ব্লাক_স্টন,পর্ব_০৮

0
1141

ব্লাক_স্টন,পর্ব_০৮
Writer_Shanta_islam

–টু,,টু,,,টুসি,,
অভি দৌড়ে টুসির কাছে যায়। টুসির বাধন খুলে অভি টুসিকে কোলে আগলে ধরে।
-এই টুসি,,টুসি,,চোখ খোল। দেখ তোর ভাইয়া তোকে বাচাতে এসেছে। তোর কিছু হবে না। টুসি টুসিরে একটু চোখ খোল,,,টুসি,,,,,অভি চিৎকার করে টুসিকে ডাকছে কিন্তু টুসি চোখ খুলছে না। অভির চিৎকার শুনে রিমাস জেগে যায়। কিন্তু সেদিকে অভির খেয়াল নেই। সে তার টুসিকে উঠাতে ব্যস্ত। হঠাৎ তীব্র হুংকারের আওয়াজে অভির চোখ যায় রিমাসের দিকে। এই ভয়ংকর প্রানীকে দেখে অভির চোখে কোনো ভয় নেই। অভি অটুট হয়ে সেই প্রানীর সামনে দাঁড়িয়ে আছে।
– তোর জন্য,,,শুধু তোর জন্য আমি আমার বোনকে হারিয়েছি। আজ মৃত্যু হলে আমি একা নই তুইও মরবি। রিমাস অভির উপর আক্রমণ করতে আসলে সাথে সাথে কোথা থেকে গুলির আওয়াজ শোনা যায়। গুলিটা আর কেও নয় জেনি চালিয়েছে। জেনি অভির সামনে এসে দাড়ায়।
-জেনি তুমি এখানে?
-আগেই জানতাম তোমার মত গাধা একা কিছু করতে পারবে না। কখন থেকে বলছি দেয়াল বন্ধ হয়ে যাচ্ছে ফিরে এসে। তুমি আসোনি দেখে আমিই চলে এসেছি।
– আর তোমার ভাই রবিন?
-দেয়াল বন্ধ হওয়ার আগেই ওকে দেয়ালের ওপারে রেখে এসেছি। রবিন ঠিকাছে। কিন্তু দেয়াল বন্ধ হয়ে গেছে।
-কি,,,,,
– কি না হ্যাঁ এখন হাবলার মতো দাড়িয়ে না থেকে মশাল জ্বালাও জলদি।
অভি জেনির হাত থেকে মশালটা নিয়ে পকেট থেকে লাইটার বের করে মশালে আগুন জ্বালিয়ে দেয়। আর সাথে সাথেই রিমাসটা কেমন অচেতন হয়ে পরে।
অভি মশাল নিয়ে যতই রিমাসের সামনে এগোতে থাকে রিমাস ততোই পিছু হাটতে থাকে। জেনিও একের পর এক গুলি চালিয়ে যাচ্ছে। রিমাসটা আস্তে আস্তে দূর্বল হয়ে পরছে। অভির মধ্যে ক্ষোভগুলো আগুনের শিখা হয়ে বের হচ্ছে। ওর চোখে ভাসছে শুধু মৃত্যুর শিখা। টুসিকে হারানোর বেদনা আর ক্ষোভ। পিছু হাটতে হাটতে রিমাস হাওয়ায় ভাসা সেই স্টনের সামনে যায়।
-অভি রিমাস স্টন থেকে পাওয়ার নিতে যাচ্ছে,,,জলদি করো।
অভি মশাল রিমাসের চোখে টার্গেট করে মেরে দৌড়ে স্টনের কাছে যায়। রিমাসকে আগুনের তাপ বেশিক্ষন আটকে রাখতে পারেনি। অভি স্টনটা হাতে নিবে প্রায় ছুই ছুই তখনি রিমাস অভির পা আকড়ে ধরে। অভির পা দিয়ে রক্ত ঝড়ছে। তবুও অভি থামছে না। যেভাবেই হোক স্টন নিতে হবে। অভি নিজের সবটুকু শক্তি দিয়ে স্টনটা ধরার চেস্টা করছে। হঠাৎ রিমাস অভির পা ছেরে দেয়। রিমাস অভির পা ছেরে জেনির দিকে ছুটছে। অভি জেনির দিকে খেয়াল করে দেখে জেনি নিজের হাতে নিজেই গুলি করেছে। রক্তের ঘ্রানে রিমাস জেনির দিকে ছুটছে।
-এটা তুমি কি করলে জেনি।
অভি ব্লাক স্টনের অর্ধেক অংশ হাতে নিয়ে পকেটে রাখা অর্ধেক অংশের সাথে ওই অংশ জোড়া লাগায়। আশ্চর্যের বিষয় দুটো এক সাথে লেগে যায়। স্টনে কোনো ফাটল দেখা যাচ্ছে না। দেখে মনে হবে না এই স্টন কখনো দুটি অংশে ভাগ করা ছিলো। রিমাস আহত জেনির উপর বসে রক্ত শুসে নিচ্ছে। জেনি ছটফট করছে। অভি দৌড়ে এসে স্টন রিমাসের সামনে ধরে কোনো কাজ হচ্ছে না। রিমাস জেনির উপর থেকে সরছে না। এমন হচ্ছে কেনো? অভি এখনো ভালো করে জানে না স্টন কীভাবে ব্যবহার করতে হয়। অভি পড়ে থাকা মশালটা আবার জ্বালিয়ে রিমাসের সামনে ধরতেই রিমাস জেনির উপর থেকে সরে যায়।
-জেনি তুমি ঠিকাছো?
