আড়ালে_ভালোবাসি,পর্ব_৯,১০

0
1838

আড়ালে_ভালোবাসি,পর্ব_৯,১০
নন্দিনি_চৌধুরী
পর্ব_৯

“কেন এমন করলে নুয়াজ?”

আরাফের কথা শুনে নুয়াজ সহ সবাই চমকে যায়।নুয়াজ তো রিতীমতো ভয় পাচ্ছে।আরাফের কথা শুনে স্নেহা বলে উঠে,

স্নেহা:নুয়াজ ভাইয়া তুমি? তুমি এসব করেছো?কিন্তু কেন ভাইয়া কেন এমন করলে আমার সাথে।আমিতো তোমাকে নিজের ভাই ভাবতাম।আর তুমি আমার সাথে এমন কেন করলে ভাইয়া।আমি তোমার কি ক্ষতি করেছিলাম।যার জন্য তুমি আমার সাথে এসব করলে।

নুয়াজ এভার চিৎকার দিয়ে বললো,

নুয়াজ:হ্যা হ্যা!আমিই করেছি সব। এই সব কিছুর মূলে আমি ছিলাম।আর আমি যাই করেছি একদম ঠিক করেছি।তোমার সাথে আমার শত্রুতা না আমার শত্রুতা আকাশের সাথে।হ্যা আকাশের সাথে,আকাশের জন্য আজ আমার বোন আমার নিস্পাপ বোনটা আজ আমার কাছে নেই।আজ আকাশের জন্য আমি আমার বোনের মুখ থেকে ভাই ডাক থেকে বঞ্চিত।আমি আমার বোনের মৃত্যুর প্রতিশোধ নিয়েছি।

আরাফ:তোমার বোনের মৃত্যুর প্রতিশোধ।কি করেছিলো আকাশ তোমার বোনের সাথে?

নুয়াজ:ঘটনাটা ৩বছর আগের।

৩বছর আগে,,,,,

“আমি আর আমার ফ্যামিলি থাকতাম সিলেট।আমাদের পরিবার বলতে আমার মা,বাবা,আমি আর আমার ছোট বোন।আমার বাবার আর্থিক অবস্থা এতোটা ভালোনা থাকায় আমার নানুরা আমাকে তাদের কাছে নিয়ে যায়।সেখানেই আমি আমার পড়াশুনা করি।আমি যখন কলেজে উঠি তখন আমার নানু মারা যায়।নানু মারা যাবার পর পরেই আমাকে আমার মামারা বের করে দেয় বাসা থেকে তারা আর আমার খরচ বহন করতে পারবেনা বলে জানিয়ে দেয়।আকাশের সাথে আমার স্কুল লাইফ থেকে ভালো বন্ধুত্ব হয়।আমাকে বাসা থেকে বের করে দিলে আকাশ আমাকে ওর বাসায় নিয়ে যায়।আকাশের বাসার সবাই খুব আপন করে নেয়।কিন্তু তবুও নিজের কাছে লজ্জা লাগত। তাই দুই মাস থেকেই আমি ওখান থেকে চলে আসলাম কলেজের বয়েজ হোস্টেলে।এর মাঝে আমার বোন এ.সে.সি এক্সাম দিয়ে বায়না ধরে সেও আমার কলেজে পড়াশুনা করবে।নিজের পড়াশুনার খরচ চালাতাম টিউশানির টাকা দিয়ে বাবার কিছু টাকা দিতেন।এখন বোনের আবদার ফেলে দিতে পারিনা তাই আমার বোন যখন এ.সে.সি তে ভালো রেজাল্ট করে ওকে আমি আমাদের কলেজে নিয়ে আসি।আমার বোন কলেজের গার্লস হোস্টেলে থাকা শুরু করে।

আমার বোনের নাম ছিলো নেহা।নেহা অনেক চুপচাপ প্রকৃতির মেয়ে।কারো সাথে তেমন মিশতনা।কলেজে কারো সাথে মিশতনা তেমন।সব সময় নিজের পড়াশুনে নিয়ে ব্যাস্ত থাকত।আমাদের কলেজের ক্রাশ বয়দের মধ্য আকাশ ছিলো একজন যার জন্য মেয়েরা পাগল।আকাশ যেহিতু স্নেহাকে ভালোবাসত সেহিতু ও সেসব মেয়েদের পাত্তা দিতনা।কিন্তু ওর খুব বাজে নেশা ছিলো বাজি খেলার।প্রায় আমাদেএ বন্ধুদের সাথে বাজি ধরে উল্টাপাল্টা কাজ করতো আকাশ।

