শেষ_থেকে_শুরু,পর্ব_১৩
নন্দিনী_চৌধুরী
২৭.
জেলের সেলে দেওয়ালে মাথা ঠেকিয়ে বসে আছে আরিশ।চোখ গুলো ভিজে গেছে চোখের পানিতে।সে যে তার জীবনের কত বড় ভুলটা করেছে সে চাইলেও তা ঠিক করতে পারবেনা।সে সব থেকে অধম কাজ করছে।তার কোনো ক্ষমা হয়না।
আরিশ মেহেরের দেওয়া প্যাকেটা খুলে সেখানে একটা ফোন কয়েকটা কাগজ আছে।আরিশ ফোনটা হাতে নিয়ে দেখে ফোনে কোনো সিম নেই।কয়েকটা ভিডিও ফ্লোডার আছে।আরিশ ভিডিও ফ্লোডার গুলো অন করলো।
প্রথম ভিডিও,
ভিডিওটাতে মেহের বসা একটা সোফায় তার সামনে বসা একটা লোক।লোকটার চোখ মুখ দেখে মনে হচ্ছে অনেক মেরেছে লোকটাকে।
মেহের লোকটার দিকে তাকিয়ে বলছে,
মেহের:বল কার কোথায় তুই আরিশকে মারতে চেয়েছিলি?
লোকটা:বিশ্বাস করেন স্যার।আমি নিজের ইচ্ছায় মারতে চাইনাই।আমাকে একটা মেয়ে বলছিলো মারতে।
মেহের:কোন মেয়ে দেখতে এ কিনা সেই মেয়ে?
লোকটি:জি স্যার।এটাই সেই মেয়ে যার কোথায় আমি ওই ছেলেটাকে মেরেছিলাম।এই মেয়েটা আমাকে ওই ছেলের ছবি দিয়ে বলেছিলো আমি যেনো ছেলেটাক মারি তবে একেবারে জেনো মেরে না ফেলি।ওর কথামতোই আমি ছেলেটাকে অর্ধেক আহত করেছিলাম পরে ওই মেয়েটাই বাঁচিয়েছিলো ছেলেটাকে।এর বদলে আমাকে ৪লাখ টাকা দিছে।
২য় ভিডিও,
এখানে তিনজন ডাক্তার কে বেঁধে রাখা হয়েছে তাদের সামনে মেহের বসা।
মেহেরঃকার কোথায় আপনারা প্রেগ্ন্যাসির মিথ্যা রিপোর্ট বানিয়েছিলেন?
ডাক্তারঃআমি কিছু ইচ্ছা করে করিনি লোভে পরে করে ফেলেছি।অই মহিলা আর মেয়েটা আমাকে ৫লাখ টাকা দিয়েছিলো বলেছিলো প্রেগ্ন্যাসির মিথ্যা রিপোর্ট বানাতে।
ডাক্তার ২য়ঃআমাকে বলেছিলো সুইসাইডের মিথ্যা রিপোর্ট দিতে।আমি দিয়েছি বদলে ৮লাখ টাকা দিয়েছে আমাকে।
ডাক্তার ৩য়ঃআমাকে বলেছে মিস্কেরেজের মিথ্যা রিপোর্ট বলতে আমি বলেছি বিনিময় ৬লাখ টাকা পেয়েছি।
সব গুলা ভিডিও দেখে স্তব্দ হয়ে যায় আরিশ।এ কাকে সে বিশ্বাস করলো।কাকে বিশ্বাস করে নিজের সব শেষ করলো সে।নিজের স্ত্রীকে ঠকালো।আরিশ পরের কাগজ গুলো খুললো।দুইটা চিঠি সেখানে।প্রথম চিঠিটা মেহেরের।
প্রথম চিঠি,
আরিশ
আমি জানি এই সব সত্য যখন জানবে তখন তুমি অনুতপ্ত হবে।তখন তুমি এটাই ভাব্বে যে তুমি কি ভুল করেছো।কিন্তু এই অনুতপ্ত হয়ে এখন কোনো লাভ নেই।তুমি আমার বোনকে অনেক কষ্ট দিয়েছো।তোমার জন্য মরতেও বসেছিলো বোনটা আমার।তাই কোনোদিন যদি তুমি জেল থেকে ছাড়া পাও তবে ভেবোনা আমার বোনকে ফিরে পাবে।আমি কোনো দিন আমার বোনকে তোমার কাছে ফেরত দেবোনা।
২য় চিঠি,
আরিশ,
