হৃদয়_দিয়ে_ভালোবাসিব,পর্বঃ- ৩

0
1316

হৃদয়_দিয়ে_ভালোবাসিব,পর্বঃ- ৩
লেখকঃ- Tamim

–আচ্ছা আপনি গতকাল আমার দিকে তাকিয়ে ছিলেন কেন.?

তামিম আর মায়া কিছুক্ষণ হাটার পর যখন একটা নিরিবিলি জায়গায় আসলো ঠিক তখনই মায়া তামিমের দিকে তাকিয়ে প্রশ্নটা করে। মায়ার প্রশ্নে তামিম কিছুটা চিন্তায় পরে গেল। গতকাল যখন সে মায়ার দিকে তাকিয়েছিল তখন হঠাৎ করে মায়ার নজরে বিষয়টা পরে যায় তাই সে সাথে সাথেই সেখান থেকে চলে আসে। তামিম ভেবেছিল আর হয়তো এতো তাড়াতাড়ি মায়ার সাথে তার দেখা হবে না, তাই সে এ বিষয় নিয়ে চিন্তামুক্ত ছিল। কিন্তু এখন হঠাৎ মায়ার এই প্রশ্নে তামিম চিন্তায় পরে যায়, এখন সে মায়াকে কি জবাব দিবে। তামিম চুপ করে আছে দেখে মায়া আবার বলে উঠলো…

মায়াঃ চুপ করে আছেন যে।

তামিমঃ না মানে গতকাল শুভদের বাসা থেকে বেরুনোর সময় হঠাৎ উপর থেকে কয়েকটা মেয়ের হাসি কানে এসে লাগে। উপরে তাকিয়ে দেখলাম যে আপনি, জান্নাত আর আপনাদের ফ্রেন্ডরা মিলে গল্প করছেন। প্রথমে আপনাদের চিনতে পারিনি তাই কিছুক্ষণ তাকিয়ে ছিলাম আর কি।

মায়াঃ ব্যাটা দেখি আমার মতোই কপি করে মিথ্যা বলে.! (মনে মনে)
আচ্ছা আরেকটা কথা, গতকাল চলে আসার সময় আপনি বাসার দিকে তাকিয়ে কাকে বিদায় জানাচ্ছিলেন.?

তামিমঃ কাকে আবার শুভকে।

মায়াঃ কিন্তু আমি যে নিচে তাকিয়ে দেখলাম শুভ ভাইয়া কোথাও নেই।

তামিমঃ আমি বিদায় জানাতে জানাতেই সে বাসার ভিতরে চলে যায় তাই হয়তো দেখতে পাননি।

মায়াঃ আবারও মিথ্যা বলে.! (মনে মনে)
কেমন বন্ধু আপনার যে আপনাকে বিদায় জানাতে বাসার গেইট অবধিও আসতে পারে না.?

তামিমঃ কিছু বললো না।

মায়াঃ কিছু মনে না করলে আরেকটা কথা বলি.?

তামিমঃ বলেন.?

মায়াঃ আপনি যে গতকাল বলেছিলেন আমাদের যদি আবার দেখা হয় তাহলে আমার নাম জিজ্ঞেস করবেন, কই জিজ্ঞেস করলেন না যে.?

তামিমঃ জান্নাতের কাছ থেকে তো আপনার নাম শুনেই ফেললাম, তাই আর জিজ্ঞেস করি নি।

মায়াঃ ওহ।

মায়াঃ আমি তো আপনার থেকে বয়সে + ক্লাসের দিক দিয়ে অনেক ছোট। তাহলে আমাকে আপনি করে বলছেন কেন.? তুমি করে বলেন।

তামিমঃ ২ দিনের পরিচয়ে কাউকে তুমি করে বলা ঠিক না।

মায়াঃ কেন.?

তামিমঃ এমনি।

মায়া আর কিছু বললো না, চুপ করে হাটতে লাগলো। ২ মিনিট পর তাঁরা চার রাস্তার মোড়ে চলে আসলো। তখন মায়া হাটা থামিয়ে বললো…

মায়াঃ আপনি তাহলে এখন বাসায় চলে যান বাকি রাস্তা আমি একাই যেতে পারবো।

তামিমঃ আপনার বাসা আর কতদূর.?

মায়াঃ এইতো আরও ৫ মিনিট লাগবে বাসায় যেতে।

তামিমঃ এদিকের রাস্তাঘাট এতোটা ভালো না। নিরিবিলি জায়গা হওয়ায় এইখানে অনেক খারাপ মানুষের চলাচল রয়েছে। একটা মেয়ে হয়ে একা একা এই রাস্তা দিয়ে যাওয়া ঠিক হবে না, চলেন আপনাকে আপনার বাসা অবধি পৌছে দিয়ে আসি।

