আড়ালে_ভালোবাসি,পর্ব_৭,৮

0
1859

আড়ালে_ভালোবাসি,পর্ব_৭,৮
নন্দিনি_চৌধুরী
পর্ব_৭

“সালটা তখন ২০০১ আমার তখন মাত্র ৬বছর বয়স।আমাদের ফ্যামিলি ছিলো যৌথ ফ্যামিলি।আমার চার কাকারা এক সাথে থাকতো।আমার বড় কাকার ঘরে এক মেয়ে। মেঝ কাকার ঘরে এক ছেলে আর আমাদের ঘরে আমি আর আমার এক বছরের ভাই আকাশ,আমার ছোট চাচির ঘরে কোনো বাবু ছিলোনা। কিন্তু একদিন শুনি আমার ছোট কাকি আর বড় কাকির ঘরে বাবু আসবে।একদিন অনেক রাতে আমার বাবা,বড় কাকা,আর ছোট কাকা ছোট কাকিকে নিয়ে হাসপাতালে গেলেন।পরের দিন সকালে বড় কাকাকে দেখলাম একটা ছোট পুতুল কে তোয়ালে জরিয়ে বাসায় ডুকতে।বাসায় ডুকে আমি সবার আগে পুতুলের মুখটা দেখেছিলা।একদম পুতুলের মত লাগছিলো বাবুটাকে লাল বর্ন হয়েছিলো চেহারাটা।কিন্তু পুতুলটাতো ঘুমিয়ে ছিলো তাই হয়ত দেখেনাই যে আমি ওকে দেখছি।এরপর ওকে একে একে সবাই কোলে নিলো আদর দিলো।ওর নাম রাখলো স্নেহা।স্নেহাকে সবসময় বড় কাকাইদের সাথে থাকতে দেখে আমি ভাবতাম যে ছোট কাকাইরা কোথায়।তাই একদিন মাকে জিজ্ঞেশ করি,

আরাফ:আচ্ছা মা আমারা সবাই আমাদের আম্মু আব্বুর সাথে ঘুমাই। তাহলে ওই পিচ্চি বাবু কেন বড় কাকাইদের সাথে ঘুমায়। ছোট কাকা আর কাকি কোথায়?

মা তখন আমাকে কোলে নিয়ে বলে,

মা:ছোট কাকাই ওই দূর দেশে গেছে। আর ছোট কাকি অই তারাদের দেশে চলে গেছে। সে আর আসতে পারবেনা। কিন্তু তোমার কাকাই একদিন ঠিক আসবে বাবুর কাছে। তাই ততদিন বাবু বড় কাকার কাছেই থাকবে।তুমি কিন্তু বাবুকে একদম জালাবানা ঠিক আছে।তোমার বোন হয়না বাবু তুমি বোনের সাথে খেলবে ঠিক আছে।

আমিও সেদিন মায়ের কথা মাথা ঝাকালাম।
তারপর থেকে আমি প্রায় পিচ্চিটার কাছেই থাকতাম ওকে দোলনায় ঘুম পারিয়ে রাখিলে আমি দোলনার পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে ওকে দেখতাম।এভাবেই বড় হতে লাগলাম আমরা।আমি যখন ক্লাস ২ এ উঠলাম তখন পিচ্চিটা মাত্র পুরাপুরি হাটা আর কথা বলতে শিখলো।আমাদের সবার সাথে পিচ্চিটা খেলতো।আসতে আসতে ও স্কুলে ভর্তি হলো।আমরা সব ভাই বোন একই স্কুলে পড়তাম।তাই একসাথেই যাওয়া আসা করতাম।

এভাই দিন যেতে লাগলো।আমি ক্লাস ফাইভে যখন তখন পিচ্চিটা ক্লাস ২এ। আমার আর পিচ্চিটার মাঝেই প্রায় প্রায় ঝগরা হতো।পিচ্চিটা যখন ঝগরায় না পারতো তখন গাল দুটো ফুলিয়ে বলতো,

“আরাত ভাইয়া তুমি অনেক পচা আমার সাথে সব সময় ঝগরা করো”

পিচ্চিটা সব সময় আমার নাম উলটা উচ্চারণ করতো বাকিদের নাম ঠিক বলতো কিন্তু আমারটাই উল্টা বলতো।

দেখতে দেখতে আমরা সব ভাই বোন যখন স্কুলের গন্ডি পার হলাম তখন অই পিচ্চু আর আমাদের আরে পিচ্চু বোন তখন ক্লাস ৯এ।

