শেষ_থেকে_শুরু_২,পর্ব_১২

0
1690

শেষ_থেকে_শুরু_২,পর্ব_১২
নন্দিনী_চৌধুরী

২২.
হাসপাতালের ইমার্জেন্সি ওয়ার্ডে নেওয়া হয়েছে মুগ্ধকে। ইমার্জেন্সি ওয়ার্ডের সামনে দাঁড়িয়ে আছে মেহের সাদাফ। মেহেরের শার্টের অর্ধেক ভিজে গেছে মুগ্ধের রক্তে। মেহেরের চোখের পানি থামছেইনা। সাদাফ চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে। সব কেমন জানি এলোমেলো লাগছে তার। রাত এখন ১:৩০ বাজে। সাদাফ আর মেহের মিলে মুগ্ধকে খুঁজতে খুঁজতে অবশেষে মেহেরদের বাসায় আসার পিছনের রাস্তায় মুগ্ধকে রক্তাক্ত অজ্ঞান অবস্থায় পায় মেহের। মেহেরেরতো কলিজার পানি শুকিয়েগেছিলো বোনকে এভাবে দেখে। মেহের জেনো রাস্তায় পরে যাবে এমন অবস্থা। সাথে সাদাফ থাকায় সাদাফ মেহেরকে সামলে মেহেরকে বলে মুগ্ধকে কোলে নিয়ে হাসপাতালে চলতে। মেহের বোনকে কোলে নিয়ে ছুঁটে আসে হাসপাতালে। হাসপাতালে আসতেই ডাক্তার মুগ্ধকে দেখে ইমার্জেন্সি ওয়ার্ডে নেয়।

বর্তমানে,,
মেহের চেয়ারে বসে আছে বিধ্বস্ত লাগছে তাকে। মেহের বার বার নিজেকে দোষ দিচ্ছে কেন সে বোনের সাথে গার্ড রাখলোনা। আজ গার্ড থাকলে তার বোনের এতো বড় বিপদ হতোনা। কিছু সময়ের মাঝে ডাক্তার বেরিয়ে আসে বাহিরে। ডাক্তারকে দেখে উঠে দাঁড়ায় মেহের। এগিয়ে যায় ডাক্তারের দিকে মেহের সাদাফ। মেহের উদ্বিগ্ন কন্ঠে ডাক্তারকে জিজ্ঞেশ করে,
মেহের:ডাক্তার আমার বোন?
ডাক্তার: দেখুন ওনার মাথায় ভাড়ি কোনো জিনিশ রোড দিয়ে আঘাত করা হয়েছে। প্রচন্ড ব্লিডিং হচ্ছে যা অফ করা সম্ভব হচ্ছিলোনা। তাও আমরা অনেক চেষ্টা করেছি। ২৫%চান্স আছে ওনার বেঁচে ফেরার চান্স। আল্লাহ আল্লাহ করুন আল্লাহ চাইলে ওনাকে ফিরিয়ে আনতে পারে।
মেহের একদম পাথর হয়ে যায় ডাক্তারের কথা শুনে। মেহের গিয়ে চেয়ারে বসে। চোখ মুখ রাগে লাল হয়ে এসেছে ওর। মেহের ওর একজন গার্ডকে ডাক দেয়।
মেহের:২৪ঘন্টার মাঝে আমি তাকে আমার সামনে চাই যে আমার বোনের এই অবস্থা করেছে।
গার্ড:আচ্ছা স্যার।

মেহের উঠে আইসিউতে যায় মুগ্ধের কাছে। সাদাফ বাসায় ফোন দিয়ে কল করে জানায় মুগ্ধের কথা। সাদাফের মা সব শুনে কষ্ট পেলো। সাদাফ জানালো আগামীকাল বাসায় আসবে সে আজকের রাতটা সে মেহেরের কাছে থাকবে। সাদাফ ফোন রেখে বসে থাকলো। কোথাও একটা তার ও খারাপ লাগছে কষ্ট হচ্ছে। তবুও নিজেকে সামলে রাখছে সে।

