হৃদয়_দিয়ে_ভালোবাসিব,পর্বঃ- ২
লেখকঃ- Tamim
–আচ্ছা মায়া, গতকাল তামিম ভাইয়া চলে যাওয়ার সময় তুই উনার দিকে তাকিয়ে ছিলি কেন.?
ভার্সিটি ছুটির পর জান্নাত আর মায়া একটা কফিশপে কফি খেতে আসে। কফির অর্ডার দিয়ে দুজনেই চুপ করে বসে ছিল, ঠিক তখনই জান্নাত মায়াকে উদ্দেশ্য করে কথাটা বলে। জান্নাতের কথা শুনে মায়ার গতকালের কথা মনে পরে গেল। উনি তো নিজেই আমার দিকে তাকিয়ে ছিলেন, আর যখন আমার উনার উপর চোখ পরল ওমনি উনি সেখান থেকে তাড়াতাড়ি করে চলে যান। কিন্তু আমি যে উনার চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে ছিলাম এটা জান্নাত কিভাবে দেখল.? (কথাগুলো মনে মনে ভাবছে মায়া)
জান্নাতঃ কিরে এতো কি ভাবছিস.? (হালকা ধাক্কা দিয়ে)
মায়াঃ হে, না কই কি ভাবছি.?
জান্নাতঃ তো আমার প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছিস না যে.?
মায়াঃ ওই ছেলেটা তাহলে তামিম ভাইয়া ছিলেন.! আমি তো চিনতেই পারিনি উনাকে, তাইতো উনার দিকে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করছিলাম ছেলেটা কে।
জান্নাতঃ সত্যি তুই উনাকে চিনতে পারিস নি.? নাকি আমার কাছে মিথ্যা বলছিস.? (সন্দেহের চোখে)
মায়াঃ আজব তো.! এইখানে মিথ্যা বলার কি আছে.? মনে হয় উনাকে আমি যোগ যোগ ধরে দেখে আসছি যে একবার উনার ব্যাক সাইট দেখলেই চিনে ফেলবো উনি কে।
জান্নাতঃ তা অবশ্য ঠিক, উনার সাথে তো তোর গতকালই দেখা হলো মাত্র। কিন্তু আমার তো অন্যকিছু মনে হচ্ছে।
মায়াঃ কি মনে হচ্ছে.?
জান্নাতঃ মনে হচ্ছে তুই তামিম ভাইয়ের প্রেমে
মায়াঃ ওহ জাস্ট স্টপ ইট, কি আবোল তাবোল বলছিস এইসব। প্রথম দেখাতেই প্রেম হয় নাকি.? হয় তো ভালো লাগা।
জান্নাতঃ তার মানে তামিম ভাইয়াকে তোর ভালো লেগে গেছে.!
মায়াঃ আজব তো.! চিনি না জানি না একজনকে আমার ভালো লাগবে কেন.?
জান্নাত আর কিছু বলার আগেই একটা ছেলে এসে তাদের পাশে দাড়ালো আর বললো, আমি কি বসতে পারি.?
হঠাৎ একটা ছেলের উপস্থিতিতে + ছেলেটার এমন কথায় জান্নাত আর মায়া দুজনেই চমকে উঠলো আর মাথা তুলে ছেলেটার দিকে তাকাল। ছেলেটাকে দেখে তারা দুজনেই বেশ অবাক হলো। কারণ ছেলেটা হলো ফারহান যার সাথে গতকাল জান্নাতের এনগেজমেন্ট হয়েছে। ফারহানকে দেখে জান্নাত বলে উঠলো…
জান্নাতঃ আরে আপনি এইখানে.!
ফারহানঃ কেন আমার আশা নিষেধ নাকি.?
জান্নাতঃ তা নয়, কিন্তু হঠাৎ এই কফিশপে কেন এলেন.?
ফারহানঃ আপনারা যেই কারণে এসেছেন আমিও তো সেই কারণেই এসেছি। আর আমাকে কি বসতে বলবেন না নাকি.?
জান্নাতঃ অপ্স সরি, বসেন না আপনি দাঁড়িয়ে আছেন কেন।
ফারহান জান্নাতের পাশের চেয়ারে বসে পরলো।
মায়াঃ কি দুলাভাই কোনো গার্লফ্রেন্ডের সাথে দেখা করতে আসছিলেন নাকি.? (মজা করে)
জান্নাতঃ ওই এইসব কি বলিস, বউ থাকতে গার্লফ্রেন্ডের সাথে দেখা করতে আসবে মানে.? (খানিকটা রেগে কথাটা বললো)
মায়াঃ আরে দুলাভাইয়ের সাথে কি একটু মজাও করতে পারব না নাকি.?