এর মাঝে আমি দুইদিনের জন্য খুলনা গিয়েছিলাম কিছু জরুলি কাজে।খুলনা থেকে আসার পর শুনি আমার বোন নিখোজ ওকে খুজে পাওয়া যাচ্ছেনা।এই কথা শুনে যেনো আমার পুরা দুনিয়া উল্টে গেলো।আমি আমার বোনকে সব জায়গায় খুজলাম এমনি পুলিশের কাছেও গেলাম।এর মধ্য আমার বোনের রুমমেট আমাকে বল্লো যেদিন আমি খুলনা যাই তার পরেরদিন আকাশ ভোরা মাঠের মাঝে আমার বোনকে যা না তাই বলে অপমান করেছে এমনি থাপ্পর ও মেরেছে।আমার বোন নাকি সেই সময়ই কলেজ থেকে বের হয়ে গেছিলো।আমি আকাশের সাথে যখন এইটা নিয়ে কথা বলতে যাবো।তখন পুলিশ অফিসার আমাকে ফোন দিয়ে বলেন তারা একটা লাশ পেয়েছেন।আমি হাওয়ার গতিতে পুলিশ টেশনে যাই আমি বার বার প্রাথর্না করছিলাম অই লাশ যেনো আমার বোনের না হয়।পুলিশ টেশনে গিয়ে দেখলাম লাশের চেহারা ক্ষতবিক্ষত হওয়া।ডি এ নে টেস্ট করে জানলাম এটা আমার বোন।আমার নেহা।আমার বোনকে টানা দুইদিম গণধর্ষণ করা হয়েছে তারপর তাকে মেরেফেলা হয়েছে।আমার বোন সেদিন যখম রাস্তায় কাঁদতে কাঁদতে যাচ্ছিলো তখন কিছু জানোয়ায়ের দল আমার বোনকে উঠিয়ে নিয়ে যায় আর ওকে মেরে ফেলে।সেদিন আমি আমার বোনের লাশ জরিয়ে হাউমাউ করে কাঁদছিলাম।আমার মা এটা সয্য করতে না পেরে বিছানা সয্যা হলেন।আমার বোনের মৃত্যুর পর ওর সব জিনিশ যখন কলেজ থেকে নিয়ে আসি সেই সব জিনিশের মধ্য একটা ডায়রি পাই।ডায়রিটা যখম আমি খুলি দেখি প্রথম পেজে লিখা”আমার জীবনকাহীনি”

নেহা ওর জীবনের সব ভালোখারাপ ঘটনা এখানে লিখতো ডায়রিটা পরতে পরতে এক জায়গায় আমার চোখ আটকে যায়।সেখানে লেখা,

“আজকে একটা ছেলে আমাকে বড় একটা দুর্ঘটনার হাত থেকে বাঁচিয়েছে।ছেলেটা না থাকলে এত্তক্ষনে আমি আল্লাহর কাছে পৌছে যেতাম।ছেলেটা দেখতে খুব সুন্দর। আমি ছেলেটাকে ধন্যনাদ জানালে সে একটা সুন্দর হাসি দিয়ে চলে যায়।আমি সেদিন সেই হাসির প্রেমে পরে যাই।কিছুদিন পর অই ছেলেটাকে আমাদের কলেজের ক্যান্টিনে দেখি জানতে পারি সে এই কলেজে আমার ভাইয়ের ক্লাসে পরে।আমি সব সময় ছেলেটাকে নটিস করতাম।আমি বুজতে পারছিলাম আমি ছেলেটাকে ভালোবেসে ফেলেছি।একদিন ছেলেটা নিজে আমার সাথে কথা বলতে আসলো আমি সেদিন যেনো সপ্ন দেখচি মনে হলো।এরপর প্রায় ছেলেটার সাথে আমার কথা হতো।ঠিক করলাম আমার মনের কথা ওকে জানাবো।কিন্তু এর মাঝে আকাশ নিজেই আমাকে প্রপজ করে সেদিন আমি খুব খুশি ছিলাম কিন্তু আমাদের রিলেশনের কথা কেউ জানতোনা কারন ভাইয়া জানলে যদি রাগ করে এই জন্য।কিছুদিন ভালোই যাচ্ছিলো,কিন্তু একদিন আকাশ আমাকে জানালো সে আমাকে ভালোবাসেনা সে বাজি জেতার জন্য আমাত সাথে রিলেশন করেছে।সে স্নেহা নামের একটা মেয়েকে ভালোবাসা।সেদিন আকি আকাশের কাছে অনেক হাত জোর করি যেনো ও আমাকে না ছাড়ে কিন্তু না ও আমাকে ছেড়ে চলে গেলো।কিন্তু আমি আকাশকে ছাড়া একদম থাকতে পারছিলামনা আমার দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছিলো।”

