অফিস কক্ষের দরজা খুলতে গিয়ে আদিবাকে এমন একটা আপত্তিকর অবস্থায় পড়তে হবে তা কখনো কল্পনা করেনি। কিন্তু আজ তার স্বামী পরনারীর নেশায় আসক্ত দেখে। গলা ফাটিয়ে কান্না আসছে কিন্তু অফিসের মধ্যে সিনক্রিয়েট করা যাবে না। এতে আদিবার অই মানসম্মান যাবে। হাজার হক স্বামী তো তার। জানাজানি হয়ে গেলেও সুসাইটিতে দুইজনকেই অসম্মানের মুখে পড়তে হবে। এমন উপস্থিতি উপস্থাপনা হক আদিবা তা চাই না।
আদিবা মাঝে মধ্যেই নিলয়ের জন্য অফিসে খাবার নিয়ে আসে। আর বেশির ভাগই সময় সফিকের কাছে টিফিন বক্স পাঠিয়ে দেই। কিন্তু আজ শখের বসেই অফিসে আসে। এবং হাসি উজ্জ্বল চেহারা নিয়ে অফিস কক্ষে দরজা হালকা ভাবে খুলতে লক্ষ্য করলো নিলয় চেয়ারে বসে আছে আর মেয়েটি দাড়ানো অবস্থায় নিলয়কে অজস্র গালে কপালে কিস করছে। আর নিলয় চোখ বুঝে রয়েছে। আদিবা এইটুকু দৃশ্য দেখে সঙ্গে সঙ্গে দরজা লাগিয়ে দেই ” এবং দুরুত্বই বাসায় চলে আসে। আজ তার স্বামীর কৃতকর্ম দেখে যেটুকু ভালোবাসা জমা ছিলো তা দুরুত্বই ঘৃণায় রুপান্তরিত হয়ে গেলো –
চলনু এবার আদিবা নিলয়ের পরিচয় পর্ব গুলো জেনে নেওয়া যাক। নিলয় হচ্ছে আলিফ চৌধুরীর একমাত্র ছেলে। পড়াশোনা
শেষ করে বাবার গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি সামলাচ্ছে। আর আদিবা হলো আলিফ চৌধুরীর বন্ধুর একমাত্র মেয়ে। তারা অনেক আগে থেকেই দুই বন্ধুর মাঝে আত্নীয়তা আরও মজবুত করবে বলে মনোস্থির করছিলেন। নিলয় আদিবা বিয়ের উপযুক্ত হওয়াই দুই পরিবারে বিরাট আয়োজনে বিয়েটা সম্পুর্ন করে। নিলয় আদিবার ও বিয়েতে কোনো দ্বিমত পোষণ করেনি। সবদিক থেকে একদম পারফ্যাট চলছিলো-
আদিবাও কখনো তার স্বামীর চরিত্র এর ত্রুটি সে পাইনি। কিন্তু আজ অফিস কক্ষে পরনারীর অন্তরঙ্গ দৃশ্য আদিবা তা মেনে নিতে পারছে না। বালিশে মাঝে মুখ বুঝে কান্নায় ভেঙে পড়েছে সে-
অপরদিকে নিলয় চেয়ারে ঘুমানো অবস্থায় হঠাৎ ফোনের ক্রিংক্রিং শব্দে ঘুম ভেঙে গেলো। নিলয়ের চোখ যেনো উপর তুলতেই পারছে না। অনেকটাই ঘুম ধরে আসছে ৷ মনে হচ্ছে কেউ তাকে ঘুমের মেডিসিন খাইয়েছে। অফিস কক্ষে ঘুমের মেডিসিন খাওয়ানোর মতো কাউকে সে সন্দেহ করতে পারছে না। কে খাওয়াইতে পারে..? আনমনে এসব ভাবতেই কল টুন আবার বেজে উঠাতে নিলয়ের ভাবনার বিচ্ছেদ ঘটিয়ে ফোনে কিছুক্ষন কথা বলার পর”
নিজেকে ফ্রেশ করার জন্য ওয়াশরুমে চলে আসে – আয়নার মাঝে তার ছবি প্রতিফলিত হবার মাত্রই নিলয় রীতিমতো ঘাবড়ে যায়। আর অবিরাম পানির ছিটা মুখে দিতে লাগলো। কেন না তার গালে কপালে অজস্র লিপ কিস এর ছাপ স্পষ্ট ফুটে আছে। তা দেখে নিলয় নিজে নিজেই অনেকটা ঘাবড়ে যায় আর ভাবতে লাগে
আমার সঙ্গে এমনটা কে করতে পারে। অফিস কক্ষে আমার অনুমতি ছাড়া কেউ তো প্রবেশই করতে পারে না। এমন ঘটনা ঘটে গেলো অথচ আমি বিন্দুমাত্র ও টের পেলাম না, তার মানে নিশ্চয়ই কেউ blackmail করার চেষ্টা করছে —
কিন্তু আমাকে blackmail করে তাদের লাভ কি হবে সেটাই তো বুঝতে পারছি না। নিলয় আনমনে এসব ভেবে ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে ঘড়ির দিকে লক্ষ্য করলো ৩ টা প্রায় বেজে গেলো অথচ তার লান্সের জন্য আদিবা খাবার পাঠাইনি কিছুটা রেগেই সফিকের কাছে ফোন করে বলে
