ব্লাক_স্টন,পর্ব_০৩
Writer_Shanta_islam
-মুর্খের দল তোমরা এটা কি করলে,,এখন রক্তের গন্ধে ওটা আবার জেগে উঠবে,,,,
মেয়েটার হাত থেকে রক্ত ঝড়ছে কিন্তু তাতে তার কোনো ভুরুক্ষেপ নেই৷ তাকে দেখে মনে হচ্ছে না সে বিন্দু মাত্র ব্যাথা পেয়েছে। মেয়েটা তাড়াহুড়ো করে পড়নের ওর্নাটা ছিরে হাতে পেচিয়ে নিচ্ছে। রাব্বি ছুড়িটা নামিয়ে বললো,,,তুমি যদি সাদিয়ার আত্না না হও তাহলে এভাবে সাদা পোশাকে এখানে কি করছো?
মেয়েটা আমাদের দিকে না তাকিয়ে হাতে ওর্না পেচাতে পেচাতে বললো,,,বাচতে চাইলে এখনি এখান থেকে পালাও। নাহলে আমিই তোমাদের মেরে ফেলবো।
আমি মেয়েটার দিকে তাকিয়ে আছি। তার কথাবার্তা বলার ভঙি অন্য রকম। খুব স্ট্রেট ফরওয়ার্ড টাইপের কথা বলে। এতো রাতে একা একটা মেয়ে দুজন ছেলের সামনে দাড়িয়েও তার চোখে বা কন্ঠে ভয় ভীতির ছাপ দেখছি না। নরমাল কোনো মেয়ে হলে এতো গভীর আঘাতে চিৎকার চেচামেচি শুরু করে দিতো। কিন্তু মেয়েটার রিয়েকশন অন্য মেয়েদের মতো স্বাভাবিক মনে হচ্ছে না। আবার কীভাবে হুমকি দিচ্ছে সে নিজেই আমাদের মেরে ফেলবে। এখন সন্দেহ হচ্ছে মেয়েটা কি আসলে মানুষ নাকি সেই আত্না যাকে এতোক্ষণ লাগিয়ে খুজছিলাম।
– এই মেয়ে জবাব দেও তুমি কে? আর এতো রাতে এখানে কি করছো?
ভেবেছিলাম আমিও কিছু প্রশ্ন করবো কিন্তু তার আগেই কিছু ভয়ংকর আওয়াজ শুনতে পেলাম।
আওয়াজটা শোনার সাথে সাথে তিনজন সামনের দিকে তাকালাম।
-এটা কীসের আওয়াজ?
-ওহ সিট! রিমাস জেগে গেছে,,,বাচতে চাইলে পালাও,,,
কথাটা বলেই মেয়েটা ফ্লোর থেকে একটা ব্যাগ উঠিয়ে দৌড়াতে শুরু করলো। আমি আর রাব্বি ওখানেই দাড়িয়ে আছি। আওয়াজটা ক্রমশ ভয়ংকর হচ্ছে। কেনো জানি মনে হচ্ছে এখানে আর দাঁড়িয়ে থাকা ঠিক হবে না। আমি রাব্বিকে বললাম আমাদের এখান থেকে যাওয়া উচিৎ,,,,
রাব্বি আমার কথায় তেক্কার করে তীব্র ক্ষোভ নিয়ে বললো,,,,,
– না অভি আমি যাবো না। ও ভুত প্রেত আত্না যাই হোক না কেনো ও আমার বন্ধুকে মেরেছে। আমি ওকে ছাড়বো না।
এখন রাব্বিকে বুঝানোর সময় নেই। ওকে বুঝাতে গেলে হয়তো মেয়েটাকে ধরতে পারবো না। মেয়েটার মধ্যে খুব রহস্য আছে। আমি মেয়েটার পিছু দৌড়ালাম। দৌড়াতে দৌড়াতে বিল্ডিংয়ের বাইরে চলে আসি। মেয়েটাকে হয়তো হারিয়ে ফেলেছি। কিছু দূর যেতেই মেয়েটাকে আবার দেখতে পেলাম। ব্যাগের মধ্যে কিছু একটা খুজছে। আমি মেয়েটার কাছে যেয়ে ডাক দিলাম,,,,এই মেয়ে তুমি,,,,,আমি পুরো কথা বলতে না বলতেই মেয়েটা আমার কলার চেপে ধরে বললো,,,তোমাদের জন্য,,,তোমাদের জন্য স্টনের অর্ধেক অংশ হারিয়ে ফেলেছি।
মেয়েটার কথার আগা গোড়া কিছুই বুঝলাম না। সব মাথার উপর দিয়ে গেলো। কলার ছাড়ানোর চেস্টা করে বললাম,,,আমি আবার কি করলাম?
