আড়ালে_ভালোবাসি,পর্ব_১১,১২

0
1770

আড়ালে_ভালোবাসি,পর্ব_১১,১২
নন্দিনি_চৌধুরী
পর্ব_১১

সকালের দিকে স্নেহারা সবাই বাসায় আসে।গতকাল রাতে অনেক বৃষ্টি থাকায় তারা আসতে পারেননি।বাসায় এসে সবাই ফ্রেস হয়ে নিচে বসে আছে।সবার মধ্য এখনো কিছু চিন্তা রয়েছে সেটা আকাশ আর মিতুকে নিয়ে।কালকের পর আকাশকে তারা দেখেনি বা বাড়িতে এসে এখনো পায়নি।মিতুকেও তারা কোথাও দেখছেনা।সবার ভেতর একটা চিন্তা কাজ করছে আকাশ মিতুকে কি করেছে?

জাফর হাসান:আরাফ গিয়ে দেখতো আকাশ কি ওর রুমে নাকি? আর মিতুও কি রুমে নাকি।

আরাফ:আচ্ছা বড় কাকা দেখছি আমি।

আরাফ আকাশের রুমে এসে দেখে দরজা হাল্কা দেওয়া আকাশ দরজা ঠেলে ভিতরে এসে দেখে আকাশ নিচে শুয়ে আছে পাশেই দুইটা মদের বতোল রাখা।আরাফ বুজতে পারে আকাশ কাল সারারাত ড্রিংক করেছে।কিন্তু মিতু?মিতু কোথায়?

আরাফ এভার আকশকে জাগানোর চেষ্টা করতে থাকে।কয়েকবার ধাক্কা দেওয়ার পর আকাশ হুসে আসে।আরাফ আকাশকে ধাক্কা দিয়ে বলতে লাগে,

আরাফ:আকাশ ওঠ।সকাল হয়ে গেছে।তুই কাল সারারাত মদ খেয়েছিস।আর মিতু কই মিতুকে কি করছিস তুই?

আকাশ মাতাল গোলায় বলে:কিছু করিনিতো আমি জাস্ট আমার জীবন থেকে বের করে দিয়েছি। শালি একটা বেইমান ধোকাবাজ।ওর শাস্তি ওকে আমি দিছি।

আরাফ ভালোই বুজতে পেরেছে আকাশ মিতুকে বের করে দিয়েছে হয়ত।আরাফ এভার এক বাতলি পানি এনে আকাশের গায়ে ঢেলে দেয়। আকাশ ধরফরিয়ে উঠে।

আরাফ:১৫মিনিট এর মধ্য তোকে নিচে দেখতে চাই।

কথাটা বলেই আরাফ নিচে চলে আসলো।

জাফর:আকাশ কই?
আরাফ:ঘরেই আছে মাতাল হয়ে আছে।
ইকবাল:নেশা করেছে?
আরাফ:হ্যা
মোতালেভ:মিতু সে কই?
আরাফ:ওকে আকাশ বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে এখন হয়ত ওর বাপের বাড়িই গেছে।
ইমরান:একটা খোজ নেওয়া উচিত না আমাদের?একটা মেয়ে মানুষ একা রাতে এভাবে খোজ নেওয়া দরকার।হাজার হলে সে এ বাড়ির বউ সে।
জাফর:ইমরান ঠিক বলেছে আরাফ তুই একটা বরং খবর নে।
আরাফ:আব্বু,কাকাই আমি খবর নেওয়ার জন্য আমার এক লোক কে খবর দিয়েছি সে একটু পরেই জানাবে মিতু কই আছে।

বেশকিছুকখন পর আকাশ নিচে আসলো আকাশকে দেখে মোতালেভ বললেন,

মোতালেভ:আর কত অধপতন হবে তোমার।তুমি কাল রাতে একটা মেয়েলে এভাবে ঝর বৃষ্টির মধ্য বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছো। মেয়েটার যদি কোনো ক্ষতি হয়ে যায় তখন কি হবে।

