প্রেম_এসেছিলো_নীরবে(২৩)

0
1999

প্রেম_এসেছিলো_নীরবে(২৩)
সাদিয়া_জাহান_উম্মি

রিসোর্টের নিচের হলে অর্থ’র পরিবার, আরাফের পরিবার দাড়িয়ে আছে সাথে ইশিও আছে।আর বাকি যারা তাদের রুম হতে বের হতে নিষেধ করা হয়েছে।প্রাহি ঘুমাচ্ছে।ওকে ঘুমের ঔষুধ দেওয়া হয়েছে।অর্থ ইলফা আর ওর মায়ের দিকে ক্ষুব্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।চোখজোড়া রক্তিম লাল বর্ণ।নাক,কান লাল হয়ে আছে রাগের কারনে।কালচে খয়েরী ঠোঁটজোড়া তিরতির করে কাঁপছে।কালচে বাদামী চোখজোড়া দিয়ে যেন পারলে সব ধ্বংশ করে দিবে।অর্থ ধীরপায়ে এগিয়ে যায় ইলফার দিকে।অত্যন্ত শীতল কন্ঠে বলে,
—” তা ইলফা শুনলাম তোমার সাহসীকতা নাকি অনেক বেশি?”
অর্থ’র এমন শীতল কন্ঠস্বর শুনে যেন ইলফা হালকা ঘাবড়ে গেলো।তবুও বাহিরে তা প্রকাশ করলো না।বুকের উপর দুহাত আড়াআড়িভাবে ভাঁজ করে বলে,
—” ইয়েস। ইউ আর রাইট।আমার সাহসটা একটু বেশি।”
অর্থ হাসলো।হিংস্র দেখালো সেই হাসি।বিদ্রুপি কন্ঠে বললো,
—” তাই বলে একটু বেশি-ই সাহস দেখালে নাহ?ডোন্ট ইউ নো দ্যাট আই আম অর্থ সিকদার।আর এই অর্থ’র কলিজাকে কেই আঘাত করলে যে অর্থ সেই ব্যাক্তির কলিজা ছিড়ে শিয়াল কুকুরদের খাইয়ে দেয়। স্যে সামথং?ডোন্ট ইউ নো?”
ইলফা ভয় পেলো।মেয়েটা কি তবে ওকে দেখে ফেলেছিলো ধাক্কা দেওয়ার সময়।কিন্তু কিভাবে হলো?এতোটা আড়ালভাবে সে ধাক্কা দিয়েছিলো বুঝার উপায় ছিলো না।
এর মাজে আরাফ প্রশ্ন করে উঠলো,
—” কি হয়েছে অর্থ? তুই এতো রেগে কেন? আর এইরাতে এখানে সিনক্রিয়েট কেন করছিস?ভুলে গেছিস এটা আমাদের বাড়ি না এটা একটা রিসোর্ট। এখানে আরো অনেক মানুষ আছে অর্থ।দোস্ত কোন সমস্যা হলে আমাকে খুলে বল।”
অর্থ ওর অগ্নিঝরা চোখ দিয়ে আশপাশ তাকালো।দু একটা হোটেল কর্মিচারি আছে।আর বাকিরা ঘুমাচ্ছে।অর্থ চোখ বন্ধ করে নিজেকে সামলে নিলো।ইলফা আর ওর মা আরাফের ফ্যামিলি।ও কে একটু মাথা ঠান্ডা করতে হবে।কারন ও তার বন্ধুর থেকে বেশি ভাইকে কষ্ট দিতে চায়না।অর্থ রাগ সামনে চাপা স্বরে বলে,
—” তোর কাজিন কি করেছে ওর থেকেই আস্ক কর।”
আরাফ ভ্রু-কুচকে তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে তাকায় ইলফার দিকে।এই অসভ্য মেয়েটা আবার কি করেছে।এটাকে একদম দেখতে পারেনা আরাফ।ও বলে,
—” ইলফা কি করেছিস তুই যে,অর্থ এমন রেগে আছে?”
ইলফা ভয়টাকে সামলে নিলো।ফাঁকা ঢোক গিলে বলে,
—” আমি কিছুই করিনি তো ভাই।”
ব্যস,এটাই যথেষ্ট ছিলো অর্থ’র চাপা রাগটা সিংহের ন্যায় বেড়িয়ে আসার।অর্থ রায়ে হংকার দিয়ে বলে,
