অদ্ভুত_মেয়ে (season 2)
Part- 33
Writer: #Nur_Nafisa
.
.
আর ঘটনা শুনে এদিকে হিমা হিয়া রেহান হাসতে হাসতে বিছানা উল্টে ফেলছে! ইমরানও ল্যাপটপে কাজ করতে করতে হাসছে।
নাফিসা- দেখছোস কি করতাছে! ওই নাম, আমার বিছানা থেকে! আর তুমি হাসো কেন? ল্যাপটপ দেয়নি আবার আমার গল্প শুনে দাত কেলায়!
ইমরান- আচ্ছা হাসবো না।
নাফিসা- নামো বিছানা ঠিক করবো।
বাকিরা হাসতে হাসতে চলে গেলো। ঘুমাতে যাওয়ার আগে নাফিসা ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাড়িয়ে মুখে পাউডার দিচ্ছে। তা দেখে ইমরান বললো,
ইমরান- সারাদিন পেত্নীর মতো থেকে এখন ঘষামাজা করে! কে দেখবে তোমাকে এখন?
নাফিসা- তোমার জন্যই তো ঘষামাজা করি। তুমি না দেখলে আমার কি!
ইমরান মুচকি হেসে ড্রেসিং টেবিলের সামনে এলো। নাফিসাকে টেনে খাটে বসালো। সে ড্রেসিং টেবিল থেকে একে একে নাফিসার সব সাজুগুজুর জিনিসপত্র নিয়ে খাটে এলো।
নাফিসা- এসব কি করছো? এগুলো এখানে আনছো কেন?
ইমরান- আজকে আমি সাজাবো তোমাকে।
নাফিসা- কেন?
ইমরান- আমি দেখবো তাই।
নাফিসা- হিহিহি…. পার্লারের কাজ জানো নাকি?
ইমরান- উহুম।
নাফিসা- তাহলে কিভাবে সাজাবে?
ইমরান- তোমার সাহায্যে। বসো চুপচাপ।
নাফিসা উৎফুল্ল হয়ে বললো,
নাফিসা- এই, শাড়ি পড়ে আসি?
ইমরান- ওকে, যাও। দ্রুত…
নাফিসা আলমারি খুলে দেখতে লাগলো কোনটা পড়বে! ব্লু টা পড়া হয়নি তাহলে এটা পড়বে! ইমরান খাটে বসে বলে দিলো বিয়ের লাল শাড়িটা পড়তে। নাফিসা তার কথামতো লালটাই হাতে নিলো। ওয়াশরুমে চেঞ্জ করে এলে ইমরান সাজাতে শুরু করে দিলো। নাফিসার সাহায্যে ইমরান নিজের হাতে সাজাচ্ছে তাকে। কাজল নাফিসার হাতে দিয়ে বললো,
ইমরান- এটা তুমি দাও।
নাফিসা- কেন, সবটাই তুমি করবে।
ইমরান- চোখে খোচা লাগলে আবার হসপিটাল দৌড়াতে হবে। তার চেয়ে সতর্ক থাকা ভালো।
নাফিসা হিহি করে হেসে নিজেই কাজল পড়লো। সাজানো শেষ হলে ইমরান বিয়ের গহনাগুলো নিয়ে এলো। নিজ হাতে নাফিসাকে পড়িয়ে দিয়ে মাথায় ঘোমটা টেনে দিলো। দু’হাতে নাফিসার মুখটা ধরে কপালে চুমু দিয়ে বললো,
ইমরান- মাশাল্লাহ!
তারপর নাফিসাকে ড্রেসিং টেবিলের সামনে নিয়ে এলো। নাফিসা নিজেকে দেখে নিজেই অবাক! পুরো বউ সাজে সাজিয়েছে তাকে! একটু কমবেশ হলেও প্রশংসা করতে হয় ইমরানের কাজ! ইমরান তাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে কাধে থুতনি রেখে বললো,
ইমরান- পুরো বউ বউ লাগছে!মনে তো হচ্ছে আজ বিয়ে হয়েছে!
নাফিসার চোখে পানি চিকচিক করছে মুখে হাসি। অদ্ভুত অনুভূতি নিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
নাফিসা- আজ বাসর রাত হলে তুমি কি করতে?
