আড়ালে_ভালোবাসি,বোনাস_পার্ট

0
1688

আড়ালে_ভালোবাসি,বোনাস_পার্ট
নন্দিনি_চৌধুরী

“ঘটে বুদ্ধি থাকলে তবে না অংকটা মিলাতে পারবি গাধি।”

পিছন থেকে এমন একটা কথা শুনে চমকে উঠে স্নেহা। পিছনে তাকিয়ে দেখে আরাফ দুইহাত পকেটে দিয়ে দাঁত বের করে হাসছে। স্নেহা এতে রেগে গিয়ে কমোড়ে দুই হাত রেখে বল্লো,

স্নেহা:এই এই তুমি হাসতেছো কেন হু। দেখছো যে আমি অংকটা পারছিনা।
আর তুমি হেসে যাচ্ছো। কোথায় আমাকে হেল্প করবা তানা হেসে যাচ্ছে হুহ্।

আরাফ:হায় এখন আমাকে আপনার অংকেও হেল্প করা লাগবে আল্লাহ।

স্নেহা:পারলে এসে হেল্প করো নয়ত যাও এখান থেকে।?

আরাফ:ওকে ওকে আয় খাতা নিয়ে এদিকে আয়।

তারপর স্নেহা আরাফের কাছে খাতা নিয়ে বসে। আরাফ খুব সুন্দর করে স্নেহাকে অংকটা বুজিয়ে দিলো।

স্নেহা:বাহ কত সহজ ধন্যবাদ আরাফ ভাইয়া।

আরাফ:হু এখন নিচে আসেন মহারাণী নাস্তা করতে।

স্নেহা:হ্যা আসছি যাও।

এরপর স্নেহা নিচে এসে নাস্তা করতে বসলো।
আজকেও টেবিলে মিতু আর আকাশ নেই। তাই তাদের খাবার উপরে পাঠিয়ে দেওয়া
হয়েছে।

মিতু আকাশের সামনে ভয়ে সংকচে যেতে পারছেনা। যদি আকাশ রেগে থাকে। কিন্তু কাল রাতে তারতো কোনো ভুল ছিলোনা। সেই নেশার ঘোরে সব করেছে। দরজার বাহিরে দাঁড়িয়ে আছে ভিতরে যেতে সাহস পাচ্ছেনা।

এদিকে আকাশ সোফায় মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে। সে এতুটুকি কনফার্ম হয়ে গেছে কাল রাতে সে নেশার ঘোরে অনেক বড় অন্যায় করে ফেলেছে মিতুর সাথে। যেটা সে চাইলেও না করতে পারবেনা। কিন্তু কাল রাতে সে এতোটা নেশাও করেনি তাহলে কিভাবে এটা হলো। সে জাস্ট দুই গ্লাস নিয়েছিলো। তাহলে এটা কি করে হলো আকাশের মাথায় কিছু আসছেনা। সে কি করবে সে মিতুকে ভালোবাসেনা। এখন যদি মিতু……না না সে ভাবতে পারছেনা কি করবে সে এখন।উফফফ আল্লাহ কি করবো এখন আমি। কেন যে সেদিন রাগের বসে এমন করলাম। সেদিন আমার দেশ ছেড়ে চলে যাওয়া উচিত ছিলো।

মিতু আস্তে করে রুমে প্রবেশ করলো। দেখলো আকাশ সোফায় বসা মাথায় হাত দিয়ে। হয়ত তার অনুসুচনা হচ্ছে যে কেন সে মিতুকে ছুলো। হায়রে জীবন স্ত্রীর কাছে আসেতে স্বামীর অনুসুচনা হচ্ছে। মিতু আস্তে করে আকাশের সামনে গেলো। আকাশ বুজতে পারলো কেউ এসেছে মাথা তুলে দেখে মিতু। মিতুকে দেখে তার রাগ হচ্ছে। কিভাবে সে এই ভুল করলো। আকাশ কিছু না বলে উঠে চলে যেতে নিলে কি মনে করে ফেরত এসে বলে,,,