~অন্যদিকে~
আরিশ সায়মা ঢাকা ফিরে এসেছে। আরিশ এই কয়েকদিনে মুগ্ধের কথা একদম ভুলে গেছে। অবশ্য সায়মা তাকে মনে করার মতো সুযোগ ও দেয়নি। ইদানিং সায়মার মাঝে অনেক চ্যাঞ্জ খেয়াল করেছে আরিশ। সায়মার শরীরে তার ছোঁয়া ছাড়াও অন্য কারো ছোঁয়ার চিহ্ন সে দেখে কিন্তু সায়মা তা অশ্বিকার করে। তাই আর আরিশ কথা বাড়ায় না। ইদানিং সায়মা রাতে বাহিরে যাওয়াও শুরু করেছো প্রথম এগুলা আরিশ পাত্তা না দিলেও এখন এগুলা ভালো লাগছেনা তার। ঘরের বউ রাত বিরাত এমন বাহিরে থাকাটা একদম ভালো দেখায় না।আরিশ সায়মাকে কিছু বললেও সে কানে নেয়না। তার কথা এটাই “বিয়ে করে সা কারো দাসি হয়ে যায়নি,তার যা ইচ্ছা সে তাই করবে।”
আরিশ রাতে শুয়ে ছিলো এর মাঝে সায়মা ক্লাব থেকে ফিরেছে। আজকে নেশা অন্যদিনের থেকে কম করেই এসেছে। সায়মা বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে এসে দেখে আরিশ চুপচাপ শুয়ে আছে। সায়মা আরিশের পাশে বসে ওর মাথায় হাত দিয়ে বলে,
সায়মা:কি হয়েছে তোমার?
আরিশ:কিছুনা।
সায়মা:রেগে আছো নাকি। তুমি এমন কেনো বলোতো।
আরিশ:আমার একটা বেবি চাই সায়মা!
আরিশের এমন কথায় অবাক হয়ে যায় সায়মা। অবাক আর রাগী কণ্ঠে আরিশকে বলে,
সায়মা:কি! পাগল হয়ে গেছো তুমি! বিয়ে হয়েছে মাত্র ৬মাস এর মাঝেই বেবি চাইছো তুমি। এখন বেবি নিলে আমার ফিগার নষ্ট হয়ে যাবে। আমি কোথাও যেতে পারবোনা। মজা করতে পারবোনা। সো এই বেবি টেবি এখন নিতে পারবোনা আমি। ২বছরের আগে এসব আবদার নিয়ে আমার কাছে আসবেনা।
সায়মার কথায় চমকে যায় আরিশ। একটা মেয়ের কাছে মা হবার থেকে বেশি জরুলি বা আনন্দের আর কি থাকতে পারে। আরিশ অবাক চোখে তাকিয়ে আছে সায়মার দিকে।
আরিশ:একটা মেয়ের কাছে মা হতে পারার থেকেও বেশি দরকারি তার ফিগার নাইট ক্লাব কিভাবে হতে পারে। সেটা তোমাকে না দেখে জানতাম না। আসলে আমার মনে হয় বাচ্চা না নেওয়ার কারণ এসব না কারণ অন্য কিছু। অন্য কাউকে জুটিয়েছো নাকি আবার। তার জন্যই তো রাত বিরাত বাসার বাহিরে থাকো।
আরিশের কথা শুনে সায়মা বসা থেকে দাঁড়িয়ে চিৎকার করে বলে,
সায়মা:আরিশ! মুখ সামলে কথা বলো। আমার চরিত্র নিয়ে কথা বলার আগে নিজের দিকে তাকাও। বউ রেখেও আমাকে নিয়ে ফুর্তি করতে। নিজের ঘরের বউকে রেখে আমার সাথে থেকেছো। হাহ আর নিজে আসছো আমার চরিত্র নিয়ে কথা বলতে। তুমি এতো ভালো হলে বউ বাচ্চা দিতে পারবেনা জেনে তাকে রেখে আমার কাছে আসতেনা। বাচ্চা জন্ম দেওয়ার মেশিননা আমি। আমার যখন ইচ্ছা হবে সেই সময় বাচ্চা কনসিভ করবো আমি তার আগে নয় বেশ! আর এতে তোমার সমস্যা থাকলে আর একটা কাউকে নিয়ে এসে তাকে দিয়ে তোমার বাচ্চা জন্মিয়ে নেও।
সায়মা ঘটঘট করতে করতে অন্য রুমে চলে গেলো। আরিশ সায়মার যাওয়ার পানে তাকিয়ে রইলো। এটা কোন সায়মাকে দেখছে সে। আরিশ উঠে বারান্দায় আসে। আসলে সে হয়তো অনেক বড় একটা ভুল করেছে। সন্তানের লোভে সে মুগ্ধকে ধোঁকা দিয়েছে। আর আজ দেখো সেই সন্তান জন্ম দেওয়ার মতো মানুষ থেকেও সন্তান পাবেনা সে।

