শেষ_থেকে_শুরু_২? #পর্ব_১৮

0
1130

#শেষ_থেকে_শুরু_২?
#পর্ব_১৮
#নন্দিনী_চৌধুরী

৩৩.
প্রতিশোধ!প্রতিশোধ কি আসলেই সব সমস্যার সমাধান। মৃত্যু! এটাও কি সব সমস্যার সমাধান। হয়তো কিছু জায়গায় এগুলাও সমাধান। তবে সম্পর্ক গুলো যে নষ্ট হয়ে যায় এই সমাধান গুলোর কারণে। এক মনে বসে বসে কথা গুলো ভাবছিলো মুগ্ধ। সালমার কথা গুলো শুনে কোথাও একটা তার মনে হয় আসকে একদম পুরোভাবে সালমা দোষীনয়। একটা মেয়ের ইজ্জত নষ্ট করা তারপর তার চরিত্রকে অপমান করা এসব কোন মেয়ে সয্য করবে। কিন্তু তাই বলে একজনের শাস্তি অন্যজনকে দেওয়া এটাও বা কেমন বিচার হলো।

মেহের অনেকটা সময় চুপ করে থেকে এবার সালমার দিকে তাকিয়ে বললো,
মেহেরঃআমি মানছি আপনার সাথে যা যা হয়েছে তার সব অন্যায়। আমার মামা আমার দাদা আপনার অপরাধী। আমার মামা আপনার সম্মানহানী করেছে। আমার দাদা তার ছেলের বউদের দুইচোখে দেখেছে। হ্যাঁ আমি মানছি এগুলা অন্যায়। কিন্তু তার শাস্তি আপনি কেমন করে নিলেন? দোষ আমার মামার ছিলো আপনি শাস্তি তাকে দিতেন। কিন্তু না আপনি শাস্তি আমার মাকে দিলেন তার সাথে আমার বাবাও। কি হলো তাতে? সেইতো ধরা পরে গেলেন। বরং একটা প্রতিশোধ নিতে গিয়ে আপনাকে কত মিথ্যার জাল বানাতে হয়েছে। কি লাভ হলো তাতে? আপনার কি মনে হয় আপনি আসলেই সুখি এতে? আমি বলছি আপনি সুখিনা। আপনি সুখিনা এই কারণেই কারণ এই অপরাধবোধ আপনাকে ভাবায়। আপনি ভয়ে ভয়ে থাকেন। আপনি আসলে কিন্ত সুখি নন এতে। প্রতিশোধ নিয়েই যদি সুখি হওয়া যেতো তবে পৃথিবীর মেক্সিমাম মানুষ সুখি থাকতো যারা প্রতিশোধ নেয়।

আজ আপনি যেমন আপনার ছোট মেয়েও হয়েছে তেমন। প্রতিশোধের নেশায় সেও হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে। নিজের বোনের সংসার নিজ হাতে নষ্ট করলো। শুধুই কারণ একটাই প্রতিশোধ! কি লাভ হলো তাতে? সেই দেখেন আজ আপনার মেয়ের অবস্থা কি আপনি জানেন? সে এবং তার স্বামী এডস রোগে আক্রান্ত। আপনার মেয়ের পেটের বাচ্চাটাও রিস্কে এখন। ভাবেন আল্লাহ কত বড় সাজা দিয়েছে ওকে। সামনে কন্যা হারানো শোক পালন করবেন হয়তো।

সায়মা আরিশ মেহেরের কথায় চমকে যায়। মেহের কিভাবে জানলো তাই ভাবছে।

“আমি সবার সব খোঁজ রাখি তাই আমার কাছে কোনো কিছুই গোপন থাকেনা। ”

মেহেরের কথা শুনে সালমা চমকে গেলো। সায়মা মাথা নিচু করে নিলো। আজ সত্যি তার বলার কিছু নেই। আজ সে বুঝতে পারছে সে যে কি করেছে। মেহের একটা ব্রিফকেস আরিশের দিকে দিলো আর বললো,
মেহেরঃএতে পুরো ৩০লাখ টাকা আছে। আমার বোনের দেনমহরের টাকার ৫গুন। সেদিন কোটের বাহিরে তুই ওকে দেনমোহরের টাকা দিছিলি। আজ আমি তোকে তোর আর তোর বউয়ের চিকিৎসার জন্য টাকা দিলাম। কারণ এখন তোর অবস্থা প্রায় রাস্তার ফকিরের মতো। তাই ধুকে ধুকে মরার থেকে এই টাকা দিয়ে চিকিৎসা করিস।

