আগুনের_তৃষ্ণা,Part..26,27

0
1467

আগুনের_তৃষ্ণা,Part..26,27
Maishara_Jahan
Part..26

মারু,,,,,তুই এতো ভুতের গল্প পাস কোথায়।
রিয়ান,,,,,,, ভুত এফ এম এ।
প্রহর,,,,, শুরু করা যাক।

অয়ন,,,,,,ফাস্টে তাহলে আমি শুরু করি।
রিয়ান একটু ভাব নিয়ে বলে,,, আমার মন অনেক বড়ো যাও ফাস্টে তোমাকে সুযোগ দিলাম।

অয়ন,,,হুমম থ্যাংকস,,, আচ্ছা শুনো সবাই, ঐ দিন রাত ১ টা বেঝেছিলো ছিলো, আমার কাজ করতে করতে লেইট হয়ে যায়। আমি যখন ফিরছিলাম তখন হসপিটালের একটা রুম থেকে অদ্ভুত অদ্ভুত আওয়াজ আসছিলো। আমি চেক করতে গেলাম কিসের আওয়াজ এটা দেখার জন্য।

যে রুমটাতে আওয়াজ আসছিলো আমি সে রুমের দরজা খুলে দেখি ঐ রুমটা মৃত লাশ রাখার জায়গা। সেখানে অনেক লাশ রাখা ছিলো। আওয়াজটা আসছিলো কোথা থেকে এটা দেখার জন্য আমি রুমের ভিতরে গিয়ে চেক করতে থাকি।

হঠাৎ করেই আমার কাঁধে কেও হাত রাখে আমি পিছনে ফিরতেই দেখি,,

অয়ন আর কিছু বলার আগেই রিয়ান জোরে ভয়ানক আওয়াজ বের করে চিল্লিয়ে উঠে,আর সবাই চিৎকার করে উঠে। আমি অয়নকে জরিয়ে ধরি, আলোও সায়নের হাত জোরে শক্ত করে ধরে।

সবার এমন ভাবে চিৎকার শুনে রিয়ান নিজেও ভয় পেয়ে যায়। পরে আবার জোরে জোরে হাসতে থাকে। প্রহর রিয়ানে মাথায় মেরে বলে,,,,,,, এমন করে হঠাৎ চিৎকার করার কি হলো।

আমি রাগে বললাম,,,, তুই সব সময় এমন করিস, গল্পের মাঝখানে এভাবে চিৎকার করে উঠিস।

রিয়ান,,,,,, আরে এটাই তো ভুতের গল্প বলার আসল মজা।

প্রহর আলোর দিকে তাকিয়ে বলে,,,,,আলো এখনো কি ভয় পেয়ে আছো।

আলো প্রহরের কথা শুনে সায়নকে ছেড়ে দিয়ে একটু নড়েচড়ে বসে। সবাই ওদের দেখে মুচকি হাসছে। সায়ন একটু লজ্জা মাখানো হেঁসে নিজের মাথা চুলকাচ্ছে আর বলছে,,,অয়ন ভাই পড়ে কি হলো।

অয়ন,,,,, আমি দেখতে পেলাম আমার পিছনে একটা লোক দাঁড়ানো, সাদা সার্ট পাইজামা পড়া। আমি তাকে দেখে বললাম,,,, কে আপনি।

লোকটি সোজা ভাবে উত্তর দিলো,,,, আমি এই রুম দেখা শুনা করি।

,,,ওহহ ওয়ার্ডবয়,, আচ্ছা একটু চেক করোতো কিসের আওয়াজ আসছে, আমি আসছি। আপনার নামটা কি।

,,,,,,দুলাল
,,,,ওহহ আচ্ছা।
বলে আমি চলে যায় বাসায়।

রিয়ান,,,এটা কোনো ভুতের গল্প হলো।

মারু,,,,,এটা তোহ নরমাল ঘটনা।

সায়ন,,,,, দূররর একটু ভয় লাগলো না।

অয়ন,,,,,পুরোটা আগে শুনে নে,, আমি পরের দিন সকালে গিয়ে জিজ্ঞেস করি দুলাল নামের ওয়ার্ডবয় কোথায়। তখন আমি জানতে পারি এই নামের কেও এই হসপিটালে কাজ করে না।

আলো,,,,,কিহহ আমাদের হসপিটালে এমন জ্বীন-ভূত আছে আগে জানতাম না। এখন তো আমার ভয় লাগছে, রাতে কতো বার গিয়েছি মর্গে।

