অদ্ভুত_মেয়ে (season 2) Part- 36

0
2608

অদ্ভুত_মেয়ে (season 2)
Part- 36
Writer: #Nur_Nafisa
.
.
নাফিসা- ঠা..ঠান্ডা লাগছে আ..আমার। ভেজা কাপড়, চে..চেঞ্জ…
ইমরান- হুশশ!
কেমন একটা দিন কেটে গেছে ভাবা দায়! বিশ্বের সবচেয়ে সুখী দম্পতি হয়তো তারা। রাগ অভিমান অল্প অল্প সবকিছুরই মিশ্রণ আছে আবার মধুর মিলনও আছে তাদের মাঝে!
সন্ধ্যা হয়ে গেছে, ঠান্ডা পরিবেশে কম্বল ও দেহের উষ্ণতায় দুজনেরই গভীর ঘুমে কেটেছে সময়। দুপুরে খাওয়া ও হয়নি তাদের!
চোখ মেলে তাকাতেই লজ্জা পাচ্ছে নাফিসা! ইমরান জেগে আছে সেটা সে খুব ভালো বুঝতে পারছে! সে কি এখন তার মুখের দিকেই তাকিয়ে আছে! ভাবছে নাফিসা!
ইমরান- গুড ইভিনিং মিসেস!
নাফিসা তার সাথে আরও জড়ো হয়ে গেছে তবুও চোখ খুলে তাকাচ্ছে না!
ইমরান- সন্ধ্যা হয়ে গেছে তো, উঠো।
নাফিসা- তুমি আগে যাও।
ইমরান- একসাথে যেতে সমস্যা কি!
নাফিসা- যাও!
ইমরান- হাহাহা…
নাফিসা- ইশ!
ইমরান উঠে চলে গেলো। ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে এসে দেখলো নাফিসা এখনো কম্বল মুড়েই শুয়ে আছে। ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাড়িয়ে চুল ঠিক করতে করতে বললো,
ইমরান- উঠো না কেন? মাগরিবের আযান পড়বে।
নাফিসা কিছু বললো না। তাকিয়ে আছে ইমরানের পিঠে! ফর্সা পিঠে লালচে কিছু দাগ স্পষ্ট!
আলমারি থেকে শার্ট বের করে পড়তে লাগলো ইমরান।
নাফিসা- কোথায় যাবে নাকি?
ইমরান- হুম, রেস্টুরেন্ট যাই। কি খাবে বলো।
নাফিসা- আমি এখন যাবো না।
ইমরান- তোমাকে যেতে বলিনি। কি খাবে সেটা বলো।
নাফিসা- আইস্ক্রিম।
ইমরান- ঠান্ডার মধ্যে আইস্ক্রিম খাওয়া যাবে না। অন্যকিছু বলো।
নাফিসা- আইস্ক্রিম।
ইমরান- ভাতের পরিবর্তে এমন কিছু বলো যেটা খেলে পেট ভরবে।
নাফিসা- আইস্ক্রিম।
ইমরান বিরক্তি নিয়ে তাকিয়ে বললো,
ইমরান- মোরগ পোলাও নাকি বিরিয়ানি?
নাফিসা- চুমু!
নাফিসার কথা শুনছে না তাই নাফিসা দুষ্টুমি করে বললো কথাটা। এদিকে ইমরান নাফিসার কথা শুনে বড় বড় চোখ করে তাকালো আর ঠোঁটের কোনায় দুষ্টুমি হাসি ফুটিয়ে তুললো। নাফিসা সাথে সাথে কম্বল দিয়ে নাকমুখ ঢেকে ফেললো। দু মিনিটের মতো পাড় হয়ে গেছে কিন্তু ইমরানের কোন প্রতিক্রিয়া পাচ্ছে না তাই আস্তে আস্তে কম্বল সরিয়ে তাকিয়ে দেখলো ইমরান রুমে নেই। দরজা খোলা। তাহলে বেরিয়ে গেছে। নাফিসা আনন্দিত হয়ে দ্রুত উঠে ফ্রেশ হয়ে এলো। পানিও একেবারে ঠান্ডা হয়ে আছে! এখন আবার শীত লাগছে তার! তাই কম্বল মুড়ে খাটে হেলান দিয়ে বসে রইলো। কখন চোখের পাতা লেগে গেছে খেয়ালই নেই! হঠাৎ মনে হলো ঘুমের মধ্যে কেউ তাকে মেরে ফেলছে! দম বন্ধ হয়ে আসছে তার! ঝটপট চোখ খুলে তাকাতেই ইমরানকে দেখলো! ইমরান তার ঠোঁট আকড়ে ধরেছে! নাফিসা ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলো। ইমরান হাহাহোহো করে হেসে উঠলো! আর এদিকে নাফিসা রেগে আছে! হাসতে হাসতে বললো,
ইমরান- কি হলো? খাবে না চুমু?
