অব্যক্ত_প্রিয়তমা,part_19 [ সারপ্রাইজ পার্ট ]
ফাতেমা_তুজ
থমথমে মুখে বের হয় ইশরাক। অনিন্দিতা কে কিছু চেকাপের জন্য পাঠানো হয়েছে। নির্ভীকের কাছে এসেই দু চারটে কথা শোনাতে ইচ্ছে হয়। নিজের ইচ্ছে কে দমাতে অক্ষম হয় ইশরাক। রাগি কন্ঠে তেঁতে উঠে বলে
” আশ্চর্য! কি করে পারলি এমন টা করতে। আমি ভেবেছিলাম মেন্টালি অনিন্দিতা ভেঙে পরেছে। কিন্তু এখন দেখছি আসক্ত হয়ে পরেছে। শুধু তাই নয় আম ড্যাম সিউর ওর ব্রেন এর নার্ভ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ইনফেক্ট আর কিছু দিন এভাবে চললে ওকে মানসিক হাসপাতালে এডমিট করাতে হবে। ”
” তোর বলা শেষ ? ”
” দেখ নির্ভীক। ”
হাত উঁচিয়ে বাঁধা দেয় নির্ভীক। যথাসম্ভব শান্ত কন্ঠে বলে
” আমাকে বলে লাভ নেই। আমি পাষান। আমি কখনোই অনিন্দিতা কে কাছে ডাকতে পারবো না। তাই ওকে মেন্টালি স্ট্রং করতে হবে তোকে। এট এনি কস্ট।”
” শোন নির্ভীক। অনিন্দিতার পুরো শহর জুড়ে তুই। তোর অবহেলা ওকে এমন মানসিক রোগীর দিকে ধাবিত করেছে। ”
” ভুল বললি। এটা ওনার ভাগ্য আর শাস্তি। ভুল মানুষের প্রেমে পরার শাস্তি। তাছাড়া অনিন্দিতা সেই সব প্রেমি দের মধ্যে একজন, যারা ভালোবাসায় পাগল। কতো শত লোক প্রেম কে কাছে না পেয়ে পাগল হয়ে গেছে। কেঁটে গেছে তাঁদের দিন, অনিন্দিতার দিন ও ঠিক এভাবেই কেঁটে যাবে। ”
” মানুষ তুই ? ”
” একদম ই নয়। আমি অমানুষ আর পাষান , তবে তুই হলি বেইমান। ”
” দেখ নির্ভীক আমাকে যা ইচ্ছে বল আমি মেনে নিবো। কিন্তু আমার বিষয় আর তোর বিষয় টা কি কোনো ভাবে এক ? যেখানে অনিন্দিতা তোকে ছাড়া কিছু বুঝে না সেখানে তুই কি না। ”
কথা বলে না নির্ভীক। চেয়ার থেকে উঠে ট্রেরেস এ চলে আসে। শির শির বাতাসে মেতে উঠে ঘন চুল। আকাশের দিকে নির্লিপ্ত তাকায় ওহ। জীবনে ভালো থাকা খুব জরুরি। ভালোর প্রকারের শেষ নেই। কিন্তু ওহ কোন ভালো থাকছে। অন্যের কাছে ভালো , নাকি ভেতর থেকে ভালো। অদ্ভুত হাসে ছেলেটা। পেছন থেকে কাঁধে হাত রাখে ইশরাক। বলে
” এমন টা না করলে ও পারতি তুই। আমি জানি তুই কতোটা ‘
” ভুল জানিস তুই। ভুল থেকে বেরিয়ে আয়। এখন যা দেখছিস এটাই একমাত্র সত্যি। ”
” স্যার। ”
নার্স এর ডাকে চেম্বারে আসে ইশরাক আর নির্ভীক। অনিন্দিতার চোখে মুখে বিরক্তি। ইস্টার্ন দুটো রিপোর্ট পেয়ে যাওয়াতে সেগুলো নিয়ে ব্যস্ত হয় ইশরাক। একটু নিচু হয়ে নির্ভীক বলে
” কি হয়েছে অনিন্দিতা। ”
” নার্স। ঐ মেয়েটা একদম ই বাজে। শাড়ি তে মেডিসিন ফেলে দিয়েছে। ইচ্ছে করছিলো ওখানেই মেরে ফেলি। ”
“এটা এতো পছন্দের শাড়ি আপনার ? ”
” অনেক বেশি পছন্দের। আপনার প্রিয় রঙ যে আমাকে বার বার বিমোহীত করে। আমি নির্লিপ্ত তাকিয়ে থাকি আপনার প্রিয় জিনিসের প্রতি। কিন্তু আপসোস ছুঁতে গেলেই আপনি বাঁধা দেন। পাষান একটা। ”
শেষোক্ত কথায় হেসে ফেলে নির্ভীক। পুরোপুরি মাথা টা গেছে মেয়েটার। আজ কাল একটু বেশি ই পাগলামি হচ্ছে। তবে সেটা অন্য রকম পাগলামি। নির্ভীক গুটি গুটি হাতে অনিন্দিতার হাত টা স্পর্শ করে। অবাক হয় অনিন্দিতা। মনে জাগে প্রেমের বর্ষন। ইশরাকের ডাক কানে আসে না। সে তাকিয়ে থাকে প্রিয়তমের দিকে। একটা ঝাঁকি পরতেই থতমতো খায় অনিন্দিতা। নির্ভীক বলে