সায়ন চোখ ছোট ছোট করে অয়নের দিকে বলে তাকিয়ে ,,,,,ভাই ঐখানে এসব আজেবাজে জিনিস আছে এটা জেনেও আমাকে মর্গের পাশের রুমটাতে ভর্তি করিয়েছিলে।

প্রহর,,,,,, রিয়ান হসপিটালটা তোমার বাসার পাশেই তোহ তাই না।

রিয়ান একটা ডোগ গিলে বলে,,,, হুমম তো কি হয়েছে। এসব দেখে ভয় পাই নাকি। আচ্ছা এখন আমি গল্প বলি।

রিয়ান ভয়ানক গলায় কিছু ভুতের গল্প শুনায়। রিয়ানের গল্প শুনে সবাই একটু একটু ভয় তোহ অবশ্যই পেয়েছে। রিয়ানের বলা শেষ হলে প্রহর বলে,,,,দূরর এসব গল্পে হয়, এটা তোহ আমার কোনো ভুতের গল্পের মতো লাগলো। বাস্তবে এমন হয় নাকি।

রিয়ান,,,,,, এই জন্য লেখকদের কিছু শুনাইতে নেই। ওদের সব গল্পই মনে হয়।

প্রহর,,,, আচ্ছা এখন আমি শুনায় তাহলে। কিছুদিন আগের ঘটনা, আমি গাড়ি নিয় যাচ্ছিলাম।

মারু,,,,,এখন আপনিও এমন অদ্ভুত কন্ঠে বলবেন।

প্রহর,,,,,এমন কন্ঠে বললে ভুতের গল্প বলছি এমন একটা ফিল আসে। আচ্ছা শুনো,, গাড়ি নিয়ে যাচ্ছিলাম, ঐ যে রিয়ানদের বাসায় যাওয়ার সময় একটা ব্রিজ পড়ে না সামনে। ঐদিক দিয়ে যাচ্ছিলাম। সবসময় তো ঐ ব্রিজ একদম ফাঁকা থাকে।

আর ঐ রাতেও ব্রিজ একদম ফাঁকা ছিলো, এমন অন্ধকার ছিলো। রাস্তায় লাইটের আলোতে হালকা দেখা যাচ্ছিলো। আমার গাড়ি নিয়ে যাচ্ছি হঠাৎ একটা সাদা কাপড় পড়া লোক দাঁড়িয়ে ছিলো সামনে। ঐটা ছেলে ছিলো নাকি মেয়ে বলতে পারি না।

অদ্ভুত চেহেরা ছিলো, চুল গুলো লম্বা অগোছালো, চোখ গুলো লাল টুক টুকে, মুখটা কেমন পুড়া ঝলসানো ছিলো। পা দেখা যাচ্ছিলো না।

রিয়ান,,,,দূররর কেমন দেখতে ছিলো এতো ডিটেলে বলা লাগে।

প্রহর,,,,আমি লেখক তো তাই একদম বর্ণনা সহ বলি।

রিয়ান,,,বর্ণনা বলা লাগবে না৷ পড়ে কি হয়ছে সেটা বলো।

প্রহর,,,,,,হঠাৎ করেই সেই অদ্ভুত কিছু একটা আমার গাড়ির দিকে জোরে দৌড়ে আসতে লাগলো। আমি স্প্রিটে গাড়ি চালিয়ে যেতে থাকি ঐটা আমার গাড়ির পিছনে পিছনে দৌড়াচ্ছিলো, মনে হচ্ছিল এখনি ধরে ফেলবে, সেটা হঠাৎ করেই আমার গাড়ির পিছন থেকে সামনে এসে পড়ে আর আমি তাড়াতাড়ি ব্রেক করি।

ঐটা আমার দিকে যেভাবে দেখছিলো মনে হচ্ছিল এখনি মেরে ফেলবে। আমি তাড়াতাড়ি সূরা জ্বীন পড়া শুরু করি, পরে ঐটা চলে যায় আর আমি তাড়াতাড়ি চলে যায়। এই সূরাটা না পারলে আজ হয়তো আমি এখানে থাকতাম না।