মেয়েটা আমাকে ধাক্কা দিয়ে আবার বিল্ডিংয়ের দিকে এগোতে লাগলো। কিছুই বুঝতে পারছি না। কি হচ্ছে এসব।
নাহ এখানে থাকা যাবে না। এখানে থাকলে আমার মাথাটা পুরো নস্ট হয়ে যাবে। আজব আজব জিনিস হচ্ছে। এখানে আসাটাই উচিৎ হয়নি। বাসায় চলে যাওয়াই ভালো হবে। মন স্থির করে বাসার উদ্দেশ্যে দু-কদম পা বাড়াতেই কিছু একটা পায়ের মধ্যে বাধলো,,ছোট একটা পুতুল,,,,এই মেয়েটাকে না,,,যখন তখন ব্যাগের মধ্যে এসব ডুকিয়ে রাখে। হঠাৎ রাব্বির চিৎকারের আওয়াজ পেলাম। পিছু ফিরে তাকাতেই দেখলাম,,,রাব্বি দৌড়ে মেয়েটাকে ক্রস করে বিল্ডিং থেকে বের হলো আর মেয়েটা ঠিক সেই মুহুর্তে বিল্ডিংয়ে প্রবেশ করলো। রাব্বির খুবি বাজে অবস্থা। শরীরের বিভিন্ন জাগা থেকে ব্লিডিং হচ্ছে। রক্তে পুরো শার্ট ভরে গেছে। ওর এমন অবস্থা দেখে আমি দৌড়ে যেয়ে রাব্বিকে ধরলাম,,
– ওখানে,,,ও,,ও,,,ওখানে,,,,,,,,
রাব্বি পুরো কথা বলার আগেই মাটিতে লুটিয়ে পড়লো। ওর যা অবস্থা এখনি হসপিটালে ভর্তি না করলে নির্ঘাত মারা যাবে। আমি রাব্বিকে নিয়ে হসপিটালের উদ্দেশ্যে রওনা হলাম। তখন দূর থেকে আজানের ধ্বনি শোনা যাচ্ছিলো। মানে পাচটা বেজে গেছে। হসপিটালে পৌছাতেই ছেলেটার অবস্থা আরো সিরিয়াস হয়ে পড়ে। দেখে মনে হচ্ছে না বাচবে। পুরো শরীরে নখের দাগ। একজন নার্স এসে বললো তাৎক্ষনিক “এ” পজিটিভ রক্তের দরকার। কি করবো এখন? আমার কাছে তো টাকা নেই,,,বাসা থেকে টাকা নিয়ে বের হয়নি। আগে বাসায় যেতে হবে। বাসায় যাবো এমন সময় আবার সেই নার্সটা এসে বললো রক্ত লাগবে না। রক্তের ব্যবস্থা হয়ে গেছে। আপনি রোগীর কি হন? নার্সকে কীভাবে বলি ছেলেটা আমার কেও না। মাত্র এক রাতের পরিচয়ে আজ আমরা এখানে।
আমি অনেকটা নিচু গলায় বললাম,,,ও আমার বন্ধু হয়। নার্স আমার হাতে একটা কাগজ ধরিয়ে বললো,,ফরমটা পুরন করে কাউন্টারে জমা দিন। আর সকাল এগারোটার মধ্যে টাকা পরিশোধ করতে হবে। কথাগুলো বলে নার্স চলে গেলো। আমি কাগজটা হাতে নিয়ে নার্সের যাওয়ার পানে তাকিয়ে আছি। নার্সটা সাদা এপ্রোন পড়েছে। একদম ওই মেয়েটার মতো। রাব্বিকে নিয়ে তাড়াহুড়ো করে চলে আসায় মেয়েটার কথা মাথা থেকে উড়ে গেছে। কে জানে মেয়েটার কি হয়েছে। হয়তো আজো ওই বিল্ডিং থেকে একটা লাশ পাওয়া যাবে। আর সেটা হবে ওই মেয়েটার। না না একটা না দুটো লাশ। পন্ডিত মশাইও তো সামিল আছে। এক রাতে কি কি হয়ে গেলো। কে করছে এসব? যেই করছে আদো সে মানুষ নাকি অন্য কিছু। এতোগুলো প্রশ্ন কিন্তু উত্তরের খাতা শূন্য,,,কিছুই ভাবতে পারছি না৷ কাগজটা হাতে নিয়ে দাড়িয়ে আছি। তখন মনে হয় সকাল আটটা বাজবে,,,কাগজটা পুরন করতে হবে কিন্তু কি পুরোন করবো রাব্বির বিষয়ে আমি তো কিছুই জানি না। রাব্বির পকেট থেকে নাকি সেলফোন পাওয়া গেছে। নার্সকে বলে