অতএব_ভালোবাসি_তোমায়,পর্ব ;৬

0
1965

অতএব_ভালোবাসি_তোমায়,পর্ব ;৬
লেখিকা_আহিয়ানা_আহিরা

— তুই এত সুন্দর ম্যাচ করতে পারিস জানতাম না তো!
–আমি? আমি আবার কি ম্যাচ করলাম?
–এইযে! শাড়ির সাথে আমি তোকে কোনো লকেট দেইনি। কিন্তু এটা তোর জানি। তবে, মানিয়েছে।
–ওহ আচ্ছা। যাই হোক, আমরা কোথায় যাচ্ছি?
–শপিংমলে।
–মানে?
–হুম। আমি জানি আমার বউ এর মন খারাপ। তার শপিং এ কাল কিছুই কেনা হয়নি। তাই না?
–হ্যাঁ। বাট তোমার বউ মানে? তুমি আমাকে বউ বলছো কেন?
–আমি কখন তোকে বললাম?
–এইযে মাত্রই তো বললে; তোমার বউ এর মন খারাপ?
–ওহ? এটা বলেছি আমি?
–হ্যাঁ
–কেনো রে? আমার বউ হওয়ার ইচ্ছে আছে নাকি তোর?
শান্ত ভাইয়ার কথায় বোকা বনে গেলাম। রাগান্বিত হয়ে বড় বড় চোখ করে তার দিকে তাকিয়ে দেখি মিটিমিটি হাসছে। এখন কি বলবো তাকে? আমি যে সত্যি এক অদ্ভুত বেড়াজালে ফেঁসে আছি। তার চালচলন, ইদানীং কালের অতিরিক্ত কেয়ার, হুটহাট অসম্ভব সুন্দর স্মার্ট লুক নিয়ে সামনে আসা, কথা নেই বার্তা নেই ঠাস ঠাস কিস করে আমাকে অবাক করে দেওয়া আর এখন মুড ঠিক করা তো আবার রাগ ভাঙানো আমাকে ভাবতে বাধ্য করে সে আমাকে ভালোবাসে। কিন্তু সে হয়ত ভাই হিসেবে ভালোবাসে অথবা এমনি। আবার হুটহাট রেগে অপমান আর চড় দেওয়ার ধরন দেখে মনে হয়না আমাকে ভালোবাসে। আমিও বা কি ভাববো? আমি যে অসম্ভব ভালোবাসি। এত বুঝাই নিজের অবুঝ মনটাকে তাও বেহায়ার মত তাকেই ভালোবাসি।
–কিরে? বসে না থেকে নাম তো। আমাকে আর দেখতে হবে না আমি জানি তোর জামাই সুন্দর। হুহ
শান্ত ভাইয়ার কথায় ভাবনার জগৎ থেকে লাত্থি মেরে বের করে দাওয়া হলো আমায়। আর ভাবতে লাগলাম;
–এ্যাহ…! নিজেরে সুন্দর দাবি করে, সাদা ভাল্লুক । হুহ আবার নিজেকে আমার জামাই বানায়। ভাব কতো শালার।
–কিরে? নাম?
–আরে নামছি নামছি।
গাড়ি থেকে নেমে দেখলাম শপিং মলের সামনে গাড়ি পার্ক করা হয়েছে। নেমে দুজন নাচতে নাচতে শপিং করে, খাওয়া দাওয়া সেরে ঘুরতে এলাম। হাতিরঝিল এসেছি ঘুরতে। অনেক দিন আসা হয়না। প্রায় ৬বছর। আজ ভাইয়ার কাছে বায়না করেছিলাম তাই নিয়ে আসলো। অবস্য এখন সন্ধার শেষের দিকে। শপিং করে, খেয়ে আসতে আসতে দেরি হয়ে গেছে। চারদিকে শুধু বাতাস আর বাতাস। আঁকাবাঁকা গাড়ি চলাচলের ব্রিজ গুলোর পাশের ছোট দাঁড়ানোর জন্যের ব্রিজের কিনারা ঘেঁষে দাড়িয়ে আছি। আসে পাশে চোখ বুলাতে আর বাতাস উপভোগ করতে ব্যাস্ত আমি।
–সুহা?
–হুম?
–তাকা?
এতক্ষণ চোখ বন্ধ করে কিছুক্ষন আগে আসা জোর বাতাস উপভোগ করতে ব্যাস্ত ছিলাম। সামনে ঘুরে দেখি শান্ত ভাইয়া হাঁটু ভাজ করে সামনে বসে আছে।
–কি করছো তুমি?
–তোর পাটা দে তো।
–কেন?
–দিতে বলেছি দে। বাম পা টা দিস।(ধমক সুরে)
আমি ধমক খেয়ে চুপচাপ বাম পা এগিয়ে দিলাম। ভাইয়া আমার হিল জুতা একটানে খুলে আমার পা তার পায়ের উপর রেখে একটা বাজনাহীন নুপুর পরিয়ে দিলেন। তেমন আলো না থাকায় নুপুরটা দেখা যাচ্ছে না। তাই তাড়াতাড়ি পা নামিয়ে লাজুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললাম;
–ধন্যবাদের ভাইয়া।
–কেনো?
–নুপুরটার জন্য!
–ধন্যবাদ এর জায়গায় অন্য কিছু লাগবে।
–কি লাগবে? (চোখ ছোট ছোট করে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে)
–একটা ছোট্ট কিসসি?
ভাইয়ার কথায় অটোমেটিক চোখ জোড়া বড় বড় হয়ে গেল। বলে কি? কিস চাইছে?
