শেষ_থেকে_শুরু,পর্ব_বোনাস
নন্দিনী_চৌধুরী
২০.
নিজের অফিসের চেয়ারে বসে ল্যাপ্টপে কাজ করছে মেহের।ফাঁকে ফাঁকে একটু করে কফি খাচ্ছে।মেহেরের অফিসের ম্যানেজার মেহেরের কেবিনে আসলো।
ম্যানেজার:May I coming Sir?
মেহের:Yes Coming.
ম্যানেজার:স্যার আপনার কথা মতো ArS কম্পানির সাথে আমাদের +অন্যসব কম্পানির ডিল ক্যান্সেল করিয়ে দিয়েছি।এখন আগামি ৫মাসেও তারা কোমর সোজা করে দাঁড়াতে পারবেনা।
মেহের:আগামি ৫মাস কেন আমি চাই তারা রাস্তায় নেমে যাক।সেই ব্যাবস্থা তুমি করো।কোনো এশিয়ান কাম্পানি জেনো ওদের সাথে ডিল না করে।
ম্যানেজার:জি আচ্ছা স্যার আমি এখন আসছি।
ম্যানেজার যাওয়ার পর মেহের চেহারে হেলান দিয়ে বসে বলতে লাগলো,
মেহের:”আরিশ তুই আমার বোনের চোখের পানি ঝরিয়েছিস।আমার বোনকে অপমান করেছিস।তোকে আমি রাস্তায় নামিয়ে আনবো।মিসেস সালমার যেই অর্থের জন্য তোর কাছে মেয়েকে লিলিয়ে দিছে অই অর্থই আমি কেড়ে নেবো।তুই জানোস না আমার বোন আমার কাছে কি।আমার বোনের চোখের পানির দাম তো তোকে আর সায়মাকে দিতেই হবে।Just wait And Watch Mr.Arish.”
নিজের রুমে বসে চোকলেট খাচ্ছে মুগ্ধ আর কার্টুন দেখছে।এক সপ্তাহে অনেক সুস্থ হয়ে গেছে মুগ্ধ পাশাপাশি নিজের আগের জীবনে ফিরে আসছে সে।মেহের রুহি এটা দেখে খুব খুশি।যে অবশেষে মেয়েটা ঠিক হচ্ছে।মুগ্ধ চোকলেট খাচ্ছে এর মাঝে ওর ফোনে কল আসে ফোনের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে দেখে বোবা ভুত লেখা।মুগ্ধ চোখ মুখ কুচকে বলে উঠে,
আজকেও উফফ!
মুগ্ধ কল রিসিভ করে হ্যালো বললো,
মুগ্ধ:হ্যালো।কে? আচ্ছা আপনি কথা বলেন না কেন ফোন দিয়ে হ্যা বোবা নাকি আপনি?বোবা হলেও তো একটু পুতপুত আওয়াজ করে তাও তো করেন না।নাকি বোবা ভূতে ধরছে আপনাকে কোনটা।শুনেন এরপর যদি কল দেন তাহলে একদম খবর করে দেবো।
কথা গুলো বলেই মুগ্ধ কল কেটে দিলো।বিগত এক সপ্তাহ ধরে এই নাম্বারটা থেকে কল আসে কিন্তু কেউ কথা বলেনা।প্রথমে মুগ্ধ ভাবতো হয়তো তাকে কেউ চেতানোর জন্য এমন করছে কিন্তু প্রত্যেকদিন কল আসে কিন্তু কেউ কথা বলেনা।মুগ্ধ একদিন রেগে কল ধরছিলোনা কিন্তু ফোনদাতা ফোন দিয়ে যাচ্ছিলো তো দিয়েই যাচ্ছিলো।শেষমেষ বাধ্য হয়ে কল রিসিভ করে মুগ্ধ সেই চুপ থাকে।তাই মুগ্ধ এর নাম দিয়েছে বোবা ভূত।মুগ্ধ ফোন হাত থেকে রাখতে যাবে দেখে ফোনে বোবা ভূতের ম্যাসেজ আসছে,
বোবাভূত:আগামিকাল নীল জামাটা পরে আসবা কলেজে ওকে।
মুগ্ধ ম্যাসেজ দেখে অবাক।বোবা ভূত দেখি কলেজ ও চিনে।কিন্তু এই বেটার কথা আমি শুনুম কেন পরমুনা নীল জামা হুহ।মুগ্ধ নিজের মনে মনে এসন আওড়াতে আওড়াতে নিচে চলে আসলো।
রুহি বসে বসে আচাড় খাচ্ছে।রুহিকে আচাড় খেতে দেখে মুগ্ধ ওর পাশে এসে বসে বলে,
মুগ্ধ:উহুম উহুম কি আমাদের বাসায় কি জুনিওর মেহের আসছে নাকি।
রুহি মুগ্ধের কথা শুনে লজ্জা লাল হয়ে যায়।রুহিকে লজ্জা পেতে দেখে মুগ্ধ খুশি হয়ে বলে,
মুগ্ধ:ভাবিপু সত্যি?