আকাশ:কাল রাতের জন্য আকি দুক্ষিত।আমি জানিনা কিভাবে এটা হলো।কাল এতটা নেশা আমার কিভাবে হলো জানিনা। এটাকে একটা খারাপ সপ্ন ভেবে ভুলে যাও। আমি তোমাকে যখন ছেড়ে দেবো তখন তোমার ২য় বিয়ের আগপর্যন্ত আমি তোমার খরচ বহন করবো। আমি একটা ভালো ছেলে খুজে দেবো। সব কিছু তাকে জানিয়ে তার সাথে বিয়ে দেবো। প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দিও। আর হে পিল খেয়ে নিও।

মিতু:আপনি না বল্লেও আমি তা খেয়েছি আমি জানিতো আপ্নি আমাকে ইচ্ছা করে কাছেনেননি। আর কি বললেন আমাকে ছেড়ে দিয়ে আমার খরচ বহন করবেন। শুনেন মিস্টার আকাশ আমার বাবা ভাইয়ের টাকার ওভাব নেই। আমি সেখানে বসেই খেতে পারবো। কিন্তু আমি আপনাকে ছাড়বোনা দেখি কিভাবে আপনি আমায় ছাড়েন। আপনাকে নিজের করে পেতে অনেক কিছু করতে হয়েছে আমার। আর আমি আপনাকে পেয়ে ছেড়ে দেবো এত বড় পাগল আমিনা।

আকাশ মিতুর কথা শুনে অবাক, অবাক কন্ঠে বলে,

আকাশ:আমাকে পেতে অনেককিছু করতে হয়েছে মানে। কি করেছো তুমি?

মিতু বুজতে পারলো ও কি বলতে কি বলে ফেলেছে। তাই কথা ঘুরানোর জন্য বল্লো,

মিতু:কিছুনা।

বলেই মিতু রুম থেকে চলে আসলো। আকাশ মিতুর কথা কিছুই বুজতে পারলোনাম। আর মাথাও ঘামালোনা। সেও বেরিয়ে যায়। বেরিয়ে যাওয়ার আগে তার মাথায় এটাই ঘুরছে তার এত নেশা কাল হলো কি করে?

দেখতে দেখতে সোমবার চলে আসে। আজকে স্নেহার বাবা আসবেন তাই সকাল থেকে তোরজার চলছে। স্নেহা নিজ হাতে ওর বাবার প্রিয় খাবার গুলা রান্না করছে। আরাফ আর জুনায়েদ গেছে ইমরান সাহেব কে রিসিভ করতে। স্নেহা খুব উদ্বিগ্ন হয়ে আছে ওর বাবাকে দেখার জন্য।

কিছু ঘন্টা পরেই ইমরান সাহেবকে নিয়ে বাড়িতে ডুকলো আরাফ জুনায়েদ। প্রায় ১৮ বছর পর আজ নিজের বাড়িতে পা রাখছেন ইমরান সাবেহ। এই বাড়িতে কতনা সৃতি আছে তার। ভাইদের সাথে তার ভালোবাসার মানুষটার সাথে। আজ প্রথম সে তার আর তার স্ত্রীর ভালোবাসার চিহ্নটাকে সামনা সামনি দেখবে। তাকে ছুঁয়ে দেখবে। আচ্ছা তার মেয়েকি তার প্রতি অভিমান করে আছে? তাকে দেখলে কি সে তার কাছে আসবে। এসব কিছু ভাবতে ভাবতে ঘরে ডুকলেন ইমরান। ইমরান কে আসতে দেখে বাকি তিনভাই তার কাছে এগিয়ে এসে তাকে জরিয়ে ধরলো। ভাইদের কাছে পেয়ে ইমরান খুব আবেগপ্রবন হয়ে পরে। এদের মাঝেই নাজমা বেগম মাঝখান থেকে ডুকে বল্লো,

এই এই আমাকেও তোমাদের মাঝে নেও।

নাজমার এহেন কাজে সবাই হেসে দিলো। ছোট বেলায় ও নাজমা এমনি করতো চার ভাইকে একসাথে দেখলে মাঝখান দিয়ে ডুকে পরতো।

