শ্যাম_বরণ_কন্যা,পর্ব-১৮,১৯

0
1608

শ্যাম_বরণ_কন্যা,পর্ব-১৮,১৯
নীল মাহমুদ
পর্ব-১৮

নীল মাইসা কে বলল,আমি আপনাকে ডিভোর্স দিতে চাই,

মাইসা- কি? আপনি ঠিক আছেন নাকি? অসুস্থ।

নীল- আমি ঠিক আছি,

– আপনি আমার সাথে মজা করছেন, গতকাল বিয়ে করে আজ ডিভোর্স হিহিহি।

-আমি সিরিয়াসলি বলছি আমি ডিভোর্স দিতে চাই,

এবার মাইসা চুপসে গেলো, কারন এখন নীল মোটেও মজা করছে না,

-কিন্ত আমার দোষ কি,কি করছি আমি?
-আপনার কোন দোষ নেই।

-তাহলে আমাকে কেনো শাস্তি দিচ্ছেন,আমি কোন ভুল করে থাকলে বলেন,

-না আপনার কোন ভুল নেই, সমস্ত ভুল আমার,

– তাহলে আমাকে বিয়ে করলেন কেনো,আগে বলতেন,আমার জীবন টা এভাবে শেষ করে দিবেন না,

-দেখেন আপনাকে আমার ভালো লাগে তো কি করবো,

-কেনো ভালো লাগে না,
-কারণ আমার শ্যাম বরণ মেয়ে বা (কালো) পছন্দ,
-সেটা বিয়ের আগে বলেন নাই কেনো,
এখন বলছেন কেনো,
-বলি নাই সেটাই আমার ভুল ছিলো,

–আচ্ছা আপনার কোন পছন্দ আছে?
নীল এখন চুপ করে গেলো,মনে মনে ভাবছে,কি বলবে যদি বলে কেউ নাই তাহলে তো আরো চেপে ধরবে।
তাই নীল বলল আমার গার্লফ্রেন্ড আছে,আর আমি তাকে ঠকাতে চাই না,

তখন মাইসার চোখে পানি, আচ্চা তাহলে যে আমাকে ঠকাচ্ছেন তার কি হবে বলেন,আমাকে তো বিনা অপরাধে শাস্তি দিচ্ছেন,

আচ্ছা তার সাথে আমাকে দেখা করিয়ে
দিবেন,

নীল- এবার খাইছে রে….(মনে মনে)
নীল বলল,না দেখা করানো যাবে না,

এমন সময় মা এসে হাজির এদিকে
মাইসার চোখে পানি,
মা মাইসার চোখে পানি দেখে,

মা- বউ মা কি হয়েছে তুমি কাঁদছো কেনো,

এবার তো নীল ফেঁসে গেলো,যদি বলে
মাইসা বলে দেয়,
তাহলে আমাকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়ে তাদের বউ কে রেখে দিবে,

মা আমার দিকে অন্যরকম দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে,
মা হয়তো ভাবছে আমি মাইসা কে মারছি,

মা মাইসা কে আবার জিজ্ঞেস করলো
কিন্ত মাইসার অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে
সেও বিপদে আছে,
কারণ কি বলবে সেও খোঁজে পাচ্ছে না,

মা- কি হলো চুপ করে আছো কেনো,

আমি কিছু না রুম থেকে বের হতে যাবো,
মা ধমক দিয়ে বলল,এই কোথায় যাচ্ছিস এখানে দাঁড়া,

মা- বউ মা কথা বলছো না কেনো,

আমি- মা আমি কিছু করি নাই,তুমি যা ভাবছো তা ভুল,

মা- চোরের মনে পুলিশ পুলিশ তাইবনা,
কি করছিস বল বললাম না হলে কিন্ত।

মাইসা- মা আসলে একটু ঝগড়া লাগছিলো দোষ টা আমারি ছিলো
ঝগড়া করে জিততে পারি নাই বলে কান্না করে জিতার চেষ্টা করছি,

মা- হাহহাহাহাহাহ -মা হেসে বলল তোমরা পারাও কাল বিয়ে হল মাত্র আর আজ ঝগড়া করছো না,।।

মা চলে গেলো কিন্ত আমি একটা কথা বুঝলাম না মাইসা মিথ্যা কেনো বলল,
সত্যি টা বলতেও পারতো আর সত্যি বললে তো আমার নাট বল্টু সব ঢিলা
হয়ে যেতো,।

আমি আর কিছু বললাম না,
কাল বউভাত কিন্ত আমার বিরক্ত লাগছে কাল মাইসাদের বাসা থেকে
লোকজন আসবে তাদের সাথে কথা বলতে হেসে হেসে,
এই সব আমার বিরক্ত লাগছে আবার নাকি আমাকে আর মাইসা কে নিয়ে যাবে,
কত কি নিয়ম আছে আল্লাহ জানে।

আবার মাইসার বাবা কে বাবা বলতে
মাইসার মা কে মা বলতে হবে,

দূর অসহ্য লাগছে ভাবতেই।

রাতে ঘুমাতে যাবো এমন সময়
মা এসে বলে গেলেন কাল সকাল সকাল উঠতে হবে,
কাল নাকি অনেক কাজ আমার,
ঘুমাতে যাবো ঠিক তখন
মাইসা বলল,
আপনার উনার সাথে দেখা করিয়ে দিতে হবে,

আমি- উনার মানে?

