প্রেম_এসেছিলো_নীরবে(২৬)

0
2411

প্রেম_এসেছিলো_নীরবে(২৬)
সাদিয়া_জাহান_উম্মি

‘ সুন্দরভাবে এই ড্রেসটা পরে রেডি হয়ে একেবারে ইশি আর হিয়ার সাথে নিচে আসবে।তার আগে একা একা পাকনামি করে নিচে আসার দরকার নেই তোমার।যদি দেখি যে একা একা বাহিরে বের হয়েছো মেরে তোমার ঠাং ভেঙ্গে দিবো।’
মেসেজটা পরেই মুখ ফুলালো প্রাহি।লোকটা এতো অসভ্য কেন?ড্রেসটা দিয়েছে ভালো কথা। তা ভালোভাবে বলা যায় না?এইভাবে মেসেজেও হুমকি ধামকি দেওয়া লাগবে তার?এ কেমন লোকের প্রেমে পরলো সে।প্রাহির এমন পেঁচার মতো মুখ দেখে ইশি হেসে দিয়ে বলে,
—‘ কি হয়েছে প্রাহি?এইভাবে মুখ ফুলিয়ে আছো কেন?’
প্রাহি ইশিকে মেসেজটা দেখালো।মেসেজটা পরেই খিলখিল করে হেসে দিলো।প্রাহি নাক মুখ কুচকে বললো,
—‘ হেসো না তো আপু।ভালো লাগে না একদম।উনি সদা এমন করেন।শুধু শুধুই ধমক দেন আমাকে।’
ইশি দুষ্টু হেসে বললো,
—‘ শুধু ধমকই দেন ভাইয়া। আদর সোহাগ বুঝি করে না?’
ইশি ভ্রু নাচাচ্ছে প্রাহির দিকে তাকিয়ে।আর প্রাহির মুখ লজ্জায় রক্তিম আভা ধারন করলো।ইসস,এই লোকটার কথা ভাবলেই চারপাশটা কেমন ভালোলাগায় ছেঁয়ে যায়।ইশি খপ করে প্রাহির পাশে বসে কৌতুহলি স্বরে বলে,
—‘ এই প্রাহি বড় বোনের মতো একটা কথা জিজ্ঞেস করবো।মাইন্ড করবে তুমি?’
প্রাহি চোখ পিটপিট করে তাকালো ইশির দিকে।অতোশতো না বুঝো ডানে বামে মাথা নাড়ালো।মানে না সে মাইন্ড করবে না।ইশি এইবার চওড়া একটা হাসি দিলো। তারপর বলে,
—‘ আচ্ছা ভাইয়া কি তোমাকে কখনো লিপ কিস করেছে?’
কথাটা শোনা মাত্রই প্রাহির বড় বড় চোখ করে তাকালো। নেত্রপল্লবগুলো পর পর ঝাপ্টালো।ঠোঁট দুটো নিজের অজান্তেই আলাদা হয়ে ছোট খোট হা হয়ে গেলো।কি বলে এসব ইশি।সে ইশির থেকে এমন একটা কথা জীবনেও আশা করেনি।কে বলবে এই মেয়ে এইসব প্রশ্নও জিজ্ঞেস করতে পারে।নিজে দেখো ছেলে মানুষ দেখলে একশো হাত দূরে থাকে।বড় মুরব্বি মানুষদেরকেও অনেক সম্মান করে।বিধায় তাদের সামনে চুপচাপ থাকে।তবে যখন একা থাকে একমাত্র হিয়া আর এখন প্রাহির সামনেই ওর চাঞ্চল্য স্বভাবগুলো বেড়িয়ে আসে।নাহলে বোম মারলেও অন্যসব মানুষদের সামনে একটু জোড়ে কথা বলাতে পারবে না।যা করবে সব চুপচাপ করে যাবে।
প্রাহি লাফ দিয়ে বিছানা থেকে উঠে দাড়ালো।তারপর দ্রুত ডানে বামে মাথা নাড়াতে নাড়াতে বললো,
—” আরে আপু এসব কি বলছো?ছিঃ ছিঃ উনি এসব কখনই করেননি।আস্তাগফিরুল্লাহ!! এসব বলো না!’
ইশি উঠে দাড়ালো। দু হাত কোমড়ে রেখে বলে,
—‘ মিথ্যে কেন বলছো?তোমরা যেহেতু প্রেম করছো তাহলে এটা তো স্বাভাবিক।’
প্রাহি মাথা নিচু করে বললো,
—‘ নাহ আপু।উনি কখনও এসব করেন নি।ইনফেক্ট কখনো ওইসব ভাবনা চিন্তা নিয়ে আমাকে স্পর্শও করেননি।আমি বুজতে পারি।’
