শেষ_থেকে_শুরু_২ #পর্ব_১৯

0
1312

#শেষ_থেকে_শুরু_২
#পর্ব_১৯
#নন্দিনী_চৌধুরী

৩৪.
সূর্য মামা উঠে গিয়েছে ধরনীর বুকে। চারিদিকে আলো পাখির ডাক শোনা যাচ্ছে। শীতের আবাসের কারণে সূর্য মামার আলো ঠিক মতো দিতে পারছেনা। শীত যেনো চাইছেনা সূর্যমামা ধরনীতে আলো দিক।

কম্বলের ভিতর থেকে মুখটা বের করে ফোন হাতে নিয়ে সময় দেখলো মুগ্ধ। মোবাইলের স্ক্রিনে বড় বড় করে সময় লেখা ৯:৫০। বাপরে!এতো সময় ঘুমিয়েছে সে ভাবতেই পারছেনা। মুগ্ধ উঠে ফ্রেশ হতে গেলো। ফ্রেশ হয়ে এসে ক্লাসের জন্য রেডি হচ্ছে সে। আজ পরিক্ষা আছে ওর। মুগ্ধ রেডি হয়ে নিচে আসলো। মেহেরের অফিসে মিটিং থাকায় সে চলে গেছে আগে। সার্ভেন্ট মুগ্ধকে খাবার দিলো। মুগ্ধ খাবার খাওয়া শেষ করে বেরিয়ে আসলো বাসা থেকে। ড্রাইভারকে বলে গিয়েছে মেহের মুগ্ধকে দিয়ে আসতে। মুগ্ধ গাড়িতে গিয়ে বসলো। ড্রাইভার ওকে ক্লাসে দিয়ে চলে আসলো। ক্লাসে গিয়ে মুগ্ধ ওর সিটে বসলো। এক্সাম শুরু হলো। ২ঘন্টা এক্সাম শেষ করে বেরিয়ে আসলো মুগ্ধ। পরিক্ষা অনেক ভালো হয়েছে ওর। মুগ্ধ আজকে সাদাফদের বাসায় যাবে বলে ঠিক করেছে। তাই সেই চিন্তা মতো রিকশা নিয়ে বেরিয়ে পরলো সাদাফদের বাসায় যাওয়ার জন্য। সাদাফদের বাসায় এসে মুগ্ধ দরজায় বেল দিতেই সাদাফের মা এসে দরজা খুললো। মুগ্ধকে এতোদিন পর দেখে সেও খুশি হলো। মুগ্ধকে ভিতরে নিয়ে নিজেদের মধ্য কথা বলে প্রাপ্তিকে এনে দিলো মুগ্ধের কোলে। প্রাপ্তি এতোদিন পর মায়ের গন্ধ পেয়ে যেনো খুশি হয়ে গেলো। মুগ্ধ প্রাপ্তিকে আদর করছে আর প্রাপ্তির সাথে কথা বলছে।