” ডাক্তার আপনাকে ডাকছেন। ”
” ওহহ। ”
” মিস অনিন্দিতা। আপনার সাথে আমি পার্সোনালি কথা বলতে চাই। আপনার কোনো অসুবিধা নেই তো ? ”
” নির্ভীক ভাই। ”
” ওনার সাথে কথা বলুন সমস্যা নেই। আমি চেম্বারের বাইরেই আছি। ”
” কিন্তু আমি একা। ”
নির্ভীক চলে যায়। অস্বস্তি হয় অনিন্দিতার। আঁচলের কোন মোচরাতে মোচরাতে বলে
” নির্ভীক ভাই ”
” আরে চলে আসবে নির্ভীক। মিস অনিন্দিতা, আপনি জানেন আমি নির্ভীকের ফ্রেন্ড। ”
” জি। ”
” তাহলে তুমি বলেই সমোন্ধন করা যায়। ”
” অবশ্যই। ”
পাশ থেকে কলম তুলে নেয় ইশরাক। কলম ঘোরাতে ঘোরাতে বলে
” নির্ভীক কে ভালোবাসো। ”
” আপনি তো বোধ হয় সব ই জানেন। ”
” হ্যাঁ। আমি সব ই জানি। ”
” তাহলে এই প্রশ্ন। ”
” আহ অনিন্দিতা। বিব্রত কেন হচ্ছো। ”
তেঁতে উঠে অনিন্দিতা। রাগি কন্ঠে বলে
” নির্ভীক ভাই কে ভুলানোর জন্য ওনি আমাকে আপনার কাছে নিয়ে এসেছে তাই না ? আমি বুঝে গেছি। সব টা পানির মতো পরিষ্কার। ”
” অনিন্দিতা। আমার কথা টা শোনো। ”
ছুটে বেরিয়ে যায় অনিন্দিতা। চোখে মুখে আতঙ্ক। হাতের সাহায্যে চোখ মুছে তবে সে চোখ আবারো ভিজে যায়। নিজের সর্বোচ্চ দিয়ে দৌড়াতে থাকে অনিন্দিতা। শেষ করিডোরে এসে নির্ভীক কে পায়। আকাশের দিকে তাকিয়ে সিগারেট ফুকছিলো ছেলেটা। তখনি পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে অনিন্দিতা। হাতের সিগারেট টা পরে যায়। হিঁচকি তুলে অনিন্দিতা বলে
” আমি আপনাকে ভুলতে চাই না। আমি আপনাকে ভুলতে চাই না। প্লিজ আমার সাথে এমন করবেন না। আমি আপনাকে ভুলতে চাই না। ”
” অনিন্দিতা , এই অনিন্দিতা। ”
” আমি চলে যাবো। অনেক দূরে চলে যাবো। তবু ও আপনাকে ভুলতে পারবো না। প্লিজ এমন টা করবেন না আপনি। ”
পেছন থেকে ঘুরিয়ে সামনে নিয়ে আসে নির্ভীক। নাক টেনে কাঁদছে মেয়েটা। দুই বাহু তে হাত রেখে নির্ভীক বলে
” একি , আপনি কাঁদছেন।ইস এতো সুন্দর সাজ নষ্ট হয়ে গেল। এখন কিন্তু একদম ই ভালো লাগছে না। ”
” লাগবে না ভালো। আমি শুধু আপানকে ভালোবাসি। আমাকে কেন এমন ভাবে দূরে ঠেলে দিচ্ছেন। বলুন। ”
” অনিন্দিতা। আমি আপনাকে দূরে কেন ঠেলে দিবো। আমাদের সাথে কি কথা হয়েছিলো। আপনি ভদ্র ভাবে ডাক্তার দেখাবেন। ”
” আমাকে ভোলানোর জন্য নিয়ে এসেছেন নির্ভীক ভাই। অথচ কল্পনা করলেন ও না যেই মেয়েটা আপনাকে ভালোবাসে সেই মেয়েটা আপনাকে ভোলার কথা চিন্তা ও করতে পারে না। ”
নির্ভীক থেমে যায়। গাঁ থেকে সিগারেটের গন্ধ নাকে এসে লাগে। অনিন্দিতা বলে
” আপনি সিগারেট খেয়েছেন। ”
” সামনে মদ ও খাবো। ”
” ছিইই ! আপনি , আমার মাথায় কিচ্ছু আসছে না। ”
মাথা চেপে ধরে বসে পরে অনিন্দিতা। আবারো মাথায় যন্ত্রনা হচ্ছে। চোখ দুটো লাল হয়ে যায়। নির্ভীক আগায় না। যন্ত্রনায় ছটফট করতে থাকে অনিন্দিতা। হঠাৎ করেই অনুভব করে ছেলেটা, পৃথিবী তে থাকার থেকে মৃত্যু শ্রেয়। যেখানে প্রিয়তমা কে নিজ হাতে কষ্ট দিতে হয় সেখানে নিজের মৃত্যু কামনা যেন অধিক সুখের ।
.