রুহি:হুম?।
মুগ্ধ:ইয়েস আমি ফুপি আম্মু হবো।উফ আমার এখোনি কি যে ভাল্লাগছে।ভাইয়াকে জানাবে কখন?
রুহি:বাসায় আসলেই।
মুগ্ধ:আচ্ছা।
কথা বলার মাঝে মেহের বাসায় আসে।হাতে তার দুই প্যাকেট ছানার মিষ্টি।বাসায় ডুকে মিষ্টি গুলো রেখে রুহিকে কোলে তুলে নেয় মেহের।রুহিতো লজ্জা শেষ?♀️।মুগ্ধ মুখ টিপে হাসছে।সে আসতে করে রুমে চলে আসলো।
মেহের রুহিকে কোল থেকে নামিয়ে কপালে চুমু দিয়ে বললো,
মেহের:ধন্যবাদ আমাকে এতো বড় উপহার দেওয়ার জন্য।
রুহি:তুমি!
মেহের:তোমার রিপোর্ট ডাক্তার আমার কাছে পাঠিয়েছে আমি আগেই জেনেছি।
রুহি:ভালোবাসি।
মেহের:ভালোবাসি বউ।
মুগ্ধ নিজের রুমে হাসতে হাসতে চলে আসলো।আজকে তার ভাই কত খুশি।ইসস তার ও এরকম হ্যাপি একটা ফ্যামিলি হতে পারতো। কিন্তু তার ভাগ্যে হয়ত সেই সুখ নেই।মুগ্ধ একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো।টেবিলে রাখা মায়ের ফোটো ফ্রেমটা বুকে জরিয়ে ধরে শুয়ে পড়লো।যখন মুগ্ধ ছোট ছিলো তখন খেলতে গিয়ে ব্যাথা পেলে কাঁদতে কাঁদতে মায়ের কোলে মুখ লুকাতো।রাতে মা তাকে ভাইকে গল্প শুনিয়ে ঘুম পাড়াতো।কত আদর করতো।কিন্তু মাকে আল্লাহ নিয়ে গেলো।মুগ্ধ মায়ের কথা ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে গেলো।মেহের ফ্রেশ হয়ে এসে বোনের রুমে দেখে মুগ্ধ ঘুম।মায়ের ফোটো ফ্রেম বুকে জরিয়ে ঘুমিয়ে গেছে।মেহের আসতে করে ফোটো ফ্রেমটা সরিয়ে কাথা গায়ে দিয়ে দিলো।ড্রিম লাইয় জ্বালিয়ে মুগ্ধের কপালে একটা চুমু দিয়ে চলে গেলো।
সকালে,
মুগ্ধ উঠে নামাজ পরে নিলো।হালকা পড়া পরে রেডি হলো কলেজের জন্য।একটা হলুদ কালারের কূর্তি পরলো সাথে নেবিব্লু কালারের স্ক্রাফ বাদলো মাথায়।রেডি হয়ে নিচে এসে তাড়াতাড়ি নাস্তা করে বেরিয়ে পরলো।আজকে রিকশা করে যাবে মুগ্ধ।মেহেরকে খুব কষ্টে রাজি করিয়েছে।মেহেরতো ওকে একা ছাড়তেই রাজিনা।তবুও খুব কষ্টে রাজি করিয়ে এসেছে।মুগ্ধ রোডে দাঁড়িয়ে রিকশা খুজতেছে গতকাত রাতে বৃষ্টি হইছে তাই রোড সব কাদা পানিতে ভোরা।মুগ্ধ এক কোণায় দাঁড়িয়ে রিকশা খুজতেছে তখন একটা গাড়ি একদম ওর পাশ থেকে এসে ওর জামায় কাদা ছিটিয়ে দিলো।মুগ্ধ তা দেখে অবাক হয়ে রেগে চিৎকার করে বলে,
মুগ্ধ:এই চোখে দেখে গাড়ি চালাতে পারেন না। আমার জামাটা নষ্ট করে দিলেন।
