আবার দেখা হবে,পর্বঃ ০১

0
2699

আবার দেখা হবে,পর্বঃ ০১
জাহান আরা

কি অদ্ভুত কপাল আমার,বৌ সেজে বিয়ের পিড়িতে বসলাম,অথচ কপালে না জুটলো হলুদ না জুটলো মেহেদী। এভাবে বিয়ে হবে আমার কখনোই ভাবি নি।

আজ আমার বাসর হওয়ার কথা,আমি থাকতাম বাসর ঘরে অথচ ভাগ্য আমাকে এনে দাড় করিয়েছে কোথায় আজ??
বাসর ছেড়ে ছাদে বসে আছি,রাফিদ,আমার স্বামী আমাকে ঘর থেকে বের করে দিয়েছে।

অথচ এরকম হওয়ার কথা ছিলো না।
বিয়ে হওয়ার কথা ছিলো পদ্মার।

পদ্মা বিয়ের আসর থেকে পালিয়েছে।
কথাটা কানে যেতেই মা মাথা ঘুরে পড়ে গেলো,পদ্মা আমার বড় বোন,আজ তার বিয়ে,অথচ তাকে কোথাও খুজে পাওয়া যাচ্ছে না।

বাবা বার বার এসে তাগাদা দিচ্ছে কি হলো,পদ্মা কে নিয়ে আসছো না কেনো??
কিন্ত পদ্মা তো নাই,এদিকে বরযাত্রী এসে গেছে,ওদিকে পদ্মা পালিয়েছে।
বাবা কে বললে বাবা ভেঙে পড়বে,কি করবে মাথায় কিছু আসছে না।

পদ্মার সাথে রাফিদ ভাইয়ার বিয়ে ঠিক হয়েছে,রাফিদ ভাইয়া বাবার বন্ধুর ছেলে,পেশায় ডাক্তার,অত্যন্ত স্মার্ট আর ব্যক্তিত্ববান পুরুষ।
কিন্তু পদ্মা এই কাজ কেনো করলো,রাফিদ ভাইয়া যে ওকে ভালোবাসতো সেটা তো ও জানতো।
পদ্মা আর আমি পিঠাপিঠি বোন,ঠিক কি কারনে জানি না রাফিদ ভাইয়া পদ্মাকে যতোটা ভালোবাসে,পছন্দ করে আমাকে ঠিক ততোটাই অপছন্দ করে।
পদ্মার জন্য মাঝে মাঝে টুকটাক উপহার ও পাঠাতো উনি আর পদ্মাও খুশিমনে গ্রহণ করতো,আমরা সবাই জানতাম পদ্মাও রাফিদ ভাইয়া কে পছন্দ করে,সেখানে পদ্মার এভাবে পালিয়ে যাওয়ার মানে কি তাই বুঝতেছি না।

উপায়ন্তর না দেখে বাবাকে ঢেকে বললাম সব,শুনে বাবার মাথায় হাত,এতো বড় সর্বনাশ ।

আমরা মধ্যবিত্ত পরিবারের মানুষ আর রাফিদ ভাইয়ারা উচ্চবিত্ত,পদ্মা রাজরানী হয়ে থাকতো সেখানে,রাফিদ ভাইয়ার পূর্বপুরুষ জমিদার ছিলো।এখনো তাদের সেই চালচলন রয়ে গেছে।

বাবা উপায় না পেয়ে রাফিদ ভাইয়ার বাবা চৌধুরী ইমতিয়াজ আহমেদ কে ডেকে আনলেন,তিনি সব শুনে চুপ হয়ে গেলেন।
কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বললেন,এই বিয়ে হবে,পদ্মা নাই তো কি হয়েছে, পরী তো আছে।

আমি থমকে গেলাম এই কথা শুনে।
এ হতে পারে না,রাফিদ ভাইয়া জীবনেও মেনে নিবে না।আর আমি বিয়ে করবো না কিছুতেই ওনাকে,উনি যেখানে আমাকে পছন্দই করে না।

আমি অসহায় ভাবে বাবার দিকে তাকালাম,বাবা ও মনে হয় আমার মনের কথা বুঝতে পেরে বললো,কিন্তু এটা কি রাফিদ মেনে নিবে,আমার মনে হয় রাফিদ কে জানানো উচিত বিষয় টা।
ইমতিয়াজ আংকেলঃ সেটা আমি দেখবো,আমার ছেলে আমার কথার বাহিরে যাবে না,আমি তোমার মেয়েকে আমার বাড়ির বৌ করবো এটা আমার অনেকদিনের ইচ্ছে।এখানে আমাদের ২জনের মান সম্মান জড়িত আসাদ।

আমিঃ বাবা আমি কিছুতেই ওনাকে বিয়ে করবো না।

বাবাঃ তুই যদি রাজী না হোস আমার আর মান সম্মান থাকবে না মা,তুই অমত করিস না।

আমি জানি আমি রাজী হওয়া মানে নিজেকে নিজে কুরবানি দেয়া,কিন্তু উপায় কি এখন এ ছাড়া।

বৌ সেজে রেডি হলাম।

কিছুক্ষণ পর কাজীসাহেব,আমার বাবা আর ইমতিয়াজ আংকেল এলো,কাজীসাহেব বার বার আমাকে বলছেন কবুল বলতে,কিন্তু আমার গলা দিয়ে স্বর বের হচ্ছে না।
আমি কিভাবে কবুল বলবো।