~এদিকে~

মেহের আর রুহি একটা জায়গায় এসেছে। জায়গাটা ঢাকার বাহিরে অনেক দূরে। বেশ সুন্দর জায়গাটা। চারিদিকে সবুজ ঘাস,ফুল গাছ,আর পাখি সব মিলিয়ে রুহির অনেক ভালোলেগেছে জায়গাটা। রুহি মেহেরের দিকে তাকিয়ে বললো,
রুহি:স্যার আমরা এখানে কেনো এসেছি?
মেহের:অপেক্ষা করো দেখতেই পারবা কেনো আসছি।
রুহি নিজের মতো প্রকৃতি দেখছে তখন মেহের ওকে পিঁছন থেকে ডাক দিলো।
মেহের:মিস রুহি।
মেহেরের ডাকে রুহি পিঁছনে ঘুরে অবাক হয়ে গেলো। কারন মেহের একটা গোলাপ ফুলের তোড়া হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে রুহির সামনে। রুহি কিছু বলবে তার আগে মেহের বলা শুরু করে,
মেহের:সিনেমা,নাটক,উপ্যনাসের মতো করে নিজের মনের কথা বলতে পারবোনা আমি। কারণ ওসব আমার কাছে নেকামি লাগে। তাই আমি আমার মনের কথা সাফ ভাবেই বলে দিচ্ছি। আমি আপনাকে ভালোবাসি। এই ভালোবাসা কিভাবে সৃষ্টি হলো জানিনা। তবে আমি আপনাকে ভালোবাসি। আপনি কি আমাকে বিয়ে করবেন?
মেহেরের কথায় যেনো রুহি আরো অবাক আর চমকে গেলো। রুহি আশাই করেনি এমন কিছু। রুহি কাপাকাপা গলায় বললো,
রুহি:আমিও আপনাকে ভালোবাসি কিন্তু ভয়ে কোনোদিন সেটা বলতে পারিনি। তবে আজ আমি বলছি আমিও আপনাকে ভালোবাসি। আমি আপনাকে বিয়ে করতে রাজী।
রুহি মেহেরের হাত থেকে গোলাপগুলো নিয়ে মেহেরকে জরিয়ে ধরলো। মেহেরও জরিয়ে ধরলো তার প্রিয়তমাকে। আজ পুর্ন হলো দুজনের ভালোবাসা। পেয়েগেলো দুজনেই দুজনার ভালোবাসা।

৩৫.
সাদাফ সারাদিনপর বাসায় আসলো। ইদানিং তার ভালোলাগেনা বাসায় অফিস কোথাও। সারাদিন মুগ্ধের কথাই সে ভেবে যাচ্ছে। মুগ্ধকে দেখার জন্য তার ভেতর ছোটফোটানি হচ্ছে। কিন্তু চাইলেও সে পারছেনা মুগ্ধকে দেখতে। সাদাফ বাসায় এসে নিজের রুমে গিয়ে অবাক! কারণ তার সামনে মুগ্ধ দাঁড়িয়ে আছে প্রাপ্তিকে নিয়ে। সাদাফ নিজের ঠোঁট কামড়ে হেঁসে বলে,,
“প্রেয়শী তোমাকে নিয়ে এতোই ভাবনায় আছি যে দেখো এখন তোমাকে নিজের চোখের সামনেও দেখা শুরু করেছি। ইশশশ যদি এটা সত্যি হতো। কিন্তু আমিতো জানি এটা আমার কল্পনা। তবে সমস্যা নেই। বাস্তবে তুমি দূরে থাকলেও আমার কল্পনায় তুমি আমার কাছেই থাকো। ”
সাদাফ এসব বিড়বিড় করছে এর মাঝে মুগ্ধ বলে উঠে,
মুগ্ধ:কি বিড়বিড় করছেন তখন থেকে?
এবার মুগ্ধের আওয়াজ শুনে চমকে গেলো সাদাফ। এহ! এটা কল্পনা হলে মুগ্ধ কথা বলছে কিভাবে? সাদাফ এবার নিজের হাতে নিজে চিমটি কাটালো।
সাদাফ:আহ! উইমা এটা স্বপ্ন না।
মুগ্ধ: কি স্বপ্ন? কিসের স্বপ্ন। কি বলছে এসব?
সাদাফ: না মানে তুমি সত্যিই এখানে?
মুগ্ধ: না আমার ভূত এখানে?।
সাদাফ:তাইতো ভাবছিলাম প্রথমে।
মুগ্ধ:কি! আপনি আমাকে ভূত বলছেন?
সাদাফ:তওবা তওবা আস্তাগফিরুল্লাহ! আমি আর তোমাকে ভূত এমন সাহস আমার হবে নাকি। (আমিতো জানি তুমি ভূত না পেত্নি)[মনে মনে]
মুগ্ধ:ফাউল কথা রেখে যান ফ্রেশ হন। আন্টি নিচে খাবার নিয়ে অপেক্ষা করছে।
সাদাফ মাথা নাড়িয়ে কাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে চলে আসলো। আর মুগ্ধ সাদাফের কান্ড দেখে হাঁসলো।