মাইসা- যার জন্য আমাকে ডিভোর্স দিতে চান,

আমি- আচ্ছা সেটা পরে দেখা যাবে।

মাইসা – আমি কি নিচেই ঘুমাবো,
ও খাটতো আবার আপনার টাকায় কিনা,থাক।

আমি কিছু না বলেই ঘুমিয়েই যাই,

রাত তখন শেষ প্রায় চোখে অনেক
ঘুম তাকাতে কস্ট হচ্ছে কিন্ত কেউ
একজন ডাকছে আমায়,
ভালো করে তাকিয়ে দেখি মাইসা।

মাইশার ডাকে পাত্তা না দিয়ে আবার
ঘুমাই।

কিন্তু কিছক্ষন পর,,,

আমার উপর মনে হয় এক বালতি পানি ঢালা হয়,

আমি হাউমাউ করে লাফিয়ে উঠি দেখে মেঝেতে একটা বালতি বসানো তার পাশে বড় একটা বালতি দাঁড়িয়ে আছে,
সরি আমার বউ মাইসা দাঁড়িয়ে আছে,
কিন্ত বাংলা সিনেমার রিয়া খানের
মতো কোমরে আঁচল বেঁধে দাঁড়িয়ে আছে,
মনে মনে Cool দেবী শেষ রাতে এমন অগ্নিদেবি হয়ে দাঁড়িয়ে আছে কেনো,
ভূতে ধরলো নাকি,

আমি- আমার উপর পানি ঢেলে দিলো কে?

মাইসা- আমি,

-কেনো
-নামাজ পড়বেন চলেন,
-না,আমি ঘুমাবো,
-ছাদে নিয়ে গিয়ে ধাক্কা দিয়ে একদম নিচে ফেলে দিবো বেশি কথা বললে চুপচাপ অযু করে নামাজ পড়তে যান,

আমি তো পুরাই ভয় পেয়ে গেলাম,
শান্ত স্বভাবের বউ টা হঠাৎ এমন হয়ে গেলো কেনো বুঝলাম না,হয়তো ভূতে ধরছে তাই ভয়ে ভয়ে অযু করে নামাজে গেলাম,

চলবে

শ্যাম_বরণ_কন্যা
পর্ব-১৯
,
আমি তো পুরাই ভয় পেয়ে গেলাম,
শান্ত স্বভাবের বউ টা আমার হঠাৎ এমন হয়ে গেলো কেনো বুঝলাম না,হয়তো ভূতে ধরছে তাই ভয়ে ভয়ে অযু করে নামাজে গেলাম,
নামাজ পড়ে আসলাম ভাবলাম সকাল
হয়ে গেছে এখন আর ভূতের ভয় নাই,
মা আসলো ডাকতে বলল নাস্তা করে যা,
আমি- নাস্তা কে বানাইছে?

মা- বউ মা।
আমি- আমি নামাজ পড়ে আসার সময় নাস্তা করে আসছি,(মিথ্যা)

মা- তোর জন্য এত সকালে কে হোটেল খোলে রাখছে,

আমি- রাস্তার মোরে ঐটা খোলা ছিলো,

মা আর কিছু না বলে চলে গেলো,
শুয়ে শুয়ে ইউটিউবে হিন্দি গান দেখছিলাম, বড় লোকের বেটি লো লম্বা লম্বা চুল এমন
মাথায় বেঁধে দিবো লাল গিন্দা ফুল,

এমন সময় মাইসা ঠাস করে নাস্তার প্লেট গুলো রাখলো,

মাইসা- আমার বাসায় থাকতে হলে গান শুনা যাবে না,

নীল- আপনার বাসা মানে?

মাইসা হাত থেকে থাবা দিয়ে ফোন টা নিয়ে ডেটা অন করা ছিলো ইউটিউবে
তারপর একটা গজল বের করে দিলো,
নামাজ কে বলো না আমার কাজ আছে
কাজ বলো আমার নামাজ আছে,
গজল টা বের করে দিয়ে বলল,
এবার নাস্তা করেন,

নীল- না নাস্তা করব না,

আমি না বলাতে মাইসা বিছানার নিচে
কিছু একটা খোঁজছে,
কিছুক্ষণ পর বিছানার নিচ থেকে
ঝাড়ু বের করে,
এখন খান না হলে দেখছেন হাতে এটা কি,

নীল- আপনার হাতে ঝাড়ু তাই আমার কি?

