রঙ বেরঙে,পর্বঃ০১,০২
সাদিয়া_খান(সুবাসিনী)
পর্বঃ০১
আমার সদ্য বিবাহিত স্ত্রীকে সজোরে ধাক্কা মেরে ফ্লোরে ফেলে দিয়েছে আমার প্রাক্তন।বিয়ের লাল টকটকে বেনারসি পরণে থাকা আমার স্ত্রী ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে তার বাবার দিকে৷
মেয়েটা প্রতিবন্ধী। বুদ্ধি প্রতিবন্ধী বিয়ের কনেকে পা দিয়ে ঠেলে দিয়ে চলে যাওয়ার সময় আমার প্রাক্তন আনিকা চিৎকার করে বলল,
“টাকার লোভে তুমি আমার নয় বছরের ভালোবাসা এভাবে জলে ভাসিয়ে দিলে? যে পুরুষ টাকার জন্য এত দিনের সম্পর্ক ভেঙে ফেলতে পারে সে জানোয়ার ছাড়া কিছুই নয়। আমি কোনো দিন তোমাকে মাফ করবো না।তুমি পস্তাবে, আমার কাছেই ফিরবে। কয়েকটা ঘন্টার ব্যবধানেই তুমি আমার কাছে ফিরবে।”
আনিকা এক মুহূর্ত দাঁড়ায় না।ওড়নার কোণায় চোখ মুছতে মুছতে দ্রুত হেঁটে চলে যাচ্ছে সে।
আমার স্ত্রী প্রনয়ী আমার শার্টের এক কোণা ধরে উঠে দাঁড়াতে চেষ্টা করছে৷
তাকে হাত ধরে টেনে তোলার পূর্বেই আমার বন্ধু এসে প্রায় তাকে জড়িয়ে ধরে তুলে চেয়ারে বসালো।আদুরে গলায় তাকে জিজ্ঞেস করল,
“বুনু ব্যথা পাইছিস?”
প্রনয়ী মাথা দুপাশে দুলিয়ে না করলে আমার জিগরি দোস্ত আমায় বলল,
“ওদিকে আয়।কথা আছে।”
“কী কথা বল।”
“তুই কী রাগ করে আছিস?”
“না রাগ করবো কেন?আজ আমার বিয়ে। দেখ আমি কত খুশী। বাংলা সিনেমার ওমর সানির মতো বেকারত্ব ঘুঁচাতে, বাবার স্বপ্ন পূর্ণ করতে আমি নয় বছরের ভালোবাসা ত্যাগ করে বন্ধুর অসহায়, প্রতিবন্ধী বোনকে বিয়ে করছি। যাকে নিয়ে না আমি দাঁড়াতে পারবো কারো সামনে, না তাকে দিয়ে হবে আমার সংসার। এতদিন যে মেয়েটা আমাকে ভালোবেসে অপেক্ষা করে রইল?সেই মেয়েটা আজ বিয়ের আসর থেকে কেঁদে চলে গেল।আমি খুশী হবো না?”
“তবে তুই বিয়ের জন্য রাজী কেন হয়েছিলি?এই সম্পর্কের কোনো ভবিষ্যৎ তো তুই দেখছিস না!”
পিয়ালের কথা শেষ হওয়া অবধি অপেক্ষা করেনি নির্বেদ। দ্রুত পা ফেলে চলে এসেছে বাহিরে। পকেট থেকে সিগারেট বের করে জ্বালিয়ে নিলো সে। নাক মুখ দিয়ে অনবরত বেরিয়ে আসছে নিকোটিনের ধোঁয়া।
সে ধোঁয়ার দিকে তাকিয়ে নির্বেদ বলল,
“সব কিছুর পোড়া গন্ধ হয় কিন্তু হৃদয় পোড়া গন্ধ হয় না কেন?
