শ্যাম_বরণ_কন্যা,পর্ব-১৬,১৭
নীল মাহমুদ
পর্ব-১৬
মাইশার চুলের পানির ছিটানিতে,
আমি ঘুম থেকে রেগে উঠলাম,
এমন রাগ নিয়ে উঠলাম গায়ে হাত তুলার চিন্তা মাথায় নিয়ে,
আমি – চুল কি বেশি লম্বা কেটে ছোট করে দিবো,
-কেনো কি হয়েছে
-কি হয়েছে দেখতে পান না চুলের পানি পানি কোথায় যায় চোখে দেখেন না,।
মাইসা- আপনি আমার সাথে এমন করেন কেনো,আমি কি করছি,আমার কি অপরাধ,।
নীল- আপনি দেখতে সুন্দর, ফর্সা এটাই
অপরাধ আপনার,
মাইশা মনে মনে, মানুষ সুন্দরী খুঁজে আর উনি কালা ম্যাইয়া খুঁজে পুরাই পাগল,
মাইসা- তাহলে বিয়ে করলেন কেনো আমায়,আমি দেখতে কালো না জানেন না সেটা।
নীল- আমাকে কি দেখতে দিছেন, আপনি কালা না ধলা,
মাইসা- আমার শাশুড়ী, আপনার বোন তো দেখছে তারা বলে আমি কেমন,
নীল- আপনি এত মুখে মুখে তর্ক করেন কেনো,
মাইসা – সরি।
হঠাৎ নীলের মনে পড়লো, আচ্ছা উনি গোসল করলো কেনো,আমি তো কিছুই করালাম না,
নাকি রাতে আবার ভুলে,না না কোন দিন না,
কিন্ত নীলের খুব জানতে ইচ্ছে হল,
তাই মাইসা কে বলল,
এত সকালে চুল ভিজানোর কি দরকার ছিল,
মাইসা- গোসল করালাম, আর আপনিও যান গোসল করে আসেন,।।
নীল- আমি গোসল করবো কেনো,।।
মাইসা- নতুন বিয়ে করলে করতে হয়,।
নীল- কিন্ত কিছু তো হয়নি,।।
মাইসা- হুম কিন্ত সেটা আমি আপনি আর পাঠক পাঠিকারা জানি কিন্ত আর বাসায় তো আরো মানুষ জন আছে,
তারা কস্ট পাবে,
একজন এসে সকালেই বলে গেলো এভাবে থাকতে হয় না, গোসল করতে হয়,
নীল কোলবালিশ নিয়ে আবার শুয়ে পড়লো,
মাইসা আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে ভেজা চুল গুলো একটা গামছা দিয়ে বারি দিচ্ছে ভেজা চুলে মাইসা কে দারুন লাগছে,আর শ্যাম্পু করা চুলের ঘ্রানে পাগল হওয়ার উপক্রম প্রায়,
মেয়েদের শ্যাম্পু করা চুলের ঘ্রান পৃথিবীর যে কোন পারফিউম কে হার মানাতে সক্ষম,
সাদিয়া হলে এতক্ষন পিছন থেকে জরিয়ে ধরে কাছ থেকে ঘ্রান নিতাম,।।
কিন্ত উনি তো মাইসা সাদিয়া না,
তারপর নীল আবার ঘুম দিলো,
প্রায় ২ঘন্টার মতো ঘুমায়,
এদিকে মাইসা নাস্তা বানিয়ে সবাই কে খাওয়াচ্ছে,
নীল ঘুম থেকে উঠে মোচড়াতে মোচড়াতে বের হয়,
নীলের মা নীল কে জিজ্ঞেস করে মাত্র উঠলি নাস্তা করবি না আয়,
নীল- মাত্র উঠলাম ব্রাশ করা হয়নি,
নীলের মা মাইসা কে বলল,আমি সবাই কে নাস্তা দিচ্ছি তুমি নীল কে ব্রাশ আর পেস্ট দেও,
ও ছাদে গিয়ে ব্রাশ করে,ওর আবার ঘুরে ঘুরে ব্রাশ না করলে হয় না,
মাইসা ব্রাশ আর পেষ্ট নিয়ে নীলের দিকে এগিয়ে দিলো,
নীল- আপনাকে দিতে বলেছি আমার কাজ আমি পারি আপনাকে করে দিতে হবে না।
বলে নীল মাইসার হাত থেকে ব্রাশ নিয়ে
ফেলে দিলো,
এটা আবার নীলের মা দেখে ফেলে, মা এগিয়ে এসে জিজ্ঞেস করে নীল ব্রাশ
ছুড়ে মারলো কেনো,
মাইসা- কই মা, ওর হাত থেকে পড়ে গেছে,(মিথ্যা বলল)
নীল ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করতে গেলো, মাইসা নীলের জন্য অপেক্ষা করছিলো,
নীলের মাও ছিলো বসে,
নীল নাস্তা করছে, নাস্তা দেখে নীল বলল বাহ আজ নতুন আইটেম দেখা
যাচ্ছে,
মা- হুম আজ সব নাস্তা বউমা বানিয়েছে।
নীল- কে বানিয়েছে?