আকাশ ভাববীলাশহীন হয়ে বল্লো,

আকাশ:আমার যায় আসেনা ওর কি হলোনা হলো।আমি ওকে নিজের স্ত্রী বলে কোনোদিন মানিনি আর এসব জানার পর তো প্রশ্নই আসেনা।তাই ওর কি হলোনা হলো তা নিয়ে কিছু যায় আসেনা আমার।

জাফর:অধপতনের চরম সীমায় চলে গেছে তোর ছেলে মোতালেভ।

আকাশ কিছু না বলে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়।কিছুক্ষন পর আরাফের সেই লোক খোজ নিয়ে জানায় মিতু তার বাড়িতেই আছে।সবাই ঠিক করেছে কিছুদিন যাক তারপর মিতুকে নিয়ে আসবে।ততদিন বাবার বাড়িতেই থাক।কিছুদিন গেলে মিতুর প্রতি সবার রাগ একটু হলেও কমতে পারে।

রাতে?

আরাফের আজকে রাতে হাসপাতালে যেতে হয়েছে একটা ইমার্জেন্সি রোগী আছে তাই।
স্নেহা রাতের তারা ভোরা আকাশ দেখছে।খুব শান্তি লাগছে তার।অবষেশে সে নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে পেরেছে।তার গায়ে যে অন্যায়ের দাগ লেগেছিলো তা দূর করতে পেরেছে আর এই সব হয়েছে আরাফের জন্য সে না থাকলে কোনোদিন হতোনা।আরাফের প্রতি স্নেহার ভালোবাসাটা আর ও গভীর হয়ে গেলো।এসব ভাবছিলোই কি তখন পিছন থেকে একটা ডাক শুনে থমকে যায় স্মেহা।

“বাবুই”

খুব পরিচিত ডাক স্নেহার কাছে এটা।তার এক সময়ের কাছের মানুষ তাকে এই নামটায় ডাকতো।যাকে স্নেহা মন প্রান দিয়ে ভালোবাসতো।কিন্তু সময়ের শ্রোতে আজ সেই মানুষটাই স্নেহার নয়।স্নেহা পিছনে ফিরে দেখে আকাশ দাঁড়িয়ে আছে।চোখ মুখ তার মলিন হয়ে আছে।হয়ত অপরাধবোধ কুড়েকুড়ে খাচ্ছে তাকে।আকাশের চোখে স্নেহা আজ আবার তার প্রতি সেই ভালোবাসাটা দেখতে পাচ্ছে যা সে গত চার বছর দেখে এসেছে।

আকাশ স্নেহার কাছে এসে আবার বল্লো,

আকাশ:”বাবুই” কেমন আছো?

স্নেহা কিছুটা আনইজি লাগছে এভাবে আকাশ কে দেখে তাও নিজেকে সামলে নিয়ে বলে,

স্মেহা:এইতো আলহামদুলিল্লাহ তুমি কেমন আছো?
আকাশ:ভালো নেই আমি
স্নেহা:মিতুকে কেন বের করে দিলে যাও ফিরিয়ে আনো।
আকাশ:তুমি কি বলোতো স্নেহা। যেই মেয়েটা তোমাকে সবার সামনে এতো খারাপ বানালো। যে তোমার চরিত্র নিয়ে এতো বাজে কথা বল্লো। তাও তুমি ওকে বলছো ফিরিয়ে আনতে। আর তাছাড়া আমার মন অই মেয়েটার জন্য না তোমার জন্য খারাপ করছে।

