অদ্ভুত_মেয়ে (season 2) Part- 32

0
2578

অদ্ভুত_মেয়ে (season 2)
Part- 32
Writer: #Nur_Nafisa
.
.
নাফিসা লজ্জায় কোথায় লুকাবে বুঝতে না পেরে ইমরানের বুকেই লুকালো! আর ইমরান নির্লজ্জের মতো হেসে নাফিসার লজ্জা আরও বাড়িয়ে দিতে লাগলো!
.
আজ দুপুরের দিকে হিমা হিয়া রেহান টিফিন পিরিয়ডে বাসায় এসে পড়েছে। পিচ্চিরা খেলাধুলা করে রুমের সামনের ফাকা জায়গা ময়লা করে ফেলেছে, তাই নাফিসা ঝাড়ু দিচ্ছিলো। হিমা এসে ময়লার উপর দিয়েই চলে গেলো। মুখ তার পেচার মতো ফুলে আছে আর পেছনে হিয়া হেসেই যাচ্ছে।
নাফিসা- হাসোছ কেন? মেডাম ফুলির কি হইছে?
হিয়া- হিহিহি…. মেডাম ফুলিকে দেখতে ঘটক আসছে।
নাফিসা- কিহ!
হিয়া- হুম। এর আগেও একবার আসছিলো আজ আবার আসছে। আম্মু চাচি বলে দিছে বিয়ে দিবে না। তারপরও আসে।
নাফিসা- বেটারে তো পুলিশে দেওয়া দরকার! বাল্যবিবাহ ঠিক করতে আসছে! মামারা কিছু বলে না?
হিয়া- এমন সময় আসে যখন তারা সবাই অফিসে।
নাফিসা তারাতাড়ি ঝাড়ু দেওয়া শেষ করে নিচে চলে এলো। দেখলো ঘটক সাহেব পান খেতে খেতে বড় মামির সাথে কথা বলছে। মামি নিষেধ করছে বিয়ে দিবে না তাও পাত্রের বর্ননা দেওয়া শুরু করছে। মেঝ মামি পাশেই দাঁড়ানো ছিলো বিরক্তি নিয়ে মামি চলে গেলো। নাফিসা মাথায় ঘোমটা দিয়ে বড় মামির কাছে এসে বসলো ঘটককে কৌশলে তাড়ানোর জন্য। ঘটক একপর্যায়ে নাফিসার বিয়ের কথাও তুলে ফেলছিলো নাফিসা নিজেই পরিচয় দিয়েছে সে এ বাড়ির বউ। ঘটকের সাথে কথা বলে যখন নিষেধ করতে পারছিলো না তখন ঘটককে কাল পাত্রের ছবি নিয়ে আসতে বললো।
ঘটক চলে গেলে রুমে এসে নাফিসা ইমরানকে কল করলো।
নাফিসা- আসসালামু আলাইকুম।
ইমরান- ওয়ালাইকুম আসসালাম।
নাফিসা- কি করছো গো?
ইমরান- ডান্স করার জন্য নিশ্চয়ই আসিনি!
নাফিসা- হুম, সেটা তো ডান্স ক্লাব না। এই শুনো আমার না কলা খেতে ইচ্ছে করছে। আসার সময় কলা নিয়ে আসবা।
ইমরান- আইস্ক্রিম খেতে ইচ্ছে করে, কলা খেতে ইচ্ছে করে, ভাত খেতে ইচ্ছে করে না! যাও গিয়ে ভাত খাও কোন কলা টলা নাই!
নাফিসা- ওই ব্যাটা! কলার স্বাদ কি ভাতে পাওয়া যায়! কলা নিয়ে আসবি না হয় ঠ্যাং ভেঙে ফেলবো। ভালোমতো কথা বলছিলাম তুই ভালোর উপযুক্তই না। ফোন রাখ!
নাফিসা কল কেটে সাথে সাথে ফোন বন্ধ করে দিলো। বিকেলে ইমরান এত্তগুলা কলা নিয়ে বাসায় ফিরেছে। নাফিসার হাতে দিয় বললো,
ইমরান- নাও, খাও ইচ্ছেমতো!
