ব্লাক_স্টন,অন্তিম_পর্ব

0
1469

ব্লাক_স্টন,অন্তিম_পর্ব
Writer_Shanta_islam

-তার মানে তুমি বলতে চাইছো স্টন ইমোশন দিয়ে কাজ করে?
– হ্যাঁ হয়তো স্টন ইমোশন দিয়ে কাজ করে আর যদি সত্যিই স্টন ইমোশন দিয়ে কাজ করে,,তাহলে এবার আমি আমার শেষ চেস্টা করে দেখবো।
-না অভি এভাবে হবে না। রিস্ক নেওয়া যাবে না। বেকাপ প্ল্যান লাগবে।
-আগে আমাদের ওখানে যেতে হবে যেখান থেকে আমরা দেয়াল ছেদ করে এসেছিলাম। রিমাস এতোক্ষনে হয়তো নিজেকে রিকভার করে নিয়েছে। রিমাসের থেকে আমাদের দুকদম আগে থাকতে হবে। আমরা যেখানে যাবো রিমাস আমাদের রক্তের গন্ধে সেখানে আসবে। আমাদের যেভাবেই হোক রিমাসের শরীর দেয়ালের সাথে টার্চ করাতে হবে। কারণ রিমাসের শরীরের অংশ দেয়ালে লাগলেই ওপারে যাওয়ার রাস্তা খুলে যায়।
-হ্যা তুমি ঠিক বলেছো অভি। কিন্তু এটা কীভাবে সম্ভব?।
-আমার কাছে একটা প্ল্যান আছে। কিন্তু সেটা ডেঞ্জারাস।
-কী প্ল্যান?
– তুমি কি এখন দাড়াতে পারবে জেনি?
জেনি আস্তে আস্তে ওঠার চেস্টা করে বললো,,,হ্যা পারবো। অভি জেনির হাতে লাইটার ধরিয়ে বললো,,এটা তোমার সাথে রাখো।।
অভি টুসিকে কোলে নিয়ে জেনির সাথে হাটতে হাটতে সেই জায়গায় পৌছে যায় যেখান থেকে তারা দেয়াল ছেদ করে এসেছিলো। আসার পথে অভি জেনিকে পুরো প্ল্যান বলে দেয়।
অভির প্ল্যান শুনে জেনি না করেনি। সে যে অভিকে বঢো বিশ্বাস করে ফেলেছে। এখন মরন এলেও সে অভির দিকে চোখ বন্ধ করে মরতে প্রস্তুত। হয়তো জেনির মনে অভির জন্য ভালোবাসার সুপ্ত অনুভূতি জন্ম নিচ্ছে।
রিমাস রক্তের গন্ধে পাগলের মতো ছুটে চলেছে সেই দিকে। স্টন জোড়া লেগে গেছে। যেভাবেই হোক স্টন রিমাসের চাই। এভাবে সে ভাবতে পারছে না কি করবে। তাকে মানুষ হয়ে মানুষের মতো ভাবতে হবে। রিমাস মানুষের রুপ ধারন করে রক্তের গন্ধে ছুটে চলছে।
-হাই জেনি,,,মেয়েলি কন্ঠ পেয়ে জেনি আওয়াজটা খুজতে থাকে। কোথা থেকে আসছে এ আওয়াজ।
কোনো হুদিস না পেয়ে জেনি বললো,,কে?
হঠাৎ কোথা হতে ছু মেরে এক সুন্দরী মেয়ে লাল শাড়ি পরে বের হয়।
-চিনতে পারছো আমাকে জেনি? বলোতো কে আমি?
জেনি চোখ বড় বড় করে কাপা কাপা কন্ঠে বললো,,,,,রি,,রি,,রিমাস।
-ক্লেভার গার্ল! আমাকে চিনেছো ঠিকি কিন্তু ভুল নামে ডাকছো আমায়। এখন তো আমি সাদিয়া,,,
-তুই এবার আর আমার হাত থেকে বাচবি না। তোর জন্য কতগুলো মানুষ প্রান হারিয়েছে। নৃশংস ভাবে তাদের হত্যা করেছিস,,এবার তোর পালা।
-না না না না ভুল বলছো হত্যা করিনি। খেয়েছি,,যেভাবে এখন তোমায় খাবো। তোমার রক্তের গন্ধ আমাকে পাগল করে তুলেছে। এখন তোমাকে খেয়ে আমি আমার তৃপ্তি মিটাবো,,,কথাটা বলেই রিমাস দৌড়ে এসে জেনির উপর হামলা করতে এগিয়ে আসে কিন্তু জেনি ওখান থেকে নড়ছে না। জেনি যেভাবে দাড়িয়ে ছিলো সেভাবেই দাড়িয়ে আছে। যখন রিমাস জেনির একদম কাছে চলে আসে সাথে সাথে জেনি ওখান থেকে সরে যায় আর রিমাস গতি সামলাতে না পেরে দেয়ালের সাথে ধাক্কা খায়। রিমাসের শরীর দেয়ালের সাথে টার্চ হওয়ায় দেয়াল আগের মতো খুলে যায়।
– হাই সাদিয়া আমি এখানে,,,,ওপস সাদিয়া নয় রিমাস,,