রিয়ান ভয়ে জোর করে হেঁসে বলে,,,,, তুমি গল্প বানিয়ে বলছো তাই না।

,,,,আমি গল্প বানিয়ে কেনো বলবো, এটা সত্যি ঘটনা।

রিয়ান,,,,দূরর মিয়া কিসের সত্যি ঘটনা, আমার প্রতিদিন ঐ রাস্তা দিয়ে যাওয়া লাগে।

প্রহর,,,,, তুমি কোনো দিন রাত ১২/১ টার দিকে গেছো।

,,,না তা যায়নি কখনো, সব সময় মানুষ তোহ ছিলো কিছু।

অয়ন,,,,,,তাহলে যেদিন থাকবে না, ঐদিন তোমার ঐটাকে দেখার সুযোগ হতে পারে।

সায়ন,,,,,প্রহর ভাই আর অয়ন ভাই তোমাদের সাথে এমন হয়েছে কই আমাকে তোহ বলোনি কোনো দিন।

প্রহর একটু ইশারা দিয়ে বলে,,,, আরে এসব কি বলার মতো কথা।

সায়ন প্রহরের মতলব বুঝে বলে,,, হুমম তাও কথা।

আমি অয়নের দিকে তাকিয়ে তার হাত ধরে বলি,,,তুমি আর ঐ মর্গে যাবে না, আর বেশি রাত পর্যন্ত ঐ হসপিটালে থাকার দরকার নেয়। শুনেছি ওদের নজর যার উপর এক বার পরে যায়, তাদের পিছা সহজে তারা ছাড়ে না।

অয়ন আমার গাল টিপে দিয়ে বলে,,,, ওরে আমার টুনটুনি আমার কিছু হবে না, আমি সাবধানে থাকবো ঠিক আছে।

,,,হুমম,,,আর প্রহর আপনিও সাবধানে থাকবেন কিন্তু।

প্রহর,,,,, হুমম থাকবো।

সায়ন আলোর কানের কাছে গিয়ে বলে,,,,,, তুমিও সাবধানে থাকবে কিন্তু, কারন জ্বীনরা সুন্দরী মেয়েদের পিছনে বেশি পড়ে।

আলো ভয়ে সায়নের দিকে তাকিয়ে শুধু হুমমম বলে। সবাই আরো কিছু ক্ষন বসে গল্প করতে থাকে। সায়ন হালকা হালকা ঝিমিয়ে পড়ছি। মেডিসিনের কারনে এমন হচ্ছে। আলো সায়নকে ধরে বলে,,,, তোমার আর বসে থাকা লাগবে না, চলো তোমাকে রুমে শুয়িয়ে দিয়ে আসি।

সায়ন,,, আরো কিছু ক্ষন থাকি না।

অয়ন,,,সায়ন চুপচাপ নিজের রুমে যা।

সায়ন আর কিছু না বলে উঠে দাঁড়িয়ে মন খারাপ করে তাকিয়ে থাকে। আলো সায়নের হাত ধরে বলে,,,এভাবে তাকিয়ে কোনো লাভ নেয় চলো।

বলে সায়নে ধরে নিয়ে যায়। রিয়ান ভাবছে আর কি গল্প বলা যায়। অয়ন আর প্রহর ইশারা করে, মারুকে চুপ থাকতে বলে, মারুর হাত ধরে দৌড়ে নিচে চলে যায়, সাথে প্রহর ও দৌড় দেয়। রিয়ান পিছনে তাকিয়ে তাদের দৌড়ে যেতে দেখলে, সেও ভয়ে আশেপাশে তাকিয়ে চিৎকার করে দৌড় দেয়।

অয়ন প্রহর তাদের রুমের সামনে এসে দাঁড়ায়। রিয়ান ও দৌড়ে এসে তাদের সাথে দাঁড়ায়, আর ভয়ে হাঁপিয়ে হাঁপিয়ে বলে,,,, এভাবে দৌড় দিলে কেনো।

অয়ন স্বাভাবিক ভাব করে বলে,,,,, কোথায় আমরা দৌড় দিলাম, আমরা তো স্বাভাবিক ভাবে হেঁটে আসলাম। তাই না প্রহর।

প্রহর,,,হুমম তাই তো, এক দম স্বাভাবিক ভাবে হেঁটে এসেছি।

রিয়ান,,,,হুমম সেটা তো আমি দেখেছিই। এখনি আমার জান বেরিয়ে যেতো।

প্রহর,,,,,, হুমমম,,, আচ্ছা আর গল্প করবো না,, রিয়ান তুমি বাসায় যাবে না।

রিয়ান,,,,হুমম তাহলে আমি এখনি বেরিয়ে যায়, রাত তো আর কম হলো না।

অয়ন আর প্রহর দুদিক দিয়ে রিয়ানের কাঁধে হাত রাখে, অয়ন আগে বলে,,, সাবধানে যেয়ো, সামনেই তো আবার হসপিটাল।