নাফিসা ইমরানকে কিল মারতে মারতে বললো,
নাফিসা- ঘুমের মধ্যে এমন করে কেউ! আরেকটু হলে তো আমি মরেই যেতাম!
ইমরান- একটু আগে ঘুম থেকে উঠেছো এখন আবার ঘুম!
ইমরান টেবিলের কাছে এসে দুই প্যাকেট বিরিয়ানি এক প্লেটে ঢাললো।
নাফিসা- বিরিয়ানিই এনেছো! কিন্তু এক প্লেটে ঢালছো কেন সব? তুমি খাবে না?
ইমরান- কেন দুই প্লেট তুমি খেতে পারবে না?
নাফিসা- উহুম।
ইমরান- সারাদিন না খেয়ে আছি আর এখন তোমার মনে হচ্ছে দুই প্যাকেট তোমার জন্যই এনেছি! নাও ধরো!
নাফিসা- তাহলে এক প্লেটে কেন?
ইমরান জবাব না দিয়ে গ্লাসে পানি ঢেলে বেড সাইড টেবিলে রাখলো। অত:পর খাটে নাফিসার পাশে বসে কম্বলের নিচে ঢুকে পড়লো।
ইমরান- এবার খায়িয়ে দাও।
নাফিসা- বাব্বাহ! কি আরাম! আমি খায়িয়ে দিবো আর উনি বসে বসে খাবেন! পারবো না আমি। নিজের হাতে খাও।
ইমরান তার ঠান্ডা হাতে নাফিসার পিঠে স্পর্শ করে বললো,
ইমরান- কি বললে, পারবে না? তাহলে এক লোকমাও তোমার পেটে পড়বে না!
নাফিসা- স্টুপিড, হাত সরাও!
ইমরান- গরম হয়ে যাবে দু মিনিটের মধ্যে!
নাফিসা- সুড়সুড়ি লাগে!
ইমরান- এখনো সুড়সুড়ি আছে!
নাফিসা- ছি, তুমি খুব খারাপ!
ইমরান- হাহাহা…. তাহলে বিশ্বের পুরুষ জাতিই খারাপ।
নাফিসা- একদম চুপ, হা করো।
নাফিসা ইমরানকেও খায়িয়ে দিচ্ছে নিজেও খেতে খেতে বললো,
নাফিসা- মামারা অফিস থেকে বাসায় এলো না কেন?
ইমরান- জানেই তো নাফিসা কেমন আলসে !বাসায় এলে রান্না করবে কে! তাই চলে গেছে নানাবাড়ি।
নাফিসা- আমি আলসে হলেই তোমাকে খায়িয়ে দিচ্ছি!
ইমরান- এটা তো আমি বাধ্য করেছি!
নাফিসা- হুহ! এই ধারণা তোমার মতো গর্দভের মাথায়ই আছে শুধু। মামারা আমাকে এমন ভাবে না। এতো না অফিসের অজুহাত দিচ্ছিলে, গেলে না কেন! কোথায় তোমার অফিস!
ইমরান- বেড রুমে।
ইমরানের উল্টাপাল্টা জবাব শুনে নাফিসা আর কথা বললো না। চুপচাপ খাওয়া শেষ করলো।
সকালে ঘুম থেকে উঠে হালকা নাস্তা তৈরি করেছে। পুরোটা সময় ইমরান কিচেনে থেকেই নাফিসার সাথে বকবক করেছে। কিচেনে তাকে একা রাখবে না সে!
নাস্তা করার পর অফিসের সময় হয়ে যাচ্ছে কিন্তু ইমরান বাসায়ই আছে।
নাফিসা- অফিস যাও না কেন?