মুগ্ধের চিৎকার শুনে গাড়িওয়ালা গাড়ি থামিয়ে বেরিয়ে আসে গাড়ি থেকে।গাড়ি থেকে সাদাফকে নামতে দেখে আরো অবাক হয় মুগ্ধ।একটু অভিমান ও হচ্ছে এই এক সপ্তাহে সাদাফ আর একবার ও আসেনি ওকে দেখতে সাদিয়া সাদিয়ার বাবা মা এসেছিলো কিন্তু সাদাফ আসেনি।সাদাফ চোখের সানগ্লাসটা খুলে পকেটে রেখে মুগ্ধের দিকে এগিয়ে এসে বলে,
সাদাফ:ইইইইই যা আপনার ড্রেসতো নষ্ট হয়ে গেলো মিস মুগ্ধ।এখন কি হবে।
মুগ্ধ:আপনার জন্যই তো হলো।গাড়ি দেখে শুনে চালান না কেন স্যার।
সাদাফ:ইস আমি সরি রিয়েলি সরি।এক মিনিট দাঁড়ান।
সাদাফ আবার নিজের গাড়ির কাছে গিয়ে গেট খুলে একটা ব্যাগ বের করলো তারপর আবার মুগ্ধের কাছে এসে ব্যাগটা হাতে দিয়ে বললো,
সাদাফ:এইখানে একটা ড্রেস আছে।এটা সাদিয়ার জন্য নিছিলাম এখন আপনি এটা চ্যাঞ্জ করে পরে নেন।
মুগ্ধ:আমি কি এটা এখানে চ্যাঞ্জ করবো।এখানে কই আছে চ্যাঞ্জ করার জায়গা?
সাদাফ:মিস মুগ্ধ আপনি মনে হয় চোখে কম দেখেন আপনার হাতের পাশেই তো একটা মল।ওখানে গিয়ে চ্যাঞ্জ করে নেন।
মুগ্ধ সাদাফের কথা শুনে পাশে তাকিয়ে দেখে আসলেই একটা শপিংমল মুগ্ধ তাড়াতাড়ি সেখানে গিয়ে চ্যাঞ্জ করে নিলো।একটা নীল রং এর কামিজ।মুগ্ধ চ্যাঞ্জ করে বেরিয়ে আসে। সাদাফ তখন রাস্তায় গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়ানো।মুগ্ধকে দেখে ঠিক হয়ে দাঁড়ায়।নীল জামার সাথে নীল স্কাফ কোনো সাজ নেই তবুও দেখতে ভালো লাগছে।সাদাফ মুচকি হাসি দেয়।মুগ্ধ এসে দাঁড়াতেই সাদাফ একটা রিকশা ঠিক করে দেয় তারপর মুগ্ধের দিকে তাকিয়ে বলে,
সাদাফ:সাদু নানা বাসায়।ও কলেজে আসবেনা কিছুদিন।তো এখন কয়েকদিন বান্ধুবিকে ছাড়া ক্লাস করতে হবে।নেন এখন যান।আর হ্যা সাবধানে আবার কারো গাড়ি দিয়ে কাদা মাখাইয়েন না।
মুগ্ধ সাদাফের কথা শুনে রাগে গজগজ করতে করতে রিকশায় উঠলো।
নিজেই কাদা ছিটালো।আমার দেড়ি করালো।আর এখন বলে সাবধানে যেতে।দেইখেন আপনার কপালে একটা সাতচুন্নি জুটবে হুম।
বকবক করতে করতে মুগ্ধ চলে যায়।আর সাসাফ সেখানে দাঁড়িয়ে হেসে বলে,
“যতোটা মুগ্ধতা নিয়ে আমি তোমার দিকে তাকিয়ে তোমাকে দেখি মেহুরানী,ততোটা মুগ্ধতা নিয়ে আমি ওই দুর আকাশের দিকেও তাকাইনি”।
মনে মনে কথাটা বলে সাদাফ গাড়ি নিয়ে চললো কলেজের পথে।
?