প্রহর,,,,, আর রাস্তাটা আল্লাহ নাম নিয়ে পাড় হয়ো, এখন তোহ মনে হয়না মানুষ আছে।

রিয়ান দুজনের হাত সরিয়ে বলে,,,, দূরর এগুলো বলার কোনো দরকার ছিলো। এখন আমি যাবো কিভাবে। মারু কিছু বল, আমি আজ যাবো না। এমনি আমি হেন্সাম তার উপর আমি তো আবার সূরা জ্বীন ও পারি না।

প্রহর আর অয়ন দুজন দুজনকে দেখে হেঁসে বলে,,,, ঠিক আছে তাহলে তুমি ঐ রুমটাতে শুয়ে পড়ো। কাল রাতে যেয়ো।

রিয়ান,,,হুমম ঠিক আছে,আমি গিয়ে শুয়ে পড়লাম।

,,,হুমম

সবাই আমরা সবার রুমে যায়।

আলো সায়নকে শুয়িয়ে দিয়ে একটু ভয়ে বলছে,, আমি এখন আসি।

সায়ন উঠে বসে বলে,,, এতো রাতে কিভাবে যাবে,, চলো আমি তোমাকে দিয়ে আসছি।

আলো,,,না লাগবে না, তুমি তো চোখি ঠিক মতো খুলতে পারছো না, তাছাড়া আমি এর আগেও অনেক রাতে রাস্তায় চলাচল করেছি।

সায়ন,,,, হুমম কিন্তু আজ ভয় পাচ্ছো। এক কাজ করো তুমি আজ এখানে থেকে যাও,, আমার পাশের রুমটা খালি আছে, আর পরিষ্কার ও। তুমি সেখানে থেকে যাও।

আলো,,,, না না আমি ঠিক মেনেজ করে নিতে পারবো।

আমি এসে দরজায় টুকা দিয়ে বললাম আসতে পারি।সায়ন তাকিয়ে বলে,,,ভাবী আসো।

আমি এসে বলি,,,,, আলো তোমাকে আজ যেতে হবে না, পাশের রুমটাতে থেকে যাও, আর কিছু, লাগলে আমাকে জানাবে।

সায়ন,,,,, ভাবী আমিও এটাই বলছিলাম।

আমি মুচকি হেসে বলি,,,তাই নাকি হুমম।

আলো,,,, ভাবী আমি চলে যেতে পারবো।

,,,এতো রাতে যাওয়ার কোনো দরকার নেয়। চলো রুমে ঘুমাবে।

আলো আর না করলো না, সায়নকে বিদায় জানিয়ে আলোকে তার রুমে দিয়ে আমি আমার রুমে চলে গেলাম। আমি রুমে যেতেই অয়ন আমাকে কোলে উঠিয়ে কয়েকটা ঘুরান দেয়। আমি অয়নকে শক্ত করে ধরে বলি,,,, আরে আরে, কি করছো।

অয়ন আমাকে বিছানায় শুয়ে দিয়ে বলে,,,তোমাকে না আমি আমার বেবিকে কোলে উঠিয়েছি।

,,,আচ্ছা,,,বদমাইস।

অয়ন আমার দিকে অন্য রকম ভাবে তাকিয়ে, আমার দিকে এগোতে থাকে। আমি আমার একটা আঙ্গুল দিয়ে অয়নের কপালে ধরে উল্টো দিকে ঢেলে সরিয়ে দিয়ে বলি,,,,,, কি হচ্ছে এসব হুমম।

অয়ন আমার হাত ধরে বলে,,,,, হয়নি তো কিছুই এখন হবে।

বলে আমার কাছে এসে আমার দুহাত বিছানার সাথে লাগিয়ে কিস করতে থাকে।
,,,,,
প্রহর লুকিয়ে গিয়ে রিয়ান এর দরজার সাইডে একটা ছোট বক্স রেখে দেয়, যেখন থেকে কিছু ক্ষন পর পর ভয়ানক আওয়াজ বের হবে। এরা লুকিয়ে রেখে দিয়ে প্রহর চলে যায়।