.
.
.
..
.
.
.
.
২৩.
সকালের দিকে রুহিও চলে আসে হাসপাতালে। রুহি অফিসের মেনেজারের থেকে জানতে পেরেছে মুগ্ধের কথা। রুহি সেই সময়েই চলে আসে হাসপাতালে। রুহি হাসপাতালে এসে দেখে মেহের আইসিউর বাহিরে এসে বসে আছে। রুহি গিয়ে মেহেরের পাশে গিয়ে বসে। নিজের পাশে কারো আভাস পেয়ে পাশে তাকিয়ে দেখে রুহি বসে আছে ওর পাশে। মেহের রুহিকে দেখে আর নিজেকে আটকে রাখতে পারেনা নিজেকে।
রুহিকে জরিয়ে ধরে কান্না শুরু করে দেয় মেহের। আচমকা এমন হওয়ায় রুহি অবাক হয়ে যায়। মেহের কান্না করতে করতে বলে,
মেহের:মিস রুহি বলেনতো আমার সাথে কেন এমন হয়। কেন আল্লাহ আমার সব আপনজনদের কেড়ে নেয় আমার থেকে। কেন সবাইকে এভাবে কেড়ে নিচ্ছে। আমার বাবা মাকে প্রথমে নিয়ে গেলো। তারপর এখন আমার বোন। আমার বোনের কিছু হয়ে গেলে আমি মরে যাবো মিস রুহি আমি মরে যাবো।
মেহেরের কান্না দেখে রুহির চোখও ভিজে উঠে। রুহি মেহেরের পিঠে হাত বুলিয়ে বলে,
রুহি:স্যার কান্না করবেননা। সব ঠিক হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ। দেখবেন মুগ্ধ ঠিক হয়ে যাবে। আপনার মতো ভাই থাকতে মুগ্ধের কি কিছু হতে পারে বলুন।
মেহের:আমি আমার বোনকেতো রক্ষা করতে পারলাম না। যেখানে আমি জানি ওর উপড় কোনো বিপদ আসতে পারে। আমার উচিত ছিলো ওকে সাবধানে রাখা। সব আমার দোষ।
রুহি:এটা একটা দূর্ঘটনা স্যার। এখানে আপনার কিছু করার ছিলোনা। আপনি নিজেকে দোষ দিয়েননা স্যার।
সাদাফ এতোটা সময় বসে মেহেরের কান্না দেখছিলো। সাদাফ ভেবে পায়না একজন ভাই কিভাবে তার বোনকে এতোটা ভালোবাসতে পারে।
এর মাঝে নার্স আসে ওদের কাছে।
নার্স:আপনাদের পেসেন্টের জ্ঞান ফিরেছে। তাকে একটু পরে কেবিনে দেওয়া হবে।