স্নেহা এভার হাল্কা হেসে বল্লো,

স্নেহা:আমার চরিত্রতো তুমিও খারাপ বলেছিলে আকাশ।আমাকে সবার সামনে তুমিও চরিত্রহীনা বলে অপমান করছো এমনকি সেদিন ছাদেও তুমি বলছিলে আমি আরাফ ভাইয়াকে আমার রূপের জালে ফাসাচ্ছি।জানো আকাশ মিতুর প্রতি আমার রাগ নেই কোনো মেয়েটা যাই করেছে ভালোবাসার জন্য করেছে আমাকে অপমান করছে আমাকে ছোটো করছে তোমার জন্য।কিন্তু আকাশ জানো আমার রাগ ঠিক কোথায় আমার রাগ তোমার প্রতি আকাশ হ্যা তোমার প্রতি।সেদিন তুমি যদি মিতুকে না বিয়ে করে একবার আমার কাছে আসতে তবে আজ এত কিছু হতোনা।সেদিন তুমি তা করোনি সার্থপর এর মতো বিয়ে করেছিলে মিতুকে।যতই তুমি বলো তুমি ওকে স্ত্রী হিসেবে মানোনা কিন্তু ও তোমার স্ত্রী এখন।জানো আকাশ আমি রাতের পর রাত এই ছাদে এইখানটায় দাঁড়িয়ে তোমার জন্য পাগলের মতো কেঁদেছি।তোমাকে ফিরে পাওয়ার বৃথা কান্না করেছি।জানো আকাশ তুমি যখন আমার চরিত্র নিয়ে এতো বাজে কথা বলছিলে তখন মনে হচ্চিলো কেউ আমার কলিজাটা পুড়িয়ে দিচ্ছে।যেই মানুষটাকে আমি সব থেকে বেশি ভালোবাসাতাম সেই মানুষটা আমাকে বিশ্বাস করলোনা।আমাকে এক নিমিষে বাজারি মেয়ে বানিয়ে দিলো।তুমি নিজে আমাদের সম্পর্ক টাকে সবার সামনে মিথ্যা বানিয়ে দিয়েছিলে।আমার চার বছরের ভালোনাসা এক নিমিষে পায়ের তোলায় পিষে দিয়েছিলে।আকাশ আমি আজ ও ভুলতে পারিনা মিতু যখন আমার চোখের সামনে ওর ভেজা চুল গুলা ঘুরে ঘুরে দেখাতো।তখন মনে হতো আমি ভেতর থেকে শেষ হয়ে যাচ্ছি।আকাশ একটা সম্পর্ক টিকে থাকে বিশ্বাসের ওপর।ভালোবাসার মূল চাবিকাঠি হলো বিশ্বাস।সেটা তুমি আমার প্রতি রাখোনি।

আকাশের স্মেহা কথা গুলো শুনে নিশ্চুপ হয়ে গেছে। স্নেহা একটা অন্যায় কথা বলেনি।সে যা বলেছে সব সঠিক।আকাশ স্নেহার দুহাত ধরে বলে,

আকাশ:আই এম সরি স্নেহা।আমাকে ক্ষমা করে দেও।বিশ্বাস করো স্নেহা আমার সাথে মিতুর সাথে কোনো ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক হয়নি।শুধু সেদিন নেশার ঘোরে আমি ওর কাছে গিয়েছিলাম।কিন্তু তার পর থেকে সব সময় ওকে এড়িয়ে চলি।স্নেহা আমি যা করেছি তার জন্য আমি অনুতপ্ত।আমি ভুল করে ফেলেছি স্নেহা।মস্ত বড় ভুল করে ফেলেছি।আমাত হয়নি মিতুর কথায় আর অই ছবি গুলা দেখে তোমাকে অবিশ্বাস করা।সরি স্নেহা ক্ষমা করে দেও আমাকে।আমি তোমাকে অমেক আঘাত করেছি প্লিজ মাফ করে দেও।ফিরে এসো স্নেহা আমি তোমা প্রমিজ করছি আর কোনোদিন আমি তোমাকে কস্ট দেবোনা।খুব ভালোবাসি আমি তোমাকে স্নেহা।মিতুকে জেদের বসে বিয়ে করলেও আমি তোমাকেই তখনও ভালোবেসেছি আর এখনো ভালোবাসি।Please Sneha forgive me.please.

