পিচ্চি চাচাতো বোন(সিজন ২),পর্বঃ৭

0
782

পিচ্চি চাচাতো বোন(সিজন ২),পর্বঃ৭
আবির হাসান নিলয়

—বাসায় গেলে যদি আমাদের বিয়ে
দিয়ে দেয় তখন করবেন?

বাসায় আসতে আর প্রায় মিনিট ২০
সময় লাগবে।সন্ধ্যা গড়িয়ে পরে রাত
হয়ে গেছে।আমি আছি হাজারটা চিন্তায়
আর এই মেয়ে কি সব বলে যেগুলো
আমার মাথাতেই আসছে না।
জান্নাতঃএই যে…(আঙ্গুল দিয়ে স্পর্শ করে)
আমিঃভাগ এখান থেকে।
জান্নাতঃবলেন না,যদি বিয়ে দিয়ে দেয়।
আমিঃজান্নাত বিরক্তি করিস না তো।
জান্নাতঃতাহলে বলুন
আমিঃবিয়ে দিলে বিয়ে করবো হ্যাপী?
জান্নাতঃতাহলে তো বিয়ে হয়েই যাবে।
আমিঃওয়াও
জান্নাতঃকি হলো?
আমিঃবিয়ে তো হাতের মুয়া,বললি আর
সবাই মিলে বিয়ে দিয়ে দিলো।
জান্নাতঃআমার জন্য একটাই তাই
আমিঃআগের জন্মে না জানি কি পাপ
করেছিলাম যার জন্য তোর মতো
মেন্টাল একটা কাজিন পেয়েছি।
জান্নাতঃএবার কিন্তু রাগ করবো
আমিঃবারণ করছে কে?
জান্নাতঃভালোবাসার মানে জানেন?
আমিঃজানতে চাই না
জান্নাতঃতবুও বলছি।ভালোবাসা হলো
দরজা বিহীন একটা রুম।যেখানে দুটো
মানুষের বসবাস।আপনি চাইলেও
অন্যজনকে ছেড়ে চলে যেতে পাড়বেন না।
সারাদিন ঝগড়া,মারামারি,রাগারাগি সব
হয় কিন্তু দিন শেষে রাতের বেলা একজন
আরেকজনকে খুব করে কাছে পেতে চায়।
একটা ভয় তাদের মধ্যে কাজ করে সেটা
হলো,যদি রাতের বেলা একজন অন্যজনকে
ছেড়ে দূর আকাশে চলে যায়।
আমিঃঅনেক বলেছিস এবার চুপ
থাক বাসায় প্রায় এসে গেছি।
জান্নাতঃধুর

আর কোনো কথা না বলে চুপচাপ
বসে রইলো।আরো কিছু সময়
ড্রাইভ করার পর বাসায় চলে আসলাম।
বাইরে গাড়ি পার্ক করে জান্নাতকে সাথে
নিয়ে ভিতরে গেলাম।অনেক লোকের
ভীর জমে আছে।লক্ষ্য করলাম পিচ্চির
মামা বাসায় থেকে সবাই আসছে
আমাদেরও কিছু আত্মীয় আসছে
সাথে কিছু গ্রামের লোকজন।যাদের
ঠিকভাবে চিনি না।সবার সামনে গিয়ে
দাঁড়াতেই ভাইয়া বলল;
ভাইয়াঃতোরা রাঙামাটি কেনো গেছিলি?
জান্নাতঃআমি যেতে চাইনি
ভাইয়াঃতাহলে?
জান্নাতঃনিলয় আমাকে জোর করে
নিয়ে গেছে।আর আমি ছোট একটা
মেয়ে ওর সাথে কিভাবে পারি বলতো।
ছোট মাঃনিলয় তোর থেকে বড়(হাত ধরে)
জান্নাতঃতো কি বলবো?
ছোট মাঃভাইয়া বলবি
জান্নাতঃতুমি আব্বুকে কখনো ভাইয়া
বলে ডাকছো?
ছোট মাঃআমরা স্বামী স্ত্রী জান্নাত(রেগে)
জান্নাতঃআমিও নিলয়কেই বিয়ে করবো
তাই এসব ভাইয়া বলে ডাকতে পারবোনা।
আম্মুঃতোর অনেক বিয়ে করার শখ?
জান্নাতঃহ্যা অনেক বেশি
আম্মুঃতাহলে আর কি,আজকেই দুটোকে
বিয়ে করিয়ে দেয়।
আমিঃwait a minute,you all crazy?
আম্মুঃপাগল হওয়ার কি আছে?
আমিঃতোমরা সত্যি আমাদের দুজনকে
বিয়ে দিতে চাইছো আজ?
আব্বুঃমিথ্যা কেনো বলতে যাবো?
চাচ্চুঃভাই এসব মজা বাদ দাও।সবাই
মিলে কেকটা কাটি।
জান্নাতঃএটা মজ ছিলো?
চাচ্চুঃতাছাড়া আর কি?
জান্নাতঃআমি নিলয়কে ভালোবাসি।
চাচ্চুঃজান্নাত এবার বাড়াবাড়ি হচ্ছে না?
জান্নাতঃআব্বু আমি সত্যি…..
চাচ্চুঃআমি চুপ করতে বলছি কিন্তু।
আব্বুঃআহ জাকির,আমি চাই জান্নাতের
সাথে নিলয়ের বিয়ে হোক।
চাচ্চুঃভাই দয়া করে ওকে আর মাথায়
তুলো না।এমনিতেই অনেক হয়েছে।
আমিঃহুম সেটাই।চাইলে ভাইয়ার সাথে
বিয়ে দাও।কারণ বড় ভাইদের বিয়ে
আগে হয়।এখন জান্নাতের সাথে ভাইয়ার
বিয়ে দিলে ভালোই হবে।অনেকদিন
দাওয়াত খাওয়া হয়নি।