হঠাৎ এমন প্রশ্নে ইমরানের মুখ মলিন হয়ে গেছে! সে নাফিসাকে ছেড়ে দিয়ে সোজা হয়ে দাড়ালো। নাফিসা অশ্রুসিক্ত নয়নে তার দিকে ঘুরে আবার বললো,
নাফিসা- বলো, আজ আমাদের বাসর রাত হলে তুমি কি করতে?
ইমরান জানালার কাছে এসে পর্দাটা সরিয়ে বাইরে উঁকি দিলো। পর্দা টেনে আবার আগের জায়গায় এসে দাড়িয়ে বললো,
ইমরান- আজ কি আমাদের বাসর রাত?
নাফিসা- আমার প্রশ্নের উত্তর আগে দাও।
ইমরান- আমার প্রশ্নের উত্তরে তোমার উত্তর লুকিয়ে আছে।
নাফিসা ইমরানের সঠিক উত্তর জানার জন্য কিছুটা ইতস্তত করে বললো,
নাফিসা- হ্যাঁ, আজ আমাদের বাসর রাত।
ইমরান- তাহলে এবার দেখো আমাদের বাসর রাত কেমন কাটে।
ইমরান সাথে সাথে তাকে কোলে নিয়ে সম্পূর্ণ রুম হেটে দরজার কাছে এলো। নাফিসা শুধু ইমরানের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে।
ইমরান- দরজা খুলো।
নাফিসা তার কথায় ইমরানের কোলে থেকেই হাত বাড়িয়ে দরজা খুলে দিলো। এসময় দোতলার সবাই ঘুমায়। ইমরান নাফিসাকে নিয়ে ছাদে এলো। ছাদের এককোনে এসে শুয়িয়ে দিলো পাশে হাতে মাথা ভর করে সেও শুয়ে পড়লো। নাফিসা তার দিকেই তাকিয়ে আছে।
ইমরান- হয় যদি আজ আমাদের বাসর রাত,
গায়ে জ্যোছনা মেখে,
কাটিয়ে দিবো দুজন গল্প করে,
সাক্ষী থাকবে ওই পূর্নিমার চাঁদ।
চাঁদের আলোয় দুজন দুজনকে স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে। নাফিসা মাথা তুলে ইমরানকে জড়িয়ে ধরলো। ইমরান এবার শুয়ে পড়লো নাফিসার মাথাটা বুকে নিয়ে।
ইমরান- এই পাগলী, আমি তো গল্প করতে এসেছি। কাদছো কেন তুমি?
নাফিসা- অতি সুখে। সবাই এটা কেন ভাবে বাসর রাত মানে ইন্টিমেট হওয়া! ভিন্ন রকমের কিছু ভাবতে পারেনা কেন তারা!
ইমরান- কার কথা বলছো তুমি?
নাফিসা- বৌভাতের দিন সকালে মিতু ভাবি এসে আমাকে জিজ্ঞেস করেছিলো আমার রাত কেমন কেটেছে। আমি সেদিন বলেছিলাম রাত আবার কেমন কাটে! তিনি খোচা মেরে বলেছিলো, সকাল সকাল গোসল করে বসে আছো অথচ এমন ভাব দেখাচ্ছো কিছুই বুঝো না! আবার তোমার বন্ধুরাও তো বলেছিলো তোমাকে বাসর রাত কেমন কেটেছে। তারাও তো এটাই মিন করেছে না, বাসর রাত মানেই ইন্টিমেট! তারা এটা কেন ভাবতে পারলো না, বাসর রাত মানে দুজন মানুষের নতুনভাবে পরিচিত হওয়া! এটা কেন ভাবতে পারলো না, বাসর রাত মানে হাসব্যান্ডের হাতে নিজেকে নববধু সাজে সজ্জিত করা! তারা এটা কেন ভাবতে পারলো না, বাসর রাত মানে খোলা আকাশের নিচে শুয়ে পূর্নিমার চাঁদ উপভোগ করা! তারা এটা কেন ভাবতে পারলো না, বাসার রাত মানে দুজনে গায়ে জ্যোছনা মেখে খুশগল্প করা!