খাবার টেবিলে খাবার খাচ্ছে সাদাফ,মুগ্ধ,সাদাফের মা। মুগ্ধের কোলে প্রাপ্তি। মুগ্ধ একটু করে মাছের কাঁটা বেছে প্রাপ্তির মুখে দিচ্ছে। খাওয়া শেষ করে মুগ্ধ প্রাপ্তিকে ঘুম পারিয়ে দিলো। এবার ওর বাসায় যাওয়ার পালা। মুগ্ধ রেডি হয়ে বেরোতে নিলে সাদাফ বলে,
সাদাফ:আমি দিয়ে আসছি চলো।
মুগ্ধ: না থাক তার দরকার নেই।
সাদাফ:দরকার আছে নাকি নেই সেটা কি আমি জানতে চেয়েছি? বলেছি আসতে আসবা।
মুগ্ধ আর কথা না বাড়িয়ে সাদাফের সাথে গাড়িতে বসলো। সাদাফ গাড়ি ড্রাইভ করছে আর আড়চোখে মুগ্ধকে দেখছে।
বাসার সামনে আসতেই গাড়ি থামালো সাদাফ। মুগ্ধ গাড়ি থেকে বেড়িয়ে গেলো।
মুগ্ধ বাসার গেটে এসে একবার পিঁছনে তাকালো সাদাফ তখনো দাঁড়ানো গাড়ি নিয়ে।
মুগ্ধ চলে যায় ভিতরে। মুগ্ধকে যেতে দেখে সাদাফ গাড়ি ঘুরিয়ে চলে যায়। মুগ্ধ বাসায় এসে নিজের রুমে গিয়ে বসলো। মুগ্ধ জানেনা কি করা উচিত তার। জীবনকে কি আরেকটা বার সুযোগ দেওয়া উচিত। কিন্তু যদি আবার সে ঠোকে যায়। এই দোটানায় যে মুগ্ধ শেষ হয়ে যাচ্ছে। পারছেনা সাদাফের হাতে হাত বাড়িয়ে দিতে। মুগ্ধ চুপচাপ বসে ছিলো। মেহের আসলো ওর রুমে। বারান্দা থেকে মেহের সব দেখেছে। আর এটাও বুজেছে সাদাফ মুগ্ধকে ভালোবেসে ফেলেছে। ছেলে হিসাবে সাদাফকে অপছন্দ নয় মেহেরের নিজেরও। তবে বোনের অমতে সে কিছুই করবেনা। মেহের গিয়ে মুগ্ধের পাশে বসলো। মুগ্ধের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো,,

মেহের:দোটানায় থাকিস না। মনের কথা শোন। মন কখোনো মিথ্যা বলেনা। মন যেটা বলে সেটাই কর। জীবনে অনেক কিছুই হয়। তাই বলে কি জীবনে আর এগিয়ে নেওয়া যায়না তা না। সবাই খারাপ হয়না। সব খারাপের মাঝে ভালো থাকে। আবার সব ভালোর মাঝেও খারাপ থাকে। তাই মন যেটা বলছে সেটাই কর। মনের ঊর্ধে যাস না।

ভাইয়ের কথা শুনে অবাক হয়ে তাকায় মুগ্ধ। প্রশ্নসুচোক চোখে ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে আছে। মেহের সেটা বুঝতে পেরে বলে,

মেহের:আমি সব জানি। তাইতো বলছি মন যা বলে তাই কর। মনে রাখিস আমি তোর পাশে আছি তাই ভয় পাওয়ার কিছু নেই।
মুগ্ধ একটা নিশ্বাস ছেড়ে বললো,,
মুগ্ধ:ভয় হয় ভাইয়া। এতো কিছু দেখে নিয়েছি নিজের চোখে। যে জীবনকে নতুন করে সুযোগ দিতেই ভয় করে।
মেহের:সময় নে। যতটা সময় লাগে সময় নে।