ইশি হা হয়ে তাকিয়ে রইলো প্রাহির দিকে।মেয়েটার চেহারা দেখে বুঝলে প্রাহি সত্যি বলছে।ইশি অবাক কন্ঠে বলে,
—‘ তাহলে তোমাকে একটা কিসও করেনি?’
প্রাহি আঁড়চোখে তাকালো ইশির দিকে।তারপর হালকা আওয়াজে বলে,
—‘ কপাঁলে,গালে চুমু খান।আর মাজে মাজে দু এক সময় ঘাড়ে চুমু খেয়েছিলেন।এর বেশি আর কখনো না।’
বলতে বলতে লজ্জায় প্রাহির গাল দুটো লাল টমেটো হয়ে গেলো।ইশি প্রাহিকে জড়িয়ে ধরলো।হেসে বললো,
—‘ হয়েছে। আর লজ্জা পেত হবে না।এখন এই ড্রেস পরে নেও।ফাংশন আর কিছুক্ষন পরেই শুরু হবে।’
প্রাহি মাথা নাড়ালো।ঠিক তখনি ওয়াশরুম থেকে বের হলো হিয়া।সবুজ রঙের লেহেঙ্গায় অসম্ভব সুন্দর লাগছে।মুখে কোন মেক-আপ নেই।প্রাহি গিয়ে হিয়াকে জড়িয়ে ধরলো।খুশির আমেজ কন্ঠ নিয়ে বলে,
—‘ ইসস! আপু তোমাকে এই ড্রেসে কি সুন্দর লাগছে।ভাইয়ার পছন্দ অনেক সুন্দর।আজ ভাইয়া তোমাকে দেখলেই কুপোকাত।’
হিয়া প্রাহি আর ইশির দিকে তাকিয়ে দুষ্টু কন্ঠে বলে,
—‘ সে নাহয় আরাফকে আমি সামলে নিবো।তোরা দুটো আমার দুভাইকে সামলে রাখিস।’
প্রাহি লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে নিলো।আর ইশি হকচকিয়ে গিয়ে বলে,
—‘ দু ভা..ভাই মা…মানে কিসব বলছিস?’
হিয়া হাসলো।তবে আর কিছু বললো না।এর মাজে দরজায় টোকা পরলো।ইশি তড়িঘড়ি করে দরজা খুলতে চলে গেলো।দরজা খুলেই দেখে পার্লারের দুটো মেয়ে।এদেরকে তারা হায়ার করেছে।এখানে তারা যতোদিন থাকবে মেয়েগুলোও ততোদিন থাকবে।বিনিময়ে যতোটাকা নেয়।ঢাকা থেকে আনা হয়েছে।মেয়েগুলো এসেই ওদের তিনবোনকে সাজাতে লাগলো।অন্যান্য যারা সাজঁতে চেয়েছে তাদের সাজিয়েই মেয়েগুলো সবার শেষে ওদের তিনজনকে সাজাতে এসেছে।
একে একে সবার সাঁজ কমপ্লিট।হিয়া লেহেঙ্গা পড়েছে সাথে সুন্দর করে হিজাব বাধা আর ম্যাচিং গহনা হালকা মেক-আপ।ইশি আর পরেছে সবুজ রঙের আনারকালি সাথে ম্যাচিং হিজাব আর গহনা,হালকা মেক-আপ।প্রাহি পরেছে সবুজ বড় ঘের-ওয়ালা গাউন।সাথে ম্যাচিং হিজাব আর গহনা আর হালকা মেক-ওভার।তিনজনকেই অসম্ভব সুন্দর লাগছে।
——–
অর্থ অস্থির হয়ে বারবার ছাদের দরজার দিকে তাকিয়ে আছে।কখন দেখবে সে ওর হৃদয়হরনীকে। ইসস,কেমন লাগছে ওর পরিটাকে কে জানে?
ওকে এতোটা অস্থির হতে দেখে আরাফ অর্থ’র কাঁধে হাত রাখলো।তারপর হেঁসে দিয়ে বলে,
—‘ ভাই বিয়ে আমার।আমি আমার বউকে দেখার জন্যে অস্থির হয়ে থাকবো।তাহলে তুই এমন করছিস কেন?’
অর্থ কপালে ভাঁজ ফেলে তাকালো আরাফের দিকে।দাঁত খিচে বলে,
—‘ দেখ এমনিতেই আমার মাথা খারাপ।তার উপর তুই তোর আজগুবি কথা বার্তা বলিস না।তাহলে তোর বিয়ে ক্যান্সেল।’
আরাফ জোড়পূর্বক হাসলো।তারপর বলে,
—‘ রেগে যাচ্ছিস কেন ভাই?এতো রাগার কি আছে এখানে?’
অর্থ বিরক্ত হয়ে বলে,