স্নেহা দূর থেকে দাঁড়িয়ে তার বাবাকে দেখছে। হ্যা তার বাবা। তার নিজের বাবা। তার জন্মদাতা বাবা। যাকে এতগুলা বছর সে কাছে পায়নি। স্নেহার মুখে হাসি চোখে পানি। মনে হয় এখনি পানি পরবে।

ইমরান ভাইদের কাছ থেকে ছুটে সামনে তাকিয়ে দেখে তার সেই ছোট পরীটা দাঁড়ানো। না পরীটা এখন আর ছোট নেই এখন সে বড় হয়েগেছে। তবুও বাবাদের কাছে মেয়েরা সব সময় ছোট। ইমরান হাসান ধির পায়ে স্নেহার কাছে আসলেন। স্নেহা আর ইমরান এখন মুখোমুখি স্নেহা কান্না মাখা কন্ঠে বল্লো,

স্নেহা:বাবা!

ইমরান সাহেব মেয়ের মুখে বাবা ডাক শুনে একদম বরফের মতো জমেযান। এতগুলা বছর পর নিজ সন্তানের মুখ থেকে প্রথম বাবা ডাক শুনছেন ইমরান সাহেব। কাপাকাপ হাতে হাত বাড়িয়ে দিলেন স্নেহার দিকে। স্নেহাও এবার নিজেকে ধরে রাখতে পারলনা হামলে পরে বাবার বুকে আর। কাঁদতে থাকে। বাবা মেয়ে দুজনেই কাঁদছে। এতগুলা বছরপর যে তারা এক হলো।

স্নেহা:বাবা আমাকে ছেড়ে আর কখনো চলে যেওনা প্লিজ। আমি তোমাকে ছাড়া থাকতে পারবোনা। আমি মাকে ছোট বেলায় কাছে পাইনি। তুমিও অভিমান করে চলেগেছিলে। আর আমাকে ছেড়ে যেওনা বাবা। আমি খুব ভালোবাসি তোমাকে।

ইমরান:আই এম সরি মা। আমি তোকে একা রেখে চলেগেছিলাম। আমি তখন শুধু নিজের কথা ভেবেছি। একবার ও ভাবিনি তুইত আমার মারিয়ার শেষ নিশানি। আমি তোকে কেন অবহেলা করে চলে যাচ্ছি। তবুও নিজের রাগ বজায় রেখে তোকে বড় ভাইজানের কাছে দিয়ে চলে গেলাম। সিডনি তে গিয়ে আমি বুজতে পারছিলাম আমি কি ভুল করেছি। নিজের সন্তানকে নিজের থেকে দূরে করে। প্রতিনিয়ত যন্ত্রনায় ভুগেছি।তাইতো বড় ভাইজানের থেকে তোর সব খোজখবর নেওয়া শুরু করলাম। আমার খুব ভয় হতো যদি তোর সামনে গেলে তুই আমাকে বাবা না মানিস। তাহলে আমিযে খুব কস্ট পাবো। তাই আসিনি। তবে এখন আর তোর কাছে না এসে পারলাম না। আমার যে তোকে একটা বার বুকে নিতে ইচ্ছা করে। তোর মুখ থেকে বাবা ডাক শুনতে ইচ্ছে করে।আমায় ক্ষমা করিস মা।আমিও তোকে অনেক ভালোবাসি।

স্নেহা:না বাবা তুমি এমন বলোনা। তুমি যা করেছে তা মায়ের ভালোবাসার জন্য করেছো। ভালোবাসার মানুষকে কেউ হারিয়ে ভালো থাকতে পারেনা বাবা। আমি জানি তুমি এভাবে বলোনা।

বাবা মেয়ের এই মধূর মিলন দেখে সবার চোখেই পানি। আরাফ মুচকি হেসে ভাবছে যাক আমার পিচ্ছিটার এভার সুখের দিন একটা একটা করে আসছে। এবার আর ও একটা সুখের খবর পাবা তুমি একটু অপেক্ষা করো। আরাফের ভাবনার মাঝে ফোন বেজে উঠে আরাফ একটা সাইডে চলে যায় ফোন নিয়ে।