রিমাস রাগে ফুসতে ফুসতে মানব রুপ থেকে আসল রুপ ধারন করে আবার জেনির উপর এট্যাক করতে যায়। সাথে সাথে জেনি সরে যায় আর জেনির স্থানে এসে দাঁড়ায় অভি। এবার অভি একা ছিলো না অভির সাথে ছিলো চকচক করতে থাকা ব্লাক স্টনের পাওয়ার। অভি রিমাসের সামনে স্টন শক্ত করে ধরে চোখ বন্ধ করে ভাবতে থাকে যদি টুসি মারা যেতো। যদি টুসির কিছু হয়ে যেতো। অভি কীভাবে বাচতো। সে আর কখনো টুসির মুখে ভাই ডাক শুনতে পেতো না। কথাগুলো ভাবতেই অভির চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি গড়িয়ে পড়ছে আর সাথে সাথে স্টন আলোকৃত হয়ে উঠে। অভির শরীরে অনেক শক্তি বোধ করছে। এক ধরনের অদ্ভুত শক্তির অনুভূতি। এমন ধরনের অনুভূতি অভি কখনো অনুভব করেনি। স্টনের আলোয় প্রানীটা মাটির সাথে এমন ভাবে মোচড়াচ্ছে মনে হচ্ছে ওর শরীরে কেও আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। এই ফাকে জেনি টুসিকে কোলে নিয়ে দেয়াল দিয়ে বের হয়ে যায়।
-তুই অনেক মানুষকে মেরেছিস এবার তোর মরবার পালা। রিমাস ছটপট করতে করতে হুংকার ছেরে দেয়াল ছেদ করে আবার বিল্ডিংয়ে ফিরে আসে। অভিও রিমাসের পিছু পিছু ওখান থেকে বের হয়ে আসে। রিমাস ছটফট করতে করতে একটা পর্যায় সেই জায়গায় চলে আসে যেখানে অভি আর জেনি মিলে কেরোসিন আর রশি দিয়ে ফাদ পেতেছিলো। রিমাস ফাদে পা দেওয়ার সাথে সাথে জেনি ফাদে লাইটারে আগুন জ্বালিয়ে ছুরে মারে। সাথে সাথে পুরো ফাদে আগুন লেগে যায়। আর রিমাস ছটফট করতে করতে পুরতে থাকে। আগুনের তাপ সইতে না পেরে রিমাসের অঙ্গপ্রতঙ্গ ছোটাছুটি করতে থাকে। তীব্র হুংকারে পুরো বিল্ডিং আতকে উঠছে। অভি রিমাসের সামনে স্টন শক্ত করে ধরে আছে। আস্তে আস্তে স্টনের আলো কমতে থাকে। হঠাৎ অভি অনুভব করে বরফ গলে গায়েব হওয়ার মতো স্টনটাও গায়েব হচ্ছে। রিমাসের শরীরও গায়েব হয়ে যায়। অভি হাতের মুঠি খুলে দেখে স্টনটা তার হাতে নেই। অভি আবার তার শরীর দূর্বল অনুভব করে। এটা হয়তো স্টনের শক্তিই ছিলো যেটা তাকে সেই অদ্ভুত শক্তি দিয়েছিলো।
হঠাৎ অভি কাধে কারো হাত অনুভব করে। পিছু তাকিয়ে দেখে জেনি এক হাতে টুসিকে কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে আর অন্য হাত দিয়ে রক্ত ঝড়ছে। অভি তারাতাড়ি জেনির কাছ থেকে টুসিকে নিয়ে বললো,,,জেনি তোমার হাত থেকে রক্ত ঝড়ছে তোমাকে এখনি হসপিটালে যেতে হবে।
-চিন্তা করো না আমি এখন ঠিকাছি। আমি একা না রবিন,টুসি,তোমাকেও হসপিটালে যেতে হবে। আমি এম্বুলেন্সকে কল করেছি। যখন তখন তাদের টিম এখানে চলে আসবে। তোমার পা দিয়ে এখনো রক্ত ঝড়ছে অভি। জেনির কথায় অভি তার পায়ের দিকে খেয়াল করে দেখে আসলেই অভির পা দিয়ে রক্ত ঝড়ছে। অভির পা দিয়ে রক্ত ঝড়ছে কিন্তু অভি একটুও টের পেলো না। এখন অভি বুঝতে পারছে কেনো জেনি এতো আঘাত পাওয়ার পরও ব্যাথা অনুভব করেনি। এমন ভায়াবহ ঘটনা ঘটলে ব্যাথা কি আর অনুভব করা যায়।
– অভি শেষ মুহূর্তে তোমার প্ল্যানটা কাজে দিলো। তোমাকে যতটা গাধা ভেবেছিলাম ততোটাও নও। কিন্তু একটা কথা আমি বুঝতে পারছি না তোমারো শরীর থেকে রক্ত ঝড়ছিলো আমারো রক্ত ঝড়ছিলো কিন্তু রিমাস শুধু আমার পিছু নিলো কেনো?