এভার আমি বুজতে পারলাম আকাশ ওকে কেন ভরা মাঠে অপমান করেছে।সেদিন আমি ঠিক করে নিয়েছিলাম আকাশের থেকে এর প্রতিশোধ আমি নেবোই।আকাশ আমার বোনের সাথে এই নাটক করায় আমার বোনটা আজ নেই।

এরপর আমি আকাশের সাথে এই নিয়ে কোনোকথা বলিনি।আমি শুধু সঠিক সময়ের অপেক্ষায় ছিলাম।আমি জানতাম আকাশের সব থেকে দুর্বল জায়গা স্নেহা।আমি অই জায়গাটাতেই আঘাত করবো।আর আমি সুযোগ পেয়ে গেলাম।ভার্সিটিতে উঠার পরেই আকাশ ঠিক করলো বাসায় জানাবে ওর আর স্নেহার কথা।আর আকাশ কথা মতো জানিয়ে দিলো।বাসার সবাই ঠিক করলো ওদের এংগেজমেন্ট করাবে।আর আমিও ঠিক করে নিলাম এই এংগেজমেন্টের দিনই হবে আমার প্রতিশোধ নেবার সঠিক সময়।কার্জ মতো আমি রাহাতের সাথে ডিল করি।আমি জানতাম ও একটা প্লেবয়।হাজার মেয়ের সাথে রুমডেট এর ভিডিও, ছবি ওর কাছে আছে মোটা টাকার বদলে আমি সেরকম একটা ভিডিও ক্র ছবি ওর থেকে নেই তারপর ওকে শহরের বাহিরে পাঠিয়ে দেই।আমার এই কাজে আমাকে মিতুও অনেক হেল্প করেছে।আমি জানতাম মিতু আকাশকে ভালোবাসে তাই ওকে দিয়ে আমি সহজে কাজ করাতে পারবে।প্লান মতো আমি এংগেজমেন্টের দিন সকালে আকাশের ফোনে অন্য একটা নাম্বার দিয়ে কল করি আর ওকে ওদের বাসার পাসের পার্কে আসতে বলি।তারপর এক ছোট ভাইয়ের হাতে করে ছবি গুলো ওর কাছে পাঠাই।তারপর ভিডিও পাঠাই।আমি কিছুটা দূরে গাড়িতে বসে আকাশের দিকে নজর রাখছিলাল যে ও কখন পার্ক থেকে বের হয়।আকাশ পার্ক থেকে বের হতেই আমি মিতুকে কল দেই।মিতু সেই রাস্তায় ছিলো যেই রাস্তা দিয়ে আকাশ যাবে।আর প্লান মতই আকাশ যায় সেই রাস্তা দিয়ে আর মিতু ওকে আটকে দেয় আর স্মেহার নামে বিষ ঢেলে দেয় আকাশের কানে।বেস আকাশ রেগে বিয়ে করে নেয় মিতুকে।আমি খুব ভালো করে জানতাম আকাশ কোনোদিন স্নেহাকে ছাড়া ভালো থাকবেনা।রোজ কষ্টের আগুনে পুড়বে আর আমার কলিজা সেটা দেখে ঠান্ডা হবে।মিতুকে বিয়ে করার পর আকাশ মিতুকে একদম সয্য করতে পারতোনা।আকাশ সব সময় ক্লাবে এসে আমাকে ওর কষ্টের কথা বলতো আর আমি তা শুনে পৈষাচিক আনন্দ পেতাম।এর মাঝে মিতু একদিন আমাকে ফোন করে বলে ও কোনোভাবেই আকাশকে নিজের করে পাচ্ছেনা আকাশ নাকি ওকে ডিভোর্স দিয়ে দেবে বলেছে।তাই আমি বেস চিন্তায় পরে গেলাম যে এখন কি করা যায়।তাই একদিন রাতে আকাশ যখন ক্লাবে আসলো ড্রিংক করতে আমি ওর ড্রিংকে আলাদা করে নেশার ঔষধ দিয়ে দেই।যাতে নেশা অবস্থায় ও মিতুর সাথে ফিজিক্যাল হয় তাহলে ও চাইলেও মিতুকে ছাড়তে পারবেনা।