মেহের উঠে চলে গেলো রুম থেকে। আর মুগ্ধ উঠে ফ্রেশ হয়ে বিছানায় এসে শুয়ে ভাবতে লাগলো।

পরেরদিন,,,,,
মাহফুজ সালমার সাথে জেলে দেখা করতে এসেছে। হাজার হোক তার প্রানপ্রিয় স্ত্রী সালমা। তাকে খুব ভালোবাসে যে তিনি। সালমা তাকে না ভালোবাসলে কি হবে সেতো ভালোবাসে। মাহফুজ সালমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। আজ সালমার চোখ লজ্জায় মাহফুজের সাথে মেলাতে পারছেনা। চুলে পাক ধরলেও ভালোবাসায় একটু কমতি রাখেনি মাহফুজ। এখনো এই পাকা চুলের মাঝে সেই আগের মাহফুজ আছে। মাহফুজ সালমাকে বললো,

মাহফুজ: যদি একবার আমাকে বলতে সব আমি তোমাকে সাহায্য করতাম। একবার আমাকে বলা যেতোনা সবটা সালমা। আজ যদি সব আমাকে বলতে আমরা মিলে দুজনে কোনো উপায় বের করতাম। কিন্তু এখন! জানিনা তোমাকে মুক্তি দেওয়া হবে কিনা। তবে একটা কথা বলবো যদি পারো তবে এখান থেকে বেরোনোর সুযোগ পেলে মনের কালিটা ধুঁয়ে এসো। আমার ঘরের দুয়ার সব সময় তোমার জন্য খোলা আছে।
সালমা আজ কি বলবে জানেনা তবুও বললো,
সালমা:মেয়ে দুটোকে দেখে রেখো। একজন তো ওই অবস্থায় আরেকজন মরণ রোগে ভুগছে দুজনকে তোমার কাছে আগলে রেখো। আর পারলে আমায় মাফ করো।

মাহফুজ আর কিছু বলেনা চোখজোড়া মুছে বেরিয়ে আসে।

কেটে গেলো আরো ২টা মাস।

এই ২মাসে সাদাফ মুগ্ধের সম্পর্ক অনেকটা এগিয়েছে। যদিও মুগ্ধ এখনো সাদাফকে মেনে নেয়নি তবে বন্ধুর মতো তারা এক সাথে আছে। এদিকে মেহের রুহির বিয়ের কথা বার্তা ঠিক হচ্ছে।

সকালে মুগ্ধ মেহের টেবিলে বসে খাবার খাচ্ছে। তখন মেহেরের ফোনে কল আসলো। মেহের ফোন রিসিভ করে যা শুনে তা শুনে সে অবাক হয়। মেহের ফোন কেটে চুপ করে বসে থাকে। মুগ্ধ ভাইকে এভাবে দেখে বলে,
মুগ্ধ:ভাইয়া কি হয়েছে?
মেহের:একটা ঘটনা ঘটেগেছে।
মুগ্ধ:কি? কোনো খারাপ কিছু। চাচ্চু ঠিক আছেতো?
মেহের:ওদিকে সব ঠিক আছে আসলে আরিশ….
মুগ্ধ’আ.আরিশ কি?
মেহের:আরিশ আজকে সকালে মারা গেছে!

মেহেরের কথা শুনে থমকে গেলো মুগ্ধ। কেমন জানি একটা কষ্ট হচ্ছে মুগ্ধের। কানে এসে বাজছে আরিশের বলা কথাটা,,

“যদি শোনো আমি মারা গেছি,তবে একবার এসে দেখে যেও আমার লাশটাকে।”

সত্যি আরিশ চলে গেলো তবে!

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here