জান্নাতঃ তোর এই ধরনের মজার গুষ্ঠি কিলাই।
ফারহানঃ আরে আরে কি শুরু করলেন আপনারা, আমি তো বুঝেছি উনি আমার সাথে ফান করছেন। আপনি সিরিয়াস হচ্ছেন কেন.? তা ছাড়া এমনিতেও আমার কোনো মেয়ে বন্ধু নেই, গার্লফ্রেন্ড আসবে কোথা থেকে।
জান্নাতঃ তাহলে হঠাৎ এইখানে আসার কারণটা কি শুনি.?
ফারহানঃ এইতো আব্বুর অফিসের একটা কাজে এসেছিলাম। এর আগেও একবার এইখানে এসে এই কফিশপের কফি খেয়ে গেছিলেন, সেই থেকে এইখানের কফির স্বাদটা আর ভুলতে পারিনি। তবে ব্যস্ততার জন্য এইখানে আর আসা হয়না, আজকে এসেছি যখন ভাবলাম এইখান থেকে এক কাপ কফি খেয়েই যাই তাই এইখানে আসা। আর এসে দেখি আপনারাও এইখানে আছেন তাই আপনাদের কাছে চলে আসলাম।
জান্নাতঃ ওহ আচ্ছা, তো আপনার জন্য একটা কফি অর্ডার দেই.?
ফারহানঃ লাগবে না আমি আসার সময় একটা ওয়েটারকে বলে এসেছি আমাদেরকে কফি বানিয়ে দিতে। কিন্তু ছেলেটা বললো আপনারা নাকি ২টা কফি অর্ডার দিয়ে ফেলেছেন তাই আমি নিজের জন্যই একটা দিয়ে আসলাম।
জান্নাতঃ ভালো করেছেন।
ফারহানঃ ভার্সিটিতে এসেছিলেন নাকি এমনিই কফি খেতে এসেছেন.?
জান্নাতঃ ভার্সিটিতে এসেছিলাম, ছুটির পর এইখানে আসলাম, আমরা প্রায়ই এইখানে এসে কফি খেয়ে যাই।
ফারহানঃ ওহ ভালো তো।
কিছুক্ষণ পর একটা ওয়েটার এসে তাদের টেবিলে ৩টা কফি দিয়ে চলে গেল। সবাই যার যার মতো কফি খাওয়া শুরু করলো। জান্নাত আর ফারহান একে অপরের সাথে গল্প করতে করতে কফি খাচ্ছে আর মায়া চুপ করে তাদের কথা শুনতে শুনতে কফি খেয়ে যাচ্ছে।
–আরে বাহ তোমরাও দেখি এইখানে.!
হঠাৎ কোথা থেকে যেন তামিম এসে তাদের উদ্দেশ্যে কথাটা বললো। তামিমকে এইখানে দেখে তারা সবাই কিছুটা অবাক হলো।
জান্নাতঃ তুমিও কি এইখানে কফি খেতে এসেছ নাকি.?
তামিমঃ হ্যাঁ আমি আর শুভ এসেছিলাম কিন্তু হঠাৎ কে যেন ওকে ফোন দেয় আর ও আমাকে রেখেই চলে যায়।
জান্নাতঃ এ কেমন বন্ধু তোমার, যে তার বন্ধুকে একা রেখেই অন্য জায়গায় চলে যায়.?
তামিমঃ ব্যাটা গেছে ওর গার্লফ্রেন্ডের সাথে দেখা করতে, ওইখানে আমায় নিয়ে যাবে কেমনে (মনে মনে)। তা ফারহান এইখানে কীভাবে এলে.?
ফারহানঃ আব্বুর অফিসের একটা কাজে এসেছিলাম, কাজ শেষ করে এইখানে কফি খেতে এসে দেখি এরাও এইখানে। আপনি দাঁড়িয়ে আছেন কেন বসেন না, শুভ ভাই যেহেতু চলে গেছে আপনি আমাদের সাথে বসে কফি খান।
জান্নাতঃ হে ভাইয়া যেহেতু চলে গেছে তুমি আমাদের সাথে বসে পর মায়ার পাশের সিট তো খালিই আছে।
জান্নাতের কথা শুনে তামিম একবার মায়ার দিকে তাকাল আরেকবার মায়ার পাশের সিটে। মায়া মাথা নিচু করে চুপ করে বসে আছে।
তামিমঃ নাহ আজকে আর খাব না অন্য একদিন নাহয় খাব, আমি আজ গেলাম।
মায়াঃ কেন গার্লফ্রেন্ডের সাথে দেখা করতে যাবেন নাকি.? (দুষ্টুমি করে)
তামিমঃ উফফ এরা তো দেখছি আমায় শান্তিতে থাকতে দিবে না.! নাহ এখন চলে গেলে পরে আবার এরা ভাববে সত্যিই হয়তো আমার গার্লফ্রেন্ড আছে আর আমি তার সাথে দেখা করতে যাচ্ছি। তারপর আবার যখনই দেখা হবে শুধু গার্লফ্রেন্ড নিয়ে কথা তুলবে। তার চেয়ে ভালো বসেই পরি, আর এমনিতেও এইখানের কফি না খেলে এখন আর দিন ভালো যায়না (মনে মনে কথাগুলো ভেবে মায়ার পাশের সিটে বসে পরলো)।
মায়াঃ গার্লফ্রেন্ড যে আছে আমাদের হয়তো বুঝতে দিতে চাচ্ছে না (বিরবির করে)।
তামিমঃ মুখে কিছুটা রাগী ভাব এনে মায়ার দিকে তাকাল।
মায়াঃ আরে উনার জন্য কফি অর্ডার দিচ্ছিস না কেন.? (জান্নাতকে উদ্দেশ্য করে)
তামিমঃ থাক আমি নিজেই দিচ্ছি বলেই একটা ওয়েটারকে ডেকে কফি দিতে বললো।
–––––––
সবার কফি খাওয়া শেষ হলে বিল দেওয়া নিয়ে বাধল এক ঝামেলা। জান্নাত বলে আমি দিব, ফারহান বলে না আমি দিব। তাদের দুজনকে থামিয়ে তামিম বলে উঠে, বিলটা আমিই দিচ্ছি আর এটা আমার পক্ষ থেকে তোমাদের এনগেজমেন্টের গিফট হিসেবে নিয়ে নাও। তামিমের কথায় আর কেউ কিছু বললো না। তারপর সে বিলটা মিটিয়ে সবাইকে নিয়ে কফিশপ থেকে বেরিয়ে আসলো।
ফারহানঃ জান্নাত একটু এদিকে আসবেন.?