স্নেহা আকাশের থেকে হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বল্লো,

স্নেহা:তুমি আজ আমার কাছে ক্ষমা কেন চাইছো আকাশ।আজ যদি এইসব মিথ্যা সেটা তুমি না জানতে তোবে তুমি আমাকে ঘৃণাই করতে আর মিতুর সাথেই থাকতে।আজ যখন জানতে পারলে সব মিথ্যা ষড়যন্ত্র তখন তোমার আমার প্রতি ভালোবাসা জেগে উঠলো।তোমার অনুসুচনা হতে লাগলো।আচ্ছা আকাশ একটা কথা বলোতো তুমি আদৌ কোনোদিন আমাকে ভালোবেসেছো।আমি কি তোমার ভালোবাসা নাকি তোমার অভ্যাস কোনটা।এটা ভালোবাসা হতে পারেনা কোনোদিন না।হ্যা আকাশ আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসতাম তোমার সাথে জীবন কাটাতে চেয়েছিলাম।কিন্তু আজ আমি বলছি আমি তোমাকে আর ভালোবাসিনা তোমাকে আমি ক্ষমা করে দিলেও আমি তোমার কাছে ফিরবোনা কারন এক তুমি বিবাহিত দুই আমি এখন আরাফকে ভালোবাসি আমার মনে এখন শুধুই আরাফের জন্য ভালোবাসা আছে সেখানে তোমার কোনো ছায়া নেই।ভালো থাকো আকাশ মিতুকে নিয়ে।যেই ভুল তুমি একটা বাজি জিততে নেহা আপুর সাথে করেছো।তারপর আমার সাথে।প্লিজ মিতুকে এখন আর কস্ট দিওনা।

কথাগুলো বলে এক দৌড়ে চলেএলো স্মেহা।খুব কোষ্ট হচ্ছে তার।যাই হয়েছে কিন্তু এক সময় তো খুব ভালোবাসতো সে আকাশকে।তার কিশোরী জীবনের প্রথম প্রেম ছিলো আকাশ।সেই প্রথম ভালোবাসাকে চাইলেও ভুলা যায়না।প্রথম ভালোবাসা আমাদের হাসতে শেখায় কাঁদতে শেখায়।প্রথম ভালোবাসা ভালোবাসার অনুভুতি শিখায়।

স্নেহাও পারেনি আকাশকে একদম ভুলে যেতে।তার মনে কখনো কখনো আকাশে নাম উকিঝুকি মারে। কিন্তু সে আর ফিরবেনা কারন সে আরাফকে ভালোবাসে।হ্যা আরাফই এখন তার জীবনের সব।

সেদিনের পর থেকে আকাশ চেয়েও স্মেহার সাথে কথা বলতে পারেনি।স্নেহা নিজেই সেই সুযোগ দেয়নি।স্নেহা সব সময় আকাশের থেকে দূরে দূরে থাকতো।এদিকে আকাশের মন দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছে।স্নেহা আর আরাফকে এক সাথে দেখে।তাদের প্রেম দেখে আকাশের ভিতর জোলে যাচ্ছে।এইত সেদিনা সন্ধ্যায় আরাফ স্নেহাকে পড়াচ্চিলো আর দুস্টুমি করছিলো আড়াল থেকে সেটা আকাশ দেখছিলো আর জোলছিলো।আকাশ বুঝতে পেরেছে এভাবে হবে না তাকে অন্য পরিকল্পনা করতে হবে।

আজকে জাফর সাহেবরা মিতুর বাড়িতে কল
করেন।কল দিয়ে তারা মিতুর কথা জানতে চাইলে মিতুর ভাই স্পষ্ট বলে দেয়,

“এরকম মেয়ের আমাদের বাড়িতে কোনো জায়গা নেই।যে আমাদের মান সম্মান সব ধুলোয় মিশিয়ে দিয়েছে।আমাদের কাছে মিতু মৃত।”

মিতুর বাবা ভাই সব কিছু শুনে মিতুকে পর দিনই বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে।

জাফরসাহেবরা সবাই ভাবছে তাহলে মিতু গেলো কেই।আকাশের তো এই নিয়ে কোনো হেলদোল নেই।

এর মধ্য একজন এসে আকাশের নামে একটা লেটার দিয়ে যায়।জাফর সাহেব সেটা খুলে চমকে যায়।

#চলবে

কোথায় গেলো মিতু??আর আকাশ কি পরিকল্পনা করছে??বাই দ্যা রাস্তা গল্প একদম শেষ পথে।ভুল ত্রুটি মাফ করবেন?