সব ঠিক ছিলো জানিনা সব প্লান কিভাবে আপনি জেনে গেলেন।তবে আমার আফসোস নেই এখন আমার যদি ষাশটীও হয় তাও আমি খুশি।আমি আমার প্রতিশোধ নিতে পেরেছি।”

নুয়াজের কথা শুনে সবাই অবাকের চরম পর্যায় আকাশ তো যেনো কিছু বলার ভাষাই হারিয়ে ফেলেছে।যাকে সে এত কাছের বন্ধু ভাবতো সেই তার সাথে এমন করলো।

আরাফ:আমার তোমাকে সন্দেহ সেদিন থেকেই হয়েছিলো যেদিন আমি তোমার ফোনটা দেখেছিলাম।মনে আছে সেদিন যে তুমি আকাশকে রাতে মাতাল অবস্থায় বাসায় দিতে আসছিলে আর আমি তোমাকে বলেছিলাম ওকে আমার রুমে রেখে আসতে।সেই সময় তুমি ভুল করে তোমার ফোনটা ফেলে যাও।আমি রুমে এসে দেখি তোমার ফোন বাজতেছে।আমি ধরার আগেই ফোন কেটে যায়।তখন আমি তোমার হোয়াটাসেপে দেখি সেই ছবি আর ভিডিও যেগুলা আকাশ স্নেহার বলে সবাইকে দেখিয়ছে।অগুলা রাহাত তোমাকে দিয়েছে।তখন আমার মনে হচ্চিলো কোনো একটা গন্ডোগোল আছে তাই তোমার ফোন থেকে আমি অই ছবি ভিডিও গুলা নিয়ে নেই।আর সেগুলা আর স্মেহার গুলা আবিরকে দেই তারপর আসতে আসতে জানতে পারি যে এসবের পিছনে তুমি ছিলে।কিন্তু কারণটা কি সেটা জানতাম না।

আকাশ এভার ধীর পায়ে নুয়াজের কাছে গেলো।নুয়াজের সামনে দাঁড়িয়ে ওকে বলতে লাগ্লো,

আকাশ:বন্ধু মানে বন্ধুর বিপদে আপদে সুখে দুঃখে পাশে থাকে।কিন্তু তুই, তুই আমার বন্ধু হয়ে আমার সাথে এমন করলি।আরে তুই যদি আমাকে একভার জিজ্ঞেশ করতি আমি তোকে সব সত্যি বলতাম।

নুয়াজ:কি বলতি তুই হ্যা কি বলতি?

আকাশ:আমি জানতাম না নেহা তোর বোন ছিলো।আর জানবইবা কি করে তুই কি কোনোদিন ওর কথা আমাকে বলেছিস।ইভেন কলেজে থাকা অবস্থাতেও তুই বলিসনি নেহা তোর বোন।

