প্রবঞ্চনা,পর্ব_২
জান্নাতুল_নাঈমা
জোরপূর্বক নানাভাবে কসম দিয়ে শিরিন’কে রাজি করিয়ে অনেক রাত বাইরে কাটায় দুর্জয়৷ কিন্তু এভাবে আর কতোদিন? বাবা,ভাই’রা ব্যবসা করে। পরিবারের একটা নাম ডাক আছে। খনিকের সুখটুকু আদায়ের জন্য যেভাবে লুকোচুরি করতে হচ্ছে না জানি কবে কার চোখে চিহ্নিত হয়ে যায় সে! নিজের সম্মানটুকু বজায় রাখার জন্য বুদ্ধি বের করে দুর্জয়৷ নিজের কামনা বাসনা পূরণ করার জন্য এক নারী লোক’কে বাড়ির ভিতর নিয়ে আসে৷ স্নেহের স্ত্রী শিরিনের সহায়তায়ই এই পাপ কাজে পাকাপোক্ত ভাবে যুক্ত হতে পারে সে। এ নিয়েও তার গর্বের শেষ থাকে না৷ স্ত্রীর প্রতি তার আদর, স্নেহ ভালোবাসা বেড়ে যায় দ্বিগুণ। কিন্তু এই ভালোবাসাকে ঠিক কোন কাতারে ফেলা যায় বুঝে ওঠতে পারেনি শিরিন।
অন্তঃসত্ত্বা শিরিন’কে দেখাশোনার নাম করে রোজিনা নামের ১৯ বছরের এক যুবতী’কে ঘরে তুলে দুর্জয়।শিরিন এবং দুর্জয়ের রুমের পাশের রুমটিতেই রোজিনার থাকার ব্যবস্থা করা হয়। বাড়ির সকলেই লক্ষ করে রোজিনা আসার পর থেকেই শিরিন কেমন গুম মেরে থাকে। তার স্তম্ভিত ভঙ্গি দেখে অনেকে মনে করে রোজিনা দেখতে বেশ সুন্দরী। দুর্জয় এমন সুন্দরী কাজের মেয়ে আনাতে শিরিন মনে মনে ভয় পাচ্ছে “দুর্জয়ের মন আবার রোজিনার ওপর আকৃষ্ট হবে না তো?” কিন্তু অবুঝ মন এটুকু বুঝতে পারছেনা দুর্জয় তাকে ভীষণ ভালোবাসে। মাত্রাতিরিক্ত যত্ন,ভালোবাসা থেকেই তো সন্তান প্রসবের আগেই তার দেখাশোনার জন্য লোক নিয়ে এসেছে। এই নিয়ে বাড়ির প্রতিটি সদস্য শিরিন’কে বোঝায়। অসহায় নির্বাক স্রোতা শিরিন মুখ ফুটে বলতে পারেনা তার ভিতরের যন্ত্রণাগুলোর কথা। কারণ তার স্বামী সন্তানের কসম খেয়ে বলেছে যদি এসব কথা সে ব্যতিত আর কেউ জানে তাহলে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করবে দুর্জয়!
সেদিন রাত আটটার দিকে বিছানার একপাশে গুটিশুটি হয়ে শুয়ে ছিলো শিরিন। দুর্জয় ঘরে ঢুকেই বললো,
– কি ব্যাপার শিরিন তুমি নাকি ঠিক ভাবে খাওয়া দাওয়া করো না? রোজিনা তোমার জন্য আমের আচার বানিয়েছে তা নাকি তুমি ছুঁয়েও দেখোনি?