–” সফিক তোর ভাবি কি আজ খাবার পাঠাইনি
–” না ভাইজান। ভাবি নিজেই নিয়ে আসতে চাইছিলো দেইখা আমি আনি নাই। তই এহনো কি ভাবি আন্নের খাওন অফিসে নিয়ে আহে নাই ভাইজান-
–” না ও আসেনি
–” তই আমি কি ভাবির ওহন থেইক্কা খাওন আনমু ভাইজান-
–” না থাক তার প্রয়োজন নেই আমি বরং তোর ভাবির সঙ্গে কথা বলে দেখি –
–” আইচ্ছা ভাইজান
এবলে নিলয় আদিবার ফোনে কল দিতে লাগলো। কিন্তু তার কোনো রেসপন্স পাচ্ছে নাহ।
এইদিকে আদিবা খাওয়া দাওয়া বন্ধ করে কান্নায় ভেঙে পড়েছে, আজ কোনোভাবেই দৃশ্যটি ভুলতে পারছে না। বার বার শুধু অই দৃশ্যই স্পষ্ট ভেসে উঠছে। কান্না করছে আর চোখের জল মুছে আদিবা হঠাৎ নিলয়ের কলে ফোন ক্রিংক্রিং করে বেজে উঠল তড়িঘড়ি করে হাতে ফোন ঠিকই নিলো। কিন্তু তখনকার কথা ভেবে নিলয়ের কল করার সত্ত্বেও অবহেলায় ফোন্টা বালিশের উপর রেখে দেই আদিবা-
আর এইদিকে নিলয় আদিবা কল রিসিভ করছে না দেখে মন খারাপই করেই ছোট একটা টেক্সট লিখে সেন্ট করে।
কিছুক্ষন পর আদিবা মেসেজের শব্দ শুনে ফোন হাতে নিয়ে মেসেজটি পড়তে লাগলো
কি ব্যাপার ফোন রিসিভ করছো না কেন। এইদিকে আমি না খেয়ে বসে আছি। তুমি তো জানোই.. বাহিরের খাবার আমি পছন্দ করি নাহ। একটু লেট হলেও বাড়ির খাবারই
খেয়ে নেই। তাহলে আজ আমাকে না খাইয়ে রেখেছো কেন হুম –
আদিবা মেসেজটি পড়েই কোনো রিপ্লাই দিলো না। আজ সে না খাইয়ে থাকুক এটাই আদিবা চাই। কিছুক্ষন পর আবার নিলয়ের মেসেজ
আচ্ছা থাক তোমার আর কষ্ট করে আমার জন্য খাবার নিয়ে আসতে হবে না। বাহিরে থেকেই খাবার অর্ডার করছি (নিলয় এবার মেসেজটির সঙ্গে কিছু রাগি ইমোজি লাগিয়েছে। আদিবা ভ্রুক্ষেপহীন ভাবে মেসেজটি এবারেও এড়িয়ে গেলো
অইদিকে নিলয় আদিবার উপর রাগ পেলেও পরক্ষণেই তা উধাও হয়ে গেলো। সারাদিন অফিসে থাকেও নিলয়ের সে চিন্তাটা একটু ও কমেনি বার বার সে প্রশ্নের উত্তর খুজেই যাচ্ছে। কোনোভাবেই সে উত্তরের সন্ধান মিলছে না। সারাদিন অফিসের কাজেই এমনিই কেটে গেলো। রাতে কিছুটা মন খারাপ নিয়েই সে দরজায় কলিংবেল কয়েকবার বেল চাপলো কিন্তু ও পাশ থেকে খুলার কোনো শব্দ নেই রেগেই নিলয় চিৎকার মেরে বলে
–” কি ব্যাপার কেউ দরজা খুলছো না কেন
নিলয়ের চিৎকার আর অবিরাম কলিং বেল বাজানোতে রেহেনা বেগম (নিলয়ের মা) এসে দরজা খুলে দিয়ে বলে
–” এত জোরে বেল বাজাচ্ছিলি কানটাই তো একটুর জন্য ফেটে যেত
–” কী করবো দরজা খুলতে লেট করছিলে বলেই তো বেল বাজাচ্ছিলাম
–” আচ্ছা ঠিক আছে ফ্রেশ হয়ে খেয়ে নে –
–” মা আদিবাকে দেখছি না যে ও কোথায়-
–” রুমেই আছে। কিন্তু আজ কেমন জানি রুম থেকেই বের হইনি। একবার অবশ্য জিজ্ঞাসা করেছিলাম সে আমার উত্তরে শুধু বলল ” এমনি ভালো লাগছে না ‘ একথা শুনে দ্বিতীয়বার কোনো প্রশ্ন করেনি –
–” আচ্ছা ঠিক আছে আমি দেখছি –
নিলয় এই বলে দুরুত্বই তার রুমে চলে যায়। এবং দরজা ঠেলে রুমে প্রবেশ করতেই লক্ষ্য করলো আদিবা আয়নার সামনে দাড়িয়ে চুল ঠিক করছে। নিলয় দুষ্টমি করেই পিছন দিক থেকে আদিবাকে জড়িয়ে ধরে কিছু একটা বলতে যাবে। আদিবা খুব দুরুত্বই নিলয়কে ধাক্কা মেরে সরিয়ে দিয়ে যা বলল। নিলয় তা শুনার জন্য মোটু ও প্রস্তুত ছিলো না__?
!
!
দৃষ্টির অগোচরে পর্বঃ১
#লেখকঃরনি হাসান