অদ্ভুত_মেয়ে (season 2) Part- 41

0
3064

অদ্ভুত_মেয়ে (season 2)
Part- 41
Writer: #Nur_Nafisa
.
.
সকালে নাস্তা করেই আজ ইমরানকে টেনে সমুদ্রের তীরে নিয়ে এসেছে। তারউপর বিশ্বাস নেই! কালকের মতো আবার বলবে ঘুমিয়ে থাকো!
ইমরান- এতো সকালে ভিজবে!
নাফিসা- হ্যাঁ সকালেই ভিজবো। তুমি নাহয় দুপুর হতে দিবে না। একেবারে সকাল থেকে বিকেল বানিয়ে দিবে!
ইমরান- হাহাহা…. আচ্ছা এখন হাটাহাটি করি, একটু পর পানিতে নামবো।
নাফিসা- ওকে।
দুজনেই কথা বলতে বলতে হাটতে লাগলো। বাচ্চারা ফুটবল খেলছে বালিতে! অভিভাবকগন বসে আছে ছাতার নিচে। নাফিসার সামনে আসতেই লাথি দিয়ে বল এগিয়ে দিলো। যে বাচ্চাটি বল ধরেছে সে আবার নাফিসার দিকেই এগিয়ে দিলো। নাফিসা বুঝতে পেরে হেসে আবার অন্যজনকে দিলো সেও রিটার্ন নাফিসার দিকেই দিলো। নাফিসাও মজা পেয়েছে! ইমরানের হাত ছেড়ে সে বাচ্চাদের সাথে বল খেলতে লাগলো। ইমরান দাড়িয়ে দাড়িয়ে দেখছে তাকে। দশ মিনিটের মতো অতিবাহিত হতেই আবার নাফিসাকে টেনে নিয়ে এলো।
ইমরান- হয়েছে অনেক। এবার তাদের খেলার সুযোগ দাও।
নাফিসা- মজাই তো লাগে! এতো কিছু আনছো একটা বল নিয়ে এলে না!
ইমরান- এতো বল খেলতে হবে না!
নাফিসা- আমি তো এতোবল খেলতে চাই নি! ফুটবল খেলতে চেয়েছি!
ইমরান হেসে উঠলো নাফিসার প্যাচানো কথায়। নাফিসা সমুদ্রের তীর ঘেঁষে হাটছে ইমরানের সাথে। ঢেউ এসে পা ভিজিয়ে দিচ্ছে তাদের। খালি পায়ে বালিতে হাটতে ভীষণ ভালো লাগছে! ঢেউয়ের সাথে ভেসে আসা ছোট ছোট ঝিনুক কুড়াতে লাগলো নাফিসা! সাথে এগুলো রাখার জন্য কিছু না থাকায় ইমরানের পকেট ভর্তি করে ফেলছে! একপর্যায়ে দুজনেই পানিতে নেমে গোসল করতে লাগলো। নাফিসা প্রথমে সেলাইন খেয়ে ফেলেছে ঢেউয়ের মাঝে ডুব দিতে গিয়ে। পরে ইমরান শিখিয়ে দিলো কিভাবে ডুব দিবে। অনেক্ক্ষণ ঝাপাঝাপি করে ইমরানের জোরাজুরিতে উঠে এসে বালিতে বসে পড়লো। একটু জিরিয়ে ইমরান নাফিসাকে এখানে বসিয়ে দুইটা ডাব কিনে আনলো। দুজনেই ডাব খাওয়া শেষ করলো।
ইমরান- আজ আবার লাথি দিয়ে পালোয়ানগীরী দেখাতে যেও না!
নাফিসা মুচকি হেসে হাতে ঢিল দিয়ে ডাবের খোলস পানিতে ছুড়ে মারলো। পরবর্তী ঢেউ এসে সেটা শুন্য করে দিলো! নাফিসা ইমরানকে বললো,
নাফিসা- বলতে পারবে এটা কতো দূর গেছে?
ইমরান- শূন্য কিলোমিটার!
নাফিসা- হিহিহি! তাহলে, খুজে আনো। যাও….
ইমরান- আমার কি লাভ!
নাফিসা তার কানে কানে ফিসফিস করে বললো,
নাফিসা- এই সমুদ্রের তীরে একটা মিষ্টি পাবে!