-এইটা দিয়ে খাওয়াবো।

এমন সময় লিমা এসে ভাবি কাকে কি খাওয়ান,
ওমা মাইসার দিকে তাকিয়ে দেখি ঝাড়ু দিয়ে ফ্লোর ঝাড় দিচ্ছে,
আর আমার দিকে আড় চোখে বার বার তাকাচ্ছে,

লিমা-কি ভাইয়া নাস্তা খাচ্ছিস না কেনো,
এত নাস্তা তুই একাই খাবি,

মাইসা- লিমা তোমাকে মা ডাকছে মনে
হয়,

লিমা-আচ্ছা যাচ্ছি।

মাইশা দরজা দিয়ে, এবার নাস্তা খানা সব গুলা খাবেন,

নীল- কি এত গুলা আমি কেমনে খাবো,

মাইসা -হাত দিয়ে তুলে মুখ দিয়ে খাবেন,

৫টা ডিম ১০টা রুটি সবজি, কলা,

নীল আগে একটা দিম নিলো এক কামুড় খেতেই,
মাইশা বলল,এই এই খাওয়ার আগে বিসমিল্লাহ বলতে হয় জানেন না,

নীল- খেয়েই তো ফেলছি এখন বলে কি হবে,

মাইসা- অভ্যাস হবে,হুম বলেন,

নীল মাইসার মারের ভয়ে যা বলছে তাই শুনছে,
মাইসা কে দেখে তো শান্ত স্বভাবের মনে হয়,কিন্ত হঠাৎ এত গরম কি করে হয়ে গেলো বুঝলাম না,
নীল অনেক কস্টে সব খেয়ে শেষ দিলো।
ভুরি নিয়ে হাটতেই পারছে না,

নিশ্বাস কাটতে কস্ট হচ্ছে,

তারপর মাইসা সোজা বলে দিলো,
সকালে নাস্তার জন্য যেনো এক ডাকের
উপর না দিতে হয় তাহলে এই অবস্থা হবে,
নামাজ পড়তে হবে,
সময়ের কাজ সময় মতো করতে হবে,

নীল অসহায়ের মতো শুধু মাথা নাড়িয়ে হা হা বলল,

তারপর বাসায় শুরু হল বউভাতের অনুষ্ঠান,
কিন্ত নীল রুমে শুয়ে আছে এদিকে
নীলের শ্বশুর বাড়ির লোকজন এসে গেছে,
মাইসা রুমে এসে দেখে নীল শুয়ে আছে,
মাইসা – কি ব্যাপার রেডি হচ্ছেন না কেনো,আমার কি কোন ব্যবস্থা নিতে হবে,৫মিনিটের মধ্যে রেডি হয়ে আসবেন,

মাইসা বলে চলে গেলো, মাইসার বাবা মাইসা কে জিজ্ঞেস করলো,মা জামাই বাবাজী কোথায় দেখছি না তো,

মাইশা মুখ টা তখন কালো হয়ে গেলো,
আর তাকিয়ে আছে নীল আসে কিনা,

মাইশার মুখে কোন কথা নাই,
মাইশার বাবা আবার জিজ্ঞেস করলো,
মাইশার মুখে কোন কথা নাই,

হঠাৎ নীল বের হয়ে আসলো, মাইসা যেনো দেহে প্রাণ ফিরে পেলো,
তখন মাইসা তার বাবা কে বলল,
ঐ তো উনি আসছে,
নীল এসে চুপ করে মাইসার পাশে দাঁড়িয়ে আছে,
কিন্ত শ্বশুর দেখে উচিত ছিলো সালাম দেওয়া
মাইশা কুনুই মেরে ফিসফিস করে বলল,
কিন্ত তার আগে নীল বলল,টাকলু ভাই টা কে,

মাইসা চোখ গরম করে বলল,উনি আমার বাবা আপনার শ্বশুর,
সালাম দেন এবং পায়ে হাত দিয়ে সালাম করেন।

নীল মনে মনে খাইছে আমারে শ্বশুর কে বললাম ভাই,

আমি দাঁত কেলিয়ে, আসসালামু আলাইকুম,কেমন আছেন বাবা,

শ্বশুর – ওয়ালাইকুম আসসালাম, আলহামদুলিল্লাহ ভালো, তুমি কেমন আছো বাবা,

নীল-বাবা মা আসে নাই,

শ্বশুর – না বাবা তোমার শাশুড়ী তো এখন আসতে পারবে না কিছু দিন পর আসবে,

তারপর মাইসা সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে লাগলো,
লাস্ট একজনের সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়ে বলল,
ইনি হচ্ছে আমার চাচাতো বোনের
হাসব্যান্ড মানে আপনার ভায়রা লাগে,

নীল- ও আমার ভায়রা শ্বশুর

মাইসা আর ভায়রা বলে উঠলো কি ভায়রা শ্বশুর,

মাইসা এবার খুব রেগে আমার দিকে তাকিয়ে আছে,,,,তারপ যা হল,
ভায়রা নীল কে পাগল বলে চলে গেলো।
তারপর সেই ভায়রা যা করলো,

(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here