যখন থেকে ভালোবাসা কি বুঝলাম। তখন থেকে বুজতাম আমি স্নেহাকে ভালোবাসি।কিন্তু কখই ওর সামনে এটা প্রকাশ করিনি।ইদানিং আমি খেয়াল করতে লাগলাম পিচ্চিটা আর আকাশ একে অন্যের সাথে খুব বেশিই মিশামিশি করে। আমার এটা দেখে অনেক রাগ লাগতো। কিন্তু নিজের ভাই দেখে কিছু বলতাম না।স্নেহা যখন ক্লাস টেনে উঠলো তখন আমি ঠিক করলাম ওর ১৫তম জন্মদিনে আমি ওকে আমার মনের কথা বলবো।কিন্তু সেদিন রাতে আমি যখন ছাদে যাই আমি গিয়ে দেখি আমার ভাই স্নেহাকে প্রপজ করছে আর স্নেহাও তাকে এক্সেপ্ট করে নিলো।সেদিন জানিনা আমার ভিতরে কি হচ্চিলো।আমি ঠিক করে নিলাম এইখানে আর থাকবনা যদি এখানে থাকি তবে আমার স্মেহা পাখিকে পাওয়ার লোভ হবে তাই পারি জমালাম কানাডাতে।আমি নাহয় আমার স্নেহাকে #আড়ালে_ভালোবাসি তার নাহয় জানতে হবেনা।কানাডায় গিয়ে দেশে যে আমার স্মেহা ছাড়া আমার মা বাবা আছে সেদিক ভুলেই যাচ্ছিলাম মা প্রায় ফোন দিয়ে কান্না করত বলতো তুই আয় তাই ঠিক করলাম আমি তখনই বাড়ি যাবো যেই সময় স্নেহা বাড়িতে থাকেনা।আমি ঠিক ওর এক্সাম এর সময় যেতাম জানতাম,কচিং,প্রাইভেট করে সেই বাসায় এসে নিজের রুমে এসে ঘুমাবে তাই আমার সাথে দেখা হবার চান্স নেই।এভাবেই যেতে থাকে সময়।স্নেহাকে কানাডা গিয়েও বুলতে পারলাম না।এর মাঝে শুনলাম আকাশ আর স্নেহার এংগেজমেন্ট সেদিন চোখ দিয়ে পানি পরেগেছিলো হারিয়ে ফেললাম স্নেহাকে একেবারের মতো হারিয়ে ফেললাম।যেদিন স্নেহার এংগেজমেন্ট ছিলো সেদিন রাতে আমাকে কল করে বড় কাকাই।তারপর জানান সেদিন কি কি হলো।আমি সেদিন রাতেই ফ্লাইটে বাংলাদেশে আসার জন্য বের হই।যখন আমি বাড়িতে পৌছাই গিয়ে দেখি স্নেহা অচেতন অবস্থায় পরে আছে চোখ মুখ ফুলে আছে বুঝা যাচ্ছিলো ও কান্না করছে। আমি ওকে ট্রিটমেন্ট দেই।এরপর শুনি আকাশ মিতুকে বিয়ে করেছে স্নেহার প্রতি রাগ জেদে সেদিন আমার আকাশের প্রতি করুনা হচ্ছিলো হ কারন আকাশ রুপো ভেবে কাচকে নিজের কাছে নিলো।সেদিন থেকে ঠিক করলাম আগে স্নেহাকে নির্দোষ প্রমান করবো তারপর ওকে নিজের করে নেবো।”

বর্তমানে,,,,,,,

স্নেহা এত্তখন চুপ করে সবটা শুনছিলো।তার চোখের কোণে পানি জমে এসেছে।কেউ তাকে আড়ালে এতটা ভালোবেসেছে কিন্তু সে বুজতেই পারেনি।স্নেহা যাকে ভালোবেসে কাছে নিলো সে তাকে দূরে করে দিলো।আর যে স্নেহাকে ভালোবাসতো তার কথা স্নেহা জানতইনা।

আরাফ স্নেহার চোখে পানি দেখে ওর দুই গালে হাত রেখে বল্লো,

আরাফ:এই স্নেহা পাখি কান্না করছিস কেন তুই?

স্নেহা এভার শান্ত থাকতে পারলোনা কেঁদে দিয়ে বল্লো,

স্নেহা:আই এম সরি ভাইয়া।আমি জানতামই না তুমি আমাকে এতটা ভালোবাসো।

আরাফ:দূর পাগলি এখানে সরির কি আছে।আর এখন তো তুই আমারই।আর কাউকে তোকে নিতে দেবোনা।

আরাফ স্নেহার কপালে নিজের কপাল ঠেকিয়ে আস্তে করে বলতে লাগ্লো,

“ভালোবাসি স্নেহা পাখি অনেক ভালোবাসি”

