেই কাজে মন খারাপ সেটা আমি করব না,যাও বিয়ে ভেঙে দেই আমি,
সাদিয়া- একদম না,২য় বার আর এই কথা বলবে না,
নীল- তাহলে মন খারাপ করে আছো কেনো,
সাদিয়া- আরে বললাম না এমনি,যাও এখন বাহিরে বাসায় অনেক মেহমান তাদের সাথে কথা বলো দেখা করো,
এমন সময় একজন এসে বলল,ভাইয়া বের হন আমরা আপনার ঘর সাজাবো,
মানে বাসার ঘর,
নীল বের হয়ে গেলো,
এমন সময় অফিসের আরিফ ভাই আসলো, আরে নীল মাহমুদ তাহলে বিয়ে টা করেই ফেলবেন,তা শুনলাম ঔ মেয়েটি,
নীল- জ্বি ভাই,
-তাহলে তো আপনি আপনার লক্ষে পৌছে গেছেন,
-দূর ভাই কি যে বলেন,আচ্ছা ভাই ভাবি কই,
-আরে ভাই এই সব বিয়ের অনুষ্ঠানে বউ নিয়ে আসতে নেই,
-কেনো ভাই নিয়ে আসতে নাই,
–আপনি আসলেই বোকা, আপনার শ্বশুর বাড়িতে আপনার চাচাতো শালি মামাতো শালি,খালাতো শালি,আর কত কত শালি আছে তাদের সাথে ফ্লাট করতে হবে না,
বউ থাকলে কি তা পারবেন,
-আরিফ ভাই যদি ভাবি জানতে পারে তাহলে আপনার অবস্থা যে কি হবে,
–তার জন্যইও তো নিয়ে আসি নাই,
আমার খবর নিয়ে জেনেছি আপনার
অনেক শালিকা আছে,
–এটাও জেনে গেছেন, কিন্ত ভাই পিছনে একবার তাকিয়ে দেখেন,
–কেনো ভাই, পিছনে কি আছে আপনার কোন মেয়ে ফ্রেন্ড,,
–হ ভাই একবার তাকিয়ে দেখেন,(আরিফের বউ পিছনে দাঁড়িয়ে আছে)
-হাই আমি আআ তুমি এখানে কেমনে আসলা, আমি কি স্বপ্ন দেখছি,
-না ভাই আপনি একদম বাস্তবে আছি,আর আমার বিয়েতে ভাবি থাকবে না তা কি হয়,
আরিফ ভাই এর বউ আমাকে জিজ্ঞেস করলো,নীল ভাইয়া আপনাদের কোন রুম খালি আছে,
নীল- কেন ভাবি,
ভাবি- কেনো আপনি বুঝেন না,
নীল- জ্বি ভাবি আমি বুঝতে পারছি ভাই একটু আদর আর কি,
আরিফ ভাই- নীল ভাই এই কাজ টা কইরেন না,
নীল- ভাবি ভাবি আমার বাসর ঘর টা ৫ মিনিটের জন্য খালি করে দেই,
ভাবি- দেন তো ভাই দাঁত কটমটিয়ে,
নীল রুমে গিয়ে বলল,তোমরা সবাই বের হও পাঁচ মিনিটের জন্য,
সবাই বের হতেই রিয়া ভাবি আরিফ ভাই কে ঈগলের মতো থাবা নিয়ে গেলো,
আর ঠাস করে দরজা বন্ধ করে দিলো,
আমি দরজার সামনেই দাঁড়িয়ে আছি,
৪মিনিট পর কস্ট মাখা হাসি দিয়ে বের হল আরিফ ভাই,
কিন্ত ভিতরে সাদিয়া ছিলো সেকথা মনেই ছিলো না,
সাদিয়া দৌড়ে এসে হাসতে হাসতে বলল,তোমার আরিফ ভাই ঐ যে বের হল উনি পাক্কা চার মিনিট কানে ধরে উঠবস করিয়েছে,
উনি কি তোমার আরিফ ভাইয়ের বউ,
নীল মাথা নাড়িয়ে হুম উনিই,
দরজাল মহিলা,
নীল- রিয়া ভাবি কাজ শেষ।
ভাবি- জ্বি ভাই কাজ শেষ ধন্যবাদ ভাইয়া,
নীল- ভাবি আরিফ ভাই কে নিয়ে যাই
একটু কথা বলবো,
ভাবি- আচ্ছা।
নীল আরও খোঁচা দিয়ে বলল ভাই এত ঘামছেন কেনো,আসেন আপনাকে বাতাস খাওয়াই,