বুক ফেটে আর্তনাদ বেরিয়ে আসতে চায় শিরিনের। রক্তিম বর্ণ দৃষ্টি জোড়া দুর্জয়ের আপাদমস্তক নিক্ষেপ করে। ঘৃণায় মূর্ছিত হয়ে যায় তার সর্বাঙ্গ। গুটিশুটি হয়ে পাশ ফিরে শুয়ে কেবল অশ্রু বিসর্জন দিতে থাকে। শিরিনের এই রূপ আচরণ দেখে আহত হয় দুর্জয়ে বক্ষস্থল। এক ঢোক গিলে শুষ্ক গলাটা ভিজিয়ে নিয়ে এগিয়ে যায় শিরিনের দিকে। পরম স্নেহে বক্ষে টেনে নেয় প্রাণপ্রিয় অর্ধাঙ্গিনী’কে। আলতো হস্তে মস্তক বুলিয়ে প্রশ্ন করে,
– আমি তোমাকে অনেক বেশিই দুঃখ দিচ্ছি শিরিন।
দুর্জয়ের দিকে ফিরে হাউমাউ করে কেঁদে ওঠে শিরিন। কম্পিত কন্ঠে বার বার বলতে থাকে,
– আমি আর সহ্য করতে পারছিনা। মুক্তি দাও এই যন্ত্রণা থেকে, গলা টিপে মেরে ফেলো আমায়। নয়তো আমার বুকের ভিতর শক্ত কিছু দিয়ে আঘাত করো।
– এমন কথা বলেনা শিরিন আমি তোমাকে আঘাত করতে পারবো না। আমি তোমাকে ভালোবাসি খুব ভালোবাসি।
– এ কেমন ভালোবাসা তোমার? যে ভালোবাসায় তুমি আমি ছাড়াও অন্য নারী’কে ছুঁতে পারো?
কথাটি বলেই দুর্জয়কে প্রত্যাখ্যান করে দূরে সরে যায় শিরিন। শিরিনের থেকে এমন আচরণ পেয়ে দুর্জয়ের বক্ষস্থল ভারী হয়ে যায়, শ্বাস রুদ্ধ হয়ে আসে। কম্পিত কন্ঠে বলে,
– তুমি ভুলে গেছো শিরিন সেই দিনগুলোর কথা? আমার এতোটুকুন শিরিন আজ বড়ো হয়ে গেছে আমাকে অবজ্ঞা করছে এও বিশ্বাস করতে হবে আমাকে? আমার ভালোবাসা’কে আমার শিরিন অবিশ্বাসের চোখে দেখছে আমার স্পর্শতে আমার শিরিন ঘৃণা অনুভব করছে? এদিন দেখার আগে মরণ হলো না কেন আমার!
দুর্বৃত্ত দুর্জয়ের ছলে ক্রুদ্ধ শিরিন নম্র হলো। উত্তপ্ত বক্ষে আর্দ্রতা অনুভব করলো। বললো,
– তুমি আমাকে যদি এতোই ভালোবাসো তাহলে আমার মাথা ছুঁয়ে কসম করো তুমি ঐ মেয়ের কাছে আর যাবা না৷ আমি ছাড়া আর কোন নারীর শরীর ছুঁবা না।
দুর্জয়ের হাত টেনে নিজ মাথায় চেপে ধরলো শিরিন৷ অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আকুতি মিনতির সুরে বললো,
– কসম করো আর তুমি ঐ রোজিনার কাছে যাবা না। আর অন্য কোন নারীর শরীর ছুঁবা না।
শিরিনের আচরণে বক্ষস্থলের ভার অনেকটাই কমে গেলো দুর্জয়ের। শিরিনের পবিত্র, স্নিগ্ধ মুখোশ্রীতে ভালোবাসার চুম্বন দিতে দিতে বললো,
– কসম করলাম।
________________
শিরিনের মাথা ছুঁয়ে পরম স্নেহে চুম্বন লেপ্টে দিতে দিতে যে কসম করেছিলো মাস গড়াতে না গড়াতেই সে কসম ভুলে যায় দুর্জয়। দেহের ক্ষুধায় ক্ষুধার্ত জানোয়ারের মতো মধ্যরাতে ছুটে যায় রোজিনার ঘরে। দুর্জয় ওঠে যাওয়ার মিনিট কয়েক পরেই আচমকাই ঘুম ভেঙে যায় শিরিনের। পাশে দুর্জয় কে দেখতে না পেয়ে বক্ষস্থলে ধড়াস করে ওঠে তার। শোয়া থেকে ভারী পেট নিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে সে। দ্রুত পায়ে ঘরের দরজা খুলে সোজা রোজিনার ঘরের সম্মুখে গিয়ে দাঁড়ায়। কয়েক পল সময় অতিবাহিত হতেই সর্বাঙ্গে কেঁপে ওঠে তার। ধপ করে দরজার সম্মুখে বসে শুনতে থাকে কারো উন্মাদীয় কন্ঠস্বর। অনুভব করে তার বক্ষস্থল ক্ষতবিক্ষত হওয়ার তীব্র যন্ত্রণাগুলো।
.