সেলফোনটা নিয়ে ওর পরিবারের সাথে কন্টাক্ট করলাম। এক ঘন্টা অপেক্ষা করার পর ওর পরিবারের লোকেরা এলো। আমাকে সবাই অনেক প্রশ্ন করেছে কে আমি? রাব্বির এই অবস্থা কীভাবে হলো? আমি উনাদের হাতে ফরমটা দিয়ে চলে এলাম। ভালো লাগছে না কিছু,,শরীরটা খুব দূর্বল লাগছে। এক রাতে কত কি হয়ে গেলো কিন্তু রহস্য রহস্যই থেকে গেলো। সিদ্ধান্ত নিলাম এসব নিয়ে আর ঘাটাঘাটি করবো না৷ বাসায় এসে কলিং বেল দিতেই আম্মা দরজা খুলে বললো,,,কোথায় ছিলি? আর টুসি কই। এমনিতেই মন ভালো না তার উপর বাসায় ডুকতে না ডুকতেই প্রশ্ন করছে টুসি কই,,,
– টুসি কই আমি কীভাবে বলবো,,,ভালো লাগে না সরো তো,,,কথাগুলো বলে রুমে ডুকে গেলাম। জুতো না খুলেই বিছানায় গা এলিয়ে দিলাম। অনেক ক্লান্ত লাগছে পুরো রাতে ঘুম হয়নি। চোখটা বন্ধ করে ঘুমোনোর চেষ্টা করতেই মা রুমে এসে আবার প্রশ্ন করা শুরু করলো,,,টুসি তোর সাথে যায়নি,,,স্কুলেও যায়নি,,,বাসায়ও নেই তাহলে মেয়েটা কোথায় গেলো? দেখ অভি ফাইজলামি করবি না। সত্যি করে বল টুসিকে আবার কোথাও দিয়ে এসেছিস?
– ওহ মা ভালো লাগে না। বার বার টুসি টুসি,,,বলছি তো আমি টুসিকে কোথাও দিয়ে আসিনি। যাও তো এখান থেকে। আম্মা রুম থেকে বের হয়ে যাওয়ার আগে বলে গেলো – দেখ অভি আমি যদি আবার জানতে পারি যে তুই টুসিকে আন্টির বাড়ি বা বন্ধুর বাড়ি রেখে এসে আমাদের সাথে মজা করছিস তাহলে এবার আর তোর রক্ষা নেই। কথাগুলো বলে আম্মা রুম থেকে চলে গেলো। তিনবার নাকি চারবার এমনটা করেছিলাম। টুসিকে ওর বন্ধুর বাসায় নাহলে আন্টির বাসায় রেখে এসে বাসায় মজা করে বলতাম আমি জানি না টুসি কোথায়,,, ওবার তুমুল কান্ড হয়েছিলো।
আমার বোনটা যেই চিপকু। যদি দেখে বাইরে কোথাও যাচ্ছি তাহলে প্যান্ট ধরে বসবে। যতক্ষণ না সঙ্গে নিয়ে যাবো ততোক্ষন ছাড়বে না। কে জানে আবার কোথায় গেছে,,,,(গল্পের কোনো পর্ব খুজে না পেলে আমার প্রোফাইলে পাবেন।)
বিছানা ছেরে ব্যাগটা টেবিলে রাখতেই ব্যাগের মধ্যে টুসির ছোট পুতুলটা চোখে পড়লো। একবার ওকে পাই। যখন তখন ব্যাগের মধ্যে পুতুলের সংসার পেতে বসে। যদি পুতুলটা ওখানেই হারিয়ে ফেলতাম তাহলে কেদে একাকার,,,,,,,,,,,,
অভির হাত থেকে হঠাৎ পুতুলটা পড়ে যায়। অভি কিছু একটা ভেবে ঘাবরে ওঠে। নাহ এটা হতে পারে না। টু,,,টু,,,টুসি,,,,,,
নাহ নাহ,,,,,পুতুলটা হয়তো ব্যাগ থেকেই পড়েছিলো কিন্তু আমার ব্যাগের চেন তো বন্ধ,,,,না আমি এসব কি ভাবছি। ওটা টুসি হতে পারে না। আমার পিছু টুসি যায়নি। ওটা আমার মনের ভয় ছিলো তাই মনে হয়েছিলো কেও পিছু আছে,,, ওটা টুসি নয় অভি ধপাস করে ফ্লোরে বসে পড়ে,, না,,না,,,না,,টুসির কিছু হয়নি। আমি ওর কিছু হতে দিব না,,,টুসি,,,,টুসি
অভি দৌড়ে বাসা থেকে বের হয়ে যায়। উদ্দেশ্য সেই বিল্ডিং,,,,,
চলবে,,,,