—“আই উইল কিল ইউ, আই উইল কিল ইউ নোইংলি। তুই আমার প্রাহিকে ধাক্কা দিয়ে রক্তাক্ত করেছিস।তুই কি বুজেছিস আমি জানবো না।ডু ইউ নো দ্যাট ফোর দিছ ওয়ার্ক ওফ ইউর্স নাউ আই ওয়ান্ট টু কাট ইউ ইন্টু পিছেছ।শুধু আরাফের কাজিন বলে এখনো কিছু বলছিনা। ক্যারেক্টারলেছ ওমেন।”
ইলফা রেগে গেলো।চিল্লিয়ে বলে,
-” প্রমান ছাড়া এই কথা কিভাবে বলছো তুমি অর্থ?”
অর্থ বাঁকা হাসলো।ধীর কন্ঠে ইশিকে উদ্দেশ্য করে বলে,
-” ইশি কাম এন্ড সো দেম দ্যাট ভিডিও।”
ইশি এগিয়ে এসে নিজের ফোন বাহির করে একটা ডিডিও সবাইকে দেখালো সেখানে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে ইলফা প্রাহিকে ধাক্কা দিয়েছে।আসলে তখন রিসোর্টে আসার পথে ইশি নিজের ফোন দিয়ে সমুদ্র আর আশেপাশে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যগুলো ক্যামেরায় বন্ধি করছিলো আর সেই ভিডিওটায় ইলফার এই জঘন্য কাজটাও রেকর্ড হয়ে যায়।ইলফা ভয় পেয়ে তরতর করে ঘামতে লাগলো।তবু দমে না গিয়ে গলার স্বর খানিক জোড়ালো করলো
—” আমি তো ইচ্ছে করেনি।ওটা ভুলবশত হাটতে গিয়ে প্রাহির সাথে ধাক্কা লেগে গিয়েছিলো।আর ধাক্কা খেয়ে প্রাহি পরে গিয়েছে।”
অর্থ’র রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে।একটা মেয়ে কতোটা মিথ্যে বলতে পারে তা ইলফাকে দেখলে বুজা যেতো না।রাগে অর্থ হাতের কাছে একটা সো-পিছ পেয়ে তা সজোড়ে আছার মারলো।রায়হানা দৌড়ে ছেলের কাছে গেলেন।অর্থ বাহুতে আলতোভাবে হাতের স্পর্শ করে বললেন,
—” রাগে না বাবা।মাথাটা ঠান্ডা কর বাবা।তোর আব্বু তো আছেন তোর চাচা আছে আরাফের বাবা আছেন উনারা দেখছেন বিষয়টা তুই শান্ত হো বাবা।”
অর্থ মায়ের কোমল হাতের স্পর্শ পেয়ে খানিকটা ঠান্ডা হলো।এই মানুষটার সামনে ও কখনই রাগ নিয়ে থাকতে পারে না।তার মা কমল হৃদয় ধারন করা জননী।যিনি তার সন্তানকে অনেক ভালোবাসে।ইলফা সেদিক থেকে দৃষ্টি সরালো।সাহস নিয়ে আবার কিছু বলতে নিবে তার আগেই চটাস করে একটা রাম চড় এসে তার গালে পরলো।গালে হাত দিয়ে স্তব্ধ হয়ে গেলো ইলফা।ফর্সা মুখ রক্তিম হয়ে গিয়েছে।মাথা উচিঁয়ে তাকিয়ে দেখে আরাফের বাবা রাগী চোখে তাকিয়ে আছে ওর দিকে।ইলফা কাঁপা গলায় কিছু বলবে তার আগে আরেকটা চর মারেন তিনি।ইলফা এইবার ফুপিয়ে কেঁদে উঠেন।আরাফের বাবা চেঁচিয়ে বলেন,
—” তুই কি মনে করেছিস?আমি বুজিনি যে তুই সব কিছু ইচ্ছে করে করেছিস?আরে তোকে আমি হারেহারে চিনি।তোর বাবা নেই।আর আমার একটা মেয়ে নেই।আমি ছোট থেকে তোকে নিজের মেয়ের থেকেও বেশি আদর যত্নে বড় করেছি।তাই তুই কি করতে পারিস আর পারিস না আমি খুব ভালোভাবেই জানি।তুই কালই চলে যাবি বিদেশে আবার।এখানে তোর থাকা চলবে না।”
ইলফার মা ভয়ে ভয়ে মেয়ের হয়ে কিছু বলতে নিবেন তার আগেই আরাফের বাবা হাত উঠিয়ে উনাকে থামিয়ে দেন।বলেন,