ভোর রাতে রোজিনার শরীরের সমস্ত ঘ্রাণেন্দ্রিয় নিজের শরীরে মাখামাখি করে স্ত্রী’র পাশে শুয়ে পড়ে দুর্জয়। একটি বার যদি শিরিনের দিকে ফিরে তাকাতো দুর্জয় দেখতে পেতো পাশে শিরিন নামক জীবিত লাশের প্রতিচ্ছবিটি। পরদিন শিরিনের আচরণে দুর্জয় স্পষ্ট বুঝতে পারে সে ধরা পড়ে গেছে। তাই নিজ মুখে সবটা স্বীকার করে নেয়। শিরিনের দু’পা জড়িয়ে হাউমাউ করে কেঁদে ওঠে বলে,
– আমাকে মাফ করে দাও শিরিন তবুও আমার থেকে দূরে সরে যেওনা আমি তোমাকে ভালোবাসি।
– আমি তোমাকে মাফ করবো তার বিনিময়ে তুমি আমাকে মুক্তি দাও।
নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে শিরিনের বলা কথাটি দুর্জয়ের কর্ণকুহরে পৌঁছানো মাত্রই ফুঁসে ওঠে দুর্জয়৷ সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে শিরিনের গালে ঠাশিয়ে এক থাপ্পড় মেরে বলে,
– কি বললি এটা তুই! এটা তুই কি বললি! আমি তোরে এতো ভালোবাসি আর তুই আমার থেকে মুক্তি চাস?
ফুপিয়ে কেঁদে ওঠে বিছানায় বসে পড়ে শিরিন। নিচু গলায় বলে,
– আমি বাবার বাড়ি যাবো আমাকে তুমি দিয়ে আসো।
হুঁশ ফেরে দুর্জয়ের রাগের বশীভূত হয়ে এ প্রথম শিরিনের গায়ে হাত তুলেছে সে ভাবতেই সর্বাঙ্গে বৈদ্যুতিক শখড খাওয়ার মতো অনুভূতি হয়৷ বক্ষস্থল ভারী হয়ে শ্বাস রুদ্ধ হয়ে আসে। দৃষ্টি জোড়া মলিন করে শিরিনের পায়ের কাছে বসে পড়ে। বিরবির করে বলে,
– আমি তোমাকে মারতে চাইনি শিরিন আমাকে তুমি মাফ করে দেও। আমাকে ছেড়ে যেওনা শিরিন আমি তোমাকে ছাড়া বাঁচতে পারবো না।
কথা শুনেনা শিরিন অভিমান,ঘৃণায় জর্জরিত হয়ে ওঠে দাঁড়ায়। দুর্জয় যখন বুঝতে পারে সত্যি শিরিন চলে যাচ্ছে উপায় না পেয়ে টেবিলের ড্রয়ার থেকে নতুন ব্লেট বের করে ক্যাচক্যাচ করে নিজের ডান হাতের তালু কাটতে থাকে। যে হাতটি দ্বারা কিছু সময় পূর্বে শিরিনের গালে আঘাত করেছে সে। দুর্জয়ের এমন পাগলামো দেখে স্তব্ধ হয়ে যায় শিরিন৷ অবাকান্বিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে নির্লিপ্ত কন্ঠে কেবল একটি বাক্যই উচ্চারণ করে,
– তোমার ঐ হাত অনিচ্ছাকৃত ভাবেই আমার গালে একটুখানি আঘাত করেছে তাই তার এই অবস্থা করলে। অথচ স্বেচ্ছায় তুমি পুরোটাই আমার এখানটায় যে আঘাত করেছো তার শাস্তি কিভাবে নেবে ?
বাম বক্ষে হাত চেপে ওষ্ঠ কাঁপিয়ে কথাগুলো বললো শিরিন। দুর্জয় তার রক্তাক্ত হাতটির দিকে তাকিয়ে শিরিনের দিকে অবাক দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বললো,
– আমি তোমাকে ভালোবাসি শিরিন। তুমি নিজ হাতে আমার জান নিয়ে নাও তবুও আমি কিছু বলবো না শুধু আমাকে ছেড়ে চলে যেওনা।
.
