প্রেম_এসেছিলো_নীরবে(বোনাস পর্ব)
সাদিয়া_জাহান_উম্মি
(বিঃদ্রঃটা পড়বেন)
হিয়াজ সিকদার বেজায় রেগে আছেন অর্থ’র উপরে।তার ছেলে যে এমন কিছু করবে সে ভাবতে পারেনি।রাগি চোখে অর্থকে উদ্দেশ্যে করে বললো,
-” কেন এমনটা করলে?এটা খুব জরুরি ছিলো?আমরা সবাই জানি যে তুমি আহিকে ভালোবাসো। তাই বলে কি প্রাহির সাথে যা মন চায় তাই করবে?তোমাকে এই শিক্ষা দিয়েছি আমরা?নিজের রাগকে নিয়ন্ত্রন করতে শিখো অর্থ।তোমাকে যদি আমি কখনো আর কোনদিন প্রাহির গায়ে হাত তুলতে দেখি আমি প্রাহিকে অনেক দূরে পাঠিয়ে দিবো বলে দিলাম।তুমি প্রাহিকে আর কোনদিন আর প্রাহিকে পাবে না।”
রায়হানা বেগমও রেগে আছেন বেজায়।তিনি বললেন,
-” ভালোবাসা আগলে রাখতে শিখো।রাগ সবকিছু ধ্বংশ করে দেয়।রাগের মাথায় এমন কিছু করোনা যাতে তোমার প্রিয় মানুষগুলো কষ্ট পায়।তোমার এই অতিরিক্ত রাগের কারনেই আমি তোমাকে মাত্র ১১ বছর বয়সে তোমার মামাদের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছিলাম।সেখানে গিয়ে চিকিৎসাও করিয়েছি তোমার।এই অতিরিক্ত রাগের জন্যে।চিকিৎসার কারনে অনেকক্ষানি রাগ কমে এসেছে।আমাদের সাথে রাগ দেখাতে না।কিন্তু বুজলাম না প্রাহি আসার পর থেকে তোমার রাগের মাত্রাটা বেরে গেছে অনেক।এমন হলে আমি তোমাকে আবারও তোমার মামা মামির কাছে পাঠিয়ে দিবো।আবার তোমাকে চিকিৎসা নিতে হবে এই রাগ কমানোর জন্যে।”
অর্থ মাথা নিচু করে আছে।সে বুজতে পারছে আজ সত্যিই প্রাহির গায়ে হাত তোলা ওর উচিত হয়নি।কিন্তু সে নিজের রাগটা নিয়ন্ত্রন করতে পারিনি।তবে প্রাহির জন্যে তার ভালোবাসাটা মিথ্যে না।নাহ,তাকে আবারও ডাক্তারের সর্নাপন্ন হতে হবে।আবারও মেডিসিন খেতে হবে।প্রাহির জন্যে হলেও ওকে বদলাতে হবে।ওর রাগের মাত্রা কমাতে হবে।অর্থ সবার দিকে একপলক তাকিয়ে উপরে নিজের রুমে চলে গেলো।হেমন্ত, আরাফ আর হিয়াও বুজতে পারছে।যেটা স্বাভাবিক বিষয়ভেবে হেসে উড়িয়ে দিয়েছিলো।সেটা আসলেই স্বাভাবিক না।প্রাহিকে মারাটা অর্থ’র একদম ঠিক হয়নি।তাই তারাও মাথা নিচু করে বসে আছে।হেনা কিছুই বলছেন না।কারন তিনি জানেন সকালে রায়হানা বেগমকে চুপ করালেও তিনি যে হিয়াজ সিকদারকে সব বলে দিবেন তা তিনি খুব ভালো জানেন।তাই তো সকালে আর কোন ঝামেলা করেননি।কারন সকালে তিনি যদি কিছু বলতেন তাহলে এটা ঠিক হতো না।কারন অর্থ’র বাবা মা আছেন।তারা অর্থ’র শাষন করতে পারবেন।তিনি আগ বারিয়ে কিছু বলা ঠিক হবে না।যদি দেখতো হিয়াজ বা রায়হানা কিছু না বলতেন তাহলে তিনি কিছু বলতেন।কিন্তু তিনি জানেন হিয়াজ আর রায়হানা কখনো ছেলেমেয়ের অন্যায় মেনে নেন না।অর্থকে বুজানোর দায়িত্ব আগে ওর বাবা আর মার তারপর তাদের।নুরুল আমিন সিকদার হিয়াজ সিকদারকে শান্ত করলেন।বললেন তিনি নাতিকে বুজিয়ে বলবেন যাতে এরকম যেন আর না করে।তবে মনে মনে তিনিও একটু রেগেছেন অর্থ’র উপর।হিয়ান্ত সিকদার ভাইয়ের সাথে কথা বলছেন আর তাকে বুজাচ্ছেন সবটা।