স্নেহার ভিতরে এক আলাদা শিতল হাওয়া বয়েগেলো আরাফের ভালোবাসি কথাটা শুনে।স্নেহাও তো ভালোবেসে ফেলেছে আরাফকে।তার মনে আরাফ তার নিজের জায়গা তৈরি করে নিয়েছে।স্নেহাও আসতে করে বলে উঠে,

স্নেহা:ভালোবাসি আরাফ ভাইয়া আমিও তোমাকে অনেক ভালোবাসি।

আরাফ যেনো নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছেনা অবষেশে সে তার স্নেহা পাখির মুখ থেকে ভালোবাসি শুনলো।সে সার্থক।

স্নেহা লজ্জায় একদম লাল হয়ে যাচ্ছে তাই সে আর একটুও অখানে থাকলো এক দৌড়ে রুমে চলে আসলো।আজ সে বলে দিয়েছে তার মনের কথা আরাফকে।আজ আর কোনো সংকোচ নেই তার মনে।

,,,,,,,বর্তমানে

আয়নার সামনে বসে গতকালকের কথা গুলো ভাবছে আর তৈরি হচ্ছে স্নেহা।আজ সে অনেক খুশি।তার জীবন থেকে সে আকাশ নামক কালো অধ্যায় কে ভুলতে পেরেছে। এভার শুধু নিজেকে নির্দোষ প্রমান করলেই সে সব দায় থেকে মুক্ত।

স্নেহা একটা মিষ্টি কালারের লেহেংগা পরেছে।এটা অবশ্য আরাফই তাকে দিয়েছে।সাথে মেচিং একটা দুল আর চুড়ি,সাথে হালকা সাজ।বেশ স্নেহা একদম রেডি।

স্নেহা নিচে এসে দেখে আরাফ একটা কালো শার্ট পরেছে, চুল গুলো স্ট্রাইক করা। বেশ লাগছে আরাফকেও দেখতে।

দেখতে দেখতে রিতু,রাতুল,নিতু আর জুনায়েদের বিয়ে হয়ে গেলো।আজ তারা তাদের ভালোবাসার মানুষকে নিজেদের করে পেলো।

মিতু এক কোণে দাঁড়িয়ে ভাবছে কি এমন ক্ষতি হয় আকাশ তাকে মেনে নেয়।তবে তাদের ও তো এরকম ভাবে আবার বিয়ে হবে কেন মেনে নেয়না আকাশ তাকে।মিতু আজকে সকালে গিয়ে হাসপাতালে টেস্ট করিয়ে এসেছে তার পেটে ব্যাথাটা কমছেই না।

আকাশ এক সাইডে দাঁড়িয়ে রাগে ফুসছে কারন তার একটু সামনেই আরাফ আর স্নেহা হাসাহাসি করছে।আকাশের রাগে গা জলছে।

“কি এত হাসাহাসি ভাইয়ার সাথে হু। লজ্জা সরম নাই এত কিছু করেও এভাবে হেসে যাচ্ছে”।

রিতুকে বিদায় দেওয়ার সময় জাফর সাহেব আর স্ত্রি, নিতু, স্নেহার সেকি কান্না রিতু ও তো কেঁদে একদম অস্থির। মেয়েকে বিদায় দেওয়াটা যে কত কস্টের তা হয়ত পৃথিবীর কোনো বাবা মা বলে বুঝাতে পারবেনা।

রাতের দিকে স্নেহা বসে আছে ছাদে। আরাফ একটা কাজে বাহিরে গেছে। স্নেহা বসে বসে আকাশ দেখছিলো। তখন পিছন থেকে কেউ বলে উঠে,

“বেশ ভালোই খেলা শুরু করেছো।”

পিছন থেকে এমন একটা কথা শুনে স্নেহা পিছনে তাকিয়ে দেখে আকাশ দাঁড়িয়ে আছে। স্নেহা ভ্রু কুঁচকে প্রশ্ন করলো,

স্নেহা:মানে?

আকাশ:মানে তুমি কত বড় খেলোয়ার স্নেহা। প্রথমে আমি, তারপর অই ছেলেটা আর এখন আমার নিজের ভাই। বাহ্ আর কত জনকে নিজের এই রুপের জালে ফাসাব্র শুনি।তোমার মতো থার্ডক্লাশ মেয়েরা এমনি হয়। প্রথম একজনের সাথে তারপর আরেকজনের সাথে বেড পর্যন্ত চলে যাও আর তারপর আরেকজনকে ফাঁসিয়ে বিয়ে করে নেও।আমি তো ভাবতে পারিনি তোমার নিরিহ চেহারার পিছনে কত বিস্রি একটা রুপ আছে ছিহ্।