মা- মাইসা তোর বউ.
নীল মুখ টা কালো করে নাস্তার দিকে
তাকিয়ে এই মাছি পড়ে আছে, এই চুল দেখা যাচ্ছে,
একটু ডিম মুখে নিয়ে নীল,থুথু মুখ থেকে ফেলে দেয় নীল,
এই সব খাওয়া যায়,
লবণ আর ছিলো না,বাসার সমস্ত লবন মনে হচ্ছে এই ডিমের ভিতর,
ধ্যাৎ নাস্তাই করবো না,
বলে উঠে গেলো, নীলের পিছন ডাকলেন কিন্ত শুনলেন না,
এবার মা একটু মুখে নিয়ে চেখে দেখলেন সব ঠিক আছে,
মা আবার মাইসা কে জিজ্ঞেস করলেন,।
বউমা তোমাদের মধ্যে কিছু হয়েছে,
মাইসা- না মা কি হবে নতুন বিয়ে এখনি কি হবে,
মা-তাহলে ও এমন ব্যবহার করলো কেনো তোমার সাথে দাঁড়াও আমি দেখছি,
মাইসা- না মা, আপনার যেতে হবে না,
মা বুঝেনি নতুন বিয়ে একটু মান অভিমান হবেই,
মা- আচ্ছা তাই বলো, কিন্ত নতুন বিয়ে এখনি ঝগড়া,।।
মাইসা – মা ঐ একটু।
মা- আচ্ছা আচ্ছা।
নীলের মা নাস্তার টেবিল থেকে উঠে
গেলো,
কিন্ত মাইসার চোখ থেকে টুপটুপ করে অশ্রু ঝড়ছে,
মাইসা না খেয়ে সব গুছিয়ে রুমে গেলো,।
নীল রেডি হচ্ছে কোথাও যাবে,।
মাইসা জিজ্ঞেস করলো আপনি কোথাও
যাবেন,
নীল- তা কি আপনার কাছে বলে যেতে
হবে,
মাইসা- না মানে যদি মা বাবা জিজ্ঞেস করে কোথাই গেছে কি বলবো,।
নীল- তা আমি মা কে বলেই যাবো আপনার না ভাবলেও চলবে,
মাইসা চুপ করে রইলো,
নীল বের হয়ে গেলো সোজা গেলো অফিসে,
গিয়ে আরিফ ভাই কে বলল, চলেন একটু বাহিরে,
কিন্ত অফিসে নীল কে দেখে আরিফ চমকেই যায়,
কারন কাল বিয়ে হল আজ অফিসে,
আরিফ ভাই কে নিয়ে নিরিবিলি জায়গায় বসলো,
আরিফ – কি হয়েছে নীল ভাই বলেন।
নীল- আমি আমার বউ কে ডিভোর্স দিবো,আজই
(চলবে)
#শ্যাম_বরণ_কন্যা
#পর্ব-১৭
,
নীল বলল,আমি মাইসা কে ডিভোর্স দিতে চাই,বিয়ে হয়েছে গতকাল আর আজই ডিভোর্স কথা টা শুনে আরিফ ভেবাচেকা খেয়ে গেলো,
নীল এটা কি বলল,
।
-নীল ভাই এটা আপনি টা কি বললেন,
কাল বিয়ে করে আনলেন আর আজকে ডিভোর্স আপনার মাথা ঠিক আছে,
-হুম আমি ঠিক আছি,প্লিজ ভাই ব্যবস্থা টা করে দেন,
-কিন্ত তার আগে জানতে হবে কেনো আপনি ডিভোর্স দিতে চাইছেন,
আমি যতোটুকু দেখছি আর শুনছি
আপনার ওয়াইফ খুব ভালো একজন মানুষ এমন বউ লাখে একটা হয়,