——-
বেডে মাথা নিচু করে বসে আছে প্রাহি।ওর চোখ দিয়ে অস্রুকনা গড়িয়ে পরছে।জীবনটা এতো কঠিন কেন ওর জন্যে?সবার সামনে হাসি খুশি আর বাচ্চামো করে মেতে থাকলেও।ওর ভীতরটা তো আর কেউ জানেনা তাই না?সে হাসিখুশি থাকে কারন ও চায়না ওর মন খারাপ দেখে বাকিরা কষ্ট পাক।ও এই কারনে হাসি খুশি দুষ্টুমি করে কারন ওকে খুশি দেখে যেন বাকিরাও খুশি থাকে।কিন্তু আজ আর পারছেনা নিজেকে ধরে রাখতে।এতোদিনের কষ্টগুলো যেন বাধ ভাঙ্গা জোয়ার হয়ে বেরিয়ে আসতে চাইছে।নিজের সাথে লড়াই করতে করতে ও ক্লান্ত।আজ বিনা কারনে সে শাস্তি পেয়েছে।কেন পেলো?কি দোষ ওর?সে তো আর ইচ্ছে করে যায়নি ছেলেটার কাছে তাই না?এতোদিন লোকটার সবকিছু সে মেনে নিয়েছে।কারন বাড়িটা তাদের।তারা ওকে এতো সুন্দর ভাবে থাকতে, খেতে,পড়তে দিচ্ছে এটাই তো অনেক।তাই কিছু বলতো না।কিন্তু আজ লোকটা থাপ্পড় মেরেছে আবার বিনা অনুমতিতে ওকে স্পর্শও করেছে।তবে প্রাহিকে নিজেকে নিজেই অনেকগুলো থাপ্পড় মেরেছে।কারন তখন কেন লোকটাকে থামাতে পারিনি ও।কেন লোকটার বুকে মাথা রেখে কেঁদেছে।মনে হয়েছে ওই লোকটার বক্ষস্থল ওর কাছে দুনিয়ার সবথেকে নিরাপদ স্থান।কেন পারেনি দূরে ঠেলে দিতে?কেন?নিজেরই নিজেকে শেষ করে দিতে ইচ্ছে করছে প্রাহির।লোকটার সামনে সে আর কখনো যাবে না প্রাহিকে।যাবে না।এগোরটা বছর যাবত তিলে তিলে শেষ হয়েছে সে।ওর মতো বয়সে মেয়েরা রাজকন্যা হয়ে থাকতো আর সে থেকেছে কাজের মেয়ে হয়ে।তবুও মিথ্যে হাসি ঠোঁটে ঝুলিয়ে এই বাড়ির প্রতিটা লোকের সামনে থেকেছে।বাচ্চামো করে বুজিয়েছে সে এখানে এসে ভালো আছে।কিন্তু তার ভীতরের শূন্যতাটা কেউ অনুভব করতে পারেনি কেউ না।রাতের অন্ধকারে হাজারো অস্রুকনা দিয়ে সে যখন বালিশ ভিজিয়ে কাঁদে সেটাও যেন কেউ না বুজে তাই হাসতে থাকে সে।ঠিক একদিন এমন করে মিথ্যে হাসি হাসতে হাসতে একদিন সে এই পৃথিবীটাও ত্যাগ করবে।কিন্তু তার যে এখনি মরে যেতে ইচ্ছে করে।বাঁচতে ইচ্ছে করেনা।অন্যের উপর নির্ভরশীল হয়ে বাঁচাটা যেন গলায় কাটার মতো বিধে থাকে ওর।পারছে না সে আর এই মিথ্যে অভিনয় করতে।ক্লান্ত অনেক ক্লান্ত ও।সে চিরনিদ্রায় যেতে চায়। কিন্তু আদৌ কি তা সম্ভব?
#চলবে___
গত পর্ব হয়তো কারো মনমতো হয়নি তাই আমি সবার কাছে ক্ষমাপ্রার্থী।আমাকে ক্ষমা করবেন।ভালোবাসা সবার জন্যে।ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন আর আমার ভুল হলে ধরিয়ে দিবেন।তাহলে আমি অনেক খুশি হবো।