আকাশের কথা গুল শুনে স্নেহা আকাশের সামনে এসে দাঁড়িয়ে মুচকি হেসে বলে,

স্নেহা:আগে তোমার কথা শুনে আগে আমার অনেক কষ্ট হতো জানো আকাশ কেন! কারণ তখন আমি তোমাকে ভালোবাসতাম। আর ভালোবাসার মানুষের চোখে নিজের জন্য ঘৃণা কেউ দেখতে চায়না।কিন্তু এখন, এখন আর আমি তোমাকে ভালোবাসিনা। হ্যা মুছে গেছো তুমি আমার মন থেকে। সেদিনই মুছে গেছো যেদিন তুমি মিতুকে নিজের করে নিয়েছো।এখন আমার তোমার প্রতি জাস্ট ঘৃণা আসে।আর কি বললে আমি আমার রূপের জালে ফাসাচ্ছি হুহ শুনো আকাশ যেদিন তুমি সত্যিটা জানবে সেদিন আফসোস করবে সেদিন হাজাএ চাইলেও আমি তোমাকে গ্রহন করবোনা। কারন আমার এই মনে এখন আরাফের জন্য ভালোবাসা তৈরি হয়েছে।সে তোমার মতো কু রুচিবান মানুষনা।

স্নেহা কথা গুলো বলে সেখান থেকে চলে এলো।আর আকাশ স্নেহার কথা গুলো শুনে অবাক হলো কিসের সত্যি?কি সত্যির কথা বলে গেলো স্মেহা।তবে কি সত্যি স্নেহা নির্দোষ!

সকালে,,,

স্নেহাকে কলেজে পৌছে দিয়েগেছে আরাফ।কালকে স্নেহার জন্মদিন তাই সে একটা বিশেষ সারপ্রাইজ প্ল্যানিং করেছে সে।এই জন্মদিনেই স্নেহাকে একটা বিশেষ উপহার দিবে সে।

আরাফ একজনকে কোল দিলো গাড়িতে বসে।

আরাফ:সব কিছু রেডি?

…………………..

আরাফ:ওকে কালকে তাহলে যেখানে বলবো সেখানে চলে এসো।

#চলবে

আগামিকাল সব রহস্য ফাস করবো ইনাসাল্লাহ।আর মিতু আর আকাশের জন্য একটা শাস্তি ভেবে ফেলেচি?।তবে একটা কথা যদি আকাশকে মেরে দেই তবে কেমন হবে?।ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন?।

#আড়ালে_ভালোবাসি
#পর্ব_৮
#নন্দিনি_চৌধুরী

আজকে স্নেহার জন্মদিন।আজকের দিনে সে ১৮ বছর বয়সে পা রেখেছে।আরাফ আজকে স্নেহার জন্য দুইটা সারপ্রাইজ তৈরি করে রেখেছে।আরাফের বাগান বাড়িতেই আজকে স্নেহার জন্মদিন পালন করবে সবাই।তাই সেখানেই সব গোজগাজ হচ্ছে।

স্নেহা বেলকনিতে বসে আছে আর গতকালকের কথা ভাবছে।

গতকাল,,,,,

স্নেহা রুমে বসে আছে। সে আরাফেএ প্রতি খুব রেগে, আছে কারন আর কিছুক্ষনপর তার জন্মদিন। অথচ আরাফের কোনো খবর নেই। সেতো তার প্রথম উইশটা আরাফের থেকে পেতে চায়।স্নেহা রুমে বসে পাইচারি করছে আর আরাফের গুষ্টির তুষ্টি উদ্ধার করছে।এরকম করতে করতে হঠ্যাৎ ঘরের লাইটগুলো অফ হয়ে গেলো।

স্নেহা;যাহ্ বাবা এটা কি হলো! এই অসময় লোডশেডিং দূর ভাল্লাগেনা।

স্নেহা ফোনের ফ্লাস জালিয়ে বাহিরে বেরোনোর জন্য পা রাখতেই কেউ ওর চোখে কাপড় বেধে দেয়। স্নেহা এরকম আচমকা ঘটনায় ভয় পেয়ে যায়। ভয়ে সে যেইনা চিৎকার করতে যাবে সেই অপর মানুষটা ওর মুখ আটকে ধরে।আর ফিসফিসিয়ে বলে,

“হুস একদম চুপ কোনো চিৎকার না”।

স্নেহা ভয়ে কোনো কথা বলতে পারছেনা। সে ভাবছে এটা কি চোর নাকি ডাকাত না কিডনাপ্যার।

স্নেহাকে কোলে করে সেই লোকটা ছাদে নিয়ে গেলো। তারপর তাকে নামিয়ে দিলো ছাদে। তারপর আস্তে করে চোখের বাঁধন খুলে দিলেই স্নেহা তাকিয়ে দেখে আরাফ দাঁড়ানো তার সামনে।আরফকে দেখে স্নেহার রাগ লেগে যায়। সে অভিমান করে চলে যেতে নিলে। আরাফ তাকে আটকে দেয় আর বলে,