মাহফুজ সামিয়া একদম চুপ করে আছে। আজ মাহফুজের মনে হচ্ছে তার এতোবছরের সংসার জীবনে যেনো একদম মিথ্যে। এই সংসারের অস্ত্বিত্বটাই মিথ্যে।
মেহের আবার সালমাকে বললো,
আপনাকে চাইলেও ক্ষমা করতে পারবনা। কারণ আপনি আমার মা বাবা,মামার হত্যাকারি। খুন করলেই সমস্যার সমাধান হয়না। আপনি অন্যভাবেও সাজা দিতে পারতেন। আপনি আমার ফুলের মতো বোনের জীবনটাও নোরক করে দিয়েছিলেন। এতো অত্যাচার করেছেন ওকে। যেই বোনের গায়ে আমি ফুলের টোকা পরতে দেইনা। আমার সেই বোনের গায়ে আপনার মারের দাগ রয়েছে। খোদার কসম বলছি আপনি আমার চাচি না হয়ে যদি অন্য কেউ হতেন। আমি বয়সের লেহাজ করতাম না এই মার গুলো ফেরত দিতাম। যাই হোক পাপের শাস্তি সবাইকেই পেতে হবে। আপনাকেও পেতে হবে।
মেহের ওর মেনেজারকে ইশারা করলো। মেনেজার ফোন হাতে নিয়ে কাকে যেনো কল করলো। কিছু সময়ের মাঝে পুলিশ চলে আসলো। সালমা পুলিশ দেখে ভয়,বিচলিত কিছুই হয়নি। একদম নিশ্বব্দে সেরেন্ডার করে দিলো। যাওয়ার আগে শুধু একটা কথাই সালমা বলে গেছে,
সালমাঃআমার পাপের সাজা আমি পেয়েগেছি। আল্লাহ তুমি আমার মেয়েটাকে রক্ষা কইরো।
সালমাকে নিয়ে যাওয়ার পর সায়মা সামিয়া কান্নায় লুটিয়ে পরে। মাহফুজ একদম পাথর হয়েগেছেন। আসতে করে তিনি তার ঘরে চলে আসেন।
মেহের মুগ্ধ উঠে দাঁড়ায় যাওয়ার জন্য। মুগ্ধরা চলে যেতে নিলে আরিশ পিছন থেকে ডাক দেয়।

আরিশঃমুগ্ধ!
এতোদিন পর এই চিরোচেনা কন্ঠে নিজের নাম শুনে থমকে দাঁড়ায় মুগ্ধ। অতীতের পাতাগুলো আবার সামনে আসছে চোখের। মুগ্ধকে দাঁড়িয়ে যেতে দেখে মেহের দাঁড়িয়ে যায়। আরিশ হেঁটে ওদের কাছে এসে মুগ্ধকে বলে,

আরিশঃআমি জানি আমি যা করেছি তারপর তোমার সাথে কথা বলাটা মানায় না। তবুও এই মৃত্যুর পথযাত্রীর একটা শেষ ইচ্ছা রাখবে। ৫মিনিট আলাদা একটু কথা বলবে আমার সাথে প্লিজ।
মুগ্ধের আরিশের কথায় কেন জানি মায়া হয়। হয়তো দীর্ঘ ৩ বছর এই লোকটার সাথে সংসার জীবনে ছিলো বলে এই মায়া। মেহের না করতে চাইলেও মুগ্ধের সম্মতি আছে বুঝতে পেরে কিছু বলেনা।
মুগ্ধ আরিশকে বলে,
বাড়ির বাগানে চলো। কিন্ত মাত্র ৫ মিনিট।
আরিশঃ হ্যাঁ ৫মিনিট।

আরিশ মুগ্ধকে নিয়ে বাগানে আসে। বাগানে অনেক রকম ফুল আছে কুয়াশায় ভিজে আছে সব পাতা পাপড়ি৷ আরিশ মুগ্ধের দিকে তাকিয়ে বলে,
আরিশঃ ফিরে আসা বা ক্ষমা করা কোনোটাই আমি তোমাকে বলবোনা। কারণ এর না আছে সুযোগ আর না আছে সেই অবস্থা। তবে আমি তোমাকে বলতে চাই, আমি সত্যি একজন স্বামী হিসাবে অক্ষম। কারণ আমার স্ত্রীর অক্ষমতার কথা জেনে আমি তার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলাম যেখানে অক্ষম আমি নিজে।
আরিশের কথা শুনে চমকালো মুগ্ধ। তবে আরিশ সব জেনে গেছে।
আরিশঃ হ্যাঁ আমি জেনে গেছি। সেই ডাক্তারই আমাকে জানিয়েছে সব সত্যি। সব সত্যি জানার পর নিজেকে না একটা নর্দমার কীট মনে হচ্ছে। তবে ভালোই হয়েছে আমার মতো মানুষের থেকে তুমি মুক্তি পেয়েছো।
আমি চাই তুমি ভালো থাকো। তবে আমার একটা শেষ ইচ্ছা আছে জানো। হয়তো আমার হাতে আর বেশি সময় নেই। যদি কোনোদিন খবর পাও আমি মারা গেছি আমাকে শেষ বারের মতো একবার দেখে যেও।
মুগ্ধ এবার মুখ খুললো,
মুগ্ধঃ “জানো আরিশ আমাদের বিচ্ছেদের বয়স সীমা ৮মাস হয়েগেছে। এই ৮মাসে ৮দিনও আমি শান্তিতে ঘুমাতে পেরেছিকিনা জানিনা। আমার মাথার বালিশটা জানে আমি কতরাত জেগেছি। সেই বালিশ জানে তাকে কত ভিজিয়েছি কেঁদে। সমাজের ছোট থেকে শুরু করে বুড়ো অবদি সবাই আমাকে কটু কথা শুনিয়েছে। আমি কি ভেবেছিলাম আরিশ জানো যে তুমি সবসময় আমার পাশে থাকবে। তবে ভাবেনি তুমি আমাকে মাঝ পথে ছেড়ে দেবে। তবে আমার কোনো রাগ নেউ অভিমান নেই। কেন নেই জানো, কারণ আমি তোমাকে আমার ভালোবাসায় বেঁধে রাখতে পারিনি। এটা আমার ভালোবাসার ত্রুটি। তবে আমি সব সময় চেয়েছি তুমি ভালো থাকো আর এখনো এটা চাই। মহান আল্লাহর কাছে চাইবো সে জেনো তোমায় সুস্থ করে দেয়। আসি তবে ভালো থেকো। ”