#আড়ালে_ভালোবাসি
#পর্ব_১২
#নন্দিনি_চৌধুরী

মাথা নিচু করে ড্রইং রুমে সবার সামনে দাঁড়িয়ে আছে আকাশ।তার সামনে দাঁড়ানো তার বাবা রাগে তার চোখ মুখ লাল হয়ে আছে।তিনি চিৎকার করে বলছেন,

মোতালেভ:তোমাকে আমরা কি শিক্ষার অভাব রেখেছিলাম বলোতো। যেটার অভাবে তুমি এর খারাপ হয়েগেছো।আমাদের মানসম্মান সব এভাবে ধুলায় মিশাচ্ছো।যখন যা ইচ্ছা তখন সেটাই করবে ভেবেছো।যখন যাকে ইচ্ছা বিয়ে করে নিয়ে আসলাম আবার তাকে ছেড়ে দিলাম।তুমি একদিন আমাদের এসে বললে তুমি স্নেহাকে বিয়ে করতে চাও ওকে ভালোবাসো।তাই আমরা তোমাদের এংগেজমেন্ট করাতে চাইলাম।এংগেজমেন্টের দিন তুমি স্নেহার ব্যাপারে কি সব জানলে বেস ওর সাথে সম্পর্ক শেষ করে দিলে।ওকে যাতা বলে অপমান করলে।তখন আবার মিতুকে নিয়া আসলে বিয়ে করে তখন বললে তুমি মিতুকে ভালোবেসে বিয়ে করেছো।আর এখন আবার ওকে ডিভোর্স দিয়ে দিলে কারন তুমি এখন জানলে যে মিতু প্রতারণা করেছে ঠকিয়েছে। বেস শেষ মিতুর সাথে তোমার সংসার।পেয়েছোটা কি তুমি নিজের জীবনটাকে।আর বিয়েটাকে কি পেয়েছো ছেলেখেলা।যখন যা ইচ্ছা সেটা করে চলেছো।একটা সময় এমন আসবে দেখো তোমার পাশে তুমি কাউকে পাবেনা।

আকাশ এভার মাথা উঠিয়ে বল্লো,

আকাশ:আমি সরি বাবা কিন্তু আমি মিতুকে বিয়ে করেছিলাম জেদের বসে। কিন্তু আমি জানতাম না, যেটার উপর ভিত্তি করে আমি জেদ করলাম তা সাজানো নাটক।আমি মিতুকে ভালোবাসিনা আর না কোনোদিন বাসবো।আমি স্নেহাকেই ভালোবাসি বাবা।আমি ওকে ছাড়া থাকতে পারবোনা।আর মিতুকে আমি বিয়ের সময় বলেই দিয়েছিলাম যে বিয়ের ছয়মাস পর আমি ওকে ছেড়ে দেবো।আমি বিয়ের কথাটাও তোমাদের জানিয়ে করিনি তাই এটাও তোমাদের জানাইনি।

আকাশের কথা শুনে ইমরান আর জাফর বলে উঠে,

“তোমার কাছে স্নেহাকে আমরা কোনোদিন দেবোনা।”

ইমরান:যে আমার মেয়েকে বিশ্বাস না করে অন্যকে বিশ্বাস করে অপমান করে তার কাছে আমি আমার মেয়েকে বেঁচে থাকতে দেবোনা

জাফর:খুব কষ্ট পেয়েছে আমার মেয়েটা এই কয়েকমাসে।আবার সেই কষ্টে ওকে ফেলবোনা।

মোতালেভ:ভাইজান আমি নিজেই তো এই শয়তানের কাছে স্নেহা মাকে দেবোনা।

আকাশ সবার কথা শুনে যেই আশা টুকু রেখেছিলো তার ষেষ হয়েগেলো।

কিছুক্ষন আগে,

জাফর সাহেবের হাত ডিভোর্স পেপার এসেছে।যেখানে আকাশ আর মিতুর সাইন করা।হাতে একটা লেটার ও এসেছে।তখোনি জাফর সবাইকে নিচে ডেকেছে।জাফর মোতালেভের হাতে পেপরটা দেন মোতালেভ সেটা দেখে আকাশের কাছে গিয়ে ওকে থাপ্পর মারে(এরপর কি হলো দেখলেন)