আরাফ:উম কোথাও যাওয়া যাবেনা এখন ম্যাডাম।

স্নেহা:ছাড়ো আমাকে আমার তোমার সাথে কথা নেই।

আরাফ:আচ্ছা কথা বলতে হবেনা তুমি একটু সামনে তাকাও।

স্নেহা আরাফের কথা মত সামনে তাকালেই সাথে সাথে লাইট গুলো জ্বলে উঠে। স্নেহা অবাক চোখে তাকিয়ে আছে কারন, পুরা ছাদ খুব সুন্দর করে ডেকোরেশন করা। ছাদের সব জায়গায় বেলুন লাইট লাগানো। স্নেহার পায়ের নিচে একটা লাল কার্পেট তার উপর অসংখ্য গোলাপ ফুলের পাপড়ি। স্মেহার কিছুটা সামনে একটা টেবিলে কেক রাখা। আরাফ এভার স্নেহার কানে কানে বল্লো,

আরাফ:এভার উপরে একটু তাকাও।

স্নেহা আরাফের কথায় উপরে তাকিয়ে দেখে আকাশে হ্যাপি বার্থডে স্নেহা লেখা উঠেছে।

স্মেহার চোখ আনন্দে ভোরে ওঠে সে সজ্ঞে সজ্ঞে আরাফকে জরিয়ে ধরে বলে,,

স্নেহা:থ্যাংকিউ থ্যাংকিউ সো মাচ্।আমাকে এত সুন্দর জন্মদিনের উইশ করার জন্য।

আরাফ স্মেহাকে জরিয়ে ধরে বলে,

আরাফ:পছন্দ হয়েছে?

স্নেহা:অনেকককককককককককক।

আরাফ:হাহা্হা আচ্ছা চলো এভার কেক কাটো।

তারপর স্নেহা কেক কাটে আরাফ স্নেহাকে আগে খাওয়ায় তারপর স্নেহা আরাফকে।

স্নেহা:সবঠিক আছে কিন্তু তুমি আজ সারাদিন কই ছিলে? আমাকে আজকে কলেজ থেকে নিতেও যাওনি।?

আরাফ:তোমার জন্য সারপ্রাইজ প্ল্যানিং করছিলাম পাখিটা আমার। থাক রাগ করেনা বাবুটা।

স্নেহা:হু রাগ করবোনা যদি একটা কাজ করো তাহলে।

আরাফ:কি কাজ?

স্নেহা:আমার জন্য একটা গান গাও।আর বলাএ চেষ্টাও করোনা তুমি গান পারোনা। আমি সেঝ আম্মুর থেকে শুনেছি তোমার গানের গোলা খুন ভালো। নেও তাড়াতাড়ি শুনাও।

আরাফ:যো হুকুম মহারাণী

আরাফ নিচে গিয়ে গিটার নিয়ে আসলো

তারপর স্নেহাকে দোলনায় বসিয়ে আরাফ আরাফ টেবিলটা এনে ওর উপরে বসে গান ধরলো,,

“তুমি কি আমার হাসি মুখের আবার কারন হবে(2x)
“তুমি কি আমার শত ভুলের আবার বারন হবে(2x)

“দেবোনা জল আসতে চোখে কোনোদিন ও আর(2x)

“আর একটিবার দাও যদি জল মুছার অধিকার”(2X)

“তুমি কি আমার হাসি মুখের আবার কারণ হবে”
“তুমি কি আমার শতভুলের আবার কারণ হবে”

“আমি তোমার নতুন ভোরের সূর্য হতে চাই (2x)
“আমি আবার তোমার আশার প্রদিপ হতে চাই(2x)

“দেবোনা জল আস্তে চোখে কোনোদিন ও আর(2x)
“আর একটিবার দাও যদি জল মোছার অধিকার(2x)

“মুছে ফেলো অভিমানের দাগটি তুমি এভার(2x)
“হাসির আলোয় আমায় করো আলোকিত আবার(2x)

“দেবোনা জল আসতে চোখে কোনোদিন ও আর(2x)
“আর একটিবার দাও যদি জল মোছার অধিকার(2x)

“তুমি কি আমার হাসি মুখের আবার কারন হবে
“তুমি কি আমার শত ভুলের আবার বারন হবে

“দেবোনা জল আসতে চোখে কোনোদিন ও আর
“আর একটিবার দাও যদি জল মুছার অধিকার”

গান শেষে হতেই আরাফ তাকিয়ে দেখে স্নেহা মুগ্ধ নয়নে ওর দিকে তাকিয়ে আছে।আরাফ স্নেহার সামনে এসে ঝুকে বোলে,

আরাফ:কি মেডাম খুশি?

