প্রেম_এসেছিলো_নীরবে(৬)
সাদিয়া_জাহান_উম্মি
~`তোমাকে খুজে পাই ওই নীল আকাশে
পাইযে খুজে ওই মিষ্টি বাতাসে(২)
♪তোমায় ভালোবাসি, আমি ভালোবাসি
পেতে চাই আরো কাছে, আরো কাছে।
♪খুজে খুজে দুচোখ বুজে পাই তোমায় আরো কাছে,,
একি ডোরে বাধা দুজন, থাকবো সারা জনম ধরে। `~
সকাল সকালে বর্ষার এই সিক্ত শ্রাবন ধারায় নিজেকে প্রকৃতির মাজে বিলিয়ে দিয়ে তার মিষ্টি কন্ঠে প্রেমের গান গেয়ে চলেছে প্রাহি।কেন যেন তার আজ ভালো লাগছে।কাল রাত থেকেই তো বৃষ্টি শুরু হয়েছিলো।কাল রাত থেকেই মনটা শুধু যেন কেমন করছিলো বৃষ্টির ফোটাগুলো নিজের গায়ে মাখিয়ে শরীরটাকে সিক্ত করার জন্যে।তাই তো সকাল হতেই ছুটে এসেছে সে। গার্ডেনের বাম দিকে বিশাল বড় একটা আম গাছ, সেই গাছের সাথে সুন্দর করে দড়ি দিয়ে দোলকা বানিয়ে টানিয়ে রাখা হয়েছে।প্রাহি দোলনায় দোল খাচ্ছে আর মনের সুখে গান গাচ্ছে।আজ কতোদিন পর বৃষ্টির ছোয়া পেলো ও।মামির কাছে থাকতে পারতো না সে ভিজতে।কারন যদি বৃষ্টিতে ভিজে ওর শরীর খারাপ করে তাহলে ঘরের কাজ কে করবে?ওই লোকগুলো এতো এতো অত্যাচার করেছে ওর উপর।তাও কেন যেন ওই লোকগুলোর জন্যে মায়া হয় প্রাহির।মনটা যে মেয়েটার বড্ড নরম।হঠাৎ জোরো হাওয়ায় একটা জবাফুল তার কোলে এসে পরলো। জবাফুল গাছটা ঠিক আমটার সাথে ঘেসে লাগানো।প্রাহি ফুলটা হাতে নিয়ে সুন্দর করে কানের পিছে গুজে দিলো।তারপর চুলগুলো আলতো হাতে একসাইডে নিয়ে রাখলো।জামাটার বড় গলা হওয়ায় পিঠ অনেকখানি দৃশ্যমান সেখানে বাতাসের ঝাপ্টা এসে লাগাতে চোখ বন্ধ করে কেঁপে উঠে প্রাহি।চোখ খুলে অন্যপাশে তাকাতেই দেখতে পায় একজোড়া তৃষ্ণার্ত চোখ। যা তার দিকেই তাকিয়ে আছে।অর্থের এমন চাহনী সহ্য হচ্ছে না প্রাহির।লোকটা ভয়ংকরভাবে তাকায়।প্রাহির হৃদয় শুদ্ধ ভেবে উঠে লোকটার চাহনী দেখলে।এইযে এখনো কিভাবে যেন তাকিয়ে আছে।ওই চোখের দিকে প্রাহির তাকাতে ইচ্ছে করে।মোহময় ওই চোখজোড়ার ভাষা ওর পড়তে ইচ্ছে করে।কিন্তু তা যে ওর পক্ষে সম্ভব না।লোকটার মারাত্মক চাহনী দেখেই মনে হয় এই বুজি সে প্রাহিকে পুরোপুরি গ্রাস করে নিলো।প্রাহি আঁড়চোখে তাকালো আবারও অর্থের ব্যালকনির দিকে।লোকটা এখনো তাকিয়ে আছে ওর দিকে।ক্ষনে ক্ষনে কফির মগে এমনভাবে ঠোঁট ছোয়াচ্ছে।মনে হচ্ছে, মনে হচ্ছে।ইসস,আর ভাবলো না প্রাহি। ওর ছোট্ট মাথায় কিসব উলটাপালটা চিন্তাভাবনা আসে।নিজের গালেই নিজের কষিয়ে চড় মারতে ইচ্ছে করছে।লজ্জায় গাল দুটো লাল হয়ে উঠেছে।হঠাৎ অর্থের আওয়াজে ভুমিকম্পের মতো কেঁপে উঠে প্রাহি,
-” এই সকাল বেলা এইভাবে বৃষ্টির ভিজতে এসেছো কেন?শরীর যে অসুস্থ্য হবে সেটা জানো না?জ্বর আসলে তোমার রুমের ব্যালকনি থেকে ধাক্কা মেরে ফেলে দিবো।”
এমন থ্রেড শুনে প্রাহি আর নিজের মধ্যে নেই।পারলে এখানেই কাঁপতে কাঁপতে মরে যায়।প্রাহি তাড়াতাড়ি এউ জায়গা থেকে চলে যেতে নিলেই অর্থের রাগি আওয়াজ,
-” ডিড আই টেল ইউ টু গো?”