সেদিনের পর থেকে দুর্জয় শিরিনের সম্পর্কের না উন্নতি না অবনতি ঠিক কোনটা ঘটেছিলো বোঝা যায়নি। কিন্তু রোজিনা তার স্থানেই ছিলো। শিরিনের যখন প্রসব বেদনা ওঠে দুর্জয় তখন কাজের নাম করে কোন এক মেয়ে নিয়ে শহরে চলে যায়। এ খবর শিরিন দুর্জয় যাওয়ার তিনদিনের মাথায় জানতে পারে। তখনি প্রসব বেদনা ওঠে তার। দুপুর থেকে নিজ শরীরের সঙ্গে লড়াই করতে করতে রাত দশটার দিকে কন্যা সন্তানের জন্ম দেয় শিরিন। কিন্তু ভাগ্য এতোটাই নির্মম যে আধমরা পুষ্টিহীন এক শিশুর জন্ম হয়। দ্বিতীয় দিন দুর্জয় শহর থেকে ফিরে আসে। নাকে রুমাল চেপে নিজ ঘরে প্রবেশ করে। শিরিন’কে উদ্দেশ্য করে বলে,
– এই আধমরা মেয়ে দিয়ে কি করবা শিরিন? তোমার পড়াশোনা আছে আমাদের একটা উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ আছে ওরে তুমি মানুষ করতে পারবানা। ওরে বড়ো ভাবির কাছে দিয়ে দাও।
আঁতকে ওঠে শিরিন। বড়ো ভাবির কোন সন্তান নেই। অনেক চেষ্টার ফলেও একটি সন্তানের মুখ দেখেনি বড়ো ভাবি। তাই বলে সে নিজে এতোবার চেষ্টা করে বৃথা হওয়ার পর শেষে যখন সফল হয়েছে সেই সফলতা অন্যত্র দান করে দেবে? কখনোই না। কোলের বাচ্চাটিকে আলতো ভাবে বক্ষে চেপে ধরে। কাঁপা গলায় বলে,
– আমাকে তুমি মায়ের কাছে দিয়ে আসো।
– কথায় কথায় বাপের বাড়ি যেতে চাওয়াটা তোমার স্বভাব হয়ে দাঁড়িয়েছে দেখছি। বার বার বলেছি এতো তাড়াতাড়ি বাচ্চার দরকার নেই তবুও জেদ করে আমার অনুমতি ছাড়াই বাচ্চা নিছো। স্বামীর চাওয়া পাওয়ার কোন দামই নেই তোমার কাছে।
শরীরের ওপর দিয়ে ধকল তো তোমারই গেছে। এখন আবার জেদ করে এই বাচ্চা নিজেই পালতে চাও। আমার থেকে বাচ্চাই যদি বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয় তাহলে ঠিকাছে বাচ্চা নিয়েই থাকো।
কথাগুলো বলেই গটগট করে বেরিয়ে গেলো দুর্জয়। তার থেকে আহামরি কিছু এখন আশা করেনা শিরিন। এ পর্যন্ত তার যে রূপ দেখেছে তার কাছে এই রূপ বড়োই ঠুনকো তবুও বেহায়া মনে প্রশ্ন আসে,
– কোলের এই সন্তান তো ওরও তবুও কেন একটিবার চেয়ে দেখলো না মানুষ টা?
ডুকরে কেঁদে ওঠলো শিরিন তখনি ঘরে প্রবেশ করলো রোজিনা। বললো,
– দাও দেখি ওরে আমার কোলে দাও তুমি যাও গিয়ে গোসল সেরে নাও।
– আমার সন্তানের গায়ে কারো অপবিত্র ছায়াও পড়তে দিব না ছোঁয়া তো দূরে থাক!
আক্রোশে ফেটে পড়ে রোজিনা। মুখ বাঁকিয়ে বলে,
– এমন না দিন আসে তোমার ঐ আধমরা মেয়েটার সমস্ত ভারই আমার ওপর আসে।
– আল্লাহ আমার সহায় আছে রোজিনা আপা কারণ আমি তোমার মতো পাপিষ্ঠা না যে আমার সন্তান তোমার পাপের ছায়ায় মানুষ হবে।
.