আজকে আরাফ আর স্নেহা এসেছে। ঘুরতে অবশ্য স্নেহাই আরাফকে অনেক বায়না করে ঘুরতে বের করেছে।আরাফ আর স্নেহা এসেছে একটা নদীর পারে।হাল্কা বাতাস,সবুজ ঘাস।নদীর পানির ঢেউ সব মিলিয়ে জায়গাটা অনেক সুন্দর।স্নেহা আর আরাফ পাশাপাশি বসে আছে।

আরাফ:আজকে বাসায় সবাইকে একটা কথা জানাবো।
স্নেহা:কি কথা?
আরাফ:তোকে কমু কেন ছেমড়ি?।
স্নেহা:হুহ যাও বলা লাগবেনা।চলো এখন ফুস্কা খামু।
আরাফ:ইইইইই ধুলাবালি ছিহ।
স্নেহা:অই ছমড়া চুপ চলো।

স্নেহা আরাফকে টেনে নিয়ে গেলো ফুস্কার দোকানে।

আকাশ নিজের রুমে বসে আছে সামনে পরে আছে ডিভোর্স পেপার আর চিঠিটা।যেটা সে একবার ও খুলে দেখেনি।তার এসব নিয়ে মাথা ব্যাথা নেই।তার এখন একটাই মাথা ব্যাথা সেটা হলো স্নেহা।

বিকালের আরাফ স্নেহা বাসায় আসে।আরাফ রুমে যাওয়ার আগে ওর মাকে বলে গেছে সবাইকে আজকে খাবার টেবিলে থাকতে।

রাতে সবাই খাবার টেবিলে উপস্থিত শুধু আকাশ বাদে।খেতে খেতে আরাফ সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলে,

আরার:আমার একটা কথা বলার ছিলো তোমাদেরকে।
জাফর:হ্যা আরাফ বল কি বলবি।
আরাফ:বড় কাকা,মেঝ কাকা,বাবা,ছোট কাকা আসলে আমি স্নেহাকে বিয়ে করতে চাই।

আরাফের কথায় সবাই অবাক হয়।তারা ভাবেনি আরাফ নিজে এই কথাটা বলবে।তারা চেয়েছিলো আরাফকে এই কথাটা বলতে।তবে আরাফ নিজেজে বলবে ভাবেনি।

জাফর:আমরাও চেয়েছিলাম এই কথাটা তোমাকে বলতে।স্নেহাকে তোমার সাথে এর ভালো দেখে তোমাকে এই প্রস্তাব দিতে।তবে তুমি নিজে দেওয়াতে আমার খুব ভালো লাগ্লো।

ইমরান:আরাফ তুমি কি স্নেহাকে ভালোবেসে বিয়েটা করতে চাচ্ছো নাকি অন্য কোনো কারনে।খারাপ ভাবে নিওনা তুমি বুজতে পারছো কথাটা আমি কেন বললাম।

আরাফ:বুজতে পেরেছি কাকা।আমি স্নেহাকে ভালোবেসেই বিয়ে করতে চাই।আকাশের করা ভুলের কারনে ওকে করুনা করে নয়।আমি সত্যি স্নেহাকে অনেক ভালোবাসি।

জাফর:বেস তো কবে বিয়ে করতে চাচ্ছো?

আরাফ:আগামি সপ্তাহেই করতে চাই।আসলে এর পর আমাকে কানাডা যেতে হবে আমি স্নেহাকে সাথে করেই নিয়ে যেতে চাচ্ছি।

জাফর:ঠিক আছে তাহলে সব জোগারজন্ত শুরু করে দেও। আর আমি নাজমাদের জানাচ্ছি। ইকবাল তুই জবাকে ওর নানু বাড়ি থেকে নিয়ে আয় আর জুমায়েদের জানা ওরাতো ঢাকার বাহিরে এক মাস হলো কাজের জন্য।আর মোতালেভ তুই কি কিছু বলবি?