নুয়াজ:নেহা চাইতনা কেউ জানুক।তাই বলিনি।

আকাশ:আমি যেদিন নেহাকে এক্সিডেন্ট এর হাত থেকে বাচাঁই সেদিনের পর নেহাকে আমি আমাদের কলেজে দেখি জানতে পারলাম ও আমাদের কলেজে পড়ে।তাই মাঝে মাঝে হাই হ্যালো হতো কিন্তু সবুজ আর দীপু আমাকে নেহাকে নিয়েই বাজি দিলো।যে আমাকে নেহাএ সাথে কিছুদিম রিলেশনে যেতে হবে।আমি প্রথমে রাজি হতে চাইনি কিন্তু পরে ওরা আমায় অনেক জোর করে আর খেপায় তারপর আমি ঠিক করলাম আমি পুরন করবো বাজি।তাই নেহাকে আমি জাস্ট ফ্রেন্ড হবার প্রোপজাল দেই কিন্তু ও আমাকে অন্য কিছু ভেবে নেয় যে আমি হয়ত ওকে ভালোবাসি এভাবে কিছুদিন যাওয়ার পর আমি ওকে সত্যটা বলি কিন্তু ও বলে ও আমাকে ভালোবাসে কিন্তু আমি স্নেহাকে ভালোবাসতাম।আমি ওকে সব জানিয়ে চলে আসি।পরেরদিন ভার্সিটিতে নেহা আমাকে সবার সামনে জোর করতে লাগে কিন্তু আমি ওকে খুব সহজ ভাবে বুজাতে থাকি। কিন্তু মাঝ কথায় ও স্নেহাকে নিয়ে বাজে কথা বলে। তাই আমি আর সয্য করতে না পেরে ওকে থাপ্পর মেরে কিছু উল্টা পালটা কথা শুনিয়ে দেই।
সেদিন আমার পরে অনেক খারাপ লাগছিলো ভেবেছিলাম ওকে সরি বলবো কিন্তু ওকে আর কলেজে খুজেই পাইনি এর দুইদিন পর শুনি ও মারা গেছে।বিশ্বাস কর দোস্ত আমি চাইনাই ওকে কস্ট দিতে সেদিনের পর সারাজীবিনের কত বাজি খেলা অফ করি।

তুই যদি একভার আমাকে বলতি তাহলে আমি সব বলতাম। কিন্তু তুই তানা করে সব শেষ করে দিলি। তোকে আমি কিছু করতে পারবোনা কারন তোকে আমি নিজের ভাই মনে করি।কিন্তু মিতুকে আমি ছাড়বোনা আমি জানিনা যে আজ আমি ওর সাথে ঠিক কি করবো।

এই বলেই আকাশ বেরিয়ে পরে মিতুর কাছে যাওয়ার জন্য।

#চলবে

?কে জানে আকাশ বেচারা মিতুর সাথে কি করে?।ভুল ত্রুটি মাফ করবেন?।

#আড়ালে_ভালোবাসি
#পর্ব_১০
#নন্দিনি_চৌধুরী

বেলকনিতে দাঁড়িয়ে দূর আকাশ দেখে যাচ্ছে মিতু।আকাশের অবস্থা খুব একটা ভালোনা মনে হয় কিছুক্ষনের মাঝেই বৃষ্টি নামবে।আজ মনে হয় আকাশের ও মন খারাপ মিতুর মতো।আজ মিতু তার জীবনের এমন একটা সত্য জেনেছে যা তাকে আকাশের থেকে আড়ও দূর করে দিলো।আল্লাহ হয়ত তাকে তার পাপের শাস্তি এভাবেই দিলো।সে তো কম অন্যায় করেনি স্নেহার সাথে।মানছে যা করেছে তা আকাশকে পাওয়ার জন্য তবুও করেছেতো সএ অন্যায়।মিতুর চোখ থেকে পানি জেনো আজ থামছেই না আর হয়ত কখোনো থামবেও না।আচ্ছা তাকে কি সত্যি চলে যেতে হবে আকাশের জীবন থেকে।পেয়েও কি হারিয়ে ফেল্লো সে আকাশকে।এত বড় শাস্তি আল্লাহ তাকে দিলো।তার স্নেহার কাছে মাফ চাওয়া উচিত।সে যে ভুল করেছে তাএ শাস্তি সে পেয়ে গেছে।

বেশ কয়েকঘন্টা আগে,,,

সোফায় বসে আকাশের ছবি গুলো দেখছিলো মিতু।আজকাল মিতু খুব বেশি চোখে হারায় আকাশকে।মিতু চেষ্টার কোনো কমতি রাখেনি কিন্তু সে আকাশের মনে তার জায়গা তৈরি করতে পারেনি।তাতে কি আছে তো সে তার পাশে তাক্র দুচোখ ভোরে দেখতে তো পারে এইভা কম কিসে।এসব ভাবনার মাঝেই মিতুর ফোনে তার ডাক্তারের কল আসলো।মিতু ফোনটা রিসিভ করলো।