ইমরান নাফিসাকে ঠেলে উঠে বসলো। নাফিসা ইমরানের দিকে তাকাতেই ইমরান বললো,
ইমরান- কথাগুলো আরেকবার বলতে পারবে?
নাফিসা- কেন?
ইমরান- আমি রেকর্ড করে কাল মিতু ভাবিকে আর আমার বন্ধুদের মানেটা শুনিয়ে দিতাম!
নাফিসা রেগে ইমরানকে দু’হাতে মেরে উঠে দাড়ালো। ইমরান হাহা করে হাসতে লাগলো! নাফিসা রেলিংয়ের পাশে এসে দাড়াতেই ইমরান উঠে এসে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে দাড়ালো। নাফিসা ইমরানের উপর হেলান দিয়ে হাতের উপর হাত রাখলো। দুজনেই তাকিয়ে আছে প্রায় ভরো ভরো চাঁদটার দিকে।
ইমরান- বাসররাত মানে তো এটাও, বউ রাগ করলে রেলিংয়ের পাশে দাড়িয়ে চাঁদ দেখা!
নাফিসা হিহি করে হেসে উঠলো।
নাফিসা- আচ্ছা, তুমি সেদিন হরর স্পেশাল বলেছিলে কেন?
ইমরান- হরর স্পেশালই তো ছিলো। খাটে উপর উপর করে তিনটা কোলবালিশ! চোখে ঘুম আসতেই দুইটা ধপাস করে আমার উপর পড়েছে।
নাফিসা- কিহ!
ইমরান- জ্বি! সেজন্যই ঢিল মেরে নিচে ফেলে দিয়েছিলাম!
নাফিসা- হিহিহি…. আমাকে কিছু বলোনি কেন?
ইমরান- কি বলবো! ঘুমটা নষ্ট করতে চাইনি!
নাফিসা- এখন করছো না!
ইমরান- ওটা তো ঘুম রাত ছিলো, আজ তো বাসর রাত। আজ সারারাত গল্প করবো।
নাফিসা- কাল সকালে অফিস যেতে পারবা!
ইমরান- এমন কতো রাত মিস হয়েছে।
নাফিসা- তুমি তো মামাদের সাথে অফিস যাও তাহলে ফটোগ্রাফি কখন চলে?
ইমরান- ওটা তো অপশনাল। সাদাফ প্রোগ্রামে এটেন্ড করে কালেক্ট করে। বাকি কাজ বাসায় এসে ল্যাপটপে আমি করি।
আরও কিছুক্ষণ খুশগল্প করে নাফিসা ইমরানকে টেনে দোতলায় চলে এলো। ঘুম পেয়েছে তার খুব!
পরেরদিন বিকেলের দিকে বৃষ্টি এলে একবার গোসল করা সত্ত্বেও সবাই ভিজেছে ছাদে এসে! হিয়ার জ্বর এসে গেছে আর সবাই সর্দিতে ভুগছে! ইমরানসহ বাসার সকলের বকা খেতে হয়েছে! দুতিনদিন সবাই অসুস্থ তবুও হিমা আর রেহানকে স্কুলে যেতে হয়েছে।
হিয়ার জ্বর অনেকটা কমে গেছে। বিকেলে নাফিসা তার পাশেই বসে নিজে পড়ছিলো হিয়াকেও পড়তে বলেছে। হিমা স্কুল থেকে ফিরেছে আজও তার মুখ কেমন মলিন দেখাচ্ছে!
নাফিসা- কিরে? তোর আবার কি হলো?
হিমা- কিছু না।
নাফিসা- কিছু না হলে এভাবে আছিস কেন?
হিমা কোন জবাব দিলো না। ব্যাগ রেখে ফ্রেশ হয়ে এসে তাদের পাশে খাটে বসলো। ইতস্তত করতে করতে বললো,
হিমা- আপু, তোমাকে কিছু বলতে চাই।
নাফিসা- এই ভঙ্গির কথা আবার কবে থেকে বলা শুরু করলি? কি বলবি বল।
হিমা- না কিছু না।
হিয়া- হিমা, তোর পেছনে কি আবার ওই ছেলেটা লেগেছে? আজকেও কিছু বলছে তোকে?