নিজের রুমে মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে আরিশ।তার জীবনের সব কিছু এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে।তার নিজের অংশ পৃথীবিতে আসার আগেই চলেগেলো।এখন বিজনেসে লোস শুরু হয়েছে।সব দিক থেকে সে কেমন শেষ হয়ে যাচ্ছে।একসপ্তাহ আগেও সব কত ভালোছিলো বাচ্চাটাকে নিয়ে আরিশ কত এক্সসাইটেড ছিলো।কিন্তু সব শেষ হয়ে গেলো।এক সপ্তাহ আগে সায়মা ওর মায়ের বাসায় যাওয়ার পরের দিন ওর মা কল করে জানালো সায়মা ওয়াশরুমে পা পিছলে পরে গেছে এখন হাসপাতালে।আরিশ দ্রুত হাসপাতালে যায় কিন্তু ততোখনে সব শেষ বাচ্চাটা নষ্ট হয়ে গেছে জানায় ডাক্তার।সায়মা অনেক কেঁদেছিলো আরিশের হাত ধরে আর মাফ চেয়েছে।আরিশ অনেক কষ্টে নিজেকে সামলে সায়মাকে সামলেছে।এরপর সায়মা ওর মায়ের কাছেই আছে।ওখানে থাকলে সায়মা নরমাল থাকবে আরিশের মনে হয়।এরপর এখন বিজনেসের লোস এতো টাকার লোস হয়ে গেলো এখন কিভাবে কি করবে সে কিছুই বুজতে পারছেনা।সব এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে তার।
নিজের রুমে আয়েস করে বসে কফি খাচ্ছে সায়মা আর সালমা।অন্তত একটা ঝামেলা মিটলো।এই বাচ্চার ঝামেলা না মিটলে সায়মাকে আরিশ তো চোখের আড়াল করতোই না।এখন ফাইনালি না আছে বাচ্চা আর না এখন আরিশ সায়মাকে চোখে চোখে রাখবে।
সায়মা:উফ মা তুমি বাঁচিয়ে দিলা।হাপিয়ে গিয়েছিলাম এই প্রেগন্যান্ট হবার নাটক করতে করতে।
সালমা:হুম এখন আর আরিশ তোকে পাহারা দেবেনা।
সায়মা:হুম তো কিছু ভাবলে সামনে কি করবে?
সালমা:ভাবছি কি করবো।তোর বাপ তো আজ রাতে আসছে।
সায়মা:অহ আচ্ছা।
সালমা:হুম।
মেহের বাসায় আজকে কারন আজ তার কোনো জরুলি কাজ নেই।মেহের বসে কাজ করছিলো তখন বাসার দাড়োয়ান আসলো।
দাড়োয়াম:স্যার আপনার জন্য চিঠি আসছে।
মেহের:আমার জন্য?
দাড়োয়ান:জি স্যার আপনার জন্য।
মেহের:কে দিলো?
দাড়োয়ান:জানিনা পোষ্টমেন আইসা দিয়া গেলো।
মেহের:আচ্ছা দেও আমাকে।
দাড়োয়ান:এই লোন।
দাড়োয়ান মেহেরকে চিঠি দিয়ে চলে আসলো।মেহের চিঠির খামে দেখলো কিছু লেখা নেই।তাই খাম খুলে চিঠি বের করলো।চিঠিটা খুলতেই অবাক হয়ে গেলো মেহের।
#চলবে