অদ্ভুত_মেয়ে (season 2) Part- 22

0
2721

অদ্ভুত_মেয়ে (season 2)
Part- 22
Writer: #Nur_Nafisa
.
.
ইমরান রেপিং পেপারে এতো সুন্দর প্যাকেট করে গোবর এনেছে তাদের জন্য! এটা গিফট! পলিথিন খোলার সাথে সাথেই রুম গন্ধে ভরে গেছে। চারজনেই লাফ দিয়ে খাট থেকে নেমে গেলো। ইমরানকে এখন কি করতে ইচ্ছে করছে তা কেউ জানে না! চিতকার করে দরজার কাছে এলো। দরজা বাইরে থেকে বন্ধ! নাক চেপে ধরে চারজনই চিৎকার করতে করতে ইমরানকে বকে যাচ্ছে আর দরজা খোলার জন্য বলছে। সাথে দরজায় থাপ্পড় লাথি তো আছেই! ইমরান নিজের রুম থেকে দাদুর রুমের প্রলয় শুনছে আর হাসতে হাসতে নিজের কাজ করছে।
ইমরান- ঘুষখোরের দল! সবসময় আমার পকেট খালি করার চিন্তা মাথায় ঘুরে। আর জীবনে গিফট চাইবি না। হাহা….
ইমরান ফ্রেশ হয়ে জামাকাপড় পাল্টে রুম থেকে বেরিয়ে এলো। নানুর রুমের দরজার কাছে এসে বললো,
ইমরান- এভাবে চিৎকার করছো কেন বাচ্চারা? গিফট পছন্দ হয়নি?
নাফিসা- ইমরাইন্নার বাচ্চা, দরজা খোল আগে তুই।
ইমরান- আরে আগে গিফট উপভোগ করো। ১৩০টাকা খরচ হয়েছে আমার এটা প্যাকিং করতে। কাল তো খুব হাসছিলে আমার অবস্থা দেখে। আজ কেমন লাগছে! আমি তো গোবরে পিছলে পড়েছি, তোমরা গোবর দিয়ে আজ ডিনার সেড়ে নাও।
নাফিসা- এহহেএএএএএএ…. দরজা খুলবি!
রেহান- ভাইয়া দরজা খুলো…
হিমা- ভাইয়া গন্ধে পেট ফুলে গেলো। দরজা খোলো…
ইমরান- হাহাহা…. ইনশাল্লাহ, কাল সকালে।
ভেতরে থেকে সবাই দরজায় ঢাকঢোল পিটিয়ে যাচ্ছে। ইমরান নিচে চলে যাচ্ছে। মেঝ মামি উপরে আসছিলো।
ইমরান- কোথায় যাও?
মেঝ মামি- এমন করছে কেন তারা?
ইমরান- দরজা আটকে রেখেছি। পড়া শেষ হলে খুলবো। চলো…
মেঝ মামি ইমরানের সাথে চলে গেলো। ইমরান ড্রয়িং রুমে বসে টিভি ছাড়লো।
বড় মামি- কিসের শব্দ হচ্ছে?
মেঝ মামি- ওরা পড়ে না তাই দরজা আটকে রেখেছে ইমরান।
বড় মামি- ফাজিল ছেলে। দরজা আটকে রাখলেই পড়বে!
ইমরান- মা যেও না। দূর! বাসায় শান্তিতে একটু থাকতেও দিলে না!
বড় মামি উপরে চলে গেলো আর এদিকে ইমরান বাসা থেকে বেরিয়ে গেলো। বাকি যারা ড্রয়িং রুমে ছিলো কেউই কিছু বুঝলো না। বড় মামি এসে দরজা খুললে সবাই দৌড়ে বাইরে বেরিয়ে মেঝেতে বসে হাপাচ্ছে। কান্না করায় সবার চোখ ভেজা।
বড় মামি- কিরে কি হয়েছে? এমন করছিস কেন?
নাফিসা- গন্ধ পাচ্ছো না কোনো?
বড় মামি- পচা গন্ধ আসছে কোথা থেকে?
নাফিসা- তোমার ড্রাগন ছেলে কই?
হিয়া- তোমার ছেলে গোবর এনে আমাদের এ রুমে বন্দী করে রেখেছে।
বড় মামি- এজন্যই দরজা খুলতে নিষেধ করেছে!
নাফিসা- ভাইয়া কই?