নাফিসা দাত কেলিয়ে একটা হাসি দিয়ে কিছু কলা এনে তার রুমে বেড সাইড টেবিলে রেখে দিলো। পরের দিন ইমরান অফিসের জন্য রেডি হলে নাফিসা গুনগুন করে গান গাইতে গাইতে ইমরানের পাশে এসে দাড়ালো। ঠিক করা শার্টের কলার নেড়েচেড়ে আবার ঠিক করলো। তারপর ইমরানকে জড়িয়ে ধরে দাড়িয়ে রইলো। ইমরান নিজের চুল ঠিক করতে করতে বললো,
ইমরান- এতো ভাব কেন দেখাচ্ছেন? আবার কিসের বায়না ধরছেন শুনি?
নাফিসা ইমরানের শার্টের বোতাম নিয়ে খেলা করতে করতে বললো,
নাফিসা- তুমি কত্তো বুদ্ধিমান! এজন্যই তো বাবা-মা তোমার কাছে বিয়ে দিয়েছে! আজকে একটু দেড়ি করে অফিস যাবা?
ইমরান- কেন?
নাফিসা- একজন মেহমান আসবে তোমার সাথে দেখা করতে।
ইমরান- কে?
নাফিসা- এলেই তো দেখবা!
ইমরান- কাজ আছে আমার, মেহমানকে পড়ে আসতে বলো।
নাফিসা- এটা কেমন কথা! আমি তো আর অফিস যেতে নিষেধ করছি না, একটু লেট করে যাও।
ইমরান- ওকে।
ইমরান বাবা চাচ্চুদের চলে যেতে বলে বাসায় থেকে গেলো। পূজা উপলক্ষে হিমা হিয়ার স্কুল বন্ধ থাকায় তারা বাসায়ই আছে।
ইমরান- কলা খেতে মন চাচ্ছে, কলা তো কাল আনলাম একটাও তো খেতে দেখলাম না!
নাফিসা কলা এনে ইমরানের হাতে দিলো। ইমরান একটা খেতে খেতে সে দুইটা গপাগপ শেষ করে ফেললো। রেহান একটা খেয়েছিলো সেটার খোসাও রেখে দিছে। বারবার জানালার পাশে এসে উঁকি দিচ্ছে। যেই দেখলো ঘটক আসছে নাফিসা কলার খোসা হাতে নিলো দ্রুত! ইমরানের খাওয়া শেষ না হতেই হাতে নিয়ে বললো,
নাফিসা- এতোক্ষণ লাগে কলা খেতে! দূর দাও তো। নিচে আসো তাড়াতাড়ি! আর শুনো অতিরিক্ত কোন কথা বলবা না, আমার কথায় সায় দিয়ে যাবে শুধু!
ইমরান কিছুই বুঝতে পারলো না! নাফিসা দ্রুত নিচে এসে দরজা খুলে দিলো আর কলার খোসা রেহানের হাতে দিয়ে যথাসময়ে কাজ করতে বললো,
ঘটক দরজা দিয়ে প্রবেশ করতেই চারটা খোসা ঢিল মেরে ফেললো রেহান! ব্যাস! ঘটক সাহেব চিতপটাং! রেহান এক দৌড়ে ড্রয়িং রুম থেকে উধাও!
নাফিসা- হায় হায়! ঘটক সাহেব পড়ে গেছে! আরে কেউ তুলো! ভাইয়ায়ায়ায়া!
ইমরান মাত্রই ড্রয়িং রুমে আসছিলো, ঘটক সাহেবকে পড়ে যেতে দেখে তারাতাড়ি তুললো!
নাফিসা- পোলাপাইন এত্ত পাজি! কলা খাইছোস খোসা কি দরজার সামনে ফেলার জায়গা! ঘটক সাহেব, আপনি ব্যাথা পাননি তো!
ঘটক- না, ঠিক আছে! বাচ্ছা দুষ্টামি করেই! ওফ! মেয়ের মা চাচিরা কই?
ইমরান ঠিক জানে এটা কার কাজ। আর এটাই তাহলে নাফিসার মেহমান! ইমরান ঘটককে ধরে সোফায় বসালো।
নাফিসা- শুনো, ঘটক সাহেব হিমার বিয়ের জন্য পাত্রের সন্ধান নিয়ে এসেছে।
ইমরান- মানে! হিমাকে এখন বিয়ে দিবো না।
নাফিসা- আরে, উঠে যাচ্ছো কেন। বসো আগে, বিয়ে তো একদিন হবেই! দেখতে তো আর সমিস্যা নাইক্কা! বসো বসো, ঘটক সাহেব পাত্রের ছবি দেখান।
হিমা, কিছু নাস্তার ব্যবস্থা করো।
মামিদের কিছুক্ষণের জন্য ড্রয়িং রুমে আসতে নিষেধ করেছে। আর সব ব্যবস্থা করে হিমা হিয়াকে কিচেনে রেখে এসেছে। না চাইতেও হিয়ার ধাক্কাধাক্কিতে হিমা বিস্কুট আর শরবতের গ্লাস নিয়ে হাজির হয়েছে। ইমরান তো হিমাকে দেখে অবাক! মাথায় ঘোমটা টেনে এতো মার্জিত ভাবে এসেছে, মনে হচ্ছে পাত্র এসেছে তাকে বিয়ের জন্য দেখতে! এখনি বিয়ের এতো শখ! নাফিসা হিমাকে তার পাশে বসিয়ে ঘটককে খেতে বললো। ঘটক জুস মুখে নিয়ে ভেবাচেকা হয়ে আছে!