-আরিফ ভাই দেখেন আমি এত কিছু জানি না,আমি ডিভোর্স এটাই ফাইনাল কথা,
-আরে ভাই চাইলেই তো আর ডিভোর্স দেওয়া যায়,একটা মেয়ের জীবন কেন নষ্ট করতে চান সেটা তো বললেন,
–জীবন কই নষ্ট করলাম,আমি তো কিছুই করি নাই এখন পর্যন্ত, কিছু করে না নষ্ট হবে,,
-এখন পর্যন্ত কিছুই হয়নি আপনাদের
মধ্যে,
–না, কিছুই হয়নি,
-কিছু হয়নি সেটা আমি বিশ্বাস করলাম,
কিন্ত মানুষ কি তা বিশ্বাস করবে মানে
মেয়েটার যখন আবার বিয়ে হবে কেমন ছেলের সাথে হবে জানেন ,
–সেটা আমি জানতে যাবো কেনো, দেখেন আরিফ ভাই আমার ডিভোর্স দরকার ডিভোর্স করিয়ে দিবেন,
-নীল ভাই আমি বলি কি,কাজ টা আসলে ঠিক হবে না,
-কোন কাজ টা ঠিক হবে না,
–এই যে ডিভোর্স, আচ্ছা ডিভোর্স টা যে
দিবেন তা আংকেল আন্টি, আপনার বউ জানে?
-না,
-তাহলে কি করে কি হবে, সবাই কে জানান,আর ভাই আপনাদের মধ্যে কি হয়েছে আমি জানি না, কিন্ত এত তারাতাড়ি ডিভোর্স এর সিদ্ধান্ত নিয়েন না এটা আমার রিকুয়েষ্ট,
-কিন্ত ভাই……?
-দেখেন নীল ভাই ডিভোর্স এত সহজ না,আগামীকাল আপনার বউভাত সেটা আগে সম্পন্ন করেন,
নীল চলে আসে বাসায়, কিছুই ভালো লাগছে না,কি করবো, সাদিয়ার জায়গায় কি করে আরেকজন কে বসাই,
শ্যাম বরণ কন্যার মায়া কিছুই ভুলতে পারছি না,
।
বাড়িতে অনেক কাজ আর আমি এই সময় বাহিরে,
মন খারাপ করে বাসায় ঢুকলাম, বাবা আমাকে ডাকলেন,
নীল- হ্যাঁ বাবা,
বাবা- কাছে আয়, আমার কাছে বস,
নীল- হ্যাঁ বাবা বলো,
বাবা- তোর মন খারাপ কেনো, মাইসা কে তোর পছন্দ হয়নি,
এখন বাবার সামনে কি বলি,চুপ করে আছি কিছু বলছি না,
বাবা আবার বলল,মেয়েটা অনেক ভালো, লক্ষি একটা মেয়ে,কপাল গুনে
এমন একটা বউ পেয়েছি,
বাবা আবার জিজ্ঞেস করলো তোর কি মন খারাপ,
আমি- না বাবা ঠিক আছি,(মিথ্যা)
বাবা- তা কোথায় গিয়েছিলি বাসায় এত কাজ,।।
আমি- একটু অফিসে কাজ ছিলো,
বাবা- তুই না ছুটিতে আছিস আবার কিসের কাজ,
আমি- আরিফ ভাইয়ের সাথে কাজ ছিলো,
বাবা- আচ্ছা উপরে যা বউমা একা,
হয়তো ভালো লাগছে না,
বাসায় বউ বউভাতের আয়োজন চলছে