মায়াঃ আচ্ছা চলেন।

তারপর তাঁরা দুজন আবার হাটতে আরম্ভ করলো। এইখানের রাস্তাঘাট সম্পর্ক তামিম যা বলেছে তা সবই মিথ্যা। জায়গাটা নিরিবিলি ঠিক তবে আজ পর্যন্ত এখানে দিনের বেলায় কোনো খারাপ কাজ হয়নি। তবে রাত গভীর হলে কিছু দুষ্টু প্রকৃতির লোক এই রাস্তায় বের হয়। মায়া এই এলাকায় ৫ বছর ধরে থাকছে, আজ পর্যন্ত সে এই এলাকার রাস্তাঘাট সম্পর্কে কারও থেকে খারাপ কিছু শুনেনি। তবে আজ তামিমের মুখ থেকে এইসব শুনে কিছুটা অবাক হয় সাথে খানিকটা ভয়ও পায়। তামিমের বলা কথাগুলো মিথ্যা নাকি সত্য সে বুঝে উঠছে পারছে না।

৫ মিনিট পর মায়া আবার হাটা থামিয়ে নেয়।

মায়াঃ সামনের ৩ তলা বাসাটাতেই আমরা থাকি। আপনি তাহলে এখন আপনার বাসায় চলে যান। আর ধন্যবাদ আমাকে এতোটা পথ এগিয়ে দেওয়ার জন্য।

তামিমঃ It’s Okay, ওকে আমি যাই তাহলে, আল্লাহ হাফেজ (বলেই পিছন ফিরে আবার হাটা শুরু করলো)।

মায়াও সেখান থেকে তার বাসায় চলে গেল।

রাতেরবেলা…

খাওয়া দাওয়া শেষে তামিম তার রুমে এসে ঢুকতেই তার ফোনটা বেজে উঠলো। ফোনটা হাতে নিয়ে দেখল শুভ কল করেছে। সাথে সাথে ফোনটা রিছিভ করলো।

তামিমঃ হে শুভ বল.?

শুভঃ আজ কফিশপে নাকি তুই জান্নাত আর ফারহানকে পেয়েছিস.?

তামিমঃ শুধু পেয়েছি না ওদের সাথে বসে কফিও খেয়েছি।

শুভঃ জান্নাত কি আমার ব্যাপারে কিছু জিজ্ঞেস করেছিল.?

তামিমঃ করেছিল তখন বলেছি তোর একটা জরুরি ফোন আসাতে তুই চলে গেছিস।

শুভঃ ওহ আচ্ছা।

তামিমঃ তো ইতির সাথে দেখা হয়েছে.?

শুভঃ হে হয়েছে। ওকে তাহলে এখন রাখি, কাল ভার্সিটিতে দেখা হবে।

তামিমঃ ওকে।

শুভর সাথে কথা বলা শেষ হতেই তামিমের ফোনে একটা মেসেজ আসে। মেসেজটা ওপেন করতেই তামিম কিছুটা অবাক হলো সাথে তার একটু হাসিও পেল। মেসেজটায় লিখা হলো, ‘আপনাকে আমার ভালো লাগে’। একটা অপরিচিত নাম্বার থেকে এই মেসেজটা তাকে কে দিতে পারে তামিম ভেবে পাচ্ছে না। কয়েকদিন আগে এই মেসেজটার লেখাগুলো সে ফেসবুকে অনেক পোস্টে দেখেছে। কোনো সেলেব্রিটি পারসন মেবি এইটা বলেছে সেই থেকেই এটা ভাইরাল। তামিম ভাবলো তার পরিচিত কেউ হয়তো তার সাথে ফান করে এই মেসেজটা দিয়েছে, তাই সে এ বিষয়ে আর মাথা ঘামাল না। কিছুক্ষণ ফেসবুকে ঘুরাঘুরি করে তামিম ঘুমিয়ে পরল।

পরেরদিন সকালবেলা তামিম ভার্সিটিতে এসে ঢুকতে যাবে ওমনি কোথা থেকে জানি একটা মেয়ে এসে তার গায়ের সাথে ধাক্কা খায়। তামিম ধাক্কা খাওয়া মেয়েটার দিকে তাকাতেই দেখল মেয়েটা আর কেউ না মায়া। মায়ার চোখে মুখে কিছুটা হয়রানির চাপ।

তামিমঃ কি ব্যাপার আপনার চেহারা এমন দেখাচ্ছে কেন.? ওই বাইক নিয়ে বসা ছেলেগুলো আপনাকে কিছু বলেছে.?