নার্সের কথা শুনে মেহের অনেক খুশি হয়। মুগ্ধকে কেবিনে সিফট করা হয়। মেহের আগে যায় মুগ্ধের কেবিনে। মুগ্ধ চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে। মেহের গিয়ে মুগ্ধের পাশে গিয়ে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। মুগ্ধ মাথায় কারো স্পর্শ পেয়ে চোখ মেলে তাকায়। চোখ মেলে ভাইকে দেখে মুচকি হাঁসে।
মেহের:কেমন লাগছে এখন তোর?
মুগ্ধ আসতে করে বলে,
মুগ্ধ:এইতো ভালো।
মেহের এবার কেঁদে দিলো আর বললো,
“আমাকে ক্ষমা করে দিস চড়ুইপাখি। আমি তোকে সেফ রাখতে পারলাম না। আমি তোকে যদি আমি একা না যেতে দিতাম তাহলে এমন হতোনা।
মুগ্ধ ভাইয়ার কথা শুনে বলে,
মুগ্ধ:এতে তোমার দোষ কোথায়? অহেতুক নিজেকে দোষ দিওনা প্লিজ। আমি ঠিক আছিতো। তোমার ভালোবাসা থাকতে আমিকি মরতে পারি এতো তাড়াতাড়ি।
মেহের মুগ্ধের কথা শুনে ওর কপালে একটা চুমু দিলো।

এর মাঝে রুহি আসলো হাতে করে খাবার নিয়ে।
রুহি:এই যে সারারাত আপনারা না খাওয়া। এখন খাবার খেতে হবে। স্যার আপনি এটা খান আর আমি মুগ্ধকে স্যুপ খাইয়ে দিচ্ছি।
মেহের:আচ্ছা।
রুহি মুগ্ধকে স্যুপটা খাইয়ে দিচ্ছে। খাওয়া শেষে রুহি মুগ্ধকে রেখে বাহিরে গেলো। আর মেহের ও বাহিরে আসলো। এবার সাদাফ আসলো মুগ্ধের কাছে। সাদাফকে দেখে মুগ্ধ অবাক হলো। সাদাফ মুগ্ধের পাশে এসে ওকে জিজ্ঞেশ করলো,
সাদাফ:কেমন আছেন এখন?
মুগ্ধ:আলহামদুলিল্লাহ ভালোই আছি এখন।
আপনি এখানে?
সাদাফ:হ্যাঁ দেখতে আসলাম আপনাকে।
মুগ্ধ:ওহ আচ্ছা।
সাদাফ:হুম।
দুজনেই চুপ করে আছে। সাদাফ আড়চোখে মুগ্ধকে দেখছে। একটু পর উঠে চলে আসে সাদাফ। মেহেরকে বলে বাসায় চলে আসে সাদাফ।

~এদিকে~
সালমা খান মেয়েকে ফোন দিলো। কিছু সময় কল হবার পর সায়মা কল ধরলো।
সালমা:হ্যালো।
সায়মা:হ্যাঁ মা বলো।
সালমা: কই তুই কি অবস্থা তোর?
সায়মা:এইতো আছি কেন হইছে?
সালমা:কোথায় আছিস?
সায়মা:তোমার ভাসুরের মেয়ের স্বামীর সাথে আছি।
সালমা:কি! তুই আরিশের সাথে।
সায়মা:হ্যাঁ।
সালমা:তার মানে তোর জন্যই আরিশ মুগ্ধকে ছাড়ছে।
সায়মা:হুম। গাঁধা ওই আরিশ একটা বুঝলা মা। আমি ফুসলিয়ে ফাসলিয়ে ওকে পটালাম। আর ও সেটা টের ও পেলোনা।
সালমা:সর্বনাশ এখন যদি মেহের জানতে পারে এই কথা তবে তো ও লংকা কান্ড করে ফেলবে।[মনে মনে]
আচ্ছা শোন তুই কাল বাসায় আসিস। কাল তোর বাবা বাসায় থাকবেনা। সামিয়া ডাক্তারের কাছে যাবে। কাল আসিস বাসায়।
সায়মা:আচ্ছা ঠিক আছে।
সালমা কল রেখে চিন্তায় পরে গেলো।

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here