কাল বউভাত আর আমি চিন্তা করছি ডিভোর্স এর,
কারন আমার মাইসা কে ভালো লাগে না,
মেয়েটা দেখতে খারাপ না মাশাল্লাহ অনেক সুন্দরী আর আমার বাসার সবার মতে গুণবতী,
তাতে আমার কি আসে যায়,
আমার তো শ্যাম বরণ কন্যা পছন্দ,
মানে সাদিয়া,
মাইসা কে আমি একদম সহ্য করতে পারি না।
দেখলেই মেজাজ টা খারাপ হয়ে যায় কারন ওর জন্য আমার অদৃশ্য সাদিয়া কে হারিয়েছি,
তাই মাইসার উপর রাগ টাও বেশি,
রুমে গেলাম আমার খাট জোরে
শুয়ে আছে,
দেখেই আমার মেজাজ টা খারাপ হয়ে গেলো,
আমার বিছানায় হাত পা ছড়িয়ে শুয়ে আছে,কেমন ডা লাগে,
গাঁয়ে থেকে শার্ট টা খোলে বল বানিয়ে
দিলাম মেঝেতে আচার,
মাইসা মনে মনে পাগল নাকি এমন করে কেনো,
মাইসা- এমন করেন কেনো আপনি কি হয়েছে,
নীল- আমার বিছানায় আপনি শুয়ে আছেন কেনো,
মাইসা- ওমা বিয়ের পর তো স্বামীর সব কিছুর বউয়ের হয়ে যায়,
নীল- না হয় না,আপনার বাবার বাড়ি থেকে খাট এনে তারপর শুবেন,
মাইসা – কেনো?
নীল- কারণ আমি তো যৌতুক নিয়ে বিয়ে করি নাই যে আমার সব আপনার,
মাইসা – যৌতুক নেওয়া হারাম আপনি জানেন না,
নীল- জানি, আমি তো নেই নাই,
মাইসা- তাহলে বলেন কেনো,
নীল- আপনি থাকবেন আপনার বাড়ি
থেকে আপনি খাট আনবেন,আমি তো
আর থাকবো না,
নীলের কথা মাইসা তালগোল পাকিয়ে,
মাথা নাড়িয়ে মানে না বুঝে হুম বলল।
মাইসা শার্ট টা তুলতে যাবে নীল বলল
একদম আমার জিনিসে হাত দিবেন না,
মাইসা- এখন থেকে তুলবো না,কেমন
দেখায়,
নীল- আমি কিন্ত না বলছি ওটা ওখানেই থাকবে?
মাইসা- আচ্ছা আপনি আমার সাথে এমন করেন কেনো,আমার দোষ টা দয়া করে বলবেন,
নীল- আস্তে আস্তে সব জানতে পারবেন বলে নীল শুয়ে পড়লো,
মাইস-আমি শুবো কথায় রাতে না হয় মেঝেতেই থাকবো কিন্ত এখন,
আচ্ছা তাহলে আমি বাবা কে ফোন দেই খাটের জন্য,মেঝেতে একদিন শুয়ে
পিট ব্যথা হয়েছে,।।
নীল- তার আগে আমি একটা কথা বলতে চাই,।।
মাইসা- হুম একটা না হাজার টা বলুন আমি শুনতে রাজি,।।
মাইসা ভাবলো হয়তো ভালো কিছু বলবে,
তাই হাসি খুশি মুখ নিয়ে বসলো,।।।
নীল- কথা টা আমি আপনাকে ডিভোর্স দিতে চাই,
অথচ কাল বউভাত,,,,
(চলবে)