স্নেহা কিছুনা বলে উঠে ওকে জরিয়ে ধরে বলে,

স্নেহা:খুব খুশি।ভালোবাসি আরাফ খুব ভালোবাসি।

আরাফ স্নেহার কপালে চুমু দিয়ে বলে,

“ভালোবাসি”

বর্তমানে,,,

স্নেহা সোফায় বসে আছে। খুব মন খারাপ লাগছে ওর। বাসায় কেউ ওকে এখনো উইশ করলোনা। সবাই কি ভুলে গেলো নাকি।
স্নেহা মন খারাপ করে বসে আছে। এমন সময় স্নেহার ফোনে একটা কল এলো আরাফের।

আরাফ:হ্যালো স্নেহা
স্নেহা:হুম বলো।
আরাফ:শুনো বিকেলে তুমি আমার বাগান বাসায় এসোতো একটা কাজ আছে।
স্নেহা:আচ্ছা তবে কি কাজ?
আরাফ:আসলেই দেখবা এখন রাখি।

স্নেহা ফোন রেখে ভাবছে কি কাজে আরাফ তাকে ডাকছে।

বিকালে আরাফের কথা মতো স্নেহা ওর বাগান বাসায় গেলো আরাফ স্নেহার ফোনে ঠিকানা ম্যাসেজ করে দিয়েছিলো।স্নেহা বাসার সামনে আসলে দেখে আরাফ গেটে দাঁড়ানো।স্নেহা আরাফের দিকে এগিয়ে গেলে আরাফ ওর দুই চোখে আবার কাপড় বেধে দেয়।

স্নেহা:আরে আরে কি করছো আবার?
আরাফ:চুপ এত কথা বলো কেনো যা করছি দেখবাই চোলো হাটো।

আরাফ স্নেহাকে নিয়ে একটা রুমে আসে।এসে স্নেহার চোখ থেকে কাপড় খুলে দেয়।স্নেহা ভালো করে চারিপাশে তাকিয়ে দেখে বেশ বড় রুমটা আর অনেক সুন্দর করে গুছানো।

আরাফ কাভার্ড থেকে একটা শপিং ব্যাগ এনে স্নেহার হাতে দেয় আর বল,

আরাফ:এই নেও এই ব্যাগটা ধরো এখানে তোমার সব সাজগোজের জিনিস দেওয়া। তুমি রেডি হয়ে বসো সন্ধ্যায় আমি তোমাকে নিচে নিবো।

আরাফ কথাটা বলেই রুম থেকে চলে গেলো।

স্নেহা বেকুবের মতো হয়ে গেলো আরাফের কথা শুনে।তাও ব্যাগটা খুলে দেখে সেখানে একটা কালো রং এর গাউন সাথে কিছু হালকা জুয়েলারি। স্নেহা সেগুলা নিয়ে রেডি হতে চলে গেলো।

রেডি হতে হতে ৬টা বেজে গেলো।একটু পর আরাফ রুমে এসে তো পুরাই সকড।স্নেহাকে এই ব্লাক গাউনে অনেক সুন্দর লাগছে।আরাফকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে স্নেহা ওর সামনে এসে তুড়ি বাজিয়ে বলে,

স্নেহা:এভাবে তাকিয়েই থাকবে নাকি কিছু বলবে??

আরাফ:হ, হ্যা,চলো নিচে ওহ তার আগে দাঁড়াও আগে চোখ বেধে দিয়ে নেই।

স্নেহা:আবার?

আরাফ:আর একটু প্লিজ

স্নেহা:হু

তারপর আরাফ স্নেহার চোখ আবার বেধে নিচে নিয়ে গেলো নিচে এসে স্নেহার চোখেএ বাধন খোলার সাথে সাথে সবাই এক সাথে বলে উঠে,

“HAPPY BRITHDAY SNEHA”

সবাইকে এখানে দেখে অবাক হয়ে যায়। স্নেহা সে ভাবতেও পারেনি সবাই তাকে এভাবে সারপ্রাইজ দেবে। স্নেহা সবাই কে দেখে অনেক খুশি হয়।স্নেহার বাবা ওর কাছে এসে ওর কপালে চুমু দিয়ে বলে,

বাবা:আমার মেয়েটা কত বড় হয়ে গেলো সুখি হো মা সব সময় ভালো থাক।

স্নেহার বাবা স্নেহার হাতে একটা বক্স দিয়ে বললেন,

বাবা:এখানে তোর জন্য রাখা তোর মায়ের সব গহনা আছে সাথে কোন ব্যাংকে কি আছে তার সব ডিটেইলস আছে।এখন এগুলা তুই নিজ দায়িত্যে বুজে নে।এখন এগুলোর থেকে আমার ছুটি।