বড় মামি- ড্রয়িং রুমে।
মামি বলার সাথে সাথে নাফিসা নানুর রুম থেকে ঝাড়ু হাতে নিলো। রেহান গিয়ে তার রুম থেকে ক্রিকেট ব্যাট নিয়ে এলো। হিমা জালি বেত নিয়ে এলো। হিয়া নেয়ার জন্য কিছু পেল না। অস্ত্র নিয়ে সবাই নিচে এলো যুদ্ধের জন্য। বড় মামি অবাক হয়ে তাদের পিছু পিছু এলো। হিয়া নিচে এসে কিচেন থেকে খুন্তি হাতে নিলো। কিন্তু ড্রয়িং রুমে এসে যুদ্ধের বিপরীত দলকে পেল না। কোথায় গেছে! বাড়ির আনাচে কানাচে সব খুজতে লাগলো। বাকিরা সবাই অবাক! এটাসেটা জিজ্ঞেস করছে কোন উত্তর পাচ্ছে না। বড় মামি সবাইকে বললো সবটা। তারপর ছোট মামি তাদের জানিয়ে দিলো ইমরান বাসা থেকে বেরিয়ে গেছে। তারা সবাই ড্রয়িং রুমে বসে আছে। ইমরান এলেই তার উপর হামলা চলবে। আজ কারো পড়াও হলো না, ডিনারে ডাকলে কেউই গেলো না। এমনিতেই বমি আসছে, এখন আবার খেতে যাবে! বকাঝকা করে মামামামী খাওয়ালো। নাফিসা অল্প কিছু মুখে দিয়ে উঠে পড়লো। ইমরানকে না মারা পর্যন্ত তার শান্তি নেই। রাত নয়টার পর ইমরান বাসায় এসে ড্রয়িং রুমের দরজা ফাক করে উঁকি দিয়ে দেখলো বাচ্চারা সব ঘরোয়া অস্ত্র হাতে নিয়ে বসে আছে। তার জন্যই যে এতো আয়োজন সেটা বুঝতে বাকি নেই। বাইরে দাড়িয়ে নাফিসাকে কল করলো,
নাফিসা- কোথায় তুই?
ইমরান- নাফিসা, আপু তোমার না পরশু এক্সাম আছে। কাল ঢাকা নিয়ে যাবো।
নাফিসা- ঢাকা যাওয়ার গুলি মারি! তুই বাসায় আয় আগে।
মাথায় আগুন লেগে আছে তাই ইমরান বাসা থেকে চলে গেলো। ছোট চাচার কাছে কল করে বলে দিলো সে আজ তার বন্ধুর বাড়িতে থাকবে। মাকে যেন জানিয়ে দেয়। আর কাল যেন চাচা নাফিসাকে ঢাকা দিয়ে আসে।
রাতে আর ইমরান বাসায় ফিরেনি। এক একজন সোফায় বসেই ঘুমিয়ে যাচ্ছে। মামীদের বকা খেয়ে সবগুলো ইমরানের রুমে এসে শুয়ে পড়লো। সকালে সবার মুখই গোমড়া করে রেখেছে। ইমরানকে মারতে পারলো না বলে সবারই কষ্ট! ছোট মামা নাফিসাকে ঢাকা দিয়ে অফিসে গেছে। আর বাকিরা স্কুলে। ইমরান বন্ধুর বাসা থেকেই অফিস গেছে। চাচার কাছে জানতে পারলো নাফিসা এখন ঢাকা। তাই হাফ ছেড়ে বাচলো। বাকিদের হ্যান্ডেল করা ব্যাপার না। বাবার কাছে বকা খেয়েছে ঠিকই কিন্তু গায়ে লাগেনি।
সন্ধ্যায় সবাই পড়তে বসলো কিন্তু নাফিসার কথায় ইমরানের রুম তালা দিয়ে চাবি সাথে রেখেছে। ইমরান বাসায় ফিরলো সাত ফুট উচ্চতার একটা চিকন বাশ সাথে নিয়ে। চাচিরা ইমরানকে দেখে হাসছে। মায়ের কাছে বকা খেয়েছে ওটাও গায়ে লাগেনি। উপরে এসে দেখলো রুম তালা দেওয়া। চাবি নেয়ার জন্য হিমা হিয়াকে ডাকলো। ইমরানের কন্ঠ শুনতেই তারা তাদের অস্ত্র সাথে নিয়ে দৌড়ে এলো। ইমরানকে দেখে থমকে দাড়ালো আর ইমরান হাসছে।
ইমরান- কি? এখনো অস্ত্র নিয়ে বসে আছো! আসো, আমার কাছেও আছে। সাতফুট দূরে দাড়িয়েই পিটাবো।
সবাই তাদের অস্ত্র ঢিল দিয়ে মেঝেতে ফেলে দিলো। মুখ গোমড়া করে রুমে যেতে নিলে ইমরান বললো,
ইমরান- চাবি কই?