হিমা মুখ মলিন করে হিয়াকে মাথা নেড়ে হ্যাঁ জবাব দিলো।
হিয়া- বোবি, তুই কিছু বললি না! ওইটারে জুতাপেটা না করা পর্যন্ত ঠিক হইবো না দেখছি!
নাফিসা তাদের ইশারা বিশারা কিছুই না বুঝতে পেরে জিজ্ঞেস করলো
নাফিসা- কি হয়েছে রে?
হিয়া- জানো আপু, ক্লাস এইটে পড়ে এক ছেলে হিমাকে প্রপোজ করছে! দু একবার আমি দৌড়ানি দিছি, তারপর থেকে আমাকে সাথে দেখলে একশো হাত দূরে থাকে! এখন আমি যাই না আবার বোধহয় কিছু বলছে। প্রেম পত্র নিয়া আসে, গিফট দেয়। আবার থ্রেডও দেয়! গিফট নিয়া আমি একদিন ওই ব্যাটার মাথায় ঢিল মারছি! আর এই বোবি ভয়ে কোন কথা বলে না! এই পিচ্চিরে নাকি ভয় পায়! দেখতে অবশ্য পিচ্চি না!
নাফিসা তো হতবাক! হিমার মাথায় ঠুসে বলে,
নাফিসা- এমন বোকা লোক পৃথিবীতে আছে! অহ! তুই তো মেয়ে। তুই বোকা হতে যাবি কেন! তুই ফুজ্ঞি! শুধু মুখ ফুলিয়ে বসে থাকতে পারবি! হিয়ার মতো চ্যাটাং চ্যাটাং কথা বলতে পারছ না! ক্লাস এইটে পড়ে এই ছেলে আবার তোকে থ্রেড দেয় কিভাবে!
হিমা- কি করবো আমি এখন! স্কুলে যেতে পারি না, যখনই সুযোগ পায় আমার সাথে কথা বলতে আসে। আবার বিয়ের কথা বলে আর আমি প্রেম না করলে নাকি কিডন্যাপ করবে আমাকে! ভয়ে আমি ভাইয়াকেও কিছু জানাতে পারছি না!
নাফিসা- মহা বিপদ! তুই এক কাজ কর। আবার যখন কথা বলতে আসবে তুই রাজি হয়ে যাবি। আর শুক্রবারদিন কফি শপে আসতে বলবি। আগে দেখি তারপর ব্যাবস্থা নিবো। আবার গিয়ে বলিস না আমার আপু দেখা করবে। তখন আমার গোলমাল হয়ে যাবে!
হিয়া- হিহিহি, বলা যায় না আপু! এই বলদি বলতেও পারে!
নাফিসা- আহ! কি চালাক মেয়ে!
হিয়া- চালাক না হলেই কি আমি ফুরফুরে সিঙেল!
নাফিসা- হিহিহি… তোর প্রপোজাল আসেনি?
হিয়া- স্কুলের সবাই আমাকে চিনে আমি কেমন। আর এই বলদিকেও চিনে সে কেমন! একবার বাইরের একটা ছেলে ভাইয়ার চেয়ে বয়সে একটু ছোট হবে। প্রায়ই দেখতাম রাস্তায় দাড়িয়ে থাকতো। মাঝে মাঝে আমার পিছু পিছু হেটে হেটে এমনিতেই ফোনে কথা বলতো, ” দোস্ত আমার এই আছ, সেই আছে, এখানে গিয়েছিলাম, বাইকটা আজ নষ্ট হয়ে গেছে ” এমন নানান ফুটানি গিরি করতো! আমি যখন বুঝতে পারলাম ছেলেটা সুবিধার না, আমিও উল্টো চাল চাললাম! ভাইয়ার হেডফোনটা ব্যাগে লুকিয়ে নিয়ে স্কুলের জন্য বের হতাম। রাস্তায় গিয়ে কানে হেডফোন লাগিয়ে হাটতাম, আর ছেলেটাকে দেখলে বলা শুরু করতাম, “জান, তুমি কবে আসবে! তোমাকে খুব দেখতে ইচ্ছে করছে! আচ্ছা আমার জন্য কি এই সেই নিয়ে আসবা! ” আরও নানান কিছু বলতে বলতে হাটতাম! দুদিন, মাত্র দুদিন পর থেকে দেখি ওই ছেলে আর পিছু নাই!