কথাটা বলে সোফার উপর বসতেই
দেখলাম ভাইয়ার রাগ চরম হারে
বেরে গেছে।জান্নাতকে লক্ষ্য করে
দেখলাম চোখ লাল হয়ে গেছে।কান্না
কি রাগ কিছু বুঝতে পাড়ছিলাম না।
কিছু মানুষের চোখের ভাষা বোঝা
অনেক সহজ। আপনি যাকে মন
থেকে ভালোবাসেন তার চোখের
দিকে তাকালে প্রথমে একটা মায়া
খুঁজে পাওয়া যায়।আর সেই মায়াটাই
আপনাকে বলে দিবে সে কি বলতে
বা বোঝাতে চাইছে।কিন্তু তখন তো
ছিলাম একটা আওয়ারা।পিচ্চিকে
বোঝার চেষ্টা তো দূরে থাক ঠিকমতো
দেখতামও না।
ছোট মাঃঅনেক হয়েছে এবার কেক কাটো।

সবাই উঠে গিয়ে জান্নাতের পাশে দাঁড়িয়ে
জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানানোর পাশাপাশি
জান্নাত কেক কাটছে।সবাইকে কেক
খাওয়ানো শেষ শুধুমাত্র আমি ছাড়া।
হয়তো খাওয়াবেও না।এক চিলতে
হাসি দিয়ে রুমে চলে গেলাম। অনেক
বেশিই ক্লান্ত লাগছে।ফ্রেস হয়ে বিছানার
উপর শরীরটা এলিয়ে দিতেই কখন
যে ঘুমের রাজ্যে চলে গেছি বুঝতেই
পারিনি।ঘুম থেকে উঠে আশেপাশে
ফোন খুঁজতে লাগলাম কিন্তু কোথাও
পেলাম না।রাত কয়টা বাজে ঠিক
বলতে পাড়বো না।ক্ষুধাও পেয়েছে অনেক।
জল দিয়ে মুখ ধুয়ে বাইরে এসে দেখলাম
সবাই বসে গল্প করছে।ভালো করে লক্ষ্য
করলাম ভাইয়া ছাড়া সবাই হাজির আছে।
সে আবার কোথায় গেলো…!এগিয়ে গিয়ে
আম্মুর কাছে জিজ্ঞাস করলাম,,,
আমিঃভাইয়া কই?
আম্মুঃছাদে আছে।
আমিঃওহ
আবার গল্পে মনোযোগী হলো।এতো
মানুষের ভিড়ে ক্ষুধার কথা বলতেও
কেমন একটা লজ্জা লাগছে।
আমিঃআম্মু আসলে অনেক ক্ষুধা পেয়েছে
আম্মুঃসবার সাথে খাস নাই?
আমিঃকখন?
ছোট মাঃএকদম মাথায় ছিলো না।তুই
ঘুমিয়ে যাওয়ার জন্য আর ডাকাই হয়নি।
আর অনেক মানুষের ভিরে মাথায় ছিলো না।
আমিঃওহ
ছোট মাঃতুই আমার সাথে আয়
আমিঃহুম

