তারকারাজি- (২৮)
লেখনীতে- অহনা নুযহাত চৌধুরী
ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ কথা নিয়েও যেই ছেলে ঠাট্টা-তামাশায় মেতে থাকত সেই নিশান ছেলেটা জানত যে, একদিন তাকেও নিজের হাসির ফোয়ারাকে শুকিয়ে যেতে দেখতে হবে। দেখতে হবে নিষ্প্রাণ হতে। কিন্তু সে তো এটা ভাবেনি যে, নিজের মাকে নিজের-ই সম্পর্কে মামার সাথে এমন অসন্তোষজনক পরিস্থিতিতে দেখতে হবে! মিলা রহমান ও রুবেল আহমেদের বিশ্রী, অনুপভোগ্য দৃশ্যে নিশান পারল না আর তাদের দিকে তাকিয়ে থাকতে। চোখ নামিয়ে নিল মেঝের দিকে যেখানে জীবনের করুণ সত্যিটা জ্বলজ্বল করে উঠছে এখনো। তার গলা দিয়ে নামা শুকনো ঢোকটা সুদৃশ্য হতেই রিশান আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারল না ওই দূরে। ভাইটা এমন গমগমে হয়ে গেল কেন? সে ছুটে গেল ঠিকি কিন্তু নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারল না ছেলেটি। মা? এই পৃথিবীতে মায়েরাও এমন বিশ্রী কার্যকলাপ ঘটাতে পারে? গহীন আড়ষ্টতায় নিমগ্ন রিশান তার ভাইয়ের মতো ওই ছোট শব্দটি উচ্চারণ করার মতোও ক্ষমতা পেল না। কোনো নিকৃষ্ট দৈত্য যেন এক চুমুকে গিলে ফেলেছে তাদের মস্তিষ্কের কর্মসঞ্চালন প্রক্রিয়া। গিলে ফেলেছে ঠোঁটে সারাক্ষণ লেগে থাকা রসে পরিপূর্ণ সেই হাসি। ঘরের বহিঃস্থ এক দেয়ালের সাথে পিঠ ঠেকিয়ে, থপ করে মেঝেতে বসে পড়ল রিশান। এর থেকে তো নিজের মায়ের মৃত্যু সংবাদ পাওয়াটাই উত্তম ছিল তাদের জন্য। রিশানের চোখে জল আসে। নিশানকে দেখা যায় নিজের চুল খামচে ধরতে৷ হাস্যোজ্জ্বল বন্ধুদের এই দশা দেখে সানাম আর নীলাশা নীরবে দাঁড়িয়ে থাকতে পারল না সেখানে। তারা মিলা রহমানের ঘরে উঁকি দিয়ে কোনো অসন্তোষজনক পরিস্থিতি না দেখলেও মিলা রহমান ও অপরিচিত প্রৌঢ়বয়সী পুরুষকে নিজেদের গুছিয়ে নেওয়ার হন্তদন্ত প্রস্তুতি দেখে আর কিছুই বোঝার বাকি থাকেনি তাদের। মস্তিষ্কের ক্রিয়া মুহূর্তেই দপদপিয়ে উঠে দুই বান্ধবীর। নীলাশা পারে না সেই দৃশ্যকে ভুলতে। ছিটকে সরে এসে হঠাৎই ঈশাকে লুকিয়ে ফেলে নিজের বুকে। ভরসার একটি বুক পেয়ে যখন ঈশার হুহু করে ক্রন্দনের ভয়ঙ্করী আওয়াজে ভুতুড়ে পরিস্থিতির সৃষ্টি হলো তখন বাধ্য হয়েই আরাভ সুইচবোর্ড খুঁজে নিয়ে আলো জ্বেলে দিল প্রশস্ত খাবার ঘরের; যার সম্বদ্ধ রয়েছে বাসার প্রত্যেকটি ঘর। সকলের এই আচরণ দেখে আরাভ বিষয়টি আগেই বুঝে ফেলেছে ঠিকি তবে অনিশ্চিতে কারো উপর আঙুল তোলা যায় না-কি? অতঃপর যখন ঘর থেকে মিলা রহমান ও প্রৌঢ়বয়সী রুবেলকে বেরিয়ে আসতে দেখা যায় তখন আরাভ নিজেও বেশ অপ্রস্তুত হয়। নিশানকে শোনা যায় থমথমে গলায় কঠোর আদেশ দিতে,