রিয়ান ঘুমানোর চেষ্টা করছে, কিন্তু এমনি তার ভয়ে ঘুম আসছে না। তার মধ্যে এই আওয়াজ শুনে সে লাফ দিয়ে উঠে বসে। আর কে কে করতে থাকে। কোনো জবাব না পেয়ে আর এমন আওয়াজ শুনে ভয়ে প্রায় রিয়ানের খারাপ অবস্থা।

কিছু ক্ষন পরে প্রহরের দরহা কে বার বার ধাক্কাচ্ছে। প্রহর দরজা খুলতেই রিয়ান তাড়াতাড়ি তার রুমে ডুকে গিয়ে সোজা তার বিছানায় শুয়ে পড়ে। প্রহর কিছু বুঝে উঠার আগেই রিয়ান এসে শুয়ে পড়ে। প্রহর দরজায় দাঁড়িয়ে আছে।

চলবে,,,,,,,,

ভালো লাগলে লাইক, কমেন্ট করতে ভুলবেন না ধন্যবাদ।

#আগুনের_তৃষ্ণা
#Maishara_Jahan
Part………..27

কিছু ক্ষন পরে প্রহরের দরহা কে বার বার ধাক্কাচ্ছে। প্রহর দরজা খুলতেই রিয়ান তাড়াতাড়ি তার রুমে ডুকে গিয়ে সোজা তার বিছানায় শুয়ে পড়ে। প্রহর কিছু বুঝে উঠার আগেই রিয়ান এসে শুয়ে পড়ে। প্রহর দরজায় দাঁড়িয়ে আছে।

প্রহর বিছানার সামনে এসে রিয়ানের দিকে তাকিয়ে বলে,,,,, এই তুমি এখানে কেনো আর এসে সোজা আমার বেডে শুয়ে পড়েছো কেনো। তোমার রুমে কি হয়েছে।

রিয়ান উঠে চাদর প্যাঁচিয়ে গুটিশুটি হয়ে বসে শুধু মুখটা বের করে কাপাঁ কাপাঁ কন্ঠে বলে,,,, ঐ ঐ রু রুমে কেও আছে। ভয়ানক হাসির আওয়াজ আসছে।

প্রহর,,, আরে দূরর এসব কিছু হয় না, যাও তোমার রুমে যাও। আর আমাকে ঘুমাতে দাও।

সায়ন,,,,, আরে না সত্যি আছে, আমি নিজের কানে শুনেছি। আমি তো আজকে এখানেই ঘুমাবো, হাজার চেষ্টা করেও আমাকে এখান থেকে নড়াতে পারবে না।

প্রহর,,,অফফ আচ্ছা শুনো, ভুতের হাসি টাসি কিছু ছিলো না, আমি তোমার দরজার সামনে মিনি বক্স রেখে আসছি, আর এই দেখো তার রিমোট। এখন আমি বন্ধ করে দিচ্ছি, যাও এবার কোনো আওয়াজ আসবে না।

রিয়ান মুখটা মলিন করে দুঃখের ভাব নিয়ে বলে,,,, আমাকে ভয় দেখানোর জন্য এটা করার কি দরকার ছিলো। যদি আমি ভয়ে হার্ট অ্যাটাক করতাম তখন।

প্রহর,,,,, আরে জাস্ট মজা করার জন্য করেছি, আর কিছু না। এখন পিল্জ গিয়ে শুয়ে পড়ো, আমার অনেক ঘুম পাচ্ছে।

রিয়ান,,,,, না আমি কোথাও যাবো না, আমি এখানেই থাকবো, আমার ভয় করছে।

প্রহর একটু জোরে বলে,,আরে আমি বলেই তো দিলাম, ঐ হাসিটা মিনি বক্সের ছিলো।

,,,,, না তাও আমার এখন ভয় করছে, আমি তোমার সাথে এখানেই ঘুমাবো।

,,,,, রিয়ান নিজের রুমে যাও, আমি নিজের বেড কারো সাথে সিয়ার করতে পারিনা।

,,,, তোহ বিয়ে করে কি বউকে আলাদা বেডে রাখবে, এখন থেকে অভ্যাস করে নাও।

,,,,লাগবে না আমার অভ্যাস করা, উঠো

বলে প্রহর রিয়ানের চাদর ধরে টানতে থাকে, রিয়ান চাদর শক্ত করে ধরে বিছানার সাথে লেগে আছে। প্রহর কিছু ক্ষন টানা টানি করে হয়রান হয়ে বলে,,,,,ঠিক আছে থাকো আজকের জন্য এখানে, বাট আমার গায়ের সাথে মিশবে না।