ডাক্তার:মিস মিতু।
মিতু:জি ডাক্তার রিপোর্ট কি এসেগেছে?
ডাক্তার:জি হ্যা রিপোর্ট আমার হাতে।
মিতু:ডাক্তার রিপোর্টে সব ঠিক আছে তো ডাক্তার কোনো সম্যসা নেই তো?
ডাক্তার:মিস মিতু আপনি নিজেকে স্ট্রোং করে নিন। কারন এখন আমি আপনাকে আপনার জীবনের সব থেকে কঠিম সত্যিটা জানাতে চলেছি।
মিতু:জি বলুন আমি শুনার জন্য তৈরি।
ডাক্তার:মিস মিতু আসলে আপনার অই পেট ব্যাথাটা কোনো সাধারন পেট ব্যাথা নয় আপনার জরায়ুতে একটা বড় সম্যাসা আছে। যার কারনে আপনি কোনোদিন মা হতে পারবেনা না। এছাড়া আপনার জরায়ুতে একটা ছোট টিউমার আছে।It is very sad to say this but sorry Miss Mitu you can never be a mother.

ডাক্তারের কথা শুনে মিতু একদম পাথর হয়েগেছিলো। হাত থেকে ফোনটা মাটিতে পরে গেছে সেদিকে তার খেয়াল নেই।একটা মেয়ের জন্য এর থেকে দুঃখের কথা কি হতে পারে যে সে কোনোদিন মা হতে পারবেনা।চাইলেই সে তার সন্তান এর থেকে মা ডাক শুনতে পারবেনা।আজ সমাজের চোখে সেও বাজা হয়ে গেলো বন্ধ্যা নাড়ির পরিচয় হবে তার সমাজে।আর আকাশ!আকাশ তো তাকে এমনিতেই সয্য করতে পারেনা এটা জানার পর সত্যি তাকে তার জীবন থেকে বের করে দিবে।

বর্তমানে,,,,
আগের কথা গুলো ভাবতেই চোখ আবার ঝাপসা হয়ে গেলো নিজের চোখের পানি মুছতেই নিজের চুল কারো হাত মুষ্টিবদ্ধ হবার টের পেলো মিতু।

আকাশ মিতুর চুলেরমুঠি ধরে ঘুরিয়েই পর পর ৪টা থাপ্পর মারলো।থাপ্পর গুলা খেয়ে মিতু ছিটকে গিয়ে বারি খায় বারান্দার রেলিং এর সাথে। তার মাথার পাশে কিছুটা কেটে গেছে।থাপ্পর খেয়ে মিথুর মাথা ঝংঝং করছে।আকাশ মিতুকে তুলে আবার তাত চুলের মুঠি ধরে বলতে লাগলো,

আকাশ:কেন করলি এমন? কেন করলি এর বড় প্রতারণা।তুই জানতিনা স্নেহা আমার জান স্নেহাকে আমি কত ভালোবাসি।তোর সাহস কিভাবে হয় ওর নামে মিথ্যা বলার বল।এই নষ্টা মেয়ে মানুষ তোর শরীলের এয় খায়েস ছিলো যে তুই নুয়াজকে দিয়ে আমাকে নেশা করিয়ে নিজের কাছেনিছিস।আর আমি এই ভেবে পাগল হয়ে যাচ্ছিলাম আমি তোর সাথে ছিহ্ তোর মতো দুই টাকার মেয়ের এত বড় সাহস আকাশ হাসানের সাথে গেম খেলিস। তোকে আমি আজকে মেরেই ফেলবো বলে আবার দুইটা থাপ্পর মারলো মিতুকে।

মিতু এভার মুখ থুবরে পরে গেলো।তবুও খুব কষ্টে উঠে বসে আকাশের দিকে অশ্রুসিক্ত চোখে তাকিয়ে বলে,