মোতালেভ:না ভাইজান আমার কিছু বলার নেই আমি খুব খুশি আরাফের ডিসিশোনে।আরাফের মা তুমি কিছু বলবে?

আরাফের আম্মু:না আমিও খুব খুশি অবশেষে স্নেহা আমার আরাফের বউ হবে।

জাফর:স্নেহা তুমি কি খুশি?

স্নেহা এত্তক্ষন মাথা নিচু করে চুপ করে ছিলো জাফর সাহেবের কথা শুনে মাথা তুলে বল্লো,

স্নেহা:জি আব্বু আমি এই বিয়েতে খুশি।

জাফর:তাহলে আগামি সপ্তাহেই তোমাদের বিয়ে।

উপর থেকে নিচে নামার সমায় সব কথা শুনে থমকে যায় আকাশ।তবে সে চিরতোরে হারাতে চলেছে স্নেহাকে।না তার স্নেহার সাথে কথা বলতে হবে যেভাবেই হোক।

স্মেহা আর আরাফ বেশ কিছুক্ষন ফোনে কথা বলে যাচ্ছে।

স্নেহা:শয়তান তখন বললেই তো হতো যে বিয়ের কথা বলবা হু।
আরাফ:বলে দিলে তো মজা থাকতোনা।
স্মেহা:হুহ বান্দর।
আরাফ:জামাইকে বান্দর বলতেছে বান্দরের বান্দরনি কিন্তু তুমি হাহাহা।
স্মেহা:যা শয়তান।

এভাবে আরো ও কিছু কথা বলে কল রেখে দিলো স্নেহা।পানির পিপাসা পাচ্ছে তার রুমের জোগে দেখে পানি নাই তাই জোগ নিয়ে নিচে গেলো পানি আনতে।স্নেহা পানি নিয়ে নিজের রুমে যাবে কেউ তাকে টেনে অন্য একটা রুমে নিয়ে গেলো।

স্নেহা চিৎকার দিতে পারছেনা তার মুখে লোকটাত হাত দেখে স্নেহাকে মুচরামুচরি করতে দেখে আকাশ বলে,

আকাশ:হুস বাবুই আমি।

স্নেহা বুজতে পারে এটা আকাশ।আকাশ স্নেহার মুখ থেকে হাত সরালে স্নেহা সরে এসে বলে,

স্নেহা:কি অবস্থা আকাশ এভাবে এখানে নিয়ে আসার মানে কি?
আকাশ:আমিও সেটা জানতে চাচ্ছি তুমি ভাইয়াকে বিয়ে করতে রাজি হয়েছে কিন্তু কেন?
স্নেহা:কেন মানে আমি আরাফকে ভালোবাসি তাই রাজি হয়েছি।
আকাশ:স্নেহা!তুমি এটা কিভাবে করতে পারো। তুমি জানো আমি তোমাকে ভালোবাসি তাও এটা কিভাবে করতে পারছো।
স্নেহা:দেখো আকাশ আমি তোমাকে আগে ভালোবাসতাম। কিন্তু এখন আমি আরাফকে ভালোবাসি।আর তুমি আমাকে বলছো আমি এটা কি করে করছি। আকাশ আমি তো অন্ততপক্ষে তোমাকে ঠকিয়ে বিয়ে করছিনা। তুমি যেমন করেছো।দেখো আকাশ আমি আরাফের সাথে ভালো আছি আর থাকবো। প্লিজ আমাকে আর বিরক্ত করবেনা।
আকাশ:তার মানে তুমি সত্যি আর ফিরবেনা আমার কাছে?
স্মেহা:না কোনোদিন না।যদি আরাফ আমার জীবনে না আসতো। তবুও আমি তোমার কাছে ফিরতাম না।
আকাশ:আমি ভাবিনি স্নেহা তুমি এভাবে হারিয়ে যাবে আমার জীবন থেকে।আমার দোষেই আমি হারালাম তোমায়।আচ্ছা ভালো থেকো সুখে থেকো।

কথা গুলো বলে আকাশ স্নেহাকে ছেড়ে বেরিয়ে গেলো। আর স্নেহা আকাশের চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকলো।

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here