শিরিনের মেয়ের বয়স সেদিন মাত্র ছয়দিন। সেদিন বিকাল বেলা শিরিনের মা এবং দু’জন বোন আসে। এছাড়াও বাড়িতে সেদিন আত্মীয় স্বজনে ভরপুর ছিলো। রাতে সবাইকে শোয়ার ব্যবস্থা করে দেওয়ার সময় রোজিনার ঘরে শোয়ার ব্যবস্থা করা হয় শিরিনের মা এবং বোনের। যেহেতু শিরিন’কে দেখাশোনা করার জন্য রোজিনাকে নিয়ে আসা হয়েছে সেহেতু রোজিনাকে শিরিনের সঙ্গে ঘুমাতে বলা হয়। যদি রাতে বাচ্চা বা শিরিনের কোন প্রয়োজন পড়ে তাহলে রোজিনা উপকারে আসবে। বোকা মনুষ্য প্রাণীগুলো জানতেও পারলো না রোজিনা শিরিনের নয় বরং শিরিনের স্বামীর খুব উপকারে এসেছিলো। মেঝেতে বিছানা পেতে সেখানে শিরিন, শিরিনের মেয়ে রিমু এবং রোজিনা ঘুমিয়েছিলো। তখন মাঝরাত কারেন্ট নেই। ঘরে হারিক্যানের আলো জ্বলছে। শিরিন রিমুকে খাওয়াচ্ছিলো আর রোজিনা হারিক্যান ধরে ছিলো। এমন সময় দরজায় টোকা পড়লো। রোজিনা আঁতকে ওঠে প্রশ্ন করলো,
– কে?
– আমি দরজা খোল।
মুচকি হেসে হারিক্যান নিচে রেখে দরজা খুলে দিলো রোজিনা। চোখ,মুখ শক্ত হয়ে গেলো শিরিনের। দুর্জয় ঘরে ঢুকে ধীরপায়ে শিরিনের কাছে গিয়ে বসলো। বললো,
– আমি তোমাকে ভালোবাসি শিরিন কিন্তু আমার কষ্টটা তুমি বুঝলে না। তাই এইটুকুন কষ্ট তোমাকে সহ্য করতেই হবে।
কথাগুলো বলেই রোজিনা’কে ইশারা করলো দরজা লাগাতে। তারপর সিগারেট ধরিয়ে কয়েকটান দিয়ে সে সিগারেট নিজ হাতেই মুড়িয়ে ফেললো। রিমুর মাথায় আলতো হাত বুলিয়ে শিরিনের দিকে শান্ত দৃষ্টি নিক্ষেপ করে দৃঢ় কন্ঠে বললো,
– যদি চুপ থাকো আমার বাচ্চা আমার ভালোবাসা সবটাই ঠিক থাকবে। আর যদি অল্পসমান আওয়াজও বাইরে যায় তাহলে শেষ!
রিমুর গলায় চেপে ধরার ভঙ্গি করেই শেষ কথাটা বললো দুর্জয়। অন্তর আত্মা কেঁপে ওঠলো শিরিনের। ডুকরে ওঠে দুর্জয়ের থেকে কয়েক হাত সরে গেলো সে। একহাতে রিমুকে বুকে চেপে পাগলের মতো ছটফট ছটফট করতে করতে অপরহাতে একখামচি তুলো বের করলো। দু’কানে তুলো গুঁজে দিয়ে চোখজোড়া বন্ধ করে বুকের ধন’কে বুকে চেপে চোয়ালজোড়া শক্ত করে শুয়ে রইলো সে।
ঘরের এক কোণে জ্বলজ্বল করছিলো হারিক্যানের আলো। কি নিষ্ঠুর পৃথিবী, কি নিষ্ঠুর পৃথিবীর মানুষ গুলো। আহা কি বেইমান মানুষ্য জাতি। সবশেষে কানেগুজা তুলোও বেইমানি করলো শিরিনের সঙ্গে উফফ কি অসহ্য যন্ত্রণা! বিছানায় দু’টো হৃদয়হীন,বিবেক বর্জিত,বিকৃত মস্তিষ্কের প্রাণ একে অপরের উষ্ণতায় নিমজ্জিত। চার দেয়ালের একই ঘরে দু’জন নরনারীর অসহনীয়,উন্মাদীয় স্বরগুলোর সাথে এক অসহায় স্ত্রী, অসহায় মায়ের বুকভরা আর্তনাদ গুলো একটি কাকপক্ষীও টের পেলো না।
চলবে..