ইমরান ঠোঁটের কোনায় হাসি ফুটিয়ে উঠে গেলো। নাফিসা বসে বসে হাসতে লাগলো। ঢেউ এটা কোন দুনিয়ায় নিয়ে গেছে তার কি জানা আছে! যেখানে খোলসটা ফেলেছে ঢেউ আসার সাথে সাথে ইমরান ডুব দিয়ে হাতে করে খোলস তুলে দাড়ালো। নাফিসা হা হয়ে গেছে! এটা কিভাবে সম্ভব! এবার তো তাকে সত্যিই মিষ্টি দিতে হবে। ইমরান মুখে দুষ্টুমি হাসি ফুটিয়ে উঠে আসছে। আর নাফিসা পালানোর জন্য বসা থেকে উঠে দিলো এক দৌড়! ইমরান খোলস ফেলে দৌড়ে নাফিসাকে ধরে ফেললো। দুজনেই বালিতে শুয়ে পড়েছে হাসতে হাসতে। ইমরান মাথা তুলে একহাতে নাফিসার মুখে এসে ছড়িয়ে পড়া ভেজা চুল সরিয়ে দিলো।
ইমরান- কোথায় আমার মিষ্টি?
নাফিসা- আগে বলো এটা পেলে কিভাবে?
ইমরান- ঢেউ তো এটাকে নিয়ে যেতে পারেনি! আমি লক্ষ্য করেছি ডাবের খোলা মুখ সমুদ্রমুখী ছিলো। যার ফলে ঢেউ আসার সাথে সাথে পানিতে ভরপুর হয়ে বালিতে গেথে গেছে আর ঢেউয়ের ধাক্কায় বালির আস্তর পড়ে সমান হয়ে ঢেকে গেছে। এবার আমার পাওনা দাও।
নাফিসা- ছি, আশেপাশে লোকজন আছে!
ইমরান- তো কি হয়েছে, যখন বলেছো তখনও লোকজন ছিলো। তাছাড়া লোকজন অনেক দূরে, কেউ আমাদের দিকে তাকিয়ে নেই! হারি আপ!
নাফিসা- রিসোর্টে ফিরে।
ইমরান- উহুম, এখানে।
ইমরান তাকে ছাড়ছে না। ইমরানের মাথাটা টেনে তার কপালে ঠোঁটের ছোয়া দিলো। ইমরানও নাফিসার কপালে ঠোঁটের ছোয়া দিলো। দুজনেই আকাশ পানে তাকিয়ে শুয়ে আছে। নীল আকাশে সাদা কালো মেঘ ভেসে যাচ্ছে। সমুদ্রের ঢেউ তীরে এসে আছড়ে পড়ছে আর বাতাসের সাথে সমানতালে সুর সৃষ্টি করছে। ভেজা কাপড় শরীরেই অর্ধেক শুকিয়ে গেছে। ইমরান উঠে নাফিসাকে টেনে তুললো। আচমকা কোলে নিয়ে হাটা শুরু করলো।
নাফিসা- এই কি করছো, নামাও! এতো লোকজনের সামনে কোলে করে নিয়ে যাবে!
ইমরান- আজ পায়ে ব্যাথা পাওনি?
নাফিসা- না, নামাও।
ইমরান- হাহাহা… কেউ দেখবে না। এখানে তোমাকে আর আমাকে দেখার জন্য কেউ আসেনি৷ সবাই নিজেদের নিয়ে ব্যস্ত যেমনটা আমরা আমাদের নিয়ে।
ইমরান নাফিসাকে কোলে নিয়েই রিসোর্ট পর্যন্ত এসেছে। নাফিসার জোরাজুরিতে এখানে এসে নামিয়ে দিলো। রুমে এসে নাফিসা আগে বাথরুমে যাওয়ার জন্য দৌড় দিলো কিন্তু ইমরান আগেই বুঝতে পেরেছে তার চালাকি তাই সে সেটা হতে দিলো না। নাফিসার সাথে সাথেই ঢুকে পড়েছে। দুজনেই একসাথে গোসল করে বেরিয়েছে। ছোট খাটো একটা ঘুম দিলো। দুপুরে নামাজ পড়ে লাঞ্চ করার জন্য বেরিয়েছে। নাফিসা এখন শাড়ি পড়ে আছে। থাইল্যান্ড থেকে আনা কালো শাড়িটা নিয়ে এসেছে ইমরান। আর নীল শাড়ি তো নাফিসা বিয়ে বাড়ি থেকে পড়েই এসেছে। নাফিসা কালো শাড়ি আর ইমরান সাদা শার্ট কালো জিন্স পড়েছে। খুব ভালো লাগছে দুজনকেই। ইমরানকে সাদা শার্ট পড়লে কেমন যেন ফ্রেশ ফ্রেশ মনে হয়, তাছাড়া এখন ঘুম থেকে উঠে এসেছে! নাফিসা চোখ সরাতে পারছে না তার দিক থেকে! সকালে এতো দোকান ছিলো না এখন অনেক বসেছে। বিকেলে সবাই হাটতে আসে হয়তো সেজন্যই এখন বসেছে। ইমরান ঝিনুকের একটা মালা আর একটা ব্রেসলেট কিনে পড়িয়ে দিলো নাফিসাকে। নিজে একটা কালো রঙের সাহেবী টুপি কিনে পড়লো আর নাফিসাকে একটা গোলাপি রঙের মেয়েদের টুপি কিনে পড়িয়ে দিলো। অনেক সুন্দর টুপিগুলো। নাফিসা হিমা হিয়ার জন্য আরও দুইটা নিয়ে নিলো, সাহেবী টুপিও দুইটা কিনতে বলেছে রেহান সাঈদের জন্য কিন্তু ইমরান একটা কিনেছে।
নাফিসা- একটা কেন কিনলে?