-রিমাস যখন তোমার শরীরের অল্প রক্ত খেয়েছিলো তখন তার নাকে তোমার রক্তের গন্ধ লেগেছিলো। যার জন্য আমি কনফার্ম ছিলাম রিমাস আগে আমাকে না খুজে তোমাকে খুজবে। এটার এডভান্টেজ নিয়েই দেয়াল খুলে দেই যাতে তুমি আর টুসি আগে বের হয়ে যাও আর রিমাসকে এখানে এনে মারতে পারি। তুমিই বলেছিলে রিমাসের আস্তানায় রিমাস পাওয়ারফুল। আর আমাদের এখানে আমরা।
জেনি আমার দিকে তাকিয়ে একটা মুচকি হাসি দিলো। মেয়েটার এভাবে হাসার কারন আমি বুঝতে পারিনি। আগেই বলেছিলাম মেয়েদের বিষয়ে আমি কাচা।
সবাই মোটামুটি কয়েকদিন যাবত হসপিটালে ভর্তি ছিলাম। রবিন আর জেনি দুজনি সুস্থ আছে। রাব্বিরও খবর নিয়েছি। ছেলেটা বেচে গেছে। আমিও এখন মোটামুটি ঠিকি আছি। সবার মধ্যে সব থেকে স্ট্রং আমাদের টুসি। টানা সাত দিন হসপিটালের বেডে লড়াই করেছে। অবশেষে অষ্টম দিনে নিশ্বাস ত্যাগ করে আমাদের ছেরে চলে যায় কলিজার টুকরাটা। টুসিকে খুব সাবাসি দিতে ইচ্ছে করে,,,সাত সাতটা দিন কিন্তু কম নয়। সাতটা দিন পুচকি মৃত্যুর সাথে লড়াই করেছে। কতো নামে যে ডাকতাম ওকে হিসাব নেই। ছুটকি,,পুচকি,,টুসি,,টুসু,,এখন আর ওকে এসব নামে ডাকতে পারবো না। ভাই ডাকটাও শোনা হবে না। সবি তো আমার দোষ। আমার কারনেই টুসি আর নেই। আমার জন্যই আমি আমার মূল্যবান জিনিসটাকে হারিয়েছি। টুসি যে আমার কাছে এতো মূল্যবান তা আমার জানা ছিলো না। ওই যে বলে না মূল্যবান কিছুর মূল্য তখনি বুজা যায় যখন মূল্যবান জিনিসটাকে মানুষ হারিয়ে ফেলে। আমার কারনে আজ আমার বোন বেচে নেই৷। আমি বেচে আছি ঠিকি৷ টুসির সৃতিগুলোকে আকড়ে ধরে বেচে আছি। আজ প্রায় এক মাস হয়ে এলো টুসি নেই। ওকে ছাড়া দিনগুলো খুব কস্টে কাটিয়েছি। কীভাবে কি হয়েছে এখনো কেও জানে না। আম্মা আব্বা জানে টুসি হারিয়ে গিয়েছিলো। পরে কীভাবে কি হলো টুসিকে কীভাবে পেলাম তারা তা জানে না। এই এক মাসে জেনি আমাকে একদমি একা ছাড়েনি। যখন তখন বাসায় এসে আমার খবর নিচ্ছে। জেনির সাথে আম্মার ভালোই ভাব হয়েছে। ওই এলাকা থেকে আমরা চলে এসেছি। দুঃস্বপ্ন ভরে আছে ওই জাগাটায়। আমি এখন আর রুম থেকে বের হই না। একবার দুবার বের হলেও ব্যাগে করে টুসির পুতুলটা নিতে ভুলি না। মাঝে মাঝে আকাশের পানে তাকিয়ে ভাবি কেনোই বা সেদিন রাতে বিল্ডিংটায় গেলাম। কেনোই বা স্টনের পিছু ছুটলাম। কেনোই সেদিনটা দূঃস্বপ্ন হলো না।
কথাগুলো ভাবলেই চোখ বেয়ে পানি ঝড়ে পড়ে। কিন্তু অনেক কিছু এখনো আমার কাছে রহস্যই থেকে গেলো। রিমাস মারা গেলেও সেদিন অনেকগুলো ডিম দেখেছিলাম। ওগুলোর কি হলো? আর দেয়াল ছেদ করে যেখানে গিয়েছিলাম ওটাই বা কোন জায়গা ছিলো? স্টনটাই বা কোথায় গায়েব হয়ে গেলো? প্রশ্ন অনেক জমা থাকলেও উত্তরের খাতা শূন্য রেখে দিয়েছি। একবার উত্তর খুজতে গিয়েছিলাম কিন্তু উত্তরের বদলে মূল্যবান কিছু হারিয়ে এলাম।

সমাপ্ত,,,

#দ্যা_লিফট কিছু দিন পর দেয়া হবে। রহস্যের উত্তরগুলো #দ্যা_লিফট গল্পতে খুজে পাবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here