—‘ আমি কি করবো ইয়ার।এখানে দেখেছিস।মেয়েরা কিভাবে ঘুরঘুর করে তাকাচ্ছে।অসহ্য লাগছে আমার।এভাবে তাকানোর কি আছে?আমি কি এলিয়েন?’
আরাফ হেসে দিলো অর্থ’র কথা শুনে।হাসি বজায় রেখে বলে,
—‘ ভাই কি আর করার।তুই যে হ্যান্ডসাম তোর দিকে তো এভাবে তাকিয়ে থাকবেই। একটু কম রূপচর্চা ক……!’
আর বলতে পারলো না কারন তখন ছাদে প্রবেশ করেছে তিন তিনটে অপ্সরি নিচে নামছে।তার মধ্যে হিয়ার দিকে আরাফ হা করে তাকিয়ে আছে।হেমন্তও তাকিয়ে আছে ওর যেন চোখই সরছে না ইশির থেকে।মেয়েটাকে এতো সুন্দর লাগছে। তা ওর বলার বাহিরে।
এদিকে অর্থ যেন নিজের ধ্যান জ্ঞান সব হারিয়ে ফেলেছে।নিমগ্ন হয়েছে এক অপরূপার দিকে।প্রাহিকে দেখে ওর হৃদস্পন্দন জোড়ে জোড়ে আওয়াজ করতে লাগলো,শ্বাসরুদ্ধকর লাগছে ওর কাছে।চোখজোড়া যেন শীতল হয়ে তার প্রানপাখিতেই আটকে গিয়েছে।তার ছোট্ট পরিটা যেন ওকে তার একেক রূপে ঘায়েল করে একেবারে মেরেই দম নিবে। আরাফ এগিয়ে হিয়ার হাত ধরে নিয়ে স্টেজে বসালো।প্রাহিও বারবার আঁড়চোখে তাকাচ্ছে।লোকটাকে কালো আর সবুজ রঙের কম্বিনেশনের পাঞ্জাবিতে মারাত্মক লাগছে।বার বার বেহায়া চোখজোড়া অর্থ’র দিকেই চলে যাচ্ছে।ইসস,হৃদয়টা এতো জোড়ে লাফাচ্ছে কেন?প্রাহি ওর হৃদয় মনে মনে বলছে,
—‘ আরে বাবা এতো জোড়ে লাফাচ্ছিস কেন?আমাকে কি মেরে ফেলবি?’
মনে হলো প্রাহির হৃদয়টা ওকে পালটা জবাব দিচ্ছে,
—‘আরে গাধি।সামনে এতো সুদর্শন একটা লোককে দেখলে আমার তো লাফাতেই ইচ্ছে করবে।তুই তোর চোখজোড়াকে নিষেধ কর যেন বার বার উনাকে না দেখে।’
প্রাহির নিজের ভাবনায় নিজেই অবাক হলো।পরক্ষনে ফিক করে হেঁসে দিলো।অর্থ তাকিয়ে রইলো সেই হাসির দিকে।মারাত্মক হাসি এই মেয়ের।একদম ঝিম ধরানো হাসি।অর্থ’র সারাশরীর শীরশীর করছে প্রাহির হাস্যজ্জ্বল মুখটা দেখে।অর্থ প্রাহির পিছনে গিয়ে দাড়ালো।প্রাহি হকচকিয়ে গেলো।এতোগুলো মানুষের সামনে লোকটা ওর এতো কাছাকাছি কেন এসেছে।এদিকে ওর নিজেরও কাঁপাকাঁপি শুরু হয়ে গিয়েছে।প্রাহি ধীর আওয়াজে বলে,
—‘ কি করছেন?দূরে সরুন।মানুষ আমাদের এভাবে দেখলে খারাপ ভাব্বে প্লিজ।’
অর্থ’র কানে প্রাহির এই কথা গেলো কিনা কে জানে।ও ঘোরলাগা কন্ঠে বলে উঠলো,
—‘ তোমাকে মারাত্মক লাগছে প্রাহি।আমার নিঃশ্বাস আটকে আসছে তোমার এই রূপ দেখে।তুমি আমার কাছে কি প্রাহি আমি তোমাকে বুঝাতে পারবো না প্রাহি।পারবো না।’
কথা বলেই চলে যেতে নিয়ে আবার ফিরে এলো।প্রাহির চোখে চোখ রেখে ধীর কন্ঠে বললো,

‘ নারী তুমি
আমার হৃদপিন্ডের একটি মহাখন্ড
তুমিহীনা এই জীবন যেন মহাপ্রলয়ের লন্ড-ভন্ড
তুমি লজ্জাবতীর লাজ, ফুলশয্যার সাজ, তুমি ধ্রুবতারার আলো
কোটি নক্ষত্রের মাঝে তুমিই শুধু আমার হৃদয়ে সুখের প্রদীপ জ্বালো।’ [কবিতাটি সংগ্রহ করা]

#চলবে________

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here