“ নীল, ঈশাকে নিয়ে ঈশার রুমে যা। ”
নীলাশা যাবে বলেই ঠিক করে। কিন্তু ঈশাকে সামলাতে গিয়ে কয়েক মুহূর্ত দেরি হতেই নিশান যেভাবে গর্জন করে উঠল সেখানে ভীত হরিণের মতো কেঁপে উঠতে যেন বাধ্যই হলো সে এবং ঈশা। আরাভ চোখের ইশারায় নীলাশাকে তাড়া দিল। কিশোরী মেয়েটার মনে এই খারাপ প্রভাব পড়ার আগেই তাকে সরিয়ে ফেলা হলো সেখান থেকে। সাথে নীলাশা যেতেই নীরব বাসাটা রূপ ধারণ করল রণক্ষেত্রের। বদরাগী নিশান উপস্থিত রুবেল আহমেদকে যে ছেড়ে দিবে না সেইটা জানত সকলেই। কিন্তু সেই নিশান রুবেল আহমেদকে পাশে রেখেই নিজের মায়ের গায়ে জীবনে প্রথম বারের মতো হাত তুলতে তেড়ে গেল ক্ষিপ্রগতিতে। তাকে বাঁধা দিল রিশান। কিন্তু লাভ বিশেষ হলো না। উল্টে রিশানকেই থাপ্পড় মেরে নিশান চেঁচিয়ে উঠল,
“ খবরদার আমারে আঁটকাইছিস তো! ”
রিশান নিজের ভাইয়ের সেই দুঃসহ থাপ্পড় সামলাতে পারল না। মুহূর্তেই কানে অদ্ভুত আওয়াজ হতেই ব্যথিত আর্তনাদ করে বসল ছেলেটি। সানাম দ্রুত রিশানের কাছে ছুটে চলে আর আরাভ নিশানকে সামলানোর চেষ্টা করে। কিন্তু কোনোভাবেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারে না তারা দুজন। শেষমেশ নিজের মায়ের গায়ে হাত তুলতেই দেখা যায় নিশানকে। দূর থেকে এই দৃশ্য দেখে থাকতে না পেরে ঈশা তরান্বিত এসে নিশানকে আঁকড়ে ধরে। কান্নার বেগ বাড়িয়ে সে ভাইকে থামানোর চেষ্টা করে কিন্তু লাভ হয় না কোনো। রিশানও এসে আঁটকায় নিজের ভাইকে। অতঃপর ভাইয়ের হাত থেকে মিলা রহমানকে ছাড়িয়ে নিয়ে, গর্জে উঠে রিশান,
“ নিজের হাত নোংরা করতেছিস কেন, নিশান? থাম এইবার তুই। ঈশাটা ভয় পাচ্ছে তোর আচরণ দেখে। থাম দয়া করে! ”
তখন নিশান নিজের মায়ের দিকে তাকানোটাও ঘৃণিত মনে করতে শুরু করে কিন্তু ক্ষান্ত হয় না সে। হাতের কাছে যা পায় তা নিয়েই আঘাত করতে লাগে নিজেকে। তখন মিলা রহমানকে নানান অর্থোদ্বার করতে শোনা গেলেও দুই ভাই তা কিছুতেই ভুলতে পারে না যা তারা নিজ চোখে দেখেছে। মায়ের নানান যুক্তি শুনে যখন রিশান বলল,
“ আর কত মিথ্যা কথা বলবা, মা? আমরা তো কোনোদিনও তোমার আর আঙ্কেলের সম্পর্ক নিয়ে আঙুল তুলি নাই। তুমি এইরকম একটা কাজ করার আগে নিজের ছেলে-মেয়েদের কথাটাও ভাবলা না? তুমি জানো তুমি কী করছো? ছিঃ! আজকে ঈশা না জানালে তো জানতেও পারতাম না। ”
ঠিক তখনই দ্বিতীয় বিস্ফোরণটি ঘটালেন মিলা রহমান। নিশানের বাহুডোরে ক্রন্দনরত মেয়েটির দিকে তাকিয়ে তিনি হঠাৎই নিজের ক্ষোভ ঝেড়ে বললেন,