মিতু:আমি যা করেছি তোমাকে পাবার জন্য করেছি আকাশ।ভালোবাসি তোমাকে।তোমার ভালোবাসা পাবার লোভেই আমি স্নেহাকে তোমার কাছে ছোট করেছি।আমি চেয়েছিলাম তুমি স্নেহাকে ভুলে আমাকে ভালোবাসো।কিন্তু না এই ছয়মাসেও আমি পারিনি তোমার মনে জায়গা করে নিতে।শুধু অবহেলা আর মার খেয়েই গেছি।কিন্তু আকাশ দোষী কি শুধুই আমি তুমি কি দোষী নৌ?আকাশ তুমি কিন্তু আমাকে সেদিন বিয়ে করেছিলে আমি তোমাকে জোর করিনি।সেদিন তুমি স্নেহার প্রতি রেগে প্রতিশোধ নেবার জন্য আমাকে বিয়ে করলে।তুমিতো পারতে সেদিন আমাকে বিয়ে না করে স্নেহার কাছে এসে সত্য জানতে।কিন্তু না তুমি তা করোনি।কেমন ভালোবাসা তোমার স্নেহার প্রতি যেখানে স্নেহার প্রতি বিশ্বাসটাই নেই।জানো আকাশ আজ আমি বুজতে পারছি সব কিছু জোর করে পাওয়া গেলেও ভালোবাসা জোর করে হয়না।আকাশ তুমি স্নেহাকে পেয়েও হারিয়েছো শুধু বিশ্বাসের অভাবে।

আকাশ এভার মিতুকে উঠিয়ে সোজা দাড় করিয়ে বল্লো,

আকাশ:আমি স্নেহাকে হারাইনি।আমি আবার আমার স্নেহাকে নিজের করে নেবো।স্নেহা ঠিক আমায় মাফ করে দেবে আমি জানি।এটা আমার বিশ্বাস।কিন্তু তোকে আমি আর এক মূহূর্ত এখানে দেখতে চাইনা তোকে আমি আজকেই ডিভোর্স দিয়ে দেবো।

আকাশ মিতুকে ছেড়ে ড্রয়ার থেকে একটা ফাইল বের করে সেখানে সাইন করে মিতুর মুখে ছুড়ে মারলো আর বল্লো,

আকাশ:এই নে ডিভোর্স পেপার সাইন করে দিয়েছি আমি এখন সাইন কর।

মিতু:মরে গেলেও আমি এটাতে সাইন করবোনা।আল্লাহর কালাম পড়ে তোমাকে বিয়ে করেছি। তুমি মা মানলেও আমি তোমাকে নিজের স্বামী মানি।আমি ভালোবাসি তোমাকে।

আকাশ:ঠিক আছে তুই এভাবে মানবিনা।

আকাশ ডিভোর্সের ফাইলসহ মিতুকে টেনেহিচরে বাড়ির বাহিরে ছুড়ে ফেলে দিলো।বাহিরে এতক্ষনে বৃষ্টি নেমে গেছে।প্রচুর পরিমান ঝর হচ্চে।আকাশ মিতুকে বাহিরে ফেলে দিয়ে চিৎকার করে বলতে লাগ্লো,

১তালাক
২তালাক
৩তালাক

তোকে আজকে থেকে নিজের স্ত্রী বলে আমি মানিনা।কোনো সম্পর্ক আজ থেকে তোর সাথে আমার নেই।আমি যে ভুল করেছিলাম আজ তা শুধ্রে নিলাম আর এই মে কাবিনের ২লক্ষ্য টাকা। আর বেরিয়ে যা আমার বাড়ি থেকে তোর মুখ আমি দেখতে চাইনা।বলেই আকাশ বাড়ির ভিতরে চলে গেলো মিতুকে বাইরে ফেলে দিয়ে।মিতু অনেকবার দরজা ধাক্কালো আকাশের নাম নিয়ে চিৎকার করলো কিন্তু কোনো লাভ হলোনা।মিতু চিৎকার দিয়ে কাঁদছে আর বলছে,

“আল্লাহ আমার পাপের শাস্তি আজ আমি পেয়েগেলাম।সব পেয়ে আমি সব হারিয়ে ফেললাম।যেই কষ্ট আমি স্নেহাকে দিয়েছিলাম তার থেকে বেশি কষ্ট আজ আমার হচ্ছে।আমি তো বাচঁবোনা আকাশকে ছাড়া।আল্লাহ কেন হলো এমন আমার সাথে।”

মিতু আসতে করে উঠে দাঁড়ালো এখন এক মাত্র তার নিজের বাসায় গিয়েই সে আশ্রয় পাবে।এই আশা নিয়ে মিতু বের হলো রাস্তায়।