হিমা- জানিনা।
ইমরান- বেত কিন্তু এখন কাজে লাগাবো। চাবি দিয়ে যা।
হিয়া রুম থেকে চাবি এনে ঢিল মেরে ইমরানের দিকে ছুড়ে আবার রুমে এসে দরজা লাগিয়ে দিলো। ইমরান মেঝে থেকে চাবি উঠিয়ে রুমে চলে এলো। সাত ফুট লম্বা বাশটা খাটের নিচে ঢুকিয়ে রাখলো। ফ্রেশ হয়ে কতোক্ষন ল্যাপটপ নিয়ে বসলো। ভালো লাগছিলো না তাই নিচে চলে গেলো। হিমেল আর রিয়াদ কে নিয়ে দুষ্টুমি করলো। ডিনারের সময় সবাই চুপচাপ এসে ডিনার করছে। ইমরান কিছু জিজ্ঞেস করলেও কোন উত্তর দিচ্ছে না। যার যার মতো খেয়ে নিজের রুমে চলে গেছে। বাড়িটা কেমন যেনো ফাঁকা ফাঁকা লাগছে। একে তো নাফিসা নেই আবার বাকিগুলোও ইমরানকে মারতে না পেরে মুড অফ করে বসে আছে। যা একদমই ভালো লাগছে না ইমরানের। ইমরান হিমা হিয়াদের রুমে গিয়ে বললো,
ইমরান- ছাদে যাবি কে কে? আয় আমার সাথে।
হিয়া আর রেহান এসে ধাক্কিয়ে ইমরানকে রুম থেকে বের করে দরজা লাগিয়ে দিলো।
ইমরান- বাব্বাহ! রাগও একএকজনের!
ইমরান রুমে এসে ভাবতে লাগলো কিভাবে মুড ঠিক করা যায়! নাফিসার বুক সেলফ থেকে একটা কাগজ নিয়ে লিখে দিলো হিমাদের সেমিস্টার এক্সামের পর সাফারি পার্কে বেড়াতে নিয়ে যাবে। তারপর দরজার নিচ দিয়ে রুমে ঢুকিয়ে দিলো। ইমরান তার রুমের কাছে আসতেই তারা দরজা খুলে বললো,
– সত্যিই নিয়ে যাইবা?
ইমরান- ইনশাআল্লাহ।
এবার সবার মুখে হাসি ফুটে উঠলো।
হিয়া- ভাইয়া ছাদে যাইবা এখন?
ইমরান মুচকি হেসে দরজাটা চাপিয়ে বললো,
ইমরান- চল…
তারা সবাই ছাদে চলে এলো। ইমরান নাফিসাকে কল করলো। নাফিসা কেটে দিলো। আবার কল করলে আবার কেটে দিলো। আবার করতেই ফোন বন্ধ! এবার ফুপির ফোনে কল করে কথা বললো তারপর নাফিসাকে দিতে বললো। নাফিসার সাথে হিমা হিয়া কথা বলবে। নাফিসার কাছে ফোন দেয়া হলে এদিকে তারা লাউড স্পিকার রেখে কথা বললো,
হিমা- আপু, ভাইয়া বলেছে এক্সামের পর সাফারি পার্কে বেড়াতে নিয়ে যাবে।
নাফিসা- এসব বলে মাইর খাওয়া থেকে বেচে গেছে! ভন্ড একটা।
রেহান- না, সত্যিই নিবে।
নাফিসা- তো যা। আমাকে বলছিস কেন!
হিয়া- তুমি যাবে না?
নাফিসা- না। তোরাই যা। ইচ্ছেমতো ঘুরে বেড়া। কাল আমার পরীক্ষা। আর ফোন দিবি না। বায়….
নাফিসা কল কেটে দিলো। এই মেয়েকে সহজে মানানো যাবে না। তারা দশ মিনিটের মতো ছাদে ঘুরেফিরে দুষ্টুমি করে নিচে চলে এলো।
লাইট অফ করে ইমরান শুয়ে পড়লো। বিছানার বাকি অংশে তাকিয়ে অভাব অনুভব করলো। ইমরানের সাথে বিছানাও নাফিসাকে মিস করছে। ইমরান মুচকি একটা হাসি দিয়ে নাফিসার বালিশটা বুকে টেনে নিয়ে ঘুমিয়ে পড়লো।
নাফিসার দিন এদিকে আনন্দেই কাটছে। কতদিন পর এ বাড়িতে এলো, ভার্সিটি যাচ্ছে, বন্ধুবান্ধব ও শিক্ষকদের সাথে দেখা হচ্ছে। চারদিনে তার ইনকোর্স এক্সাম শেষ হলো। এর মাঝে একবারও ইমরানের সাথে কথা হয়নি।
শেষ পরীক্ষার দিন ভার্সিটি থেকে বাসায় ফিরে দেখলো ইমরান তার রুমে শুয়ে আছে। প্রথমে একটু চমকে উঠলেও পরে আর কিছু বললো না। ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাড়িয়ে হিজাব খুলতে লাগলো।
ইমরান- এতো লেট কেন?