বাবার দিকে তাকিয়ে দেখি বাবার চোখে পানি,আমি কবুল না বললে বাবা ভেঙে পড়বে,নিজের চোখের পানি মুছে ফেলে দিয়ে বল্লাম কবুল,কবুল,কবুল।

১টা স্বাক্ষরের বিনিময়ে আমি অন্য কারো হয়ে গেলাম।
জীবন বড়ই অদ্ভুত,কখন কোন দিকে মোড় নেয় কেউ জানে না।

যাই হোক,আমাকে রাফিদ ভাইয়াদের বাড়িতে নিয়ে আসা হলো,রাফিদ ভাইয়া এখনো জানে না পদ্মা না তার বৌ এখন পরী।

রাত প্রায় ১২ টা,এ সময় রাফিদ রুমে আসলো,আমি উঠে সালাম করলাম,রাফিদ আমাকে বুকে টেনে নিলো,মনে মনে আমি শিউরে উঠলাম,এই হয়তো আমার জীবনের প্রথম এবং শেষ আলিঙ্গন রাফিদের থেকে পাওয়া।
রাফিদ হাটু গেড়ে বসে আমার পায়ে পায়েল পড়িয়ে দিলো
তারপর উঠে বললো,পদ্মাবতী আর কতক্ষণ নিজেকে আড়ালে রাখবে,এবার ঘোমটা সরাও,তোমাকে দেখার জন্য পাগল হয়ে আছি,জানো সেই ছোটবেলা থেকে তোমার জন্য পাগল ছিলাম,তোমাকে কতোটা ভালোবাসি বুঝাতে পারবো না,আমার ড্রায়ারে আমার কয়েকটি ডায়েরি আছে সেগুলো পড়লে বুঝবে হয়তো।

আমিঃ আমি আপনার পদ্মাবতী না,আমি পরী।

রাফিদঃ কি বললা????

বলেই টান দিয়ে আমার ঘোমটা সরিয়ে দিলো,পদ্মার জায়গায় আমাকে দেখে রাফিদ ভাইয়া মনে হয় শক খেলো,মুখ রক্তশূণ্য হয়ে গেলো তার।
রুম থেকে বের হয়ে গেলেন উনি,মনে হয় ওনার বাবার কাছে গেছেন,আমি কাঁপতে লাগলাম দাড়িয়ে থেকে,কিছুক্ষণ পর ফিরে এলেন,এসে আমাকে টেনে নিয়ে গেলেন ওনাদের বাড়ির ছাদে,ছাদে আমাকে রেখে দরজা বন্ধ করে দিলেন ভিতর থেকে।

পৃথিবীর কয়জনের ভাগ্যে আছে এরকম টা আমার জানা নেই,ছাদে বসে বসে ভাবছি আর কান্না করছি।
হঠাৎ করেই আমার কেনো জানি ভয় ভয় করতে লাগলো,চাঁদনি আলোয় সব কিছু দেখা যাচ্ছে।
রাফিদদের এই বাড়িটি ওদের পুরনো জমিদার বাড়ি,ওদের বাড়ির রেওয়াজ অনুযায়ী বিয়ের অনুষ্ঠান এই বাড়িতে হয় ওদের,আমাদের দুই গ্রাম পরেই এই গ্রাম।
রাফিদরা সবাই ঢাকা থাকে,বিয়ে উপলক্ষে এখন গ্রামে এসেছে।
এই জমিদার বাড়ির অনেক ইতিহাস আছে,হঠাৎ করেই ওসব মনে পড়তেই আমার ভয় করতে লাগলো।

অদূরেই তাকিয়ে দেখি একটা মেয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে, কি আজব এখানে মেয়ে আসলো কই থেকে।

পরক্ষণেই মনে হলো,বিয়েতে ওদের কত আত্মীয় এসেছে তাদের কেউই হয়তো এই মেয়ে।
আমি এগিয়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম কি নাম তোমার?

মেয়েটিঃ লীলাবতী। তুমি তো পরী তাই না??
আমিঃ হ্যাঁ,তুমি আমার নাম ও জানো??
লীলাবতীঃ হ্যাঁ আমি আরো অনেক কিছুই জানি।যেমন ধরো,তোমার বোন পদ্মা এখন কোথায় আছে,কি করছে,তুমি চাইলে তোমাকে দেখাতে ও পারি।
আমিঃ আমাকে দেখাতে পারবে,দেখাও তো

মেয়েটা কই থেকে যেনো একটা আয়না নিয়ে এলো,আমাকে বললো তাকাও এদিকে

আমি তাকাতেই দেখি পদ্মা বৌ সেজে বসে আছে,পাশে বসে আছে ওর ক্লাসের অনিক,আমি যা বুঝার বুঝে নিলাম,তার মানে অনিক ভাইয়ার সাথে ও পালিয়েছে, কি আজব,আমি জানতেও পারি নি যে ও প্রেম করে।
এ জন্যই ও বিয়ের কথা উঠলেই গড়িমসি করতো।

আমি লীলাবতীর দিকে তাকালাম,মেয়েটা মুচকি হাসছে।

আমিঃ কিন্তু তুমি কিভাবে এসব পারো,তুমি কে??
লীলাবতীঃ আমি লীলাবতী বল্লাম তো তোমাকে।
আচ্ছা শুনো পরী,আমি এখন আসি,তোমার স্বামী আসতেছে তোমাকে নেয়ার জন্য,আবার দেখা হবে ।

বলেই মেয়েটা হাওয়ায় মিলিয়ে গেলো,আমি নিজেকে সামলাতে পারলাম না,জ্ঞান হারিয়ে পড়ে গেলাম।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here