মুগ্ধ আর দাঁড়ায় না চলে আসে সেখান থেকে। আরিশ তাকিয়ে আছে তার চাওয়ার দিকে।

মুগ্ধ যেতে যেতে বিড়বিড় করে বলছে,,

“তাকে পেয়ে ভেবেছিলাম সব কিছু পেয়েগেছি”
“কিন্ত আমিতো জানতাম না,পানিতে চাঁদের আলো ক্ষণিকের জন্যেই থাকে”।

আরিশ মুগ্ধের যাওয়ার পানে তাকিয়ে ভাবছে,

” মিথ্যা সুখের পিঁছনে ছুঁটতে
“গিয়ে নিজের সত্যি সুখটা হারালাম”
“আজ আমার সত্যিকারের সুখটা আমাকে
” রেখে চলে যাচ্ছে তবে আটকানোর সাদ্ধ্য আজ আমার নেই।”

গভীর রাত,,কারো কাছে গভীর রাত ভালোবাসার, কারো কাছে শত কষ্টের আগমন ঘটার রাত আবার কারো কাছে বিষাদময় এই রাত।
বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে মুগ্ধ। আজ মাকে খুব মনে পরছে। মা থাকলে মায়ের কোলে মাথা দিয়ে খুব কাঁদতো সে। কিন্ত মা যে নেই। আচ্ছা তারার দেশে যাওয়া যায়না। তবে সে তারার দেশে যেতো মাকে দেখতো।কিন্তু এতো রুপকথার সেই গল্প নয়। মুগ্ধ চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে তখন মেহের আসলো ওর রুমে। মেহের এসে দাঁড়ালো ওর পাশে। ভাইকে দেখে আবার সামনে তাকালো মুগ্ধ।
মেহেরঃমন খারাপ তোর চড়ুইপাখি?
মুগ্ধঃনা তো।
মেহেরঃমিথ্যা বলিস না আমি জানি। জানিস চড়ুইপাখি এই দুনিয়াতে না সবাই সার্থপর। সার্থে আঘাত লাগলে কেউ আপন দেখেনা। জানিস আজ আমাদের এতো টাকা পয়সা আছে বলে আমাদের সবাই সম্মান করে। এসব না থাকলে কেউ ফিরেও দেখতোনা। জীবনে সব সময় নিজেকে স্ট্রং রাখতে হবে৷ নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।
মুগ্ধঃহুম।
মেহেরঃআয় এদিকে আয়।

মেহের মুগ্ধকে নিয়ে বিছানায় গেলো। মুগ্ধের মাথায় নিজের কোলে রেখে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। দেখতে দেখতে মুগ্ধ ঘুমিয়ে পরলো। মেহের ওকে শুইয়ে দিয়ে কপালে চুমু দিয়ে কম্বল গায়ে টেনে দিয়ে রুমের লাইট বন্ধ করে দিয়ে বেরিয়ে আসলো।

জেলের সেলে বসে আছে সালমা। কেন জানি আজ মাহফুজের জন্য কষ্ট হচ্ছে। এতো বছরের সংসার জীবনে একটু হলেও ভালোবাসে এই মানুষটাকে সে। সালমা চোখ বন্ধ করে দীর্ঘশ্বাস ফেলে।

পাপের শাস্তি আজ হোক বা কাল ঠিক পেতেই হবে৷ হ্যাঁ অন্যায় হয়েছে তবে মেরে ফেলাই অন্যায়ের বিচার নয়। আজ তা বুঝতে পারছে সালমা।

“যেখানে একটা ভুল হয়েছে সেখান থেকেই একটা নতুন শুরু করো”
“যেখানে একটা শেষ হয়েছে সেখানে থেকেই নতুন শুরু”
“যেখানে সমাপ্তি সেখান থেকেই শেষ থেকে শুরু করো”

[নন্দিনী]

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here