স্নেহা:বাবা এগুলা তোমার কাছেই থাকুক না আমাকে কেন দিচ্ছো।

বাবা:না মা এগুলা তোর তাই এখন থেকে তোর কাছেই রাখ।

সবাই মিলে বেশ কিছুক্ষন আনন্দ করার কিছুক্ষন পরেই সেখানে আকাশ আসলো।আকাশকে মূলত আরাফই জোর করে নিয়ে আসছে নাহলে আকাশের এখানে আশার কোনো ইচ্ছাই ছিলোনা।

সবাইকে একসাথে জোরো করে এভাএ আরাফ বলতে শুরু করলো,,,

আজকে এই জন্মদিনে আমি স্নেহার জন্য একটা বিষেশ উপহার তৈরি করে রেখেছি।
এভার ওকে সেটা দেবার পালা।

তোমরা সবাই জানো গত ছয় মাস আগে স্নেহা আর আকাশের এংগেজমেন্ট এর দিন আকাশ স্নেহার কিছু পিক আর ভিডিও পেয়েছিলো। যার প্রেক্ষাপটে আকাশ স্নেহাকে ছেড়ে দিয়ে মিতুকে বিয়ে করছে।

সেদিন আকাশ একভার ও সত্যি কি মিথ্যা যাছাই করেনি। আজ আমি তোমাদের কোনটা সত্য কোনটা মিথ্যা তা জানাবো।

আরাফ কাউকে কল করে ভিতরে আসতে বলে।কিছুক্ষনের ভিতরেই সেখানে আবির আএ নুয়াজ আসলো।

কেউ বুজতে পারছেনা যে আরাফ কি করতে চলেছে।আকাশ নিজেও বুজতে পারছেনা কি হতে যাচ্ছে।

আরাফ আবার বলা শুরু করলো,,

এই হচ্ছে আমার বন্ধু আবির।একজন কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার।আমি যখন স্নেহার ওই পিক গুলো আর ভিডিওটা হাতে পাই তখন আমি ওর সাথে কন্টাক্ট করি। ওকে বলি এর সত্যতা যাছাউ করতে। ও আমার থেকে তিনদিন সময় নেয়। তিনদিন পর আমাকে আসল সত্যটা হাতে দেয়। আমি চাইলে তোমাদের সেটা দেখাতে পারতাম কিন্তু আমি চেয়েছিলাম আসল কাল্পিটকে বের করতে।তাই আমি সব খোজ খবর নেওয়া শুরু করলাম।

জাফর হাসান:আরাফ অই পিক গুলা ফেক?

আরাফ:জি বড় আব্বুর এক্ষুনি তোমাদের দেখাচ্ছি আসল সত্যটা।

আরাফ আবিরকে ইশারা করলে আবির আরাফদের বড় প্রজেক্টরটাতে দেখানো শুরু করে।

আবির:এই যে ছবি গুলো আপনারা এখন দেখছেন এগুলা হলো সেই ছবি যেটা আপনারা হাতে পেয়েছিলেন। যেখানে স্নেহাকে দেখা যাচ্ছে একটা ছেলের সাথে।আর এখন আপনারা যেই ছবিটা দেখবেন সেটা হচ্ছে এই ছবিটার আসল কপি।

সবাই স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে অবাক।আসলেই স্নেহার জায়গায় অন্য একটা মেয়ে আর সেই ছেলেটাই।কিন্তু শুধু স্নেহার জায়গায় অন্য মেয়ে।

আবির:এই যেই ছবিটা এখন আপনারা দেখছেন সেইটাই হলো আসল।এই মেয়েটার মুখটা সরিয়ে কেউ এডিট করে স্নেহার ছবি অখানে বসিয়েছে।আর এই ভিডিওটাতেও সেই সেম মেয়েটাই আছে কেউ ইচ্ছা করেই এর মুখটা ব্লুয়ার করে দিয়েছিলো।যাতে করে যেই ওই কাজটা করেছে সে বিলিভ করাতে পারে আকাশকে যে ভিডিওতে থাকা মেয়েটাও স্নেহাই।

ইকবাল:এই সব করার কারন কি আর এই ছেলেই বা কে ওর সাথে স্নেহার শত্রুতা কি ছিলো?

আকাশ এত্তক্ষন এসব দেখে হতভম্ব হয়ে গেছে সে কি বড় ভুল করে ফেল্লো এটা?