ছোট মার সাথে যাওয়ার সময় লক্ষ্য
করলাম জান্নাত আড় চোখে তাকিয়ে
আছে।লক্ষ্য করলাম ফোনটাও ওর
কাছেই আছে।হয়তো বান্ধুবীদের
সব পিক দেখাচ্ছে।আর ওসব না
ভেবে ছোট মার সাথে গেলাম।
ছোট মাঃতুই বস আমি বেড়ে দিচ্ছি
আমিঃহুম
ছোট মাঃতোর কি মন খারাপ?
আমিঃকেনো বলতো?
ছোট মাঃএই যে জান্নাত তোকে সব
সময় জ্বালাতন করে।
আমিঃআরে না,ও অনেক পিচ্চি
তাই এসব বলে।
ছোট মাঃমাঝে মাঝে অনেক খারাপ
লাগে।সব সময় উল্টাপাল্টা কথা বলে।
কিন্তু কি করবো বল,একটামাত্র মেয়ে
ওকে যদি কিছু বলি নিজেরই খারাপ
লাগে।অনেকবার মারতে চেয়েও থমকে
গেছি।যদি খারাপ কিছু করে বসে।
আমিঃসরি ছোট মা,আসলে আমার
মাথা ঠিক ছিলো না।তাই ওর গায়ে
হাত তুলেছিলাম।
ছোট মাঃজানিনা ওর মাথায় কি চলে।
তবে বড় হলে ঠিক হয়ে যাবে।
আমিঃসেই জন্যই তো কিছু বলি না।
ছোট মাঃওর কথায় কিছু মনে করিস না।
আমিঃঠিক আছে।
ছোট মাঃতুই এখন খা,আমি বাইরে গিয়ে
দেখি সবাই কি করছে।
আমিঃওকে

ছোট মা বাইরে চলে যেতেই খাওয়া
শুরু করলাম।অনেক বেশিই ক্ষুধা
পেয়েছে।খাওয়া শেষ করে সোজা
ছাদে চলে গেলাম।ভাইয়া আগে থেকেই
ছাদে গিয়ে বসে আছে।
আমিঃকি খবর?
ভাইয়াঃআর খবর
আমিঃকয়টা বাজে?
ভাইয়াঃ১ঃ৩০টা
আমিঃএতো রাতে এখানে কেনো?
ভাইয়াঃমশা মারি
আমিঃকি হয়েছে?
ভাইয়াঃঅরিতাকে দেখতে আসছিলো
আমিঃহাহাহা,তাই নাকি
ভাইয়াঃতোর হাসি পাচ্ছে?
আমিঃতো?
ভাইয়াঃযদি আঙ্কেল ব্যাটাকে পছন্দ
করে এবং বিয়ে দিয়ে দেয়?
আমিঃছেলে কি করে?
ভাইয়াঃওসব জানিনা।কালকেই দুজন
পালিয়ে যাবো।
আমিঃআগে বিয়ে ঠিক হোক তারপর
না হয় পালাস।এখনো তো কিছু হয়নি।
ভাইয়াঃকিন্তু হতেও তো পাড়ে। আর তুই
জানিস ওর বাপ কেমন।
আমিঃতা ঠিক।আচ্ছা চল নিচে যায়।
ভাইয়াঃতুই যা আমি আসছি
আমিঃওকে

কথা না বাড়িয়ে নিচে চলে আসলাম।
রুমে যাওয়ার আগে জান্নাতের কাছে
গিয়ে বললাম;
আমিঃফোনটা দে
জান্নাতঃ……(কিছু না বলে দিয়ে দিলো)
ফোন নিয়ে চলে আসতে যাবো তখন
অনেকটা রাগান্বিত কণ্ঠে বলল..
জান্নাতঃআমাকে একটা ফোন কিনে দাও
সবাইঃ…..(চুপ করে জান্নাতকে দেখলো)
জান্নাতঃআমি তোমাদেরই বলছি
চাচ্চুঃতুই ফোন দিয়ে কি করবি?
জান্নাতঃফোন দিয়ে মানুষ কি করে?
ছোট মাঃতোর ফোন ইউজ করার
বয়স হয়েছে?
জান্নাতঃদিবে কিনা সেটা বো
ছোট মাঃদেবো না
জান্নাতঃওকে

কিছু না বলে দ্রুত রুমে যাওয়ার সময়
আমিও ওর সাথে গেলাম।আমাকে
বের করার জন্য ধাক্কাধাক্কি করে
যখন পারলো না তখন চুপ করে বসলো।
আমিঃএতো রাগ ঠিক না।
জান্নাতঃতুই যাবি রুম থেকে
আমিঃযাবো না
জান্নাতঃতোর ফোন তুই পেয়েছিস।তাই
এখন ডিস্টার্ব না করে যা বলছি।
আমিঃকেনো যাবো?
জান্নাতঃআমার রুম তাই
আমিঃএখানে আগে আমি থাকছি
জান্নাতঃএটা আমার বাবার বাসা।
আমিঃআমার চাচ্চুর
জান্নাতঃতুই যাবি বা**
আমিঃলাথি খাবি
জান্নাতঃ….?(কিছু না বলে রাগ দেখালো)
আমিঃশোন,এখন তোর ফোন ইউজ
করার বয়স হয়নি।বড় হো দেখবি চাচ্চু
নিজে থেকেই তোকে ফোন কিনে দিবে।
জান্নাতঃআর কতো বড় হবো?
আমিঃআগে তুই SSC পাশ কর।
জান্নাতঃযদি ফেল করি।
আমিঃতাহলে আর কি,ফোন তো
দিবেই না।উল্টো একটা রিক্সা চালকের
সাথে বিয়ে দিয়ে দিবে।
জান্নাতঃতোর জন্যই কিছু করলাম না।
না হলে আজ কি যে করতাম।
আমিঃজানি,এখন ঘুমা অনেক রাত হয়েছে
জান্নাতঃহুম