ইমরান- আমার মাথায়ই তো একটা আছে। দুইটা দুজন নিয়ে নিবে।
তারা ঘুরেফিরে ইফাজ, হিমেল, রিয়াদ মাহির জন্য কিছু খেলনা কিনলো। সমুদ্রের তীরে এসে খেলনা একপাশে রেখে তারা সেলফি তুললো। আবার অন্যের সাহায্যে কাপল ফটো তুললো। দুজনকেই বেশ লাগছে! খেলনা রিসোর্টে রেখে আসরের নামাজ পড়ে আবার বেরিয়েছে। হঠাৎ দেখা হয়ে গেলো ইমা আপু, শান্তা আপু, ফাহিম ভাইয়া ও মাহিন ভাইয়ার সাথে! সাথে ইফাজ আর মাহি ও! ইমরান নাফিসা একে অপরের দিকে তাকালো! সবাই অবাক!
শান্তা- তাহলে তোমরা এখানে পালিয়েছো!
নাফিসা- হোয়াট এ সারপ্রাইজ! তোমরা এখানে কখন এলে!
ইমা- আজ সকালে এসেছি। তোমরা একাই ঘুরবা আর আমরা বসে থাকবো! ফোন দিয়েছিলাম রিসিভ করছনি কেন?
ইমরান- নেটওয়ার্ক প্রব্লেম।
নাফিসা- আর কে এসেছে?
শান্তা- আর কেউ না। ফাহিম ভাইয়া প্ল্যান করে রেখেছিলো একসাথে ঘুরতে আসবো আর তোরা আগেই এসে পড়েছিস!
নাফিসা- প্ল্যানের কথা জানতাম নাকি! আমি এখানে আসবো সেটাও জানিনি। হঠাৎ করেই কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে সারপ্রাইজড! বাকিগুলোকে নিয়ে এলে না।
ইমা- না, হিমা হিয়ার পরীক্ষা শেষ হোক। আবার একসাথে আসবো ইনশাআল্লাহ।
নাফিসা- কতদিন থাকবে?
মাহিন- কাল এখানে থেকে পরশু ঢাকা ব্যাক করবো।
নাফিসা- ওয়াও! মজা হবে অনেক!
ইমরান- মজা অনেক হয়েছে। কালকেই ফিরবো আমরা।
নাফিসা- নায়ায়ায়া! আপুদের সাথে যাবো।
ইমরান- আপুদের সাথে এসেছো?
নাফিসা- সেটা বড় কথা না, যাবো একসাথে। ব্যাস!
ফাহিম ভাইয়া ও মাহিন ভাইয়া সহ ইমরান নাফিসা স্পীড বোটে সেন্ট মার্টিন দিপে গেছে। আপুরা ভয় পায় আবার বাচ্চাদের জন্য তাদের নিয়ে যাওয়া হয়নি।
আরও দুদিন কাটিয়ে সবাই একসাথে মজা করতে করতে চিটাগং থেকে ট্রেনের মাধ্যমেই ঢাকা ফিরেছে। সেখান থেকে ইমরান নাফিসা নারায়ণগঞ্জ চলে এসেছে।
কিছুদিন পর নাফিসার টেস্ট এক্সাম শুরু হওয়ায় ঢাকা এসেছে। এর মাঝে একদিন ইমরানও অফিস থেকে এখানে এসেছে। শান্তা আপুও এখানে আছে। শুক্রবার দিনটাও এখানেই কাটাবে ইমরান। মাহিন ভাইয়ার সাথে জুমার নামাজ পড়ে এসে খেয়েদেয়ে তারা শালা ভায়রাভাইয়েরা ঘুরতে বেরিয়েছে। আর নাফিসা বই পড়তে পড়তে শেষ। কয়েকদিন পড়াশোনায় বিরতি থাকায় অনেক কষ্টকর হয়ে যাচ্ছে। তাছাড়া ভার্সিটিতে ক্লাস করেনি তেমন। রাতে ইমরান মাহিকে কোলে নিয়েছিলো। মাহি হিসু করে তার প্যান্ট ভিজিয়ে দিয়েছে! নাফিসা পড়তে বসেছিলো। মাহিকে তার বাবার কাছে দিয়ে নাফিসাকে এসে জিজ্ঞেস করলো,
ইমরান- আমার প্যান্ট কোথায় রাখছো?