জান্নাতঃ জি বলুন.? (ফারহানের কাছে গিয়ে)
ফারহানঃ তোমায় নিয়ে এক জায়গায় ঘুরতে যেতে চাচ্ছিলাম, তুমি কি যাবা.?
জান্নাতঃ কবে যাবেন.?
ফারহানঃ আজকে চল।
জান্নাতঃ কিন্তু মায়া একা বাসায় যাবে কীভাবে.?
ফারহানঃ উনার বাসা কোথায়.?
জান্নাতঃ ____ এই জায়গায়।
ফারহানঃ আর তামিম ভাইয়ের বাসা কোথায়.?
জান্নাতঃ মায়াদের বাসার দিকে যেতে একটা চার রাস্তার মোড় পরে, তামিম ভাইয়ার বাসা মায়াদের বাসার রোডের বিপরীত দিকে পরেছে।
ফারহানঃ তামিম ভাইয়াকে বললে মায়াকে উনার সাথে নিয়ে যেতে পারবেন না.? আসলে আর যদি এতো তাড়াতাড়ি আমাদের দেখা না হয়, আপনাকে চাইলে আমি আপনার বাসা থেকেই নিয়ে আসতে পারবো বাট বাসায় যেতে আমার কেমন যেন লাগে তাই যেতে পারব না। ঘুরাঘুরি করে আমি আবার আপনাকে কার দিয়ে বাসায় ড্রপ করে দিয়ে আসব নে।
জান্নাতঃ আচ্ছা আমি ভাইয়ার সাথে কথা বলে দেখি, আপনি একটু দাড়ান।
তারপর জান্নাত তামিমের কাছে এসে বললো, ভাইয়া একটা হেল্প করবা.?
তামিমঃ কি হেল্প.?
জান্নাতঃ আসলে ফারহান আমায় নিয়ে এক জায়গায় ঘুরতে যেতে চাচ্ছে, এখন তুমি যদি মায়াকে ওর বাসায় ড্রপ করে দাও তাহলে আমি উনার সাথে চলে যাব। তোমাদের বাসায় যেতে যে একটা চার রাস্তার মোড় পরেছে ওইদিকেই মায়াদের বাসা।
তামিমঃ উনাকে জিজ্ঞেস করে দেখ আমার সাথে যাবে কি না (মায়ার দিকে তাকিয়ে)।
মায়া তখন পাশ থেকে বললো, ঠিক আছে তুই যা আমি উনার সাথে চলে যাব।
জান্নাতঃ আচ্ছা তাহলে আমি গেলাম আর ভাইয়া Thank You. ফারহান চলেন তামিম ভাইয়া মায়াকে ওর বাসায় পৌছে দিবে বলেছে (ফারহানের কাছে এসে)।
ফারহানঃ সরি ভাইয়া আমার জন্য কষ্ট করতে হবে আপনাকে।
তামিমঃ আরে কিসের কষ্ট, যাও তোমরা।
ফারহানঃ আচ্ছা ঠিক আছে।
তারপর ফারহান জান্নাতকে নিয়ে কার দিয়ে চলে গেল।
তামিমঃ আর দাঁড়িয়ে থেকে কি করবেন চলেন যাওয়া যাক (মায়াকে উদ্দেশ্য করে)।
মায়াঃ জি চলুন।
তামিমঃ রিক্সা ডাকব কি নাকি হেটেই যেতে পারবেন.?
মায়াঃ হেটেই যাই।
তামিম আর কথা না বাড়িয়ে মায়াকে সাথে নিয়ে হাটা শুরু করল।
.
.
.
.
.
Loading…….