“ শুনছিলাম এক গাছের ছাল না-কি অন্য গাছে লাগে না। কিন্তু তুই কী করলি ঈশা? যাদের সাথে রক্তের সম্পর্কই নাই তাদের প্রতি দরদ উথলে পড়ছিল তোর, তাই না? মায়ের সাথে কথা বলার প্রয়োজনটাও বোধ করলি না তুই? ”
আবারও থমথমে হয়ে গেল পরিবেশ। এই বিস্ফোরণে উপস্থিত সকলের মাথা কেমন ঝিমঝিমিয়ে উঠল। ‘রক্তের সম্পর্ক নাই’ বলতে কী বোঝাতে চাইলেন তিনি? নিশানের হাতের বাঁধন আলগা হলো এই কথা শুনে। ঈশা শক্ত পায়ে দাঁড়িয়ে কষ্টে কণ্টকপূর্ণ হয়ে আসা কণ্ঠে ডেকে উঠল, “ মা? ”
মিলা রহমান তেজস্বী গলায় প্রশ্ন করলেন তার দুই ছেলেকে,
“ সারাদিন যে টইটই করে ঘোরার টাকা পাস তা কই থেকে আসে শুনি? তোদের বাপ কিছু রেখে গেছিল তোদের জন্যে? সব কিছু দিছে ঈশার বাবা। আর আজকে তোরা তার উপর-ই প্রশ্ন তুলতেছিস? প্রশ্ন তোলার আগে একবার আমার কথাটাও ভাবলি না যে, কোন পরিস্থিতিতে আমার তোদের মানুষ করতে হইছে? ”
মায়ের উঁচু কণ্ঠ সহ্য হলো না রিশানের। সে তরান্বিত এগিয়ে গিয়ে মিলা রহমানের গলা চেপে ধরল। দাঁতে দাঁত লাগিয়ে শুধু মাত্র একটা প্রশ্নই বারবার করে গেল যে, ঈশার বাবা কে। অতঃপর যখন মিলা রহমান নিজের বোকামোতে নিজেই অসন্তুষ্ট হয়ে স্বীকার করলেন যে, রুবেল আহমেদ ঈশার বাবা তখন নিশান কেন! দুই ভাইকেই আর একা সামলাতে প্রচণ্ড বেগ পেতে হলো আরাভকে। দুজন মিলে রুবেল আহমেদ ও মিলা রহমানকে ছিঁড়ে খাবে বলেই রাগ প্রকাশ করে বসল। রিশান হুঙ্কার তুলে বলে উঠল,
“ তোর কাছে কোনোদিন এমন কিছু চাইছিলাম যা তুই দিতে পারবি না? কোনোদিন কোনো প্রেশার ক্রিয়েট করছিলাম তোর উপর? তাও তোর কীসের এত প্রয়োজন হলো ওই লোকের সাথে… ছিঃ মা ছিঃ! ”
নিশান থামল। নিজের পশুসুলভ রাগকে সে কী-করে নিয়ন্ত্রণ করল তা বাকিদের জানা নেই। তবে নিশানকে দেখা গেল নিজের ভাইকে থামিয়ে এটা বলতে,
“ তুই বুঝতে পারতেছিস যে, কেন মানুষ বারবার বলতো আমাদের বাবা সুইসাইড করছে? আমাদেরকে মানুষ করাটা অজুহাত কেবল। এদের এই সম্পর্ক তো বাবা জীবিত থাকাকালীন সময় থেকেই আছে। ”
অতঃপর ঈশার দিকে আঙুল তুলে বলল,
“ এদের তিনজনের জন্য আমাদের বাবা মরে গেছে রিশান। এই মহিলাকে তো আমি বাঁচতেই দিব না আর। ”
এই কথার ইতি টানার পরপরই নিশানকে দেখা গেল রান্নাঘরের দিকে ক্ষিপ্ত অশ্বের ন্যায় ছুটে গিয়ে, রান্নার কাজে ব্যবহৃত এক ধরণের ছুড়ি হাতে ছুটে আসতে। এই দৃশ্যটি বোধহয় উপস্থিত সকলের কাছেই ছিল অবিস্মরণীয়! একদিক থেকে রিশান নিজের ভাইকে ঝাপটে ধরে তো অন্যদিকে আরাভ চড়-চাপড়ের মাধ্যমে কেঁড়ে নেয় সেই অস্ত্র। তাদের এই অবস্থা দেখে নীলাশাও ঈশার মতো হেঁচকি তুলে কাঁদতে লাগল। কেন এমন মুহূর্ত আসে জীবনে যা গিলে ফেলা অত্যন্ত কষ্টের? কেনই-বা প্রকাশ হয় সেই সকল সত্যি যা অন্তরে ধারণ করা হয় অবিশ্বাস্য রূপে? নীলাশা ছুটে যায় নিশানের কাছে। নিশানের উত্তপ্ত, রক্তিম ও ঘামে জবজবে মুখশ্রী দুই হাতের তলায় আকঁড়ে ধরে বলে,