জানি তুমি ভালো নেই।তোমাকে জেলে নেওয়া হয়েছে আমি জানি।এটাও জানি এই কাজ গুলো তুমি করোনি।ফাঁসানো হয়েছে তোমাকে আশা করি এখানে থেকে তাড়াতাড়ি মুক্তি পাবে।তবে কিছু কথা আমি জানি এতোদিনে তুমি সম্পত্তির ফাইলটা পেয়েগেছো।আর কিছু হলেও তোমার ভুল ভেংগেছে।হয়তো তুমি এখন অনুতপ্ত তোমার কাজে।হয়তো ভাবছো কি করলে এটা।জানো আরিশ আমি অনেক আগেই ভুজেগেছিলাম তুমি আর আমার নেই।তুমি অন্য কারো হয়েগেছো।কারন যেই নারী একটা পুরুষের সাথে মিলিতো হয়ে সে বুঝে ভালো সেই পুরুষটাকে।আমিও বুজতাম তুমি পরোনারীর সাথে থেকে আসছো।তার পার্ফিউমের ঘ্রানে বুজতাম।শার্টে লিপ্সটিক দেখে বুজতাম কিন্তু কিছুই বলতাম না।আমি চেয়েছিলাম তোমার ভুলটা শুধরে দেবো।তোমাকে ঠিক করে আনবো।কিন্তু তার আগেই তুমি আমাকে ছেড়ে দিলে।আমারই বোনের সাথে পরোকীয়ায় লিপ্ত হয়ে।সম্পত্তির প্রতি আমার কোনো লোভ ছিলোনা আর না এখনো আছে।আমি শুধু চাইতাম একটা ভালো মানুষ আমার জীবনে আসুক।আমাকে ভালোবাসুক।তুমি এসেছিলে আমার জীবনে।সুখ কিছু দিয়েছিলে কিন্তু বরাংবর দুঃক্ষ দিলে।আর তাও এমন দুঃখ যার ক্ষমা করা যায়না।আমার বাবাও এই কাজ করেছিলো ছোট মায়ের সাথে পরোকিয়ায় জরিয়ে আমার মাকে কেড়ে নিলো।ভাইয়া আমাকে জানাইয়েছে বাবা নাকি ছোট মায়ের সাথে পরোকীয়া করতো।মা অনেক কেঁদেছিলো বাবার পা ধরে কিন্তু লাভ হয়নি।শেষ পরীনতি আমার মা আমাদের ছেড়ে চলে গেলো।আমি চাইনি আমার মায়ের মতো পরীনতি আমার হোক তাই তুমি বলা মাত্রই তোমার জীবন থেকে আমি চলে এসেছি।তুমি আর সায়মা আমাকে অনেক অপমান করেছো।কোনো প্রতিবাদ করিনি।কারন আমি জানতাম যে আমি ঠিক।আর সেটা একদিন তুমি জানবা।তুমি ডিভোর্সের চারদিনের মাথায় বিয়ে করে নতুন ঘর বাঁধলে আর আমি তখনো লোকের কথা শুনতাম।সবাই নানা ভাবে অপমান করতো আমাকে।এমনকি দুইবার নিজের ইজ্জত হারাতেও বসে ছিলাম আমি।একবার বাঁচায় ভাইয়া আরেকবার সাদাফ স্যার।এই মানুষ গুলোর জন্য আমি আজ বেঁচে আছি।তোমাদের জন্য মরতেও বসেছিলাম আমি।ভাইটা আমার পাগল হয়েগেছিলো।তোমার জন্য শুধু তোমার জন্য সব হয়েছে।
যাই হোক আর কিছু বলতে চাইনা।ভালো থেকো আর হ্যা একটা কথা।
“আরিশ তোমার ওপর আমার কোনো রাগ নেই সত্যি কিন্তু আমি তোমাকে কোনোদিনও ক্ষমা করতে পারবোনা।”
তাই কোনোদিন আমার সামনে এসোনা ক্ষমা চাইতে।তুমি আমার জীবনের শেষ।আমার জীবনের শেষ থেকে শুরু হবে অন্য ভাবে যেখানে থাকবেনা কোনো প্রতারণা।কোনো লাঞ্চনা।
ইতি
মুগ্ধ।
চিঠি দুটো পরে হাউমাউ করে কাঁদছে আরিশ।কত বড় ভুল করলো সে।সায়মা বিশ্বাস করে সব হারিয়ে ফেললো সে।এমনকি পরোকীয়ার মতো নোংড়া কাজেও সে লিপ্ত ছিলো।
আমি নিজ হাতে সব শেষ করে দিয়েছি মুগ্ধ।ঠিক বলেছো আমাকে ক্ষমা করা যায়না।আমার মতো পশুকেন ক্ষমা করা যায়না।সব শেষ করে দিয়েছি নিজ হাতে।
মেহের মুগ্ধকে জানায়নি যে তাদের বাবাই মেরেছে তাদের মাকে আর সালমা সায়মার কথাও জানায়নি।মেহের জানে বোন তার অনেক কষ্ট পাবে।তাই যেটুকু জানানোর সেটুকু জানিয়েছে।
সালমা বেগমের বাসায় এসেছেন পুলিশের লোকেরা।সালমা তো কিছুই বুজতে পারছেনা কি হচ্ছে।
সালমাঃআপনারা এখানে কি কারনে?