নীল আরিফ কে ছাদে নিয়ে গেলো।
নিয়ে গিয়ে এদিক সেদিক তাকিয়ে বলল,ভাই বউয়ের যে কি প্যারা তা তো দেখলেন পাক্কা ৪ মিনিট কান ধরে উঠবস করলেন,
আরিফ ভাই – আপনি কি করে জানলেন,
নীল- ছাড়েন ঐ কথা কাজের কথা বলি,
আমি এই বিয়েটা করতে চাই না,বিয়েটা ভাঙার ব্যবস্থা করেন,
আরিফ- কেনো কোন সমস্যা আমাকে বলেন আমি সমাধান করে দিচ্ছি,
নীল- ভাই একটু আগেই তো বউয়ের প্যারা খাইলেন তারপরেও জিজ্ঞেস করছেন,,
আরিফ ভাই বললনেন,আমি জানি
না আপনি কেমনে দেখলেন আমি কান ধরে উঠবস করছি, কিন্ত আপনি মনে হয় তারপরের সিন টুকু দেখেন নাই,
তাহলে আর এই কথা বললেন না,
আর বিয়ের দিন একটা মেয়ের বিতে ভাঙা ঠিক হবে আপনার বিবেক বুদ্ধি এইটা বলে,,,
নীল আছে এখন বিপদে কারন সাদিয়ার কথা বললে পাগল ছাড়া আর কিছু বলবে না,
দূর থেকে দাঁড়িয়ে আরিফের বউ রিয়া ভাবি সব কথা শুনে তার পিছিনে দাঁড়িয়ে আছে সাদিয়া,
তখন রিয়া ভাবি এসে বলল,দেখেন নীল ভাই বউ মানে প্যারা বা ঝগড়া ঝাটি
না,বউ মানে ভালবাসা, আবার বউ মানে শুধু ভালবাসাও না,
একটা সম্পর্কের ভিতর মান অভিমান, ঝগড়া, ভালবাসা, দুষ্টু মিষ্টি এই সব থাকবেই,
তাই বলে বিয়ে করবেন না,
নীল এখন কি করে বুঝাবে আসলে এই সব না,
নীল কিছু বলতে যাবে একটু দূরে চোখ গেলো দেখলো সাদিয়া দাঁড়িয়ে আছে,
নীল আর কিছু বলল না সাদিয়া কে
দেখে,
নীল তখন আরিফ ভাই আর ভাবি কে বলল আপনারা নিচে যান আমি আসছি,
উনারা যেতেই সাদিয়া বলল,
তুমি কি শুরু করছো,
নীল সাদিয়া কে থামিয়ে দিয়ে বলল,আর কিছু বলতে হবে না আমি নিচে যাচ্ছি,
রেডি হয়ে বিয়ে করতে যাচ্ছি,
এখন খুশি,
সাদিয়া – হুম কিন্ত প্লান করা চলবে না বিয়ে না করার,
নীল- ঠিক আছে,
নীল সেজে গুজে বিয়ে করতে গেলো,
বর সেজে বসে আছে নীল বেশ ভালোই লাগছে এ এসে ছবি তুলছে ও এসে ছবি তুলছে,
কিন্ত তারপরেও নীলের মুখ টা কালো,
নীল এদিক সেদিক তাকিয়ে দেখছে সাদিয়া আসছে কিনা।
নীলের বসে থাকতে থাকতে বিরক্ত লাগছে,
তাই ভাবলো সাদিয়ার সাথে একটু কথা বলে আসা যাক,
তাই ওয়াশরুমে গেলো,
তারপর সাদিয়ার সাদিয়ার সাথে কথা
বলতো লাগলো,
কিন্ত আগে থেকেই ওয়াশরুমে পাত্রী পক্ষের কেউ একজন দাঁড়িয়ে ছিলো,উনি হয়তো ছোট টা সাড়তে গিয়ে ছিলো তাই হয়তো দেখে নাই নীল,
নীলের একা একা কথা বলা দেখে লোকটির মনে হল বর পাগল,
লোকটি ওয়াশরুমের দরজা খোলে বের হবে,
দরজা শব্দ শুনে নীল চমকে যায়,
দেখে একজন বের হয়ে গেলো,
গিয়ে বিশাল এক ঝামেলা পাকালো বলল গিয়ে মেয়ের মা আর বাবার কাছে ছেলে পাগল,
বিয়ে বাড়িতে তখন হইচই পড়ে গেলো ছেলে পাগল,
(চলবে)