মায়াঃ আপনি কিভাবে বুঝলেন যে

তামিমঃ পালটা প্রশ্ন করবেন না যেটা জিজ্ঞেস করছি সেটার উত্তর দেন.? (কিছুটা রাগ দেখিয়ে)

মায়াঃ ওদের পাশ দিয়ে আসার সময় একজন আমায় ডাক দিয়ে হাতে একটা সিগারেট ধরিয়ে দিয়ে

তামিমঃ বুঝেছি, ওরা প্রায়ই একা থাকা মেয়েদের টিজ করে। নেক্সট টাইম আর ওদের পাশ দিয়ে আসবেন না, সাথে কোনো বান্ধবী থাকলেও না, তাহলে আর এমন পরিস্থিতির শিকার হতে হবে না। যান এখন ক্লাসে যান (মায়াকে থামিয়ে কথাগুলো বললো)।

মায়াঃ আচ্ছা বলেই সেখান থেকে চলে আসলো। কেমন ছেলে উনি.! একটা মেয়েকে কিছু ছেলে টিজ করেছে শুনে কই বলবে যান আমি ওদেরকে গিয়ে দেখছি, তা না করে উলটা বলছে নেক্সট টাইম আর ওদের পাশ দিয়ে না আসতে.! ব্যাটা খব্বিস একটা (মনে মনে)।

মায়া ক্লাসে এসে ঢুকতেই দেখল জান্নাত ক্লাসে বসে আছে। মায়া সোজা জান্নাতের পাশে গিয়ে বসে পরলো।

জান্নাতঃ কি ব্যাপার এরকম রাগী ফেস কেন.?

মায়াঃ আর বলিস না (তারপর জান্নাতকে সব বললো)।

জান্নাতঃ তামিম ভাইয়া তোকে চিনেও না জানেও না তাহলে কেন তোর জন্য ওই ছেলেগুলোর সাথে লাগতে যাবে.?

মায়াঃ তোর বান্ধবী হিসেবে তো আমাকে চিনে নাকি.?

জান্নাতঃ থাক বাদ দে, আমি নাহয় তামিম ভাইয়াকে বলবো নে ওদেরকে শাস্তি দিতে।

মায়াঃ কচু করবেন উনি ওদেরকে। তোর বলা লাগবে না কিছু (রাগ দেখিয়ে)।

জান্নাতঃ আচ্ছা তাহলে বলবো না, এবার শান্ত হ।

মায়া আর কিছু বললো না। একটু পর ক্লাসে স্যার চলে আসলে সবাই ক্লাসে ধ্যান দিল।

–––––––

ভার্সিটি ছুটির পর মায়া আর জান্নাত ক্লাস থেকে বের হয়ে ভার্সিটির গেইটের কাছে আসতেই কয়েকটা ছেলে এসে মায়ার পায়ের উপর হুমড়ি খেয়ে পরল। মায়া এতে অবাকের চরম পর্যায়ে পৌছে গেল। মায়া আরও অবাক হলো যখন দেখল ছেলেগুলো ওই সকালের বাইক নিয়ে বসা ছেলেগুলো যারা তাকে সকালে টিজ করে করেছিল।

মায়াঃ আরে আরে কি করছেন আপনারা, আমার পা ছাড়েন।

–আপু আমাদের মাফ করে দেন আমাদের ভুল হয়ে গেছে আমরা আর কখনো আপনাকে টিজ করবো না, শুধু আপনাকে না জীবনে আর কোনো মেয়েকেই টিজ করব না।

মায়াঃ আরে পা ছাড়েন তো আমার কি করছেন এইসব.?

–আগে বলেন আমাদের মাফ করেছেন নাহলে আমরা পা ছাড়ব না।

মায়াঃ ওকে ওকে মাফ করেছি এবার পা ছাড়েন।

–ধন্যবাদ আপু (বলেই ছেলেগুলো উঠে চলে গেল)।

জান্নাতঃ এই ছেলেগুলো সকালে তোকে টিজ করেছিল না.?

মায়াঃ হে কিন্তু এরা এখন আমার কাছে এসে পা ধরে মাফ চাইল কেন.?

জান্নাতঃ তামিম ভাইয়ার জন্য।

মায়াঃ মানে.?

জান্নাতঃ ছেলেগুলোর সাথে তামিম ভাইয়া কিছু একটা করেছেন আর তোর কাছ থেকে মাফ চাইতেও বলেছেন তাই ওরা তোর কাছে এসে মাফ চেয়েছে।

মায়াঃ এতটা শিওর হয়ে কিভাবে বলছিস.?

জান্নাতঃ ভার্সিটিতে এইসব প্রব্লেমগুলো বেশি তামিম ভাইয়াই সমাধান করেন।

মায়াঃ হতেও তো পারে ছেলেগুলো নিজেদের ভুল বুঝতে পেরে

জান্নাতঃ এদেরকে একটা শিক্ষা না দেওয়া অবধি এরা নিজেদের ভুল বুঝতে পারে না। তামিম ভাইয়া আজ একটা শিক্ষা দিয়েছেন বিধায় ওরা তোর কাছে এসে মাফ চেয়েছে। চল এখন এইখানে দাঁড়িয়ে থেকে কি করবি.?

মায়াঃ হে চল।

ভার্সিটি থেকে বের হওয়ার সময় মায়া দেখল সেই ছেলেগুলো অনেক দূরে গিয়ে একটা ছেলের সাথে কথা বলছে আর সেই ছেলেটা হলো তামিম। তার মানে জান্নাতের বলা কথাগুলোই সত্য.? এটা তাহলে তামিম ভাইয়ার ই কাজ.!
.
.
.
.
.
Loading…….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here