পুলিশঃম্যাম আপনার বাসাটা সিল করে দেওয়া হয়েছে।আইনতো এই বাসা এখন আরিয়ান খান মেহেরের।তার কথা মতে আপনি এই বাসায় থাকতে পারবেন না।আপনাকে আজকের মধ্য বাসা ছেড়ে যেতে বলার নোটিশ দেওয়া হয়েছে।
সালমাঃমানে কি বলছেন এসব?
পুলিশঃএইযে দেখুন।
সালমা ফাইল নিয়ে দেখে আসলেই এই বাসা এখন মেহেরের ইভেন সব সম্পত্তি এখন মেহেরের নামে করা।সালমা বুজতেই পারছেনা এসব কিভাবে হলো।সালমার ভাবনার মাঝে কল আসে তার ফোনে।কল রিসিভ করতেই মেহের অপাশ থেকে বলে উঠে,
মেহেরঃবিকালের মধ্য বাসা থেকে চলে যাবেন।আর ভুলেও চালাকি করবেন না। বাসার চারপাশে আমার গার্ডস আছে। ইভেন বাসায় সিসিটিভি ক্যামেরাও লাগানো। সো কোনো চালাকিনা এক কাপড়ে বেরিয়ে আসবেন।বিকালের পর আপনাকে বাসায় পেলে আপনার মেয়ে জামাই যেখানে আসে সেখানেই আপনাকে দিয়ে আসবো।
বলেই কল কেটে দিলো মেহের।
আজকে কলেজ অফ।মুগ্ধ তাই বাসায় বসে আছে।বসে বসে একদম বরিং লাগছে তার কিছুই ভালো লাগছেনা।মুগ্ধ টিভি ওন করলো কিছু দেখার জন্য তখন খবরের চ্যানেলে দেখলো,
ব্রেকিং নিউজ বিশিষ্ট ব্যাবসায়ী মেহেরাব খানের ২য় স্ত্রীকে তাদের বাসা থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে।জানা যায় তিনি এতোদিন ছলনা করে মেহেরানের প্রথম পক্ষ্যের ছেলেমেয়েকে ঠকিয়ে সব অর্থ সম্পত্তি নিজের নামে করতে চেয়েছিলেন।কিন্তু মেহেরাব খানের বড় ছেলে আরিয়ান ইসলাম মেহের বাঁচিয়ে নেন তাদের সম্পত্তি আর বের করে দেন ওনাকে এই বাড়ি থেকে।
মুগ্ধ নিউজ দেখে অবাক।কি হচ্ছে এসব।কাল আরিশ আজ ছোট মা।সালমাকে ঘিরে ধরেছে প্রেসের লোকেরা কোনো মতে তাদের কে পার করে রিকশায় উঠেছেন সে।গন্তব্য সায়মার কাছে যাওয়া।
মেহের অফিসের চেয়ারে বসে নিউজ দেখছে আর হাসছে।
যেখানেই যান মিসেস খান আপনাকে আমি এতো সহজে ছাড়ছিনা।যান মেয়ের কাছে এর পরের পালা আপনার মেয়ের।
আমার মা বোনের সাথে করা অন্যায়ের শাস্তি আপনারা পাবেন।
সালমা বেগম এসেছেন সায়মার কাছে সায়মার সেম অবস্থা।আরিশের বাসা অফিস সব সিল মেরে দেওয়া হয়েছে।কেউ থাকতে পারবেনা।সায়মা দাঁড়িয়ে আছে বাসার সামনে।এখন কি করবে সে কিছুই মাথায় আসছেনা তার।আচ্ছা ধোরা পরে যাবে নাকি তারা।সাদাফ মেহের কি সব জেনে গেলো।সালমা বেগম মেয়ের কাছে এসে দেখেন মেয়েও তার মতো অসহায় হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।কোনো পথ দেখতে পাচ্ছেনা তারা।কি হচ্ছে এসব তাদের সাথে।কোথায় যাবে এখন তারা।
চলবে