“ নিশান? ভাইয়া আমার, এমন চেঁচামেচি করিস না রাত-বিরেতে। মানুষ জমে যাবে যে এইবার! আর মানুষকে জানতে দিস না ভাই। এখানকার কথা এই আমাদের মাঝেই থাক। এমন কিছু করে নিজের জীবনটা শেষ করিস না তুই। একটু শোন না আমার কথাটা! ”
নীলাশা ফুঁপিয়ে উঠলেও নিশান শান্ত হলো না। নিজের জন্মদায়িনী মায়ের উপর জেঁকে বসা রাগগুলো নিজের উপরেই ঝাড়তে লাগল সে। নিশানের এরূপ পাগলামো সামলাতেই আরও ঘণ্টাখানেক অতিক্রম হলো। অতঃপর ঢাকা শহরের রাত্রিও যখন নিষ্ক্রিয় হলো তখন নিষ্ক্রিয়, নিরুত্তেজ হতে দেখা গেল নিশানদের দুই ভাইকে। মেঝের উপর আত্মবিস্মৃতিতে বসে থেকেই হঠাৎ রিশান উঠে ব্যাগপত্র নিয়ে, নিজেদের শোবার ঘরে চলে গেল। আধঘণ্টার মতো সময় পার করে তিনটে লাগেজ, নিজেদের দুটো ব্যাকপ্যাক এবং ভার্সিটিতে বহন করার নিমিত্তে নির্ধারিত দুজনার কাঁধের ব্যাগ দুটি নিয়ে এসে রাখল ঠিক নিশানের সামনে৷ অতঃপর মিলা রহমানের উদ্দেশ্যে বলল,
“ আপনার আর আপনার প্রেমিকের দেওয়া কিছুই নিই নাই। আর যাইহোক, আমাদের বাবা কখনো অন্যায়কে সহ্য করতে শিখায় নাই। আমরা যাওয়ার পর নিজের প্রেমিককে নিয়ে ভালোভাবেই পরকীয়াটা চালিয়ে যায়েন। এর থেকে ভালো কিছু আর আশা করি না আপনার থেকে। ”
রিশানের মনে হলো এর থেকেও নোংরা, অশ্লীল, শ্রুতিকটু কিছু কথা শোনাতে। কিন্তু সে পারল না। এতো মানুষের সামনে সেই জন্মদায়িনীকে বিশ্রীরকম গালি-গালাজ করে, নিজেকে ছোট করতে চাইলো না সে। নিষ্ক্রিয় স্নায়ুতন্ত্রের ভাইটিকে দুই হাতে দাঁড় করানোর চেষ্টা করল রিশান৷ কিন্তু না, ভাইটা সজাগ থাকলেও কোনো অনুভূতিই প্রকাশ করছে না। যেন এই দেহটা সবরকম অনুভূতি প্রকাশ করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে। কাষ্ঠ হয়ে গিয়েছে মানুষটা। তবুও রিশান হাল ছাড়ল না। নানান কিছু বুঝিয়ে-সুঝিয়ে, বাসা থেকে চিরতরে বিদায় নেওয়ার কথা বলতেই নিশান উঠে দাঁড়িয়ে কেমন পাগলের মতো উদাসীন সকল কথা বলতে লাগল। সকলেই শুনতে পেল সেই বিড়বিড়িয়ে বলা কথার আওয়াজ। কিন্তু ছেলেটা আসলে কী বলছে তা স্পষ্ট হলো না কারো কাছেই। সেই সময় মিলা রহমান পায়ে পড়লেন দুই ছেলের৷ লাভ বিশেষ পাননি তিনি বরং নিশান আবারও নিজের মায়ের গায়ে হাত তুলতে গেল। অবশ্য সকলে মিলে থামিয়ে-ও দিয়েছিল তাকে। অতঃপর রিশান ঠোঁটে এলোমেলো বুলি এঁটে বলল,