পিনপিন নিরভতা চলছে ড্রইং রুমে সবার মাঝে।স্নেহা এখনো একটা সোকে আছে।নুয়াজকে কিছুক্ষন আগে পুলিশ এরেস্ট করে নিয়ে গেছে।যাবার আগে নুয়াজ স্নেহার কাছে এসে বলেছিলো,

নুয়াজ:ক্ষমা চাওয়ার মতো মুখ বা কাজ কোনোটাই আমি করিনি।নিজ প্রতিশোধের নেশায় আমি তোর সম্মান নিয়ে খেলেছি।তুই যেদিন প্রথম আমাকে ভাইয়া বলে ডেকেছিলি সেদিন আমি নেহাকে অনুভব করেছিলাম তোর ভিতর।কিন্তু নিজের প্রতিশোধে আমি এতোটাই মগ্ন হয়ে গেছিলাম যা আমাকে এত বড় অমানুষ বানিয়ে দিয়েছে।এভার যেদিন পবিত্র হয়ে ফিরবো।সেদিন আবার আমায় ভাইয়া বলে ডাকবিতো বনু?নাকি সেদিন রাগ করে মুখ ঘুরিয়ে নিবি।

নুয়াজের এমন কথায় স্নেহা কেঁদে বল্লো,

স্নেহা:একভার ফিরে আসো তুমি ভাইয়া।আমি তোমাকে আর কোথাও যেতে দেবোনা।আমি জানি ভাইয়া তুমি যা করেছো তা তোমার বোনের প্রতি ভালোবাসায় করেছো।খুব তাড়াতাড়ি তুমি ফিরে আসবে ভাইয়া দেখো।

নুয়াজ আরাফের কাছে এসে এভার বল্লো,

নুয়াজ:আমার বাবা মায়ের আমি ছাড়া কেউ নেই।তাদের প্লিজ এসব জানাবেন না।

আরাফ:চিন্তা করোনা।তুমি না ফিরে আসা পর্যন্ত তাদের সব দায়িত্ব আমার।ইভেন তুমি ফিরে আসো তোমার উজ্জ্বল ফিউচারের দায়িত্যও আমার।

নুয়াজ মুচকি হেসে বলে:আমার বোনটাকে ভালো রাখবেন।খুব ভালোবাসে আপনাকে।

আরাফ:হ্যা অবশ্যই।

পুলিশ নুয়াজ আর রাহাত করে নিয়ে চলে গেলো।নুয়াজের কর্মের শাস্তি তো তাকে পেতেই হবে সে জানে।

জাফর:এত দিন পর আজ মনে হচ্ছে বড় একটা চিন্তা মাথা থেকে নামলো।

ইকবাল:ঠিক বলেছো ভাইজান।

ইমরান:তবে নুয়াজের জন্য খারাপ লাগছে। ছেলেটা নিজের জায়গাতে ঠিক আছে।বোনের মৃত্যুর প্রতিধোধ আজ ওকে এত দূর নিয়ে গেছে।

জাফর:হ্যা তা ঠিক।তবে আমার মনে হয় এভার নুয়াক ভালো হয়েই ফিরবে।আমি ওর চোখে অনুশুচনা দেখেছি।

মোতালেব:তাই যেনো হয়।

জাফর:এভার চলো বাড়ি ফিরে মিতুকেও তো একটু দেখা দরকার তাইনা আকাশ তখন দেখলাম রেগে বেরিয়েছে।অতিরিক্ত কোনো কিছু করেনা ফেলে আবার।

সবাই:হ্যা চলো

আকাশ নিজের রুমে বসে ড্রিং করে যাচ্ছে সে জীবনের সব থেকে বড় ভুলটা করে ফেলেছে।সে স্নেহাকে অবিশ্বাস করে।কি করে এতো বড় ভুলটা করে ফেল্লো সে।আচ্ছা স্নেহা কি তাকে ক্ষমা করবে।ইদানিং সে আরাফের সাথে স্মেহার অনেক ভাব।যদি স্নেহা তাকে ক্ষমা না করে।না এটা হতে পারেনা।সে মানাবে স্নেহাকে।তাকে মানাতেই হবে।

#চলবে

?স্মেহাকি মাফ করে দেবে আকাশকে।আর মিতুর কি হবে এখন।মিতু কি সত্যি হারিয়ে ফেলবে আকাশকে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here