আসিমের পাশা পাশি হেঁটে চলেছে ইশরাক। একটু আগেই পরিচয় হয়েছে দুজনের। স্বল্প বয়সের ছেলেটা এতো টা বুদ্ধিমান ঠাওর করতে পারে নি ইশরাক। সোডিয়ামের আলো তে আসিমের মায়া ভরা মুখ টা যেন আরো উজ্জল হয়েছে। যে কোনো মেয়ে কয়েক টা হার্ট বিট মিস করে ফেলবে। ইশরাক বলে
” তোমার রূপের প্রশংসা না করে পারলাম না আসিম। ”
মলিন হাসে আসিম। রাস্তায় পরে থাকা টিনের কৌটায় লাথি মেরে বলে
” রূপ তো সৃষ্টিকর্তার দান। সেখানে আমার প্রশংসা করা টা বিলাসিতা করা হলো না ? ”
” বাহ বেশ ভালো কথা জানো তো। ”
” আচ্ছা সে যাই হোক। আপনি ই তো অনির ট্রিটমেন্ট করছেন। ”
” হুম। ”
” কি বুঝলেন ? ”
” পুরোই অন্য রকম কেস। কারন অনিন্দিতার মধ্যে অন্য কোনো পাগলামি নেই। সে সব কিছুই বুঝতে পারছে। এমন কি পরিবারের থেকে নিজের অনুভূতি লুকাতে ও সক্ষম। কে কি চাইছে , বলছে সাধারন মানুষের মতোই সব ধরে ফেলছে। শুধু একটা জায়গা তেই থমকে আছে সেটা হলো নির্ভীক। ”
” এক্সাকলি। নির্ভীক মাহতাব অনির মস্তিষ্ক কে যেন খিচে ধরে আছে। ”
” কিছু টা তেমনি। অনিন্দিতার মেন্টাল কন্ডিশান একদম ভালো নয়। ”
” ওকে সুস্থ করতে হবে। ”
” আমি সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো। ”
” কিন্তু আপনি তো শুরু তেই ভুল করেছেন ডক্টর ইশরাক । ”
” তোমার কথা বুঝলাম না। ”
” আপনি চিকিৎসা করছেন নির্ভীক স্যার কে ভোলানোর। আর নির্ভীক স্যার ই অনির কাছাকাছি থাকছে। তাহলে অনি কি করে সুস্থ হবে ? কিছু টা এমন হলো না যে কাজ করা হবে তবে ফল যেন শূন্য ই থাকে। ”
আসিমের কথায় বেশ ভাবনায় পরে ইশরাক। ছেলেটার কথায় যুক্তি আছে। আসিম দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে
” নির্ভীক স্যার কে অনির থেকে আলাদা করার ব্যবস্থা করুন। আমার মনে হয় না নির্ভীক স্যার এতে দ্বিমত করবেন। ”
” ওকে। তোমার কথা টা অবশ্য ঠিক। আমি দেখছি কি করা যায়। তো পরে দেখা হচ্ছে। ”
আসিমের হাতে হাত মেলায় ইশরাক। বিদায় জানিয়ে চলে যায় সে। আসিম হেঁটে হেঁটে গান ধরে । যেন সে সুখের সাগরে ভাসছে। জীবনের লড়াই তো চাঁদ কে নিয়েই। গরিব ব্রাহ্মন তো সে ও।
ঘাসের উপর শুইয়ে ছিলো আসিম। হঠাৎ করেই ওর ফোন টা বেজে উঠে। চন্দ্রবিলাশে ব্যাঘাত ঘটতেই ভ্রু কুঁচকে যায়। যুবুথুবু হয়ে ফোন রিসিভ করে। ওপাশ থেকে উদ্বিগ্ন কন্ঠ কানে আসে। শাহানা কাঁদছে। আসিম বলে
” আন্টি আন্টি কি হয়েছে ? ”
” অনিন্দিতা যেন কেমন করছে। আমি ওকে সামলাতে পারছি না। নির্ভীক রা ও বাসায় নেই। কি করবো বুঝতে পারছি না।”
” আমি এখনি আসছি। ”
কল রেখে ছুটে যায় আসিম। পার্কিং থেকে বাইক নিয়ে অগ্রসর হয় অনিন্দিতার বাসায়। চাঁপা ভয়ে ভেতর টা ছিড়ে যাচ্ছে। আচ্ছা অনিন্দিতার কিছু হবে না তো ?
[ অনিন্দিতার পাগলামি তে যারা বিরক্ত ছিলেন। আশা করি কনফিউশন ক্লিয়ার। ভালোবেসে মেয়েটা মানসিক ভাবে অসুস্থ হয়ে পরেছে। এমন অনেক প্রেমিকাই আছেন। তাই গল্পের এই অংশ টুকু কে অবাস্তব বলে দাবি করবেন না। ]
বি : দ্র : ভুল ত্রুটি মাফ করবেন ।
চলবে