নাফিসা-…..
ইমরান- পরীক্ষা কেমন হয়েছে?
নাফিসা-…..
ইমরান- নাফিসা কি কানে শুনে না!
নাফিসা কিছু না বলে ওয়াশরুমে চলে গেলো। ফ্রেশ হয়ে ডাইনিং টেবিলে চলে এলো।
নাফিসা- মা তুমি খেয়েছো?
মা- হুম। তুই বাদে সবাই খেয়েছে।
নাফিসা- ভাইয়া কেন এসেছে?
মা- এটা আবার কেমন কথা! এখানে আসতে কারণ লাগবে!
নাফিসা- আমাকে নিতে এসেছে? আমি কিন্তু কদিন পর যাবো।
মা- প্রয়োজন হলে তো আগেই যেতে হবে।
এমন সময় বড় মামি কল করলো। সব মামীরা ও মা কতোক্ষন কথা বললো। এক পর্যায়ে বড় মামি বললো,
বড় মামি- পরীক্ষা তো শেষ। নাফিসা কবে আসবে? বাড়ি তো আমার খা খা করছে!
মা- চলে গেলে তো আমার বাড়িও খা খা করে!
নাফিসা- আমাকে দুভাগ করে দু বাড়িতে রেখে দাও।
সবাই হেসে উঠলো। বড় মামি বললো, প্রয়োজন না থাকলে যেন ইমরানের সাথে চলে যায়। বড়রা আরও কতোক্ষন কথা বলে কল কেটে দিলো। নাফিসার খাওয়া শেষে রুমে না গিয়ে ছাদে চলে গেলো। ইমরান কিছুক্ষণ পর রুম থেকে বেরিয়ে নাফিসা না পেয়ে ফুপির কাছে জিজ্ঞেস করে জানতে পারলো ছাদে গেছে। ইমরানও ছাদে এসেছে। নাফিসা হাটছে আর গুনগুন করে গান গাইছে। ইমরান পাশে দাড়িয়ে সেটা প্রকাশে গাইলো,
ইমরান- আকাশে বাতাসে, চল যাইরে উড়ে উড়ে, ডানা মেলে…
নাফিসা তাকে দেখে মুখ ফুলিয়ে ফিরে আসছিলো ইমরান তার হাত ধরে বাধা দিলো।
ইমরান- কথা বলছিস না কেন?
নাফিসা বিরক্তি নিয়ে হাত ছুটিয়ে নিচে চলে এলো। ইমরান নিচে আসতেই দেখলো সাঈদ স্কুল থেকে এসে পড়েছে। সাঈদ কোনোমতো ব্যাগ রেখে ড্রেস পাল্টে ভাইয়াকে জোর করে টেনে নিয়ে বেরিয়ে গেলো। ঘুরেফিরে তারা রাত আটটায় বাসায় ফিরলো। বাবা ফিরলে একসাথে ডিনার করলো। রুমে এসে নাফিসা বিছানা ঠিক করতে লাগলো। ইমরান রুমে এসে বললো,
ইমরান- ক্লাস করবি এখানে থেকে?
নাফিসা কোন উত্তর না দেয়ায় ইমরান তার হাত ধরে ঘুরিয়ে দাড় করালো। নাফিসা হাত ছাড়াতে না পারায় মুখ অন্যদিকে ঘুড়িয়ে দাঁড়িয়ে রইলো।
ইমরান- কথা বলবি না আমার সাথে?
নাফিসা আগের ন্যায় দাড়িয়ে আছে। ইমরান তাকে ছেড়ে দিয়ে বেরিয়ে গেলো রুম থেকে। সে কি রাগ করে চলে যাচ্ছে নাকি এতো রাতে! নাফিসা একটু ভেবে রুম থেকে বের হতে যাবে এমন সময় ইমরান আবার রুমে প্রবেশ করলো। ইমরানের হাতে ঝাড়ু! নাফিসা বড় বড় চোখ করে একবার ঝাড়ুর দিকে তাকালো আর একবার ইমরানের দিকে তাকালো।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here