(২)
খেতে বসে নিজ পরণের কাপর নষ্ট করে ফেলেছে প্রনয়ী।তার দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেললেন প্রণব সাহেব।তার স্ত্রী রামিশা ছিল তার খালাতো বোন। রক্তের মাঝে বিয়ে হলে অধিকাংশ সময়ে না হলেও মাঝেমধ্যে এই সমস্যা হয়। সন্তানগুলো প্রতিবন্ধী হয়ে জন্মায়।
তাদের প্রথম সন্তান ছিল ছেলে। রাজার ঘরে ঠিক রাজপুত্রের জন্ম।কিন্তু বয়স ছয় মাস হতে না হতেই সে ছেলের বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেওয়া শুরু করলো।ডক্টর বলেছিল কম খাবার খাওয়াতে কারণ তার ওজন অস্বাভাবিক হারে বাড়ছিল। যখন ক্ষুধা লাগতো বাচ্চাটা হাউমাউ করে কাঁদতো। পিয়াল যখন পেটে এলো তখন রামিশা ধীরে ধীরে অসুস্থ হয়ে যাচ্ছিলো।হঠাৎ একদিন ভোর বেলা তাদের প্রথম সন্তানের খিঁচুনি শুরু হয়। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথেই মারা যায় তাদের প্রথম সন্তান।
সন্তান হারিয়ে রামিশা দিন দিন আরো ভেঙ্গে পড়তে লাগে। বিভিন্ন সময় সে আত্মঘাতী হওয়ার চেষ্টাও করে। নিজেকে দাবী করতে লাগে তার সন্তানের খুনী হিসেবে। কারণ সে তার সঠিক জন্ম নেয়নি।
এদিকে প্রণব সাহেব বেশ চিন্তিত ছিলেন কারণ জেনেটিক এবং ব্লাড ইকুয়েশন এর একটা কারণে তাদের সন্তান প্রতিবন্ধী জন্ম নিয়েছিল।যার সম্ভাবনা এবারো প্রবল ছিল।কিন্তু সৃষ্টিকর্তার কৃপায় পিয়াল সুস্থ এবং আর পাঁচটা বাচ্চার মতোন জন্ম নেয়। এক সময় পিয়ালের সাহায্যে তার মা স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসে।
ধীরে ধীরে পিয়াল বড় হতে থাকে। পিয়ালের বয়স যখন দশ, রামিশা আবার সন্তান সম্ভবা হয়ে পড়ে।
কিন্তু এবার জন্ম হয় প্রণয়ীর। প্রণয়ী আর পাঁচটা মেয়ের মতো নয়।
দেখতে সে সম্পূর্ণ মায়ের রূপ পেলেও তার বুদ্ধি স্বাভাবিক নয়। তাকে গভীরভাবে খেয়াল করলে বুঝতে পারা যায় সে হাতের কড় গুনে সবসময় হিসেবে ব্যস্ত থাকে।ঘাড় শক্ত করে রেখে শুধু মুখ অনবরত কাঁপতে থাকে তার। মাঝেমধ্যে সব ভুলে যায়।তার শারিরীক কোনো সমস্যা নেই তবে ভালো মন্দের বিচার সব সময় করতে পারে না।মাঝেমধ্যে হঠাৎ প্রচন্ড ভয় পেয়ে যায়, নার্ভাস হলে সে কাঁপতে থাকে। তাছাড়া সব’চে খারাপ যে দিকটা হলো প্রণয়ী রাগ উঠলে কামড়ে দেয়।
কাজের লোকগুলো তার আশেপাশে যায় না কিন্তু একজন খালা আছেন যিনি রামিশা বেগমের মৃত্যুর পর থেকে তার দেখাশোনা করে চলেছে।
আজ সন্ধ্যের ঘটনার পর প্রণয়ী কিছুটা ভয় পেয়ে আছে। আনিকা নামের মেয়েটা তাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়েছিল তাই।
মেয়ের দিকে এগিয়ে গিয়ে পাশে বসলেন প্রনব সাহেব।পরম যত্নে খাবার খাইয়ে দিচ্ছেন মেয়েকে।
আনিকার জন্য যে তার খারাপ লাগছে না তা নয়।
কিন্তু বাবা হিসেবে সে স্বার্থপর। বড়ই স্বার্থপর।
আনিকা স্বাভাবিক মেয়ে, সে চাইলেই জীবনে ঘুরে দাঁড়াতে পারবে।
কিন্তু প্রণয়ী?আজ বাদে কাল যখন বাবা থাকবে না তাকে কে দেখে রাখবে?