ইমরান- যাবো একটু পর।
এগারোটার দিকে ইমা আপু ফোন করে বললো, তারা যায়নি কেন এখনো! নাফিসা ইমরানের কথা বলতেই আপু ইমরানকে কিছুক্ষণ বকাঝকা করে বললো এখনই যেতে। মামাতো ভাইবোনও কয়েকবার কল করেছে ইমরান রিসিভই করেনি! আপু ফোন রাখতেই ইমরান ধপাস করে খাটে শুয়ে পড়লো। নাফিসা পাশে বসে বললো,
নাফিসা- কি যাবে না?
ইমরান- হ্যাঁ, যাবো তো। কাল দুপুরের দিকে তোমাকে নিয়ে যাবো, খেয়েদেয়ে আবার চলে আসবো।
নাফিসা- যাও তুমি দুপুরে! গায়ে হলুদের প্রোগ্রামে এটেন্ড না করলে আমি দাওয়াতেই যাবো না!
ইমরান নাফিসাকে টেনে শুয়িয়ে দিয়ে বললো,
ইমরান- এতো আগে গিয়ে কি করবা! দাওয়াতে যায় মানুষ খাওয়ার জন্য। কাল দুপুরে না খাওয়ার আয়োজন। তাহলে আজ গিয়ে কি করবা শুধু শুধু!
নাফিসা- ওরা সবাই শুধু খাওয়ার জন্য গেছে। তাই না? ঠিক আছে, আমি যাবোই না। আর একবারও বলবা না আমাকে যাওয়ার জন্য!
নাফিসা গিয়ে বালিশে শুয়ে পড়লো কম্বল নিয়ে। ইমরানও নাফিসার বালিশে মাথা রেখে কম্বলের নিচে চলে গেলো। দুজনেই ঘুমের জন্য প্রস্তুত! দুপুরে ইমরানের ডাকে ঘুম ভাঙলো। নাফিসা চোখ খুলতেই ইমরান বললো,
ইমরান- ব্যাগ চেক করে দেখোতো সব ঠিকমতো গুছাতে পেরেছি কি-না!
নাফিসা- ব্যাগ গুছিয়েছো কেন?
ইমরান- আজকে নাকি রিমার গায়েহলুদ! যেতে বলেছে আমাদের।
নাফিসা- তো যাও। আমাকে ডাকছো কেন!
ইমরান- বিয়ে করলে মহাজ্বালা! বউ ছাড়া কোথাও যাওয়া যায় না, সবাই বউয়ের কথা জিজ্ঞেস করে। বুঝতে পেরেছো!
নাফিসা- হ্যাঁ, বউ তো বোঝা! তখন বলে দিও বউ নেই।
ইমরান খাটের পাশে এসে নাফিসাকে কোলে তুলে নিয়ে হাটতে হাটতে বললো,
ইমরান- কে বলেছে নেই! এই যে বউ!
নাফিসা- ছাড়ো আমাকে!
ইমরান- এতো রিস্ক নিতে পারবো না! এই মুহূর্তে ছেড়ে দিলে আমাকেই হসপিটালে দৌড়াতে হবে!
ইমরান নাফিসাকে নিয়ে একেবারে ছাদে চলে এলো। এবার তাকে নামিয়ে দিয়ে হাত ধরে হাটতে লাগলো। দুজনেই খালি পায়ে ছাদে জমা বৃষ্টির পানিতে হাটছে। ইমরানের উপর রাগ থাকলেও সে মুহূর্তটা উপভোগ করছে। খুব ভালো লাগছে স্বল্প পানিতে পা ফেলতে!
ইমরান তাকে ফুল গাছের দিকে নিয়ে গেলো। লাল গোলাপ ফুল গাছে দুইটা ফুল ফুটেছে আর একটা কলি! বৃষ্টিতে ভেজা গোলাপ দেখতে খুব সুন্দর লাগছে!
ইমরান- রিমার গায়েহলুদ প্রোগ্রামে সাজতে কি তোমার দুইটা গোলাপ লাগবে নাকি একটা?