আরাফ:উহুম মেঝ আব্বু এই ছেলের স্নেহার সাথে কিছুই নেই সেতো এগুলা করেছে টাকার বিনিময় এক্ষনি জানবে একটু দাঁড়াও।

আরাফ আবার কাউকে কল দিলো।

এবার পুলিশের সাথে করে সেই ছেলেটাকে আনা হলো যার ছবি সবাই দেখেছে।

জাফর:এই ছেলেকে তো উচির সাজা দেওয়া উচিত। আমাদের বাড়ির মেয়ের সাথে এমন করার সাহস পায় কি করে?

আরাফ এভার ছেলেটার কাছে এগিয়ে এসে সবার দিকে তাকিয়ে বল্লো,

আরাফ:এর নাম হচ্ছে রাহাত।রাহাত আকাশদের ভার্সিটিতে পরে।একটা প্লেবয় ও বিভিন্ন মেয়েদের সাথে রিলেশন করে তাদের সাথে ফিজিকাল হয়ে সেই ভিডিও ধারন করে মেয়েদের ব্লাকমেইল করে।কেউ একজন ওর থেকেই একটা ভিডিও নেয় আর কিছু ছবি বিনিময় ওকে টাকা দেয় টাকার লোভে ও দিয়ে দেয় সেগুলা।এরপর পালিয়ে যায় শহর ছেড়ে।আমি যখন এই আসল ছবি গুলা হাতে পাই তখন আকাশের ভার্সিটিতে খোজ লাগাই।আমার মনেই হচ্ছিলো এই ছেলেটা আকাশের ক্লাসের কেউ হবে।কারন ওর বায়ো ডাটা যখন বের করি তখন আকাশের ভার্সিটির নাম দেওয়া ছিলো ওর ফাইলে।আমি ভার্সিটিতে খোজ নিয়ে ওর ব্যাপারে জানলাম।এরপর আমার এক পুলিশ বন্ধুকে এই বিষয়ে ইনফ্রম করলাম।তখন ও ওর তালাস শুরু করে অবষেশে ওকে রাজশাহী থেকে উদ্ধার করে।

আরাফ এভার রাহাত এর দিকে তাকিয়ে বলে,

আরাফ:কি রাহাত ভাই আমি কি ঠিক বললাম।

রাহাত মাথা ঝাকালো।

স্নেহার এত পরিমান রাগ হচ্ছে সে রাহাতের সামনে এসে পায়ের জুতা খুলে ইচ্ছা মত মারতে লাগলো আর বলতে লাগলো,

স্নেহা:তোদের মতো ছেলের জন্য আজ আমাদের মেয়েদের এই অবস্থা।তোরা একটা মেয়ের সরল মনের সাথে খেলা করিস।একটা মেয়ের ভালোবাসা বিশ্বাস নিয়ে মজা করিস।একটা মেয়েকে ভালোবাসার জালে ফেলে তার সাথে ফিজিক্যাল হয়ে তারপর তাকে ছেড়ে দেস।আজ আমার ছবি দিয়ে এসব করছিস। না জানি এই ছবি ভিডিওগুলা যেই মেয়েটার তার কি অবস্থা।

স্নেহাকে আরাফ অনেক কস্টে থামায় নাহলে আজকে তো রাহাতকে সে মেরেই ফেলবে।

ইমরাম:কিন্তু এর মূলে কে আছে আরাফ।কে এই কাজটা করছে?

আরাফ :বলছি ছোট কাকা সব বলছি।

আকাশ একদম পাথরের মূর্তির মতো হয়ে গেছে।সব কেমন এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে তার। সে কত বড় ভুল করে ফেল্লো।

স্নেহাকে রেখে আরাফ এভার নুয়াজের কাছে গিয়ে ওর দুকাধে হাত দিয়ে বল্লো,

আরাফ:আচ্ছা নুয়াজ বলোতো।একজন কাছের বন্ধু যদি তার কাছের বন্ধুর পিঠ পিছে ছুড়ি মারে তবে কেমন লাগে?

নুয়াজ আরাফের কথায় ঘামতে লাগলো কাপাকাপা গলায় বল্লো,

নুয়াজ:ম.মানে ভাইয়া বুজলাম না।

আরাফ:অহ দেখছো আমিও না আসলেইতো তুমি কেম্নে বুজবা। কিন্তু তুমি এতো ঘামছ কেন নুয়াজ এসি চলছে তাও ঘামছো কারন কি বলতো?

নুয়াজ :না এম্নেই, এম্নেই ঘামছি।

আরাফ:কেন করলে এমন নুয়াজ?

#চলবে

নেন রহস্য বের করে দিচ্ছি।তারপর বলেন নুয়াজকে কি কেউ আশা করছিলেন।আচ্ছা হ্যা গত পর্বে একটু বয়সে তালগোল লেগেগেছিলো তার জন্য সরি?।প্লিজ মাফ কইরেন বুজেন তো কাচা হাতের লেখা।ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন?।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here