“ আরাভ ভাই, এই জঘন্য বাসায় দাঁড়িয়ে থাকবা না-কি আরও? ওদের নিয়ে চলে আসো প্লিজ। আমার বন্ধুদের এখানে দেখতে আর একটুও ভালো লাগতেছে না আমার। ”
কথাটা উদাসীনতায় বললেও নিশানের রাগটা যেন মাথাচাড়া দিয়ে জেগে উঠল পুনরায়। সে রাগে ভস্ম হয়ে নিজেদের ব্যাগগুলো ছুঁড়ে মারতে লাগল দরজার বাহিরে। অতঃপর নিজে রিশানের হাত ধরে তরান্বিত যেতে নিতেই ওপাশ থেকে ঈশা এসে রিশানের হাত চেপে ধরল। এত কিছু জানার পরও তাকে কাঁদতে কাঁদতে বলতে শোনা গেল,
“ ভাইয়া, আমাকে রেখে যায়ো না ভাইয়া। আমিও যাব তোমাদের সাথে। ”
রিশান মনে হয় ঈশার সেই ক্রন্দনে খসখসে হয়ে আসা কণ্ঠে একটু দ্রবীভূত হলো৷ কিন্তু রগচটা সেই নিশান এক ঝটকায় আদরের বোনটির হাত সরিয়ে দিয়ে তীব্র ভর্ৎসনার সাথে বলল,
“ চলে আয় রিশান। অবৈধ সন্তানরে নিয়ে ভাবার জন্য তার বাপ-মা আছে। নয়তো পরে দেখবি আঙুলটা আমাদের আর আমাদের বাবার দিকেই উঠবে। চলে আয় ফাস্ট! ”
রিশানের হাত ধরে এক প্রকার টেনেই নিয়ে গেল নিশান। ব্যাগপত্র নিয়ে সিঁড়ি ভেঙে নামতে লাগল হুড়মুড়িয়ে। এত রাতে লিফট চালু থাকে না এই দালানে। তাই তাদের হন্তদন্ত হয়ে ছুটে যাওয়া দেখেই নীলাশা তাড়া দেয় আরাভকে,
“ ওদের একা ছাড়া যাবে না। না জানি কোথায় যাচ্ছে! প্লিজ, আপনি ওদের সাথে যান। আপনিই সামলাতে পারবেন ওদের। ”
আরাভ রাজি হয়না তাদের দুজনকে একসাথে রেখে যেতে। তারা তিনজন এক সাথেই বেরিয়ে যাবে বলে ঠিক করে। কিন্তু ঈশাকে কী করবে? সে তো জেদ ধরেছে এমন বাসায় আর অবস্থান না-করার। মায়ের সাথে তো আর এক মুহূর্তও না! তবুও মেয়েটিকে নিয়ে আসার সাহস হলো না বাকি তিনজনের। তারা জলদি নিচে নেমে গেলেও নিশানদের দেখা গেল তড়বড় করে হেঁটে চলতে ঘন শিশিরের গা ঘেঁষে। যেকোনো সময়ে ওই শিশিরেই অদৃশ্য হতে পারে তারা দুই ভাই। নীলাশা এবং সানামের তাড়া পেয়ে আরাভ দৌড় লাগাল সেদিকে। সে জানে যে, হাজারবার ডাকলেও নিশানরা থামবে না। অবশ্য এমন পরিস্থিতিতে তাদের শান্ত থাকাটা স্বাভাবিক বলেও মনে করছে না আরাভ। পিচঢালা রাস্তার ঘর্ষণের আওয়াজে নিদারুণ যন্ত্রণার চিহ্ন রেখে যে যুবক দুজন ছুটে পালাচ্ছে সব দুঃস্বপ্ন ভেবে নতুন ভোর দেখার আশা নিয়ে, ঠিক সেই পানেই দৌড়ে চলেছে আরাভ। তাকে যে ছুটতেই হবে ছেলে দুটোকে সামলে রাখতে! তবে না, দায়িত্ববোধ থেকে না; বরং দীর্ঘদিনের ভ্রাতৃত্ববোধে পুনরায় প্রাণ আনা সেই হাস্যোজ্জ্বল দুজনের দুঃসময়েও তাদের পাশে থাকার এক মজবুত খুঁটি হিসেবেই ছুটে যাচ্ছে আরাভ। অবশ্য আরাভরা এই ক’জন ছাড়া আর কোন মানুষই-বা আছে তাদের পাশে?
#চলবে ইন শা আল্লাহ!