–জানি তো। দিবি না। থাক লাগবে না।
–কে বললো দেবো না?
বলেই কাছে এসে শার্টের কলার টেনে নিচে নামিয়ে টুপ করে গালে চুমু একে দিলাম দুটো।
শান্ত ভাইয়া খুশিতে জরিয়ে ধরলেন কিছুক্ষণ। তার পর আমরা রওনা হলার বাসার উদ্দেশ্যে।
.
.
বাসায় এসেছি ১ঘন্টা ৩০মিনিটের মতন হলো। সবাই কি কি কিনেছে তা আমাকে দেখাতে ব্যস্ত। আমার জন্যও অনেক কিছু আনা হয়েছে।তাও আমার পাত্তা পাওয়া যাচ্ছে খুব কম। আমি একটু পর পর ঘুরিয়ে ফিরিয়ে মুচকি হেসে পায়ের নুপুরটা নেড়েচেড়ে দেখছি। বাসায় এসে রুমে ঢুকেই পা মেলে কতক্ষণ পর্যবেক্ষণ করেছি। সবচেয়ে অবাক হয়েছি ভাইয়া আমাকে বাজনাবিহীন নুপুর দিয়েছেন আর খুব সিম্পল। তবুও ভাল্লাগছে আমার। প্রিয় মানুষটার দেওয়া সব কিছুই হয়ত স্পেশাল লাগে।
–কিরে আপু? কি দেখছো তখন থেকে এমন ভেটকি মেরে?
–কই কিছু না তো। কিছু না।
–আরে দেখি। দেখি না।
–আরে ধুর। না বললাম না।
–আরে ওয়াও। এত সুন্দর নুপুর কে দিলো?
–কেও না।
–আরে বলো তো আমি কাওকে বলবো না। নিশ্চয়ই তোমার বয়ফ্রেন্ড?
–না মানে.!
–আপু???? তোমার বয়ফ্রেন্ড? ভাইয়া জানে? কোন ভাবে জানলে তুমি তো (gone) গোন।
–আরে জানবে না
–আচ্ছা দেখবো আমিও।
–আই চেলেন্জ
–হুহ…!
বলেই কায়া চলে গেল। আমি এখন ভাবছি কিভাবে শান্ত ভাইয়াকে মেনেজ করা যায়। তাকে যেকোনো মূল্যে এই বার্তা পৌছে দিতে হবে।
সারা বাড়ি খুঁজেও লাভ হলো না। মিস্টার. সুরভ আহমেদ শান্ত কে বাড়িট কোনো চিপায়ও খুঁজে পাওয়া যায়নি। ক্লান্ত হয়ে ছাদে এলাম।এটা আমার প্রতিনিয়তের কাজ। একদিন দু’দিন মিস যায়। কিন্তু আজ যেহেতু বাড়ি আছি তাই মিস গেল না। ছাদে এসেই দেখি ৬জন একসাথে আড্ডা দিচ্ছে। একজনকে দেখে মেজাজ বিগরে গেল। যে বান্দা সহসায় ছাদে আসে না সে আজ ছাদে বসে আড্ডা দিচ্ছে। সামনে আসতেই খেয়াল করলাম কায়া, শান্ত ভাই, রাহুল ভাই, মাহিরা ভাবি,উদয় আর শিহাব বসে আছে। শিহাব আর উদয় আমার চাচাতো ভাই। সামনে এসে সবাই বসতে বললো কিন্তু উদয় থামিয়ে বললো
–কিরে? সুহানা! তোর পায়ে নুপুর! কে দিলো রে?
–কে দেবে আবার? কিনেছি।
–ইস মিথ্যা বলো কেনো? তোমার বয়ফ্রেন্ড না দিয়েছে?
কায়ার এ কথায় সবাই ভয়ে চোখ বড় করে একবার আমাকে দেখছে তো একবার শান্ত ভাইয়াকে।
–বেশি কথা বলিস তুই কায়া….!
সবচেয়ে অবাক করণীয় বিষয় হলো শান্ত ভাইয়ার মধ্যে কোনো ভাবান্তর দেখা যাচ্ছে না। কি বলবে সে? সেই তো নিজ হাতে পড়িয়ে দিলো কাল। আমিও কিছু না বলে শান্ত ভাইয়ার গা ঘেঁষে বসে পড়লাম। অন্য দিন হলে ভাইয়া অনেক কথা শুনাতেন।কিন্তু আজ আরালে আমার কমর জরিয়ে নিলেন। আমিও পরম আবেশে তার কাঁধে মাথা রাখলাম। সবাই আমাদের দেখে বেশ অবাক হয়েছে।হোক। কদিন পর এমনি জানবে। ভাইয়া তো বলেই দিয়েছে তার একটা সত্য উদঘাটন হওয়ার পর আমাদের কথা সবাইকে জানাবে।সবাই আড্ডা দিয়ে নিচে নেমে আসলাম। সন্ধ্যা হয়ে গেছে কিছুক্ষণ হলো। মাগরিবের নামাজ শেষে এলাম সবাই ড্রইং রুমে বড়রা সবাই জরো হয়ে আছে। মূলত শান্ত ভাইয়ার কিছু কথা বলবেন শুনেই সবাই এখানে বসে আছে।
–কি হলো ভাইয়া আর কতক্ষন? বল এবার সবাই তো এখানেই।
–বলছি।
এরপর শান্ত ভাইয়া যা বললেন তা শুনে সবাই স্তব্ধ হয়ে গেল।
.
.
.
(চলবে…..)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here