রিয়ান চাদর থেকে একটু মুখ বের করে বলে,,,, আমার ছেলেদের সাথে মিশে ঘুমানোর কোনো ইচ্ছে ও নেয়।

বলে গুটিশুটি মেরে বিছানার এক কোনায় শুয়ে পড়ে, প্রহর ও বিরক্তিকর একটা নিঃস্বাস ফেলে এক সাইডে শুয়ে পড়ে।
,,,,,,
সকালে সায়ন ঘুম থেকে উঠে আলোর যে রুমে আছে তার দরজায় নক করে। দুবার নক করে দাঁড়িয়ে থাকে। ভাবছে আরেক বার নক করবে কি না। ভাবতে ভাবতে যেতে নেয়। তখনি আলো দরজা খুলে, দরজা খুলার আওয়াজ পেয়ে সায়ন পিছনে আবার মুরে তাকায়।

দেখে আলো এখনো হালকা ঘুমে আছে, চুল গুলো এলোমেলো, চোখ বন্ধ করে আছে নাকি খুলে আছে বুঝা যাচ্ছে না। আলো ঘুম ঘুম চোখে বলে,,,,, মা আরেকটু ঘুমায়,, না,, আগে বলো কয়টা বাঝে, হসপিটালে সঠিক সময়ে যেতে হবে তোহ।

সায়ন মুচকি হেঁসে আলোর দিকে তাকিয়ে আছে,কিছু বলছে না। আলো এবার একটু চোখ খুলে তাকিয়ে সায়নকে দেখে ঘুম ঘুম চোখে বলে,,,, সায়ন তুমি এতো সকালে আমার বাসায়,,সব ঠিক আছে তো, তোমার কোনো সমস্যা হয়নি তোহ।

সায়ন এবার শব্দ করে হেঁসে দিয়ে বলে,,, না আমার কিছু হয়নি,, তুমি এক কাজ করো আরেকটু ঘুমিয়ে তারপরে উঠো। রাতে ঘুমাতে লেইট হয়েছে তো তাই ঘুমে ছাড়ছে না মনে হয় তাই না।

আলো এবার ভালো করে তাকিয়ে বলে,,, আমার সব মনে পড়েছে, সরি সকালে উঠলে একটু এমন হয়। আমি ফ্রেশ হয়ে নিচে আসছি।

,,,তুমি আরেকটু ঘুমিয়ে নাও।

,,,,, না আমার ঘুম ভেঙে গেছে, আপনি নিচে যান আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।

,,,,হুমম ওকে।
,,,,
কিছু ক্ষন পরে আলো ফ্রেশ হয়ে নিচে যায়, গিয়ে দেখে সবাই বসে আছে, বসে বসে এমনি কথা বলছে। আলো গিয়ে সবাইকে গুড মর্নিং বলে। সায়ন ইশারা দিয়ে আলোকে তার পাশে বসতে বলে। আলো গিয়ে সেখানে বসে।

রিয়ান কফি খেতে খেতে বলে,,,,, এটা তোমরা আমার সাথে ঠিক করো নাই, কেও কাওকে এমন ভাবে ভয় দেখায়৷

আমি এসে বলি,,,কি করেছে।

রিয়ান,,,,আরে যানস না, আমার দরজার সামনে মিনি বক্সে ভয়ানক সব আওয়াজ বের করছিলো।

সায়ন,,,,, শুকর করো আমি অসুস্থ তাই, আমি সুস্থ থাকলে তো ভুতের মতো ড্রেস পড়ে ভয় দেখাতাম।

অয়ন,,, আমিও তাই ভেবেছিলাম, কিন্তু কাল আমার মুডটা একটু অন্য রকম ছিলো তাই ছেড়ে দিলাম।

প্রহর,,,, অন্য রকম বলতে।

অয়ন,,,,, আরে মানে অনেক ঘুম পাচ্ছিলো তাই।

রিয়ান,,,,, বাহহ সবাই এখন বসে চিন্তা করছে কিভাবে আমাকে ভয় দেখালে ভালো হতো, তাই না।

মারু,,,সবাই আমার বেস্ট ফ্রেন্ডের পিছনে কেনো পড়ে আছো। আচ্ছা রিয়ান তুই ভয় পেয়েছিলি কেমন হুম।