প্রাহি যেন এইবার কেঁদেই দিবো।কাঁদো কাঁদো গলায় বলে,
-” আ..আমার ঠা..ঠান্ডা লা..লাগছে।”
অর্থ দাঁতেদাঁত চিপে বলে,
-” এত্তোখন লাগছিলো না?যেই আমি এসেছি আর বলছো ঠান্ডা লাগছে।”
প্রাহি ঠোঁট ভেঙে কান্না আসছে।অর্থ এইবার চেঁচিয়ে উঠলো,
-” স্টপ,ডোন্ট লেট আ ড্রোপ অফ ওয়াটার ফল ফ্রোম ইউর আইছ।আদারওয়াইছ,আজ এই আম গাছের সাথেই সারাদিন বেধে রাখবো তোমাকে।”
প্রাহি এইবার মাথা নিচু করে নিজের কান্না সংবরন করার চেষ্টা করছে।অর্থ চোখ বন্ধ করে নিজের রাগ কমানোর চেষ্টা করলো।তারপর দাতেদাত চেপে বলে,
-” জাস্ট লিভ ইমিডিয়েটলি।”
প্রাহি আর একমুহূর্তও অপেক্ষা করলো না।দ্রুত পায়ে বাড়ির দিকে ছুটলো।ও এখন নিজের রুমে গিয়ে একটা হট সাওয়ার নিবে।তারপর কম্বল মুরু দিয়ে শুয়ে থাকবে।সে আর ওই ভয়ানক লোকটার সামনে পরতে চায়না।লোকটা আস্ত বজ্জাত।তাকে দেখকেই খালি ধমকাধমকি করে।কেন করে?কি করেছে সে তার?তার কোন বারা ভাতে সে মই দিয়েছে।উফফ! এখন একটু ঘুমাক সে।মাত্র সারে সাতটা বাজে।আরো একঘন্টা ঘুমানো যাবে।এই বাড়ির সবাই ন’টা বাজে লাঞ্চ করে।প্রাহি তারা একটা লম্বা গোসল দিয়ে কম্বল মুরি দিয়ে ঘুমিয়ে পড়লো।
—
অর্থের বুক কাঁপছে এখনো।মেয়েটাকে ভেজা শরীরে কি যে আবেদনময়ী লাগছিলো বলে বুজানো যাবে না।দোলানায় দোল খেয়ে প্রাহি যখন খিলখিল করে হাসছিলো।সেই হাসির ঝংকার তার বুকের বা পাশে একটা সূক্ষ্ম মিষ্টি ব্যাথা অনুভব করছিলো।লাল জবা ফুলটা ও যখন কানের পিঠে গুজে দিয়ে সবগুলো চুল একপাশে এনে রেখেছিলো।ভয়ংকর সুন্দর লাগছিলো প্রাহিকে।ওঠে ফর্সা খোলা পিঠে নিজের ঠোঁটের আবেশে সিক্ত করে দিতে ইচ্ছে করছিলো।ঠান্ডায় লাল হয়ে যাওয়া ঠোঁটগুলো চুম্বকের ন্যায় টানছিলো তাকে।নিজেকে প্রাহির জন্যে পুরো উন্মাদ লাগছিলো।কিভাবে যে নিজেকে সে সামলিয়েছে একমাত্র সে নিজেই জানে।তবে কি সেই এই পিচ্চি মেয়েটার প্রেমে পরেছে?সত্যিই তা হয়।তাহলে এই ভয়ানক সর্বানাষা অনুভূতিতো তাকে তিলে তিলে মেরে ফেলবে।আর এই পিচ্চি মেয়েটাই কি আদৌ বুজতে পারবে কিছু তার জন্যে?সে বুজবে অর্থের এই নিষিদ্ধ অনুভূতি?নাহ! অর্থ’র আগে ওর বন্ধু আরাফের সাথে কথা বলতে হবে।একমাত্র সেই পারবে অর্থ’র সকল প্রশ্নের উত্তর দিতে।সাথে সাথে সে কল লাগালো আরাফের নাম্বারে।ফোন রিসিভ হতেই দুজন সালাম বিনিময় করে ভালোমন্দ জিজ্ঞেস করলো।তারপর আস্তে আস্তে অর্থ নিজের সকল অনুভূতি, সকল প্রশ্নগুলো বললো আরাফ কে।সবটা শুনে আরাফ বিষ্মিত,থমকিতো।এটা কি শুনছে সে?যে বন্ধু একের পর এক মেয়ে নিয়ে টাইমপাস করেছে।টেম্পোরারি রিলেশন করেছে।কখনো কোন মেয়ের প্রতি তার কোনরূপ কোন অনুভূতিই ছিলো না।আজ সেই বন্ধুই না-কি ষোলো বছরের একটা ছোট্ট পিচ্চির মায়ায় পড়েছে।কিন্তু কিভাবে? আরাফ একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো।মানুষ আল্লাহ্ তায়ালার সৃষ্টি।সে তার বান্দাদের সাথে যখন যা মন চায় তাই করতে পারে।আরাফ বললো,
-” দেখ অর্থ যেমনই হোক তুই প্রাহিকে ভালোবেসে ফেলেছিস।ঠিক যেমনটা আমি ভালোবাসি তোর বোনকে।তোর বোনটাও তো কম না আমার থেকে নয় বছরের ছোট। ”
অর্থ গম্ভীর স্বরে বললো,
-” কিন্তু ও আমার থেকে বারো বছরের ছোট।কান্ট ইউ ইমাজিন?”