ঘটক- এটা জুস না আরও কিছু!
নাফিসা- কেন কি হয়েছে! হিমা, তুমি চিনি দাও নি?
হিমা- বোয়ামে লবন ছিলো না চিনি ছিলো জানি না তো!
নাফিসা- ব্যাক্কল মাইয়া, মুখে দিয়ে দেখবি না! আর কি দিছোস?
হিমা- জুস লাল হয় না তাই হলুদ মরিচ দিছি একটু একটু!
নাফিসা- গাধী কোথাকার! জুসে মরিচ হলুদ দেয়! কিছু মনে করবেন না! আসলে খুব আদরের মেয়ে তো, রান্না ঘরে ঢুকেনি আজ পর্যন্ত! চিন্তা করবেন না, আস্তে আস্তে সব শিখে নিবে! এই তোমার কি পছন্দ হয়েছে কোন ছবি? আমার কিন্তু ভালো লাগেনি।
ইমরান- পাগল হয়ে গেছো তুমি! ক্লাস টেনে পড়ে এখনি বিয়ে দিবো!
নাফিসা- আরে রাগ করছো কেন! বুঝতে পেরেছি তোমারও পছন্দ হয়নি! আসলে ঘটক সাহেব, আমাদের এমন ছেলে পছন্দ, যে কি না কাগজের মতো সাদা হবে, উচ্চতায় আট ফিট লম্বা হবে। ছেলেকে আমেরিকার ডাক্তার হতে হবে। আমাদের মেয়ে আবার আমেরিকা খুব পছন্দ করে। ছেলের বয়স ষোল বছর হতে হবে! এমন পাত্র আপনার কাছে আছে কি?
ঘটক- বিয়ে কি মস্করার জিনিস? আট ফিট লম্বা ছেলে কি ভিন দেশ থেকে আনমু! থাকি আমি বাংলাদেশে আমেরিকার ছেলে ধরে আনমু কেমনে! ষোল বছরের ছেলে আবার ডাক্তার হয় কেমনে! আইছিলাম ভালো ভালো কিছু ছেলের খোজ নিয়া, মাইয়ারা তো জল্লাদ! এই বাড়িতে আর জীবনে আমু না! একটারও বিয়া হইবো না!
ইমরান- আপনার সাহস কি করে হয় এসব বলার! আপনাকে যে বাল্যবিবাহের অপরাধে পুলিশে দেইনি এখনো এটাই আপনার ভাগ্য ভালো! বের হন, এক্ষুনি!
ঘটক- হ, যাইতাছি। একটারও বিয়ে হইবো না।
নাফিসা- ভালো হইছে, পাত্র আপনার কোলে নিয়া বইসা থাকেন। ব্যাটা লুইচ্চা কোথাকার! পাত্রীর সন্ধানে আসলে পুরুষ মানুষ রাইখা মহিলাদের সাথে গল্প করতে আসোছ কেন! আরেকদিন দেখলে ঠ্যাং ভেঙে গলায় ঝুলাবো!
ঘটক চলে গেলো। ইমরান অনেক রেগে আছে। নাফিসাকে ধমকে বললো,
ইমরান- এ ধরনের দুষ্টুমি করতে নিষেধ করেছিলাম না! ঘটক এনে বাসায় এইটুকু মেয়ের বিয়ে ঠিক করো!
নাফিসা- ওই, না জেনে বেশি কথা বলবা না। ঘটক এর আগেও দুদিন আসছে। মামিরা বারবার নিষেধ করা সত্ত্বেও আসে পাত্রের সন্ধান নিয়ে। বদমাইশ একটা! যখন তোমরা কেউ বাসায় থাকো না তখন আসে গল্প করতে। উচিত শিক্ষা দিতেই আজ এসময় আসতে বলেছি। আর সেজন্যই তোমাকে আটকে রেখেছি। তোমার কাজ শেষ এবার অফিস যাও!