দুপুরে স্নেহা তার বাবাকে নিজ হাতে খাইয়ে দিয়েছি ইমরান সাহেব ও মেয়েকে খাইয়ে দিয়েছেন। রাতে স্নেহা তার বাবার সাথেই ঘুমাবে বলেছে। আজ বাবার কোলে মাথা রেখে দুই বাপবেটি গল্প করবে।

দেখতে দেখতে ৫মাস চলে গেলো এই ৫মাসে আরাফ আর স্নেহার সম্পর্কের অনেক পরিবর্তন এসেছে। আরাফ স্নেহাকে সব সময় সব বিপদ থেকে আগলে রেখেছে। আর স্নেহাও আরাফের সাথে খুব ফ্রি হয়ে গেছে। এখন স্নেহার মনের মাঝে আকাশ না আরাফ উকিঝুকি মারে। হয়ত স্নেহা ভালোবেসে ফেলেছে আরাফকে, আবার হয়ত না। কিন্তু সে জানে আরাফকে সে পছন্দ করে অনেক বেশিই করে

কিন্তু এই ৫মাসে মিতু আর আকাশের সম্পর্ক অনেক বেশি খারাপ হয়ে গেছে। মিতু যতই চেষ্টা করেছে আকাশকে নিজের ভালোবাসায় জরাতে আকাশ ততই ওকে অপমান করে দূরে সরিয়ে দিয়েছে। আকাশ এখন মিতুর সাথে এক রুমে থাকেনা সে থাকে অন্য রুমে মিতু থাকে আকাশের রুমে। তাদের এই অবস্থা সবার চোখ এড়িয়ে গেলেও একজনের চোখে এড়ায়নি সে হলো আরাফ।আকাশ চায়না আর কোনো ভুল করতে খুব শিগ্রই সে মিতুকে ডিভোর্স দেবে।

আজকেও মিতু মার খেয়েছে আকাশের হাতে। অপরাধ এটাই সে আজকেও আকাশকে প্রেম নিবেদন করতে গিয়েছিলো। এই ৫মাসে প্রতিদিন সে এরকম মার খেয়ে যাচ্ছে। আকাশকে যত বার বলেছে ভালোবাসি ততবার মার খেয়েগেছে। ইদানিং তার শরিলটা ভালো যাচ্ছেনা পেটে প্রচুর ব্যাথা। প্রথমে পিরিয়ডের দিন গুলায় ব্যাথা করতো অনেক। কিন্তু এখন পিরিয়ড ছাড়াও ব্যাথা করছে অনেক। তাই মিতু ভেবেছে সে ডাক্তার দেখাবে।

১সপ্তাহ পর

আজকে স্নেহাদের বাড়িতে বিয়ে। নিতু জুনায়েদ, রিতু রাতুল খুব ঘরোয়া ভাবেই ওদের বিয়ে হচ্ছে। বেশি কাউকে জানায়নি তারা এই করোনাকালিন সময় বলে। তাই তারা নিজেরা নিজেরাই মিলে বিয়ে দিচ্ছে।

স্নেহা আজকে খুব খুশি গতকাল রাতে তার জীবনে একটা সুখময় মুহুর্ত ঘটেগেছে।

গতকাল রাতে,,,,,,

ছাদে দাঁড়িয়ে গল্প করছে আরাফ স্নেহা। আরাফ আর স্নেহা এখন প্রায় ঘুরতে যায়, একসাথে গল্প করে। তাদের বন্ডিং দেখে বাড়ির সবাই একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে রেখেছে

আরাফ:আচ্ছা স্নেহা পাখি শোন আজকে তোকে একটা গল্প বলবো।

স্নেহা:গল্প!কিসের গল্প?

আরাফ:একটা ভালোবাসার মাণূষের #আড়ালে_ভালোবাসার গল্প শুনবি?

স্নেহা:হুম হুম বলো বলো।

আরাফ বলা শুরু করলো,,,,,।

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here