হিমির_বিয়ে(৩য় পর্ব)
লেখাঃ Md. Nazmul Huda
আমি এতদিন কাদের অসন্মান করলাম?
” আমি আমার মায়ের সামনেই ডিভোর্সিদের নিয়ে অনেক কিছু বলেছি। অথচ যার গর্ভে আমি জন্মেছি সেও ছিলেন ডিভোর্সি। এটা আমি কি করলাম?”
কিন্তু বাবা আমাদের কাছে এতদিন লুকিয়েছিলেন কেনো? এইবার বুঝতে পারলাম আমার বাবা সব সময় একা কাটিয়ে কেনো দিয়েছে। কেনো তার কাছে কোনো আত্মীয় স্বজন নেই? কেনো সে কাউকে পরিচয় দিচ্ছে না। আমার এখন কি করা উচিৎ? কোনো কিছুই মাথায় কাজ করছে না। কি করবো ভেবে পাচ্ছি না।
সারাটা রাত আমি ঘুমাতে পারিনি। বাবার কথা গুলো যেনো আমার ঘুম কেড়ে নিয়েছে। তার কথা গুলো যেনো আমাকে অমানুষে পরিনত করে দিয়েছে। এপিঠ ওপিঠ করতে করতে ফজরের আজান দিয়ে দিলো। তবুও চোখের পাতা দুটি বন্ধ হলো না।
সকালে বাবার ডাকে আমি বিছানা ছাড়লাম। একসাথে বসে নাস্তা করবে বলেই আমাকে ডেকেছে। ফ্রেশ হয়ে খাবার টেবিলে বসলাম। মা আসতে একটু দেড়ি করতেছে। কথা মাকে ডাকতে গেলো। মা ধির স্থির ভাবে কাজ করে যাচ্ছে। বাবা আর আমি মায়ের জন্য অপেক্ষা করলাম। কিছুক্ষন পরে মা এসে বাবার চেয়ারের পাশে এসে দাড়ালেন। বাবার প্লেটে খাবার বেড়ে আমার প্লেটে খাবার দিতে দিতে বললো…
– তুই যে আমাদের ছেলে ভাবতেই কষ্ট হচ্ছে। তুই আমাদের কাছে এতকিছু লুকিয়ে রাখলি কিভাবে?
– মা কি লুকিয়েছি?
– এই কথার মা তুমি চুপ করো তো। বসো এক সাথে খাই। আর তুমি কাপড় গুছিয়েছো? আজ সন্ধ্যায় আমরা রওনা দিবো রায়ান বাসায় আসার পরেই। (বাবা কথা গুলো মাথা নিচু করে কথাটা বললেন।)
– আজই আপনারা কেনো চলে যাবেন? এসেছেন যখন কিছুদিন বেড়িয়ে তারপরে যাবেন।
– উঁহু। বাড়িতে অনেক কাজ পড়ে আছে।
– কিছুই হবে না। বাবা আমি এতদিন যা করেছি খুব অন্যায় করেছি। আমি আসলে এতদিনের ব্যাপারটা জানতাম না যে ব্যাপারটা আপনারা আমাদের কাছ থেকে লুকিয়ে আছেন। আমি না জেনেই আমি অনেক কথা বলেছি ডিভোর্সিদের নিয়ে। ডিভোর্সিদের ব্যাপারে এতোকিছু বলার একটা মাত্রই কারন। বাবা আমি একটা মেয়েকে ভালোবাসি, তাকে আমি কোনো ভাবেই হারাতে চাইনি যে কারণেই আমি এত কিছু বলেছি। কারন আপনাদের বিরুদ্ধে যাওয়ার মত আমার সাহস নাই, তাই এই রাস্তা অবলম্বন করেছি। কিন্তু বিশ্বাস করেন আমি যদি জানতাম যে আমার মা ও এক সময়ে ডিভোর্সি ছিলেন, তাহলে আমি কোনদিন এই ব্যাপারে কিছুই বলতাম না। বাবা আমি আমার মাকে খুব ভালোবাসি। আমার এই পৃথিবীতে আপনি আমার মা আর আমার ছোট বোন কথা আছে। আপনারাই তো আমার পৃথিবী। আপনারা ছাড়া যে আমার আর কেউ নাই। কখনো চাইবো না আমার দ্বারা আপনারা কখনো কষ্ট পান।
– হ্যা বুঝতে পেরেছি। আমি আর তোকে কোন কিছুই বলবো না তোর যা ভালো লাগবে তুই সেটাই করবি তবে আমি একটা কথাই বলবো ওই মেয়েটিকে বিয়ে করলে তুই অনেক ভালো থাকবি তোকে অনেক ভালো রাখবে।