রিয়ান একটু ভাব নিয়ে বলে,,,,আরে দূররর ভয় কেন পামু, বেশি ভয় পাইনি।

প্রহর,,,, হুমম শুধু ভয়ে আমার রুমে এসে শুয়ে পড়ে ছিলে, যাওয়ার নামি নেয়নি।

সবাই হেঁসে দেয়। আমি সবাইকে নাস্তা করার জন্য ডাকলাম। সবাই টেবিলে বসে, নাস্তা করতে থাকে।

সবাই নাস্তা করে যার যার কাজে চলে যায়। আলোও সায়নকে মেডিসিন দিয়ে নিজের কাছে চলে যায়, আলো অয়নের সাথেই যায়।

প্রহর স্নেহার বাসায় যায়, গিয়ে স্নেহার রুমে দরজায় নক করে, স্নেহা আসতে বলে। এসে দেখে ঔষধ খাচ্ছে। প্রহর বসে বলে,,,,, তোমার জ্বর ভালো হয়নি।

,,,হুমম হয়েছে কিন্তু শরীরটা একটু দুর্বল আরকি।
,,,,, হুমম তাহলে এতো তাড়াতাড়ি কেনো উঠলে, আজ রেস্ট করলেই পারো।
,,,,,কিভাবে করবো, আজ আমার আর্ট এক্সাম। ফেল করলে এক বছর নিচে নামিয়ে দিবে। আর আমার তেমন কোনো প্রস্তুতি নেয়।
,,,,আরে চিন্তা করো না, তুমি খুব ভালো চিত্র আঁকো। তুমি ঠিক পাশ করে যাবে।

,,,আমার পাশ লাগবে না, আমার ভালো একটা নাম্বার লাগবে।
,,,,, এটা তোহ আর ফাইনাল এক্সাম না।
,,,,তাও আমার একটা ভালো নাম্বার লাগবে, তোমাকে ডেকেছি একটু আমার সাথে থাকতে, না হলে আমাকে
যেতে দিবে না বাবা।
,,,,হুমম,, তোহ আপনি রেডি।
,, হুমম রেডি চলো।

প্রহর স্নেহাকে এক্সাম হলে নিয়ে যায়। এক্সাম শুরু হতে এখনো সময় আছে। তাই প্রহর একটু স্নেহার সাথে বসে। স্নেহা প্রহরের কাঁধে মাথা রেখে চোখ বন্ধ করে রাখে। প্রহর কিছু বলে না।

একটু পরেই এক্সাম শুরু হয়ে যায়। প্রহর একটু দূরে থেকে স্নেহার আকা দেখছে। সামনে মডেল রাখা হয়, তাকে দেখে সবাই আঁকছে। স্নেহা খুব সুন্দর ভাবে ছবি আঁকছে। এক্সাম শেষ হয়। স্নেহা বাহিরে আসতেই প্রহর গিয়ে বলে,,, অনেক ভালো একেছো।

স্নেহা নিজের শরীরের ভার প্রহরের বুকে ছেড়ে দিয়ে বলে,,,,,, প্রহর আমার প্রচুর খারাপ লাগছে, মনে হচ্ছে এখনি মাথা ঘুরে পড়ে যাবো।

প্রহর স্নেহাকে ধরে বলে,,, চলো সাইডে বসবে।

প্রহর স্নেহাকে নিয়ে সাইডে একটা বেঞ্চে বসায়, প্রহর স্নেহাকে বসিয়ে দিয়ে পানি এনে দেয়। স্নেহা পানি খেয়ে একটু প্রহরের কাঁধে মাথা রেখে বলে,,,,হুমম চলো এখন ঠিক আছি।

,,,হুমম।

প্রহর স্নেহাকে সোজা হসপিটালে অয়নের কাছে নিয়ে যেতে চাই। হসপিটালের বাহিরে এসে স্নেহা দাঁড়িয়ে বলে,,,এখানে কেনো এসেছো।

,,,, তোমাকে আগে ডক্টর দেখাতে হবে, পরে বাসায় দিয়ে আসবো।

,,,, আরে আমি ঠিক আছি।
,,,, হুমম দেখায় যাচ্ছে আপনি কতো ঠিক আছেন।

বলে স্নেহাকে অয়নের কাছে নিয়ে যায়। স্নেহা আর প্রহরকে দেখে অয়ন দাঁড়িয়ে বলে,,,, প্রহর তুই আর স্নেহা তুমি কেমন আছো৷