ইমরান- তাই বলে এমন ডোজ দিবে!
নাফিসা- এতো দরদ উতলে পড়ছে কেন, শুনি! ওই ব্যাটা তোমার বউয়ের জন্যও পাত্র খুজা ধরছিলো! আমিই ঠেকাইছি!
হিমা হাসতে হাসতে বেরিয়ে যাচ্ছে, রেহান উঁকি দিয়ে বলে
রেহান- ঘটক সাহেব চলে গেছে?
ইমরান- আয় এদিকে তুই, দুইটা থাপ্পড় দেই। এখন কোমড় ভাঙলে তো আমাকেই হসপিটালে নিয়ে দৌড়াদৌড়ি করতে হতো!
রেহান- হাহাহা…
নাফিসা- হইছে, যাও অফিস। এখন তোমার লেট হচ্ছে না!
ইমরান- হ্যাঁ যাচ্ছি, আলতু ফালতু চিন্তা না করে পড়াশোনায় মনযোগী হও। সারাদিন শুধু কাকে কিভাবে ফাসাবে সেই চিন্তা মাথায় ঘুরে!
ইমরান বিড়বিড় করতে করতে বেড়িয়ে গেল। হিমা হিয়া রেহান এসে সাউন্ড বক্স ছেড়ে নাচতে লাগলো। সাথে পিচ্চিরাও।
রাতে পড়া শেষে সবগুলো এসে খাটে ইমরানকে ঝাক বেধে ধরলো ল্যাপটপ দেয়ার জন্য। ইমরান দিচ্ছে না!
নাফিসা- আরে দাও না, একটা মুভি দেখবো।
ইমরান- আমার জরুরি কাজ, এখন দিতে পারবো না।
নাফিসা- এহ! সারাদিন কাজ আর কাজ! দিনের বেলাও নিতে পারিনা, লুকায় রাখে। লাগবে না তোমার ল্যাপটপ! এই যার যার রুমে যা তোরা, গিয়ে ঘুমা!
রেহান- ভাইয়া অনেক খারাপ! আপু তুমি একটা গল্প শুনাও তো।
নাফিসা- কিসের গল্প?
হিয়া- হাসির গল্প শুনাও।
নাফিসা- হাসির গল্প! ওকে একটা মজার ঘটনা শুন! ক্লাস ফোর এ থাকতে আমি, সাথে আরও দুজন বান্ধবী প্রাইমারি স্কুলে যাচ্ছিলাম। রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় দেখলাম এক সিএনজির ড্রাইভার সিএনজি থামিয়ে রাস্তার পাশে ময়লার স্তুপে দাড়িয়ে দাড়িয়ে প্রস্রাব করছে। আশেপাশে মসজিদ থাকা সত্ত্বেও বাথরুমের অভাব পড়ছে! এতো বড় লোক দাড়িয়ে প্রস্রাব করে দেখে রাগ উঠেছে খুব! স্টুপিড লোকটা দাড়াইছে আবার খুব ভালো জায়গায়! উপরে ছিলো মস্ত বড়ো কড়ই গাছের ডাল, যার মাঝে ছিলো বড়সড় এক মৌচাক! ব্যাস তিনজন একসাথে তিনটা ইটের টুকরো নিয়ে ঢিল মারলাম, এবার যারটা লাগে! বড় টুকরো হওয়ায় মৌচাকের কিছু অংশ ভেঙে লোকটার উপর পড়েছে! ঢিল দিয়ে আর আমরা সেখানে নাই! দৌড়ে এক বাসায় ঢুকে পড়েছি! মৌমাছি তো লোকটাকে ঝাক বেধে ধরেছে! ড্রাইভার মৌমাছির কামড়ে রাস্তায় ডান্স করা শুরু করেছিলো! দুজন লোক রাস্তায় দাড়িয়ে কথা বলার সময় দেখেছে আমাদের। তারা বুঝতে পেরে হাসতে হাসতে ড্রাইভারকে বললো,
– কি ভাই? রাস্তায় দাড়িয়ে আরও প্রস্রাব করবেন জীবনে?
আর ঘটনা শুনে এদিকে হিমা হিয়া রেহান হাসতে হাসতে বিছানা উল্টে ফেলছে! ইমরানও ল্যাপটপে কাজ করতে করতে হাসছে।
নাফিসা- দেখছোস কি করতাছে! ওই নাম, আমার বিছানা থেকে!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here