তাই নির্বেদকে প্রণয়ীর সম্পূর্ণ দায়িত্ব দিয়ে দায়মুক্ত হয়েছেন প্রণব সাহেব।কিন্তু বার বার তার মনে হচ্ছে
আদৌও কী পৃথিবীর কোনো পিতা তার কলিজার দায়িত্ব কাউকে দিয়ে দায়মুক্ত হতে পারে?
(৩)
বিদেশি হরেকরকম ফুল দিয়ে সাজানো হয়েছে বাসরঘর। সেখানে বউ সেজে বসে থাকার কথা ছিল আনিকার কিন্তু ঘুমিয়ে আছে প্রণয়ী।মেয়েটার প্রতি ঘৃণা না সহমর্মিতা দেখাবে নির্বেদ?
সে নিজে আজ সকালে তার বন্ধুর বাবাকে বলেছিল
“প্রণয়ী ভালোবাসার স্পর্শ বুঝে আংকেল। যে কিছুই বুঝে না সে ভালোবাসার স্পর্শ বুঝে, ভালোবাসা বুঝে। ওর জন্য ভালোবাসার মানুষ খুঁজে আনুন।”
কে জানতো তাকেই বেছে নিবেন প্রনব সাহেব।
ফোনের শব্দে ধ্যান ফিরে নির্বেদের। স্ক্রীনে ভেসে উঠেছে আনিকার নাম।
কল রিসিভ করতেই অপর পাশ থেকে বলে উঠল,
“যে পুরুষ একজন নারীকে গভীর অন্ধকারে রেখে চলে যেতে পারে এর মানে দুটো হয়।
সে তাকে ভালোবাসে না এবং সে তাকে অবশ্যই ভালোবাসে না।
অভিনন্দন প্রাক্তন।তোমার আগামী জীবন এবং বাসর রাত সুখের হোক।আমি মেনে নিতে পারলাম না এটা আমার ব্যর্থতা। তুমি আমায় ভুলে গেলে এটা তোমার সফলতা। আজ যে টাকা, নামের জন্য আমায় ছাড়লে,একদিন তোমার সব হবে কিন্তু তুমি শূন্য থাকবে।না পাওয়া তোমায় ঘিরে রাখবে।
শুধু একটা অনুরোধ আমায় কাল একবার দেখতে এসো।একমুঠো মাটি আমার কবরে দিও।”
কল কেটে দিয়ে হোয়াটসঅ্যাপে কিছু ছবি পাঠায় আনিকা।যেখানে স্পষ্টত সে নিজেকে শেষ করবার জন্য পায়ের শিরা কেটে ফেলেছে।
চলবে,,,,,,
#রঙ_বেরঙে
#সাদিয়া_খান(সুবাসিনী)
#পর্বঃ০২
(৪)
বাকীরাতটা বুদ্ধি প্রতিবন্ধী মেয়েটার উপর পাশবিক নির্যাতনকরে নিজের পুরুষত্ব ফলাও করেছে নির্বেদ।
বিছানার একপাশে কালো কম্ফোর্টারে আবৃত প্রণয়ীর নগ্ন দেহ প্রায় অচেতন অবস্থায় পড়ে আছে।
সকালের আলো চোখেমুখে এসে লাগতেই চোখমুখে এসে পড়তেই উঠে বসলো নির্বেদ। সামনে কাউচের উপর পড়ে রয়েছে তার শার্ট। শার্ট টা দেখেই বুকে মোচড় দিয়ে উঠলো।আনিকা উপহার দিয়েছিল তাকে।
তাদের নবম প্রণয় দিবস উপলক্ষে।বিনিময়ে সে আনিকাকে কি দিয়েছিল?