– বাবা আমি জানিনা কি কারনে আমার মা আমার উপর অভিমান করে বসে আছে। এই যে আপনার সামনে আর আমার মায়ের সামনেই বললাম। কিন্তু আমার মা আমার উপর অভিমান করে থাকবে কেন। বাবা আমি তো অন্যায় করে ফেলেছি আমি এখন কি করতে পারি? আমি পারবো তানহাকে ভুলে যেতে। আপনাদের কথার বাইরে যাব না, এবং আর কখনো কিছু বলবো না।এখন আপনারা যেটাই বলবে আমি সেটাই করব।
– হায়রে বোকা তোর মা তোর উপর অভিমান করে থাকবে কেন? তোর মা তো কারো সাথেই স্বাভাবিকভাবে কথা বলছে না। কারন তোমার চায় না যে ডিভোর্সি মেয়ের সাথে তোর বিয়ে হোক। কারণ আমি নিজে ভুক্তভোগী সে নিজেও। এই সমাজের কাছে অনেক কথা শুনেছে এমনকি আমিও অনেক কথা শুনেছি তোর মাকে বিয়ে করে। আমার ফ্যামিলি কিন্তু মেনে নিয়েছিল। এবং তোর মাকে বিয়ের কথা আমি নিজেই আমার ফ্যামিলিকে জানিয়েছিলাম। আমার পছন্দের বাইরে তারা কখনো যায়নি। আমার বাবা মা মারা যাওয়ার পরে আমি আমার আত্মীয়-স্বজন ছেড়ে দিয়েছি। কারন তোর মাকে সবাই অপমান করত। যেটা আমি নিজেই সহ্য করতে পারতাম না। তাই বাবা-মা যাওয়ার মারা যাওয়ার পরে আলাদা হয়ে যাই, অনেক দূরে চলে আসি। মাঝেমধ্যে আমি গ্রামে গিয়ে আমার বাবা-মার কবর টা দেখে আসি, কিন্তু কখনো তোদের বা তোড় মাকে সেই গ্রামে নিয়ে যাইনি। এ সমাজ ডিভোর্সিদের খারাপ চোখে দেখে। সবাই হয়তো ভাবে যে মেয়ের দোষ আছে বলেই স্বামীর সাথে সংসার করতে পারে না।সবাইকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছি যে তোর মায়ের আসলে কোন দোষ ছিলনা। কখনো অসন্মন করিনি বরং সেই থেকে ভালোবেসেছি। আসলে তোদের সামনে এ ব্যাপারে আমার কোন কিছু বলা ঠিক না। তবে সব মেয়েরা খারাপ হয়না, সংসার ভাঙ্গে না।প্রত্যেকটা মেয়েই চায় যত কিছুই হোক না কেন স্বামীর সাথে সংসার করতে। প্রায় মেয়েরাই চায় পিছনের যতই অন্ধকার জীবন থাকুক না কেন সে স্বামীর সাথে সংসারে ভাল থাকতে। আচ্ছা বাদ দে তোর হয়তো অফিসের সময় হয়ে এসেছে।
খাবার খেতে খেতে অফিসের সময় চলে আসলো। আমি রেডি হয়ে অফিসের দিকে রওনা দিলাম। বাসা থেকে বের হয়ে তানহাদের বাসার সামনে থেকেই অফিসে গেলাম। উদ্দেশ্য ছিলো তাদের বাসার মধ্যে ঢুকব তানহার বাবার সাথে কথা বলবো। কিন্তু বাসার সামনে গিয়ে দেখলাম গেইট লক করা। পারলাম না দেখা করতে।
আমি ভেবে নিয়েছি বাবার পছন্দের মেয়েকে বিয়ে করব। আমি আমার নিজের স্বার্থের জন্য আর কাউকে কষ্ট দিতে পারব না। এটাও জানি তানহা অনেক কষ্ট পাবে যদি শুনে আমি অন্য কাউকে বিয়ে করে নিয়েছি। আমার সাথে যা ঘটে যাচ্ছে তাতে আমি বাবার অমতে যেতে পারবো না। আমি বাসায় ফিরে আজকে বাবাকে বলে দেবো সেই মেয়েকে আমি বিয়ে করবো।