—” তুমি অন্তত কিছু বলো না।মেয়েটাকে নষ্ট করার পিছনে এক মাত্র হাত তোমার।তাই অন্তত তুমি কোন সাফাই গাইতে আসবে না।এখন দুজনে উনাদের কাছে ক্ষমা চাও।নাহলে আমি ইলফাকে জেলে পুরে দিবো।কারন ও যা করেছে তা একপ্রকার এটেম টু মার্ডার কেস। ”
ইলফা আর ওর মা জেলের কথা শুনে ভয় পেলেন।তড়িঘড়ি করে অর্থ’র ফ্যামিলির কাছে ক্ষমা চেয়ে নিলেন।ইলফা বললো ও আর কখনই এই কাজ করবে না।রায়হানা বেগম আরাফের বাবাকে বুজালেন।ইলফা যেহেতু ক্ষমা চেয়েছে তাই ওকে আর বিদেশে যেতে দিতে না
একমাত্র ভাইয়ের বিয়েটা অন্তত এঞ্জয় করুক।পরে নাহয় চলে যাবেন।আরাফের বাবা রাজি হলেন তিনিও ক্ষমা চাইলেন অর্থ’র ফ্যামিলির কাছ থেকে।তারপর আস্তে আস্তে মুরব্বিরা যার যার বরাদ্ধ করা রুমে চলে গেলো।অর্থ, আরাফ আর হিয়াও চলে যাচ্ছে।ইশি সিড়ি দিয়ে উপরে উঠছে।এর মাজেই হেমন্ত ওর কানে কানে বলে,
—” আমি তো ভাবি তুমি ভীতুর ডিম।কিন্তু সঠিক জায়গায় সুষ্ঠভাবে অন্যায়ের বিরুদ্ধে খুব ভালোভাবে স্টেপ নিতো পারো।একটুও ভয় পাও না।আই লাইক ইট।কিন্তু আমার বেলাতেই তোমার যতো ভয়। এন্ড আই ডোন্ট লাইক ইট।”
শেষের বাক্যটা মুখ গুমড়া করে বললো ইশির দিকে তাকিয়ে হেমন্ত।তারপর চোখমুখ অন্ধকার করে নিজের রুমে চলে গেলো।ইশি হা করে হেমন্ত’র দিকে তাকিয়ে রইলো।পরক্ষনে মাথা নিচু করে হেসে দিলো।এই লোকটাও না আস্তো পাগল।নিজে তো ‘ ভালোবাসি ‘ বলবেই না।আবার নিজে নিজেই কষ্ট পাবে।কি মনে করেছে ইশি কি বুজে না যে হেমন্ত ওকে ভালোবাসে?উহুম! ইশি সব জানে তবুও কিছু বলে না।ইচ্ছে করেই হেমন্তকে এভোয়েট করে।কি করবে আর ও?রাগ লাগে ইশির প্রচন্ড রাগ? এই লোকটা এমন কেন?কে বলবে যে হেমন্ত অর্থ’র ভাই।অর্থ কি সুন্দর নিজের মনের কথা অকোপটে বলে বেড়াচ্ছে।আর সেখানে হেমন্ত ওকে শুধু দেখতেই থাকে দেখতেই থাকে।’ ভালোবাসি’ তো দূরে থাক, ‘ ভালো আছো?’ এটাও ঠিকভাবে জিজ্ঞেস করতে পারে না সে ইশিকে।ইশি শুধু অপেক্ষায়ই করে কবে হেমন্ত ওকে নিজের মনের কথা বলবে।আর ইশিও অকোপটে সেদিন ওর মনের কথা বলে দিবে।কিন্তু লোকটা কিছুই বলে না।মুখ ফুলিয়ে ইশিও রুমে চলে গেলো।
——–

—” আমি ছারবো না ওই মেয়েকে। কিছুতেই ছাড়বো না।বাবা আমাকে আজ মারলো ওই মেয়ের কারনে।আমি এই অপমান ভুলবো কিছুতেই না।অর্থ আমার হবে। আমারই হবে। আর ওই মেয়েকে মরতে হবে।” নিজের রুমে বসে মদ গিলছে ইলফা আর ক্ষনে ক্ষনে এই কথাগুলো বলেই হিংস্র হাসিতে মেতে উঠছে।ওর চোখে মুখে হিংস্রাতা স্পষ্ট।

কি হতে চলেছে প্রাহির সাথে।সামনে কি হবে প্রাহির।অর্থ কি পারবে তার প্রাহিকে ঠিকঠাক তার বুকের মাজে আগলে রাখতে?যদি না পারে তবে……!

#চলবে_______

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here