হ্যাঁ মনে পড়েছে। এক জোড়া রুপার নুপুর।
মেয়েটার নুপুরের প্রতি খুব ভালোলাগা রয়েছে। নির্বেদ এর ইচ্ছে ছিল আনিকাকে তার ২৫ তম জন্মদিনে ২৫ জোড়া নুপুর উপহার দিবে। চমকে দিবে মেয়েটাকে। কিন্তু তার বেকারত্ব তাকে গ্রাস করে নিয়েছিল। টুকটাক ব্যবসার জন্য আনিকা তার জমানো সব টাকা গুছিয়ে নিয়েছিল। দুজনে মিলে ছোট্ট একটা ব্যবসা শুরু করবে৷
আনিকা নিজ হাতে বানানো পিঠে গুলো নিয়ে। তাদের ছোট্ট একটা সংসার হবে, সেই সংসারের জন্য দুজনে অনেক পরিশ্রম করবে।দিন রাত পরিশ্রম করে যখন একে অপরে ক্লান্ত হয়ে যাবে তখন নাইয়ে নিবে ভালোবাসার জলে।
কাল দুপুর অবধি তাদের স্বপ্নগুলো কত রঙের ছিল।আজ তাদের জীবনটা শুধুই বেরঙের।
ফ্রেশ হতে এসে ওয়াশরুমের আয়নার দিকে নজর পড়লো।বুক জুড়ে কামড়ের দাগ। মেয়েটা যেমন পেরেছে তাকে আঁচড়ে কামড়ে তার থেকে মুক্তি পেতে চেয়েছে। কিন্তু পারেনি,তার পৈশাচিক অনুভূতি থেকে।
গায়ে পানি লাগতেই জ্বলতে শুরু করেছে নির্বেদের পুরো শরীর।
কাল রাতে রাগ দমাতে পারেনি সে।
যখন সে জানতে পারলো আনিকা কোনো দিন হাটতে পারবে না।পারলেও অনেকটা ঝুঁকি থেকে যাবে।
তখন সব রাগ গিয়ে পড়েছিল ঘুমন্ত প্রণয়ীর উপর।
ভালোবাসার মানুষগুলো অমূল্য সম্পদ। তাদের কোনো দুঃসংবাদ মানব মস্তিষ্ককে ক্ষণিকের জন্য বিকল করে দেয়।
(৫)
ফুলিখালা সকালের চা নিয়ে এসে দরজায় কড়া নাড়ছে তার পিছনে উৎসুক দৃষ্টি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন প্রণব সাহেব।চেহারায় খুশি খুশি ভাব নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন তিনি।আজ থেকে তার দায়িত্ব ফুরিয়েছে। না হলে মেয়েটা এত বেলা অবধি ঘুমায় না।সকালবেলা উঠে বাবার ঘরের দিকটায় বসে থাকে সে।
রামিশা বেগম মারা যাওয়ার পর থেকে দিন শুরু হয় মেয়ের মুখ দেখেই।
নির্বেদ যখন দরজা খুলল,প্রনব সাহেব হাসি দিয়ে জিজ্ঞেস করল,
“হে জেন্টেলম্যান! গুড মর্নিং।”
“শুভ সকাল।”
“প্রণয়ী?উঠেনি?”
“এখনো না।”
“আমি একবার ডাকবো?”
ফুলি খালা ততক্ষণে ঘরের ভিতরে প্রবেশ করেছে। প্রণয়ীকে বেগতিক অবস্থায় দেখে ঘাবড়ে গেলেন তিনি।ছোট্ট থেকে নিজ হাতে পালন করা মেয়েকে যদি স্বামী নামক মানুষটা এমন নির্যাতন করে যখন মেয়েটা বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী তখন মরে যেতে ইচ্ছে করে। দুচোখের পানি আটকে রেখে ফুলি খালা বললেন,
“ভাইজান আসার দরকার নাই।জননীরে আমি ডাইকা তুইলা আনতেছি।আপনি নিচে যান জামাই বাবাজীরে নিয়া।টেবিলে নাস্তা দিছি।ঠান্ডা হইয়া যাইবো।”
প্রনব সাহেব বিনাবাক্যে কথা মেনে নিয়ে নির্বেদকে নিয়ে নিচে চলে গেলেন।
খাবার টেবিলে বসে নির্বেদ সজলকে ম্যাসেজ করলো,
“আনিকা কেমন আছে?”
“ভালো নেই।তুই ভালো থাকতে দিয়েছিস?”
“খেয়েছে কিছু?”
“স্যালাইন চলছে।রক্ত ক্ষরণ হয়েছে অনেক।”
“বাঁচবে তো?”