জেনির পুরো শরীর কাপছে। জেনি কাপা কাপা কন্ঠে বললো,,আমি ঠিকাছি কিন্তু দাড়াতে পারছি না। জলদি এখান থেকে বের হওয়ার উপায় বের করো। অভির হাতে আগুন থাকায় রিমাস ওদের সামনে এগোতে পারছে না।
– জেনি আমার ব্যাগ থেকে হেক্সিসলের বোতলটা দেও জলদি।
জেনি সুয়ে থাকা অবস্থায় ব্যাগ থেকে হেক্সিসলের বোতলটা বের করে অভিকে দেয়। অভি বোতলটা খুলে রিমাসের উপর ছুরে মারে আর তার সাথে ছুরে মারে আগুনের মশাল সাথে সাথে রিমাসের গায়ে আগুন লেগে যায়। জ্বলন্ত অবস্থায় রিমাস দিশেহারা হয়ে এদিক ওদিক ছুটতে থাকে। অভি জেনির কাছে যেয়ে জেনিকে জাপটে ধরে।
-জেনি তুমি ঠিকাছো?
– অভি আমি ঠিকাছি? টুসি?
অভি কান্না করতে করতে বলে,,,টুসি কথা বলছে না। টুসি বেচে নেই জেনি,,,
অভি টুসিকে কোলে করে জেনির কাছে নিয়ে আসে। জেনি দাড়াতে পারছে না একটা শিকরে হেলান দিয়ে বসে আছে। অভি কান্না করতে করতে বললো,,,রিমাস আমার টুসিকে মেরে ফেলেছে জেনি। আমি আর কখনো ওর মুখে ভাই ডাক শুনতে পারবো না। আমার জন্য টুসির এই অবস্থা। আমার জন্য কথাগুলো বলে অভি কান্নায় ভেঙে পরে। জেনি টুসির গায়ে হাত রাখতেই নড়ে বসে বললো,,,অভি টুসির পালস চলছে।
-কি বলছো জেনি? সত্যি বলো টুসি কী বেচে আছে?
-হ্যা বেচে আছে। ওর অক্সিজেনের প্রয়োজন,,,ওকে জলদি হসপিটালে নিতে হবে। দেয়াল বন্ধ হয়ে গেছে আমাদের এখান থেকে বের হতে হবে।
জেনির কথায় অভির মধ্যে ছোট আশ্বাস জন্মায়। টুসি বেচে আছে। এর থেকে বেশি কিছু চায় না অভি।
-জেনি রিমাস যখন তখন আবার ফিরে আসতে পারে। কি করবো এখন? স্টন কীভাবে ব্যবহার করতে হয় সেটাও জানি না।
– অভি আমিও জানি না স্টন কীভাবে কাজ করে। এর আগে স্যার মার্ক ওয়াটসন এই স্টন ব্যবহার করে রিমাসদের আটকিয়েছিলো। বইয়ে স্যার স্টনের ব্যবহার সম্পর্কে কিছু লিখে নি।
-বই কীসের বই?
-ব্লাক স্টনের বই। যেটার মাধ্যমে আমি এতো কিছু জানতে পেরেছি। অভি তুমি টুসিকে নিয়ে এখান থেকে বের হওয়ার রাস্তা খুজো। একটা না একটা রাস্তা পেয়েই যাবে। রিমাস রক্তের গন্ধে যেকোনো সময় এখানে চলে আসতে পারে।
-না জেনি আমি তোমাকে ছাড়া যাবো না।
-পাগলের মতো কথা বলো না অভি,,আমি তোমার সাথে গেলে রিমাস আমার রক্তের গন্ধে সেখানে ছুটে আসবে। তুমি টুসিকে নিয়ে যাও এখান থেকে।
অভি জেনির হাত থেকে পিস্তল নিয়ে বললো,,মরলে এক সাথেই মরবো।
পিস্তলে মাত্র দুটো গুলি বাকি। মশালো নেই। এবার রিমাস এলে আর রক্ষা নেই। কিছু একটা ভাব অভি কিছু একটা ভাব। অভি চোখ বন্ধ করে প্রথম থেকে সব কিছু ভাবতে থাকে। ওর সাথে কি হয়েছিলো সেই রাতের কথা। কীভাবে জেনির সাথে দেখা হয়। কীভাবে সে ব্লাক স্টন খুজে পায় সব। হঠাৎ অভি বলে উঠলো,,জেনি মনে আছে তুমি বলেছিলে স্টন সবাই দেখতে পারে না৷ সুধু তারাই স্টন দেখতে পারে যাদের স্টন বাছাই করে।
-হ্যা আমি প্রথম স্টন মিশরে খুজে পাই। অনেক সাইনটেস্ট ছিলো ওখানে কিন্তু তাদের মধ্যে আমিই দেখতে পেয়েছিলাম। তখন বাবা মার কথা খুব মনে পরছিলো। তাদের কথা ভেবেই আমার মধ্যে হতাশা কাজ করছিলো।
– আর আমি স্টন দেখতে পাই যখন আমার মধ্যে টুসিকে হারানোর ভয় কাজ করছিলোম। তখন অনেকটা ইমোশনাল ছিলাম। এর মানে,,,
– এর মানে তুমি বলতে চাইছো স্টন ইমোশন দিয়ে কাজ করে?

চলবে,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here