নাফিসা- একটাও লাগবে না।
ইমরান দুইটা ফুলই ছিড়ে নিলো।
ইমরান- এই নাও, একটা যেহেতু লাগবে না তাহলে দুটো নাও।
ইমরান দুটি ফুল নাফিসার দুই কানে পড়িয়ে দিলো। দুই কানে ফুল দেওয়ায় নিশ্চয়ই অদ্ভুত লাগছে তাকে! নাফিসা ফিক করে হেসে ফুল দুটো হাতে নিয়ে নিলো। আবার ছাদে পানিতে পা ফেলে হাটতে লাগলো। মনে হচ্ছে মনটা ভালো হয়েছে তাই ইমরান বললো,
ইমরান- মেয়েদের সাজুগুজু করতে যে দেড়ি হয়, তুমি ঠিক সময়ে রেডি হতে পারবে তো? কখন যাবে?
নাফিসা- আমি সাজতে যাবো কেন শুধু শুধু!
ইমরান- হুম তাই তো! না সাজলেই ভালো লাগে। এভাবেই চলো।
নাফিসা- যাবো না।
ইমরান- মামা বাড়ি পর্যন্ত কি কোলে করেই নিয়ে যেতে হবে! দেখো আমি কিন্তু রাজি আছি, কিন্তু তুমি লজ্জা পাবে না তো আবার!
জঘন্য লোক একটা! বাধ্য হয়ে নাফিসাকে যেতেই হলো। মামাবাড়ি এসেই সবার সাথে সাক্ষাৎ করে পার্লারের মহিলার কাছে সেজেছে। রিমা আপুর সাথে ভালো ভাব জমা আছে তার! রিমা আপু ও আফরোজা ভাবি (রাফসানের বড় ভাইয়ের বউ) ইমরানের সাথে অনেক রাগারাগি করলো নাফিসাকে পরে আনার কারণে। নাফিসা একটা বিষয় লক্ষ্য করছে, রাফসান তার সাথে তেমন কথা বলছে না ইমরানের সাথেও কথা বলছে না! ইমরানও ভালোমন্দ কিছু জিজ্ঞেস করছে না! দুজনকেই এরিয়ে চলছে! নাফিসা কিছু জিজ্ঞেস করলে সেটার উত্তর দিয়ে কেটে পড়েছে রাফসান! বিষয়টা অনেক সন্দেহ জনক তার কাছে! ফটোশুট আর হলুদ প্রোগ্রাম শেষ করে মেহেদী লাগানোর সময় কথায় কথায় নাফিসা রিমার কাছে জিজ্ঞেস করে জেনে গেলো সত্যিটা!
সেদিন ইমরানের বন্ধুরা বাসায় যাওয়ার পর ছাদে যখন আড্ডা দিচ্ছিলো তখন নাকি রাফসান ইমরানকে বলেছিলো, ” ইমরান খুব ভালো একটা বউ পেয়েছিস তুই! হিংসে হয় তোর সাথে! আমারও এমন পাগলি একটা বউ দরকার! ” দুষ্টুমি করে বললেও ইমরান অন্যভাবে নিয়েছে, সেটা বুঝতে পেরেছে নাফিসা! কারণ রাফসান আগেও তাকে ছোট বোনের মতো দেখেছে এখনো তেমনই ভাবে আর মাঝে মাঝে দুষ্টুমি করতো। রাফসান তো খুব ভালো একটা ছেলে! ভাইবোন একে অপরের সাথে অনেক ফ্রি! তাই, ইমরান যখন তার সাথে কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছে তখন রাফসান আবার দু বছরের ছোট বোন রিমার কাছে বলেছে সব। ইমরান তাকে খারাপ ভাববে সেটা রাফসানও ভাবতে পারেনি! রিমা চেয়েছিলো ইমরানকে কিছু বলতে কিন্তু রাফসান নিষেধ করে দিয়েছে কাউকে কিছু জানাতে।
কয়েকবার জিজ্ঞেস করার পরও বলেনি নাফিসার কাছে ইমরান। এখন সব ক্লিয়ার নাফিসার কাছে! ছোট খাটো একটা ভুল বুঝাবুঝির কারণে বন্ধুত্ব নষ্ট! এটা কি করে হতে দেয়া যায়! নাফিসা হাতে মেহেদী দিতে দিতে ভাবতে লাগলো কি করা যায়!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here