নাফিসা- হিহিহি…. এ তো দেখছি অতি চালাক! ভাইয়া জানে না তুই হেডফোন চুরি করছোস?
হিয়া- হ্যাঁ, ব্যাগে একদিন দেখছিলো। আমাকে জিজ্ঞেস করতে আমি বলছিলাম আমার কাছে কি ফোন আছে! হিমেল রিয়াদ রাখছে হয়তো!
নাফিসা- মিথ্যুক!
হিয়া- হিহিহি… তোমাকে কেউ ডিস্টার্ব করেনি?
নাফিসা- স্কুল কলেজ সব তো আমার বাসার কাছেই। সব পরিচিতই! তাও একবার দেখলাম এক ছেলে গার্লস স্কুলের মেয়েদের সাথে ভাব ধরার জন্য ছেড়া প্যান্ট, চোখে কালো চশমা পড়ে দাড়িয়ে থাকতো। একদিন চটপটির প্লেট হাতে ধরিয়ে ছবি তুলে ফেসবুকে ভাইরাল করে দিছি! স্মার্ট ভিক্ষুক! আরেক দিন বান্ধবীদের সাথে বাসায় ফেরার পথে লক্ষ্য করলাম দুইটা ছেলে একটা বাসার গেইটের সামনে রাস্তার পাশে দাড়িয়ে আমাদের দেখে শিশ বাজাচ্ছে! সম্ভবত ভাড়াটে হবে আর না হয় বেড়াতে এসেছে। আমি তাদের দিকে তাকিয়ে জোরে বললাম, ” কি ভাই, শিশ বাজান কেন? হিসি ধরছে? বাসায় বাথরুম নাই?” অভদ্রের মাঝে ভদ্র হবে হয়তো। তাই সাথে সাথে লজ্জা পেয়ে গেইটের ভেতর ঢুকে পড়েছে!
হিমা- হিহিহি… অভদ্রের মাঝে ভদ্র!
নাফিসা- হুম, তোকে যা বললাম তা করিস। মুখে না পারলে খাতা কলমে লিখে দিস।
হিয়ার কটুক্তিতে হিমা ছেলেটার কাছে নোটিশ দিয়েছে। শুক্রবার বিকেলে ইমরানকে জোর জবরদস্তি করে কফি শপে নেয়ার জন্য রাজি করিয়েছে। আর যেতে যেতে শর্টকাটে নাফিসা ইমরানকে ব্যাপারটা বুঝিয়ে দিয়েছে। হিমাকে এক টেবিলে বসিয়ে তারা অন্যটায় বসলো। হিয়া আর রেহান লুকিয়েই আছে। ছেলেটা বেশ সেজেগুজে এসেছে দেখতে খারাপ না, বয়সে মনে হয় হিমাদের সমবয়সী বা তাদের চেয়ে একটু বড় হবে। হিমা বারবার নাফিসা ইমরানের দিকে তাকাচ্ছে। ছেলেটা বসতেই নাফিসা ইমরান এই টেবিলে চলে এলো। ইমরান একেবারে ছেলের সাথে বসেছে। পরক্ষণেই হিয়া আর রেহান বেরিয়ে এলো। হঠাৎ করেই এতোগুলো মানুষ আসতে দেখে ছেলেটি ভয় পেয়ে গেছে! হিয়াকে দেখে আন্দাজ করতে পেরেছে এরা হিমার আত্মিয়!
নাফিসা- কি ভাইয়া, চিনতে পেরেছেন নাকি! শুনুন আমি হিমার ভাবি, ও হিমার বড় ভাই মানে আপনারও বড় ভাই! আর এ আপনার শালি আর ও আপনার শালা। আপনি হিমাকে পছন্দ করেন? বলুন বলুন লজ্জা পাবেন না।
ছেলেটি ভয়ে ভয়ে জবাব দিলো,
– হ্যাঁ!