নির্বেদ খেয়াল করছিল তার দুহার অনবরত কাঁপছে। চোখের পাতা ভারী হয়ে আসছে। তবুও সে তাকিয়ে আছে ফোনের স্ক্রীনের দিকে।সেদিকে তাকিয়েই টুপ করে এক ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়লো ফোনের স্ক্রিনে।
“এ যাত্রায় বেঁচে যাবে। জানিস ওর গায়ে বেশ জ্বর।ওর মা খুব কাঁদছে রে।”
“আন্টির মাইগ্রেন এর সমস্যা আছে। তাকে মেডিসিন এনে দে। সাথে গ্লুকোজ পানি।উনার শরীর বেশি ভালো না।”
“এতই যখন ভাবিস তবে ছেড়ে দিলি কেন?”
“প্রতিটা ব্যর্থ প্রেমিকের একটা ব্যর্থ গল্প থাকে।”
(৬)
মা! মা! পানি!
গোলাপি কম্ফোর্টারের অনেকটায় লাল রক্তের দাগ।
পুরো শরীর খুবলে খেয়েছে নির্বেদ।তাকে উঠিয়ে কোনো ভাবে ওয়াশরুমে নিয়ে গেলেন ফুলি খালা।হাঁটতে পারছে না মেয়েটা। শরীরে পানি লাগতেই কাঁদতে লাগলো সে।
বাবাটা মারা গেলে এই বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী মেয়েটার কী হবে?
তার ভাই যে মেয়েকে পছন্দ করেছে সে মেয়ে মেনে নিবে না এই পাগলীটাকে। স্বামী অবশ্যই তাকে পুরো জীবন ভালো রাখবে না।
ফুলি সে নিজেই তো এই বাড়ির আশ্রিতা।তার বা সামর্থ্য কী?
প্রতিবন্ধী মানুষগুলো কেন এই সমাজের কাছে বোঝা?
বাবা মা ছাড়া কেন তাদের কেউ আপন হয় না?
সমাজ কেন তাদের নিয়ে সব সময় হাসিতামাশা করে?
একটু সহোযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিলেই তো এই মানুষগুলোও স্বাভাবিক একটা জীবন পেতে পারে।
ডক্টর মাহিয়া রুহী বিগত বছর তিনেক যাবত প্রণয়ীকে কনসাল্ট করে।
মেয়েটাকে খুব পছন্দ করে প্রণয়ী।ছুটির দিনগুলো সে প্রণয়ীর সাথে কাটাতে পছন্দ করে।এই দিনটায় সে প্রণয়ীকে নিয়ে তার মতোন মানুষগুলোর সাথে দেখা করতে নিয়ে যায়। প্রণয়ী ছোটো বাচ্চাদের অংক শেখায়।
হ্যাঁ প্রণয়ী একজন বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী হয়েও গণিত বিষয়ে সে যে কোনো হিসেব খুব দ্রুত আয়ত্ত করে নিতে পারে। গণিত ছাড়া অন্য কোনো বিষয় সে খুব একটা মনে রাখতে পারে না।সে ছবি আঁকতে পারে না,ভালোভাবে কোনো ভাষাও বুঝে না। যদি কোনো কিছু সে ভালোবেসে থাকে তবে গণিত।
পুরো দিন সে হাতের কড় গুলে হিসেব করে৷ যেকোনো ধরনের গাণিতিক সূত্রাবলী বা জটিলতা প্রণয়ী খুব স্বাভাবিকভাবে বুঝে নিতে পারে যেখানে সে নিজের কথাগুলো গুছিয়ে বলতে পারে না।
এজন্য মাহিয়া রুহী তাকে নিয়ে সব সময় বলে,
“প্রতিবন্ধী নয়, তারা স্পেশাল হয়।আমাদের সৃষ্টিকর্তা সাধারণ মানুষ হিসেবে সব দিয়েছে কিন্তু স্পেশাল চাইল্ডদের সৃষ্টিকর্তা কোনো এক বিষয় খুব মেধা দান করে। যেমন প্রণয়ী গণিতে সে সেরা।আংকেল যেভাবে পারেন ওর লেখাপড়া চালিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন।”
মাহিয়া রুহীকে কল দিয়ে ফুলীখালা সবটা বললে সে দ্রুত হাজির হয়।
এখনো প্রনব সাহেব কিছু জানেন না।
মাহিয়া নির্বেদকে মনে মনে পৃথিবীর সব’চে জঘন্য গালি দিয়ে বলল,
“শালা পার্ভাট একটা। ওকে তো আমি জেলের ভাত খাওয়াবো।”
চলবে,,,,,,