হঠাৎ করে যদি তানহা আমার সামনে আসে তখন যদি আমি বিবাহিত থাকি, আমি কোন আমি প্রশ্নের জবাব দিতে পারব না। সারাটা জীবন আমি তানহার কাছে অপরাধী থেকে যাব। আমি নিজেকে কখনো তানহার কাছে ক্ষমা করতে পারবোনা। কারণ আমি তানহাকে স্বপ্ন দেখিয়েছি। তানহা আমাকে নিয়ে প্রতিটা মুহূর্ত স্বপ্ন দেখেছে। আমি কিভাবে পারব সমস্ত স্বপ্নগুলো ধুলোর সাথে মিশিয়ে দিতে? আমি তো তখন চাইলে তানহাকে গ্রহন করে নিতে পারব না। আমি জানিনা আমার সাথে আসলে কি ঘটতে চলছে বা পরবর্তীতে আমার সাথে কি ঘটবে। তবে আমি একটুও ভালো দেখছিনা আমি দিন দিন পাগল হয়ে যাব।
অফিস শেষ করে আমি বাসায় ফিরলাম বাসায় ফিরে দেখি শুধু কথা বাসায় আছে। কথার কাছে জিজ্ঞেস করলাম বাবা-মা কোথায়? কথা আমাকে বললো বাহিরে গেছে কি একটা কাজের জন্য। অনেক সময় অপেক্ষা করলাম। বাবা-মা প্রায় তিন ঘন্টা পরে বাসায় ফিরলেন। তারা বাসায় ফেরার পরে বাবাকে জানিয়ে দিলাম তার পছন্দের মেয়েকেই বিয়ে করবো আমার কথা শুনে আমার ছোট বোন এবং আমার মা দুজনেরই চোখ বড় হয়ে গেলো।
আমাকে টেনে নিয়ে কথা বলল…..
– ভাইয়া তোর মাথা ঠিক আছে চেনা নেই জানা নেই বাবার কথামতো রাজি হয়ে গেলি? মেয়ের সম্পর্কে কিছু জানি সোনা নাক। কিভাবে বাবাকে বললি তার কথায় তুই রাজী আছিস সেই মেয়েকে বিয়ে করবি? ভাই সত্যি বলতে মা তো চায় না তুই সেই মেয়েকে বিয়ে করিস। তোর সাথে হয়তবা কথা বলে না। আমাকে বলেছে সে চায় না তুই একটা ডিভোর্সি মেয়েকে বিয়ে করিস। আমার মা আমার বাবা দুজনে কথা শুনেছে। প্রত্যেকটা ডিভোর্সি মেয়েরাই কথা শুনে বিয়ের পরে। তুই একটু ভেবে দেখ।
– আমি ভেবে দেখেছি বিয়ে করলে বাবার পছন্দের ওই মেয়েকেই বিয়ে করবো। আমি ভুলে যাব তানহাকে। আমি কি করলাম? মায়ের সামনেই ডিভোর্সি মেয়েদের নিয়ে কথা বললাম। সেখানে আমি পারবো না আর কোন কিছু বলতে। আমি তানহাকে ভুলে গিয়ে বাবার পছন্দের মেয়েকে নিয়ে সংসার করতে পারব।
– চুপ থাক তুই। বাবার জন্য তুই মেনে নিবি তাতো আমি বা মা মেনে নিতে পারবোনা।
– যা কপালে আছে তা তো হবেই এখন একটু একা থাকতে দে।
আমি কথার কাছ থেকে উঠে চলে আসলাম। বারবার ফোন দিলাম তানহার নাম্বারে। কিন্তু আমি ব্যর্থ।
সপ্তাহ খানের পরে সবাইকে নিয়ে গ্রামের বাড়িতে চলে গেলাম। জবটাও ছেড়ে দিয়ে এসেছি। ভার্চুয়ালের সকল একাউন্ট ডিলিট করে ফোনটা ধরে নদীতে ফেলে দিলাম।
আগামীকাল মেয়ে পক্ষের বাসায় যাবো। এবং আগামীকালই এনগেজমেন্ট।
মা আমাকে ডেকে বললেন…
– তুই এভাবে স্বার্থপরের মত তোর ভালোবাসার মানুষকে কষ্ট দিতে পারিস না। তুই বেঈমান হয়ে যাস না। দেখ ভালোবাসার মানুষকে হারানোর কষ্ট কখনো মুছে ফেলা যায়না। তুই তোর বাবার মতে বিয়ে করলে আমাকে হারাবি……
[চলবে………….]