,,, হুমম ভালো আছি।
প্রহর,,,,, কোথায় ভালো আছো, অয়ন দেখ তো স্নেহার জ্বর আর শরীর ও দুর্বল লাগছে।
অয়ন,,,,,, আরে আগে বলবি না,, বসো স্নেহা,আমি তোমাকে চেকাপ করছি।
অয়ন স্নেহাকে চেকাপ করে বলে,,,, বর্তমানে তোমার জ্বর ১০১ ডিগ্রিতে আছে। তার মানে পরে আরো বেশি জ্বর উঠে তাই তো। আমি কিছু ঔষধ লিখে দিচ্ছি খেয়ে নিবে। আর দুটো মেডিসিন এখানেই খেয়ে ফেলো।

,,,হুমম।
প্রহর পরে স্নেহাকে বাসায় পৌঁছে দেয়। স্নেহাকে ধরে ধরে তার রুম পর্যন্ত নিয়ে যায়, পরে ওকে বিছানায় বসিয়ে বলে,,, নিজের খেয়াল রাখবে। মেডিসিন খাবে।আর এখন চুপচাপ শুয়ে থাকবে।

স্নেহা মুচকি হেঁসে বলে,,, বাহহ আমার জন্য এতো চিন্তা, ভালো খুব ভালো৷ তা প্রেমে পড়ে গেলে নাকি আমার।

,,,,, না, একটা ফ্রেন্ড হিসাবে যা করা উচিত আমি তাই করছি। এর থেকে বেশি কিছু আশা করো না।
,,,, আমি এর থেকে বেশি কিছু না অনেক কিছু আশা করি। আর আমি জানি আল্লাহ অবশ্যই পূরণ করবে। বিশ্বাস এটা আমার আজ পর্যন্ত আমরা যা আল্লাহর কাছে মন থেকে চেয়েছি তাই পেয়েছি আর এটাও নিশ্চয়ই পাবো।
,,,,, শুধু শুধু আশা করে পরে কষ্ট পেয়ো না। আমি এখন চলি।

বলে প্রহর চলে যায়৷ স্নেহা হালকা হেঁসে বিছানায় শুয়ে পড়ে৷ এভাবেই দেখতে দেখতে বিকেল হয়ে যায়। আলো সায়নের রুমে যায়, গিয়ে দেখে সায়ন বুকের উপর বই নিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে।

আমি বইটা সরিয়ে নিয়। সায়ন ঘুমের মধ্যে কিছু একটা বলছে। আমি শুনার জন্য নিজের চেহেরাটা সায়নের দিকে এগিয়ে নিয়ে যায়। সায়ন বিড়বিড় করে কিছু একটা বলছে।

হঠাৎ করে আমার নিশ্বাস সায়নের মুখে পড়ায়, সে হালকা একটু চোখ খুলে, আমাকে দেখে মুচকি হেঁসে,নিজের মুখটা একটু আমার দিকে উঠিয়ে আমার ঠোঁটের একটু পাশে একটা কিস করে আবার চোখ বন্ধ করে দেয়।

আমি লজ্জায় লাল হয়ে গেছি, মনে আমার আনন্দের বন্যা বয়ছে। সায়ম হয়তো আমাকে ভালোবাসে এটা ভেবে। কিন্তু সায়ন চোখ বন্ধ করে বলে,,, আই লাভ ইউ দিয়া। ভালোবাসি দিয়া তোমাকে৷

কথাটা আমার বুকে ছুরির মতো গিয়ে বিধলো গিয়ে। আমি জালানার পাশে দাঁড়িয়ে পাশে রাখা দিয়ার ছবিটা নিয়ে, তার দিকে তাকিয়ে বলতে লাগলাম,,, জীবনের প্রথম কোনো মেয়েকে দেখে আমার প্রচুর হিংসা হয়৷ তুমি মরে গিয়েও সায়নের মন থেকে যেতে পারোনি, আজো তোমাকে সে ভালোবাসে। আর আমি সায়নের জীবনে বন্ধু হয়ে থেকে যাবো। সে আমাকে আর ভালোবাসবে না। তার মনে আমি জায়গা করতে পারবো না, কারন পুরো জায়গা জুড়েই তুমি আছো।

চলবে,,,,,,,,

ভালো লাগলে লাইক, কমেন্ট করতে ভুলবেন না ধন্যবাদ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here