কথা না বাড়িয়ে দ্রুত বের হয়ে আসলাম।
বলা যায়না আবার কি বায়না ধরবে।
রুমে এসে আমিও কিছু সময় ফোন
টিপার পর ঘুমিয়ে গেলাম।

পরেরদিন,,,,,,
ঘুম থেকে উঠে দেখলাম ভাইয়া পাশে
নেই।বাইরে এসে জিজ্ঞাস করলাম
আম্মু বললো;বাসায় চলে গেছে।আর
এখানে থাকা ভালো হবে না।কাউকে
কিছু না বলে দ্রুত বাসা থেকে বের
হয়ে আসলাম।বাইরে থেকে অটো
করে মাইন রাস্তায় এসে বাস ধরলাম।
হঠাৎ আবার কি হলো,না জানি কি
করে ফেলবে।এসব ভাবতে ভাবতেই
আব্বু কল দিলো।
আমিঃহ্যালো আব্বু
আব্বুঃকোথায় তুই?
আমিঃবাসায় যাচ্ছি
আব্বুঃকেনো?
আমিঃএকটা কাজ আছে অনেক ইম্পরট্যান্ট
আব্বুঃএকবার বলে যাওয়া গেলো না?
আমিঃমাথায় ছিলো না।আচ্ছা রাখছি
আব্বুঃহুম
———————————————————————
বাস থেকে নেমে ভাইয়াকে কল দিলাম।
আমিঃকই তুই?
ভাইয়াঃরাজ দীঘিতে
আমিঃকোন পাশে?
ভাইয়াঃউত্তর পাসে
আমিঃতুই থাক আমি আসছি
আর কোনো কথা না বাড়িয়ে দ্রুত চলে
গেলাম।ভেবেছিলাম একা বসে আছে।
কিন্তু না,দুজন বসে আছে।
আমিঃএখানে কেনো?
অরিতাঃআজ পালিয়ে যাবো
আমিঃকেনো?
অরিতাঃবাসা থেকে বিয়ে ঠিক করছে
আমিঃবাসায় ওর কথা বলছো?
অরিতাঃহ্যা
ভাইয়াঃআজ ওর সাথে ওদের বাসায়
যাবো।প্রথমে বলবো আমাদের রিলশনের
কথা।যদি না শোনে তাহলে রাতেই পালাবো।
আমিঃবিয়ে কবে?
অরিতাঃপরশুদিন
আমিঃতাহলে আজ পালাবে কেনো?
অরিতাঃমানে?
আমিঃআজ না,তোমরা কাল পালাবে।
ভাইয়াঃকেনো?
আমিঃআজকের দিনটা কেমন ভালো
লাগছে না।আর কিছুই করা হয়নি।
পালিয়ে যাবি কোথায়।
ভাইয়াঃআব্বু যদি মা মানে তাহলে
হাসমত দাদার কাছে চলে যাবো।
আমিঃএখনো মরে নাই?
ভাইয়াঃমার খাবি তুই?
আমিঃমজা করছি,কিছুদিন আগেও
মারিয়ার সাথে কথা হয়েছে।
ভাইয়াঃওহ
আমিঃঠিক আছে আমি বাসায় গেলাম।

দুজনকে বিদায় দিয়ে বাসায় চলে এলাম।
বিকেল হতেই আব্বু আম্মু চলে আসলো।
ছাদে বসে আছি তখন ভাইয়া আসলো।
আমিঃকি বললো
ভাইয়াঃযেটা বলার কথা ছিলো
আমিঃওহ
ভাইয়াঃকালকেই পালাবো
আমিঃসেটাই ভালো হবে।তবে দাওয়াতটা
অনেক মিস করবো।নিজের ভাইয়ের
বিয়েটাও খেতে পারবো না?
ভাইয়াঃরাখ তোর দাওয়াত,আমি রুমে গেলাম।
আমিঃহাহাহা ওকে

চলবে…………

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here