নাফিসা- তুমি তো পড়েই আছো।
ইমরান- যেটা ধুয়েছো সেটা কোথায়?
নাফিসা- কেন?
ইমরান- মাহি হিসু করে দিছে।
নাফিসা- নিজে করে মাহির দোষ দিচ্ছো! হিহিহি….
ইমরান চোখ কুচকে তাকাতেই নাফিসা বললো,
নাফিসা- আমার দিকে এভাবে তাকালেই কি হবে! হিমেল রিয়াদ স্বাক্ষী তুমি প্যান্টে হিসু করে দাও!
নাফিসা অট্টহাসিতে ফেটে পড়লো। আর ইমরান তার কাছে এসে বললো,
ইমরান- হ্যাঁ, আর সেই প্যান্ট নাফিসাই ধুয়ে দেয়। এবার প্যান্ট নিয়ে আসো।
নাফিসা হাসতে হাসতে বললো,
নাফিসা- তোমার প্যান্ট ভেজা। আমার মনে ছিলো না ধুয়ে দিতে! সন্ধ্যার দিকে ধুয়েছিলাম!
ইমরান- এখন আমি পড়বো কি!
নাফিসা- উচিত হইছে, হুট করেই চলে আসো কেন! বাসা থেকে কাপড় নিয়ে এলে না! এখানে একটা রেখেছি প্রয়োজনে যাতে কাজে লাগে! বাবার লুঙ্গি এনে দিবো?
নাফিসা বাবার লুঙ্গিই এনে দিলো। ইমরানকে লুঙ্গি পড়তে দেখে নাফিসা নিজেই হাসতে হাসতে ফিট হয়ে যাচ্ছে। সেই প্যান্ট ধুয়ে দিয়েছে। যখনি দেখছে তখনই হাসছে। ইমরান তাকে ধরে বললো,
ইমরান- এতো হাসির কি হয়েছে! আমি কি মেয়েদের ড্রেস পড়েছি!
নাফিসা- উহুম, আমার হাসি হাসি পাচ্ছে তাই তো হাসছি! হিহিহি…
ইমরান- তোমার বাবা মামারাও তো পড়ে, কই, তাদের দেখে হাসো?
নাফিসা- তাদের দেখে অভ্যস্ত, তোমাকে তো আর কখনো দেখিনি এমন বেশে! হিহিহি…
ইমরান বিরক্তি নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। এখানে থাকলে নাফিসার পড়াও ডিস্টার্ব হবে! নাফিসা আগের প্যান্ট গ্যাসের চুলায় শুকিয়ে এনে ঘুমানোর আগে দিলো।
নাফিসা- নাও, শুকিয়ে গেছে। চেঞ্জ করে নাও।
নাফিসা গিয়ে শুয়ে পড়লো। ইমরান চেঞ্জ না করেই এসে শুয়ে পড়লো।
নাফিসা- চেঞ্জ করে আসো।
ইমরান- কেন? আমার তো প্রব্লেম হচ্ছে না।
নাফিসা- এটা পড়ে ঘুমাবে!
ইমরান- হুম।
নাফিসা- না চেঞ্জ করে আসো।
ইমরান- কেন?
নাফিসা অন্যদিকে ঘুরে বললো,
নাফিসা- আমার কেমন কেমন যেন লাগে!
ইমরান- কেমন লাগে?
নাফিসা- লজ্জা লাগে!
ইমরান- হাহাহা….আমি পড়েছি আমার লজ্জা লাগে না আর তোমার লজ্জা লাগে!
নাফিসা- হুম। যাও তো!
ইমরান- তাহলে তো মোটেও যাচ্ছি না। ইনশাআল্লাহ কাল সকালে! হাহাহা….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here