ইমরান- বাহ! শুভ কাজে আর দেড়ি কি! অন্নেক ভালো লাগছে!
নাফিসা- হুম, গো ঠিক বলেছো তুমি। বিয়েটা আজকেই কাজী অফিসে সেড়ে ফেলা দরকার! আজকেই কিন্তু বিয়ে করতে হবে না হয় হিমাকে হারাবেন!
– কিহ!
নাফিসা- জ্বি, হিমার তো আগামী রবিবারই বিয়ে। হিমারও আপনাকে পছন্দ তাই ভাবলাম অভিভাবক হিসেবে আমরা আজই বিয়ে দিবো। টাকা পয়সা এনেছেন তো কিছু? আমাকে কিন্তু একটা গর্জিয়াছ দামি শাড়ি আর ডায়মন্ডের আংটি গিফট দিতে হবে আজই! আমি আপনার একমাত্র ভাবি না করবেন না কিন্তু! তা না হলে কাজী অফিসে সাক্ষী থাকবো না!
ইমরান- হুম, আমার ফোনটা পুরোনো হয়ে গেছে! আমাকে একটা নতুন ফোন গিফট করলেই হবে এবং আজই আর কিছু লাগবে না।
রেহান- দুলাভাই আমাকে একটা সাইকেল দিবেন না হলে দুলাভাই ডাকবো না!
হিয়া- হুম, বড় বোনের জামাই। শুনেন, আব্বুকে বলছিলাম একটা ল্যাপটপ কিন্না দিতে, আব্বু তো দিলোই না। আপনিই দেন, না হয় দুলাভাইয়ের মর্যাদা পাবেন না! সবাই আজকেই চাইছে আমি আর কালকের আশায় থাকবো কেন! আমিও আজই চাই।
নাফিসা- ওই হিমা, তুই কিছু চাস না কেন! তোর জামাই হবে কি এমনি এমনিই! তারাতাড়ি চেয়ে নে, আমরা সাক্ষী থাকবো।
হিমা- আমি তো জানিই ই। না চাইতেই পাবো। বেশিকিছু না, আমাকে গুলশানে একটা ফ্ল্যাট কিনে দিলেই হবে! শশুর শাশুড়ি নিয়া সংসার একদমই পারবো না! রানীর মতো রাখতে হবে আর পাচ ছয়টা চাকরানি থাকবে আমার সেবা করার জন্য! আর কিছু লাগবে না আমার! বুঝছেন মিস্টার হবু!
ছেলেটি এতোক্ষণ ধরে তাদের আবদার শুনছে আর বড় বড় ঢোক গিলছে!
নাফিসা- পকেটে কত টাকা নিয়ে বের হইছেন দেখি? ডেবিট কার্ড আছে তো সাথে? দুলাভাই কি বোবা নাকি! কিছু বলেন না কেন! ওই, তুমিই পকেট চেক করো তো । দুলাভাই লজ্জা পায়!
ইমরান- দেখি ভাই আপনার পকেট! এতোক্ষণ ধরে বসে আছি এক কাপ কফিও অর্ডার করেননি!
ইমরান ছেলেটার পকেট ধরতে গেলে ছেলেটা উঠে দাড়ালো! ইমরান তার পকেট টেনে ধরেই রেখেছে! ছেলেটা ছুটার চেষ্টা করতে করতে বললো,
– ছাড়েন ভাই, আমি বিয়া করমু না! আর জীবনে আপনার বোনের পেছনে লাগমু না!
ইমরান- আরে ভাই, আপনি বিয়ে না করলে আমাদের এতো আবদার পূরণ করবে কে! প্রয়োজনে ঘরজামাই রাখবো তবুও আজ বিয়ে দিয়ে ছাড়বো।
– না, না…
নাফিসা- আরে দুলাভাই! এক কাপ কফি তো খায়িয়ে যান!
ছেলেটা ছাড়া পেয়ে এক দৌড় দিলো! পেছন পেছন ইমরান আর রেহানও কফি শপ থেকে বেরিয়ে একটু ছোটখাটো দৌড়ানি দিলো! ছেলে তো মনে হচ্ছে রাস্তার গাড়ির সাথে দৌড় খেলা দিচ্ছে! একটুও থামছে না!