-” আরে চিল ইয়ার।কতো মানুষ আছে পৃথিবীতে যারা কাপলরা প্রায় টুয়িন্টি ইয়ার্স এর ছোট বড়।”
অর্থ হতাশ নিশ্বাস ত্যাগ করে বলে,
-” আম জাস্ট গোয়িং টু বি ম্যাড ইয়ার।”
-” ডোন্ট প্যানিক।এব্রিথিং গোনা বি অলরাইট।”
-“হুম ওকে বাই।”
-” বাই টেক কেয়ার।”
অর্থ নানারকম চিন্তা ভাবনা করতে করতে নিচে নেমে আসলো।আজ আর অফিসে যাবে না।এমনিতেই বৃষ্টি আবার তার চিন্তায় চিন্তায় অস্থির লাগছে।নিচে নামতেই দেখলো সবাই এসেছে শুধু হিয়া আর প্রাহি বাদে।অর্থ ভ্রু-কুচকে বসে পড়লো সোফায়।কিছুক্ষন বাদেই প্রাহি আর হিয়াকে নিচে নামতে দেখলো।প্রাহিকে দেখতেই যেন ওর সকল প্রকার অস্থিরতা যেন নিমিষেই বিলীন হয়ে গেলো।প্রাহি এসেই ডায়নিং টেবিলের চেয়ারে বসে পরলো।তারপর টেবিলে মাথা ঠেকিয়ে রাখলো।মাথাটা ব্যাথায় ছিড়ে যাচ্ছে।হঠাৎ অনেকদিন পর বৃষ্টিতে গোসল করাতেই বোধহয় এমন লাগছে।শরীরটাও ম্যাজ ম্যাজ করছে।হিয়াও চিন্তিত হয়ে কিছুক্ষন পর পর এটা ওটা জিজ্ঞেস করছে।কিন্তু মেয়েটা বারবার বলছে যে ও ঠিক আছে।রায়হানা বেগম সবাইকে খেতে ডাক দিলেই সবাই গিয়ে ডায়নিং এ গিয়ে বসে।প্রাহিকে এইভাবে ঝিমুতে দেখে তিনি জ্ঞিজ্ঞেস করেন,
-” প্রাহি মামুনি তুমি ঠিক আছো?”
প্রাহি জোড়পূর্বক হাসলো। বললো,
-” হু! ঠিক আছি! আসলে রাতে ঘুম হয়নি ভালোভাবে তাই হয়তো।সমস্যা নেই আমি নাস্তা করে গিয়ে আবার একটু ঘুমাবো।”
অর্থ শুধু গম্ভীর হয়ে বসে আছে।আর কিছুক্ষন পর পর প্রাহির দিকে তাকাচ্ছে।প্রাহি বেশি কিছু খেলো না একটা স্যান্ডউইচ এর অর্ধেক খেলো।আর হেনা’র জোড়াজুড়িতে দুধটুকু খেয়ে নিলো।তারপর সবাইকে বললো সে ঘুমাবে তাই উঠে চলে যাওয়া ধরলো নিজের রুমের দিকে।দু তিন কদম বারাতেই মাথা ঘুরে উঠলো কেমন।অর্থ ও খাওয়া থামিয়ে দিয়েছে সেই কখন। প্রাহি সিড়ি বেয়ে উপরে উঠলে নিলে আবারও মাথা ঘুরে উঠলো তার।এইবার আর নিজেকে সামলাতে পারলো না সে।মাথা ঘুরে পরে যেতে নিলেই একজোড়া হাত শক্তপোক্ত ভাবে জড়িয়ে ধরলো।জ্ঞান হারিয়ে ফেললো প্রাহি।অর্থ আর এক সেকেন্ড দেরি না করে দ্রুত প্রাহিকে কোলে করে নিয়ে তার রুমের দিকে ছুটলো।
#চলবে_______